উপক্রমণিকা
আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি ঃ-
আমি অতীত কে পাশ বালিশের মতন আঁকড়ে ধরে রাখতে পারছিনা আবার বর্তমান কে অস্বীকার করতে পারছিনা কারন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উত্তর-দায়িত্ব রাখতে হবে আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ । আমাকে রেখে যেতে হবে এমন কিছু নিদর্শন যা আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের স্মৃতি-থেকে আমাকে বিচ্যুত না করে । তাদের শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি হোক তারা মানুষের মত মানুষ হোক এই আশা । মানুষকে ঘৃণা করা সোজা কিন্তু ভালোবাসা কঠিন । যদি তোমার বাক্যের মিষ্টতায় কারুর মনে প্রেম , প্রীতি , ভালোবাসার উদ্রেক হয় তবে কুণ্ঠা কিসের ! বিলিয়ে যাও সেই মিষ্টতা , ভালোবাসা । দেখবে তোমার মিত্র সংখ্যা বাড়বে আর শত্রু নিজেকে আয়নায় দেখে ধিক্কার দেবে নিজের অপকর্মের জন্য । দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার । এ আর নতুন কি ? এ’ত মহাভারত , রামায়ণ সব মহাকাব্যেই সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত । বিধির বিধান কে কেউ টলাতে পারবে না । আজ যে টাকার প্রাচুর্যে উল্লাসিত , কাল হয়ত সে ফকীর ! কথায় বলে লক্ষ্মী চঞ্চলা । তাঁকে কাছে পেয়ে যে বা যারা গর্বে হিতা হিত জ্ঞান হারায় এবং বড়দের অসম্মান করে তাদের ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখের হয়না। আজকাল সংসারে এইরকম অমানুষের অভাব নেই। মিথ্যা কথা বলে অপরের ন্যায্য দাবিথেকে বঞ্চিত করে বড়লোক হয়ত সাময়িক ভাবে হওয়া যায় কিন্তু কে বলবে কার ভবিষ্যৎ কি হবে ? কার কি ভবিতব্য হবে কেউ বলতে পারে না । কোন গ্রহ রত্ন কখনই কারুর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে না ! যারা বলেন সেগুলো আজগুবি কথা। আমি মানি না। মানবো না। আমার মা বাবা দুজনেই অনেক কষ্ট স্বিকার করে অনেক দুর্গম অঞ্চলে থেকে আমাদের মানুষ করেছেন। আমারা বলি আমারা মানুষ হয়েছি কিন্তু কে কতটা হয়েছে সেটাই যাচাই করা প্রয়োজন । সে যাচাই অন্য কেউ করবেনা নিজেকেই করতে হবে। আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব বলবে কে কতটা মানুষ আর কে কতটা আমানুষ। আমি চেষ্টা করছি কোণ কটু মন্তব্য না করে কিম্বা অভিযোগ আলোচনা না করে বাবা মা আমাদের প্রতি যা যা কর্তব্য এবং ত্যাগ করেগিয়েছেন নিজেরা না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন , নিজেরা সব সুখ দুঃখ ভুলে কেবল আমাদের কথাই ভেবেছেন । তাই তাঁদের ই স্বরন করে আমার যতটুকু মনে পড়ছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখা। সেটাই তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি । এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
আমি অতীত কে পাশ বালিশের মতন আঁকড়ে ধরে রাখতে পারছিনা আবার বর্তমান কে অস্বীকার করতে পারছিনা কারন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উত্তর-দায়িত্ব রাখতে হবে আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ । আমাকে রেখে যেতে হবে এমন কিছু নিদর্শন যা আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের স্মৃতি-থেকে আমাকে বিচ্যুত না করে । তাদের শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি হোক তারা মানুষের মত মানুষ হোক এই আশা । মানুষকে ঘৃণা করা সোজা কিন্তু ভালোবাসা কঠিন । যদি তোমার বাক্যের মিষ্টতায় কারুর মনে প্রেম , প্রীতি , ভালোবাসার উদ্রেক হয় তবে কুণ্ঠা কিসের ! বিলিয়ে যাও সেই মিষ্টতা , ভালোবাসা । দেখবে তোমার মিত্র সংখ্যা বাড়বে আর শত্রু নিজেকে আয়নায় দেখে ধিক্কার দেবে নিজের অপকর্মের জন্য । দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার । এ আর নতুন কি ? এ’ত মহাভারত , রামায়ণ সব মহাকাব্যেই সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত । বিধির বিধান কে কেউ টলাতে পারবে না । আজ যে টাকার প্রাচুর্যে উল্লাসিত , কাল হয়ত সে ফকীর ! কথায় বলে লক্ষ্মী চঞ্চলা । তাঁকে কাছে পেয়ে যে বা যারা গর্বে হিতা হিত জ্ঞান হারায় এবং বড়দের অসম্মান করে তাদের ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখের হয়না। আজকাল সংসারে এইরকম অমানুষের অভাব নেই। মিথ্যা কথা বলে অপরের ন্যায্য দাবিথেকে বঞ্চিত করে বড়লোক হয়ত সাময়িক ভাবে হওয়া যায় কিন্তু কে বলবে কার ভবিষ্যৎ কি হবে ? কার কি ভবিতব্য হবে কেউ বলতে পারে না । কোন গ্রহ রত্ন কখনই কারুর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে না ! যারা বলেন সেগুলো আজগুবি কথা। আমি মানি না। মানবো না। আমার মা বাবা দুজনেই অনেক কষ্ট স্বিকার করে অনেক দুর্গম অঞ্চলে থেকে আমাদের মানুষ করেছেন। আমারা বলি আমারা মানুষ হয়েছি কিন্তু কে কতটা হয়েছে সেটাই যাচাই করা প্রয়োজন । সে যাচাই অন্য কেউ করবেনা নিজেকেই করতে হবে। আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব বলবে কে কতটা মানুষ আর কে কতটা আমানুষ। আমি চেষ্টা করছি কোণ কটু মন্তব্য না করে কিম্বা অভিযোগ আলোচনা না করে বাবা মা আমাদের প্রতি যা যা কর্তব্য এবং ত্যাগ করেগিয়েছেন নিজেরা না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন , নিজেরা সব সুখ দুঃখ ভুলে কেবল আমাদের কথাই ভেবেছেন । তাই তাঁদের ই স্বরন করে আমার যতটুকু মনে পড়ছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখা। সেটাই তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি । এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:-
(প্রথম পর্ব)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
১৯৬২ সাল যায়গাটার নাম মালকানগিরি , কোরাপুট জেলা , উড়িষ্যা । বাবা দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের জোনাল এগ্রিকালচার অফিসার ছিলেন । সিনিয়র ক্লাস ওয়ান অফিসার এ প্রোমোশন পেয়ে কেন্দ্র সরকারের অধীনে ডেপুটেসনে ছিলেন।
এমনিতেই বাবা মাঝে মাঝে জয়পুর যেতেন অফিসের কাজে মিটিং এ্যাটেন্ড করতে টুরে । তখন দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের চিফ এডমিনিস্ট্রেটর *শ্রীযুক্ত সুকুমার সেন , আই.সি.এস কিছুদিন ছিলেন। বাবা ওনার খুব প্রিয় অফিসার ছিলেন ।
(*শ্রী যুক্ত সুকুমার সেন আবার তৎকালীন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের খুব পছন্দের আই.সি.এস. অফিসার ছিলেন। দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের শুভারম্ভ শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন কে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়েছিল কারন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলা দেশ) থেকে যে সকল শরণার্থী ভারতের ভূমিতে সর্ব হারা হয়ে এসেছিলেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মালকানগিরি , উমোরকোর্ট এবং মধ্য প্রদেশ (এখন ছত্তিশ গড়) এর পার্লকোর্ট সঠিক যায়গা যেখানে বিস্তীর্ণ বনানী সাফ করে প্লটিং করে বিস্থাপিত শরণার্থী দের পুনর্বাসন করা হয় । তাঁদের জন্য বাসগৃহ সমেত চাষ বাসের জমি সরকার থেকে দেওয়া হয়। বাবা যেহেতু দেরাদুন থেকে মৃত্তিকা সংরক্ষণের পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ধারি এবং নাগপুর এগ্রিকালচার কলেজের গোল্ড মেডালিষ্ট ছিলেন বি.এস.সি এগ্রিকালচারে ১৯৩৩ সালের ; তাই ওনাকে দণ্ডকারণ্য ডেপুটেসনে পাঠান হয় সএল সার্ভে এক্সপার্ট হিসেবে । খুব গুরু দায়িত্বের কাজ ছিল ।)
মালকানগিরি তে তখন লন্ঠন ই এক মাত্র সম্বল। ছোট বেলায় বাঘ , হরিণ ,শিকার দেখেছি। তখন শিকার করা ফ্যাশন ছিল এবং আইনের দিক থেকে কোন বাধা ছিলনা । একবার বাবার সঙ্গে জয়পুর , কোরাপুট থেকে মালকানগিরি আসার সময় রাস্তায় গোবিন্দপল্লী ব্লকের কাছে দুটো পাহাড় কেটে মাঝখানে রাস্তা ছিল সেই রাস্তায় একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাহাড়ের এক পাস থেকে আরেক পাসে লাফ মারল । ঠিক আমাদের জিপের ওপর । ড্রাইভার একটুও না ঘাবড়ে সোজা স্টিয়ারিং হাতে পুরো ঘটনাটা সামাল দিল । পূরণ উইলিস জিপ লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ ছিল। আজ সেই কথা মনে পড়ে গেল। এরকম অনেক ঘটনা আছে ।
আরেকটা ঘটনার কথা বলি । তখন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে বাবার কাছে যাই । আমি অনেক দুর্গম যায়গা বাবার সঙ্গে টুরে গিয়েছি । এক আদিবাসীদের গ্রাম চিত্রকুন্ডার কাছে (এখন চিত্রকুন্ডা সহর হয়ে গিয়েছে) সেখানে তাঁবু ফেলে রাত কাটাতে হল বাবার সঙ্গে । সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি সব সময় বাবার সাথে সাথে থাকে । ভঞ্জ শিকারি পারলাখেমুণ্ডী গজপতি রাজার শিকারি ছিলেন তাই উনি শিকারি হিসেবে দারুণ সাহসী এবং বুদ্ধিমান । উনি বাবার খুব প্রিয় ছিলেন । ওনার দোনলা বন্ধুক একটা রাইফেল আরেকটা গান ।সেদিন রাতে বাইরে আগুন জ্বালিয়ে কিছু আদিবাসী পাহারা দিল কারন বাঘের উপদ্রব । ভঞ্জ শিকারি রাতে জেগে রইলেন । রাতে বাবা দুবার ওঠেন বাইরে যাওয়ার জন্য। ভঞ্জ শিকারি সেটা জানেন তাই তার সাহেবের বডি গার্ড হিসেবে বাবার পেছনেই ছিলেন তিনি। হটাত ভঞ্জ শিকারি লক্ষ্য করেন দুটো জ্বলন্ত চোখ বেশ খানিকটা দূরে । শিকারিরা বাঘের চোখ দেখলে বুঝতে পারেন । কাল বিলম্ব না করে ভঞ্জ শিকারি দু চোখের মধ্যে খানে লক্ষ্য করে রাইফেলের ট্রিগার টেপে । বাঘটি প্রচণ্ড শব্দ করে লাফ মারে । ভঞ্জ শিকারি আবার গুলি ছোঁড়ে এবার আর কোন শব্দ নেই । বাবা হতভম্ব হয়ে ভঞ্জ কে ডাকেন , তখন ভঞ্জ শিকারি বাবাকে প্রায় চ্যাঁ দোলা করে টেন্টে নিয়ে যায়। আদিবাসী লোক গুলি আগুনের মশাল নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ফেলে বাবাকে । পরে যানা যায় সকাল হতে এক বিরাট রয়েল বেঙ্গল টাইগার মরে পড়ে আছে । কপালে দুচোখের মাঝে একটা গুলি আরেকটা পেটে । আদিবাসীরা গান করে নিয়ে এলো বাঘটিকে । ওদের অনেক গরু ছাগল খেয়েছিল বাঘটা । বাঘটা খুব উৎপাত করছিলো তাই তাদের আনন্দের সীমা নেই। আমরা বাড়ী ফিরি জীপের ট্রেলারে বাঘ সমেত । রাস্তায় লোকে অতবড় বাঘ দেখে আশ্চর্য হচ্ছিল আবার অবাক ও হচ্ছিল। বাবা ভঞ্জ শিকারিকে পুরস্কার স্বরূপ ৫০ টাকা দেন (১৯৬২ সালে ৫০ টাকা অনেক) সেই বাঘের ছাল মান্দ্রাজ(চেন্নাই) পাঠান হল ট্যানিং এর জন্য । ক্রমশ .............
(প্রথম পর্ব)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
১৯৬২ সাল যায়গাটার নাম মালকানগিরি , কোরাপুট জেলা , উড়িষ্যা । বাবা দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের জোনাল এগ্রিকালচার অফিসার ছিলেন । সিনিয়র ক্লাস ওয়ান অফিসার এ প্রোমোশন পেয়ে কেন্দ্র সরকারের অধীনে ডেপুটেসনে ছিলেন।
এমনিতেই বাবা মাঝে মাঝে জয়পুর যেতেন অফিসের কাজে মিটিং এ্যাটেন্ড করতে টুরে । তখন দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের চিফ এডমিনিস্ট্রেটর *শ্রীযুক্ত সুকুমার সেন , আই.সি.এস কিছুদিন ছিলেন। বাবা ওনার খুব প্রিয় অফিসার ছিলেন ।
(*শ্রী যুক্ত সুকুমার সেন আবার তৎকালীন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের খুব পছন্দের আই.সি.এস. অফিসার ছিলেন। দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের শুভারম্ভ শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন কে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়েছিল কারন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলা দেশ) থেকে যে সকল শরণার্থী ভারতের ভূমিতে সর্ব হারা হয়ে এসেছিলেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মালকানগিরি , উমোরকোর্ট এবং মধ্য প্রদেশ (এখন ছত্তিশ গড়) এর পার্লকোর্ট সঠিক যায়গা যেখানে বিস্তীর্ণ বনানী সাফ করে প্লটিং করে বিস্থাপিত শরণার্থী দের পুনর্বাসন করা হয় । তাঁদের জন্য বাসগৃহ সমেত চাষ বাসের জমি সরকার থেকে দেওয়া হয়। বাবা যেহেতু দেরাদুন থেকে মৃত্তিকা সংরক্ষণের পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ধারি এবং নাগপুর এগ্রিকালচার কলেজের গোল্ড মেডালিষ্ট ছিলেন বি.এস.সি এগ্রিকালচারে ১৯৩৩ সালের ; তাই ওনাকে দণ্ডকারণ্য ডেপুটেসনে পাঠান হয় সএল সার্ভে এক্সপার্ট হিসেবে । খুব গুরু দায়িত্বের কাজ ছিল ।)
মালকানগিরি তে তখন লন্ঠন ই এক মাত্র সম্বল। ছোট বেলায় বাঘ , হরিণ ,শিকার দেখেছি। তখন শিকার করা ফ্যাশন ছিল এবং আইনের দিক থেকে কোন বাধা ছিলনা । একবার বাবার সঙ্গে জয়পুর , কোরাপুট থেকে মালকানগিরি আসার সময় রাস্তায় গোবিন্দপল্লী ব্লকের কাছে দুটো পাহাড় কেটে মাঝখানে রাস্তা ছিল সেই রাস্তায় একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাহাড়ের এক পাস থেকে আরেক পাসে লাফ মারল । ঠিক আমাদের জিপের ওপর । ড্রাইভার একটুও না ঘাবড়ে সোজা স্টিয়ারিং হাতে পুরো ঘটনাটা সামাল দিল । পূরণ উইলিস জিপ লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ ছিল। আজ সেই কথা মনে পড়ে গেল। এরকম অনেক ঘটনা আছে ।
আরেকটা ঘটনার কথা বলি । তখন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে বাবার কাছে যাই । আমি অনেক দুর্গম যায়গা বাবার সঙ্গে টুরে গিয়েছি । এক আদিবাসীদের গ্রাম চিত্রকুন্ডার কাছে (এখন চিত্রকুন্ডা সহর হয়ে গিয়েছে) সেখানে তাঁবু ফেলে রাত কাটাতে হল বাবার সঙ্গে । সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি সব সময় বাবার সাথে সাথে থাকে । ভঞ্জ শিকারি পারলাখেমুণ্ডী গজপতি রাজার শিকারি ছিলেন তাই উনি শিকারি হিসেবে দারুণ সাহসী এবং বুদ্ধিমান । উনি বাবার খুব প্রিয় ছিলেন । ওনার দোনলা বন্ধুক একটা রাইফেল আরেকটা গান ।সেদিন রাতে বাইরে আগুন জ্বালিয়ে কিছু আদিবাসী পাহারা দিল কারন বাঘের উপদ্রব । ভঞ্জ শিকারি রাতে জেগে রইলেন । রাতে বাবা দুবার ওঠেন বাইরে যাওয়ার জন্য। ভঞ্জ শিকারি সেটা জানেন তাই তার সাহেবের বডি গার্ড হিসেবে বাবার পেছনেই ছিলেন তিনি। হটাত ভঞ্জ শিকারি লক্ষ্য করেন দুটো জ্বলন্ত চোখ বেশ খানিকটা দূরে । শিকারিরা বাঘের চোখ দেখলে বুঝতে পারেন । কাল বিলম্ব না করে ভঞ্জ শিকারি দু চোখের মধ্যে খানে লক্ষ্য করে রাইফেলের ট্রিগার টেপে । বাঘটি প্রচণ্ড শব্দ করে লাফ মারে । ভঞ্জ শিকারি আবার গুলি ছোঁড়ে এবার আর কোন শব্দ নেই । বাবা হতভম্ব হয়ে ভঞ্জ কে ডাকেন , তখন ভঞ্জ শিকারি বাবাকে প্রায় চ্যাঁ দোলা করে টেন্টে নিয়ে যায়। আদিবাসী লোক গুলি আগুনের মশাল নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ফেলে বাবাকে । পরে যানা যায় সকাল হতে এক বিরাট রয়েল বেঙ্গল টাইগার মরে পড়ে আছে । কপালে দুচোখের মাঝে একটা গুলি আরেকটা পেটে । আদিবাসীরা গান করে নিয়ে এলো বাঘটিকে । ওদের অনেক গরু ছাগল খেয়েছিল বাঘটা । বাঘটা খুব উৎপাত করছিলো তাই তাদের আনন্দের সীমা নেই। আমরা বাড়ী ফিরি জীপের ট্রেলারে বাঘ সমেত । রাস্তায় লোকে অতবড় বাঘ দেখে আশ্চর্য হচ্ছিল আবার অবাক ও হচ্ছিল। বাবা ভঞ্জ শিকারিকে পুরস্কার স্বরূপ ৫০ টাকা দেন (১৯৬২ সালে ৫০ টাকা অনেক) সেই বাঘের ছাল মান্দ্রাজ(চেন্নাই) পাঠান হল ট্যানিং এর জন্য । ক্রমশ .............
আমার
ছোটবেলার কিছু স্মৃতিঃ-
(দ্বিতীয় পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
বাঘের ছালটা ট্যানিং এর জন্য মান্দ্রাজে(চেন্নাই) যে ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন তাঁর নাম মিঃ নাইয়ার । কেরলী ভদ্রলোক । উনি বাবার স্টেনো ছিলেন। দুঃখের কথা ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন ঠিক ই কিন্তু ফিরিয়ে আনলেন না । ফিরে এসে বাবাকে বললেন , ফরেস্টের অফিসার নাকি সিজ করেছিলো বাঘের ছালটা অন্ধ্র থেকেই ট্রেনের কোম্পার্ট্মেন্টে । ওনাকে ফাইন দিতে হয়েছে সেই জন্য । যদিও কথাটা বিশ্বাস যোগ্য নয় কিন্তু বাবা ওই বিষয় নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না। ভঞ্জ শিকারি ভদ্রলোককে অনেক কটু কথা বলতে লাগলেন । খুব রাগ করেন নায়ার বাবুর ওপর । নায়ার বাবু কোন উত্তর দেন না । ভঞ্জ শিকারি বলেন,“আপনি কেন না জেনে অত দামি বাঘের ছালটা নিয়ে গেলেন?” এর পর ওই ভদ্রলোক চাকরি ছেড়ে চলে যান । কেউ ওনাকে ফেয়ার ওয়েল দিলনা ।
বাবা নায়ার বাবুকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ালেন বটে কিন্তু যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিলেন যে কাজটা ভদ্রলোক ঠিক করলেন না। বাঘের ছালটার গল্প গল্পতেই থেকে-গেল ওটা থাকলে বাবার স্মৃতি এবং সবচেয়ে বড় কথা ভঞ্জ শিকারির এত বড় শিকারের স্মৃতি জীবন্ত হয়ে থাকতো ।
যাইহোক এর পরে ভঞ্জ শিকারি যতগুলো বাঘ ভালুক শিকার করেছে সে সব গুলোর ছাল নিজেই নিয়ে গিয়েছে ।
একদিন আমরা সকলে মানে মা বাবা এবং আমি একটা কাছেই একটা ডেয়ারি ফার্মে গেলাম বেড়াতে। সেদিন রবিবার ছিল । আমাদের জীপের ড্রাইভার পাঞ্জাবী ভদ্রলোক ছিলেন নাম গুরুমুখ সিং । আমরা ওনাকে সিং সাহেব বলতাম। খুব আমুদে লোক উনি। আমাকে পাঞ্জাবীদের জোক শোনাতেন । সর্দার কা বারা বজ গয়া ওনার কাছ থেকেই শোনা । আমি একদিন বলি সিং সাহেব আপনি পাঞ্জাবী হয়ে পাঞ্জাবী জোক শোনান কেন ? উনি বলেন তোমরা আনন্দ পাবে বলে । তা ছাড়া ইয়ে ত জোক হ্যায় , সচ থোড়ি ।
সিং জী শুরু করেনঃ- এক দিন এক সর্দারের ছেলে ভূগোল ক্লাসে বিষুব রেখার বিষয় পড়ে । উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধ র বিষয় পড়ে । ওর খুব ইচ্ছে হয় বিষুব রেখা দেখতে । বাবাকে বলে পিতাজী হম বিষুব রেখা ইয়ানি ইকুয়েটার দেখনা চাহতে ।
পিতাজী বলেন বেটা ইকুয়টার দেখ নাহি সকতে ও ত এক কাল্পনিক রেখা হ্যায় ।
বেটা বোলা নাহি হম খুদ দেখ লেঙ্গে বলে বাবার বাইনোকুলার নিয়ে আসে ।
বাবার মাথায় এক বুদ্ধি এলো ছেলেকে বলে চল ম্যায় হিঁ দিখা দেতা হুঁ তুঝে এই বলে ছেলে যখন বাইনোকুলার আকাশের দিকে দেখে ওর বাবা বাইনোকুলারের কাঁচের সামনে নিজের দাড়ি থেকে একটা চুল ছিঁড়ে কাঁচের সামনে ধরেন।
ছেলেকে বলেন বেটা ক্যা দেখা তুনে ?
বেটা বোলা জি ইকুএটার দেখা ম্যায়নে ।
অঊর কুছ ? হাঁ জি উসকা উপর এক উট ভি চল রাহি হ্যায় ।
সিং জি বলেন কিছু বুঝলে?
আমি বলি সে কি করে সম্ভব ?
সে ত না কিন্তু উট টা কি যানো ।
না
আরে ওটা ছেলের বাবার দাড়িতে যে উকুন ছিল ওটা চলছিল। বাইনোকুলারে ওই উকুনটা বড় দেখাচ্ছিল তাই ও উট বলে ভাবল ।
আমি হো হো করে হাঁসি । সিংজী ক্যা বাত । বহুত আচ্ছা জী ।
এরমধ্যে বাবা মা এসে-গেলেন একটা জার্সি গরু কিনে। নীলকণ্ঠ আমাদের পিওন অই গরু নিয়ে পেছনে ট্রাকে বাড়ি নিয়ে আসবে ।
আমার মা খুব সু গৃহিণী ছিলেন। আমাদের কোয়ার্টারের পেছনে নিজে হাতে বাগান করেছিলেন। বাগানে রকমারি শাক সবজি এবং কিছু ফলের গাছ ছিল। আমরা বাজার থেকে শুধু আলু পেঁয়াজ কিনতাম অন্য কিছু কিনতাম না। এবারে গরু এসে-গেল মানে গরুর দুধ ও কেনা হবে না। ঘরে ৬২ টা মুর্গী ছিল । কাজেই ডিম আর মুর্গীর মাংস ঘরেই পেতাম সকলে।
নীলকণ্ঠ কাঠ কেটে রাখত । সেই কাঠের জালের রান্না হত। বাবার খাওয়ার অনেক তরিবাত ছিল ।কাঠ কয়লার আঁচে মাংস রান্না হত খুব ধিক ধিকে আঁচে । বাবার ফেভেরাইট বাটি চচ্চড়ি সেটা আলু পোস্তর সঙ্গে মাশরুম দিয়ে ধিক ধিকে আঁচে বসবে ওপরে কাঁচা সর্ষের তেল আর কাঁচা লংকা চিরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এক জাম বাটি পাঁঠার মাংস বাবার প্রিয় ছিল। ভাত খুব ই কম খেতেন। রাতে দুখানি রুটি আর এক বাটি দুধ খেতাম আমরা সকলে ।
মা না-থাকলে ‘মিশ্র পিওন’ রান্না করতো । মিশ্র খুব তেল মসলা দিয়ে রান্না করতো । তাই জগদলপুর থেকে বাবা ‘মঙ্গল রাম’ বলে এক মধ্য প্রদেশের গয়লা বাবুর্চি আনেন। ও মুর্গা মসল্লা টা ক্লাস রান্না করতো । আমাদের বাড়িতেই দিশি মুর্গী থাকতো । মঙ্গল , বাবাকে সকালে কি কি রান্না হবে জিজ্ঞাসা করে নিজেই মুর্গি কাটতে চলে যেত । এখানে বলে রাখি তখন মালকানগিরিতে আনাজ খুব একটা পাওয়া যেত না। আমি মঙ্গলের কাছে মুর্গি কাটা শিখি । মঙ্গলের কোন ছুরির প্রয়োজন হত না । হাতেই সব সেরে ফেলত । তখন প্রেশার কুকার ওঠেনি । তাই কাঠ কয়লার আঁচেই খুব সুন্দর মাংস রান্না হত। এখন গ্যাসেও সেইরকম রান্না পাই না।
মিশ্রকে , বাবা *এপয়েন্টমেন্ট ( *তখন সরকারী গেজেটেড অফিসাররা থার্ড গ্রেড অবধি এপয়েন্টমেন্ট দিতে পারতেন) দিয়েছিলেন ও পুরীর লোক বলে। বাবা অনেক কে এপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন যারা পরে প্রোমোশন পেয়ে উঁচু পোষ্টে রিটায়ার করেছেন।
মিশ্রর বাড়ি জানকাদেইপুর । ওটা একটা ছোট্ট রেল ষ্টেশন মালতিপাটপুরের আগে চন্দনপুরের কিছু দুরে। মঙ্গল আসার পর মিশ্র সকালে মঙ্গল রাতের ডিনার বানাত । আপনারা হয়ত মনে করবেন এগুল বানান , কিন্তু না তখন সিনিয়র ক্লাস ওয়ান অফিসারদের জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বরাদ্দ ছিল বাড়ির কাজের জন্য। মিশ্রকে মা রাতে আস্তে বারুণ করেছিলেন কারন ও সন্ধ্যে হলেই নেশাগ্রস্ত থাকতো । মা নেশাখোরকে একদম পছন্দ করতেন না। সেদিকে মঙ্গল রামের ওরকম কোন দোষ ছলনা । তা সত্ত্বেও মা বাবার জন্য রকমারি রান্না করতেন। বাবা খাওয়ার সময় থালার পাসে ছোট ছোট অনেক বাটিতে নানা ধরনের রান্না থাকত ।
আমার বাবা খুব আমুদে লক ছিলেন । নিজে যেমন খেতে ভালোবাসতেন পরকেও সেইরকম খাওয়াতেন। আমাদের বাড়িতে কেউ এলে এলাহি রান্না হত।
এরমধ্যে জামাই ষষ্ঠী এসেগেল। তখন আমাদের দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে ,
ক্রমশ ঃ-
(দ্বিতীয় পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
বাঘের ছালটা ট্যানিং এর জন্য মান্দ্রাজে(চেন্নাই) যে ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন তাঁর নাম মিঃ নাইয়ার । কেরলী ভদ্রলোক । উনি বাবার স্টেনো ছিলেন। দুঃখের কথা ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন ঠিক ই কিন্তু ফিরিয়ে আনলেন না । ফিরে এসে বাবাকে বললেন , ফরেস্টের অফিসার নাকি সিজ করেছিলো বাঘের ছালটা অন্ধ্র থেকেই ট্রেনের কোম্পার্ট্মেন্টে । ওনাকে ফাইন দিতে হয়েছে সেই জন্য । যদিও কথাটা বিশ্বাস যোগ্য নয় কিন্তু বাবা ওই বিষয় নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না। ভঞ্জ শিকারি ভদ্রলোককে অনেক কটু কথা বলতে লাগলেন । খুব রাগ করেন নায়ার বাবুর ওপর । নায়ার বাবু কোন উত্তর দেন না । ভঞ্জ শিকারি বলেন,“আপনি কেন না জেনে অত দামি বাঘের ছালটা নিয়ে গেলেন?” এর পর ওই ভদ্রলোক চাকরি ছেড়ে চলে যান । কেউ ওনাকে ফেয়ার ওয়েল দিলনা ।
বাবা নায়ার বাবুকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ালেন বটে কিন্তু যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিলেন যে কাজটা ভদ্রলোক ঠিক করলেন না। বাঘের ছালটার গল্প গল্পতেই থেকে-গেল ওটা থাকলে বাবার স্মৃতি এবং সবচেয়ে বড় কথা ভঞ্জ শিকারির এত বড় শিকারের স্মৃতি জীবন্ত হয়ে থাকতো ।
যাইহোক এর পরে ভঞ্জ শিকারি যতগুলো বাঘ ভালুক শিকার করেছে সে সব গুলোর ছাল নিজেই নিয়ে গিয়েছে ।
একদিন আমরা সকলে মানে মা বাবা এবং আমি একটা কাছেই একটা ডেয়ারি ফার্মে গেলাম বেড়াতে। সেদিন রবিবার ছিল । আমাদের জীপের ড্রাইভার পাঞ্জাবী ভদ্রলোক ছিলেন নাম গুরুমুখ সিং । আমরা ওনাকে সিং সাহেব বলতাম। খুব আমুদে লোক উনি। আমাকে পাঞ্জাবীদের জোক শোনাতেন । সর্দার কা বারা বজ গয়া ওনার কাছ থেকেই শোনা । আমি একদিন বলি সিং সাহেব আপনি পাঞ্জাবী হয়ে পাঞ্জাবী জোক শোনান কেন ? উনি বলেন তোমরা আনন্দ পাবে বলে । তা ছাড়া ইয়ে ত জোক হ্যায় , সচ থোড়ি ।
সিং জী শুরু করেনঃ- এক দিন এক সর্দারের ছেলে ভূগোল ক্লাসে বিষুব রেখার বিষয় পড়ে । উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধ র বিষয় পড়ে । ওর খুব ইচ্ছে হয় বিষুব রেখা দেখতে । বাবাকে বলে পিতাজী হম বিষুব রেখা ইয়ানি ইকুয়েটার দেখনা চাহতে ।
পিতাজী বলেন বেটা ইকুয়টার দেখ নাহি সকতে ও ত এক কাল্পনিক রেখা হ্যায় ।
বেটা বোলা নাহি হম খুদ দেখ লেঙ্গে বলে বাবার বাইনোকুলার নিয়ে আসে ।
বাবার মাথায় এক বুদ্ধি এলো ছেলেকে বলে চল ম্যায় হিঁ দিখা দেতা হুঁ তুঝে এই বলে ছেলে যখন বাইনোকুলার আকাশের দিকে দেখে ওর বাবা বাইনোকুলারের কাঁচের সামনে নিজের দাড়ি থেকে একটা চুল ছিঁড়ে কাঁচের সামনে ধরেন।
ছেলেকে বলেন বেটা ক্যা দেখা তুনে ?
বেটা বোলা জি ইকুএটার দেখা ম্যায়নে ।
অঊর কুছ ? হাঁ জি উসকা উপর এক উট ভি চল রাহি হ্যায় ।
সিং জি বলেন কিছু বুঝলে?
আমি বলি সে কি করে সম্ভব ?
সে ত না কিন্তু উট টা কি যানো ।
না
আরে ওটা ছেলের বাবার দাড়িতে যে উকুন ছিল ওটা চলছিল। বাইনোকুলারে ওই উকুনটা বড় দেখাচ্ছিল তাই ও উট বলে ভাবল ।
আমি হো হো করে হাঁসি । সিংজী ক্যা বাত । বহুত আচ্ছা জী ।
এরমধ্যে বাবা মা এসে-গেলেন একটা জার্সি গরু কিনে। নীলকণ্ঠ আমাদের পিওন অই গরু নিয়ে পেছনে ট্রাকে বাড়ি নিয়ে আসবে ।
আমার মা খুব সু গৃহিণী ছিলেন। আমাদের কোয়ার্টারের পেছনে নিজে হাতে বাগান করেছিলেন। বাগানে রকমারি শাক সবজি এবং কিছু ফলের গাছ ছিল। আমরা বাজার থেকে শুধু আলু পেঁয়াজ কিনতাম অন্য কিছু কিনতাম না। এবারে গরু এসে-গেল মানে গরুর দুধ ও কেনা হবে না। ঘরে ৬২ টা মুর্গী ছিল । কাজেই ডিম আর মুর্গীর মাংস ঘরেই পেতাম সকলে।
নীলকণ্ঠ কাঠ কেটে রাখত । সেই কাঠের জালের রান্না হত। বাবার খাওয়ার অনেক তরিবাত ছিল ।কাঠ কয়লার আঁচে মাংস রান্না হত খুব ধিক ধিকে আঁচে । বাবার ফেভেরাইট বাটি চচ্চড়ি সেটা আলু পোস্তর সঙ্গে মাশরুম দিয়ে ধিক ধিকে আঁচে বসবে ওপরে কাঁচা সর্ষের তেল আর কাঁচা লংকা চিরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এক জাম বাটি পাঁঠার মাংস বাবার প্রিয় ছিল। ভাত খুব ই কম খেতেন। রাতে দুখানি রুটি আর এক বাটি দুধ খেতাম আমরা সকলে ।
মা না-থাকলে ‘মিশ্র পিওন’ রান্না করতো । মিশ্র খুব তেল মসলা দিয়ে রান্না করতো । তাই জগদলপুর থেকে বাবা ‘মঙ্গল রাম’ বলে এক মধ্য প্রদেশের গয়লা বাবুর্চি আনেন। ও মুর্গা মসল্লা টা ক্লাস রান্না করতো । আমাদের বাড়িতেই দিশি মুর্গী থাকতো । মঙ্গল , বাবাকে সকালে কি কি রান্না হবে জিজ্ঞাসা করে নিজেই মুর্গি কাটতে চলে যেত । এখানে বলে রাখি তখন মালকানগিরিতে আনাজ খুব একটা পাওয়া যেত না। আমি মঙ্গলের কাছে মুর্গি কাটা শিখি । মঙ্গলের কোন ছুরির প্রয়োজন হত না । হাতেই সব সেরে ফেলত । তখন প্রেশার কুকার ওঠেনি । তাই কাঠ কয়লার আঁচেই খুব সুন্দর মাংস রান্না হত। এখন গ্যাসেও সেইরকম রান্না পাই না।
মিশ্রকে , বাবা *এপয়েন্টমেন্ট ( *তখন সরকারী গেজেটেড অফিসাররা থার্ড গ্রেড অবধি এপয়েন্টমেন্ট দিতে পারতেন) দিয়েছিলেন ও পুরীর লোক বলে। বাবা অনেক কে এপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন যারা পরে প্রোমোশন পেয়ে উঁচু পোষ্টে রিটায়ার করেছেন।
মিশ্রর বাড়ি জানকাদেইপুর । ওটা একটা ছোট্ট রেল ষ্টেশন মালতিপাটপুরের আগে চন্দনপুরের কিছু দুরে। মঙ্গল আসার পর মিশ্র সকালে মঙ্গল রাতের ডিনার বানাত । আপনারা হয়ত মনে করবেন এগুল বানান , কিন্তু না তখন সিনিয়র ক্লাস ওয়ান অফিসারদের জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বরাদ্দ ছিল বাড়ির কাজের জন্য। মিশ্রকে মা রাতে আস্তে বারুণ করেছিলেন কারন ও সন্ধ্যে হলেই নেশাগ্রস্ত থাকতো । মা নেশাখোরকে একদম পছন্দ করতেন না। সেদিকে মঙ্গল রামের ওরকম কোন দোষ ছলনা । তা সত্ত্বেও মা বাবার জন্য রকমারি রান্না করতেন। বাবা খাওয়ার সময় থালার পাসে ছোট ছোট অনেক বাটিতে নানা ধরনের রান্না থাকত ।
আমার বাবা খুব আমুদে লক ছিলেন । নিজে যেমন খেতে ভালোবাসতেন পরকেও সেইরকম খাওয়াতেন। আমাদের বাড়িতে কেউ এলে এলাহি রান্না হত।
এরমধ্যে জামাই ষষ্ঠী এসেগেল। তখন আমাদের দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে ,
ক্রমশ ঃ-
আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতিঃ-
(তৃতীয় পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
(তৃতীয় পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
জ্যৈষ্ঠ মাসের রৌদ্র তাপ । মালকানগিরি তে তখন প্রায় ৪০ ডিগ্রী
উত্তাপ। ফাল্গুন মাস থেকেই গরমে অতিষ্ঠ সকলে। জলের কষ্ট কারন একমাত্র জলাশয় নাম ‘বালি-সাগর’
এক প্রকাণ্ড সাগর স্বরূপ পুষ্করিণী যার ওপর সমস্ত মালকানগিরি র
অধিবাসী নির্ভরশীল । এই বালি-সাগরের বিষয় কিছু না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে
লেখাটা। নাম থেকেই সহজে অনুমেয় সেই রামায়ণের ‘বালি’ রাজা এখানেই তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। বালি-মেলা চিত্র-কুণ্ডার
বিষয় আসবো পরে । বালি-সাগরের জল পরিচ্ছন্ন । জলেতে কর্পূরের বাস ছিল । পুষ্করিণীর
ওপর থেকেই তলার বালির শয্যা দেখা-যেত । বালিতে অভ্র (Mica) ছিল
তাই সূর্যর কিরণে বালি-সাগরের জল স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ ছিল। বালি-সাগরের জলাশয়ের
অপর শ্বেত পদ্ম অনেকটা যায়গা জুড়ে ছিল। বালি-সাগরে ধার দিয়ে আমাদের স্কুলের রাস্তা
ছিল। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে অই শ্বেত পদ্মের শোভা দেখে মুগ্ধ হতাম । অবাক হয়ে
তাকিয়ে থাকতাম প্রকৃতির সৌন্দর্য । উইলিয়াম ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ওই শ্বেত পদ্মর শোভা
দেখলে ‘ডেফডিলস’ ছেড়ে ‘লোটাস’ লিখতেন । আমি ত কবি নই তাই বিশেষ বর্ণনা দিতে
পারলামনা। কবি সম্রাট উপেন্দ্র ভঞ্জ (১৬৭০ সালে জন্ম ১৭৪০ এ দেহ ত্যাগ ) প্রাচীন
উৎকলের পুরাতন রাজ শাসিত উড়িষ্যার ঘুমুসুরের কুলাড় তে জন্ম । উনি রাজ পরিবারের
হয়েও কবিতা লিখতেন রাজ কর্ম ছেড়ে । অসংখ্য কাব্য সৃষ্টি করেছিলেন। ওনার লেখা
কাব্যগ্রন্থ “কোটি লাবণ্য সুন্দরী” থেকে
উধৃত দুলাইন অনুবাদ করতে চেষ্টা করলাম। ওই পদ্ম ফুলের শোভায় এই কবিতার সৃষ্টি তাই
দু লাইন .......
“দেখরে নলিনী নলিনীতে শোভিত
ভ্রমেতে ভ্রমর ভ্রমে চকিত”
আমার মনে আছে লক্ষ্মী পূজো এবং সরস্বতী পূজোর সময় ওই বালি সাগর থেকেই আমরা শ্বেত পদ্ম আনতাম । সারা গ্রীষ্মকাল নীলকণ্ঠ ওই বালি-সাগর থেকে টিনের ভারে জল এনে আমাদের বড় মাটির হাঁড়ী ভর্তি করে জল রাখতো । তখন ফিলটার ছিলনা তাই মা জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়াতেন । কত খাটতে হত তখনকার মায়েদের ! আমাদের ঘরের কুয়োর জলেই আমরা স্নান সারতাম।
“দেখরে নলিনী নলিনীতে শোভিত
ভ্রমেতে ভ্রমর ভ্রমে চকিত”
আমার মনে আছে লক্ষ্মী পূজো এবং সরস্বতী পূজোর সময় ওই বালি সাগর থেকেই আমরা শ্বেত পদ্ম আনতাম । সারা গ্রীষ্মকাল নীলকণ্ঠ ওই বালি-সাগর থেকে টিনের ভারে জল এনে আমাদের বড় মাটির হাঁড়ী ভর্তি করে জল রাখতো । তখন ফিলটার ছিলনা তাই মা জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়াতেন । কত খাটতে হত তখনকার মায়েদের ! আমাদের ঘরের কুয়োর জলেই আমরা স্নান সারতাম।
১৯৬৩ সাল । জামাই ষষ্ঠী মানেই এলাহি কাণ্ড ।
জামাই বলে কথা। দুজনেই এলেন । আমাদের প্রথম ভাগ্নি , বানী র তখন বোধ হয়
এক বছর বয়েস হবে। সকলে বলে আমার ঠাকুমা নাকি বানী হয়ে ফিরে এসেছেন আমাদের কাছে।
হবে হয়ত । তবে হ্যাঁ বানী খুব চার্মিং ছিল ছোট বেলায় । দেখতে যেমন ডল পুতুলের মতন
সেইরকম টক টক কথা বলত । মাকে বলত , “ দিদুন - চটি ছাতা ভুঁ।”
মানে ওকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। সারাক্ষণ মায়ের কোলে ঘুরে বেড়াত ।
বাবা আদর করে বলতেন “বানী মালকানগিরিকি রাণী” ।
দিনগুলো
ভালোই কাটত । প্রসঙ্গে আসি ঃ মালকানগিরি সত্যি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অত্যন্ত মনোরম
ছিল। চারিদিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এক ভূখণ্ড । আসল নাম মাল্যবন্তগিরি । এর পৌরাণিক
দিক আছে। রাম এবং সীতা দেবী সঙ্গে ভ্রাতা লক্ষণ এই দণ্ডকারণ্য তে আসেন বনবাসে ।
এখানেই তমসার ধারে কুটীরে রাম সীতা বনবাসে ছিলেন। বালিমেলা এখানথেকে ১২ কিমি হবে
ওই খানেই সপ্ত তাল ভেদ করে রাম , বালিকে হত্যা করে সুগ্রীবকে রাজা করেন ।
তমসা নদী এবং বালি সাগর এখন আর নেই। আমরা থাকার সময় ছিল দুটোই । প্রকাণ্ড বালি
সাগরে পদ্ম ফুটে থাকত আর জল কাঁচের মত স্বচ্ছ ছিল। নীলকণ্ঠ ওই বালি সাগর থেকে জল
নিয়ে আসত । বাড়িতে পাতকুয়ো ছিল সেটার জল খাওয়া হত না। তাই খাওয়ার জল বালি সাগর
থেকেই আসত । সেই জল ফুটিয়ে ছেঁকে মা কলশিতে রাখতেন। তখন না ছিল ফিল্টার না ছিল
একুয়াগার্ড । তাই আমাদের ওই জল ই ভরসা ছিল ।
বাবা , সিং জীকে জীপ নিয়ে কাছেই তমসা নদী দেখিয়ে আনতে বলেন জামাই বাবাজীকে। সেখানে জামাই বাবাজী গেলেন । একটু সন্ধ্যা হয়ে আসছিল সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি ছিল। দূরে অন্ধকারে দুটো চোখ দেখে জামাই বাবু ভাবলেন নিশ্চই বাঘ। ভঞ্জ বলে এখন মোষেদের ফেরার সময় ওটা বাঘ নয় মোষ। কে কার কথা শোনে ! সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ঘুরিয়ে পগার পা। বাড়িতে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন জামাই রাজা । ভঞ্জ বলে সার , মোষের চোখ দেখে বাঘ বলে ফিরে আসেন। বাবা বোঝেন কিন্তু বলেন ঠিক আছে তোমরা যাও । আসলে সহরের মানুষ জঙ্গলে বেড়াল দেখলেও ভাবে ছোট বাঘ ওই আরকি !
ভঞ্জ শিকারি আমাদের নিয়ে যেত জঙ্গলে বুনো মুর্গি শিকার করতে। ও বলত বোনের মুর্গি শিকারের সময় কখন পেটে তাক করবেনা। তাহলে পুরো মুর্গি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ও মাথায় তাক করত । যদিও খুব কষ্টকর ব্যাপার কিন্তু তাই হত এবং দেখতাম মাথা বাদ পুরো মুর্গি আস্ত থাকত । বাবা বুনো মুর্গির মাংস খেতে খুব ভালো বাসতেন। ভঞ্জ একটা মুর্গির জন্য ৫০ টাকা বকশিস পেত। এখন ভাবি ওটা কিছুই নয় ওর পরিশ্রমের বদলে । কিন্তু ও তাতেই খুশী হত।
বেশ কাটছিল দিনগুলো । এরমধ্যে হটাত দণ্ডকারণ্যর চিফ এডমিনিষ্ট্রেটার জনসন সাহেব (অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান ) আই.সি.এস অফিসার টুরে আসেন বাবার অফিস ইন্সপেকশন এ । লম্বা ফর্ষা , ব্রাউন হেয়ার , মাথায় ফেল্ট ক্যাপ । বেশ ভারিক্কি চেহারা। উনি কালো রংয়ের এক ক্যাডিল্যাক কারে লাল বাতি লাগিয়ে আসেন। বাবার ওই "বাঘের মুখে পড়ার" কথা এবং অন্য কিছু কাজের জন্য আসেন । বাবা যে টুরে টেন্টে থাকতেন তা উনি শোনেন এবং যানেন। এক রাত উনি হল্ট করেন দণ্ডকারণ্যর আই.বি তে । মা এরমধ্যে নানা ভোজনের আয়োজন করেন । পোলাও , মাংস , মুর্গি , নানা তরকারি, সালাড , পায়েস ইত্যাদি। লাঞ্চ খাওয়ার সময় আমাদের ঘরের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যায়। বাবা ময়ুরভঞ্জে পোষ্টেড ছিলেন তাই সেখান থেকে ময়ুরভঞ্জের রাজার কিছু জিনিষ যেগুলো আর রাজা ব্যাবহার করেন না সেগুলো কিনে এনে ছিলেন। আসলে আমার বাবা ভীষণ সৌখিন মানুষ ছিলেন। ওই জিনিস গুলির মধ্যে একটা ফুল ডিনার সেট । টি সেট , পিওর গোল্ড প্লেটেড চামচ, ছুরি , কাঁটা চামচ ও কিনেছিলেন । ওগুলো রুপোর ওপর সোনার প্লেটিং করা। সেগুলো ওই জনসন সাহেব আসাতে কাজে লাগে লাঞ্চে এবং ডিনারে।
ক্রমশ ঃ-
বাবা , সিং জীকে জীপ নিয়ে কাছেই তমসা নদী দেখিয়ে আনতে বলেন জামাই বাবাজীকে। সেখানে জামাই বাবাজী গেলেন । একটু সন্ধ্যা হয়ে আসছিল সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি ছিল। দূরে অন্ধকারে দুটো চোখ দেখে জামাই বাবু ভাবলেন নিশ্চই বাঘ। ভঞ্জ বলে এখন মোষেদের ফেরার সময় ওটা বাঘ নয় মোষ। কে কার কথা শোনে ! সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ঘুরিয়ে পগার পা। বাড়িতে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন জামাই রাজা । ভঞ্জ বলে সার , মোষের চোখ দেখে বাঘ বলে ফিরে আসেন। বাবা বোঝেন কিন্তু বলেন ঠিক আছে তোমরা যাও । আসলে সহরের মানুষ জঙ্গলে বেড়াল দেখলেও ভাবে ছোট বাঘ ওই আরকি !
ভঞ্জ শিকারি আমাদের নিয়ে যেত জঙ্গলে বুনো মুর্গি শিকার করতে। ও বলত বোনের মুর্গি শিকারের সময় কখন পেটে তাক করবেনা। তাহলে পুরো মুর্গি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ও মাথায় তাক করত । যদিও খুব কষ্টকর ব্যাপার কিন্তু তাই হত এবং দেখতাম মাথা বাদ পুরো মুর্গি আস্ত থাকত । বাবা বুনো মুর্গির মাংস খেতে খুব ভালো বাসতেন। ভঞ্জ একটা মুর্গির জন্য ৫০ টাকা বকশিস পেত। এখন ভাবি ওটা কিছুই নয় ওর পরিশ্রমের বদলে । কিন্তু ও তাতেই খুশী হত।
বেশ কাটছিল দিনগুলো । এরমধ্যে হটাত দণ্ডকারণ্যর চিফ এডমিনিষ্ট্রেটার জনসন সাহেব (অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান ) আই.সি.এস অফিসার টুরে আসেন বাবার অফিস ইন্সপেকশন এ । লম্বা ফর্ষা , ব্রাউন হেয়ার , মাথায় ফেল্ট ক্যাপ । বেশ ভারিক্কি চেহারা। উনি কালো রংয়ের এক ক্যাডিল্যাক কারে লাল বাতি লাগিয়ে আসেন। বাবার ওই "বাঘের মুখে পড়ার" কথা এবং অন্য কিছু কাজের জন্য আসেন । বাবা যে টুরে টেন্টে থাকতেন তা উনি শোনেন এবং যানেন। এক রাত উনি হল্ট করেন দণ্ডকারণ্যর আই.বি তে । মা এরমধ্যে নানা ভোজনের আয়োজন করেন । পোলাও , মাংস , মুর্গি , নানা তরকারি, সালাড , পায়েস ইত্যাদি। লাঞ্চ খাওয়ার সময় আমাদের ঘরের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যায়। বাবা ময়ুরভঞ্জে পোষ্টেড ছিলেন তাই সেখান থেকে ময়ুরভঞ্জের রাজার কিছু জিনিষ যেগুলো আর রাজা ব্যাবহার করেন না সেগুলো কিনে এনে ছিলেন। আসলে আমার বাবা ভীষণ সৌখিন মানুষ ছিলেন। ওই জিনিস গুলির মধ্যে একটা ফুল ডিনার সেট । টি সেট , পিওর গোল্ড প্লেটেড চামচ, ছুরি , কাঁটা চামচ ও কিনেছিলেন । ওগুলো রুপোর ওপর সোনার প্লেটিং করা। সেগুলো ওই জনসন সাহেব আসাতে কাজে লাগে লাঞ্চে এবং ডিনারে।
ক্রমশ ঃ-
আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:-
(চতুর্থ পর্ব)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
(চতুর্থ পর্ব)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
জনসন সাহেব , বাবার সঙ্গে বাবা যেখানে সএল সার্ভে
পার্টি আছে তাদের সঙ্গে তাদের কাজের তদারকি এবং কি কি কাজ হচ্ছে তার প্রগতির সঙ্গে
সেগুলি খুঁটিয়ে দেখতে গেলেন। এখানে বলে রাখি বাবাকে দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টে
ডেপুটেশনে পাঠান হয়েছিল ; তখনকার পূর্ব পাকিস্তান(অধুনা
বাংলা দেশের) শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য সঠিক চাষোপযোগি জমি সরকারি ভাবে
বিতরণের আগে সএল সার্ভে করার জন্য । প্রত্যেক শরণার্থীকে দু একর করে জমি দেওয়া হবে
সরকারের তরফ থেকে । তারা সেই জমিকে বাসোপযোগী করে চাষ করে নিজেদের পরিবার ভরন পোষণ
করবে। এক একটি নতুন গ্রাম সৃষ্টি হবে পুরো মালকানগিরি সাবডিভিশন জুড়ে বিভিন্ন
জায়গায় যার নাম্বার থাকবে এম.ভি.নম্বর..... । এম.ভি.মানে মালকানগিরি ভিলেজ। কতবড়
গুরু দায়িত্বের কাজ সহজেই অনুমেয়। এখানে আরো বলে রাখি জনসন সাহেবের আগে সুকুমার
রায় আই.সি.এস কে তখনকার পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্বনাম ধন্য ডঃ বিধান চন্দ্র
রায় , দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের শুভারম্ভ করার জন্য বিশেষ
তাৎপর্যের সঙ্গে পাঠান হয়। সুকুমার রায় বাবাকে খুব স্নেহ করতেন কারন বাবা কাজ
পাগলা লোক ছিলেন এবং টেকনিক্যালি সাউন্ড এবং ইংরেজিতে খুব ভালো ছিলেন । ব্রিটিশ
আমলে অফিসারেরা সাধারণত ইংরেজিটা ভালো যানতেন । তাই বাবা যেমন খেতে ভালোবাসতেন ঠিক
সেইরকম প্রচণ্ড পরিশ্রম করে ফিল্ডে ফিল্ডে কাজের তদারকি করতেন ও অফিসিয়াল কাজের
সময় অনর্গল স্টেনোকে ডিক্টেসন দিতে দেখেছি। এখনকার অফিসাররা ডিক্টেসন দিতে হোঁচট
খান। অনেক সময় ভালো স্টেনোরাই ড্রাফট তৈরি করে আনেন । এসবের দিক থেকে বাবা
সম্পূর্ণ আলাদা । তাই সুকুমার সেন বাবাকে ভালোবাসতেন ওনার কাজের প্রশংসা করে । সএল
সার্ভে তে অনেক টেকনিকাল কাজ আছে । প্রোফাইল স্টাডি , সএল
টেস্ট , ফার্টিলিটি স্ট্যাটাস ইত্যাদি। বাবা , দেরাদুনের সএল কঞ্জারভেসন ট্রেনিং ইন্সটিট্যুটে , পোষ্ট
গ্রাজুয়েট কোর্স কমপ্লিট করেছিলেন। তাই সএল সার্ভের বিষয় ভালো বুঝতেন। এখানে আরো
বলে রাখি , বাবা নাগপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের থেকে গোল্ড
মেডেল পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে ১৯৩৩ এ পাস করেন। সালটা ঠিক মনে করতে
পারছিনা হয়ত এক বছর এদিক ওদিক হবে।
সএল সার্ভের পর পুরো রেভিনিউ ভিলেজের রিপোর্ট , সএল ম্যাপ , সএল ফার্টিলিটি স্ট্যাটাস , বিভিন্ন সএল পিটের ম্যাক্রো এবং মাইক্রো প্রোফাইল তৈরি করে সেগুলো দিতে হয়। এরপর রেভিন্যু ডিপার্টমেন্ট থেকে জমি শরণার্থীদের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়। এইসব কাজে একটু গাফিলতি হলেই সমস্ত দায়িত্ব বাবার ঘাড়ে পড়বে। তাই বাবাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সমস্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে কাজ তদারকি করতে হত। মাসের প্রথমেই স্টাফদের মাস মাহিনা ড্র করে সেগুলি আবার প্রত্যেক স্টাফ কে তাদের কাজের যায়গায় দিয়ে আসা। এক একটা ক্যাম্পে একজন জে.টি.এ বা জুনিয়ার টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট কিম্বা সিনিয়ার টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট এবং তাঁর আণ্ডারে সার্ভেয়ার , ড্রাফটসম্যান , ফিল্ড এসিস্টেন্ট , চেন ম্যান , ট্র্যাক্টর ড্রাইভার ইত্যাদি স্টাফেরা থাকত । ক্যাম্পে তাঁবু , রান্নার সরঞ্জাম , ফোল্ডিং খাট এবং একটি করে কুক থাকত । প্রত্যেক ক্যাম্পে একটা করে ফার্গুসন ট্র্যাকটার থাকত । ডিজেল সাপ্লাই এবং ট্র্যাকটার মেরামত ইত্যাদির জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ার মালকানগিরিতে পোষ্টেড ছিলেন। ওনার আণ্ডারে ওয়ার্ক শপ ছিল । ওইখানে সব গাড়ি যেমন জীপ , ট্র্যাকটার মেরামতের জন্য আসত । ওই ওয়ার্কশপ , অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বাবার আণ্ডারে ছিলেন । আরো দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সএল কঞ্জারভেসন অফিসার বাবাকে সহযোগিতা করতে পোষ্টেড ছিলেন । একজন হৃদানন্দ মাহান্তি আরেক জন চৌধুরী সাহেব।
প্রসঙ্গে আসি। জনসন সাহেব সমস্ত ফিল্ড এবং ক্যাম্পগুলি নিজে বাবার সঙ্গে ঘুরলেন দুদিন ধরে । পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে ফিল্ড ভিজিট এবং কাজের অগ্রগতিতে খুব খুশী হয়ে বাবাকে যাওয়ার আগে খুব প্রশংসা করে গেলেন । Congratulation Mr Mukerjee , I am very much happy that you are doing excellent work with your team . I also congratulate your staff for their team work and full cooperation with you. Thank you all and do your job for a noble cause. এইটুকুই আমার কানে এল। বাবা উত্তর দিলেন
সএল সার্ভের পর পুরো রেভিনিউ ভিলেজের রিপোর্ট , সএল ম্যাপ , সএল ফার্টিলিটি স্ট্যাটাস , বিভিন্ন সএল পিটের ম্যাক্রো এবং মাইক্রো প্রোফাইল তৈরি করে সেগুলো দিতে হয়। এরপর রেভিন্যু ডিপার্টমেন্ট থেকে জমি শরণার্থীদের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়। এইসব কাজে একটু গাফিলতি হলেই সমস্ত দায়িত্ব বাবার ঘাড়ে পড়বে। তাই বাবাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সমস্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে কাজ তদারকি করতে হত। মাসের প্রথমেই স্টাফদের মাস মাহিনা ড্র করে সেগুলি আবার প্রত্যেক স্টাফ কে তাদের কাজের যায়গায় দিয়ে আসা। এক একটা ক্যাম্পে একজন জে.টি.এ বা জুনিয়ার টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট কিম্বা সিনিয়ার টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট এবং তাঁর আণ্ডারে সার্ভেয়ার , ড্রাফটসম্যান , ফিল্ড এসিস্টেন্ট , চেন ম্যান , ট্র্যাক্টর ড্রাইভার ইত্যাদি স্টাফেরা থাকত । ক্যাম্পে তাঁবু , রান্নার সরঞ্জাম , ফোল্ডিং খাট এবং একটি করে কুক থাকত । প্রত্যেক ক্যাম্পে একটা করে ফার্গুসন ট্র্যাকটার থাকত । ডিজেল সাপ্লাই এবং ট্র্যাকটার মেরামত ইত্যাদির জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ার মালকানগিরিতে পোষ্টেড ছিলেন। ওনার আণ্ডারে ওয়ার্ক শপ ছিল । ওইখানে সব গাড়ি যেমন জীপ , ট্র্যাকটার মেরামতের জন্য আসত । ওই ওয়ার্কশপ , অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বাবার আণ্ডারে ছিলেন । আরো দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সএল কঞ্জারভেসন অফিসার বাবাকে সহযোগিতা করতে পোষ্টেড ছিলেন । একজন হৃদানন্দ মাহান্তি আরেক জন চৌধুরী সাহেব।
প্রসঙ্গে আসি। জনসন সাহেব সমস্ত ফিল্ড এবং ক্যাম্পগুলি নিজে বাবার সঙ্গে ঘুরলেন দুদিন ধরে । পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে ফিল্ড ভিজিট এবং কাজের অগ্রগতিতে খুব খুশী হয়ে বাবাকে যাওয়ার আগে খুব প্রশংসা করে গেলেন । Congratulation Mr Mukerjee , I am very much happy that you are doing excellent work with your team . I also congratulate your staff for their team work and full cooperation with you. Thank you all and do your job for a noble cause. এইটুকুই আমার কানে এল। বাবা উত্তর দিলেন
Thank you for your kind
visit to the entire project area . We are inspired and will definitely follow
your instruction, Sir. On behalf of my staff I thank you for
giving us such nice advice . Inspite of your busy schedule of work you have taken much pain to visit all
the project site and checked the work progress . It is a rare opportunity to
get, Chief Administrator of Dandakaranya Project at Malkangiri with us . I
request you to come again to give us moral encouragement to discharge our duty
most efficiently and sincerely . মনে হল জনসন সাহেব বাবার কাজে
খুশী হয়েছেন।
জনসন সাহেব আমাকেও একটু
আদর করে গেলেন কারন আমি কাছেই ছিলাম। আমি একটু বাবা ন্যাওটা ছিলাম তাই কাছে কাছেই
থাকতাম এবং প্রায় সময় বাবার সঙ্গে টুরে যেতাম। সচর আচর ব্রিটিশ আই.সি.এস.
অফিসারেরা বড় একটা কথা বলেন না। কিন্তু উনি বাবার কানে কানে কিছু গোপন কথা বলে
গেলেন যাওয়ার আগে । বাবা কথাটা শুনে একটু গম্ভীর হয়ে যান। কি এমন কথা যা প্রকাশ্যে
বলা যায়না। আমার একটু ভয় হল। ভয়ের কিছু নেই ত । কি জানি ব্রিটিশ সাহেবদের কথা ই
আলাদা ।
জনসন সাহেব কোরাপুটে ফিরে গিয়ে দিল্লীতে চিঠি পাঠান একটা করে ক্যারাভ্যান প্রত্যেক ডিভিশনে পাঠানোর জন্য । এখানে ফিল্ড অফিসারদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বাঘের উৎপাতে।
উনি দিল্লী-থেকে বিশেষ অনুমোদন অর্থ মঞ্জুরি এনে মালকানগিরি , উমোরকোর্ট আর পার্লকোর্ট ডিভিশনে সেই বছর ই একটা করে ক্যারাভ্যান পাঠান ওই বাঘের উৎপাতের ঘটনার বিবরণী শুনে । বাবা জীবন বিপন্ন করে কাজ করতেন তাই ওই ‘ক্যারাভেন’ তাঁর ই দান । পরে বাবা ওনার কাছ থেকে আউট স্ট্যান্ডিং সি সি আর পেয়ে ডেপুটি ডাইরেক্টরের পদ মর্যাদা পান ।
জনসন সাহেব কোরাপুটে ফিরে গিয়ে দিল্লীতে চিঠি পাঠান একটা করে ক্যারাভ্যান প্রত্যেক ডিভিশনে পাঠানোর জন্য । এখানে ফিল্ড অফিসারদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বাঘের উৎপাতে।
উনি দিল্লী-থেকে বিশেষ অনুমোদন অর্থ মঞ্জুরি এনে মালকানগিরি , উমোরকোর্ট আর পার্লকোর্ট ডিভিশনে সেই বছর ই একটা করে ক্যারাভ্যান পাঠান ওই বাঘের উৎপাতের ঘটনার বিবরণী শুনে । বাবা জীবন বিপন্ন করে কাজ করতেন তাই ওই ‘ক্যারাভেন’ তাঁর ই দান । পরে বাবা ওনার কাছ থেকে আউট স্ট্যান্ডিং সি সি আর পেয়ে ডেপুটি ডাইরেক্টরের পদ মর্যাদা পান ।
আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:
(পঞ্চম পর্ব)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
(পঞ্চম পর্ব)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
জনসন সাহেব নতুন ক্যারাভ্যান পাঠান কোরাপুটে ফিরে যাওয়ার
পর । নতুন ক্যারাভ্যান ভাইজাগ থেকে বাই রোড পৌঁছয় । প্রায় দু সপ্তাহ পরে এসে
মালকানগিরি পৌঁছয় । নতুন ক্যারাভ্যান টানার জন্য একটা পাওয়ার ওয়াগন ও এসে পৌঁছয় ।
বাবা এবার থেকে টুরে গেলে ওই ক্যারাভ্যানে যাবেন। ক্যারাভ্যান এর ভেতর সব ব্যবস্থা
আছে। সুন্দর খাট বিছানা সমেত সাদা চাদর পাতা। একটা সোফা, ডাইনিং
টেবিল চেয়ার । পড়ার জন্য আলাদা টেবিল , টেবিল ল্যাম্প সমেত।
ছোট্ট রান্না ঘর । তাতে সব ইউটেন্সিল ছিল। তখনকার দিনের স্টিম কুকার। ধোঁয়া
বেরুনোর জন্য চিমনি । কিন্তু বাবা ভেতরে রান্না করতে বারুণ করেন কারন নোংরা
হয়েযাবে তাই। একটা ছোট বাথ রুম , টয়লেট তাতে কমোড ফিট করা। ওপরে জলের ট্যাঙ্ক ফিট করা । বাইরে
একটা লোক আরামে দু তিন দিন থাকতে পারবে । কোন অসুবিধে নেই। এবার সঙ্গে মঙ্গল সিং
গেল মুর্গা মসাল্লাম রেঁধে বাবাকে দেবে। তাছাড়া বনের মুর্গি ত আছেই। ভঞ্জ শিকারি
ও অন্য সব্বাই জিপে গেল । বাবা , মাকে সঙ্গে নিয়ে
গেলেন একটু ঘোরাও হবে মায়ের আর বাবা নিশ্চিন্তে কাজ করবেন। আমার যাওয়া হলনা ।
আমি , ছোড়দি ,বানি মালকানগিরিতেই কোয়ার্টারে থেকে-গেলাম । মিশ্র
রান্না করে দিয়ে যেত দু বেলার জন্য। এখানে বলে রাখি আমি এক বছর ওই মালকানগিরিতে
উড়িয়া স্কুলে পড়তাম। তখন ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলের চল ছিলনা । আদিবাসী ছেলে মেয়ে আর
কিছু লোকাল অফিসিয়ালের ছেলে মেয়েরা পড়ত ওই স্কুলে । আমার তখন ক্লাস সেভেন। এখানে
বৃত্তি পরীক্ষা ছিল। ছোটবেলায় বেলঘরিয়াতে বাংলা মিডিয়ামে পড়েছিলাম ক্লাস ফোর অবধি ,
বেলঘরিয়া বয়েজ স্কুলে। তারপর কটকে রেভেন্সা কলিজিএট স্কুল যেখানে নেতাজী পড়েছিলেন ।
সেখানেকে মালকানগিরি । বুঝতেই পারছেন ভাষা পরিবর্তনের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন কতটা
অসুবিধে হয় একটা ছোট ছেলের । আমি আবার অনেক ছোট বয়েসেই স্কুলে ভর্তি হই। তখন আমার
১০ বছর বয়েস । এটা ১৯৬৩ সালের কথা।
স্কুল যাওয়ার পথে বালি সাগরের ধারে প্রকাণ্ড সেগুন গাছ
সারি সারি ছিল। এক একটা সেগুন গাছ প্রায় ৩০ – ৩৫ ফুট লম্বা আর গোলার্ধে ১০ ফুট । ভেবে দেখুন কি
জঙ্গল সম্পদ ওই মালকানগিরিতে ছিল। এ ছাড়া কাছেই শাল বোন , তাতে
পিয়া শাল, বন্ধন, শাল, সেগুন ও শিশু কাঠের গাছ অপর্যাপ্ত । ২০ বছর পর সেই মালকানগিরি যাই পূর্ব
স্মৃতি র কিছু অংশ আছে কিনা দেখতে । হায়রে বিধাতা কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব মাফিয়াদের
কবলে সাফ ।
বেশ কিছুদিন পর পৌষ পূর্ণিমা এল। ওই সময় আদিবাসীদের
পর্ব। ওই পর্বে ওরা গান নাচ করে সলপ(এক রকমের দিশি মদ) খেয়ে পুরুষ, মহিলা
সব্বাই আনন্দে উৎসব করে আর সারা রাত নাচে। আমাদের বাড়ীতে নীলকণ্ঠ ওদের গ্রামে
আমাকে নিয়ে যাবে বলে , বলে পরব দেখানোর জন্য। ওদের গ্রাম কাছেই ছিল। মা গর রাজি হলেন কিন্তু
নীলকণ্ঠ বলে সে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে ওদের নাচ দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আমি খুব
বায়না ধরলাম ওই পর্ব দেখব বলে। ওদের নাচের একটা আলাদা আকর্ষণ আছে । নীলকণ্ঠ ওদের
গ্রামের নাচের গুরু অর্থাৎ নাচের মাষ্টার । ও নিজে গান লেখে আবার সুর দেয় । ওইটাই
আমাকে ওই পর্বের জন্য আকর্ষিত করে । অনেক বার নীলকণ্ঠ বলেছিল “বাবু আমি আপনাকে নিয়ে যাবো আমাদের নাচ
গ্রামের ধাংড়া ধাঙড়ীর নাচ দেখাতে ।”
ওই আদিবাসীদের নাচের তালে নীলকণ্ঠ মাদল বাজাত আর গান করত । তখন
আমাদের কাছে না ছিল টেপ রেকর্ডার না ছিল ভিডিও গ্রাফির জন্য ক্যামেরা। এখনকার দিন
হলে স্মার্ট ফোনেই সমস্ত ভিডিও করে রাখা যেত । তাই নিজের স্মৃতি থেকে এই গানটা
লিখেছি । ওরা প্রায় ওইরকম ই শব্দ ব্যাবহার করে গান গাইত ।
ঝুমরি
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯.০৮.২০১২ / বেলা ৩ টে ।
ছেলেঃ- ঝুমরি তোর নাচের তালে মাদল বাজে আমার
চেনা গানের সুরের তালে মাতাল হলাম আবার
মেয়েঃ- ঝুমরি তোর গানের সুরে পাগল হল আবার
রসিক নাগোর মরদ আমার মাদল বাজা আবার
ছেলেঃ- ঝুমরি তুই ফুলের তোডা খোঁপায় লাগা আবার
ফুলের গন্ধে ভরবে আমার পরান টা যে আবার
মেয়েঃ- শক্ত হাতে সামলে নে না সরম কেন
আবার
ঝুমরি তোকে মনটা দিল রসিক নাগর আমার
ছেলেঃ- ঢোল বাজিয়ে রাত পোহাবে নাচবি আমার সাথে
ঝুমরি তুই আমার ছিলি থাকবি আমার সাথে
মেয়েঃ- আমার জন্যে এনে রাখিস নতুন শাডী সিন্দুর
ঘরের কোনে ঘুম পাডাবি কিনে রাখিস মাদুর
ছেলেঃ- ঝুমরি তোর নাচের তালে মাদল বাজে আমার
চেনা গানের সুরের তালে মাতাল হলাম আবার
মেয়েঃ- ঝুমরি তোর গানের সুরে পাগল হল আবার
রসিক নাগোর মরদ
আমার মাদল বাজা আবার
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী /২৯.০৮.২০১২/৩.০০ টে
পরবের গান
( ঝর্না চ্যাটার্জ্জী র দ্বারা সম্পাদিত আদিবাসী দের
ফর্মাটে)
ছেল্যা-- ঝুমরি, তুর নাচের সঙে বাইজছ্যে মাদল
ছেল্যা-- ঝুমরি, তুর নাচের সঙে বাইজছ্যে মাদল
চিনা গান লাগছ্যে কানে হল্যম মাতাল
মেঁইয়া-- তুর গানট শুন্যে ঝুমরি পাগল হল্যেক
রসিক নাগর মরদ আমার ফির বাজাল্যেক
ছেল্যা--ঝুমরি, তুই ফুলট আবার মাথায় দিল্যেক
উয়ার গন্ধে মনট আবার ভর্যে গেল্যেক
মেঁইয়া--মরণ টানে ধর ক্যানে তুই হাত দু-টাকে
ঝুমরি তুকে মনট দিছে, জানিস বটে !
ছেল্যা-- ঢোল বাজাব, আমার সঙে নাচবি রেতে
ঝুমরি তু আমার ছিলি, আমার বটে...
মেঁইয়া-- শাড়ী সি*দুর রাখবি কিনে
ঘরের ভিতর মাজুরটকে রাখবি আন্যে
ছল্যা-- ঝুমরি তুর নাচের সঙে মাদল বাজাই
চল ক্যানে তুর সঙে আবার মহুয়া খাই
মেঁইয়া--ঝুমরি তুর গানট শুন্যে পাগল হল্যেক
রসিক আমার মরদ বটে জান্ত্যে পাল্যেক...
মেঁইয়া-- তুর গানট শুন্যে ঝুমরি পাগল হল্যেক
রসিক নাগর মরদ আমার ফির বাজাল্যেক
ছেল্যা--ঝুমরি, তুই ফুলট আবার মাথায় দিল্যেক
উয়ার গন্ধে মনট আবার ভর্যে গেল্যেক
মেঁইয়া--মরণ টানে ধর ক্যানে তুই হাত দু-টাকে
ঝুমরি তুকে মনট দিছে, জানিস বটে !
ছেল্যা-- ঢোল বাজাব, আমার সঙে নাচবি রেতে
ঝুমরি তু আমার ছিলি, আমার বটে...
মেঁইয়া-- শাড়ী সি*দুর রাখবি কিনে
ঘরের ভিতর মাজুরটকে রাখবি আন্যে
ছল্যা-- ঝুমরি তুর নাচের সঙে মাদল বাজাই
চল ক্যানে তুর সঙে আবার মহুয়া খাই
মেঁইয়া--ঝুমরি তুর গানট শুন্যে পাগল হল্যেক
রসিক আমার মরদ বটে জান্ত্যে পাল্যেক...
No comments:
Post a Comment