Tuesday, July 25, 2017

অণুগল্প নদীর এপার ওপার ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ২৬.০৭.২০১৭














ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী  ২৬.০৭.২০১৭



ছোট্ট একটি গ্রাম । নাম ইতি-পুর । গ্রামটির ধার দিয়ে বয়ে গিয়েছে ছোট্ট একটি নদী । নাম ‘দয়া’ নদী । যারা “ধউলি শান্তি স্তূপ” দেখেছেন তারা নিশ্চয় এই দয়া নদীর ব্রিজের ওপর দিয়ে গিয়েছেন । দয়া নদীর ইতিহাস মর্ম স্পর্শী কারন এখানেই কলিঙ্গ যুদ্ধ হয় । হাজার হাজার কলিঙ্গ সেনার রক্তে ভাসে দয়া নদী । দয়া নদীর বর্ণ লাল হয় । সম্রাট অশোক এখানেই চণ্ডাশোক থেকে ধর্মাশোকে পরিণত হন । বৌদ্ধ ভিক্ষু উপ গুপ্ত তাঁকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেন । তাই জাপান থেকে এসে বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এখানে শান্তি স্তূপ বানান । বিশিষ্ট প্রস্তর শিল্পী সুদর্শন পট্টনায়ক এই শান্তি স্তূপ বানান । এর পর থেকে এই শান্তি স্তূপ প্রধান আকর্ষণ হয় পর্যটকদের এবং পুরী ভুবনেশ্বর এলেই লোকে ধউলি শান্তি স্তূপ অবশ্যই দেখে যান । তবে আমি বলছি ইতিপুরের কথা । এই গ্রামটি দয়া নদীর ধারে অবস্থিত । নাম থেকেই সহজে অনুমেয় এটা শেষ গ্রাম তাই নাম ‘ইতি-পুর’ । এই গ্রামে অনেক দিন আগে এক দম্পতী বাস করতেন নদীর ধারে ঘর বানিয়ে । স্বামী কাজে যেতেন কিন্তু স্ত্রী সারাক্ষণ ঘরে মন মরা হয়ে বসে থাকতেন। ঘরে স্বামী ফিরলে বলতেন , “নদীর ওপার টা কত সুন্দর তুমি ওপারে কেন ঘর বানালে না । ওপারের রং কি সুন্দর সোনার মতন বালি , নীল রঙ্গের পাহাড় , আর সবুজ রঙ্গের গাছ পালা । মেঘ ঢাকা পাহাড় আর তাতে বিদ্যুতের ঝলকানি সব মিলিয়ে ছবির মতন লাগে । এপারটা দেখ কিছুই আকর্ষণ নেই যেন খাঁ খাঁ লাগে । আমার ভালো লাগে না । তুমি ওপারে ঘর কর । আমি ওপারে থাকবো । ”
স্বামী আশ্চর্য হয়ে বলতেন ঠিক আছে একদিন ওপারে নিয়ে যাবো তোমাকে । তারপর বলবে কোথায় ঘর করলে ভালো হবে । এক রবিবার স্বামী স্ত্রী তে ওপারে গেলেন । স্ত্রী ওখানে পৌঁছে বললেন এ কোথায় নিয়ে এলে তুমি ? এতো আমার সেই নদীর ওপার নয়। এখানে পাহাড় গর্তে ভরা । মরা গাছের ডালে ন্যাড়া পাহাড় অতি কদাকার লাগছে । এটা সে জায়গা নয় ।
স্বামী বোঝান স্ত্রীকে , তুমি ভুল করছ । এটাই সেই জায়গা , যা তুমি ওপার হতে দেখতে । এখন দেখ আমাদের ওপার কেমন দেখাচ্ছে ? কি সুন্দর দেখেছ ! সবুজ গাছ পালা , ধানের ক্ষেত , সরু বাঁকা নদী বয়ে গিয়েছে । সব মিলিয়ে চিত্রকরের হাতে তূলির টানে আঁকা চিত্রপট । দেখ আমি কত সুন্দর জায়গায় তোমাকে রেখেছি অথচ তুমি আমার তৈরি ঘরকে হতাদর করছ । এখন বল কোথায় তুমি থাকবে? এখানে না ওখানে ? এইখানেই ভগবানের সৃষ্টি দুটো চিত্রপট দেখলে !
ভগবান আমাদের দুটি জিনিষ দিয়েছেন ১. তৃষ্ণা ২. তৃপ্তি । তুমি , তৃষ্ণার বশবর্তী হয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টিকে তুলনা করে মনে তৃপ্তি পাচ্ছিলেনা তাই অতৃপ্ত তোমার আকাঙ্ক্ষা । যা আছে তাতে তুমি তৃপ্ত হলে তোমার আকাঙ্ক্ষা হবেনা কিন্তু অতৃপ্ত হলে আকাঙ্ক্ষা বাড়বে । সেখানে তুমি যত যাই পাওনা কেন সর্বদা একে তাকে দুষবে , মনে কষ্ট পাবে । কিন্তু তোমার তৃষ্ণার সমাপ্তিতে তুমি পরম আরাধ্য পরম পিতা ভগবানের সন্নিকটে আত্ম তৃপ্তি পাবে। তাই আকাঙ্ক্ষাকে সীমিত রাখ ।
স্বামীর কথায় স্ত্রী হতবাক । স্ত্রী তাঁর ভুল বোঝেন ।

Monday, July 10, 2017

আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:- (প্রথম পর্ব) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ১ম,২য়,৩য়,৪র্থ .৫ম ..পর্ব



     উপক্রমণিকা
আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি ঃ- 
আমি অতীত কে পাশ বালিশের মতন আঁকড়ে ধরে রাখতে পারছিনা আবার বর্তমান কে অস্বীকার করতে পারছিনা কারন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উত্তর-দায়িত্ব রাখতে হবে আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ । আমাকে রেখে যেতে হবে এমন কিছু নিদর্শন যা আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের স্মৃতি-থেকে আমাকে বিচ্যুত না করে । তাদের শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তি হোক তারা মানুষের মত মানুষ হোক এই আশা । মানুষকে ঘৃণা করা সোজা কিন্তু ভালোবাসা কঠিন । যদি তোমার বাক্যের মিষ্টতায় কারুর মনে প্রেম , প্রীতি , ভালোবাসার উদ্রেক হয় তবে কুণ্ঠা কিসের ! বিলিয়ে যাও সেই মিষ্টতা , ভালোবাসা । দেখবে তোমার মিত্র সংখ্যা বাড়বে আর শত্রু নিজেকে আয়নায় দেখে ধিক্কার দেবে নিজের অপকর্মের জন্য । দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার । এ আর নতুন কি ? ত মহাভারত , রামায়ণ সব মহাকাব্যেই সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত । বিধির বিধান কে কেউ টলাতে পারবে না । আজ যে টাকার প্রাচুর্যে উল্লাসিত , কাল হয়ত সে ফকীর ! কথায় বলে লক্ষ্মী চঞ্চলা । তাঁকে কাছে পেয়ে যে বা যারা গর্বে হিতা হিত জ্ঞান হারায় এবং বড়দের অসম্মান করে তাদের ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখের হয়না। আজকাল সংসারে এইরকম অমানুষের অভাব নেই। মিথ্যা কথা বলে অপরের ন্যায্য দাবিথেকে বঞ্চিত করে বড়লোক হয়ত সাময়িক ভাবে হওয়া যায় কিন্তু কে বলবে কার ভবিষ্যৎ কি হবে ? কার কি ভবিতব্য হবে কেউ বলতে পারে না । কোন গ্রহ রত্ন কখনই কারুর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে না ! যারা বলেন সেগুলো আজগুবি কথা। আমি মানি না। মানবো না। আমার মা বাবা দুজনেই অনেক কষ্ট স্বিকার করে অনেক দুর্গম অঞ্চলে থেকে আমাদের মানুষ করেছেন। আমারা বলি আমারা মানুষ হয়েছি কিন্তু কে কতটা হয়েছে সেটাই যাচাই করা প্রয়োজন । সে যাচাই অন্য কেউ করবেনা নিজেকেই করতে হবে। আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব বলবে কে কতটা মানুষ আর কে কতটা আমানুষ। আমি চেষ্টা করছি কোণ কটু মন্তব্য না করে কিম্বা অভিযোগ আলোচনা না করে বাবা মা আমাদের প্রতি যা যা কর্তব্য এবং ত্যাগ করেগিয়েছেন নিজেরা না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন , নিজেরা সব সুখ দুঃখ ভুলে কেবল আমাদের কথাই ভেবেছেন । তাই তাঁদের ই স্বরন করে আমার যতটুকু মনে পড়ছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখা। সেটাই তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি । এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।

আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:- 
(প্রথম পর্ব)
 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী 
১৯৬২ সাল যায়গাটার নাম মালকানগিরি , কোরাপুট জেলা , উড়িষ্যা । বাবা দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের জোনাল এগ্রিকালচার অফিসার ছিলেন । সিনিয়র ক্লাস ওয়ান অফিসার এ প্রোমোশন পেয়ে কেন্দ্র সরকারের অধীনে ডেপুটেসনে ছিলেন।
এমনিতেই বাবা মাঝে মাঝে জয়পুর যেতেন অফিসের কাজে মিটিং এ্যাটেন্ড করতে টুরে । তখন দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের চিফ এডমিনিস্ট্রেটর *শ্রীযুক্ত সুকুমার সেন , আই.সি.এস কিছুদিন ছিলেন। বাবা ওনার খুব প্রিয় অফিসার ছিলেন ।
 
(*শ্রী যুক্ত সুকুমার সেন আবার তৎকালীন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের খুব পছন্দের আই.সি.এস. অফিসার ছিলেন। দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের শুভারম্ভ শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন কে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়েছিল কারন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলা দেশ) থেকে যে সকল শরণার্থী ভারতের ভূমিতে সর্ব হারা হয়ে এসেছিলেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মালকানগিরি , উমোরকোর্ট এবং মধ্য প্রদেশ (এখন ছত্তিশ গড়) এর পার্লকোর্ট সঠিক যায়গা যেখানে বিস্তীর্ণ বনানী সাফ করে প্লটিং করে বিস্থাপিত শরণার্থী দের পুনর্বাসন করা হয় । তাঁদের জন্য বাসগৃহ সমেত চাষ বাসের জমি সরকার থেকে দেওয়া হয়। বাবা যেহেতু দেরাদুন থেকে মৃত্তিকা সংরক্ষণের পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ধারি এবং নাগপুর এগ্রিকালচার কলেজের গোল্ড মেডালিষ্ট ছিলেন বি.এস.সি এগ্রিকালচারে ১৯৩৩ সালের ; তাই ওনাকে দণ্ডকারণ্য ডেপুটেসনে পাঠান হয় সএল সার্ভে এক্সপার্ট হিসেবে । খুব গুরু দায়িত্বের কাজ ছিল ।)
 
মালকানগিরি তে তখন লন্ঠন ই এক মাত্র সম্বল। ছোট বেলায় বাঘ , হরিণ ,শিকার দেখেছি। তখন শিকার করা ফ্যাশন ছিল এবং আইনের দিক থেকে কোন বাধা ছিলনা । একবার বাবার সঙ্গে জয়পুর , কোরাপুট থেকে মালকানগিরি আসার সময় রাস্তায় গোবিন্দপল্লী ব্লকের কাছে দুটো পাহাড় কেটে মাঝখানে রাস্তা ছিল সেই রাস্তায় একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাহাড়ের এক পাস থেকে আরেক পাসে লাফ মারল । ঠিক আমাদের জিপের ওপর । ড্রাইভার একটুও না ঘাবড়ে সোজা স্টিয়ারিং হাতে পুরো ঘটনাটা সামাল দিল । পূরণ উইলিস জিপ লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ ছিল। আজ সেই কথা মনে পড়ে গেল। এরকম অনেক ঘটনা আছে ।
 
আরেকটা ঘটনার কথা বলি । তখন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে বাবার কাছে যাই । আমি অনেক দুর্গম যায়গা বাবার সঙ্গে টুরে গিয়েছি । এক আদিবাসীদের গ্রাম চিত্রকুন্ডার কাছে (এখন চিত্রকুন্ডা সহর হয়ে গিয়েছে) সেখানে তাঁবু ফেলে রাত কাটাতে হল বাবার সঙ্গে । সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি সব সময় বাবার সাথে সাথে থাকে । ভঞ্জ শিকারি পারলাখেমুণ্ডী গজপতি রাজার শিকারি ছিলেন তাই উনি শিকারি হিসেবে দারুণ সাহসী এবং বুদ্ধিমান । উনি বাবার খুব প্রিয় ছিলেন
ওনার দোনলা বন্ধুক একটা রাইফেল আরেকটা গান ।সেদিন রাতে বাইরে আগুন জ্বালিয়ে কিছু আদিবাসী পাহারা দিল কারন বাঘের উপদ্রব । ভঞ্জ শিকারি রাতে জেগে রইলেন । রাতে বাবা দুবার ওঠেন বাইরে যাওয়ার জন্য। ভঞ্জ শিকারি সেটা জানেন তাই তার সাহেবের বডি গার্ড হিসেবে বাবার পেছনেই ছিলেন তিনি। হটাত ভঞ্জ শিকারি লক্ষ্য করেন দুটো জ্বলন্ত চোখ বেশ খানিকটা দূরে । শিকারিরা বাঘের চোখ দেখলে বুঝতে পারেন । কাল বিলম্ব না করে ভঞ্জ শিকারি দু চোখের মধ্যে খানে লক্ষ্য করে রাইফেলের ট্রিগার টেপে । বাঘটি প্রচণ্ড শব্দ করে লাফ মারে । ভঞ্জ শিকারি আবার গুলি ছোঁড়ে এবার আর কোন শব্দ নেই । বাবা হতভম্ব হয়ে ভঞ্জ কে ডাকেন , তখন ভঞ্জ শিকারি বাবাকে প্রায় চ্যাঁ দোলা করে টেন্টে নিয়ে যায়। আদিবাসী লোক গুলি আগুনের মশাল নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ফেলে বাবাকে । পরে যানা যায় সকাল হতে এক বিরাট রয়েল বেঙ্গল টাইগার মরে পড়ে আছে । কপালে দুচোখের মাঝে একটা গুলি আরেকটা পেটে । আদিবাসীরা গান করে নিয়ে এলো বাঘটিকে । ওদের অনেক গরু ছাগল খেয়েছিল বাঘটা । বাঘটা খুব উৎপাত করছিলো তাই তাদের আনন্দের সীমা নেই। আমরা বাড়ী ফিরি জীপের ট্রেলারে বাঘ সমেত । রাস্তায় লোকে অতবড় বাঘ দেখে আশ্চর্য হচ্ছিল আবার অবাক ও হচ্ছিল। বাবা ভঞ্জ শিকারিকে পুরস্কার স্বরূপ ৫০ টাকা দেন (১৯৬২ সালে ৫০ টাকা অনেক) সেই বাঘের ছাল মান্দ্রাজ(চেন্নাই) পাঠান হল ট্যানিং এর জন্য । ক্রমশ .............



আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতিঃ- 
(দ্বিতীয় পর্ব)
 
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
 
বাঘের ছালটা ট্যানিং এর জন্য মান্দ্রাজে(চেন্নাই) যে ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন তাঁর নাম মিঃ নাইয়ার । কেরলী ভদ্রলোক । উনি বাবার স্টেনো ছিলেন। দুঃখের কথা ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন ঠিক ই কিন্তু ফিরিয়ে আনলেন না । ফিরে এসে বাবাকে বললেন , ফরেস্টের অফিসার নাকি সিজ করেছিলো বাঘের ছালটা অন্ধ্র থেকেই ট্রেনের কোম্পার্ট্মেন্টে । ওনাকে ফাইন দিতে হয়েছে সেই জন্য । যদিও কথাটা বিশ্বাস যোগ্য নয় কিন্তু বাবা ওই বিষয় নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না। ভঞ্জ শিকারি ভদ্রলোককে অনেক কটু কথা বলতে লাগলেন । খুব রাগ করেন নায়ার বাবুর ওপর । নায়ার বাবু কোন উত্তর দেন না । ভঞ্জ শিকারি বলেন,“আপনি কেন না জেনে অত দামি বাঘের ছালটা নিয়ে গেলেন?” এর পর ওই ভদ্রলোক চাকরি ছেড়ে চলে যান । কেউ ওনাকে ফেয়ার ওয়েল দিলনা ।
 
বাবা নায়ার বাবুকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ালেন বটে কিন্তু যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিলেন যে কাজটা ভদ্রলোক ঠিক করলেন না। বাঘের ছালটার গল্প গল্পতেই থেকে-গেল ওটা থাকলে বাবার স্মৃতি এবং সবচেয়ে বড় কথা ভঞ্জ শিকারির এত বড় শিকারের স্মৃতি জীবন্ত হয়ে থাকতো ।
 
যাইহোক এর পরে ভঞ্জ শিকারি যতগুলো বাঘ ভালুক শিকার করেছে সে সব গুলোর ছাল নিজেই নিয়ে গিয়েছে ।
 
একদিন আমরা সকলে মানে মা বাবা এবং আমি একটা কাছেই একটা ডেয়ারি ফার্মে গেলাম বেড়াতে। সেদিন রবিবার ছিল । আমাদের জীপের ড্রাইভার পাঞ্জাবী ভদ্রলোক ছিলেন নাম গুরুমুখ সিং । আমরা ওনাকে সিং সাহেব বলতাম। খুব আমুদে লোক উনি। আমাকে পাঞ্জাবীদের জোক শোনাতেন । সর্দার কা বারা বজ গয়া ওনার কাছ থেকেই শোনা । আমি একদিন বলি সিং সাহেব আপনি পাঞ্জাবী হয়ে পাঞ্জাবী জোক শোনান কেন ? উনি বলেন তোমরা আনন্দ পাবে বলে । তা ছাড়া ইয়ে ত জোক হ্যায় , সচ থোড়ি ।
 
সিং জী শুরু করেনঃ- এক দিন এক সর্দারের ছেলে ভূগোল ক্লাসে বিষুব রেখার বিষয় পড়ে । উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধ র বিষয় পড়ে । ওর খুব ইচ্ছে হয় বিষুব রেখা দেখতে । বাবাকে বলে পিতাজী হম বিষুব রেখা ইয়ানি ইকুয়েটার দেখনা চাহতে ।
 
পিতাজী বলেন বেটা ইকুয়টার দেখ নাহি সকতে ও ত এক কাল্পনিক রেখা হ্যায় ।
 
বেটা বোলা নাহি হম খুদ দেখ লেঙ্গে বলে বাবার বাইনোকুলার নিয়ে আসে ।
 
বাবার মাথায় এক বুদ্ধি এলো ছেলেকে বলে চল ম্যায় হিঁ দিখা দেতা হুঁ তুঝে এই বলে ছেলে যখন বাইনোকুলার আকাশের দিকে দেখে ওর বাবা বাইনোকুলারের কাঁচের সামনে নিজের দাড়ি থেকে একটা চুল ছিঁড়ে কাঁচের সামনে ধরেন।
 
ছেলেকে বলেন বেটা ক্যা দেখা তুনে ?
 
বেটা বোলা জি ইকুএটার দেখা ম্যায়নে ।
অঊর কুছ ? হাঁ জি উসকা উপর এক উট ভি চল রাহি হ্যায় ।
 
সিং জি বলেন কিছু বুঝলে?
আমি বলি সে কি করে সম্ভব ?
 
সে ত না কিন্তু উট টা কি যানো ।
না
 
আরে ওটা ছেলের বাবার দাড়িতে যে উকুন ছিল ওটা চলছিল। বাইনোকুলারে ওই উকুনটা বড় দেখাচ্ছিল তাই ও উট বলে ভাবল ।
আমি হো হো করে হাঁসি । সিংজী ক্যা বাত
বহুত আচ্ছা জী । 
এরমধ্যে বাবা মা এসে-গেলেন একটা জার্সি গরু কিনে। নীলকণ্ঠ আমাদের পিওন অই গরু নিয়ে পেছনে ট্রাকে বাড়ি নিয়ে আসবে ।
 
আমার মা খুব সু গৃহিণী ছিলেন। আমাদের কোয়ার্টারের পেছনে নিজে হাতে বাগান করেছিলেন। বাগানে রকমারি শাক সবজি এবং কিছু ফলের গাছ ছিল
আমরা বাজার থেকে শুধু আলু পেঁয়াজ কিনতাম অন্য কিছু কিনতাম না। এবারে গরু এসে-গেল মানে গরুর দুধ ও কেনা হবে না। ঘরে ৬২ টা মুর্গী ছিল । কাজেই ডিম আর মুর্গীর মাংস ঘরেই পেতাম সকলে। 
নীলকণ্ঠ কাঠ কেটে রাখত । সেই কাঠের জালের রান্না হত। বাবার খাওয়ার অনেক তরিবাত ছিল
কাঠ কয়লার আঁচে মাংস রান্না হত খুব ধিক ধিকে আঁচে । বাবার ফেভেরাইট বাটি চচ্চড়ি সেটা আলু পোস্তর সঙ্গে মাশরুম দিয়ে ধিক ধিকে আঁচে বসবে ওপরে কাঁচা সর্ষের তেল আর কাঁচা লংকা চিরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এক জাম বাটি পাঁঠার মাংস বাবার প্রিয় ছিল। ভাত খুব ই কম খেতেন। রাতে দুখানি রুটি আর এক বাটি দুধ খেতাম আমরা সকলে । 
মা না-থাকলে মিশ্র পিওনরান্না করতো । মিশ্র খুব তেল মসলা দিয়ে রান্না করতো । তাই জগদলপুর থেকে বাবা মঙ্গল রামবলে এক মধ্য প্রদেশের গয়লা বাবুর্চি আনেন। ও মুর্গা মসল্লা টা ক্লাস রান্না করতো । আমাদের বাড়িতেই দিশি মুর্গী থাকতো । মঙ্গল , বাবাকে সকালে কি কি রান্না হবে জিজ্ঞাসা করে নিজেই মুর্গি কাটতে চলে যেত । এখানে বলে রাখি তখন মালকানগিরিতে আনাজ খুব একটা পাওয়া যেত না। আমি মঙ্গলের কাছে মুর্গি কাটা শিখি । মঙ্গলের কোন ছুরির প্রয়োজন হত না । হাতেই সব সেরে ফেলত । তখন প্রেশার কুকার ওঠেনি । তাই কাঠ কয়লার আঁচেই খুব সুন্দর মাংস রান্না হত। এখন গ্যাসেও সেইরকম রান্না পাই না।
 
মিশ্রকে , বাবা *এপয়েন্টমেন্ট ( *তখন সরকারী গেজেটেড অফিসাররা থার্ড গ্রেড অবধি এপয়েন্টমেন্ট দিতে পারতেন) দিয়েছিলেন ও পুরীর লোক বলে। বাবা অনেক কে এপয়েন্টমেন্ট দিয়েছিলেন যারা পরে প্রোমোশন পেয়ে উঁচু পোষ্টে রিটায়ার করেছেন।
 
মিশ্রর বাড়ি জানকাদেইপুর । ওটা একটা ছোট্ট রেল ষ্টেশন মালতিপাটপুরের আগে চন্দনপুরের কিছু দুরে। মঙ্গল আসার পর মিশ্র সকালে মঙ্গল রাতের ডিনার বানাত । আপনারা হয়ত মনে করবেন এগুল বানান , কিন্তু না তখন সিনিয়র ক্লাস ওয়ান অফিসারদের জন্য চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বরাদ্দ ছিল বাড়ির কাজের জন্য। মিশ্রকে মা রাতে আস্তে বারুণ করেছিলেন কারন ও সন্ধ্যে হলেই নেশাগ্রস্ত থাকতো । মা নেশাখোরকে একদম পছন্দ করতেন না। সেদিকে মঙ্গল রামের ওরকম কোন দোষ ছলনা । তা সত্ত্বেও মা বাবার জন্য রকমারি রান্না করতেন। বাবা খাওয়ার সময় থালার পাসে ছোট ছোট অনেক বাটিতে নানা ধরনের রান্না থাকত ।
 
আমার বাবা খুব আমুদে লক ছিলেন । নিজে যেমন খেতে ভালোবাসতেন পরকেও সেইরকম খাওয়াতেন। আমাদের বাড়িতে কেউ এলে এলাহি রান্না হত।
 
এরমধ্যে জামাই ষষ্ঠী এসেগেল। তখন আমাদের দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে ,
 
ক্রমশ ঃ-

আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতিঃ- 
(তৃতীয় পর্ব)
 
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
জ্যৈষ্ঠ মাসের রৌদ্র তাপ । মালকানগিরি তে তখন প্রায় ৪০ ডিগ্রী উত্তাপ। ফাল্গুন মাস থেকেই গরমে অতিষ্ঠ সকলে। জলের কষ্ট কারন একমাত্র জলাশয় নাম বালি-সাগরএক প্রকাণ্ড সাগর স্বরূপ পুষ্করিণী যার ওপর সমস্ত মালকানগিরি র অধিবাসী নির্ভরশীল । এই বালি-সাগরের বিষয় কিছু না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে লেখাটা। নাম থেকেই সহজে অনুমেয় সেই রামায়ণের বালিরাজা এখানেই তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। বালি-মেলা চিত্র-কুণ্ডার বিষয় আসবো পরে । বালি-সাগরের জল পরিচ্ছন্ন । জলেতে কর্পূরের বাস ছিল । পুষ্করিণীর ওপর থেকেই তলার বালির শয্যা দেখা-যেত । বালিতে অভ্র (Mica) ছিল তাই সূর্যর কিরণে বালি-সাগরের জল স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ ছিল। বালি-সাগরের জলাশয়ের অপর শ্বেত পদ্ম অনেকটা যায়গা জুড়ে ছিল। বালি-সাগরে ধার দিয়ে আমাদের স্কুলের রাস্তা ছিল। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে অই শ্বেত পদ্মের শোভা দেখে মুগ্ধ হতাম । অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম প্রকৃতির সৌন্দর্য । উইলিয়াম ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ওই শ্বেত পদ্মর শোভা দেখলে ডেফডিলসছেড়ে লোটাসলিখতেন । আমি ত কবি নই তাই বিশেষ বর্ণনা দিতে পারলামনা। কবি সম্রাট উপেন্দ্র ভঞ্জ (১৬৭০ সালে জন্ম ১৭৪০ এ দেহ ত্যাগ ) প্রাচীন উৎকলের পুরাতন রাজ শাসিত উড়িষ্যার ঘুমুসুরের কুলাড় তে জন্ম । উনি রাজ পরিবারের হয়েও কবিতা লিখতেন রাজ কর্ম ছেড়ে । অসংখ্য কাব্য সৃষ্টি করেছিলেন। ওনার লেখা কাব্যগ্রন্থ কোটি লাবণ্য সুন্দরীথেকে উধৃত দুলাইন অনুবাদ করতে চেষ্টা করলাম। ওই পদ্ম ফুলের শোভায় এই কবিতার সৃষ্টি তাই দু লাইন ....... 
দেখরে নলিনী নলিনীতে শোভিত
 
ভ্রমেতে ভ্রমর ভ্রমে চকিত
 
আমার মনে আছে লক্ষ্মী পূজো এবং সরস্বতী পূজোর সময় ওই বালি সাগর থেকেই আমরা শ্বেত পদ্ম আনতাম । সারা গ্রীষ্মকাল নীলকণ্ঠ ওই বালি-সাগর থেকে টিনের ভারে জল এনে আমাদের বড় মাটির হাঁড়ী ভর্তি করে জল রাখতো । তখন ফিলটার ছিলনা তাই মা জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়াতেন । কত খাটতে হত তখনকার মায়েদের ! আমাদের ঘরের কুয়োর জলেই আমরা স্নান সারতাম।
১৯৬৩ সাল । জামাই ষষ্ঠী মানেই এলাহি কাণ্ড । জামাই বলে কথা। দুজনেই এলেন । আমাদের প্রথম ভাগ্নি , বানী র তখন বোধ হয় এক বছর বয়েস হবে। সকলে বলে আমার ঠাকুমা নাকি বানী হয়ে ফিরে এসেছেন আমাদের কাছে। হবে হয়ত । তবে হ্যাঁ বানী খুব চার্মিং ছিল ছোট বেলায় । দেখতে যেমন ডল পুতুলের মতন সেইরকম টক টক কথা বলত । মাকে বলত , “ দিদুন - চটি ছাতা ভুঁ।মানে ওকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। সারাক্ষণ মায়ের কোলে ঘুরে বেড়াত । বাবা আদর করে বলতেন বানী মালকানগিরিকি রাণীদিনগুলো ভালোই কাটত । প্রসঙ্গে আসি ঃ মালকানগিরি সত্যি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অত্যন্ত মনোরম ছিল। চারিদিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এক ভূখণ্ড । আসল নাম মাল্যবন্তগিরি । এর পৌরাণিক দিক আছে। রাম এবং সীতা দেবী সঙ্গে ভ্রাতা লক্ষণ এই দণ্ডকারণ্য তে আসেন বনবাসে । এখানেই তমসার ধারে কুটীরে রাম সীতা বনবাসে ছিলেন। বালিমেলা এখানথেকে ১২ কিমি হবে ওই খানেই সপ্ত তাল ভেদ করে রাম , বালিকে হত্যা করে সুগ্রীবকে রাজা করেন । তমসা নদী এবং বালি সাগর এখন আর নেই। আমরা থাকার সময় ছিল দুটোই । প্রকাণ্ড বালি সাগরে পদ্ম ফুটে থাকত আর জল কাঁচের মত স্বচ্ছ ছিল। নীলকণ্ঠ ওই বালি সাগর থেকে জল নিয়ে আসত । বাড়িতে পাতকুয়ো ছিল সেটার জল খাওয়া হত না। তাই খাওয়ার জল বালি সাগর থেকেই আসত । সেই জল ফুটিয়ে ছেঁকে মা কলশিতে রাখতেন। তখন না ছিল ফিল্টার না ছিল একুয়াগার্ড । তাই আমাদের ওই জল ই ভরসা ছিল । 
বাবা , সিং জীকে জীপ নিয়ে কাছেই তমসা নদী দেখিয়ে আনতে বলেন জামাই বাবাজীকে। সেখানে জামাই বাবাজী গেলেন । একটু সন্ধ্যা হয়ে আসছিল সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি ছিল। দূরে অন্ধকারে দুটো চোখ দেখে জামাই বাবু ভাবলেন নিশ্চই বাঘ। ভঞ্জ বলে এখন মোষেদের ফেরার সময় ওটা বাঘ নয় মোষ। কে কার কথা শোনে ! সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ঘুরিয়ে পগার পা। বাড়িতে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন জামাই রাজা । ভঞ্জ বলে সার , মোষের চোখ দেখে বাঘ বলে ফিরে আসেন। বাবা বোঝেন কিন্তু বলেন ঠিক আছে তোমরা যাও । আসলে সহরের মানুষ জঙ্গলে বেড়াল দেখলেও ভাবে ছোট বাঘ ওই আরকি !
 
ভঞ্জ শিকারি আমাদের নিয়ে যেত জঙ্গলে বুনো মুর্গি শিকার করতে। ও বলত বোনের মুর্গি শিকারের সময় কখন পেটে তাক করবেনা। তাহলে পুরো মুর্গি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ও মাথায় তাক করত । যদিও খুব কষ্টকর ব্যাপার কিন্তু তাই হত এবং দেখতাম মাথা বাদ পুরো মুর্গি আস্ত থাকত । বাবা বুনো মুর্গির মাংস খেতে খুব ভালো বাসতেন। ভঞ্জ একটা মুর্গির জন্য ৫০ টাকা বকশিস পেত। এখন ভাবি ওটা কিছুই নয় ওর পরিশ্রমের বদলে । কিন্তু ও তাতেই খুশী হত।
 
বেশ কাটছিল দিনগুলো । এরমধ্যে হটাত দণ্ডকারণ্যর চিফ এডমিনিষ্ট্রেটার জনসন সাহেব (অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান ) আই.সি.এস অফিসার টুরে আসেন বাবার অফিস ইন্সপেকশন এ । লম্বা ফর্ষা , ব্রাউন হেয়ার , মাথায় ফেল্ট ক্যাপ । বেশ ভারিক্কি চেহারা। উনি কালো রংয়ের এক ক্যাডিল্যাক কারে লাল বাতি লাগিয়ে আসেন। বাবার ওই "বাঘের মুখে পড়ার" কথা এবং অন্য কিছু কাজের জন্য আসেন । বাবা যে টুরে টেন্টে থাকতেন তা উনি শোনেন এবং যানেন। এক রাত উনি হল্ট করেন দণ্ডকারণ্যর আই.বি তে । মা এরমধ্যে নানা ভোজনের আয়োজন করেন । পোলাও , মাংস , মুর্গি , নানা তরকারি, সালাড , পায়েস ইত্যাদি। লাঞ্চ খাওয়ার সময় আমাদের ঘরের পরিবেশ অন্যরকম হয়ে যায়। বাবা ময়ুরভঞ্জে পোষ্টেড ছিলেন তাই সেখান থেকে ময়ুরভঞ্জের রাজার কিছু জিনিষ যেগুলো আর রাজা ব্যাবহার করেন না সেগুলো কিনে এনে ছিলেন। আসলে আমার বাবা ভীষণ সৌখিন মানুষ ছিলেন। ওই জিনিস গুলির মধ্যে একটা ফুল ডিনার সেট । টি সেট , পিওর গোল্ড প্লেটেড চামচ, ছুরি , কাঁটা চামচ ও কিনেছিলেন । ওগুলো রুপোর ওপর সোনার প্লেটিং করা। সেগুলো ওই জনসন সাহেব আসাতে কাজে লাগে লাঞ্চে এবং ডিনারে।
 
ক্রমশ ঃ-

আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:- 
(চতুর্থ পর্ব)
 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
জনসন সাহেব , বাবার সঙ্গে বাবা যেখানে সএল সার্ভে পার্টি আছে তাদের সঙ্গে তাদের কাজের তদারকি এবং কি কি কাজ হচ্ছে তার প্রগতির সঙ্গে সেগুলি খুঁটিয়ে দেখতে গেলেন। এখানে বলে রাখি বাবাকে দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টে ডেপুটেশনে পাঠান হয়েছিল ; তখনকার পূর্ব পাকিস্তান(অধুনা বাংলা দেশের) শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য সঠিক চাষোপযোগি জমি সরকারি ভাবে বিতরণের আগে সএল সার্ভে করার জন্য । প্রত্যেক শরণার্থীকে দু একর করে জমি দেওয়া হবে সরকারের তরফ থেকে । তারা সেই জমিকে বাসোপযোগী করে চাষ করে নিজেদের পরিবার ভরন পোষণ করবে। এক একটি নতুন গ্রাম সৃষ্টি হবে পুরো মালকানগিরি সাবডিভিশন জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় যার নাম্বার থাকবে এম.ভি.নম্বর..... । এম.ভি.মানে মালকানগিরি ভিলেজ। কতবড় গুরু দায়িত্বের কাজ সহজেই অনুমেয়। এখানে আরো বলে রাখি জনসন সাহেবের আগে সুকুমার রায় আই.সি.এস কে তখনকার পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্বনাম ধন্য ডঃ বিধান চন্দ্র রায় , দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের শুভারম্ভ করার জন্য বিশেষ তাৎপর্যের সঙ্গে পাঠান হয়। সুকুমার রায় বাবাকে খুব স্নেহ করতেন কারন বাবা কাজ পাগলা লোক ছিলেন এবং টেকনিক্যালি সাউন্ড এবং ইংরেজিতে খুব ভালো ছিলেন । ব্রিটিশ আমলে অফিসারেরা সাধারণত ইংরেজিটা ভালো যানতেন । তাই বাবা যেমন খেতে ভালোবাসতেন ঠিক সেইরকম প্রচণ্ড পরিশ্রম করে ফিল্ডে ফিল্ডে কাজের তদারকি করতেন ও অফিসিয়াল কাজের সময় অনর্গল স্টেনোকে ডিক্টেসন দিতে দেখেছি। এখনকার অফিসাররা ডিক্টেসন দিতে হোঁচট খান। অনেক সময় ভালো স্টেনোরাই ড্রাফট তৈরি করে আনেন । এসবের দিক থেকে বাবা সম্পূর্ণ আলাদা । তাই সুকুমার সেন বাবাকে ভালোবাসতেন ওনার কাজের প্রশংসা করে । সএল সার্ভে তে অনেক টেকনিকাল কাজ আছে । প্রোফাইল স্টাডি , সএল টেস্ট , ফার্টিলিটি স্ট্যাটাস ইত্যাদি। বাবা , দেরাদুনের সএল কঞ্জারভেসন ট্রেনিং ইন্সটিট্যুটে , পোষ্ট গ্রাজুয়েট কোর্স কমপ্লিট করেছিলেন। তাই সএল সার্ভের বিষয় ভালো বুঝতেন। এখানে আরো বলে রাখি , বাবা নাগপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের থেকে গোল্ড মেডেল পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে ১৯৩৩ এ পাস করেন। সালটা ঠিক মনে করতে পারছিনা হয়ত এক বছর এদিক ওদিক হবে। 
সএল সার্ভের পর পুরো রেভিনিউ ভিলেজের রিপোর্ট , সএল ম্যাপ , সএল ফার্টিলিটি স্ট্যাটাস , বিভিন্ন সএল পিটের ম্যাক্রো এবং মাইক্রো প্রোফাইল তৈরি করে সেগুলো দিতে হয়। এরপর রেভিন্যু ডিপার্টমেন্ট থেকে জমি শরণার্থীদের ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে বিতরণ করা হয়। এইসব কাজে একটু গাফিলতি হলেই সমস্ত দায়িত্ব বাবার ঘাড়ে পড়বে। তাই বাবাকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে সমস্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে কাজ তদারকি করতে হত। মাসের প্রথমেই স্টাফদের মাস মাহিনা ড্র করে সেগুলি আবার প্রত্যেক স্টাফ কে তাদের কাজের যায়গায় দিয়ে আসা। এক একটা ক্যাম্পে একজন জে.টি.এ বা জুনিয়ার টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট কিম্বা সিনিয়ার টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট এবং তাঁর আণ্ডারে সার্ভেয়ার , ড্রাফটসম্যান , ফিল্ড এসিস্টেন্ট , চেন ম্যান , ট্র্যাক্টর ড্রাইভার ইত্যাদি স্টাফেরা থাকত । ক্যাম্পে তাঁবু , রান্নার সরঞ্জাম , ফোল্ডিং খাট এবং একটি করে কুক থাকত । প্রত্যেক ক্যাম্পে একটা করে ফার্গুসন ট্র্যাকটার থাকত । ডিজেল সাপ্লাই এবং ট্র্যাকটার মেরামত ইত্যাদির জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ার মালকানগিরিতে পোষ্টেড ছিলেন। ওনার আণ্ডারে ওয়ার্ক শপ ছিল । ওইখানে সব গাড়ি যেমন জীপ , ট্র্যাকটার মেরামতের জন্য আসত । ওই ওয়ার্কশপ , অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বাবার আণ্ডারে ছিলেন । আরো দুজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সএল কঞ্জারভেসন অফিসার বাবাকে সহযোগিতা করতে পোষ্টেড ছিলেন । একজন হৃদানন্দ মাহান্তি আরেক জন চৌধুরী সাহেব।
 
প্রসঙ্গে আসি। জনসন সাহেব সমস্ত ফিল্ড এবং ক্যাম্পগুলি নিজে বাবার সঙ্গে ঘুরলেন দুদিন ধরে । পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে ফিল্ড ভিজিট এবং কাজের অগ্রগতিতে খুব খুশী হয়ে বাবাকে যাওয়ার আগে খুব প্রশংসা করে গেলেন । Congratulation Mr Mukerjee , I am very much happy that you are doing excellent work with your team . I also congratulate your staff for their team work and full cooperation with you. Thank you all and do your job for a noble cause. এইটুকুই আমার কানে এল। বাবা উত্তর দিলেন
 Thank you for your kind visit to the entire project area . We are inspired and will definitely follow your instruction, Sir. On behalf of my staff I thank you for giving us such nice advice . Inspite of your busy schedule  of work you have taken much pain to visit all the project site and checked the work progress . It is a rare opportunity to get, Chief Administrator of Dandakaranya Project at Malkangiri with us . I request you to come again to give us moral encouragement to discharge our duty most efficiently and sincerely . মনে হল জনসন সাহেব বাবার কাজে খুশী হয়েছেন।
 জনসন সাহেব আমাকেও একটু আদর করে গেলেন কারন আমি কাছেই ছিলাম। আমি একটু বাবা ন্যাওটা ছিলাম তাই কাছে কাছেই থাকতাম এবং প্রায় সময় বাবার সঙ্গে টুরে যেতাম। সচর আচর ব্রিটিশ আই.সি.এস. অফিসারেরা বড় একটা কথা বলেন না। কিন্তু উনি বাবার কানে কানে কিছু গোপন কথা বলে গেলেন যাওয়ার আগে । বাবা কথাটা শুনে একটু গম্ভীর হয়ে যান। কি এমন কথা যা প্রকাশ্যে বলা যায়না। আমার একটু ভয় হল। ভয়ের কিছু নেই ত । কি জানি ব্রিটিশ সাহেবদের কথা ই আলাদা । 
জনসন সাহেব কোরাপুটে ফিরে গিয়ে দিল্লীতে চিঠি পাঠান একটা করে ক্যারাভ্যান প্রত্যেক ডিভিশনে পাঠানোর জন্য । এখানে ফিল্ড অফিসারদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বাঘের উৎপাতে।
 
উনি দিল্লী-থেকে বিশেষ অনুমোদন অর্থ মঞ্জুরি এনে মালকানগিরি , উমোরকোর্ট আর পার্লকোর্ট ডিভিশনে সেই বছর ই একটা করে ক্যারাভ্যান পাঠান ওই বাঘের উৎপাতের ঘটনার বিবরণী শুনে । বাবা জীবন বিপন্ন করে কাজ করতেন তাই ওই ক্যারাভেনতাঁর ই দান । পরে বাবা ওনার কাছ থেকে আউট স্ট্যান্ডিং সি সি আর পেয়ে ডেপুটি ডাইরেক্টরের পদ মর্যাদা পান ।


 


আমার ছোটবেলার কিছু স্মৃতি:
(পঞ্চম পর্ব)
 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী
জনসন সাহেব নতুন ক্যারাভ্যান পাঠান কোরাপুটে ফিরে যাওয়ার পর । নতুন ক্যারাভ্যান ভাইজাগ থেকে বাই রোড পৌঁছয় । প্রায় দু সপ্তাহ পরে এসে মালকানগিরি পৌঁছয় । নতুন ক্যারাভ্যান টানার জন্য একটা পাওয়ার ওয়াগন ও এসে পৌঁছয় । বাবা এবার থেকে টুরে গেলে ওই ক্যারাভ্যানে যাবেন। ক্যারাভ্যান এর ভেতর সব ব্যবস্থা আছে। সুন্দর খাট বিছানা সমেত সাদা চাদর পাতা। একটা সোফা, ডাইনিং টেবিল চেয়ার । পড়ার জন্য আলাদা টেবিল , টেবিল ল্যাম্প সমেত। ছোট্ট রান্না ঘর । তাতে সব ইউটেন্সিল ছিল। তখনকার দিনের স্টিম কুকার। ধোঁয়া বেরুনোর জন্য চিমনি । কিন্তু বাবা ভেতরে রান্না করতে বারুণ করেন কারন নোংরা হয়েযাবে তাই। একটা ছোট বাথ রুম , টয়লেট তাতে কমোড  ফিট করা। ওপরে জলের ট্যাঙ্ক ফিট করা । বাইরে একটা লোক আরামে দু তিন দিন থাকতে পারবে । কোন অসুবিধে নেই। এবার সঙ্গে মঙ্গল সিং গেল মুর্গা মসাল্লাম রেঁধে বাবাকে দেবে। তাছাড়া বনের মুর্গি ত আছেই। ভঞ্জ শিকারি ও  অন্য সব্বাই জিপে গেল ।  বাবা , মাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন একটু ঘোরাও হবে মায়ের আর বাবা নিশ্চিন্তে কাজ করবেন। আমার যাওয়া  হলনা । 
আমি , ছোড়দি ,বানি  মালকানগিরিতেই কোয়ার্টারে থেকে-গেলাম । মিশ্র রান্না করে দিয়ে যেত দু বেলার জন্য। এখানে বলে রাখি আমি এক বছর ওই মালকানগিরিতে উড়িয়া স্কুলে পড়তাম। তখন ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলের চল ছিলনা । আদিবাসী ছেলে মেয়ে আর কিছু লোকাল অফিসিয়ালের ছেলে মেয়েরা পড়ত ওই স্কুলে । আমার তখন ক্লাস সেভেন। এখানে বৃত্তি পরীক্ষা ছিল। ছোটবেলায় বেলঘরিয়াতে বাংলা মিডিয়ামে পড়েছিলাম ক্লাস ফোর অবধি , বেলঘরিয়া বয়েজ স্কুলে। তারপর কটকে রেভেন্সা  কলিজিএট স্কুল যেখানে নেতাজী পড়েছিলেন । সেখানেকে মালকানগিরি । বুঝতেই পারছেন ভাষা পরিবর্তনের সঙ্গে স্থান পরিবর্তন কতটা অসুবিধে হয় একটা ছোট ছেলের । আমি আবার অনেক ছোট বয়েসেই স্কুলে ভর্তি হই। তখন আমার ১০ বছর বয়েস । এটা ১৯৬৩ সালের কথা।
স্কুল যাওয়ার পথে বালি সাগরের ধারে প্রকাণ্ড সেগুন গাছ সারি সারি ছিল। এক একটা সেগুন গাছ প্রায় ৩০ ৩৫  ফুট লম্বা আর গোলার্ধে ১০ ফুট । ভেবে দেখুন কি জঙ্গল সম্পদ ওই মালকানগিরিতে ছিল। এ ছাড়া কাছেই শাল বোন , তাতে পিয়া শাল, বন্ধন, শাল, সেগুন ও শিশু কাঠের গাছ অপর্যাপ্ত । ২০ বছর পর সেই মালকানগিরি যাই পূর্ব স্মৃতি র কিছু অংশ আছে কিনা দেখতে । হায়রে বিধাতা কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব মাফিয়াদের কবলে সাফ ।
বেশ কিছুদিন পর পৌষ পূর্ণিমা এল। ওই সময় আদিবাসীদের পর্ব। ওই পর্বে ওরা গান নাচ করে সলপ(এক রকমের দিশি মদ) খেয়ে পুরুষ, মহিলা সব্বাই আনন্দে উৎসব করে আর সারা রাত নাচে। আমাদের বাড়ীতে নীলকণ্ঠ ওদের গ্রামে আমাকে নিয়ে যাবে বলে বলে পরব দেখানোর জন্য। ওদের গ্রাম কাছেই ছিল। মা গর রাজি হলেন কিন্তু নীলকণ্ঠ বলে সে দায়িত্ব নিয়ে আমাকে ওদের নাচ দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। আমি খুব বায়না ধরলাম ওই পর্ব দেখব বলে। ওদের নাচের একটা আলাদা আকর্ষণ আছে । নীলকণ্ঠ ওদের গ্রামের নাচের গুরু অর্থাৎ নাচের মাষ্টার । ও নিজে গান লেখে আবার সুর দেয় । ওইটাই আমাকে ওই পর্বের জন্য আকর্ষিত করে । অনেক বার নীলকণ্ঠ বলেছিল বাবু আমি আপনাকে নিয়ে যাবো আমাদের নাচ  গ্রামের ধাংড়া ধাঙড়ীর নাচ দেখাতে ।

ওই আদিবাসীদের নাচের তালে নীলকণ্ঠ মাদল বাজাত আর গান করত । তখন আমাদের কাছে না ছিল টেপ রেকর্ডার না ছিল ভিডিও গ্রাফির জন্য ক্যামেরা। এখনকার দিন হলে স্মার্ট ফোনেই সমস্ত ভিডিও করে রাখা যেত । তাই নিজের স্মৃতি থেকে এই গানটা লিখেছি । ওরা প্রায় ওইরকম ই শব্দ ব্যাবহার করে গান গাইত ।



ঝুমরি
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯.০৮.২০১২  / বেলা ৩ টে ।
ছেলেঃ-   ঝুমরি তোর  নাচের তালে মাদল বাজে আমার
           চেনা গানের সুরের তালে মাতাল হলাম আবার  
মেয়েঃ-  ঝুমরি তোর গানের সুরে পাগল হল আবার
           রসিক নাগোর মরদ আমার মাদল বাজা আবার
ছেলেঃ-  ঝুমরি তুই ফুলের তোডা খোঁপায় লাগা আবার

         ফুলের গন্ধে ভরবে আমার পরান টা যে আবার
মেয়েঃ-   শক্ত হাতে সামলে নে না সরম  কেন আবার

         ঝুমরি তোকে মনটা  দিল রসিক নাগর আমার
ছেলেঃ-   ঢোল বাজিয়ে রাত পোহাবে নাচবি আমার সাথে  
          ঝুমরি তুই আমার ছিলি থাকবি আমার সাথে
মেয়েঃ-   আমার জন্যে এনে রাখিস নতুন শাডী সিন্দুর
          ঘরের কোনে ঘুম পাডাবি কিনে রাখিস মাদুর
ছেলেঃ-     ঝুমরি তোর  নাচের তালে মাদল বাজে আমার
               চেনা গানের সুরের তালে মাতাল হলাম আবার  
                    
মেয়েঃ-    ঝুমরি তোর গানের সুরে পাগল হল আবার
         রসিক নাগোর মরদ আমার মাদল বাজা আবার
                   

                  ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী /২৯.০৮.২০১২/৩.০০ টে
                        
পরবের গান
( ঝর্না চ্যাটার্জ্জী র দ্বারা সম্পাদিত আদিবাসী দের ফর্মাটে)

ছেল্যা-- ঝুমরি, তুর নাচের সঙে বাইজছ্যে মাদল
        চিনা গান লাগছ্যে কানে হল্যম মাতাল

মেঁইয়া-- তুর গানট শুন্যে ঝুমরি পাগল হল্যেক
         রসিক নাগর মরদ আমার ফির বাজাল্যেক

ছেল্যা--ঝুমরি, তুই ফুলট আবার মাথায় দিল্যেক
         উয়ার গন্ধে মনট আবার ভর‍্যে গেল্যেক

মেঁইয়া--মরণ টানে ধর ক্যানে তুই হাত দু-টাকে
        ঝুমরি তুকে মনট দিছে, জানিস বটে !

ছেল্যা-- ঢোল বাজাব, আমার সঙে নাচবি রেতে
        ঝুমরি তু আমার ছিলি, আমার বটে...

মেঁইয়া-- শাড়ী সি*দুর রাখবি কিনে
        ঘরের ভিতর মাজুরটকে রাখবি আন্যে

ছল্যা-- ঝুমরি তুর নাচের সঙে মাদল বাজাই
        চল ক্যানে তুর সঙে আবার মহুয়া খাই

মেঁইয়া--ঝুমরি তুর গানট শুন্যে পাগল হল্যেক
         রসিক আমার মরদ বটে জান্ত্যে পাল্যেক...


Sunday, July 9, 2017

আমার কাশ্মীর পর্ব ২
আমার কাশ্মীর 

দেবশ্রী চক্রবর্তী 

কাশ্মীর , আমার ভালবাসার ভূস্বর্গ , তোমাকে নিয়ে যত লিখি লেখার আকর্ষণ ততই বারতে থাকে । আজ সাম্প্রদায়িকতার বীজ ও কাশ্মীর নিয়ে লেখার জন্য কলম ধরেছি । কাশ্মীরের ওপর হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম সব শাসকরা রাজত্ব করেছেন, কিন্তু হিন্দু মুসলিম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় ছিল, তবে এমন কি ঘটল যে সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলে উঠল এই ভূখণ্ডে ? এই সাম্প্রদায়িকতার বীজ চরিয়েছিলেন ইংরেজরা , নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য । 

আজ কাশ্মীরের যে ইতিহাস বলতে যাচ্ছি, সে ইতিহাস জানার জন্য আমাদের পৌঁছে যেতে হবে দেড়শত বছর আগে । কাশ্মীরের ডগরা রাজারা ছিলেন ইংরেজদের বন্ধু, সিপাহী বিদ্রোহের সময়ও তাঁরা ইংরেজদের সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু ইংরেজরা এমন এক জাত  যেরা সু দিনে দুর্দিনের বন্ধুকে মনে রাখে না । বিপদ কেটে যেতেই ইংরেজরা ভুলে গেলেন ডগরা রাজবংশের উপকার । ততদিনে ইংরেজরা বুঝতে পেরেগেছিলেন কাশ্মীরের সামরিক গুরুত্ব । রাশিয়ার জারকে রুখতে গিলগিটে দুর্গ প্রতিষ্ঠা করতেই হবে , শুরু হয়ে গেল কূট কৌশল , রনবীর সিং এর বড় ছেলে প্রতাপ সিংহ ছিলেন নেহাত ভালো মানুষ, তিনি ধর্ম কর্মে বেশি মন নিবেশ করলেন , এই সুযোগে ইংরেজরা কাশ্মীরে বসালেন নতুন রেসিডেন্সি । তাঁর কর্তা হয়ে এলেন স্যার অলিভার সেন্ট জন, কাশ্মীরের প্রথম রেসিডেন্ট । 

রাজা প্রতাপ সিং এর ভাই ছিলেন অমর সিং, তাকে ইংরেজরা কাশ্মীরের সিংহাসনের লোভ দেখিয়ে হাত করে নিলেন, ভাই অমর সিং দাদার সরলতার সুযোগ নিয়ে সাদা কাগজে দাদার সি নিয়ে কাশ্মীরের সিংহাসন নিজের নামে লিখিয়ে নিলেন, সারা পৃথিবীর মানুষ জানলেন প্রতাপ সিং ধর্ম কর্মে মন নিবেশ করতে চান, তাই ভাইকে সব সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিলেন । দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহ বন্দী থাকার পর প্রতাপ সিংহ একটি চিঠি লিখলেন বড়লাট লর্ড ল্যান্সডাউনের কাছে । মহারাজ লিখলেন তাকে সিংহাসন ফিরিয়ে দেওয়া হোক, কিংবা বুকের মাঝে গুলি করে হত্যা করা হোক । এ অপমান এবং যন্ত্রণার জীবন যে আর তাঁর ভালো লাগে না । কলকাতার খবরের কাগজে কাশ্মীরে ইংরেজদের জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হল, পার্লামেন্টে ঝড় উঠল । উদারনৈতিক সদস্য চার্লস ব্র্যাডলে মহারাজের পক্ষ নিলেন, উইলিয়াম ডিগবি ছিলেন সেকালের একজন ন্যায় নিষ্ট ইংরেজ । তিনি মহারাজের প্রতি অবিচারের জোরালো প্রতিবাদ করলেন । অগত্যা ইংরেজ সরকারকে প্রতাপ সিং কে কাশ্মীরের সিংহাসন ফেরত দিতে হয় । ক্রমে মহারাজের চুলে পাক ধরল, চোখে পরল ছানি, মহারাজের কোন পুত্র নাথাকায় মৃত্যু শয্যায় তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্যি দিয়ে গেলেন তাঁর ভাই অমর সিংহের পুত্র হরি সিঙকে । 

হরি সিং সিংহাসনে বসে প্রজাদের মঙ্গলের কথা ভেবে কাজ করতে থাকেন, তিনিই প্রথম ভারতীয় রাজা যিনি লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে গিয়ে বলেছিলেন যে ভারতের শাসনভার ভারতীয়দের হাতেই দেওয়া উচিৎ । ভারতীয় রাজার মুখে এমন কথা ? ইংরেজ সরকার খুশি হলেন না, কাশ্মীরে সাম্প্রদায়িকতার ইন্ধন যুগীয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা শুরু হল । 
ওদের হাতিয়ার ছিল কাশ্মীরের সরল অজ্ঞ মুসলিম প্রজাদের উস্কে দেওয়া । অয়েকফিল্ড নামে একজন ইংরেজ ছিল মহারাজের মন্ত্রী,তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হল কাশ্মীরের মুসলিম প্রজাদের ক্ষেপিয়ে তোলা । কাশ্মীরের মুসলিম প্রজাদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে হিন্দু রাজা এই বলে প্রচার চালাতে থাকেন পাঞ্জাবের অড়হর আর মহম্মদীয়া দোলের নামজাদা সাম্পদায়িক নেতারা এবং কয়েকটি উদুকাগজে তাঁর প্রচার চলতে থাকে । পত্রিকা গুলি বিনা মূল্যে দেওয়া হতে থাকে কাশ্মীরের মুসলমানদের । কাশ্মীরের বুক থেকে উঠে এলো তরুণ শিক্ষিত নেতা শেখ আবদুল্লা । 
ভারতবর্ষের বুকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ান হতে থাকে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং আলিগড়ের কলেজের অধ্যক্ষ মিস্টার বেক আর থিওড্র মরিসন সে মাটিতে যুগিয়েছিলেন সাড় ও জল । কাশ্মীরে যখন সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের চারা বোনার কাজ শুরু হয় তখন মহারাজ বিদেশে ছিলেন , এই সময় প্রথম কাশ্মীরের বুকে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয় । 

এই ঘটনার কয়েক বছর পর আব্দুল্লা গেছিলেন পেশোয়ারের একটি সভায় , সেখান থেকে ফেরার পথে তিনি দেখলেন একজন মুসলিম জমিদার তাঁর হিন্দু প্রজাদের দিয়ে আমবাগানে কি অমানবিক পরিশ্রম করাচ্ছেন, কেউ যদি ঠিক করে কাজ না করতে পারেন তাঁর পিঠে জুটছে চাবুকের বাড়ি এবং পারিশ্রমিকও কেটে নেওয়া হচ্ছে । এই সময় আব্দুল্লা প্রথম অনুভব করলেন গরিব মানুষের কোন ধর্ম হয় না । পরে তিনি বহু হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন এবং দরিদ্র হিন্দুর মৃত্যু হলে তাঁর শেষকৃত্যের দায়িত্বয়ও নিয়েছিলেন । 

এবার বলব ব্রিগেডিয়ার ওসমাইনের কথা । তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমী, একবার এক সাম্প্রদায়িক মুসলিম নেতা বিলেতে তাঁকে বলেছিলেন ও আপনি জাতিতে মুসলমান, আমিও তাই , জেনে খুব খুশি হলাম, 

ওসমাইন বলেছিলেন আমি জাতিতে ভারতীয়, তবে ধর্মের দিকে আমি মুসলিম । দেশভাগের সময় তিনি ছিলেন মুলতানে, দেশভাগের বহু বিভীষিকা লক্ষ্য করেছেন নিজের চোখে । বহু হিন্দু ও শিখ পরিবারকে সাহায্যও করেছেন । গান্ধীজীর হত্যার পর মাছ মাংস ছেঁড়ে দিয়েছিলেন ।  

ব্রিগেডিয়ার ওসমাইন পাকিস্তানি দখলদারদের কাছ থেকে কাশ্মীরের নউশেরা,ঝাংগড়, রাজউরী, পুঞ্জ রক্ষা করেছিলেন । যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিয়েছিলেন তিনি, পুষ্পস্তবক সাজিয়ে বীরের মৃতদেহ বিমানযোগে নিয়ে আসা হয় দিল্লি । সেখানে হিন্দু,শিখ , খ্রিস্টান,পারসিক, মুসলমানেরা শ্রদ্ধা ভরে ফুল দিয়েছিলেন শবাধারে । জাতীয় পতাকায় ঢেকে কামানের গাড়িতে হল পূর্ণ সামরিক সম্মানে স যাত্রা । শবানুগমন করলেন স্থল, নৌ , বিমানবাহিনীর তিন সরবাধক্ষ । 

আমার লেখা শেষ করব ব্রিগেডিয়ার প্রতীপ সেনের কথা দিয়ে । ব্রিগেডিয়ার সেনের জন্যই পুঞ্জে প্রথম ভারতের পতাকা উত্তলিত হয়, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় ।

  "আমার কাশ্মীর"  দেবশ্রী চক্রবর্তী র লেখা মর্ম স্পর্শী লেখা। লেখিকার বিষয় কিছু কথাঃ দাদা মশাই বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষক শ্রী বিনয় ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত । বিবাহ পরবর্তী জীবনে স্বামীর চাকরির সূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় থাকতে হয় । এই সময় সমাজ সেবা মূলক কাছে জড়িয়ে পড়ার সুবাদে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসা, সেই থেকে লেখা শুরু । লেখিকার লেখাতে সমাজের খেটে খাওয়া খুব সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে ।লেখিকা পথ শিশুদের নিয়ে"অঙ্কুর" নামক একটি সাংস্কৃতিক দল তৈরি করেন ।
"আমার কাশ্মীর"
প্রথম পর্ব

দেবশ্রী চক্রবর্তী

আমার দেশ ভারতবর্ষ , আমার প্রাণের জন্মভূমি । দেশের প্রতি গভীর প্রেম প্রকাশের জায়গা সেই অর্থে আমার ল্যাপটপের নোট প্যাড । যেখানে নানা সময় কবিতা, প্রবন্ধ,উপ্ন্যাস , ছোট গল্পের মধ্যমে আমি আমার দেশের মানুষ এবং তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি । আমার লেখায় কাশ্মীর বারংবার

 উঠে আসে । ভয়ঙ্কর এক পাষাণ ভেদী আর্তনাদ প্রতিফলিত হয় শব্দের মূর্ছনায় । আজ আবার কাশ্মীর সম্পর্কে কলম ধরলাম । এখানে যে তথ্য তুলে ধরব কোন বাংলা উপন্যাস কিংবা প্রবন্ধে তা খুঁজে পাবেন না । কাশ্মীর সম্পর্কে বেশ কিছু ইতিহাস বই, আর্টিকেল এবং ডকুমেন্ট্রির ওপর নির্ভর করে আমার ল্যাপটপের কি বোর্ডে হাত লাগালাম । শুরু করার আগে একটা কথা বলব, কাশ্মীর যতটা কাশ্মীরিদের ঠিক ততটাই আমার । কারণ আমার মায়ের শরীরের অবিচ্ছিন্ন অংশ কাশ্মীর ।

ভূস্বর্গ কাশ্মীর। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন “ পৃথিবীতে স্বর্গ থেকে থাকলে তা এখানে, তা এখানে, তা এখানে” সেই সৌন্দর্য হয়তো আজও আছে কিন্তু বোমা, বন্দুকের গুলিতে কাশ্মীর আজ অশান্ত।
পৌরানিক কাহীনি এবং নাম করন- কাশ্মীর শব্দের অর্থ হল শুকিয়ে যাওয়া ভূমি। অনেক অনেক দিন আগে চারদিকে হিমালয় আর পীর পাঞ্জল পাহাড় ঘেরা এই এলাকা ছিল বিশাল এক হ্রদ। রাজা দক্ষ তনয়া সতী’ র হ্রদ নাম অনুসারে নাম ছিল সতীসর। সেই হ্রদে বাস করত এক দৈত্য। নাম তার “জলোদ্ভব” দৈত্যের অত্যাচারে লোকজন থাকত সন্ত্রস্ত। অবশেষে কাশ্যপ ঋষি এগিয়ে এলেন তাদের সাহায্য করতে। কাশ্যপ ছিলেন ব্রহ্মাপুত্র মারিচের ছেলে। যে সাতজন মুনি বা ঋষিকে সপ্তর্ষি বলা হয়ে থাকে তাদের একজন হলেন ব্রাহ্মন ঋষি কাশ্যপ। হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ অনুসরনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন কাশ্যপ। ঋষি কাশ্যপের আবেদনে তুস্ট হয়ে ভগবান বিস্নু এগিয়ে এলেন। বিশাল এক শুকর বা বরাহের রুপ নিয়ে গুতো দিয়ে ভেঙ্গে ফেললেন এক দিকের পাহাড়। ফলে হ্রদ গেল শুকিয়ে আর মারা গেল সেই দৈত্য । যেখানে শুকর বা বরাহরূপী বিষনু পাহাড় ভেঙ্গেছিলেন তার নাম হল বরাহমুল, যা এখন বারমুল্লা নামে পরিচিত। হ্রদ শুকিয়ে জেগে ওঠা পাহাড় ঘেরা এই উপত্যকাই হল কাশ্মীর উপত্যকা। লোকজনের বসতি গড়ে উঠলো নতুন জেগে ওঠা এই উপত্যকায় । কাশ্যপ ঋষির দেশ বা “কাশ্যপ-মার” থেকে ক্রমশ নাম হল কাশ্মীর। ঋষি কাশ্যপের আমন্ত্রনে সারা ভারত থেকে লোকজন এসে বসতি গড়ে তুললো এই উপত্যকায় যারা কালক্রমে হলেন কাশ্মীরি পন্ডিত। নিলমত পূরান এবং ১২ শ শতাব্দীতে কালহান রচিত গ্রন্থ “রাজতরঙ্গীনি” কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে রচিত আদি গ্রন্থ। চীনা পর্যটক “হিউ-এন-সাং” এর বইয়ে এই এলাকার পরিচয় মেলে “ কা-শি-মি লো” রুপে আর প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসে বলা হত “কাস্পেরিয়া” মহাভারতে উল্লেখ আছে কাম্বোজ রাজাদের অধীন ছিল এই এলাকা। কাম্বোজরা ছিলেন ভারত এবং পারস্য হতে উদ্ভূত জাতি গোষ্ঠি। পাঞ্চাল রাজবংশ রাজত্য করতেন এই এলাকায় যেখান থেকে পাহাড় শ্রেনীর নাম হয় “পাঞ্জল” পরে মুসলীম শাসনামলে “পীর” শব্দ যুক্ত হয় যা থেকে নাম হল “পীর পাঞ্জল”

১৯৪৭ এ  ভারত স্বাধীনতা অর্জন করলো, কিন্তু কাশ্মীরের মহারাজ হরি সিং তখন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তিনি ভারত না পাকিস্তান কার সাথে যোগ দেবেন । মাউন্ট ব্যাটেন যখন তাঁর কাছে জানতে চান যে তিনি কার সাথে থাকতে চান, হরি সিং জানান কাশ্মীর কারুর সাথে যোগ দেবে না, সে স্বতন্ত্র থাকবে । হরি সিং এর মতন একজন দুর্বল শাসকের পক্ষে কাশ্মীরকে শাসন করা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে । কাশ্মীরের অভ্যন্তরে শুরু হয় অশান্তি । সেই সময় কাশ্মীরি মুসলিমদের এক নেতা জিন্নার কাছে যান কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ কি হবে জানতে । জিনা বলেন, “ কাশ্মীর আমার পকেটে” । ১৯৪৭ এর ২২ এ অক্টবর পাকিস্তানের আটকোবাদ আর কাশ্মীরের মুজফফরাবাদের  মাঝে বয়ে চলা ভয়ঙ্কর নীলম নদী পার করে হাজার হাজার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলের ট্রাইবাল দস্যুরা ঢুকে পড়ে কাশ্মীরে । তাঁরা যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে যায় খুন, ধর্ষণ, লুঠতরাজ চালাতে থাকেন । পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যায় হরি সিং কাশ্মীর থেকে পালিয়ে যান । সংবাদপত্র, রেডিও , সারা বিশ্ব থেকে আলাদা হয়ে যায় কাশ্মীর, কি হচ্ছে কাশ্মীরে বাইরের পৃথিবীর কাছে অজানা থেকে যায় । এমনকি কাশ্মীরের মানুষ প্রথম দিকে বুঝতে পারছিলেন না যে কাশ্মীর আক্রান্ত হয়েছে । বারামুল্লার একটি সিনেমা হলকে রেপ সেন্টার বানান হয় । সেখানে হিন্দু মুসলিম ,শিখ, সাই, নির্বিশেষে চলতে থাকে কাশ্মীরি মেয়েদের ধর্ষণ ।
২৬শে অক্টোবর, ১৯৪৭ – জিন্নার অঙ্গুলিহেলনে কাশ্মীরের পশ্চিম অংশের উপজাতীয় বিদ্রোহীরা আর পাকিস্থানি সেনারা কাশ্মীর আক্রমণ করলো, মহারাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের লক্ষ্য মহারাজ কে জোর করে অপসারিত করে কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা।ঐ সময় যে স্লোগানটি পাকিস্তানীদের মুখে মুখে ফিরত তা হল “ হসকে লিয়া পাকিস্তান লড়কে লেঙ্গে হিন্দুস্তান” অর্থাৎ হেসে হেসে পাকিস্তান পেয়েছি এবার লড়াই করে হিন্দুস্থান নেবো। এছাড়া জিন্নার শ্লোগান -কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান তো ছিলই। বিদ্রোহীদের অভিযোগ ছিল এই যে মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের মতলব আঁটছিলেন। বিদ্রোহীরা মোজাফফরপুর, ডোমেল দখল করে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পৌছে গেল রাজধানী শ্রীনগরের উপকন্ঠে। পুঞ্চ এ মহারাজা হরি সিং এর বাহিনী হল বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ, জয়ের সাথে সাথে সমানে চলল লুটপাট ও নৃশংস হত্যালীলা। মহারাজা হরি সিং প্রমাদ গুনলেন, বিপদ বুজে তিনি সাহায্য চাইলেন নেহেরুজীর কাছে এবং জানালেন তিনি ভারতের সাথে যুক্ত হতে চান। ২৬শে অক্টোবর, ১৯৪৭, লর্ড মাউন্টব্যাটেন এর উপস্থিতিতে সাক্ষরিত হল “Instrument of Accession”, জম্মু -কাশ্মীর হল এক ভারতীয় রাজ্য। আর ভারতভুক্তির শর্ত হিসাবে জম্মু-কাশ্মীর কে সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়। এই বিষয়ে পরে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করছি। আগে দেখে নি সেই সময়ে কি হয়েছিলো? নেহেরুজীর আদেশ অনুসারে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রতি আক্রমণ শুরু করলো হানাদার পাক বাহিনীকে হটানোর জন্নে, শুরু হল স্বাধীনতার পর ভারত এবং পাকিস্থানের প্রথম যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে যখন ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীর ভ্যালির প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ পুনুরুদ্ধার করে ফেলে বাকী এক-তৃতীয়াংশ এবং গিলগিট, বালতিস্থান উদ্ধারের জন্নে আগুয়ান, জয় যখন প্রায় করায়ত্ত, তখন কোন এক রহস্যময় কারণে নেহেরুজীর আদেশে ভারতীয় বাহিনী মাঝপথে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। নেহেরুজীর এই অমার্জনীয় ভুলের প্রায়শ্চিত্ত ভারত আজও করে চলেছে। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সময়ে পাকিস্থান যে জায়গা দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছিলো সেটাই আজকের Pakisthan Occupied Kashmir বা POK, পাকিস্থান অবশ্য বিশ্বের চোখে ধুলো দিতে এর গালভরা নাম দিয়েছে – “আজাদ কাশ্মীর”, যেখানে আজাদির ছিটেফোঁটা নেই, আছে শুদু না পাওয়ার জ্বালা আর তীব্র শোষণ। এরপর সিন্ধু নদ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, পাকিস্থান তাঁদের দখলীকৃত কাশ্মীরের একটা অংশ তাঁদের আকা চীন কে উপহার স্বরুপ দিয়েছে, যা আজ Chaina Occupied Kashmir বা COK নামে অধিক পরিচিত।
পাকিস্থান এর পরেও ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে কাশ্মীর ফিরে পাওয়ার আশায় যুদ্ধ করেছে, আর প্রতিবার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে শোচনীয় হারের পর পাকিস্থান ভারতের সাথে “সিমলা চুক্তি” করে যেখানে সিদ্ধান্ত হয় কাশ্মীর নিয়ে যাবতীয় শত্রুতা দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে নেবে। কিন্তু  বাস্তবে কি দেখা গেলো? মোটামুটিভাবে ১৯৯০ সাল অবধি কাশ্মীর বেশ শান্তই ছিল, বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ কমই ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ন্যাশানাল কনফারেন্স পার্টির শেখ আবদুল্লা, তাঁর পুত্র ফারুক আবদুল্লা, পৌত্র অমর আবদুল্লা, কংগ্রেস পার্টির গুলাম নবী আজাদ এবং পিপলস ডেমোক্রাতিক পার্টির মুফতি মোহাম্মদ সইদ প্রমুখ। তাহলে ১৯৯০ সালে কি এমন হল? কেনই বা নতুন করে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠল কাশ্মীর উপত্যকায়? এই বিষয়ে সঠিক অনুধাবন করতে গেলে আমাদের কয়েক দশক পিছিয়ে যেতে হবে এবং দেখতে হবে ১৯৭৫ – ১৯৯০ এই সময়ে পাকিস্থান আর আফগানিস্থানে কি হয়েছিলো?
সত্তরের দশকের শেষ দিকে আফগানিস্থানে হানা দেয় তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া, সেই সময়ে আমেরিকার সাথে সোভিয়েত রাশিয়ার ঠাণ্ডা যুদ্ধ তুঙ্গে। অতএব আফগানিস্থানে রাশিয়াকে আটকাতে আমেরিকার বোড়ের চাল হয়ে উঠল পাকিস্থান। সবে  সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় এসেছেন জেনারেল জিয়া উল হক, আমেরিকার হাত তখন তাঁর মাথায়। ডলার আর উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের লোভে পাকিস্থান বিদ্রোহী আফগানদের সাহায্যের জন্নে শুরু করলো জিহাদি ট্রেনিং ক্যাম্প, বেশ কিছু আবার দখলীকৃত “আজাদ কাশ্মীর” অংশে। সেইসব ক্যাম্পে তৈরি হতে লাগলো হাজার হাজার ঈমানী জোশে উদ্বুদ্ধ তালিবান জিহাদি। এই জিহাদি যুবকদের হাতে অস্ত্র জোগানর ভার নিয়েছিল আমেরিকা, পরবর্তীকালে এই সর্বনাশা জোটে এলো সৌদি আরব। আরব ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তখন বিশ্ব বাজারে হু হু করে বাড়ছে পেট্রো- তেলের দাম, সৌদি রাজবংশের তখন রমরমা অবস্থা, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ আর কি। এই সুযোগে তাঁরা বিশ্ব জুড়ে রপ্তানী করা শুরু করলো ওয়াহাবি ইসলামের বিষ, বিভিন্ন দেশে তখন সৌদি অর্থে তৈরি হচ্ছে একের পর এক মসজিদ। এগুলির মাধ্যমেই সৌদি রাজবংশ ছড়িয়ে দিতে লাগলো তাঁদের ওয়াহাবি প্রপাগান্দা। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল ধর্মের ভাইরাস আরে অর্থের সংমিশ্রনে তৈরি এক ভয়ঙ্কর টাইমবম্ব। পাকিস্থানে প্রশিক্ষিত জিহাদি/ মুজাহিদ আফগান, পাঠান ভাইরা তখন আফগানিস্থানে হাজারে হাজারে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, এই যুদ্ধ তাঁদের কাছে তখন ধর্মযুদ্ধের সমান। চিন্তায়, মননে কি ভয়ানক ওয়াহাবি টক্সিক, আর শহিদ হওয়ার পর তাঁদের জন্নে তো আছেই জান্নাত, হুরী ইত্যাদি।
পাকিস্থান তো আনন্দে আটখানা, একদিকে আফগান যুদ্ধে সাহায্য করবার জন্নে আমেরিকা দিচ্ছে কোটি কোটি ডলার, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র (পরবর্তীকালে যা ব্যবহৃত হবে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার জন্নে), অন্যদিকে দেশের বেকার সমস্যার কি চটজলদি সমাধান? দেশের হাজার হাজার যুবক ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে জিহাদি হয়ে উঠছে, সুতরাং তাঁদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের কোন দায় দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হচ্ছে না। পাকিস্থানি আর্মি, আইএসআই এবং ভ্রষ্ট রাজনীতিবিদ দের বিদেশী ব্যাঙ্ক ভরে উঠছে ডলারে। কিন্তু হায়রে অদৃষ্ট, সময়ের চাকা যে এক জায়গায় থেমে থাকে না এই সত্যটা অনুধাবন করতে পাকিস্থানের নেতৃ বর্গের বোধহয় কষ্ট হয়েছিলো। কারণ ৮০র দশকের শেষদিকে আফগানিস্থান থেকে পিছু হটতে থাকে রাশিয়া, পরবর্তীকালে আমেরিকাও হাত ধুয়ে ফেলে আফগানিস্থান থেকে। পাকিস্থান সমস্যায় পরে তাঁদের নিজেদের সৃষ্ট ফ্রাঙ্কেনস্তাইন মানে এই জিহাদি দের নিয়ে – যারা ধর্মের নামে মারা আর মরা ছাড়া কিছুই শেখেনি। আসলে বাঘের পিঠে চাপলে অত সহজে তো নামা যাবে না, তাই পাকিস্থান এই জিহাদিদের কিছু অংশকে ভিড়িয়ে দিলো ভারতের কাশ্মীর অংশে, সেই সাথে স্থানীয় কাশ্মীরি যুবকদের মগজধোলাই করে তাঁদের হাতে তুলে দিলো অস্ত্র আর মগজে ওয়াহাবি টক্সিকের বিষ। কাশ্মীরি যুবকেরা জিহাদি হয়ে উঠল, শান্ত কাশ্মীরে প্রবেশ করলো টক্সিক ওয়াহাবি মতবাদ। যেখানে কাশ্মীরি মুসলমানেরা এতকাল অনুসরণ করে এসেছে সুফি ইসলাম, শত শত বছর ধরে তাঁরা পাশাপাশি বাস করেছে কাশ্মীরি পণ্ডিত দের সাথে, যা মিলে মিশে সৃষ্টি করেছে এক অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, যাকে বলা হতো – “কাশ্মিরিয়াত”। হিন্দু কাশ্মীরি পণ্ডিতের বাড়ীর অনুষ্ঠানে পাত পেড়ে খেত কাশ্মীরি মুসলমান, আবার ইদের দিনে কাশ্মীরি মুসলমান ভাইয়ের বাড়ী নিমন্ত্রন থাকত ওই কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারটির।  কিন্তু পরবর্তীকালে ধর্মের বিষ মেরে ফেলল এই অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভালোবাসাকে। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হল কাশ্মীরি পণ্ডিত খেদাও অভিযান, মিছিল জমায়েত থেকে আওয়াজ উঠতে লাগলো – “নারায়ে তকদির, আল্লা হো আকবর। পণ্ডিত মহল্লায় হামলার সময় মসজিদের মাইকে আজানের আওয়াজ বহু গুন বাড়িয়ে দেওয়া হল যাতে আর্তনাদ, চিৎকার বাইরে শোনা না যায়। স্লোগান  দেওয়া হতে লাগলো – “ হাম ক্যা চাহতে আজাদি কিংবা অ্যায় জালিমো, অ্যায় কাফিরোঁ, কাশ্মীর হমারা ছোড় দো”।  হত্যা, অপহরন, লুটপাট, মহিলাদের রেপ কোন কিছুই বাদ গেলো না, ১৯৯০ সালের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ পণ্ডিত পরিবার হল কাশ্মীর ছাড়া। বেশির ভাগ আশ্রয় পেল জম্মুতে তৈরি হওয়া আশ্রয় শিবিরে আর বাকিরা ছড়িয়ে পড়ল ভারতের অন্যান্য শহরে। জম্মুর হাঁসফাঁস করা গরমে নোংরা বস্তির এক চিলতে তাঁবুতে কোনমতে সংসার, সরকারের দেওয়া রেশনের চাল-দালের ডোল নিয়ে কোনরকমে ক্ষুন্নিবৃত্তি। এক সময়ে যাঁদের আপেলের বাগান ছিল, দেওদার কাঠের বহুমুল্য আসবাব ছিল তারাই জম্মুতে চরম অসন্মানের জীবন যাপন করে চলেছেন। কই তাঁদের জন্নে তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহলের কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করতে দেখি না?

Tuesday, July 4, 2017

অণু গল্প ‘ডাক্তার’ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৩.০৭.২০১৭ / রাত ১২.০৫ / উল্টোরথ ।


          
          
          অণু গল্প  ‘ডাক্তার’  
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৩.০৭.২০১৭ / রাত ১২.০৫ / উল্টোরথ ।

 -আপনার পেশা?
-আমি একজন ডাক্তার ।
-আসল না নকল?                                        
                                                                    
 নকল ।                                                                                                                        
 কতদিন প্র্যাকটিস করছেন ?                                                                                           
 মানুষের সেবা করি আসল ডাক্তার রা ত আসেনা ।                                                                      
যা জিজ্ঞাসা করছি তার উত্তর দিন।   আপনি মানুষকে ডাক্তারি না পড়েই ওষুধ দেবেন ?                                                      
 এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ।                                                                                                   
 কেন আমি হোমিওপ্যাথি পড়েছি ,  কিন্তু যে ডাক্তার সরকারের অজস্র টাকা খরচা করে ডাক্তারি পাস করলো সে রোগী সেবা না করে মাইনে নেওয়া ক্রিমিনাল অফেন্স নয়?                                                                                              
সেটা আপনি বলার কে ?
আমি সাধারণ মানুষের হয়ে প্রশ্ন করছি ।
 তার জবাব কোর্ট দেবে আপনি আমি কে বলার ?                                                                        
 চলুন গাড়িতে উঠুন  । যে মানুষের বাড়ীতে উনুন জ্বলেনা হাঁড়ী চড়েনা  তারা ওষুধের পয়সা কোথায় পাবে ?  সেটা প্রশাসন দেখবে আপনি কে বলার কোন মানুষ মারা গেলে তার দায়িত্ব আপনি নেবেন ?                 
কেন যে ডাক্তার রা মানুষ মারে তারা কি দায়িত্ব নেয় সেই রোগীর ?                                          
আপনার সাহস ত কম নয় ক্রমাগত পুলিশের সঙ্গে যুক্তি করে চলেছেন ।                                      
আমার যুক্তিগুলো ভেবে দেখুন সার ।                                                                                     
আমি ভাবার কে সে বিষয় ন্যায়ালয়  আছে । আমার কাজ ওটা নয়। চলুন।
কিছু গ্রামবাসী হটাত এক খাটিয়ায় একটি ছেলেকে নিয়ে ওইখানে পৌঁছয় ।
ডাক্তার বাবুকে দেখে ওদের মধ্যে এক ব্যক্তি , “বলে ডাক্তার বাবু বাঁচান আমার ছেলেকে । কাল রাত থেকে প্রায় ১৪ বার বড় বাইরে করে দেখুন কি অবস্থা।” আপনি এখন ওর চিকিৎসা না করলে বেঘোরে মারা যাবে আমার ছেলে । কিছু করুন ডাক্তার বাবু।

ওই ব্যক্তি ডাক্তার বাবুর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে উত্তরের অপেক্ষায় ।
গ্রামবাসীরা এক স্বরে বলে ওঠেন , “ওরে পুলিশ কি মানুষ বাঁচায় ওদের কাজ...... !” 
থামুন । গর্জে ওঠেন পুলিস অফিসার । সাহস ত কম নয় আপনাদের ?
আমাদের সাহস না আপনার সাহস ! আপনি বাঁচাতে পারবেন এখুনি এই ছেলেটিকে । যদি না  পারেন তবে আমরা গ্রাম বাসিরা কখনই আমাদের ডাক্তার বাবুকে এই গ্রাম ছেড়ে যেতে দেবনা। আর আপনাকেও নয়। ওরে কে আছিস । এই দারোগাকে ওই ঘরে নিয়ে যা তালা বন্ধ করে রেখে দে। 
ডাক্তার বাবু চেঁচিয়ে ওঠেন না আইন হাতে নেবেন না । উনি ওনার কাজ করছেন আমাকে আমার কাজ করতে দিন। এই বলে স্যালাইন এর বোতল বার করে সঙ্গে সঙ্গে ড্রিপ দিতে সুরু করেন। ছেলেটি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ওই ড্রিপেতেই ডাক্তার বাবু আরেকটা ইনজেকশন দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছেলেটি চোখ খুলে চারিদিকে তাকায় ।
পুলিস দেখে ছেলেটি ভয়ে কেঁদে ফেলে ।
পুলিশ অফিসার বলেন ,“এখন কিরকম লাগছে বাবা।
ভয়ে ভয়ে বলে , “ভালো । কিন্তু পুলিশ কেন আমাদের গ্রামে কি হয়েছে ওর বাবার দিকে চোখ ফিরিয়ে বলে।
তুই সুস্থ হ বাবা । ওসবে তোর কাজ নেই। এখন ভালো লাগছে 
হ্যাঁ । কিন্তু বলনা বাবা কি হয়েছে ?
ওর বাবা এবং গ্রামের লোকেরা দারোগা বাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন , “উত্তর দিন সার।
দারোগা মাথা নিচু করে বলে আমাকে আমার কাজ করতেই হবে ।
গ্রাম বাসিরা রে রে করে ওঠে ... কাজ দেখাচ্ছ গরীবের সাহারা কেড়ে নিয়ে। আজ ডাক্তার বাবু না থাকলে আমার ছেলের কি হত তার জন্য আপনি দায়ী হতেননা আপনার প্রশাসন দায়ী হত । বলুন বলুন।
আমাদের ডাক্তার বাবু এখানেই থাকবেন। উনি আমাদের ভগবান । আর ভগবান কে দানবের হাতে আমরা তুলে দেব না। ফিরে যান নাহলে ভালো হবেনা। ফিরে যান ।
কিন্তু ডাক্তার বাবু বলেন আমাকে যে যেতে হবে ভাই।
এই সময় দারোগা বাবু বলেন , “ না থাক আমি কথা বলে দেখবো। পাবলিক যখন আপনাকে এই গ্রামে চায় তখন আপনি থাকুন । আমি সরকারকে এবং পুলিশ সুপারকে জানাবো এই ঘটনার বিষয়। আমিও মানুষ । আমি অমানুষ নই । পুলিশ হওয়া পাপ নয়। মনে রাখবেন তারাও মানুষ