অপরাধ গল্প
ডবল মার্ডার (সত্যি ঘটনা অবলম্বনে)
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৬.১১.২০১৫ / রাত ৮.২৫
ডঃ প্রফুল্ল মিশ্র এবং তাঁর স্ত্রী ডঃ সুষমা মিশ্র একটি ডুপ্লেক্স এপার্টমেন্ট কিনে অবসরের পর কোন এক সহরে নির্জন নিরিবিলি পরিবেশে থাকতেন। ওনাদের তিন ছেলে ডঃ সুপ্রভাত মিশ্র বড় ছেলে সে সিঙ্গাপুরে ডাক্তার । মেজ ছেলে সুহৃৎ মিশ্র , সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ,নিউ জার্সি , আমেরিকাতে । ছোট সুকমল মিশ্র এম.বি.এ পাঠরত । ওনাদের কোন মেয়ে নেই ।
প্রফুল্ল এবং সুষমার কাছে কোন ছেলেই থাকে না । তাই ওনারা একাকীত্ব বোধ কাটাতে মন্দিরে পূজার্চনা করা এবং বিভিন্ন ধর্ম কর্জে নিজেদের সময় অতিবাহিত করেন। প্রত্যেক দিন দুজনে প্রাতঃ ভ্রমণে ভোর ৫ টায় উঠেই বেরিয়ে পড়েন। ট্র্যাকিং সুট পরে শীতকালে দুজনে শরীর চর্চা করেন ত বটেই তা ছাড়া সকাল বেলায় ফুল তুলে নিয়ে এসে সকাল ৭ টার মধ্যে প্রাতঃ কর্ম সেরে ঠাকুর পূজো সেরে নেন। দুজনেই ডাক্তার তাই শরীর চর্চা , যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি অভ্যাসে নিজেদের শারীরিক ভাবে ফিট রাখেন। প্রফুল্ল বাবু চোখের ডাক্তার এবং সুষমা দেবী স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তাই ওনারা জীবনের সমস্ত উপার্জন ছেলেদের উচ্চ শিক্ষার জন্য খর্চা করতে কোন কুণ্ঠাবোধ করেন নি । এর ফল স্বরূপ প্রত্যেকটি ছেলে সুযোগ্য সন্তান হয়েছে। বাবা মায়ের মত তারাও সরল এবং নম্র ধীর স্বভাবের।
বাড়িতে কাজের লোক বলতে একটি ঠিকে ঝি , সকাল ৬.৩০ আসে । আরেকটি রাঁধুনি দিদি তিনি সকাল ৮ টায় আসেন । রোজকার মতন স্বামী স্ত্রী প্রাতঃ ভ্রমণ সেরে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন সকাল ৬ টায় । সকাল ৬.৩০ সময় ঠিকে ঝি কমলা গেটে কলিং বেল টিপলে কেউ সাড়া দেয়না। ঘরের ভেতর থেকে কোন আওয়াজ প্রায় ৫ মিনিট না পাওয়াতে কমলা পাসের ডুপ্লেক্সে ইঞ্জিনিয়ার স্বর্ণদ্বীপ সাহা বাবুর ঘরে নক করে এবং জানায় সব কথা । ওনাদের চাকর এসে বেল টেপে কিন্তু কোন সাড়া শব্দ ঘরের ভেতর থেকে আসেনা । এতে সকলের সন্দেহ হয় এমনিতেই আজকাল সিনিয়র সিটিজেনদের একলা পেয়ে হামেশাই নানা ক্রাইম হচ্ছে সেইরকম কিছু হল নাত ! কমলার যেন হটাত ছ্যাঁক করে ওঠে । ইতিমধ্যে আসে পাসের থেকে লোক আসে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের জিপ আসে সঙ্গে ইনস্পেক্টর , ফরেনসিক এক্সপার্ট ইত্যাদি। ওনারা বোধ হয় আঁচ করেছেন কোন দুর্ঘটনার কথা । তা নাহলে দল বল নিয়ে পুলিশ কেন যেখানে কারুর টিকি পাওয়া যায়না সাধারণত ।
পুলিশের লোকজন স্বদল বলে ঘরে ঢোকে ছাত দিয়ে ওপরের ঠাকুর ঘরে । ঘরে ঢুকে সকলে হতভম্ব । সুষমা দেবী রান্না ঘরে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন মাথায় শক্ত আঘাত । গ্যাসে চায়ের সসপ্যান বসান কিন্তু গ্যাস বন্ধ । ড্রইং রুমের মেঝেতে প্রফুল্ল বাবু পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছেন গলায় ফাঁস লাগান । দুজনেই একসঙ্গে ইহ-ধাম ত্যাগ করেছেন । ড্রইং রুমের টেবিলে সুষমা দেবীর মোবাইলে সাতটা মিস কল সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর বড় ছেলের ।
আসলে সিঙ্গাপুর থেকে ডঃ সুপ্রভাত মিশ্র তাঁর বন্ধু ডিসিপি , চিরঞ্জিত সেনকে ফোনে কিছু একটা সন্দেহ করে ফোন করেন কারন অতগুলো মিসকল হওয়ার কথা নয়। বাবা মা রোজ ওই সময় ফোনে সুপ্রভাতের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা নানা কথা সারেন । ঠাকুমা নাতীর কথা হয় । সেদিন সেরকম কিছুই হয়নি। তাই সুপ্রভাত কিছু একটা দুর্ঘটনা আঁচ করেন।
তাঁর অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় । বডি পোষ্ট মর্টমে পাঠান হয় । কাজের ঠিকে ঝি কমলাকে পুলিশ জিজ্ঞাসা বাদ করে । সে সমস্ত ঘটনা উল্লেখ করে কিন্তু সেদিন রান্নার দিদির পাত্তা ছিলনা । বেলা গড়িয়ে ১০টা বাজলো সে আসেনি সেদিন। পুলিশের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। পুলিশের জীপ ছোটে রাঁধুনি দিদির তল্লাশে । কিন্তু তার হদিশ মেলেনা । সে নাকি বাপের বাড়ি গিয়েছে তাদের পাসের বাড়ির লোক বলে। কিন্তু কিছু না জানিয়ে গিয়েছে কি জানিয়ে গিয়েছে তা বলা মুস্কিল কারন ডাক্তার দম্পতী নেই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার । কাজের ঝি কি করে এর উত্তর দেবে।
ফরেনসিক এক্সপার্ট , ডগ স্কোয়ার্ডের তালিম প্রাপ্ত কুকুর ছাতে উঠে ওপর থেকেই লাফ দিয়ে পেছনের সজনে গাছের আড়ালে পুকুরের দিকে ছুটল কিন্তু পুকুর পাড় থেকে ফিরে এল। জলে কেউ সাঁতরে গেলে তাকে সনাক্ত করা কুকুরের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যে বা যারা এই খুন করেছে তারা চতুরতার সঙ্গে কিছু সুরহা ছেড়া যায়নি । কিছু আসবাব পত্র এবং আলমারি খোলা হয়েছে । কিন্তু তাতে কোন হাতের ছাপ নেই কিম্বা ফুট প্রিন্ট ও নেই। তাই অপরাধী সনাক্ত করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের এই নিরীহ দম্পতীকে খুন করার মোটিভ কি ? চিরঞ্জিত সেন খুব চিন্তায় পড়লেন । এবং বন্ধুকে ফোনে সব জানিয়ে দিলেন। তদন্ত চলছে পাঁচটি টিমে বিভক্ত হয়ে ।
ছোট ছেলে সুকমল এসে গিয়েছে । তার দুই দাদা পরের দিন সন্ধ্যে বেলায় এসে পৌঁছোয় । পোষ্ট মর্টমের রিপোর্ট পরের দিন এল । খুন সকাল ৬.০০ থেকে ৬.৩০ র মধ্যে হয়েছে । ঠিকে ঝি আসাতে কেউ সাড়া দেয়নি তাই । স্বাভাবিক । কিন্তু খুনি এত সকালে এসে এই অপরাধ ঘটান এত পুরো সুপারি কিলারের ব্যাপার । পুলিশের ঘাম ছুটল । বন্ধুর বাবা মায়ের খুন । কিছু সুরহা বার করতেই হবে।
তদন্ত চলছে পাঁচটি টিমে বিভক্ত হয়ে ইনভেস্টিগেশন চলে। রান্নার দিদিকে পুলিশ হেপাজতে রাখা হয়েছে । তার দিকে সন্দেহ বেশি । এ ছাড়া ডাক্তার দম্পতীর ড্রাইভার , মুন্না যাদব কে পুলিশ জেরা চালাচ্ছে । আরও কিছু সন্দেহের ব্যক্তি যাদের ওই ঘরে যাওয়া আসা ছিল তাদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে।
পরে জানা গেল রান্নার দিদি নীহারিকা বিবাহিতা হয়েও মুন্নার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল । তাই তারা দুজন ই পুলিশের কাষ্ঠাডিতে রইল । এরপর মুন্নার বিগত হিষ্ট্রি জেনে পুলিশ তার ক্রাইমের সঙ্গে কিছু লিঙ্ক পেল । নীহারিকা বাপের বাড়ির নাম করে ডায়মন্ড হারবার বেড়াতে যায় মুন্নার সঙ্গে । ওটাই সন্দেহের কারন । তারা সুপারি কিলার দিয়ে ওই লোম হর্ষক খুন ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারনা। কিন্তু সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ । তদন্ত চলছে।
No comments:
Post a Comment