Wednesday, January 6, 2016

অনুচিন্তা ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৪.০৮.২০১৫



   অনুচিন্তা 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৪.০৮.২০১৫ 

শনি রবিবার আমাদের বেড়ানোর দিন। যেখানে মন চায় বেড়িয়ে আসি । সাধারণত মন্দির , ঠাকুর দর্শন ই বেশি হয় । গত শনিবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মায়ের দর্শনে গেলাম । এখন মায়ের মন্দির আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে । একটা ব্যাপার বড় দৃষ্টি কটু লাগলো । সেটা বলতে খারাপ লাগছে ভিখিরিদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । কাল ই এক পরিসংখ্যান বিবৃতি দেখলাম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ তে । পশ্চিম বঙ্গে নাকি ভিখিরির সংখ্যা ৮১০০০ এবং তাও আবার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে প্রথম । খুব খারাপ লাগলো ব্যাপার টা যেনে । মন্দিরে প্রবেশের আগে ফুটের ধারে কিছু ভিখিরির মধ্যে একটি ১০-১১ বছর বয়েসের মেয়েকে দেখি আমার কাছে এসে বলতে, “বাবু আমার মা বাবা দুজনেই মারা গিয়েছেন । আমি ক্লাস সেভেন এ পড়তাম । এখন কি করি , পড়া ত দুরের কথা নিজে কি খাবো কি পরবো তার চিন্তায় থাকি। ভাড়া বাড়ি থেকে বাড়ি-বালা তাড়িয়ে দিয়েছেন । যা ছিল সব ভাড়া বাবদ রেখে দিয়েছেন । আমাকে সাহায্য করুন বাবু । আমি আপনার মেয়ের মত”
মেয়েটি যদি সত্যি বলে থাকে তবে করুন । আমার মনে হল মেয়েটি সত্যি অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা । ও ভিখিরি নয় কিন্তু হয়তো পরিবেশের চাপে ভিক্ষা বৃতি করতে বাধ্য হতে পারে যেটা সমাজের জন্য কলঙ্ক । প্রশাসন কিম্বা কোন সহৃদয় ব্যক্তি বিশেষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারলে ভালো হয়।
আমি বলি , তুই কি সত্যি পড়তে চাস !
মেয়টি বলে , হ্যাঁ ।
কোন হস্টেলে যদি থাকার সুবিধে হয় সেখানে থেকে পড়াশুনো করবি ?
ও বলল হ্যাঁ কেন করবোনা বাবু ।
তবে শোন আজ আমার কাছথেকে ৫০ টাকা রাখ । ওই দিয়ে কিছু খেয়ে নিস। ভিক্ষা করিসনা । আমি তোকে আদ্যা মা’য়ের আশ্রমে ভর্তি করে দেব। ওখানে থেকে তোকে পড়াশুনো করতে হবে কিন্তু ।
মেয়েটির চোখথেকে জল গড়িয়ে পড়ে । আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে ।
আমি বলি থাক থাক । ওসবে প্রয়োজন নেই । মা’কে প্রণাম কর উনি তোর সব দুঃখ হরণ করবেন । মা’কে মন দিয়ে ডাক দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে । দূর থেকে গিন্নী সব লক্ষ্য করছিলেন । আসলে উনি ত আমার সব ব্যাপার ই জানেন । এসব বিষয়ে উনি কোন দিন বাধা দেন নি ।
আমি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট কে ভুল বলে প্রমাণিত করতে চাই । পশ্চিম বঙ্গে যথেষ্ট মেধা আছে হয়তো আমাদের ছেলে মেয়েদের পকেটে পয়সা নেই । এই মেধাগুলোকে একত্রিত করতে পারলে ভারতের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করবে প্রগতি এবং বিদ্যা বুদ্ধিতে । আবার সেই দিন ফিরে আসুক “What Bengal thinks today India thinks tomorrow” । এটাই আমার স্বাধীনতা দিবসের ইচ্ছা এবং জন্ম ভূমির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

No comments:

Post a Comment