Wednesday, August 26, 2015

অনুগল্প ইয়র্কর (YORKER) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৯.০৮.২০১৫ /


অনুগল্প
ইয়র্কর  (YORKER)
ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী  / ১৯.০৮.২০১৫  /
 বাড়ির কাছেই খেলার মাঠ ছিল । রোজ বিকেলে কলেজ থেকে ফিরে বিকেল  ৫.৩০ সময় ক্রিকেট ব্যাট হাতে মাঠে হাজির । আমাদের ১১ জনের টিমে বেশ কজন ডিসট্রিক্ট প্লেয়ার ছিল অবশ্য আমি নই। মাঠের পাসেই সারি সারি দোতালা বাড়ি তার ছাদে আমাদের ই সম বয়সী মেয়েরা আমাদের খেলা দেখত । আমরা তাই ইন্সপায়ার্ড হতাম । মাঝে মাঝে ভালো চৌকা ছক্কা হলে হাত তালি পড়তো তাতে আরও ভালো লাগতো ।  মানে যা হয় আরকি ওই ইয়ে ...... । আমাদের ই সঙ্গে একটি মেয়ে পড়তো সাইন্সে নামটা এখন মনে আছে সংযুক্তা  দাস । ওর বাবা আই.এ.এস অফিসার ছিলেন। কিন্তু মেয়েটা খুব সাদা মাটা ছিল । ভালো খেললে ওর বন্ধুদের সঙ্গে লাফিয়ে হাত তালি দিত।
একদিন আমি খুব জোর ব্যাট ঘুরিয়েছি ছক্কার আসায় কিন্তু বলটা ইয়র্কর ছিল , ব্যাস লেগ  স্টাম্প উড়ে পেছনে পড়লো । আমাদের ই বন্ধু আম্পায়ার ‘বল্টু’ সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল তুলে আমায় আউট করে দেয়। খুব লজ্জা জনক পরিস্থিতি । মনে মনে ভাবলাম টাইমিং টা কেন ঠিক করে  বুঝতে পারলাম না ! চারটে বল খেলেই আউট তাও মাত্র ২ রান করে । ওপরে চোখ ওঠানোর সাহস হলনা । কারন সংযুক্তা যদি দেখে থাকে কেলেঙ্কারি কান্ড হবে । আমি মাথা নিচু করে প্যাভিলিয়নে চলে যাই । সত্যি বড্ড খারাপ পারফরমেন্স হল।   
পরের দিন কেমিস্ট্রি প্রাক্টিকাল ক্লাসে সংযুক্তার সঙ্গে চোখ মেলাতে পারলাম না । আমি নিজের মনে 'টাইট্রেসন' টা করছি । হটাত দেখি পাসে সংযুক্তা । একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলি , “কিছু বলছিলে”? 
আমার বেকুবের মত চেহারা দেখে ও হেঁসে ফেলল । আমি আরও লজ্জা পেলাম । কালকের খেলাটা বোধ হয় ও দেখেছে। ইস কি বাজে খেলেছি কালকে। মনে মনে ভাবি ।
বলল , “তুমি খেলার সময় অত অন্যমনস্ক থাকো কেন”?
আমি বলি এই কথা বলার জন্য আমার কাছে এলে ?
না ।
তবে ?
তোমার প্রাক্টিকাল রেকর্ড টা দাও । গতবারের এক্সপেরিমেন্টের রেসাল্ট টা দেখবো ।
ও ! এই নাও ।
কিছু বললে না যে ?
কি বলবো ? হ্যাঁ আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম নাহলে আউট হতাম না । বলটা  ইয়র্কর ছিল । টার্ন নিয়ে লেগ স্টাম্প এ জোরে লাগে । 
ও বলে ওইরকম ইয়র্কর জীবনে প্রতি মুহূর্তে আসবে । সেটাকে ফেস করতে হবে সজাগ থেকে নাহলে তোমায় প্রতি মুহূর্তে বোল্ড হতে হবে । কিছু বুঝলে !  
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে ওর চোখের দিকে তাকাই । চোখে দুষ্টুমি তে ভর্তি হাঁসি ।
খুব খারাপ লাগলো । আবার ওর ওই হাঁসিতে কিছু ইঙ্গিত ছিল বলে মনে হল।
আজ ও আমি ..ওই ইঙ্গিত টা কি ! তাই খুঁজছি । নিজেকে প্রশ্ন করে । কি হতে পারে ? দূর আমি তৃতীয় আর ষষ্ঠ সুরের মিলিত শব্দ হয়ে গেলাম নাকি ! কিছুই মাথায় আসে না। আমি বুঝি প্রাক্টিকাল রেকর্ড টা এক বাহানা মাত্র । ও আসলে আমাকে কিছু বোঝাতে চাইছিলো  ............। ব্যাশ ।  

No comments:

Post a Comment