Friday, August 7, 2015

অনু গল্প বন্যা ত্রাণ (সম্পূর্ণ কাল্পনিক কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়) ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৪/০৮/২০১৫ রাত ৯.১০



    অনু গল্প 
  বন্যা ত্রাণ  
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়) 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৪/০৮/২০১৫ রাত ৯.১০

বন্যা প্লাবিত অঞ্চল ঘুরে ত্রাণ বিলি করতে চলেছে একদল যুবক । সঙ্গে মিনারেল ওয়াটার এর পাউচ হ্যালোজেন ট্যাবলেট ,চিঁড়ে বিস্কুট মোমবাতি দেশলাই গুঁড়ো দুধ গামছা পলিথিন এবং আরও অনেক কিছু। একটা টাটা এস ট্রাকে সকলে গন্তব্য স্থলে চলেছে । সারা রাস্তা বন্যার দৃশ্য দেখে মন খারাপ হয় সকলের। রাস্তার দু ধারে ধানের জমির চিহ্ন নেই শুধু থৈ  থৈ করছে জল আর জল।  রাস্তায় জল এক হাঁটু তাও তোয়াক্কা না করে সকলে নেমে পড়ে ত্রাণ বিলি করতে। 
দূর থেকে একদল লোক এসে বলেন আমরা সঙ্গে থাকবো আপনাদের সঙ্গে ত্রাণ বিলি করার সময় । তাদের সঙ্গে এক কেমেরা ম্যান । ব্যাপারটা গোলমেলে লাগলেও উপায় কিছু নেই । নিশ্চই কোন পলিটিকাল পার্টির সঙ্গে যুক্ত এরা ।
গ্রাম সম্পূর্ণ জল মগ্ন । ঘর বাড়ি সব মাটির তাই কিছু ভেঙ্গে গিয়েছে আবার কিছু অর্ধ ভগ্ন অবস্থায় । চাষের জমি জল মগ্ন । কিছু লোক তাদের গরু বলদ কে সঙ্গে নিয়েই আছে উঁচু স্থানে । কিছু বাচ্চাকে দেখি ছাগল কলে করে আছে। নিশ্চই তার প্রাণের অধিক সেই ছাগলটি । সতৃষ্ণ নয়নে ত্রাণের জন্য বসে আছে । কিছুই করার নেই জল না নামা অব্ধি ।
সঙ্গের লোকগুলি একটি ফর্দ বারকরে নাম ডাকতে শুরু করে । আমরা সকলে বিরক্ত হয়ে বলি নামের কি প্রয়োজন । আমরা যা এনেছি মনেহয় সকলে পাবেন। আমরা বিলিকরে দিচ্ছি আপনারা  যারা পেলেন তাঁদের নাম লিখে নিয়ে-যান ।
উঁহু এখানে আমাদের কথায় ত্রাণ দেওয়া হয় । আমাদের লোকরা না পেলে ত্রাণ বিলি বন্দ করতে হবে ।
আমাদের দলের গাইড সংগ্রাম মুখার্জী বিরক্ত হয়ে বলেন দাদা আমরা কোন রাজনীতি করতে এখানে আসি নি । অসহায় লোকেদের দুর্দশার সময় তাদের কিছু সাহায্য করতে পারলে আমাদের আত্ম তৃপ্তি হবে । তা ছাড়া আমরা নিজেরা টাকা যোগাড় করে এই ত্রাণ নিয়ে এসেছি । আমাদের বাধা দেবেন না প্লিজ ।
আরে দূর মশাই । রাখুন আপনাদের ঢঙ্গের কথা । ওসব অনেক দেখেছি । আমরা যা বলছি তাই হবে না হলে চলে যান এখান থেকে।  ওসব ত্রাণ ফ্রান সরকার দেবে আপনারা কে ত্রাণ দেওয়ার এই ত্রাণ পেয়ে কোন গোল বাধলে আপনারা সামলাবেন ?আপনাদের খাবারে বিষ নেই বলে কি গ্যারান্টি আছে ?
আকাশ থেকে পড়লাম আমরা ! এও শুনতে হয় ! সকলে এক স্বরে বলি ,  ঠিক আছে খাবার আমরা প্রথমে খেয়ে বিলি করবো । কোন আপত্তি আছে ?
আছে । আমরা একে একে নাম ডাকছি । আমাদের পঞ্চায়েত প্রধান সেই নামের ব্যক্তি দের  ত্রাণ বিলি করবেন । আপনারা সঙ্গে থাকবেন। ফটো তোলা হবে ব্যাস । আপনাদের ত্রাণ ও দেওয়া হল আমাদের কাজটাও সুচারু রূপে সম্পন্ন হল । রাজি !
না হয়ে উপায় কি আমরা ত এগুলো ফেরত নিয়ে যেতে এত রাস্তা আসিনি ! নিরুপায় হয়ে বিনা যুক্তি তর্কে ত্রাণ বিলি করে ফিরে গেলে বাঁচি ।
একে একে সকলে আসছিল । ঠিক সেই সময় এক বৃদ্ধ প্রতিবাদ করে ।
লোকগুলোর মধ্যে একজন বলে ভোট দেওয়ার সময় মনে ছিলনা । কেন দিলি আমাদের না দিয়ে। এখন উপোষ থাক ।
বৃদ্ধটি কিন্তু চুপ থাকার পাত্র নয় । সে ঝাঁজিয়ে বলে গ্রামের উন্নতি না করে সেই টাকা তোমাদের মদ মাংসতে খর্চা করবে । এখন বাবুরা সহর থেকে আমাদের জন্য যা এনেছেন তা বিলি করতেও রাজনীতি করবে । তোমাদের ধর্ম সইবে ?
তা তুই শ্রাবণের উপোষ করে ধর্ম কর । আজতো আবার সোমবার । নে আজ শিবের উপোষ কর । শিব প্রসন্ন হলে তোকে স্বর্গে নিয়ে যাবে পাঁজ কোলা করে । অন্যরা তোর সামনে ত্রাণ নিয়ে শান্তিতে থাকুক । তুই বসে আঙুল চোষ ।    
 ত্রাণ বিলির নিদারুণ অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরি সকলে।  

No comments:

Post a Comment