Saturday, August 15, 2015

আমার ছোটবালার কিছু স্মৃতিঃ- (প্রথম , দ্বিতীয় , তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম পর্ব ) ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী .


আমার ছোটবালার কিছু স্মৃতিঃ- (প্রথম পর্ব)
 
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী

আমি যেসব যায়গায় স্কুলের পড়াশুনো করেছি সেগুলো গ্রাম নয় সম্পূর্ণ জঙ্গল ছিল । দিনের বেলায় ভালুক আর রাতে বাঘ । ১৯৬৪ সাল । যায়গাটার নাম মালকানগিরি , কোরাপুট জেলা , উড়িষ্যা । বাবা দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের জোনাল এগ্রিকালচার অফিসার ছিলেন ।কেন্দ্র সরকারের অধীনে ডেপুটেসনে ছিলেন। তখন লন্ঠন ই এক মাত্র সম্বল। ছোট বেলায় বাঘ , হরিণ ,শিকার দেখেছি। তখন শিকার করা ফ্যাশন ছিল । একবার বাবার সঙ্গে জয়পুর , কোরাপুট থেকে মালকানগিরি আসার সময় রাস্তায় গোবিন্দপল্লী ব্লকের কাছে দুটো পাহাড় কেটে মাঝখানে রাস্তা ছিল সেই রাস্তায় একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাহাড়ের এক পাস থেকে আরেক পাসে লাফ মারলো । ঠিক আমাদের জিপের ওপর । ড্রাইভার একটুও না ঘাবড়ে সোজা স্টিয়ারিং হাতে পুরো ঘটনাটা সামাল দিল । পূরণ উইলিস জিপ লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ ছিল। আজ সেই কথা মনে পড়ে গেল। এরকম অনেক ঘটনা আছে । 

আরেকটা ঘটনার কথা বলি । তখন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে বাবার কাছে যাই । আমি অনেক দুর্গম যায়গা বাবার সঙ্গে টুরে গিয়েছি । এক আদিবাসীদের গ্রাম চিত্রকুন্ডার কাছে (এখন চিত্রকুন্ডা সহর হয়ে গিয়েছে) সেখানে তাঁবু ফেলে রাত কাটাতে হল বাবার সঙ্গে । সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি সব সময় বাবার সাথে সাথে থাকে । ওর দোনলা বন্ধুক একটা রাইফেল আরেকটা গান । রাতে বাইরে আগুন জ্বালিয়ে কিছু আদিবাসী পাহার দিল কারন বাঘের উপদ্রব । ভঞ্জ শিকারি রাতে জেগে রইলেন । রাতে বাবা দুবার ওঠেন বাইরে যাওয়ার জন্য। ভঞ্জ শিকারি সেটা জানেন তাই তার সাহেবের বডি গার্ড হিসেবে বাবার পেছনেই ছিলেন তিনি। হটাত ভঞ্জ শিকারি লক্ষ্য করেন দুটো জ্বলন্ত চোখ বেশ খানিকটা দূরে । শিকারিরা বাঘের চোখ দেখলে বুঝতে পারেন । কাল বিলম্ব না করে ভঞ্জ শিকারি দু চোখের মধ্যে খানে লক্ষ্য করে রাইফেলের ট্রিগার টেপে । বাঘটি প্রচণ্ড শব্দ করে লাফ মারে । ভঞ্জ শিকারি আবার গুলি ছোঁড়ে এবার আর কোন শব্দ নেই । বাবা হতভম্ব হয়ে ভঞ্জ কে ডাকেন , তখন ভঞ্জ শিকারি বাবাকে প্রায় চ্যাঁ দোলা করে টেন্টে নিয়ে যায়। আদিবাসী লোক গুলি আগুনের মশাল নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ফেলে বাবাকে । পরে যানা যায় সকাল হতে এক বিরাট রয়েল বেঙ্গল টাইগার মরে পড়ে আছে । কপালে দুচোখের মাঝে একটা গুলি আরেকটা পেটে । আদিবাসীরা গান করে নিয়ে এলো বাঘটিকে । ওদের অনেক গরু ছাগল খেয়েছিল বাঘটা । বাঘটা খুব উৎপাত করছিলো তাই তাদের আনন্দের সীমা নেই। আমরা বাড়ী ফিরি জীপের ট্রেলারে বাঘ সমেত । রাস্তায় লোকে অতবড় বাঘ দেখে আশ্চর্য হচ্ছিল আবার অবাক ও হচ্ছিল। বাবা ভঞ্জ শিকারিকে পুরস্কার স্বরূপ ৫০ টাকা দেন (১৯৬৪ সালে ৫০ টাকা অনেক) সেই বাঘের ছাল চেন্নাই পাঠান হল ট্যানিং এর জন্য ।   
আমার ছোটবালার কিছু স্মৃতিঃ- (দ্বিতীয় পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
বাঘের ছালটা ট্যানিং এর জন্য মান্দ্রাজে(চেন্নাই) তে যে ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন তাঁর নাম মিঃ নাইয়ার । কেরলী ভদ্রলোক । উনি বাবার স্টেনো ছিলেন। দুঃখের কথা ভদ্রলোক নিয়ে গেলেন ঠিক ই কিন্তু ফিরিয়ে আনলেন না । ফিরে এসে বাবাকে বললেন , ফরেস্টের অফিসার নাকি সিজ করেছিলো বাঘের ছালটা অন্ধ্র থেকেই ট্রেনের কোম্পার্ট্মেন্টে । ওনাকে ফাইন দিতে হয়েছে সেই জন্য । যদিও কথাটা বিশ্বাস যোগ্য নয় কিন্তু বাবা ওই বিষয় নিয়ে আর মাথা ঘামালেন না। ভঞ্জ শিকারি ভদ্রলোককে অনেক কটু কথা বলতে লাগলেন । খুব রাগ করেন নায়ার বাবুর ওপর । নায়ার বাবু কোন উত্তর দেন না । ভঞ্জ শিকারি বলেন,“আপনি কেন না জেনে অত দামি বাঘের ছালটা নিয়ে গেলেন?” এর পর ওই ভদ্রলোক চাকরি ছেড়ে চলে যান । কেউ ওনাকে ফেয়ার ওয়েল দিলনা ।
বাবা নায়ার বাবুকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ালেন বটে কিন্তু যাওয়ার আগে বুঝিয়ে দিলেন যে কাজটা ভদ্রলোক ঠিক করলেন না। বাঘের ছালটার গল্প গল্পতেই থেকে-গেল ওটা থাকলে বাবার স্মৃতি এবং সবচেয়ে বড় কথা ভঞ্জ শিকারির এত বড় শিকারের স্মৃতি জীবন্ত হয়ে থাকতো ।
যাইহোক এর পরে ভঞ্জ শিকারি যতগুলো বাঘ ভালুক শিকার করেছে সে সব গুলোর ছাল নিজেই নিয়ে গিয়েছে ।
একদিন আমরা সকলে মানে মা বাবা এবং আমি কাছেই একটা ডেয়ারি ফার্মে গেলাম বেড়াতে। সেদিন রবিবার ছিল । আমাদের জীপের ড্রাইভার পাঞ্জাবী ভদ্রলোক ছিলেন নাম গুরুমুখ সিং । আমরা ওনাকে সিং জী বলতাম। খুব আমুদে লোক উনি। আমাকে পাঞ্জাবীদের জোক শোনাতেন । সর্দার কা বারা বজ গয়া ওনার কাছ থেকেই শোনা । আমি একদিন বলি সিং সাহেব আপনি পাঞ্জাবী হয়ে পাঞ্জাবী জোক শোনান কেন ? উনি বলেন তোমরা আনন্দ পাবে বলে । তা ছাড়া ইয়ে ত জোক হ্যায় , সচ থোড়ি ।
সিং জী শুরু করেনঃ- এক দিন এক সর্দারের ছেলে ভূগোল ক্লাসে বিষুব রেখার বিষয় পড়ে । উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধ র বিষয় পড়ে । ওর খুব ইচ্ছে হয় বিষুব রেখা দেখতে । বাবাকে বলে পিতাজী হম বিষুব রেখা ইয়ানি ইকুয়েটার দেখনা চাহতে ।
পিতাজী বলেন বেটা ইকুয়টার দেখ নাহি সকতে হো , ও ত এক কাল্পনিক রেখা হ্যায় ।
বেটা বোলা নাহি হম খুদ দেখ লেঙ্গে বলে বাবার বাইনোকুলার নিয়ে আসে ।
বাবার মাথায় এক বুদ্ধি এলো । ছেলেকে বলেন চল ম্যায় হিঁ দিখা দেতা হুঁ তুঝে। এই বলে ছেলে যখন বাইনোকুলার আকাশের দিকে দেখে ওর বাবা বাইনোকুলারের কাঁচের সামনে নিজের দাড়ি থেকে একটা চুল ছিঁড়ে কাঁচের সামনে ধরেন।
ছেলেকে বলেন বেটা ক্যা দেখা তুনে ?
বেটা বোলা জি ইকুএটার দেখা ম্যায়নে ।
অঊর কুছ ? হাঁ জি উসকা উপর এক উট ভি চল রাহি হ্যায় ।
সিং জি বলেন কিছু বুঝলে?
আমি বলি সে কি করে সম্ভব ?
সে ত না কিন্তু উট টা কি যানো ।
না
আরে ওটা ছেলের বাবার দাড়িতে যে উকুন ছিল ওটা চলছিল। বাইনোকুলারে ওই উকুনটা বড় দেখাচ্ছিল তাই ও উট বলে ভাবলও ।
আমি হো হো করে হাঁসি । সিংজী ক্যা বাত । বহুত আচ্ছা জী ।
এরমধ্যে বাবা মা এসে-গেলেন একটা জার্সি গরু কিনে। নীলকণ্ঠ আমাদের পিওন অই গরু নিয়ে পেছনে ট্রাকে বাড়ি নিয়ে আসবে ।
আমার মা খুব সু গৃহিণী ছিলেন। আমাদের কোয়ার্টারের পেছনে নিজে হাতে বাগান করেছিলেন। বাগানে রকমারি শাক সবজি এবং কিছু ফলের গাছ ছিল। আমরা বাজার থেকে শুধু আলু পেঁয়াজ কিনতাম অন্য কিছু কিনতাম না। এবারে গরু এসে-গেল মানে গরুর দুধ ও কেনা হবে না। ঘরে ৬২ টা মুর্গী ছিল । কাজেই ডিম আর মুর্গীর মাংস ঘরেই পেতাম সকলে।
নীলকণ্ঠ কাঠ কেটে রাখত । সেই কাঠের জালের রান্না হত। বাবার খাওয়ার অনেক তরিবাত ছিল । কাঠ কয়লার আঁচে মাংস রান্না হত খুব ধিক ধিকে আঁচে । বাবার ফেভোরাইট বাটি চচ্চড়ি সেটা আলু পোস্তর সঙ্গে মাশরুম দিয়ে ধিক ধিকে আঁচে বসবে ওপরে কাঁচা সর্ষের তেল আর কাঁচা লংকা চিরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এক জাম বাটি পাঁঠার মাংস বাবার প্রিয় ছিল। ভাত খুব ই কম খেতেন। রাতে দুখানি রুটি আর এক বাটি দুধ খেতাম আমরা সকলে ।
মা না-থাকলে ‘মিশ্র পিওন’ রান্না করতো । মিশ্র খুব তেল মসলা দিয়ে রান্না করতো । তাই জগদলপুর থেকে বাবা ‘মঙ্গল রাম’ বলে এক মধ্য প্রদেশের বাবুর্চি আনেন। ও মুর্গা মসল্লা টা ক্লাস রান্না করতো । আমাদের বাড়িতেই দিশি মুর্গী থাকতো । মঙ্গল বাবাকে সকালে কি কি রান্না হবে জিজ্ঞাসা করে নিজেই মুর্গি কাটতে চলে যেত । আমি মঙ্গলের কাছে মুর্গি কাটা শিখি । মঙ্গলের কোন ছুরির প্রয়োজন হত না । হাতেই সব কাজ সেরে ফেলত । তখন প্রেশার কুকার ওঠেনি । তাই কাঠের আঁচেই খুব সুন্দর রান্না হত। এখন গ্যাসেও সেইরকম রান্না পাই না।ক্রমশঃ- 
আমার ছোটবালার কিছু স্মৃতিঃ- (তৃতীয় পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী / ২১.০৮.০৮.২০১৫

জ্যৈষ্ঠ মাসের রৌদ্র তাপ । মালকানগিরি তে তখন প্রায় ৪২ ডিগ্রী উত্তাপ। ফাল্গুন মাস থেকেই গরমে অতিষ্ঠ সকলে। 

তখন না ছিল ইলেকট্রিক না ছিল সিলিং ফ্যান । হাত পাখাই এক মাত্র ভরসা । জলের কষ্ট । কারন একমাত্র জলাশয় , 

নাম ‘বালি-সাগর’ এক প্রকাণ্ড সাগর স্বরূপ পুষ্করিণী যার ওপর সমস্ত মালকানগিরি র অধিবাসী নির্ভরশীল ।  

           এই বালি-
সাগরের বিষয় কিছু না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে লেখাটা।
নাম থেকেই সহজে অনুমেয় সেই রামায়ণের ‘বালি’ রাজা এখানেই তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। বালি-মেলা চিত্র-কুণ্ডার বিষয় আসবো পরে । বালি-সাগরের জল পরিচ্ছন্ন । জলেতে কর্পূরের বাস ছিল । পুষ্করিণীর ওপর থেকেই তলার বালির শয্যা দেখা-যেত । বালিতে অভ্র (Mica) ছিল তাই সূর্যর কিরণে বালি-সাগরের জল চিক চিক করত । জল স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ । বালি-সাগরের জলাশয়ের ওপর শ্বেত পদ্ম অনেকটা যায়গা জুড়ে ছিল। ওই সাগরের ধার দিয়ে আমাদের স্কুলের রাস্তা ছিল। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে ওই শ্বেত পদ্মের শোভা দেখে মুগ্ধ হতাম । অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য । উইলিয়াম ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ওই শ্বেত পদ্মর শোভা দেখলে ‘ডেফডিলস’ ছেড়ে ‘লোটাস’ লিখতেন । আমি ত কবি নই তাই বিশেষ বর্ণনা দিতে পারলামনা। কবি সম্রাট উপেন্দ্র ভঞ্জ (১৬৭০ সালে জন্ম ১৭৪০ এ দেহ ত্যাগ ) প্রাচীন উৎকলের পুরাতন রাজ শাসিত উড়িষ্যার ঘুমুসুরের কুলাড় তে জন্ম । উনি রাজ পরিবারের হয়েও কবিতা লিখতেন রাজ কর্ম ছেড়ে । অসংখ্য কাব্য সৃষ্টি করেছিলেন। ওনার লেখা কাব্যগ্রন্থ “কোটি লাবণ্য সুন্দরী” থেকে উধৃত দুলাইন অনুবাদ করতে চেষ্টা করলাম। ওই পদ্ম ফুলের শোভায় এই কবিতার সৃষ্টি তাই দু লাইন ....... 
“দেখরে নলিনী নলিনীতে শোভিত 
ভ্রমেতে ভ্রমর ভ্রমে চকিত” 
আমার মনে আছে লক্ষ্মী পূজো এবং সরস্বতী পূজোর সময় ওই বালি সাগর থেকেই আমরা শ্বেত পদ্ম আনতাম । সারা গ্রীষ্মকাল নীলকণ্ঠ ওই বালি-সাগর থেকে টিনের ভারে জল এনে আমাদের বড় মাটির হাঁড়ী ভর্তি করে জল রাখতো । তখন ফিলটার ছিলনা তাই মা জল ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে খাওয়াতেন । কত খাটতে হত তখনকার মায়েদের ! আমাদের ঘরের কুয়োর জলেই আমরা স্নান সারতাম। 
জামাই ষষ্ঠীর দিন বাবা মা তাদের দুই জামাইকে মালকানগিরি তে নিমন্ত্রণ করেন । বড় জামাই বাবু বেলঘরিয়াথেকে এবং ছোট জামাই বাবু কটক থেকে এলেন। বাবা নিজে গিয়ে বিজয়নাগরম থেকে দুই জামাইকে জীপে নিয়ে আসেন। 
এমনিতেই বাবা মাঝে মাঝে জয়পুর যেতেন অফিসের কাজে মিটিং এ্যাটেন্ড করতে টুরে । তখন দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের চিফ এডমিনিস্ট্রেটর *শ্রীযুক্ত সুকুমার সেন , আই.সি.এস কিছুদিন ছিলেন। বাবা ওনার খুব প্রিয় অফিসার ছিলেন । উনি দিল্লী-থেকে বিশেষ অনুমোদন অর্থ মঞ্জুরি এনে মালকানগিরি , উমোরকোর্ট আর পার্লকোর্ট ডিভিশন একটা করে ক্যারাভ্যান পাঠান ওই বাঘের উৎপাতের ঘটনার বিবরণী শুনে । বাবা জীবন বিপন্ন করে কাজ করতেন তাই ওই ‘ক্যারাভেন’ তাঁর ই দান । পরে বাবা ওনার কাছ থেকে আউট স্ট্যান্ডিং সি সি আর পেয়ে ডেপুটি ডাইরেক্টরের পদ মর্যাদা পান । 
(*শ্রী যুক্ত সুকুমার সেন আবার তৎকালীন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী শ্রদ্ধেয় ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের খুব পছন্দের আই.সি.এস. অফিসার ছিলেন। দণ্ডকারণ্য প্রজেক্টের শুভারম্ভ শ্রদ্ধেয় সুকুমার সেন কে বিশেষ ভাবে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়েছিল কারন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলা দেশ) থেকে যে সকল শরণার্থী ভারতের ভূমিতে সর্ব হারা হয়ে এসেছিলেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার মালকানগিরি , উমোরকোর্ট এবং মধ্য প্রদেশ (এখন ছত্তিশ গড়) এর পার্লকোর্ট সঠিক যায়গা যেখানে বিস্তীর্ণ বনানী সাফ করে প্লটিং করে বিস্থাপিত শরণার্থী দের পুনর্বাসন করা হয় । তাঁদের জন্য বাসগৃহ সমেত চাষ বাসের জমি সরকার থেকে দেওয়া হয়। বাবা যেহেতু দেরাদুন থেকে মৃত্তিকা সংরক্ষণের পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ধারি এবং নাগপুর এগ্রিকালচার কলেজের গোল্ড মেডালিষ্ট ছিলেন বি.এস.সি এগ্রিকালচারে ১৯৩৩ সালের ; তাই ওনাকে দণ্ডকারণ্য ডেপুটেসনে পাঠান হয় সএল সার্ভে এক্সপার্ট হিসেবে । খুব গুরু দায়িত্বের কাজ ছিল ।) 
মা জামাইষষ্ঠীর এলাহি রান্না বানা করেন । সে এখন বর্ণনা দেওয়া সম্ভব না । জামাই বাবাজীবন রা খেয়ে দেয়ে বাঘ দেখতে বেরুলেন ভঞ্জ শিকারিরই সঙ্গে জীপে । তমসা নদীর ধারে পৌঁছনর সময় সন্ধ্যা হয়ে যায় । এমনিতেই মালকানগিরিতে সন্ধ্যের আজেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকতো । একদম নিস্তব্ধ পরিবেশে সন্ধ্যার সময় বাবাজীবন রা দূর থেকে দুটো চোখ দেখে প্রায় কাপড় চোপড় খারাপ করার অবস্থা । ভঞ্জ যত বলে বাবু ওটা ‘মহিষের’ চোখ । কে শোনে কার কথা ! আমাদের ড্রাইভার সিং জী কে দুই জামাই অনুনয় করেন গাড়ী ঘোরাতে । ওরা ওইখান থেকেই ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন । বাড়িতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে দুজনেই বলেন বাঘ বাঘ দেখেছি। অরে বাবা আরনা এখানে ! আমরা এখন ও এই নিয়ে দুই দিদি কে রাগাই । .............. ক্রমশ



No comments:

Post a Comment