আমার ছোটবালার কিছু স্মৃতিঃ- (প্রথম পর্ব)
ত্রিভুবান জিৎ মুখার্জী
আমি যেসব
যায়গায় স্কুলের পড়াশুনো করেছি সেগুলো গ্রাম নয় সম্পূর্ণ জঙ্গল ছিল । দিনের বেলায়
ভালুক আর রাতে বাঘ । ১৯৬৪ সাল । যায়গাটার নাম মালকানগিরি , কোরাপুট জেলা , উড়িষ্যা । বাবা দণ্ডকারণ্য প্রোজেক্টের জোনাল এগ্রিকালচার অফিসার ছিলেন
।কেন্দ্র সরকারের অধীনে ডেপুটেসনে
ছিলেন। তখন লন্ঠন ই এক মাত্র সম্বল। ছোট বেলায় বাঘ , হরিণ ,শিকার দেখেছি। তখন শিকার করা ফ্যাশন ছিল । একবার বাবার সঙ্গে জয়পুর ,
কোরাপুট থেকে মালকানগিরি আসার সময় রাস্তায় গোবিন্দপল্লী ব্লকের কাছে
দুটো পাহাড় কেটে মাঝখানে রাস্তা ছিল সেই রাস্তায় একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাহাড়ের
এক পাস থেকে আরেক পাসে লাফ মারলো । ঠিক আমাদের জিপের ওপর । ড্রাইভার একটুও না
ঘাবড়ে সোজা স্টিয়ারিং হাতে পুরো ঘটনাটা সামাল দিল । পূরণ উইলিস জিপ লেফট হ্যান্ড
ড্রাইভ ছিল। আজ সেই কথা মনে পড়ে গেল। এরকম অনেক ঘটনা আছে ।
আরেকটা ঘটনার কথা বলি । তখন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে বাবার কাছে যাই । আমি অনেক
দুর্গম যায়গা বাবার সঙ্গে টুরে গিয়েছি । এক আদিবাসীদের গ্রাম চিত্রকুন্ডার কাছে
(এখন চিত্রকুন্ডা সহর হয়ে গিয়েছে) সেখানে তাঁবু ফেলে রাত কাটাতে হল বাবার সঙ্গে ।
সঙ্গে ভঞ্জ শিকারি সব সময় বাবার সাথে সাথে থাকে । ওর দোনলা বন্ধুক একটা রাইফেল
আরেকটা গান । রাতে বাইরে আগুন জ্বালিয়ে কিছু আদিবাসী পাহার দিল কারন বাঘের উপদ্রব
। ভঞ্জ শিকারি রাতে জেগে রইলেন । রাতে বাবা দুবার ওঠেন বাইরে যাওয়ার জন্য। ভঞ্জ
শিকারি সেটা জানেন তাই তার সাহেবের বডি গার্ড হিসেবে বাবার পেছনেই ছিলেন তিনি।
হটাত ভঞ্জ শিকারি লক্ষ্য করেন দুটো জ্বলন্ত চোখ বেশ খানিকটা দূরে । শিকারিরা বাঘের
চোখ দেখলে বুঝতে পারেন । কাল বিলম্ব না করে ভঞ্জ শিকারি দু চোখের মধ্যে খানে
লক্ষ্য করে রাইফেলের ট্রিগার টেপে । বাঘটি প্রচণ্ড শব্দ করে লাফ মারে । ভঞ্জ শিকারি
আবার গুলি ছোঁড়ে এবার আর কোন শব্দ নেই । বাবা হতভম্ব হয়ে ভঞ্জ কে ডাকেন , তখন ভঞ্জ শিকারি বাবাকে প্রায় চ্যাঁ দোলা করে টেন্টে নিয়ে যায়। আদিবাসী
লোক গুলি আগুনের মশাল নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ফেলে বাবাকে । পরে যানা যায় সকাল হতে
এক বিরাট রয়েল বেঙ্গল টাইগার মরে পড়ে আছে । কপালে দুচোখের মাঝে একটা গুলি আরেকটা
পেটে । আদিবাসীরা গান করে নিয়ে এলো বাঘটিকে । ওদের অনেক গরু ছাগল খেয়েছিল বাঘটা ।
বাঘটা খুব উৎপাত করছিলো তাই তাদের আনন্দের সীমা নেই। আমরা বাড়ী ফিরি জীপের
ট্রেলারে বাঘ সমেত । রাস্তায় লোকে অতবড় বাঘ দেখে আশ্চর্য হচ্ছিল আবার অবাক ও
হচ্ছিল। বাবা ভঞ্জ শিকারিকে পুরস্কার স্বরূপ ৫০ টাকা দেন (১৯৬৪ সালে ৫০ টাকা অনেক)
সেই বাঘের ছাল চেন্নাই পাঠান হল ট্যানিং এর জন্য ।
No comments:
Post a Comment