Wednesday, August 19, 2015

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম প্রথম , দ্বিতীয় ,তৃতীয় , চতুর্থ , পঞ্চম ও ষষ্ঠ পর্ব লেখকঃ- ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম (ষষ্ঠ পর্ব)    

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী



ষষ্ঠ পর্ব

সুদীপ্তর মা সল্টলেকে মামার বাড়িতে থাকেন এ.জে ব্লকে। মামার সিটি সেন্টারে দুটো দোকান। একটা গার্মেন্টস আরেকটা ইলেক্ট্রনিক্সের শোরুম। প্রচুর বিক্রি হয়। মামার ইচ্ছে ছিল সুদীপ্তকে এম.বি.এ পড়ানোর। ওনার ছেলে নেই তাই সুদীপ্ত,সুশান্ত দুজনকেই নিজের ছেলের মতন দেখেন। মা’র ঘর ঠাকুর ঘরে। মা পূজো আচ্ছা নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটান। প্রত্যেক মঙ্গলবার, শনিবার দক্ষিণেশ্বর কালি বাড়ি গিয়ে পূজো দেন দুই ছেলের নামে। মামা  গাড়ি দিতে চাইলে, মা গররাজি হন বলেন “অত আড়ম্বরে পূজো দিলে ঠাকুর গ্রহণ করেন  না”। মহিলাদের মাথায় কে যে এই সব ঢোকায় জানি না। নিজেদের কষ্ট দিতে এদের জুড়ি নেই। অবশ্য সবাই সেরকম নয়। সুশান্ত কিছুদিনের জন্য খড়গপুর থেকে  মায়ের কাছে এলো দেখা করতে। মা আনন্দে আটখানা ছেলেকে পেয়ে। আনন্দাশ্রু দুচোখ বেয়ে গড়াতে লাগলো। সুশান্ত ধীর স্থির খুব শান্ত মেজাজের ছেলে। বাবার দেহান্তর পর আর ও যেন শান্ত। দাদা চলে যাওয়ার পর ওর দায়িত্ব বেড়েছে মায়ের প্রতি। প্রায় দিন ফোনে মা'’র খবর নেয়। ঘরে ঢুকে মাকে প্রণাম সেরে হাত পা ধুতে যায়। মা তোয়ালে দিতে দিতে বলেন, “রাস্তায় কষ্ট হয় নি তো বাবা”।
কষ্ট কিসের মা !  তোমাকে ছে ড়ে থাকার কষ্ট বলছ ! না অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। না না ট্রেন জার্নি করে এলি তো তাই বলছি। ও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এইটুকু তো পথ। তুমি জান অনেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারই করেন কলকাতা থেকে খড়গপুর। অফিস টাইমে লোকাল ট্রেনে উঠতে পারবে না। হ্যাঁ তা জানি। স্নানটা সেরে নে আমি খাবার বাড়ছি।  এই সময় মামি এলেন এক থালা জলখাবার নিয়ে। লুচি ফুলকপির তরকারি, বেগুন ভাজা, পায়েস আর মিষ্টি। সুশান্ত ধপাস করে প্রণাম করে মামিকে। কেমন আছো মামি? 
ভালো। তুই কেমন আছিস বাবা ? এতো রোগা হয়ে গেছিস কেন রে? হস্টেলে কি খেতে দেয় না? মা কাছে নেই বলে খাস না ভালো করে ? 
কি যে বল মামি। তোমরা মায়েরা শুধু আমাদের রোগা হতে দেখ।  বন্ধুরা বলে মোটা হয়ে যাচ্ছিস খেয়াল রাখিস। জিম-এ যা নয়তো ভুগবি। কোন বন্ধু , ছেলে না মেয়ে ? মা বলেন।
খুব অপ্রস্তুত মনে হল সুশান্তকে। আমি দাদা নয় মা যে হুট করে... থাক থাক। আর বলতে হবে না। উনি যাওয়ার এক বছর না হতেই  ছেলে ... চোখের জল পুঁছতে পুঁছতে মা ... আহা কান্নার কি আছে মা আমি ত আছি ! হ্যাঁ সেই আসায় বসে আছি। তোরা মানুষ হলে আমি কি তোদের বিয়ে দিতাম না । আমার কত সখ ছিল...।
ঠিক আছে ঠিক আছে । দাদা তো আমাকে হাজার পঞ্চাশ ডলার পাঠিয়েছে। তা কি বেশি করেছে শুনি। ছোট ভাইয়ের জন্য উনি করেননি। সারা জন্ম ভাই বোনকে দেখলেন তারা এখন মুখ ঘুরিয়ে থাকে। আমার কপালে যত কষ্ট! ঠাকুরঝি তুমি খেয়ে নাও। “ও সব কথা থাক” মামি বলেন। রান্না ঘরে গেলেন রান্নার ঠাকুর জগা ননাকে ফরমাজ করতে দুপুরের রান্নার জন্য। জগা ননাকে অনেক দিন থেকে দেখি মামার বাড়িতে রান্না করতে। জগা ননার গ্রাম উড়িষ্যার ভদ্রকে। মাছ মাংস দারুণ করে। খুব রগ রগে ঝাল দিয়ে রান্না করে কিন্তু খাসা লাগে খেতে। এমনিতে উড়িয়া ঠাকুররা ভালো রান্না করে। সুশান্ত জলখাবার খেয়ে নেটে বসলো। এফ.বি খুলে বন্ধুদের সঙ্গে একটু চ্যাট করে দাদার প্রোফাইল খুলে কিছু ফটো দেখল। দাদা তো ওর ফ্রেন্ড লিস্টে। দাদা সুদীপ্তা বৌদি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, নিউ ইয়র্কের আরও কিছু যায়গা, বিভিন্ন শপিং মল এর ফটো, হোয়াইট হাউসের কিছু  ফটোর ব্যাক গ্রাউন্ডে ওদের ফটো পোষ্ট গুলো দেখল। ভালোই হয়েছে ফটোগুলো। পিকাসাতে আপলোড করে এ্যালবাম বানাল "দাদা বৌদি এট স্টেটস"।
দাদাকে ফটো পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওর কিছু কলেজের তোলা ছবি আপলোড করে পাঠাল। বৌদি কে হায় জানালো।
যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম (পঞ্চম পর্ব)   

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

পঞ্চম পর্ব

যাওয়ার আগের দিন পার্টিতে ওরা দুজনে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিল। এয়ারপোর্টে সব বন্ধুরা সি অফ করলো। চেক ইন সেরে, লাগেজ কনভেয়রে পাঠিয়ে দুজনে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিল। আর ওদের দেখা গেল না। এর র সিকিউরিটি চেকআপ সেরে ফাইনালি রান ওয়েতে বাস এয়ারক্রাফট্ পর্যন্ত নিয়ে যায়। মোবাইল সুইচ অফ্ করে দুজনের নির্ধারিত সিটে চলে যায়। 
বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বাই হয়ে দুবাইতে ঘন্টা খানেক থেকে পাড়ি দেয় ফ্রাঙ্কফুট্। ভারতীয় সময় রাত ১২ টায় এয়ারক্রাফট্ ছাড়ে ফ্রাঙ্কফুট্। তারপর আটলান্টিক্ মহাসাগর সারারাত। সকালে নিউউয়র্কের  জন্ এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। এয়ারপোর্ট টারমিনালে অপেক্ষারত দুই বন্ধুকে আলিঙ্গন করে। ওয়েল কাম টু আমেরিকা দুজনে দুই বন্ধু জানায়। থ্যাঙ্ক ইউ প্রতিউত্তরে বলে সুদীপ্ত।
সুদীপ্তর এতদিনে আশা চরিতার্থ হল। গেস্ট্ হাউসে পাশাপাশি রুমে দুজনে যেন কাছে থেকেও দূরে! মাইনাস ২৫ টেম্পারেচার। এই ঠান্ডায় সুদীপ্তা, সুদীপ্তর বাহু বন্ধনে আবধ্য হতে চাইছিল ।কিন্তু সুদীপ্ত কি সায় দেবে? না ওর মাথায় একটাই চিন্তা প্রোজেক্ট আর প্রোজেক্ট! দূর কাল থেকে আবার নতুন কাজে জয়েন করতে হবে দুজনকে। এক প্রজেক্ট থাকাতে কাছেই থাকবে। কিন্তু লাভ কি ও'তো কথাই বলবে না সুদীপ্তার সঙ্গে।
শনিবার রবিবার ওদের ছুটি। নিউজার্সি থেকে নিউইয়র্ক কাছেই। তাই বেড়াতে বেড়োয়। সুদীপ্তর পিস্তোতো ভাই এবং বউদি এখানে মস্ত ডাক্তার। ওঁরা ১৯৬২ থেকে আমেরিকাতে ম্যানহাটেন স্ট্রীটে অনেক দিন আছেন। বাড়ির নাম দাদার মায়ের নামে “শান্তি নিলয়”। ওরা দেখা করে চলে আসে। সঙ্গে সুদীপ্তা ছিল তাই লজ্জায় বেশিক্ষন থাকেনি । 
হঠাৎ নোট্ প্যাডে মেল্ এলার্টঃ- ছোটভাইয়ের ই মেল্, “SEND IF U CAN, 50K INR BY 15th ”Sushanta .সুদীপ্ত অপ্রস্তুত মনে করে ফিরতে চাইল। আজকেই ফান্ড্ ট্রান্সফার করতে হবে এইচ.ডি.এফ.সি ব্যাঙ্ক থেকে সুশান্তর অ্যাকাউন্টে। সুদীপ্ত কোম্পানী থেকে $20,000 আসার সময় পেয়েছিল। ওর কাছে  এখন $17680 আছে। তার থেকে $1000ডলার অনায়াশে পাঠাতে পারে। ডলারের ভ্যা্লু পড়ে গিয়েছে। এখন  $1= Rs 49.50P (গল্পটা যখন লেখা তখন ওই ভ্যালু ছিল) আছে। যদি আজকের দাম থাকে তাহলে টা ৪৯,৫০০হয়ে যাবে। সুশান্ত সেটা তিনদিনের মধ্যে পেয়ে যাবে। নিশ্চয় ওর অ্যাডমিশনের জন্য প্রয়োজন। ফান্ড ট্রান্সফার করেই মেল করবে ভাইকে। মনে মনে ভাবলো।
সুদীপ্তা বাবা মার সঙ্গে কথা বলেই যাচ্ছে। ও টের পায়নি সুশান্তর মেল্ এর ব্যাপারে। সুদীপ্ত খুবই বিব্রত ছিল ওর ভাইকে টাকা পাঠানোর জন্য। ওর  বৌদির সঙ্গে সুদীপ্তাকে কথা বলতে দেখে সুদীপ্ত,  দাদার সঙ্গে কম্পিউটারের কাছে গেল। ওর ছোট ভাইয়ের খড়গপুরের এইচ.ডি.এফ.সি ব্যাঙ্কের অ্যাউকাউন্টে ওর দাদার বাড়ির কম্পিউটার থেকেই $1050 ফান্ড ট্রান্সফার করে পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হল। 
ওর দাদা খুশি হয়ে বললেন, ছোট ভাইকে টাকা পাঠালি ? বাহ্ এটা মনে রাখবি। এটা বিশেষ দরকার। ছোট ভাইয়ের কথা সব সময় খেয়াল রাখবি। দেখবি বাবা মায়ের আশীর্বাদ পাবি ।
ওর কাছে এখন $16,630 অবশিষ্ট থাকলো। ওই টাকায় বাড়ি ভাড়া, খাওয়ার খরচ, গাড়ির পেট্রল কত গেলন লাগবে তার আন্দাজ নেই। তবুও মোটামুটি সব হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। সুদীপ্তার কি চিন্তা ! টাকা লাগে দেবে গৌরিসেন। সুদীপ্তা হঠাৎ বলে উঠলো, “বাড়ি যাবে না ?”   হ্যাঁ চল । বলে ভাইকে মেল করে দিল “$1050 transferred to ur acct .Pl check after 3 days and confirm me” Dada. দুজনে ফিরে এলো ।
রাত ৯ টার সময় ইন্ডিয়া থেকে ফোন এলো সুদীপ্তার। নিশ্চই ওর বাবা মা কল করছেন ! সুদীপ্তার চোখে মুখে খুসির চেহারা সুদীপ্তর চোখ এড়ালোনা। ও অন্যখানে চলে গেল। সুদীপ্তা, “এই ! তোমাকে মা ডাকছেন।”
কেন ?
জানি না। শোন।
আচ্ছা যাচ্ছি ।
মোবাইলটা নিয়ে কল রিসিভ করে, “হ্যালো!” বলাতে ওপার থেকে উত্তর এল “ কেমন আছো?”
ভালো 


যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম (চতুর্থ পর্ব)  

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

চতুর্থ পর্ব

সুদীপ্তা একটা সুইমিং পুলের ধারে বসে জলে নানা রঙের  মাছ দেখছিল। নানা রঙের মাছ মনকে শান্ত করে। বেঙ্গালুরুর ইনফোসিসের ভেতরটা এতো সুন্দর পরিবেশ আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে হয় না ওটা ভারতবর্ষের মধ্যে অবস্থিত বলে। মনে হয় যেন আমেরিকাতে আছি। একটা কাগজের টুকর কোথাও কেউ খুঁজে পাবে না। ক্যাম্পাসের ভেতর গাড়ি চালানো নিষেধ। সাইকেলে যেতে হয় এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায়।  ধূমপান নিষেধ। “স্মোকিং স্ট্রিকলি প্রোহিবিটেড” বলে চারিদিকে লেখা। মাঝে মধ্যে ছোট ছোট গার্ডেন, লন, সুন্দর ডেকোরেটিভ অর্কিডস। একটা পরিচ্ছন্ন ইকো-ফ্রেন্ডলি মন মুগ্ধকর পরিবেশ। না দেখলে বোঝা যায় না।
যাওয়ার আগে ওরা দুজনে তীরুপতি তীরুমালা ভেঙ্কেটেশ্বরম্ মন্দির দর্শনে যায়। বেঙ্গালুরু থেকে রাত ৯ টার সময় অন্ধ্রপ্রদেশ ট্যুরিস্টের লাক্সারী ভল্ভো এ.সি. বাস ছাড়ে, পৌঁছোয় রাত ৩ টের সময় তীরুপতিতে। ওখানেই গেস্ট হাউসের ব্যবস্থা থাকে গরম জলে স্নানের জন্য। স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে  তীরুমালা পাহাড়ের ওপর যাত্রা । তীরুপতি থেকে তীরুমালা ২২ কিলোমিটার অন্য বাসে যেতে হয়। ভোরবেলার দর্শন ভি.আই.পিদের জন্য খুব কম সময় লাগে এবং লাইনও ছোট থাকে।  বেশ ঠাণ্ডা লাগে ওই সময় তীরুমালা পাহাড়ের ওপরটা। প্রায় এক ঘণ্টা লাগে লাইনে আস্তে আস্তে আঁকা বাঁকা পথে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। তারপর বালাজীর দর্শন অপূর্ব। চাপ চাপ সোনা । কষ্টি পাথরের মূর্তি । সোনার মুকুট, সোনার হার ইত্যাদি। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে দর্শন সারতে হয় নাহলে, “গোবিন্দা গোবিন্দা” বলে ঠ্যালা মারবে পেছন থেকে টেম্পল পুলিশ। এরপর তীরুপতির  বিখ্যাত আসল ঘিয়ের লাড্ডু জনা পিছু দুটো মন্দির প্রশাসন দেয়। কেউ ইচ্ছে করলে আরও লাড্ডু কিনতে পারেন কাউন্টার থেকে । এরপর পদ্মাবতীর দর্শন । পদ্মাবতী স্বয়ং মা লক্ষ্মী ঠাকুর। অপূর্ব লাগে ওখানে দর্শনের সময় । তীরুপতি বালাজীর  সারা মন্দির সোনাতে মোড়া। মন্দিরের চূড়া, গাত্র, থাম ইত্যাদি । দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের ভাস্কর্য সুন্দর।চূড়াতে তিনটে সোনার কলস থাকে এবং ওপরটা ফ্লাট একটা ট্রেপিজিয়ামের মত।
দর্শন সেরে  সুদীপ্তা ফিরে আসে বেঙ্গালুরুতে। সুদীপ্ত যায় মা আর ছোট ভাইকে দেখতে মামার বাড়ি । বাবার দেহান্তের পর মা’কে মামার বাড়িতে থাকতে হয় । মা, যা টাকা পেয়েছিলেন তার ফিক্সড  ডিপোজিটের শুধেতেই মা চলেন । সুদীপ্ত ভাইয়ের সমস্ত পড়ার খরচ দেয় হস্টেলে থাকার জন্য । যাওয়ার আগে মামা মামির আশীর্বাদ তা ছাড়া দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর দর্শন, বেলুড়ে  রামকৃষ্ণ  পরমহংস ,স্বামীজীর দর্শন সেরে সারদা আশ্রমে মায়ের সঙ্গে যায় সারদা মায়ের আশীর্বাদের জন্য । সব দুদিনের মধ্যে সেরে মায়ের আশীর্বাদ  নিয়ে ফিরে আসে বেঙ্গালুরু। ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হল না  সুদীপ্তর।  বড় আফসোস থেকে গেল।  ভাই ফোনে উইশ করল। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময়  মায়ের চোখ ছল ছল করে। মাকে সুদীপ্তার কথা বলে, কিন্তু মা কিছুই বলেন না। সেটাই সুদীপ্তর মনে ধাক্কা লাগে। বোঝে মা খুশি হন নি এতে। সুদীপ্ত ভারাক্রান্ত মনে শুধু বাবাকে মনে করে। আজ বাবা থাকলে হয়ত খুশি হতেন তার ছেলে আমেরিকা যাচ্ছে কোম্পানির প্রজেক্টের কাজে। তিন বছরের জন্য ভিসা পায় সুদীপ্ত-সুদীপ্তা। সুদীপ্তা এর আগে মা বাবার সঙ্গে পাটেয়া গিয়েছে। ওর কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু সুদীপ্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ওর জন্য সব নতুন। মনটাও ভালো নেই দেশ ছেড়ে যেতে।
ফিরে কাজে জয়েন করে প্রজেক্টের সব কাজ বুঝে নেয় পি.এম. এর কাছ থেকে। ওখানে গিয়ে কারা রিসিভ করবে কোথায় থাকবে ইত্যাদি... সুদীপ্তার এক্সাইডমেন্টের সীমা নেই। ফোনে বাবা মাকে তীরুপতি বালাজীর দর্শনের গল্প, ভিসা ইন্টারভিউয়ের গল্প...ইত্যাদি...ইত্যাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে ।


যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম (তৃতীয় পর্ব) 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী


তৃতীয় পর্ব

সুদীপ্তকে আজ যেন খুব চার্মিং লাগছিল ঠিক সুদীপ্তাকে ও তাই । ওরা নিজেদের মধ্যে কিছু বলছিল যার দিকে কারুর নজর ছিলনা । সকলে মসগুল নিজেদের পার্টনার কে নিয়ে।
এরমধ্যে সুদীপ্তর  হটাত কি হল কে যানে  ,  সুদীপ্তার উদ্দেশ্যে বলে ঃ
 আমি এটা ঠিক করলাম না !  আমার মা জানলে খুব  দুঃখ পাবেন। ঝোঁকের মাথায়  তোমাকে কিস্ কোরতে গিয়ে সব গণ্ডগোল হয়ে গেল । আমি কি জবাব দেব মা’কে, ভাইকে? ওরা আমাকে খুব ভরসা  করে । এটা মোটেই ঠিক হলনা   অনুশোচনায় ভেঙ্গে পডে সুদীপ্ত । আই মাস্ট লিভ দিস প্লেস । দিস ইজ নট ফর মি !!!
সুদীপ্তাঃ- তুমি একা নও সুদীপ্ত । তোমার ভাই , আমার ও ভাই । তুমি কি করে ভুলে গেলে আমি কিছু না বুঝে আমার ডিসিশন নিয়েছি বলে ? আমি সব জানি ম্যান । কিছু ভেবনা  । আমি বাবা মাকে ডিটেল সব কথা বলেছি। বাবা আমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছেন । মা বাবা নিজেরাই মুসুরিতে আই.এ.এস ট্রেনিং ইন্সটিট্যুটে গলা জড়া জড়ি করে প্রেম করেন ।  তার পর বিয়ে সেরে ফেলেন । ওনাদের  বাবা মা’কে না জানিয়ে ।  পরে অবশ্য দু পক্ষ রাজি হয়ে বিয়ের আয়োজন করেন। তুমি জানো , আমার মা বাবা জাত ফাত মানেন না ,এমনকি ধর্ম ফর্ম ও মানেন না। ওঁরা একটাই জাত জানেন ‘মানুষ’ !  ওনারা আই এ এস অফিসার  ! ওটাই ওঁদের গীতা,বাইবেল,গুরু-গ্রন্থ আর কোরান সব এক  !!  দুজনে দু জায়গায় সাব কালেক্টার ছিলেন । দেখা করার জন্য  শনিবার রাতে পালাতেন হেড কোয়ার্টার ছেডে । অবশ্য ওনাদের কালেক্টার জানতেন সে কথা। বাবা আমাকে সব বলেছেন। খুব মজার দিন সব ওনাদের কেটেছে । ঠিক আছে তুমি তোমার মা’কে জিজ্ঞাসা কর।  আমার কোন আপত্তি নেই। আমি কনফিডেন্ট্ উনি মত দেবেন। আমিত কিছু ভুল করিনি । পারলে না হয় পা জডিয়ে বলবো, “মা, মাগো আপনার কচি ছেলেটাকে নুন লঙ্কা মাখিয়ে খাবো” বলে হেঁসে ফেললো  ।
সুদিপ্ত ঃ- কি বলছো যা’ তা !  তোমার কি মাথা খারাপ হল?  মা কে আমি চিনি । মা রাজি হবেন না । আমার ভাই কি ভাববে বলত ? এতো তাড়া কিসের ? একটু সবুর কর । আমি তো পালাচ্ছিনা !
সুদীপ্তা ঃ- পালাতে কে দিচ্ছে মসাই । তবে আমার তাড়া আছে । আমার পেছনে শকুনের চোখ আছে । তুমি বুঝবেনা সে কথা । বলার ও প্রয়োজন মনে করি না ।
সুদিপ্ত ঃ- সে আবার কি কথা ?  যদি বলতে না চাও বোলনা । আই ডোন্ট মাইন্ড্ ।  
সুদীপ্তা ঃ- তুমি আমাদের পি .এম্.কে দেখেছো ! উনি কিরকম ছুঁক ছুঁক করেন  আমাকে দেখে ! যেন গিলে খাবেন !! বিচ্ছিরি !!! ইরেসিসস্টিবিল ।
সুদিপ্ত ঃ- ওটা তোমার ভুল ধারনা । নাও হতে পারে । 
ঊনি তোমাকে তাড়া  হুড়ো  করে ইউ.এস .এ যাওয়ার রেকমেন্ড করেছেন আমার থেকে তোমাকে দুরে সরানোর জন্য । তুমি জান কিছু ! মাথায় ঢ়ুকলো  কিছু !!
সুদিপ্ত ঃ- মোটেই নয় । ওটা তোমার ভুল ধারনা । আমি প্রজেক্ট্ এর জন্য বেশি সময় দি । সকলে যানে  পি.এম. , এস. পি.এম. এবং অন্য সকলে । সেই কারনে আমাকে পাঠাচ্ছেন ওনারা । এতে আশ্চর্য  হওয়ার কি আছে ?
সুদীপ্তাঃ- আমি অস্বিকার করছিনা তবে আমার কথাটা সত্যি কিনা,  প্রিয়ঙ্কা বলবে তোমাকে । ওই আমাকে বলে সে সব কথা ।
সুদীপ্তঃ- দেখ এ সব বাজে মেয়েলি কথাতে আমি মোটেই  ইন্তারেস্টেড নই । বকবাস্ । জাস্ট্ গসিপ্ ।
সুদীপ্তাঃ- ও কে । কাল ভিসার জন্য রেডি হও । আমাদের দুজনকে নিউ জার্শি তে পাঠাচ্ছে ইনফি । ইন ফেক্ট্ আমি বাপিকে আসতে  বলেছি সঙ্গে মা থাকছেন । তোমাকে ওনারা দেখতে আসছেন কাল। মানা কোরনা কিন্তু !!
মন্ত্র মুগ্ধের মতন সুদীপ্ত বলে ফেললো আচ্ছা।
প্রমিস্
প্রমিস্

সুদীপ্তাঃ- দ্যাটস্ লাইক এ গুড বয় , মাই ডার্লিং বলে  হাগ্ করে সুদীপ্তর গলা জডিয়ে কিস্ করে।
সুদীপ্ত চোখ বন্দ করে নারীর সান্নিধ্য উপভোগ করছিল । স্বয়ং ভগবান ও বোধহয় এর থেকে নিস্তার পান নি। সুদীপ্ত তো ছেলে মানুষ । কিন্তু আবার মাথাতে চাড়া  দেয় মা এবং ভাইয়ের প্রতি দায়িত্ববোধ , নিজের কেরিয়ার , ইত্যাদি ভেবে সুদীপ্তার কাছথেকে ছাড়াপেতে চায়। ক্ষনিকের আবেগে নিজেকে এরকম ভাবে বিলিয়ে দিতে পারেনা। বিবেক দংশনে নিজেকে সামলানোর চেস্টা করে।  পরক্ষনে বলে আজ আমাকে যেতে হবে , বাই ...।
সুদীপ্তা কিছু বোঝার আগেই সুদীপ্ত হাঁটা দেয় ইনফোসিটির হেরিটেজ্ বিল্ডিং এ ।  ওখানে ইনফীর  চেয়ারম্যান নারায়ানাস্বামী, নন্দন নীল্কার্নী ,পাই  ইত্যাদী টপ্ বস্ রা বসেন । তবে এঁদেরকাছ থেকে  একটা বড় জিনিস সেখার আছে এঁনারা কেউ নিজেদের বস্ বলে  বলেন না বরং কলিগ্ বলেন। সুদীপ্ত ওখান হয়ে  বিল্ডিং নাম্বার ৪২ তে নিজের অফিসে চলে যায়।

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম (দ্বিতীয় পর্ব) 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী


দ্বিতীয় পর্ব

সুদীপ্তা :  “এটা কিরকম কথা হল ?” আমি তো সে কথা বলিনি যে, তুমি তোমার মা'কে দুঃখ দাও ! আবার এটাও ঠিক নয়  বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে না খেয়ে গিফট দিয়ে চলে যাওয়া । এটা কিরকম ভদ্রতা ?
সুদীপ্ত : আমি দুঃখিত কিন্তু নিরুপায়। আমি এখন শয়নে স্বপনে একটাই কথা ভাবি; কি করে অনসাইটে যাব? সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমার টাকার প্রয়োজন তাও সৎ উপায়ে উপার্জন করে। আমাকে ভুল বুঝ না।
সুদীপ্তা : সে তো আমিও ভাবি, তুমি একা নও। আমার কি ইচ্ছে করে না প্রোজেক্টের কাজে ইউ.এস.এ যাই! আমরা হয়তো একসঙ্গেই যেতে পারি। পি.এম. একা তোমাকে নয় আমাকেও রেকমেন্ড করেছেন। সে খেয়াল রাখো মিস্টার সুদীপ্ত রায় !
সুদীপ্ত : আমি জানি। কংগ্র্যাচুলেসন মিস সুদীপ্তা বোস। হেঁসে ফেলে দুজনে ।
সুদীপ্তা : আমি কিন্তু বাবা মাকে তোমার কথা বলেছি ।  
সুদীপ্ত : মানে !! কি কথা ?  
সুদীপ্তা : মানে আবার কি? আমি তোমাকে পছন্দ করি এর বেশি কিছু নয়। বুঝলে !  
সুদীপ্ত : কিন্তু তুমি আমার মতামত নাও নি ! আমার মা, আমার ভাই এদের ছেড়ে আমি কিছুই করতে পারি না, আমরা একই সুতোয় বাঁধা। ওদের অমতে আমি ....... অসম্ভব !!!
সুদীপ্তা : এই তো তোমার মতামত  নিলাম, আজকে,এখন ! আমি তোমাকে প্রপোস্ করছি! যেটা কিনা ছেলেরা করে সেটা আমি করছি বেহায়ার মত !!  ইয়েস্ আই এডমায়ার ইউ। কেঁদে ফেললো সুদীপ্তা। তুমি ভালো ছেলে বলে তোমার খুব গর্ব না ? কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি ...আই! আই লাভ্ ইউ !! ফর হেভেন সেক্ ডোন্ট্ লিভ মি। তুমি আমাকে অনেক অপমান করেছ! আর না !! এই বলে সুদীপ্তা  কেঁদে ফেলল ।
সুদীপ্তার মাথায় হাত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে সুদীপ্ত । কুল ডাউন বেবি কুল ডাউন। এতো কনফিডেন্স ভালো না। আমার মা' কে না জিজ্ঞাসা করে আমি এ বিষয় কিছুই বলতে পারব না। আমার এখন কেরিয়ার আছে। কিছুই হতে পারলাম না। বাবার অনেক আশা ছিল আমি ডক্টরেট করি। বাবা গত হয়েছেন মোটে এক বছর, তার ধকল এখনও মা সামলে  উঠতে পারেননি। তুমি যান আমার ভাই এখন সবে ঢুকল বি.টেক্.এ। ও আই.আই.টি., খড়গপুরে অ্যাডিমশন নিল। আরও ভালো রেসাল্ট্ করতে পারতো। আমি ওকে ভালো  করে গাইড করতে পারিনি । জানি না কি করবে ভবিষ্যতে! ওর পড়াশুনোর জন্য আমাকে ফিনান্স্ করতে হবে। আমার ওপর সারা সংসারের সব দায়িত্ব। আমার এখন প্রেম করা সাজে না। আমাকে বুঝতে চেষ্টা কর।
   
সুদীপ্তা : আমি সব জেনেই তোমাকে ভালবেসেছি। এখন তো বলছি না! আর কি বললে তুমি!, “বেবি!” আমি “বেবি!!” তুমি নিজেকে কি মনে কর ? এ্যাঁ !! দেখাচ্ছি তোমার মজা। এই বলে চট করে জড়িয়ে ধরে চকাস করে চুমু খায় সুদীপ্তর ঠোঁটে। আমি তোমার কাছ থেকে এইটুকু কি আশা করি না, “আই লাভ্ ইউ টু সুদীপ্তা” শুনতে!! ছেলেদের চোখ দেখলেই মেয়েরা বুঝতে পারে মোসাই। তুমি জতোই আমাকে শুরু থেকে এভোয়েড্ কর আমি জানি তুমি আমাকেই মনে মনে পছন্দ কর। আই এম মাচ কনফিডেন্ট্ অ্যাবাউট দ্যাট্। তাই আজ সারপ্রাইজ্ দিলাম। কিরম লাগলো ?বলবে না ?

সুদীপ্ত :  এতো কনফিডেন্স ভালো না । তবে হ্যাঁ,  যদি কোন দিন বিয়ে করি তবে আই প্রমিস্ , “I Sudipto Ray do herby testify, and give public notice of the covenant of marriage which we have entered into with each other in the presence of God and witnesses: based solely on the authority of God as found in His Holy word, The Bible  in the name of GOD accept Mis Sudipta Bose as my wife" এই বলে সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে জড়িয়ে ধরে  গভির ভাবে চুমু খায়। সকলের হাত তালিতে ওদের ঘোর ভাঙ্গে ।
সুদীপ্তা লজ্জায় মাথা নিচু করে। অাদিত্য,সুকন্যা,প্রিয়াঙ্কা, গুলশন,আবীর,ভেঙ্কাটেশ্ সকলে খুশিতে গান গাইতে আরম্ভ করে। ৫ পএন্ট্ স্পিকার লাগিয়ে ডিজিটাল হোম থিয়েটারে গান বাজিয়ে নাচ শুরু হয় অডিটোরিয়ামে ওদের মাঝখানে রেখে। এরপর সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই নাচতে শুরু করে গানের তালে তালে। আদিত্য-সুকন্যা সালসা ড্যান্স্ আরম্ভ করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে প্রিয়ঙ্কা-গুলশন ব্রাজিলিয়ান সাম্বা ড্যান্স্ দেখায়। সকলে সারাক্ষণ এনজয় করে ।
সেদিন ছিল খৃষ্টমাস, তাই পার্টি হয় রাত ৯.০০ টা তে শেষ হয় ১২ টাতে। আজ সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনে হোষ্ট আর প্রজেক্টের সব কোলিগ্রা খোশ্ মেজাজে মুর্গা মসাল্লাম্,কোপ্তা,বাটার তন্দুর,প্রন্ পকোড়া,বাটার স্কচ্ আইস্ ক্রিম্ পরে কিছু হট্ ড্রিঙ্ক নিয়ে একটু বেসামাল হয়। ওটা আই.টি. প্রফেসেন চলে। কিছু বলার নেই।  মেনে নিতেই হয় ।
ক্রমশ

“আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে
একতারা তার দেয় কি সাড়া 
 “আমার দোসর যে জন ওগো তারে কে জানে
একতারা তার দেয় কি সাড়া আমার গানে কে জানে..."
এই আর্তির মধ্যেই ব্যক্তি জীবনের পথ চলা! স্বপ্ন সাধ সাধনায়, ভাব ভাবনা ভালোবাসাকে বিশেষ একজনের সাথে মিলিয়ে নিতে! কারণ কালের মন্দিরায় জীবনের বোল ফোটাতে পরস্পরের সঙ্গ লাগে! তখন সেই সঙ্গতে মন বলে "সব পথ এসে মিলে গেল শেষে তোমারই দুখানি নয়নে-" এই যে পরস্পরের মধ্যে জীবনের পথ খুঁজে পাওয়া,পরস্পরের মধ্যে বেঁচে ওঠা, পরস্পরের মধ্যে সত্য হওয়া; এখানেই প্রেমের সার্থকতা! এখানেই মানুষ চলেছে তার দোসরের খোঁজে, "কবে আমি বাহির হলেম তোমারই গান গেয়ে"! আসলে দোসর খুঁজে পাওয়ার সাধনায় দোসর হয়ে উঠতে পারার শক্তিটাই গুরুত্বপূর্ণ! সেখানেই মুক্তি!”

যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম  (প্রথম পর্ব ) 


ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আমার গল্পের নায়ক এক  মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে “সুদীপ্ত”। মেধাবী ছাত্র। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। নায়িকা “সুদীপ্তা” সে’ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং মেধাবী, বাবা মা আই.এ.এস অফিসার। অভাব কি জানে না। দুজনেই ইনফোসিস, বেঙ্গালুরুতে চাকরীতে সবে ঢুকেছে। এরপর...

সুদীপ্ত বি.টেক. (কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং) এরপর ইনফোসিস্, বেঙ্গালুরুতে সফট্ওয়ের ইঞ্জিনিয়ার এর চাকরিতে জয়েন করে। এখানে বলে রাখা ভালো সুদীপ্ত, আই.আই.টি ,মুম্বাই থেকে ফার্স্ট ক্লাস ৯০% মার্কস পেয়ে  পাস করার পর চাকরীতে জয়েন করতে বাধ্য হয়। অন্য কোম্পানিতে ভালো চাকরি পেয়েছিল কিন্তু জয়েন করেনি। ওর বাবা অনেক কম বয়েসে  হার্ট অ্যাটাকে হটাত মারা যান। ছোটভাইয়ের পড়ার দায়িত্ব  সামলানোর জন্য ও বাধ্য হয় চাকরি করতে। বাড়ীতে মা এবং ছোটভাই ছাড়া আর কেউ নেই । অনেক ইচ্ছে ছিল এম.টেক্. এর পর ডক্টরেট করবে বলে, কারণ ওর টিচিং জব পছন্দ। সে ইচ্ছেটা ওকে সর্বদা পড়াশোনার দিকে টানত। আড্ডা দিতে মোটেই ভালোবাসে না সুদীপ্ত। ওর প্রজেক্টের প্রোজেক্ট্ ম্যানেজার (পি.এম.)ওকে খুব স্নেহ করেন । ওর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার সঙ্গে ও কাজও খুব নিখুঁত ভাবে করে । সুদীপ্তা ওই একি প্রোজেক্টে, ওর সঙ্গে জয়েন করে একই দিনে। মাইসুরে তিন মাসের ট্রেনিং সেরে দুজনে বেঙ্গালুরুতে জয়েন করে । তাই সুদীপ্তার সঙ্গে আলাপ প্রায় তিন  মাসের ওপর । সুদীপ্তর চেহারার আকর্ষণের সঙ্গে ওর প্রখর বুদ্ধি সহজেই নারীর মন আকর্ষণ করে। এটাই স্বাভাবিক। সুদীপ্তা এন.আই.টি., রাউরকেল্লা থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে  বি.টেক্.ফার্স্ট ক্লাস  কাজেই ও খুব ফেলনা নয়। দেখতে খুব সুন্দরী। বাবা মা দুজনেই আই.এ.এস অফিসার তাই টাকার অভাব নেই। তবে আই.আই.টি. পাস আউটদের ইনফোসিসে বেশি টাকা মাইনে দেয় । বেঙ্গালুরুর ইনফোসিসের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা সন্ধ্যে ছটার পর অফিসে  থাকা মানা ছিল। এসব আমি ২০০৫ সালের কথা  বলছি ।
সুদীপ্ত কাজের মধ্যে মসগুল থেকে এক রকমের যন্ত্রমানবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। অফিস আর কাজ ছাড়া কিছুই জানত না। প্রায় দিন বেলা ১.৩০ টার সময় সুদীপ্তা ক্যান্টিনে লাঞ্চ খেত সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা করে। সুদীপ্তার ওখানে গল্প করার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই কারণ সুদীপ্ত  বিশেষ পাত্তা দিত না  ওসব ব্যাপারে। সর্বদা কাজে মসগুল থাকতো  কি করে অন্ সাইটে যাবে। তারই  চিন্তায় থাকত। একদিনের কথা, সুদীপ্তা ওর নিজের  জন্মদিন সেলিব্রেট্ করার জন্য সব বন্ধু-বান্ধবদের ডেকেছিল পার্টিতে। সুদীপ্তকেও ডেকেছিল। 
কিন্তু ফর্মালিটির জন্য পার্টিতে গিয়ে সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে  গিফট দিয়ে চলে যায়। এটা সুদীপ্তার  মনে লাগে । এমনিতেই  সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা পার্টি, আড্ডা, শুক্রবার রাতে এবং শনিবারদিন সাধারনতঃ করে থাকে। ওদের মতে স্যাটারডে নাইট মাস্ট বি ডিলাইট। সুদীপ্তা মনে দুঃখ পেলেও প্রকাশ করেনি কারণ ও সুদীপ্তকে মনে মনে ভালবাসত কিন্তু কখনো প্রকাশ করেনি।
এই অপ্রকাশিত প্রেম এবং বলতে গেলে এক তরফা প্রেম যেন অসহ্য লাগে সুদীপ্তার ।
একদিন সুদীপ্তকে বলে বসে, “তুমি আমাকে অ্যাভয়েড করছ কেন ? আমি লাঞ্চের সময় ডাকলে তুমি এসে খেয়ে বিল মিটিয়ে চলে যাও। কোনও কথা কি তোমার মুখে আসে না? আমি তোমার প্রজেক্টে কাজ করছি ! তোমার সঙ্গে একসঙ্গে ট্রেনিং নিলাম ।  অন্য কলিগরা ত এরকম নয় ! তুমি এরকম ডিফারেন্ট এটিচ্যুড দেখাও কেন?” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সুদীপ্তর  দিকে তাকাল উত্তরের অপেক্ষায় ।  
সুদীপ্ত বলে, “আমাকে ভুল বুঝো না । আমার মাথায় অনেক চিন্তা । আমার মা বিধবা, ভাইয়ের পড়া আমার ওপর নির্ভর করছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমার ওপর সংসারের সব দায়িত্ব  ও তুমি বুঝবে না !” তুমি মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছ। তুমি কি করে জানবে নিম্নমধ্যবিত্তের জ্বালা যন্ত্রণা ? তোমার বাবা মা দুজনেই  আই এ এস অফিসার ! কি অভাব দেখেছ জীবনে? বাবা অসময়ে চলে গেলেন । মা আমার ওপর ভরসা  করে আছেন । আমি আমার ছোটভাইয়ের দায়িত্ব নেব বলে। আমি আমার মা'কে প্রতারণা করতে পারি না । তিনি এমনিতেই দুঃখ পেয়েছেন আর নতুন করে দুঃখ দিতে পারি না।
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment