Wednesday, August 19, 2020

স্বয়ংসিদ্ধা ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 20.08.2020




 

স্বয়ংসিদ্ধা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 08.03.2021

 

অভিজিৎ ও সুদেষ্ণা দেবীর কোলে যখন স্বয়ংসিদ্ধা এলো ওদের সকলের মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল এক সুদেষ্ণা দেবী ছাড়া l

এখানে বলে রাখি অভিজিৎ ব্যানার্জী হাই স্কুলের অংকের শিক্ষক এবং সুদেষ্ণা দেবী বিজ্ঞানের শিক্ষিকা l দুজনেই একই স্কুলে পড়াতেন l অভিজিৎ বাবু অঙ্ক নিয়ে কোলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন এবং গোল্ড মেডেল পান l ডক্টরেট করতে পারেন নি নানান কারনে তাই সুদেষ্ণা দেবীর সঙ্গে বি. এড পাস করেন এবং এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন l সুদেষ্ণা দেবী বোটানি অনার্স নিয়ে ইউনিভার্সিটি তে দ্বিতীয় হন l দুজনেই প্রেসিডেন্সির ছাত্র ছাত্রী ছিলেন l সুদেষ্ণা দেবী বি এড করেন l অভিজিৎ বাবু ইচ্ছে করলেই সহকারী প্রফেসার এর অফার পেতেন কিন্তু সুদেষ্ণা দেবীকে জীবন সাথী করার পর ঐ স্কুল সার্ভিস দিয়ে মাষ্টার হন l

সংসার দেখার জন্য এবং সুদেষ্ণা দেবী মা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে সম্পূর্ণ সময় মেয়েকে মানুষ করার পেছনে সময় দেন l কিন্তু তাঁর মেয়ে বাপের মতন উজ্বল শ্যাম বর্ণের তাই তার বিয়ে নিয়ে তিনি খুব চিন্তায় ছিলেন l মেয়েকে একদম নার্সারি থেকে 12 ক্লাস অবধি উনি পড়া দেখেছেন l অভিজিৎ বাবু মেয়েকে ফিজিক্স এবং অঙ্ক পড়াতেন l মেয়ে স্বয়ংসিদ্ধা শিশু শ্রেণী থেকে প্রথম হোত l ক্রমে মেয়ে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এবং এম বি এ করে l

মেয়ে চাকরি করার পর স্টেটসে যায় l সেখানে দু বছর কাটিয়ে দেশে ফেরে l খুব কম সময়ে উচ্চ পদে যায় এবং মোটা মাইনে পায় l তবুও ওর মায়ের চিন্তা মেয়ের বিয়ে নিয়ে l সব ভালো মেয়ের কিন্তু বড্ড জেদি l বিয়ের ব্যাপারে বললেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে l তার কোন ছেলেকে পছন্দ হয়না l স্বভিমানী অহংকারী মেয়েদের বিবাহ নিয়ে মা বাবার চিন্তার শেষ থাকেনা l মা বলেন তুই তোর লাইফ পার্টনার নিজেই ঠিক কর l সেটিও হবার নয় l কোন ছেলের কাছে মাথা নত করবেনা l স্বয়ংসিদ্ধার যুক্তি মেয়েদের ব্যক্তি স্বাধীনতা এখন পর্যন্ত কোন পুরুষ স্বীকার করতে পারেনা l কোন না কোন বিষয়ে পুরুষ নারীর মধ্যে এই বিভেদ আছে l এটা যে পুরুষের কাছে দেখবে সে তাকে কিছুতেই নিজের স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে না l এইতো বেশ আছে সে l তাকে কেন তার মা বিয়ের জন্য উৎপীড়ন করছে ! ভেবে উঠতে পারেনা l যাই হোক পাত্রপক্ষ এলে হয় সে মোটা ময়দার বস্তা নয় ঠ্যাংরা কাঠি আলুর দম l কারুর নাম প্যাঁকাঠি তো কাউকে আলুভাতে আবার কাউকে ডিব্বা বলে l মা বিরক্ত হন কিন্তু মেয়েকে কখনোই বুঝতে দেন না তাঁর মেয়ের কি খামতি আছে বলে l

নারীর আর্থিক স্বাধীনতা,স্বাবলম্বিতা, আত্মনির্ভরশীলতা এই সবগুলোকেই আমি সম্পূর্ণ সমর্থন করি এবং সম্মান দি কিন্তু কর্মজীবী মহিলারা কি তাঁর সংসারের প্রতি পুত্র কন্যার এবং স্বামীর প্রতি সঠিক ভাবে সময় দিতে পারেন?

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট্ট শিশুটিকে আয়ার কাছে কিম্বা বুড়ো বাবা মার কাছে রেখে স্বচ্ছন্দে অফিসে চলে গেলেন তার মা l কিন্তু শিশুটির প্রয়োজন তার মা'কে l সে কি পায় তার মা 'কে? বোধহয় হয় না l

আমি চাই তুমি গৃহকত্রী হও গৃহিণী নয় l তুমি এমন সংসার গড়বে যেখানে স্বয়ং মা লক্ষ্মী বিরাজমান হবেন l স্নেহের বন্ধনে তুমি তোমার সন্তানকে যত্নর সহকারে তোমার নিজের তত্বাবধানে মানুষ করবে l সে মা 'কে পাবে গৃহ পরিচারিকাকে নয় l তোমার জ্ঞান তোমার বুদ্ধি মত্তা র পরিচয় তোমার সন্তানের মধ্যে প্রস্ফুটিত হবে এটাকি তুমি চাওনা? আমার মনে হয় প্রত্যেক নারী সন্তানকে শিশু অবস্থা থেকে তার আদর্শে মানুষ করুক যাতে সে সমাজে মাথা উঁচু করে বলতে পারে, আমার মা আমার জন্মদাত্রী সেই আমাকে পরিপূর্ণ করেছেন তাঁর শিক্ষা এবং বুদ্ধিতে l এটাকি কম প্রাপ্তি l নারীর পূর্ণতা আমার মনে হয় এতেই বিকশিত হবে l সমাজে সু নাগরিক তৈরির জন্য নারীর ভূমিকা সর্বশ্রেষ্ঠ l তুমি কি অস্বীকার কর?

এবার আসি আর্থিক আত্মনির্ভরশীলতা l হ্যাঁ বিষয়টা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হওয়া দরকার বিয়ের আগে l আমি তোমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেব তোমার ইচ্ছানুসারে খরচ করার কারণ রোজগারটা আমার একার নয় আমাদের l

আমি আমার জন্য কেবল জীবন সাথী নয় আমি চাই একজন সম্পূর্ণ নারী যে আমার সংসারকে মন্দির করে তুলবে l

রুপমের কথাগুলো স্বয়ংসিদ্ধা মন দিয়ে শুনছিল l তার মনে একটাই দ্বন্দ্ব চাকরি ছাড়া টা কি ঠিক সিদ্ধান্ত হবে? চাকরি ছাড়লে এই বয়েসে আর চাকরি পাবেনা l যদিও পায় এখন যা পাচ্ছে সেই পরিমাণ নাও পেতে পারে l তার যা জমানো টাকা আছে সেটা এখন কোটি ছোঁয় নি l 30% আয়কর দিয়ে যা থাকে তা এ যুগে অনেক টাকা l আগে গাড়ির লোন বাড়ির লোন সব শোধ হওয়ার পর খুব একটা বেশি পরিমাণ টাকা থাকতো না l এ ছাড়া তার নিজের মেডি ক্লেম আছে , লাইফ ইনস্যুরেন্স এর নমিনি তার মা বাবা l তার মা বাবা ছাড়া অন্য কাউকে সে সেই টাকার ভাগীদার হতে দেবেনা l তার জন্য তার মা স্কুলের চাকরি ছেড়েছিলেন কিন্তু সে দেখেছে তার মায়ের ব্যক্তি স্বাধীনতা তাতে ক্ষুণ্ণ হয়েছে l যদিও অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ছিল কিন্তু সেটা সীমিত কারণ প্রয়োজনের অধিক খরচা করা মায়ের অভ্যাসের বাইরে l সে দেখেছে তার মা নিজের জন্য শাড়ি না কিনে মেয়ের জন্য ভালো ড্রেস কিনে দিয়েছেন যাতে মেয়ে এতটুকু না ভাবে তার মা তার প্রতি যত্নশীল নন বলে l স্কুল কলেজের সমস্ত খরচা এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য যথেষ্ট স্বার্থ ত্যাগ মা বাবা দুজনেরই ছিল l আজ সে যা হয়েছে তার জন্য তার মা বাবা উভয়ের কাছে কৃতজ্ঞ l এখানে প্রশ্ন উঠছে সংসারে ত্যাগ কি শুধু নারী করবে পুরুষ না l এটা তো সে মানতে পারে না l দুজনের সমান স্বার্থ ত্যাগ থাকা প্রয়োজন l

তার বাবা একটি সরকারি স্কুলের হেড স্যার হয়ে রিটায়ার করেন l বাবা তার উচ্চ শিক্ষার জন্য যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করতেন l মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু মা বাধা দেন l মেয়ে ডাক্তার হোক কেন জানিনা মা চাইতেন না l তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে l পরে ভালো ইন্সটিটিউট থেকে এম বি এ করে ফিনান্স এ l মার্কেটিং লাইন টা স্বয়ংসিদ্ধার পছন্দ ছিলোনা তাই ফিনান্সসিয়াল ম্যানেজমেন্ট এ এম বি এ করে l খুব কম বয়েসেই ভালো অফার পায় l অন সাইটে যায় আমেরিকা l সে সর্বদাই একরোখা এবং একটু জেদি টাইপের মেয়ে l সেইজন্য কোন পুরুষ বন্ধু টিকতনা তার জীবনে l মা চাইছিলেন তার মেয়ে নিজের পছন্দের জীবন সঙ্গী খুঁজে নেবে l কিন্তু সেরকম কিছুই হত না l রাতে ভিডিও কল করতেন কিন্তু সে ঐ সপ্তাহে একবার l মায়ের বিবাহ সংক্রান্ত কিম্বা পছন্দের ছেলে সংক্রান্ত কোন প্রশ্নের উত্তর দিত না l একটাই কথা সে বিয়ে করবে না l

প্রত্যেক বাঙ্গালী মা চান তার সন্তান সন্ততিরা ভালো লাইফ পার্টনার বা জীবন সঙ্গী বেছে নিন এবং সুখে স্বচ্ছন্দে ঘর সংসার করুক l

রূপম শুরু করে আমি যদি কোন ভুল রাস্তায় যাই আমাকে ঠিক রাস্তায় আনা তোমার দায়িত্ব l

- চমকে ওঠে স্বয়ংসিদ্ধা l ভুল রাস্তা? মানে পরকীয়া না নেশা করেন আপনি l

- আমাকে দেখে কি মনে হয় ঐ কোন একটা আমি করতে পারি?

- মানুষকে দেখে স্বয়ং নারায়ণ ও চিনতে পারবেনা তার আসল রূপ কি!

- নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন আপনি l আমি সিগারেট ও খাইনা মদিরা সেবন ও নয় l নারী আমার জীবনে আসেনি বললে ভুল হবে তবে কাউকেই আমার পছন্দ হয়নি এবং সেগুলি ঐ বান্ধবীর পর্যায়ে থেকে গিয়েছে l প্রত্যেকেই আত্ম কেন্দ্রিক, গর্বী, অহং এ ভরা l তাদের মধ্যে রূপ আছে ঠিক কিন্তু মানবিকতার অভাব l সামান্য চাকরি করে ধরা কে সরা মনে করা মহিলাদের আমি ঠিক পছন্দ করিনা l অনেকেই আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে কিন্তু চাকরি ছাড়তে রাজি হয়নি l তাই আমি কাউকেই পাত্তা দি নি l

হোটেলের বয় খাবারগুলো সাজিয়ে দেয় l স্বয়ংসিদ্ধা খাবার খেতে গর রাজি হয় l তার একটাই যুক্তি হোটেলের খাবার তার পছন্দ নয় l যদিও সে রাঁধতে জানেনা, মা শেখান নি নয় মা ওকে রাঁধতে দেন নি কখনো l সে ম্যাগী আর কফি বানাতে পারে l

- স্টেটস এ থাকার সময় কি করতেন?

- ঐ বান্ধবীদের সঙ্গে থাকতাম তারাই প্রায় মাইক্রোতে কি সব করতো l সব সিদ্ধ আর হেলদি ডায়েট l অপছন্দ ছিলোনা তার একটাই কারণ আমি কুকিং জানিনা l

- একদম করেন নি?

- না l

- চিন্তায় ফেললেন l

- কেন আপনি কি ভেবেছিলেন আমি আপনার ঘরে গিয়ে রান্না করে সকলকে খাওয়াবো বলে !

- না তা নয় l

-তবে তবে কি?

- যা বাবা এতো ভারি মুশকিল l আমি সেরকম কিছু মনে করিনি l In fact আমাদের ঘরে রান্নার মহিলা আছেন l তিনি সব রান্নাই করেন তবে ঐ সব নিরামিষ রান্না l কারণ বিধবা ভদ্র মহিলা l খুব বাতিক গ্রস্ত মহিলা l আমার ইচ্ছে হলে অন লাইনে এনে খাই তাও আমার রুমে l ডাইনিং টেবিলে মানা l

- ভালোইতো নিরামিষ খাবেন l পারবেন না?

- আপনি বললে খাবো তবে ঐ সপ্তাহে একদিন চিকেন কিম্বা মটন বিরিয়ানি না হলে কি চলে বলুন?

- উইক এন্ডে না হয় বাইরে ঘুরতে গিয়ে খাবো l সেটাইতো ভালো l উনি যখন চান না ঘরে মাছ মাংস কি লাভ সেগুলো করে ওনাকে ব্যস্ত করা?

- আমার মা ও তাই বলেন l

- আমার মা লোকনাথ বাবার ভক্ত l উনি পিঁয়াজ রসুন ও খান না l

- সে কি?

- আর বলছেন কেন l আমি তাই....

- আপনি চাইছেন আপনার বৌ রান্না করে মাছ,মাংস মুরগী খাওয়াবে !

- কি মুশকিল l তা কেন হবে?

- বাড়িতে যা রান্না হবে তাই খেতে হবে l আপনি বলেছেন আমি বাড়ির কত্রী গৃহিনী নয় l ঠিকতো ! না পরে পাল্টি খাবেন?

- হ্যাঁ তাই হবে l আপনি বিয়েতে রাজি l

- ভেবে দেখবো l কিছু বলতে পারছিনা l

- ঠিক আছে l ঐ শ্রী নগরের ফ্লাইট আর হোটেল রিজার্ভেশন গুলো তাহলে সেরে ফেলি l হনিমুন এ কাশ্মীর যেতে আপনার আপত্তি নেইতো!

- আমি সুইজারল্যান্ড দেখিনি তাই ওখানেই যাবো গেলে l

- বেশতো পাসপোর্ট ভিসা!

- সব আছে তবে না কাশ্মীর আমাদের দেশের ভূস্বর্গে সেটাই দেখতে যাবো l বিদেশে অনেক ঘুরেছি l

- তারমানে আপনি বিয়েতে রাজি!

- একটু মুচকি হেঁসে স্বয়ংসিদ্ধা মাথা নাড়িয়ে বলে এতো উতলা হওয়ার কি আছে l একটুতো ভাবতে হবে যাচাই করতে হবে l শুধু ছেলেরাই মেয়েদের বিষয় খোঁজ নেবে মেয়েরা কি সেটা করতে পারেনা?

- অবশ্যই খোঁজ নিন l

- আপনি কি করে ভাবলেন সে কথা?

- এইতো আপনি বললেন l

- বিবাহ বন্ধন বিশ্বাসের বন্ধন l সেখানে সন্দেহের কোন স্থান নেই l

- আমি দেখেই ভেবেছিলাম আপনি আমার সঠিক লাইফ পার্টনার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন l

দুজনে দুজনের দিকে অপলক নয়নে তাকাল l তবে কি শুভ দৃষ্টি হয়ে গেলো স্বয়ংসিদ্ধার রূপমের সঙ্গে l আপনারা কি ভাবছেন....?

চিত্র ঋণ ঃ- গুগুল

 

No comments:

Post a Comment