Monday, August 17, 2020

এঞ্জেল ১৭ তম পর্ব লেখক ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী



                       এঞ্জেল

                   ###১৭ম পর্ব###   

 এয়ারপোর্ট থেকে ওনারা সকলে মনিকাদের বাড়িতে ওঠেন l মনিকার মায়ের অতিথিদের প্রতি আদর যত্নর শেষ নেই l সব রান্না নিজে হাতে করে রেখেছেন কুটুম বাড়ি বলে কথা l ওনার আজ অনেকদিন পর মুখে হাঁসি দেখে মনিকাও খুব খুশি l ওর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল ওর মা বুঝেছেন l তাই বোধহয় এতো আয়োজন করেছেন আত্মীয়দের জন্য l মায়ের পক্ষে ধ্রুবর মতন বাঙালি পাত্র জোগাড় করা অসম্ভব ছিল l এ যেন মেঘ না চাইতেই জল l

জগদীশ বাবু কিন্তু কিন্তু করে প্রথমে চা জলখাবার খেলেন l মনটা সায় দিচ্ছিল না ওনার l ছেলের   জন্য জাত ধর্ম সব গেলো l এখান থেকে গিয়ে পৈতে পাল্টাতে হবে । এখানে কি পৈতে পাওয়া যাবে? জিজ্ঞাসা করলেন জগদীশ বাবু মনিকার মাকে l

- কেন বলুন তো?

- অনেকদিন পৈতে বদলানো হয়নি তাই বলছিলাম l

- খুঁজলে পাওয়া যেতেও পারে হয়তো l

  কেন কি খুব দরকার l

- হ্যাঁ ধ্রুবর বিয়ের আগে নাহ্নিমুখ শ্রাদ্ধ করতে হবে পূর্ব পুরুষদের জন্য তাই পৈতের প্রয়োজন l

- ও হ্যাঁ তা তো বটেই ! ভুলে গিয়েছিলাম l আসলে আমিও তো চক্রবর্তী বাড়ির মেয়ে নেহাত দারিদ্রের কষা ঘাতে এই বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলাম l একরকম পেটের দায়ে বলতে পারেন l কাকা কাকিমা না থাকলে আমার কি হোতো বলা মুস্কিল l আমার কথা থাক, আপনাদের জন্য দুপুরে রুই মাছের ঝোল , ফ্রায়েড রাইস , খাসির কসা  মাংস , চিংড়ীর মালাইকারী , আলু পটলের দোর্মা , আমের চাটনি আর শুক্ত বানিয়েছি l ধ্রুবর জন্য আলু পোস্ত বিউলির ডাল l ও ওটাই এখানে খেতে পছন্দ করে l মাছতো খেতেই চায়না l 

- না মা, বাড়িতে ওর মা কাঁটা বেছেদিলে মাছ খায় l মায়ের নন্দ দুলাল তো তাই l তাও মা খাইয়ে দিলে খায় বলে মুখ টিপে হাঁসে l

- এটা কিন্তু খুব বাড়া বাড়ি হয়ে যাচ্ছে l আমার মা কে আমি দু বছর পর পেয়েছি l মা তাই নিজেই খাইয়ে দিলেন l এতে নন্দ দুলালের কি আছে?

- ও বাবা এত কে খাবে ? এতো এলাহি কাণ্ড । না মা আমার ছেলে এমনিতেই আমার হাতে খেতে ভালোবাসে.. সুনীতি দেবী বলেন l

- যা সব রান্না হয়েছে সব ই ধ্রুবর বাবার প্রিয় মনে মনে ভাবেন । ঐ পৈতে টা আজ পাবো ত ! ওটার বিশেষ প্রয়োজন কিন্তু । 

- হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই l আমি দেখি আমার মালীকে বলে l ঐ সব খবর রাখে l ও তো  আমাদের ই ওদিক কার লোক l আমার অনেক বিশ্বাসী l ও নিশ্চয়ই খুঁজে আনতে পারবে l

- এক ডজন পৈতে লাগবে l

- ঠিক আছে l মনিকার মা বলেন l

দুপুরের খাওয়া ভালোই হোল সকলের l এবার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন l সবাই সোফায় গিয়ে বসে

ধ্রুবর ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে l ও তাই চলে যায় l মনিকা হসপিটালে চলে যায় l ধ্রুবর বাবা সোফাতেই ঢুলিয়ে পড়েন l একটু পরেই নাসিকা গর্জন ।

-আশ্চর্য লোক বাপু ! খেল ত ওমনি নাক ডাকা সুরু হল  । স্থান কাল পাত্র কিছুই বোঝে না … সুনীতি দেবী বলে ওঠেন ।

-আসলে অনেকটা পথ এসেছেন ত তাই শরীরের ধকল গিয়েছে …

- না না উনি খেয়েই ঘুমান আর পড়লেই নাক ডাকেন ।

-ওটা এই বয়েসে হয় । ওনারও হত । উনিত অসময়ে চলে গেলেন আজ থাকলে খুব খুশি হতেন। বলে একটু উদাস হয়ে পড়েন ।

- হার্টের অসুখ ছিল । দ্বিতীয় স্ট্রোকেই মারা জান ।

- ও ! তখন মনিকা কত বড় ?

-ও তখন কলেজে ইন্টারমিডিয়েট সাইন্স পড়ছিল । পড়াশুনোয় ভালোই ছিল । ওনার ইচ্ছে ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে বলে ।  কিন্তু কি যে হল ! মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে নার্সিং স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়। ও বাপের ধারা পেয়েছিলো । যা মনে ভাববে তাই করবে । আমার কথা শুনলো না । সেই নার্সিং পড়ে হাঁসপাতালের চাকরি করল । ধ্রুবর ই ফ্যাক্টরির হাঁসপাতাল । ওখানেই ওদের আলাপ পরিচয় ।

মনিকার মা আজও ছুটি নিয়েছেন তাই বেয়ানের সঙ্গে গল্প করতে ব্যস্ত l দুই বেয়ান মনের কথা বলে নান গল্পে মত্ত । যেন অনেক দিন পরে দুই বোনের দেখা ।

বিয়ের জোগাড় প্যান্ডেল সাজানো, পুরোহিত ঠিক করা, বন্ধু বান্ধবদের বলা অনেক কাজ l উনি বলেন এই জ্যৈষ্ঠ মাসেই বিয়ে দেব l বিয়ের দিন ঠিক করতে হবে পাঁজি দেখে ।

- হ্যাঁ তাই ভালো l দেরি করে লাভ নেই l

বিপাশার বৌ ভাত

ওদিকে বিপাশার বৌভাত এর জন্য সেরকম কোন প্রস্তুতি দেখলেন না কোনের বাড়ির কেউ l কমলেশ বাবু মৃণালিনী দেবী গিয়েছিলেন সঙ্গে বম্বের কাকা কাকিমা , বেনারসের কাকা কাকিমা l বিপাশার সঙ্গে বম্বে থেকে আসা ওর খুড়তুতো বোন বান্টি ছিল সঙ্গে । কোন সাজ শয্যা নেই । সাধারণ ভাবে সাজানো ফুল দিয়ে । লোক জন নিমন্ত্রিত কেউ সেরকম নেই বললেই হয় । জনা ৫০ লোক । পাড়ার কেউ আসেনি কিম্বা এনারা ডাকেন নি । ডঃ অভিজিৎ ব্যানার্জীর ঠাকুমা নাতবৌকে পেয়ে খুব খুশি । তিনি বিপাশার গলায় একটা গিনির মালা পরিয়ে দিলেন তাতে ২৫ টা গিনি সোনা ছিল । বিপাশা , ঠাকুমা কে প্রণাম সেরে বলে ওই হার তাঁর কাছে রেখে দিতে কারন এতো দামি হার সে কোথায় রাখবে? ঠাকুমা আরও একটা বাক্স এনে তার হাতে দেন বলেন বাপের বাড়ি থেকে যে আলমারি টা দিয়েছেন তাতেই সব গুছিয়ে রেখে দেবে । চল আমি  সব গুছিয়ে দেব ।

ডঃ অভিজিৎ ব্যানার্জী সেজে গুজে এলেন । সঙ্গে এক মহিলা । অভিজিৎ কে ওনার  ঠাকুমা  কনের পাসে বসতে বলেন । ফটোগ্রাফার , ঠাকুমা , অভিজিৎ এবং বিপাশার ফটো  তোলে । পরে অভিজিৎ এর বাবা , মা এবং বিপাশার বাবা মা র সঙ্গে আবার একটা ফটো ঠাকুমা তোলেন। বিপাশা কে খুব ই বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল । বান্টি ব্যাপার দেখে আশ্চর্য হচ্ছিল । ওদের ওখানে বিয়েতে হই হুল্লোড় গান বাজনা কতো কি হয় । এই নিস্তব্ধ বিবাহ বাসরে ও হাঁপিয়ে উঠছিল । যেন নিষ্প্রাণ এক বিবাহ বাসর ! 

সবাই চলে যাওয়ার পর অভিজিৎ এর সঙ্গে যে মহিলা এসেছিলেন উনি চুপি চুপি কি সব কথা বলছিলেন । একটা কথাই বিপাশার কানে আসে … অভি এই গাঁইয়া মেয়েটাকে তুমি কি দেখে বিয়ে করলে ?  

-কি করবো ! আমার ঠাকুমা নাছোড়বান্দা বিয়ে করতেই হবে তাও পালটা ঘরে । আমাদের কলেজের মেডিসিন বিভাগের ডঃ কমলেশ চক্রবর্তীর মেয়ে বিপাশা র সঙ্গে সম্বন্ধ এলো । বাবা রাজি হয়ে গেলেন … ডঃ অভিজিৎ ব্যানার্জী বলেন।

-উনি বললেন ওমনি তুমি রাজি হয়ে গেলে । এখন আমার কি হবে ?

-কেন যেমন ছিল সেইরকম ই থাকবে । আমার অন্য কিছু করার উপায় ছিলোনা । ঠাকুমার হাতে সমস্ত ঘর বাড়ি বিষয় সম্পত্তি । বাবা বলেন ওনার কথা না শুনলে বিষয় সম্পত্তি সব হাত ছাড়া হয়ে যাবে । আর তোমার কথা যে না বলেছি তা নয় । বলেন বদ্দি বাড়ির মেয়ে এই ঘরে ঢুকতে পারবেনা । স যেই হোকনা কেন ।

বিপাশা সবই বুঝতে পারলো । মুখে কিছু বললোনা । ঠাকুমা তাহলে এই বাড়ির সর্বে সর্বা । আচ্ছা কথাটা জানা রইলো । সে ও কিছুটা আন্দাজ করছিলো । কারন ঠাকুমা ওনার সব গহনা আমাকে দিতে চান কিন্তু আভির মা মানে তার শাশুড়ি ওটা দেখে খুব বিরক্ত হচ্ছিলেন । বাকি ওই মহিলা কে সেটা জানার প্রয়োজন ………

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 

               ###১৮ তম পর্ব###   

 

দিনের বেলার হেভি লাঞ্চ খেয়ে জগদীশ বাবুর আর রাতে খেতে ইচ্ছে হলনা । একে বিদেশ ভুঁই তায় স্লাটার হাউসের পাশদিয়ে গেলে গরু কেটে টাঙ্গানো আছে দেখে ওনার গা বমি বমি করে । মনে মনে ভাবেন যবন দের দেশ এখানে বেশি বাইরে না বেরুনোই শ্রেয় । ছেলের জন্য এই দৃশ্য দেখতে হল । এরা গরু শুয়োর সব খায় । এখানে ব্রাহ্মণ এলে তার পইতে দিনে চোদ্দ বার পালটাতে হবে । কথাটা মনেই থাক ধ্রুবর মাকেও বলবেন না । তাহলে কুরুক্ষেত্র হবে । মনিকার মা মালীকে দিয়ে কথা মতন ১২ টা পৈতে আনিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন । মালীর হাতে ৫  টাকা দিয়ে বলেন পৈতে বিনা পয়সায় ধারণ করতে নেই । কোন ফল হয়না তাতে ।  

মালী মনিকার মায়ের দিকে তাকাল । উনি সম্মতি দিলেন টাকাটা নেওয়ার জন্য ।

ধ্রুব ফ্যাক্টরি থেকে সেই সন্ধ্যের পর ফিরল । তখন ৭ টা বাজে । মনিকা ওই প্রায় একই সময় ফিরল ।

ওরা আসার পর বিকেলের চা খেয়ে ধ্রুবর কোয়ার্টারে রওনা দিলেন সকলে । মনিকা সঙ্গে গেল  কারন আসবাব পত্র সব  ঠিক আছে কিনা দেখতে । তা ছাড়া ঘরটা আরেকবার গুছিয়ে দিয়ে আসবে । রাস্তায় কিছু ফুল কিনে নিয়ে গেল ফ্লাওয়ার ভেশ এ রাখার জন্য । মনিকা ফুলের খুব ভক্ত । রজনীগন্ধা , গোলাপ , আর কিছু অরকিডস । রুম ফ্রেশনার বাড়িতেই আছে ।

 

বাড়ি পৌঁছেই সমস্ত কাজ নিজে হাতে সুরু করলো ।পুরো ঘর ঝাঁট দেওয়া , ঘর পোঁছা , সমস্ত ঘর গুছন , বিছানা পরিপাটি করে রাখা , ফ্লাওয়ার ভেসে ফুল রাখা । ডাইনিং টেবিল গুছিয়ে রাখা , ফুলদানিতে ফুল রাখা , রান্না ঘরের বাসুন পত্র মেজে রাখা । তবে রান্না ঘরে এসে দেখল  একটা বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে , ধ্রুব রান্নার জন্য কোন বাসুন পত্র কেনেনি । ওটা মনিকা ভুলে গিয়েছিল । প্রায় দৌড়ে যায় কাছের মার্কেট থেকে কিছু আজকের মতন বাসুন পত্র  কিনে আনে । ধ্রুবর মা মনিকাকে লক্ষ করছিলেন মেয়েটা সুধু দেখতে সুন্দর , চাকরি করা মেয়ে নয় সে দুর্দান্ত গৃহিণী হবে । প্রত্যেকটা কাজ নিখুঁত ভাবে খুব কম সময়ের মধ্যে করে দেখাল তাও হাঁসপাতাল ফিরে বাড়িতে স্নান সেরে । এটা কম পাওয়া নয় । তিনি ও ফেরা মাত্র ওকে জড়িয়ে ধরে বলেন মা তুমি আমার ঘরের লক্ষ্মী মা আমার । আমি তোমাকে আর তোমার কাজের ধরন দেখছিলাম । সত্যি  আমার ছেলে ঠিক মেয়েকেই বেছে ছে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে । আমি অত্যন্ত খুশি মা । তুমি এবার রেস্ট নাও ।

-  না মা এখানে আপনারা নতুন তা ছাড়া বাবা রাতে কি খাবেন আমায় বলুন সেই অনুযায়ী আমি রান্না করে বাড়ি যাবো ।

-  তোমাকে আর কিছু করতে হবে না । এবারে আমি সব করে নেব । তোমায় কিচ্ছুটি চিন্তা করতে হবে না মা । তুমি এইবার বাড়ি যাও । কাল তোমার মাকে পাঠিও ওনার সঙ্গে কিছু কথা আছে ।

-  আচ্ছা । এই বলে মনিকা ধ্রুবর সঙ্গে কিছু কথা বলে নিজের বাড়ি চলে যায় ।

 

ওকে কি করে বোঝাই যে ধ্রুবর বাবা , বারে বারে পৈতে বদলাচ্ছেন । এই প্রথম কলকাতার  বাইরে এলেন তাও গোয়া । এখানে খৃষ্টানদের বাড়িতে খেতে হল । তাই এসেই পৈতে বদলালেন  । সন্ধ্যাহ্নিক করলেন । মাথায় গঙ্গা জল ছিটিয়ে বলেন ঠাকুর এ কি বিপদে আমায় ফেললে ? আমার জাত ধর্ম সব গেল এখানে ।

-ধ্রুবর মা স্বামীকে বোঝান দেখো আমি ও ঠাকুর পুজো করি । কিন্তু ঠাকুর স্বয়ং যখন আমাদের পরীক্ষা করছেন ছেলের বৌ কে দিয়ে তখন ব্যাপারটা আমাদের মেনে নিতেই হবে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে তার সুখের জন্য । মনিকা  হয়তো জন্ম সূত্রে খৃষ্টান কিন্তু ওর মাত বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ কন্যা । শুনলে ভদ্র মহিলার সব কথা । তিনি এখন ও ঘরে ভবতারিণীর ফটো রেখে দীপ জ্বালান কিন্তু কি করবেন পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করেছিল তাই তিনি খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়ে সংসার করেন কিন্তু মনে প্রাণে তিনি এখন ও বাঙ্গালি এটা ত অস্বীকার করা যায়না ।

-তোমার যুক্তি তোমার কাছে । আমাকে আমার মতন থাকতে দাও । আমি তোমার হাতের রান্না  ছাড়া কোনদিন কোথায় কিছু খাইনি নি কি খাবোনা । আমায় বাধ্য করনা ।

-ঠিক আছে তাই হবে । কাল মনিকার মাকে আসতে বলেছি আমাদের বাড়িতে । ওনার সামনে আবার কিছু বে ফাঁস কথা বলে বসনা যেন । কাল ধ্রুবর বিয়ের দিন স্থির করব । সঙ্গে পুরোহিত  আনতে বলেছি । এখানে বাঙ্গালি পুরোহিত পাওয়া যায় । তাই উনি পুরোহিত  নিয়েই আসবেন আমাদের সঙ্গে শুভ বিবাহর  দিন ঠিক করতে ।

-তোমরা যা বলার বল আমাকে টেনো না  এর মধ্যে । আমি আমার যা করনিয় করবো ।


ধ্রুব মনিকার শুভ বিবাহর দিন স্থির 

 

 ধ্রুব , মনিকা কাজে চলে যাওয়ার পর মনিকার মা সকাল সকাল চলে আসেন ধ্রুবর কোয়ার্টারে  । সঙ্গে পুরোহিত  আর পঞ্জিকা ।পঞ্জিকা দেখে পুরোহিত মশাই বলেন আগামী সামনের ২৮ শে মে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৪ তারিখে শুভ বিবাহ লগ্ন সন্ধ্যা ০৬.১৩ গতে রাত ০২.১৫ মধ্যে বৃশ্চিক ধনু লগ্নে। বিবাহ স্থান শান্তা দুর্গা মন্দির উত্তর গোয়া তে অনুষ্ঠিত হইবে । তদনুসারে প্রস্তুতি পর্ব লইতে হইবে । বিবাহ অনুষ্ঠানের সমস্ত দায়িত্ব তাঁর ।

 বৈদিক মতে আচার গুলির মধ্যে অবশ্য পালনীয় প্রথাগুলি হল কুশণ্ডিকা , লাজ হোম (লাজ বা খৈ দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান ) , সপ্তপদী গমন , পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ)  , ধৃতি-হোম ( ধারণ করা অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ )  ও চতুর্থী হোম । এ ছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র এবং ধ্রুব নক্ষত্র দর্শন । এই প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ এবং শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ ।  বেদি , মণ্ডপ , কুশণ্ডিকা , হোম ইত্যাদির জন্য তিনি অর্থাৎ পুরোহিত মহাশয় দায়িত্ব নিচ্ছেন । এই সব মনিকার মা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে স্থির করেছেন । নিজের বিবাহ অনুষ্ঠান হয়নি সেই সাধ নিজের মেয়ের বেলায় পূর্ণ করতে চান । তাই কোন খুঁত রাখতে চান না বিবাহ অনুষ্ঠানে ।  

দিন স্থিরের জন্য সম্মতি নিতে এসেছেন ধ্রুবর বাবা এবং মায়ের কাছ থেকে ।

ধ্রুবর বাবা পুরোহিত মহাশয়ের কথা শুনে ভাবলেন এই যবনের দেশে এইসব পালন হয় । তিনি আশ্চর্য হলেন এবং পূর্ণ সমর্থন দিলেন । প্রথা এবং রীতি নিতি শুনে খুব ভালো বললেন তাঁর ।  

শান্তা দুর্গা মন্দির পাঞ্জিম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে উত্তর গোয়ার কাভালাম গ্রামের এক পর্বত পাদ দেশে অবস্থিত । এই মন্দির প্রায় ৪০০ বছরের পূরণ । শান্তা দেবী এখানকার গৌড় সরস্বতী ব্রাহ্মণ দের অধিষ্ঠাত্রী দেবী । প্রায় বিবাহ কার্য এই মন্দিরে সম্পূর্ণ হয় । 

 

তাহলে আমি কার্ড ছাপাতে দিয়ে দি ..মনিকার মা জিজ্ঞাসা করেন ।

-  হ্যাঁ নিশ্চই । বলেন ত পাটিপত্র তে সই করে দেব .. ধ্রুবর বাবা বলেন । খুব ভাল এখানকার পুরোহিত ।

-  হ্যাঁ উনি এখানে অনেক বছর আছেন । হিন্দু বিবাহ অনুষ্ঠানে ওনাকেই ডাকে সবাই । আমিও ওনাকে ডেকে পাঠালাম । আমার এবং আপনাদের এই একটাই কাজ ছেলে মেয়ে কে তাদের পছন্দর পার্টনারের সঙ্গে হৃদয়ের মিল করিয়ে দেওয়া এই বিবাহ পদ্ধতি অনুসরণ করে  ।

-  আজ আসি । সেকি কিছু মুখে না দিয়েই যাবেন ?

-  না দিদি আরেকদিন হবে এখন । এখন ত যাওয়া আসা থাকবেই । আপনারা বিশ্রাম নিন । আমি আসি তাহলে …….

 

                         xxxxxxxxxxxxxx

 

ওদিকে বিপাশার বৌভাতের এইরকম করুণ অবস্থা দেখে মৃণালিনী দেবী স্বামীর ওপর খাপ্পা । এতো ছোট লোকের বাড়ি তুমি আমার মেয়েটার হাত পা বেঁধে ছুঁড়ে দিলে । আমার মেয়ের কিছু হলে আমি আত্মহত্যা করব বলে রাখলাম আর সুইসাইড নোটে তুমি এই মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে লিখে দিয়ে যাবো । অনেক সহ্য করেছি । তোমার অর্থ লোভ আর মানুষকে হেও চোখে দেখা এইবার ঘুঁচবে । এতোদিন পতি পরম গুরু ভেবে কিছু বলিনি । এবারে আর না । মা দুর্গা তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে মা কালির রূপ ধারণ করেছিলেন । আম সেই রূপ ধারণ করে তোমার মুখোশ খুলে দেব । সব থানাতে জানাবো । তোমার জন্য আমার মেয়েটার জীবন ছার খার হয়ে গেল । আমি বুঝতে পারছি সে কি জ্বালায় জ্বলবে । আমরা এতো দিন মা মেয়ে তোমার সমস্ত অত্যাচার সহ্য করেছি এবার আর না। তুমি তোমার সমস্ত অধিকার ইচ্ছা আমাদের মা মেয়ের ওপর চাপিয়ে এখন আমার মেয়েটার জীবন শেষ করতে বসেছ । কি খারাপ ছিল ধ্রুব । সে গরিব সেটাই তার অপরাধ ! মেয়েটাকে এম.এ. পড়তে দিলে না । তাকে মূর্খ গেঁয়ো বলে বৌ ভাতের দিন শুনতে হচ্ছে । কেন ? কেন ? হে ভগবান এ কি পাপের ফল আমায় দিলে ।

-শান্ত হও বিপাশার মা ।শান্ত হও । ওরকম কিচ্ছু হবেনা । ও আমার ছাত্র ।

- কিসের ছাত্র ? লম্পট চরিত্র হীন ছেলে । সঙ্গে একটা মহিলা এনেছে । ও ডাক্তার ? আমি বুঝিনা ।  ওই মহিলাটির সঙ্গে ওর কি সম্পর্ক  শুনি ? আমাকে বোঝাতে এসো না । আমি তোমাদের সবকটাকে জেলের ঘানি টানবো । আমার মেয়ের কিছু হলে বাপ , জামাই কাউকে ছাড়বনা । দেশে আইন কানুন নেই ভেবেছ ।

-শান্ত হও ।

-খবরদার আমাকে আর আটকে রাখতে পারবে না । এইবার আমার স্বরূপ দেখবে । ভালোয় ভালোয় আমার মেয়েকে ফিরিয়ে আনো । তা নাহলে তাণ্ডব নৃত্য দেখবে । মহাদেব নয় আমি কালীর রূপ ধরে শেষ করেদেব তোমাদের সব কটা শয়তান কে । সাবধান ……… 

 

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 

 


No comments:

Post a Comment