ভেতরের পোশাক
অরুণ দে

- লক্ষণ-এর দোকানে আজ বেশ ভিড়। দাঁড়িয়েই আছি। অন্যদিন লক্ষণ বা কর্মচারীরা কেউ আমাকে দেখতে পেলেই বলে ওঠে, ‘কী দেব, মাস্টারমশাই?’আমি চুয়াত্তর। সেজন্য বোধহয় আমার প্রতি তাদের এমন সহানুভূতি।অস্বস্তি হয়। কয়েকবার বলেওছি, ‘দেখো, তোমরা সকলের সামনে আমায় অসহায় করে দিও না। আমি এখনও সোজা হাঁটি, তাকাই সোজাসুজি।’এমন কথায় ওরা নরম হাসে। এখন কাউন্টারের সামনের দিকে আমি। আশপাশের কম-বেশি পরিচিত মানুষজন। চোখের ইশারায় কয়েকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় হল।আমাদের পিছনে একটা স্কুটার থামার শব্দ। ঘাড় ঘোরাল সবাই। কৌতূহলী হয়ে আমিও তাকালাম।সাদা স্কুটি। বছর চব্বিশ-পঁচিশের এক যৌবনশ্রী। পরনে হাঁটু পর্যন্ত লালচে কেপ্রি, ওপরে হাতকাটা হালকা দুধ-সাদা টপ। বুকের ওপর কালচে এক নিগ্রোর আবছা মুখ। টান-টান টাইট পোশাক। চোখে রোদ-চশমা। ডান হাতের কব্জিতে রিস্টলেট। লুকনো মোবাইল থেকে দু’কানে গোঁজা দুটো মাইক্রোফোন। শরীরী আবেদন উপচে পড়ছে তার চাল-চলন আর পোশাক-আশাকে।নিমেষে চোখ সরিয়ে নিলাম। শরীরের ভেতর কেমন যেন গা-গুলনো ভাব।পাশের খদ্দেরটি চলে যেতেই সে ঢুকে দাঁড়াল আমার গা ঘেঁষে। তার পছন্দের পারফিউম একেবারে ভাল লাগছে না আমার। বিশ্রী অস্বস্তি হচ্ছে। এদিক-ওদিক এলোমেলো চেয়ে দেখলাম, প্রায় সকলেরই চোখ তার পোশাক আর উদ্ধত শরীরে।লক্ষণ কাউন্টারের বাইরে এল। আমার পায়ের সামনে থাকা ছোট পেটিটা তুলে নিয়ে ভেতরে ঢুকল।পেটিটা সরে যেতেই মেয়েটি আরও স্মার্ট হয়ে দাঁড়াতে গিয়ে আমার পায়ে তার পা ঠেকল।তাচ্ছিল্যভাবে, চোখে রাগ নিয়ে তাকালাম।কিন্তু এ কী! নিমেষে মেয়েটি কোমর পর্যন্ত শরীর ভেঙে মাথা নুইয়ে দু’হাত দিয়ে আমার দু’পায়ের পাতা ছুঁল। প্রণাম করে দাঁড়িয়ে উঠে, লজ্জিত মুখ নিয়ে বিনীত স্বরে বলল, ‘আমি দেখতে পাইনি জেঠু।’তার ভেতরের পোশাক দেখে আমি হতচকিত! হতবাক!মাথায় হাতের স্নেহ-স্পর্শ দিয়ে বললাম, ‘বড় হও। ভাল হও।’অঙ্কন: প্রীতম দাশ
No comments:
Post a Comment