মাসি
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৫.০৬.২০১৭ / সকাল ৮.৫১
শনিবার বিকেলে আমার পরিবারের সঙ্গে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাই । সেই রকম ই এক শনিবারের বিকেলে আমার ছেলের গাড়ীতে বেরুলাম ‘মনি স্কয়ার’ শপিং মল। একটা কথা মাথায় নাড়া দেয় ‘মল’ ! আরে ‘মল’ মানে ত বাংলায় ‘বিষ্ঠা’ ! সোজা বাংলায় “বিষ্ঠার দোকান” !! তবে ওখানে অত যাওয়ার কি প্রয়োজন বল ? আমার কথা কে শোনে ? বুড়ো হলে এই এক সমস্যা। বৌ , ছেলে , বৌমা , নাতনী সব যে যার তালে থাকে । আমার কথা শোনার ওদের সময়ের অভাব। ওরা রকমারি জিনিষ কেনে , আমার কিন্তু ওইসবে মন থাকে না। পার্থিব জগত থেকে একটু সরে মানুষের মনে ঝুঁকতে চেষ্টা করি। রাস্তায় কত গল্পের প্লট পাই । সেরকম ই একটার কথা বলি।
গাড়িতে যেতে যেতে রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধাকে দেখি কিছু খেলনা নিয়ে বসে আছেন । বিক্রি করতে। আমি ছেলেকে বলি একটু বাঁ দিকে সাইড কর , আমি নামবো ।
ছেলে ঃ সেকি ? বলে আঁতকে ওঠে !
আমি ঃ রাখনা গাড়ীটা সাইড করে ।
বাবা তুমি জানো কোলকাতার রাস্তায় গাড়ী পারকিং এর কত অসুবিধা । এখানে কি করে রাখি বলত ! তোমার মাথায় আবার ...........
রাখ । আমি যা বলছি শোন । আমি নামবো এখানে ।
সেকি ? কিন্তু এখান থেকে মনি স্কয়ার অনেকটা পথ। কি করে যাবে ?
সে আমি চলে যাবো । তোকে ভাবতে হবেনা।
গিন্নী পেছন থেকে বলেন “মাথায় গল্পের পোকা কামড়েছে” । কাউকে দেখেছে এখন তার সঙ্গে কথা বলতেই হবে। যত সব। আর পারিনা। অবসরের পর মানুষ ঠাকুর দেবতা করে , আশ্রমে যায় । তোর বাবার ও সবের পাট নেই । গল্পের ভূত মাথায় ঢুকেছে । যা পারছে তাই লিখছে।
শুভ চল ওর কথা শুনিস না । এখান থেকে ট্যাক্সি পাবে না। পায়ের ব্যথা হাঁটতেও পারবে না । কি করে যাবে শুনি ?
এই সময় সামনে ট্র্যাফিক সিগনাল টা লাল হতেই গাড়ি থামল । আমি বললাম তোরা চিন্তা করিসনা আমি বাড়ি চলে যাবো ।
ছেলে বলল এরকম জানলে আমি তোমায় নিয়ে আসতাম না ।
আর কে কার কথা শোনে । আমি এখন ঘোরে । পেছনে হাঁটা দিলাম ফুট ধরে । খানিকটা যেতেই বৃদ্ধাকে দেখতে পাই।
বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বলি , “ও মাসি কি বিক্রি করছ শুনি ?”
মাসি বলেন “ কেন বাপ তুমি কি কিনবে?”
হ্যাঁগো । তুমি জাননা আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব বলে ছুটে এসেছি ওইখান থেকে । বলে আঙ্গুল দেখিয়ে ট্র্যাফিক সিগনালের দিকে হাত দেখাই। ওখানে আমাদের গাড়িটা এখন আছে ।
মাসি তুমি এই বয়েসে এত কষ্ট করছ কেন ? তোমার কি কেউ নেই।
সব আছে বাপ , যে যার সে তার । এখন আমি বুড়ি হয়েছি আমাকে কে খাওয়াবে বল ? তাই ফুটের ধারে এই খেলনা বিক্রি করছি । তুমি নেবে ?
হ্যাঁ । ওই বাঁশীটা দাও , একটা ছোটা ভীম দাও , আরেকটা বেলুন।
মাসি সব দিয়ে বলল ,“কার জন্যে গো ! নাতি নাকি?”
হ্যাঁ নাতনী । ওর ছোটা ভীম খুব ভালো লাগে । আমি দিলে খুশি হবে।
আমার ও নাতি আছে। সে এখন কলেজে পড়ে । মাঝে মাঝে আসে আমার কাছে । খাবার দিয়ে যায় আর কিছু টাকা। না করতে পারিনা । নাতিটা বড্ড ভালো ছেলে । ওর মা’টা দজ্জাল । এক্কেবারে বজ্জাৎ ।
কেন ? টাকা বার করতে করতে বলি ।
আর বলনি-কো । আসা থেকে আমার ছেলেটার কানে কি মন্তর ফুঁকল জানিনা ..........
পেছনে শুভ আমার ছেলের গলা পেলাম । বাবা হল !
হ্যাঁ হ্যাঁ । মাসি তোমার কত হল । ১৯০ টাকা ।
আমি দুটো একশ টাকার নোট দিয়ে বলি বাকিটা রেখে দাও । আমি তোমার ছেলের মত ।
না বাপ আমি ভিক্ষা নি না। ভিক্ষা খুব অসম্মানের কথা। ওতে মানুষের মনুষ্যত্ব থাকেনা। দাঁড়াও দিচ্ছি তোমায় বাকি টাকা বলে একটা দশ টাকার কয়েন দিল।
আমি ত তোমায় ভিক্ষা দিচ্ছিনা মাসি । আমি তোমার ছেলের মতন ।
ছেলের মতন , ছেলে ত নয় । আমি ছেলের কাছ থেকেও টাকা নি না বাপ। তুমি দুঃখ করনা বাপ। এই যে তুমি এতগুলো জিনিষ কিনলে এই যথেষ্ট ।
আমি আশ্চর্য হই এই বৃদ্ধাকে দেখে । ৮৫ ঊর্ধ্ব বয়েস হবে কিন্তু আত্ম সম্মান জ্ঞান আছে। অথচ আমাদের দেশে বিজয় মাল্য ১৫,০০০ কোটি টাকা দেশের প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্ক থেকে লুট করে নিয়ে উধাও । দিব্বি বুক ফুলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা দেখতে গিয়েছে । লজ্জা ত নেই অপরাধ বোধ ও নেই। এরাই অমানুষ ভিখিরি । আর এই বৃদ্ধা ? এনারা বোকা মানুষ । এনার কখন কোন ভুল কাজ করতে পারেন না। তাই এরা বোকা মানুষ । এদের মধ্যে পাপ পুণ্য , ভালো মন্দ বিচার করার জ্ঞান ভগবান দিয়েছেন সৎ বুদ্ধি কিন্তু টাকা দেন নি। মনুষ্যত্ব টাই সবচেয়ে বড়। মানুষের মতন মানুষ হলে তার পুণ্য তোলা থাকে। একদিন না একদিন ঈশ্বর শুনবেন ই । শ্রী কৃষ্ণ সুদামার কথাই দেখুন।
মনটা ভারাক্রান্ত হল। আমার মা বেঁচে থাকলে ওই বয়েসের ই হতেন । তাই আমি মায়ের টানে গিয়েছিলাম মাসির কাছে। মাসির ভেতর আমার মা'কে খুঁজছিলাম ।
ফিরে গেলাম গাড়িতে । এখন অনেক কথা শুনতে হবে । আরও কিছুক্ষণ মাসির কাছে থাকার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু আমার ছেলে শুভ নিয়ে এল প্রায় জোর করে।
শনিবার বিকেলে আমার পরিবারের সঙ্গে কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাই । সেই রকম ই এক শনিবারের বিকেলে আমার ছেলের গাড়ীতে বেরুলাম ‘মনি স্কয়ার’ শপিং মল। একটা কথা মাথায় নাড়া দেয় ‘মল’ ! আরে ‘মল’ মানে ত বাংলায় ‘বিষ্ঠা’ ! সোজা বাংলায় “বিষ্ঠার দোকান” !! তবে ওখানে অত যাওয়ার কি প্রয়োজন বল ? আমার কথা কে শোনে ? বুড়ো হলে এই এক সমস্যা। বৌ , ছেলে , বৌমা , নাতনী সব যে যার তালে থাকে । আমার কথা শোনার ওদের সময়ের অভাব। ওরা রকমারি জিনিষ কেনে , আমার কিন্তু ওইসবে মন থাকে না। পার্থিব জগত থেকে একটু সরে মানুষের মনে ঝুঁকতে চেষ্টা করি। রাস্তায় কত গল্পের প্লট পাই । সেরকম ই একটার কথা বলি।
গাড়িতে যেতে যেতে রাস্তার ধারে এক বৃদ্ধাকে দেখি কিছু খেলনা নিয়ে বসে আছেন । বিক্রি করতে। আমি ছেলেকে বলি একটু বাঁ দিকে সাইড কর , আমি নামবো ।
ছেলে ঃ সেকি ? বলে আঁতকে ওঠে !
আমি ঃ রাখনা গাড়ীটা সাইড করে ।
বাবা তুমি জানো কোলকাতার রাস্তায় গাড়ী পারকিং এর কত অসুবিধা । এখানে কি করে রাখি বলত ! তোমার মাথায় আবার ...........
রাখ । আমি যা বলছি শোন । আমি নামবো এখানে ।
সেকি ? কিন্তু এখান থেকে মনি স্কয়ার অনেকটা পথ। কি করে যাবে ?
সে আমি চলে যাবো । তোকে ভাবতে হবেনা।
গিন্নী পেছন থেকে বলেন “মাথায় গল্পের পোকা কামড়েছে” । কাউকে দেখেছে এখন তার সঙ্গে কথা বলতেই হবে। যত সব। আর পারিনা। অবসরের পর মানুষ ঠাকুর দেবতা করে , আশ্রমে যায় । তোর বাবার ও সবের পাট নেই । গল্পের ভূত মাথায় ঢুকেছে । যা পারছে তাই লিখছে।
শুভ চল ওর কথা শুনিস না । এখান থেকে ট্যাক্সি পাবে না। পায়ের ব্যথা হাঁটতেও পারবে না । কি করে যাবে শুনি ?
এই সময় সামনে ট্র্যাফিক সিগনাল টা লাল হতেই গাড়ি থামল । আমি বললাম তোরা চিন্তা করিসনা আমি বাড়ি চলে যাবো ।
ছেলে বলল এরকম জানলে আমি তোমায় নিয়ে আসতাম না ।
আর কে কার কথা শোনে । আমি এখন ঘোরে । পেছনে হাঁটা দিলাম ফুট ধরে । খানিকটা যেতেই বৃদ্ধাকে দেখতে পাই।
বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বলি , “ও মাসি কি বিক্রি করছ শুনি ?”
মাসি বলেন “ কেন বাপ তুমি কি কিনবে?”
হ্যাঁগো । তুমি জাননা আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব বলে ছুটে এসেছি ওইখান থেকে । বলে আঙ্গুল দেখিয়ে ট্র্যাফিক সিগনালের দিকে হাত দেখাই। ওখানে আমাদের গাড়িটা এখন আছে ।
মাসি তুমি এই বয়েসে এত কষ্ট করছ কেন ? তোমার কি কেউ নেই।
সব আছে বাপ , যে যার সে তার । এখন আমি বুড়ি হয়েছি আমাকে কে খাওয়াবে বল ? তাই ফুটের ধারে এই খেলনা বিক্রি করছি । তুমি নেবে ?
হ্যাঁ । ওই বাঁশীটা দাও , একটা ছোটা ভীম দাও , আরেকটা বেলুন।
মাসি সব দিয়ে বলল ,“কার জন্যে গো ! নাতি নাকি?”
হ্যাঁ নাতনী । ওর ছোটা ভীম খুব ভালো লাগে । আমি দিলে খুশি হবে।
আমার ও নাতি আছে। সে এখন কলেজে পড়ে । মাঝে মাঝে আসে আমার কাছে । খাবার দিয়ে যায় আর কিছু টাকা। না করতে পারিনা । নাতিটা বড্ড ভালো ছেলে । ওর মা’টা দজ্জাল । এক্কেবারে বজ্জাৎ ।
কেন ? টাকা বার করতে করতে বলি ।
আর বলনি-কো । আসা থেকে আমার ছেলেটার কানে কি মন্তর ফুঁকল জানিনা ..........
পেছনে শুভ আমার ছেলের গলা পেলাম । বাবা হল !
হ্যাঁ হ্যাঁ । মাসি তোমার কত হল । ১৯০ টাকা ।
আমি দুটো একশ টাকার নোট দিয়ে বলি বাকিটা রেখে দাও । আমি তোমার ছেলের মত ।
না বাপ আমি ভিক্ষা নি না। ভিক্ষা খুব অসম্মানের কথা। ওতে মানুষের মনুষ্যত্ব থাকেনা। দাঁড়াও দিচ্ছি তোমায় বাকি টাকা বলে একটা দশ টাকার কয়েন দিল।
আমি ত তোমায় ভিক্ষা দিচ্ছিনা মাসি । আমি তোমার ছেলের মতন ।
ছেলের মতন , ছেলে ত নয় । আমি ছেলের কাছ থেকেও টাকা নি না বাপ। তুমি দুঃখ করনা বাপ। এই যে তুমি এতগুলো জিনিষ কিনলে এই যথেষ্ট ।
আমি আশ্চর্য হই এই বৃদ্ধাকে দেখে । ৮৫ ঊর্ধ্ব বয়েস হবে কিন্তু আত্ম সম্মান জ্ঞান আছে। অথচ আমাদের দেশে বিজয় মাল্য ১৫,০০০ কোটি টাকা দেশের প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্ক থেকে লুট করে নিয়ে উধাও । দিব্বি বুক ফুলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা দেখতে গিয়েছে । লজ্জা ত নেই অপরাধ বোধ ও নেই। এরাই অমানুষ ভিখিরি । আর এই বৃদ্ধা ? এনারা বোকা মানুষ । এনার কখন কোন ভুল কাজ করতে পারেন না। তাই এরা বোকা মানুষ । এদের মধ্যে পাপ পুণ্য , ভালো মন্দ বিচার করার জ্ঞান ভগবান দিয়েছেন সৎ বুদ্ধি কিন্তু টাকা দেন নি। মনুষ্যত্ব টাই সবচেয়ে বড়। মানুষের মতন মানুষ হলে তার পুণ্য তোলা থাকে। একদিন না একদিন ঈশ্বর শুনবেন ই । শ্রী কৃষ্ণ সুদামার কথাই দেখুন।
মনটা ভারাক্রান্ত হল। আমার মা বেঁচে থাকলে ওই বয়েসের ই হতেন । তাই আমি মায়ের টানে গিয়েছিলাম মাসির কাছে। মাসির ভেতর আমার মা'কে খুঁজছিলাম ।
ফিরে গেলাম গাড়িতে । এখন অনেক কথা শুনতে হবে । আরও কিছুক্ষণ মাসির কাছে থাকার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু আমার ছেলে শুভ নিয়ে এল প্রায় জোর করে।