Friday, January 15, 2016

সন্দেহ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বুধবার / ইং ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/



   সন্দেহ
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বুধবার / ইং ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/
অনেক কষ্টে এক ভাড়াটে পেলাম । Quicker . OLX . 99.com সব সাইটেই ফ্রি এড পোষ্ট করেছিলাম । শেষে ভাগ্য ভাল একটি ছোট্ট পরিবার, স্বামি স্ত্রী এবং তাদের এক মেয়ে ‘পায়েল’ আমার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকলো ।
বিনোদ ছেলেটি আমার ছেলের বয়সী হবে তবে বিহারী (এখন ঝাড়খণ্ডের) নাম বিনোদ পাণ্ডে বাড়ি রাঁচিতে এবং ওর স্ত্রী বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ কন্যা সুরূপা ব্যানার্জী বাড়ি বর্ধমানে । বিনোদ কিন্তু সুন্দর বাংলা বলে । কেউ বুঝতেই পারবে না ও অবাঙ্গালী বলে। প্রথমে আমার স্ত্রীর একটু আপত্তি ছিল ওদের ভাড়া দিতে কিন্তু আমি তাঁকে বুঝিয়ে বলাতে উনি শেষে রাজি হলেন । বাড়িটা আসলে স্ত্রীর নামে তাই উনি রাজি নাহলে কার সাধ্য ভাড়াটে বসায় । আমি বলি এরকম ত একছার হচ্ছে । বাঙ্গালী মেয়েদের অবাঙ্গালী বর আর বাঙ্গালী ছেলেদের অবাঙ্গালী বৌ । ঠিক আছে । বোঝা পড়া ঠিক হলে ক্ষতি কি ? আমাদের যুগের কথা আলাদা । এখন যুগ পাল্টেছে ছেলে মেয়েদের রুচি পাল্টেছে। বলেনা “সময় কা সাথ বদলো” । এখন আমাদের বদলাতে হবে যুগের সঙ্গে। তাছাড়া ওরা ভাড়া থাকবে ওদের বিবাহিত জীবনের সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক। ভাড়া দেবে বাড়িতে থাকবে ব্যাশ ।
মনে মনে ভাবি বিবাহ নামক অনুষ্ঠানটি প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছে কারন সত্যি এই অপচয় আজকালকার যুগে না হলেই ভালো । কি বলেন ? ওই পণ্ডিতের কিছু মন্ত্র উচ্চারণ আর ১০০ , ২০০ লোক খাওয়ানো যেন জমিদারের বাড়ি ! ওসব টাকা নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। আসল হল মনের মিলন আর সুখে স্বচ্ছন্দে সংসার করা । হোক না ভিন জাতের ভিন ধর্মের । আমার মতে বর কোনের মধ্যে ভালো বোঝা -পড়া থাকলেই সেটাকে সুখী সংসার বলে বলা উচিৎ । না হলে ওই মন্ত্র ফন্ত্রতে কি হবে বলুন ? এ সব কথা কিন্তু স্ত্রীকে বলিনি । রক্ষে করুন , কুরুক্ষেত্র সুরু হবে উনি শুনলে।
অগ্রিম ভাড়া দুমাসের রেখে ঘরখানি সম্পূর্ণ নতুন রং করালাম । যা যা ছোট খাট রিপেয়ারের প্রয়োজন ছিল সব ঠিক ঠাক করে চাবি দিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিলাম। এ যুগে ভালো ভাড়াটে পাওয়া ভাগ্যের কথা ।
বিনোদ আই টি সেক্টারে কাজ করে । ফিরতে প্রায় রাত ১ টা ২ টো বাজে । সেক্টার ফাইভ থেকে বাগুইহাটি । রাতে গাড়ি না হলে আসা অসম্ভব ব্যাপার । ওর নতুন মারুতি ব্যালেনো নিয়েই অফিস যায় আসে । বেশ পাকা হাতের চালানো ছেলেটার । ওর সঙ্গে আমার ছেলের অনেকটা মিল আছে , লম্বা ফর্শা গড়ন । সেই জন্য ওর প্রতি একটু বেশি স্নেহ উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। আমার মেয়ে নেই তাই সুরূপা কে আমি নিজের মেয়ের মত দেখি । আমাদের ফ্ল্যাট টা ওই কমপ্লেক্সের মধ্যেই তাই ছুটির দিনে ওরা প্রায় আমার ফ্ল্যাটে চলে আসে মেয়েটিকে নিয়ে। বেশ গল্প ,আড্ডা ,চায়ের আসর আর সুরূপার মধুর কন্ঠে অনুপম রায়ের লেখা চতুষ্কোণ ছায়া ছবির,“বসন্ত এসে গেছে” ।ভালোই লাগছিল । দিনগুলো বড় আনন্দে কাটছিল।
আমার ড্রাইভার না থাকলে মাঝে মাঝে বিনোদ আমাদের বুড়ো বুড়িকে শনি-রবিবার শপিং মলে নিয়ে যায়। কেনা কাটা সেরে আমরা ফিরি । এই ভাবেই চলছিল।
এরমধ্যে বিনোদ সুরূপার মধ্যে কিছু ব্যাপারে খটা খটি লাগে । হটাত একদিন শুনি সুরূপা মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে । ব্যাপারটা আমাদের জানার কথা নয় কিন্তু একদিন ওদের বাড়ির রান্নার মাসী এসে আমাদের জানায়,“বাবু আপনাদের ফ্ল্যটের চাবি দিতে বলে তিন দিনের জন্য কোথায় গিয়েছেন । তিনদিন পর উনি ফিরলে চাবি নিয়ে যাবেন।”
গিন্নী বলেন “কোথায় গিয়েছেন বলে গিয়েছেন ? সুরূপা কোথায় ?”
কাজের মাসী বলে , “বাবু বললেন , মা সেই আগের সপ্তাহে বর্ধমান চলে গিয়েছেন পায়েল কে নিয়ে”
সে কি ! আমাদের ত কিছুই বলে নি ।
আমি সঙ্গে সঙ্গে বিনোদ কে তার মোবাইল নাম্বারে ফোন করি । কিন্তু ফোন সুইচ অফ থাকায় পরে সুরূপা কে ফোন করি । কিন্তু কাউকে পাইনা ফোনে।
দুশ্চিন্তা বাড়ল । আমার ই যত জ্বালা । এই কমপ্লেক্সে অনেকেই ভাড়াটে রেখেছেন কিন্তু আমার ভাড়াটে দ্যাখ যত ঝুট ঝামেলা বাড়ায় । ভারি মুস্কিল কি করি ? এখন তিন দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই ।
রবিবার বিকেল ৫.৩০ নাগাদ কলিং বেলের শব্দে আমার নিদ্রাচ্ছন্ন ভাবটায় পূর্ণচ্ছেদ পড়ে । উঠে গিয়ে দোর খুলতেই দেখি বিনোদ সামনে । আমাকে প্রণাম করে বলে আঙ্কেল চাবিটা দিন।
আমি ওকে ভেতরে ডেকে বলি বস । এখন চা খাওয়ার সময় এসো চা খাই। গিন্নী ভেতরে দিবা নিদ্রায় । ওনাকে ব্যস্ত করা ঠিক হবেনা তাই নিজেই ইন্ডাক্সন হিটারে চায়ের জল চাপাচ্ছি - পেছন থেকে শুনি , “আদিখ্যেতা”
পেছন ফিরতেই দেখি দয়াময়ী পরম কল্যাণময়ী আমার স্ত্রী । দু চক্ষু থেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে ।
আমতা আমতা করে বলি ওই বিনোদ এসেছে ।
জানি । আমি কালা নই । আমি থাকতে তুমি লোক এলে কোনদিন চা করেছ যে আজ করছ ?
আস্তে শুনতে পাবে ।
এক গাল হেঁসে গিন্নী বিনোদকে বসাতে ড্রয়িং রুমে গেলেন। তারপর ওর কুশল কামনা করে সুরূপার কথা জিগ্যেস করেন।
বিনোদ যেন চুপসে গেল ওই কথা শুনে। বলল অ্যান্টি ও বাপের বাড়ি গিয়েছে কিছু দিন পরে আসবে। আমি চাবিটা নিতে এসেছি ।
ও তা বেশ । এই বলে চা করতে উঠছিলেন কিন্তু বাধা দিয়ে বিনোদ বলে অ্যান্টি আমি চা খাইনা । এখন অফিসে যেতে হবে । আজ ই ফিরলাম বাড়ি থেকে। চাবিটা দিন আমার রাত হবে তাই চাবিটা সঙ্গে রাখি । আমি উঠি কেমন। গিন্নী বাধা দিলেন না।
আমরা দুজনে বিনোদের দিকে তাকালাম । মনে হচ্ছিল ও একটা কিছু লুকচ্ছে এবং কিছু চিন্তায় মন ভারাক্রান্ত । কারন ও বেশ অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিল।
রাতে সুরূপার কাছথেকে ফোন এলো ।
হ্যালো অ্যান্টি আমি সুরূপা বলছি । বিনোদ পৌঁছেছে ?
হ্যাঁ মা ও এসে আমার কাছথেকে চাবি নিয়ে গিয়েছে।
ও ঠিক আছে। অ্যান্টি ওর সঙ্গে কি কেউ ছিল ?
না কেউ ছিলনা । কেন বলত মা !
না কিছু না। আপনারা ভালো থাকবেন । আমি আপনাদের বিরক্ত করলাম ।
না না সেকি মা । কবে আসবে তুমি ?
বলতে পারছিনা । তবে একটু দেরি হতে পারে ।
ও আচ্ছা ।
ফোনটা রেখে গিন্নী আমায় বলেন “কিছু বুঝলে?”
না কিছু বুঝিনি ।
ডাল মে কুছ কালা হ্যায় ।
মানে কালি ডাল ! সে কি ? সেত অনেক দিন আগে ‘শোলে’ ফিল্মে ছিল ।
নিকুছি করেছে তোমার শোলে ফিল্ম । যা বলছি তাই শোন ।
বল ।
গিন্নী তুমি কি ‘গোয়েন্দা গিন্নী’ দেখে ইন্সপায়ার্ড হচ্ছ । এরকম সন্দেহ হচ্ছে কেন তোমার ওই নিরপরাধ প্রাণি দুটির ওপর। ওরা কি করেছে ?
আমার ভালো ঠেকছে না বাপু । কিছু একটা হয়েছে দুজনের মধ্যে । এখন হুট করে বাড়ি ছাড়লে আবার ভাড়াটে কোথায় পাবো ?
হ্যাঁ তা ঠিক তবে ওদের স্বমী স্ত্রী র মধ্যে কি হল তাতে আমাদের কি?
তবে কি করতে হবে ?
ছেলে কে ফোন করতে হবে । ও বিনোদের বিষয় ঠিক খোঁজ নিয়ে বার করবে । ওর অনেক বন্ধু বান্ধব আছে বিনোদের কোম্পানিতে । দেখি আজ রাত্তিরে ফোন করে ও কি বলে।
যেমন বলা তেমন কাজ গিন্নীর । রাত ১১.৩০ এ ঠিক ফোন করতে যাবে ওমনি ফোনটা বেজে ওঠে ।
হ্যালো মা , আমি বাবাই বলছি । কেমন আছ তোমরা ?
ভালো । তুই কেমন আছিস বাবা ?
ভালো ।
শোন বাবা ওই বিনোদ বলে যে ছেলেটি আছে না তার বিষয় একটু জানার ছিল ।
আমি ওই ব্যাপারেই তোমাদের ফোন করছি । বিনোদ কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করতে পারে । আমার বন্ধু সার্থক বলছিল । ওর বৌ ত ওকে ডিভোর্স করবে বলে শুনলাম । তোমরা কিছু জানতেনা ? ওই মেয়েটার বন্ধু শালিনী বিনোদের প্রোজেক্ট এ আছে । ও বিনোদের বৌকে সব বলে দিয়েছে। তাই বিনোদ খুব আপ সেট । এমনিতে বিনোদ ছেলেটা খুব ভালো । ও ভালো স্টুডেন্ট ছিল। ও নাকি ওর দাদার ছেলেকে পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলে পড়াচ্ছে । ওর দাদা বৌদি গত হয়েছেন অনেক দিন এক রোড এক্সিডেন্টে । তাই বিনোদ ছেলেটির সব দায়িত্ব নিয়ে ওকে মানুষ করছে । সুরূপা বিনোদের মধ্যে এই নিয়ে খুব অশান্তি । সুরূপার সন্দেহ ওটা বিনোদের আগের পক্ষের বৌ এর ছেলে । সুরূপার সন্দেহ বিনোদ এই কথা গোপন করে সুরূপাকে ঠকিয়েছে । বোঝ ঠ্যালা । মেয়েদের মন সর্বদা সন্দেহে থাকে বিশেষ করে আই টি প্রফেশনে ছেলেদের ওপর । বিনোদ এই বিষয় সুরূপাকে আগে কিছু বলে নি অশান্তির ভয়ে। আমাকে সার্থক সব বলেছে । বিনোদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট সার্চ করে সুরূপা টেরপায় ,বিনোদ প্রায় প্রত্যেক মাসে পুরুলিয়া স্টেট ব্যাঙ্কে এক বিশেষ একাউন্টে টাকা পাঠায় ওর ভাইয়ের ছেলের জন্য । বিনোদ ওর ফ্যামিলির প্রতি সব কর্তব্য করে। ভাইয়ের ছেলেকে কে দেখবে ও না দেখলে ! এতে অন্যায় কোথায় মা ? আমি যা জানি , শালিনী বিনোদ কে বিয়ে করতে চেয়েছিল । বিনোদ পাত্তা দেয়নি । তাই শালিনীর বিনোদের প্রতি এই প্রতিশোধ । শালিনী বিনোদের ভাইয়ের ছেলের কথা প্রথম থেকেই জানতো । বিনোদ কে জিগ্যেস কর , ও কি একলা থাকবে না সুরূপা আসবে । যদি আসে কবে ?
সে কি ? তা শালিনী কেমন মেয়ে রে ! এরকম লাগানে জোটানে মেয়ে সাংঘাতিক ! ভাইয়ের ছেলে যদি সত্যি হয় তবে সেটা অন্যায় নয়। তা ছাড়া আমি দেখেছি বিনোদ সুরূপাকে ভালোই রেখেছে। ও শপিং মলে গেলেই খুব দামি দামি জিনিষ কিনে দেয় । মেয়েটার সর্বদা খাই খাই ভাব । বিনোদ মানা করেনা কোন কিছুতেই। বেচারা মেশিনের মতন টাকা রোজগার করে । ওর মেয়েটিকেও ভালো স্কুলে পড়াচ্ছে । মডার্ন হাই তে । খরচ ত আছে । কোন অভাব ই ত রাখেনি ছেলেটা । কি জানি বাপু আজকাল মেয়েদের কি সব হয় বুঝিনা । তা আমরা কি করব বল।
আচ্ছা। যদি বলে আসতে দেরি হবে !
আমি যাচ্ছি পরের সপ্তাহে । আমি সব ঠিক ঠাক করে দেব ।
সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছি । পরনে ট্র্যাক স্যুট আর ট্র্যাক সু । মাথায় মাফলার । আমার বন্ধুর সঙ্গে অদিতি মুন্সির কীর্তন গানের কথা হচ্ছিল। অদিতি মুন্সির গান শুনতে সারা বিশ্বের কীর্তন প্রেমীরা অধীর আগ্রহে বসে থাকেন টিভির সামনে। আমি ওর গান গুলি ভিডিও রেকর্ডিং করে আমার স্মার্ট ফোনে রেখেছি । লং ড্রাইভে গেলে ওই গান পথের ক্লান্তি দূর করে আর মনে দেয় অপার আনন্দ । ওর মধ্যে এক ঐশ্বরিক শক্তি আছে যা মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে । বাপি লাহিড়ী বলেই দিয়েছেন ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল । ও আর দুর্নিবার এক বিরল প্রতিভার অধিকারী । প্রথম দিন থেকেই অদিতি মাতিয়ে রেখেছে সকলকে । কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে-গেলাম আমার মর্নিং ওয়াকের বন্ধু শুভদিপকে । আমরা এক ই বয়েসি । তাই বন্ধুত্ব ।
ঘরে ফিরে দেখি বাবাই এসে গিয়েছে । মা ব্যাটাতে অনেক দিনের ব্যবধানে অফুরন্ত জমে থাকা গল্প চলেছে চা জলখাবার খেতে খেতে। ছুটলাম দিশি মুর্গী আনতে । বাবাই ওটাই পছন্দ করে । কালা মিয়াঁর দোকানে বেশ ভিড় । ও আমাকে দেখেই বুঝেছে আমার মনের কথা । আহা ঈশ্বর কালা মিয়াঁকে পাঠিয়েছেন চপার হাতে আমাদের মতন মুর্গী রসিকদের রসনা তৃপ্ত করতে । বলা বাহুল্য কালো মোরগ এর টেস্ট ই আলাদা । পালক সমেত এক কিলো তিনশো গ্রাম মানে ড্রেসিং এর পর দাঁড়াবে কাঁটায় কাঁটায় এক কিলো । পারফেক্ট । চলে এলেম দাদা ঠাকুরের গানটা মনে করে ,“আমি মুর্গী হাটায় চুপ করে জাই কিনতে রাম পাখি...পথে দেখি সারি সারি ষ্টেশনারী আসল জিনিস ফাঁকি .....”
ঘরে ফিরে দেখি বিনোদ আমাদের বাড়িতে বাবাইয়ের সঙ্গে কিছু একটা সিরিয়াস টপিক নিয়ে আলোচনারত । বাবাই এসে গিয়েছে আমি আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিনা। হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা গিন্নীর হাতে দিয়ে হাত ধুতে যাচ্ছি .... গিন্নী বলেন রসুন পিঁয়াজ আননি কেন ?
আমি বলি বাটার চিকেন করে-দাওনা । ওটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো ।
বাটার চিকেন কি বিনা বাটারে হবে ?
আঃ কি হচ্ছে মা ! আমি এনে দেব এখন , বাবাই বলে।
আমি নিশ্চিন্ত হয়ে সিনিয়ার সিটিজেন ক্লাবে চলে যাই এক হাত তাস খেলতে। এখন দু ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত ।
ঘরে ফিরলাম দেড়টার সময়। বাবাই , বিনোদ কে লাঞ্চে ডেকেছে । ভালোই করেছে । ওদের দেখলে দু ভাই মনে হয় । বাবাই , ‘আরসালানARSALAN’ এর বিরিয়ানি সঙ্গে মটন কিমা আর ‘সেন মহাশয়ের’সন্দেশ এনেছে। অনেক দিন পর ভুরি ভোজ হবে ।
আমার পাতে দেখলাম দুটো তাওয়া রুটি , ভেজি-টেবিল সুপ আর চার পিস বাটার চিকেন । মিষ্টি খাওয়া বারণ , মাংস ত একদম ই নয় । বাবাই বিনোদ সুস্বাদু খাওয়াতে মত্ত । আমি মনে মনে “মাগো আনন্দময়ী নিরানন্দ করনা গানটা গেয়ে লাঞ্চ সেরে উঠে পড়লাম। ওদের দিকে তাকিয়ে হাঁসি মুখে বলি আমি এবার উঠি তোমরা খাও বাবা ।
বিনোদ বলে সেকি আঙ্কল আপনি ত কিছুই খেলেন না ।
না মানে আমার শরীর ত ভালো নেই । সুগার হাই আবার হাইপার টেনশন তাই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ডায়েট কন্ট্রোল । বুঝতেই পাচ্ছ । তুমি নিশ্চিন্তে খাও । আমি উঠি কেমন।
দুপুরে বাবাই মাকে বলল , মা ঘাবড়ানোর কিছু নেই । বিনোদ অন সাইটে যাচ্ছেনা শুনলাম। ও কোম্পানিও পালটাচ্ছেনা । ও সব গুজব। ওদের মধ্যে একটু মন মালিন্য হয়েছে । সেটা বিনোদ ভাং-লোনা । ও ঠিক হয়ে যাবে । ঘর ছাড়ছেনা কারন ও রাজার হাটে একটা ফ্ল্যাট বুক করেছে তার ই এম আই চলছে । সেটা না শোধ হওয়া পর্যন্ত আমাদের ফ্ল্যাটেই থাকবে। ও সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার এ প্রমোশন পাচ্ছে। ভালোই মাইনে । তোমরা কিছু চিন্তা করনা। আমি আজকের ফ্লাইটেই ফিরে যাবো বিকেলে ৫.৩০ তে।
এদিকে সুরূপার বাবা পুরুলিয়াতে গিয়ে বিনোদের ভাইপো বিজয় পাণ্ডের সব ডিটেলস জোগাড় করেন সৈনিক স্কুলের এক কেরানীকে হাত করে। ওনারা নিশ্চিন্ত হন এই ব্যাপারে যে ওই ছেলেটি সত্যি সত্যি বিনোদের ভাইপো । ওর বাবার নাম প্রমোদ পাণ্ডে , মা সঙ্গীতা পাণ্ডে । ওনাদের সত্যি সত্যি রোড এক্সিডেন্টে ই মৃত্যু হয়। বিনোদ ই এখন বিজয় এর বাবা মা অভিভাবক সব । সুরূপার বাবা সিদ্ধান্ত নেন সুরূপাকে নিজে বিনোদের কাছে পৌঁছে দেবেন।
আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম যেদিন কিনা সুরূপার বাবা আসবেন। এই সুবাদে ওনার সঙ্গে আলাপ হয়ে যাবে।
সকাল সকাল একটা ‘ওলা OLA’ ট্যাক্সি এসে হাজির । ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে এক প্রবীণ ভদ্রলোক সঙ্গে সুরূপা । আমি মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরেই দেখি ওদের । সুরূপা আমায় দেখে হাঁসি মুখে আলাপ করিয়ে দেয় ওর বাবার সঙ্গে । কর মর্দন করে দুজনে দুজনকে উইশ করি । আমি ওনাকে চায়ের নিমন্ত্রণ করি বিকেলে । ভদ্রলোক বলেন আজ ই উনি ফিরে যাচ্ছেন তাই পরে অন্য কোন দিন আসবেন।
ভুল বোঝা বুঝি বিবাহিত জীবনে একটু আধটু সবার ই হয় সেটাকে নিজেদের মধ্যে সমাধান করাটাই বাঞ্ছনীয় । এখন বিনোদ সুরূপা সুখী দম্পতী । আমি খুব খুশী ওদের দেখে। সুরূপা বিনোদের কাছে ক্ষমা চায় তার অহেতুক সন্দেহর জন্য । বিনোদ সাদা মাটা ছেলে ও হাঁসি মুখে সব ভুলে যায় । আমি চাই ওরা সুখে স্বচ্ছন্দে সংসার ধর্ম পালন করে আনন্দে থাকুক ।

Thursday, January 14, 2016

টকিং বার্বি ডল ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ১৫.১.২০১৬



   
টকিং বার্বি ডল
 
ছোট্ট মেয়েটা নাম তার  'দীপান্বিতা'  । আমার নাতনীর বয়সী হবে।আমাদের আবাসনেই থাকে আমার বাড়ির পাসে । তার ৫ম জন্মদিন ১লা জানুয়ারি তে। আমাকে দু মাস আগেই বলে রেখেছে দাদু , আমার জন্মদিন ১লা জানুয়ারিতে । তুমি কিন্তু আমাকে গিফট দেবে । আমি মা বাবাকে বলে  তোমার পছন্দর খাবার আনাবো।
আমি বলি  নিশ্চয়ই মা। তুই তো আমার আহ্লাদী ঠাকুমা । তোকে গিফট না দিলে কাকে দেব বল !
হুম মনে থাকে যেন ।
ঠিক আছে মনে থাকবে দেখিস। তবে আমি যদি তার আগে মরে যাই ।
বালাই শাঠ ও কথা বলছ কেন  । তুমি না থাকলে আমায় গল্প কে শোনাবে? পাকা বুড়ির মত বলে।
তবে তোকে গল্প শোনাবার জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হবে !
 তা কেন । তুমি শুনিও না কিন্তু তুমি থাক নাহলে আমিও তোমার সঙ্গে চলে যাব আকাশে।
দূর বোকা মেয়ে । তবে ওই পক্ষী রাজ ঘোড়া চড়ে তোর অস্ট্রেলিয়ান রাজকুমার যে মেলবোর্ন থেকে আসবে সে কাকে নিয়ে যাবে তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া য়।
খুব রেগে যায় । তুমি খুব বাজে । ও আমার বন্ধু ।  আমাকে না রাগালে তোমার বুঝি ভাত হজম হয়না?
আমি হাঁসি । খুব মজা পাই ওকে রাগাতে আবার ও নাহলেও চলে না । ওই ত আমার প্রকৃত বন্ধু। 
অস্ট্রেলিয়ান রাজকুমার এর সিক্রেট  হচ্ছে .... ওর ই স্কুলের এক ছেলে তার জন্ম অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে । সে নাকি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড । তাই এই রসিকতা। ওই বলেছিল সে কথা । ছেলেটি দেখতে ভারি সুন্দর কিন্তু ও আসলে মহারাষ্ট্রিয়ান । নাম অমিত আকোল্কার । 
এই অমিতকে নিয়ে দীপান্বিতার যত গল্প । ও কি টিফিন আনে , স্কুলে টিচার ওকে কি বলে। কেমন ড্রইং করে ইত্যাদি।
আমি চুপ করে শুনি । মাঝে মাঝে হুঁ  বলি । তারপর বলি তোর বেষ্ট ফ্রেণ্ড দের ডাক-বিনা ?
ডাকব তো । চকলেট দেব, গিফট দেব । আরও কত কি ।
আজকাল বাবা মায়েরা , ছেলে মেয়েদের জন্মদিন ইউরোপিয়ান স্টাইলে ওদের ধারায় করে । আমাদের আমলে বাবা মা নতুন ড্রেস পরিয়ে মন্দিরে পূজো দিতেন । সেদিন একটা বিশেষ দিন বলে গণ্য হত ।  বাড়িতে পায়েস নিশ্চই হত । সেটা মুখে দিয়েই মা বাবা আশীর্বাদ করতেন । গড় হয়ে প্রণাম করে তাঁদের আশীর্বাদই সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল।  সে রীতি প্রায় নেই । এখন কেবল কেক কাটা আর গিফট নেওয়া পরে গিফট দেওয়া । বেলুন দিয়ে সাজানো, লাইটের ডেকোরেশন ইত্যাদি।
......... দিপুরা (আমি ওকে এই নামি ডাকি) বেশ কদিন হল  কোথায় গিয়েছে । আমি কোন খবর পাইনা ওদের। মনে মনে খুঁজি । আহা মেয়েটার ওপর মায়া পড়ে গিয়েছে । ওর টক টক কথা , চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচ আমার মন কেড়ে নিয়েছে।  ওর মা বাবা কেও দেখিনা কদিন। মনে মনে ভাবি হয়ত স্কুলের পড়াশুনোর চাপ। তারপর নাচের  ক্লাস ,গানের ক্লাস , ড্রইং ক্লাস , ক্যারাটের ক্লাস ...... । সত্যি আজকাল মা বাবারা নিজেদের ছেলে মেয়ের ওপর এতো প্রেশার দেয় যে তাদের নিজের মতন বাঁচার অধিকারটুকু যেন ছিনিয়ে নেয় । সব এক একটা রোবটে পরিণত হচ্ছে আর সেই রোবটের রিমোট টা আছে মায়ের হাতে । যেমন বোতাম টিপবে ঠিক সেই রকম চলবে । খাও খাবে ... নাচো নাচবে ... গান কর গান করবে ...!!!!! এ কি ?   
 আমার মনে আছে কিন্তু দিপুর কথা । ওর বার্থ ডে গিফটের ফরমাসটকিং বার্বি ডল সেটা নিয়েই যাই ১লা জানুয়ারির দিন সন্ধ্যায় । কিন্তু একি ফ্ল্যাট টা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন ? কেউ কি নেই ! লোকজন ত থাকার কথা । মিউজিক ,লাইট সব কোথায় ? তা ছাড়া কোন লোক জন নেই । তবে কি ওর বার্থ ডে পার্টি  হবেনা ! কিন্তু কেন?  এই ভেবে মনটা এক অজানা আশংকায় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে ফ্ল্যাটের  কলিং বেল টিপলাম। দরজা খুলে দিলেন ওর বাবা । আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । উনি বললেন , “দিপুর ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছে । ওরা মুম্বাই গিয়েছিল ওকে দেখাতে আশা ক্যানসার হসপিটাল এন্ড চিলড্রেন হসপিটাল এবং টাটা ক্যানসার হসপিটাল , মুম্বাইতে। কেমো দেওয়া হয়েছে। ওকে দেখলে চিনতে পারবেন না।
আমি আর দুঃখ রাখতে পারলামনা। ও যে আমাকে বলেছিল আমার সঙ্গে আকাশে চলে যাবে । তবে কি ও জানতো ওর রোগের কথা ! ওর সেদিনের কথাগুলো আমার ভিডিও রেকর্ডিং এর মত চোখের সামনে ভেশে উঠলো বালাই শাট ও কথা বলছ কেন  । তুমি না থাকলে আমায় গল্প কে শোনাবেতবে তোকে গল্প শোনাবার জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হবে !"  আমার চোখ ভারাক্রান্ত হল। আমি কেঁদে ফেললাম হাউ হাউ করে । ভগবান কেন এই কচি শিশুদের এই ভয়ংকর রোগ দেন ! কেন আর কিছুই আমার মাথায় এলোনা তখন  কিছু না বলে দিপুর বাবার হাতে বার্বি টকিং ডলটা দিয়ে বলি এটা ওকে দিয়ে দেবেন । এটাই ও চেয়েছিল। মানা করবেন না । ওই আমার প্রাণের বন্ধু । এই বলে দ্রুত পায়ে ওখান থেকে ফিরে আসি আমার নিজের ফ্ল্যটে । সারাদিন আমি ঠাকুর ঘরে গিয়ে ওর আরোগ্যের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি । আমি কি করতে পারি এ ছাড়া !     

Wednesday, January 6, 2016

অনুচিন্তা ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৪.০৮.২০১৫



   অনুচিন্তা 
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৪.০৮.২০১৫ 

শনি রবিবার আমাদের বেড়ানোর দিন। যেখানে মন চায় বেড়িয়ে আসি । সাধারণত মন্দির , ঠাকুর দর্শন ই বেশি হয় । গত শনিবার দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে মায়ের দর্শনে গেলাম । এখন মায়ের মন্দির আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে । একটা ব্যাপার বড় দৃষ্টি কটু লাগলো । সেটা বলতে খারাপ লাগছে ভিখিরিদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । কাল ই এক পরিসংখ্যান বিবৃতি দেখলাম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ তে । পশ্চিম বঙ্গে নাকি ভিখিরির সংখ্যা ৮১০০০ এবং তাও আবার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে প্রথম । খুব খারাপ লাগলো ব্যাপার টা যেনে । মন্দিরে প্রবেশের আগে ফুটের ধারে কিছু ভিখিরির মধ্যে একটি ১০-১১ বছর বয়েসের মেয়েকে দেখি আমার কাছে এসে বলতে, “বাবু আমার মা বাবা দুজনেই মারা গিয়েছেন । আমি ক্লাস সেভেন এ পড়তাম । এখন কি করি , পড়া ত দুরের কথা নিজে কি খাবো কি পরবো তার চিন্তায় থাকি। ভাড়া বাড়ি থেকে বাড়ি-বালা তাড়িয়ে দিয়েছেন । যা ছিল সব ভাড়া বাবদ রেখে দিয়েছেন । আমাকে সাহায্য করুন বাবু । আমি আপনার মেয়ের মত”
মেয়েটি যদি সত্যি বলে থাকে তবে করুন । আমার মনে হল মেয়েটি সত্যি অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা । ও ভিখিরি নয় কিন্তু হয়তো পরিবেশের চাপে ভিক্ষা বৃতি করতে বাধ্য হতে পারে যেটা সমাজের জন্য কলঙ্ক । প্রশাসন কিম্বা কোন সহৃদয় ব্যক্তি বিশেষ এই সমস্যার সমাধান করতে পারলে ভালো হয়।
আমি বলি , তুই কি সত্যি পড়তে চাস !
মেয়টি বলে , হ্যাঁ ।
কোন হস্টেলে যদি থাকার সুবিধে হয় সেখানে থেকে পড়াশুনো করবি ?
ও বলল হ্যাঁ কেন করবোনা বাবু ।
তবে শোন আজ আমার কাছথেকে ৫০ টাকা রাখ । ওই দিয়ে কিছু খেয়ে নিস। ভিক্ষা করিসনা । আমি তোকে আদ্যা মা’য়ের আশ্রমে ভর্তি করে দেব। ওখানে থেকে তোকে পড়াশুনো করতে হবে কিন্তু ।
মেয়েটির চোখথেকে জল গড়িয়ে পড়ে । আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে ।
আমি বলি থাক থাক । ওসবে প্রয়োজন নেই । মা’কে প্রণাম কর উনি তোর সব দুঃখ হরণ করবেন । মা’কে মন দিয়ে ডাক দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে । দূর থেকে গিন্নী সব লক্ষ্য করছিলেন । আসলে উনি ত আমার সব ব্যাপার ই জানেন । এসব বিষয়ে উনি কোন দিন বাধা দেন নি ।
আমি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট কে ভুল বলে প্রমাণিত করতে চাই । পশ্চিম বঙ্গে যথেষ্ট মেধা আছে হয়তো আমাদের ছেলে মেয়েদের পকেটে পয়সা নেই । এই মেধাগুলোকে একত্রিত করতে পারলে ভারতের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করবে প্রগতি এবং বিদ্যা বুদ্ধিতে । আবার সেই দিন ফিরে আসুক “What Bengal thinks today India thinks tomorrow” । এটাই আমার স্বাধীনতা দিবসের ইচ্ছা এবং জন্ম ভূমির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

ছোট গল্প ‘মুন্নী’ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী /২২.১১.২০১৫



   ছোট গল্প ‘মুন্নী’
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী /২২.১১.২০১৫  
 
মাসিমা মুন্নীর বিয়ের জন্য পাকা দেখা । পরশু ওকে দেখতে আসবে ওর ভাবি শ্বশুর আর বর । আমি দু দিন কাজে আসতে পারবোনা কিন্তু ।
 
... মুন্নীর বিয়ে সেকিরে ওরতো মোটে ১৪ বছর বয়েস । এই সবে স্কুল ফাইনাল দিল । এরমধ্যেই ওকে বিয়ে দিয়ে দিবি । ভালোই-ত পড়ছিল মেয়েটা । আমি তোকে বলে রেখেছি পাস করলে ঘড়ি কিনে দেব আর কলেজে ভর্তি করতে যা খরচ হয় দেব । তবুও তোর ওই টুকু মেয়েটার বিয়ে না দিয়ে তর সইছেনা । বলিহারি জাই বাপু তোদের ।
 
কি করবো যা দিনকাল পড়েছে ঘরে সমত্ত মেয়ে রাখা বিপদ 
। ওর বাবা কাজে চলে জায় ফেরে রাতে। আমি ফিরি বেলা তিনটের পর । ঘরে সমত্ত মেয়ে । পাড়ার ছেলেগুলো ভালো নয় । মেয়েটা ডাগর হয়েছে তাই ওদের ছুঁক ছুঁকুনির শেষ নেই । খালি ঘরের সামনে ঘুর ঘুর করে । মেয়েটাকে যে সামলে রাখব তার উপায় নেইকো । কি করি বলেন ? 
তা বলে ১৪ বছরের মেয়ের বিয়ে দিবি ! তোকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাবে জানিস । তুই আসার সময় ওকে নিয়ে আসতে পারিস । আমার ঘরে না হয় থাকবে পড়াশুনো করবে । আমারও একটা কথা বলার লোক থাকবে সঙ্গে । আমার ঘরে আমি যা খাই না হয় তাই খাবে । ওকে এই বয়েসে বিয়ে দি-সনা মা । আমার কথা শোন । পড়াশুনো করা । তুই কি চাস ও তোর মতন পরের বাড়ি বাসুন মেজে জীবন টা কাটাক ।
 
আমার চাওয়া পাওয়ার কি এসে যায় মা । সব ই অদৃষ্ট । মুন্নীর বাবা জামাই দেখে এসেছে । একটা পাস সেও করেছে । বাবার দোকান সামলায় । ভালো ছেলে । এই ছেলে হাত ছাড়া হলে পরে হাত কামড়াবো ।
 
ছেলের বয়েস কত ?
 
তা শুনলাম ২৮ হবে। একটা চোখ ট্যারা । তা হোক ব্যাটা ছেলের আবার খুঁৎ ধরে নাকি ?
 
কি বলিস রে!” গিন্নী গালে হাত দিয়ে বলেন ।
 
পাসের ঘর থেকে সব কথা কানে আসছিল । আমি আর থাকতে পারলামনা ।
 
বললাম,“মঞ্জু এদিকে আয় । এইনে দড়ি আর এই নে কলশী ... তোদের বাড়ির সামনে কুয়োতে তোর মেয়েকে গলায় দড়ি বেঁধে কলশি সমেত ডুবিয়ে দে ...চুকে গেল ল্যাঠা । লজ্জা করেনা তোদের বাচ্চা মেয়েকে জবরদস্তী বিয়ে দিতে । মেয়েদের বয়েস ১৮ না হলে বিয়ে দেওয়া আইন বিরুদ্ধ কাজ। সাজা হবে তোদের দুজনের ওই ট্যারা বর আর ওর বাবা মায়ের । পুলিশে আমি নিজে খবর দেব । দেশটা উচ্ছন্নে গেল এই মূর্খদের জন্য । পশ্চিম বংগ কি বিহার ইউ.পি.র অধম হল । এখন ও বাল্য বিবাহ উচ্ছেদ হোলনা? ”
 
মঞ্জু আমার গলার আওয়াজে ঠক ঠক করে কাঁপে । বুঝেছে আমি খুব রেগে গিয়েছি ।
আ...আমি কি করি বলেন .. কাঁদতে কাঁদতে বলে। আমি কি চাই কচি মেয়েটারে বিয়ে দিতে । তার বাবা সব ঠিক  করেছেন । আমার কি দোষ । আমিতো গতর খাটিয়ে খাই দুমুঠো । আমারে কেন বকছেন মেসো?
 
আমি গলা নামিয়ে বলি, “যা তোর বরকে বোঝা । এ সব বিয়েতে না মেতে মেয়েকে ১২ ক্লাসে ভর্তি কর। তোর মাসি ভর্তির জন্য যা লাগে সব টাকা দেবে । খাতা ,বই , টাকা যা লাগে সব দেব আমরা । ওকে পড়া মা । আমার কথা শোন” 
  
মঞ্জু চলে যায় । মঞ্জু যাওয়ার পর গিন্নী খেঁপে গিয়ে বলেন তোমার এর মধ্যে নাক গলানোর কি ছিল এখন যদি ও না আসে কি হবেআমি ত খেটে খেটে মরবো । তোমার আর কি!
আমি বলি ,“তুমি চিন্তা করনা ও ঠিক আসবে”। 
 
মঞ্জু গিয়ে বরকে সব বলে ।
 
বর শুনে বলে ওনাদের আর কি টাকার গদিতে বসে আছেন । ঘরের কাজ তুই করে দিচ্ছিস । গতর ত আমাদের যাচ্ছে ওনারা মাস গেলে দুটো ৫০০ টাকার নোট ছুঁড়ে দিচ্ছেন । ব্যাস নিশ্চিন্ত । আমরা গ্রীষ্ম বর্ষা শীত সব সহ্য করে ভোর বেলায় ছুটি ওনাদের বাড়ি কাজে । ওনারা ঘুমের ঘোরে দরজা খোলেন ব্যাস । তারপর তুই তো ওনাদের ঘরের কাজটা করিস ... না কি আসলে মুন্নীর পড়ার খরচ দিয়ে ওনারা তোকে পুরো পুরি ওদের ঘরে বেঁধে রাখতে চান যাতে তুই অন্য কোথাও না গিয়ে ওনাদের ঘরের কাজ ই করিস।ওনারা বিনা স্বার্থে কিছু করেন না জেনে রাখিস 
 
ও মা সে কি কথা ওনারা ওরকম লোক নন। মাসি মেসো আমাদের বাড়ির জন্য চিন্তা করেন । তোমার বাবা মারা যাওয়াতে ওনারা টাকা দেন নিতোমার চোখের অসুখে টাকা দেন নিমেসো নিজে টাকা দিয়ে বলেছিলেন এই টাকা তোকে দিতে হবে না মঞ্জু। হ্যাঁ আমি ওনাদের বাড়িতে কাজ করি আমার পেটের দায়ে আমার বাড়ির জন্য । আমার ঘর চলবে কি করেএকা তোমার রোজগারে কি ঘর চলবে ওরকম কথা বলে ওনাদের সঙ্গে বেইমানী করতে পারবো না ।
 
মুন্নীর বিয়ে হলে তুই ঘরে থাকিস আর তোকে যেতে হবে না পরের দুওরে বাসুন মাজতে ।
 
শোন কথা ! বরং মুন্নী বাড়িতে থাকার সময় আমার এই ঘরে থাকার কথা । আমি থাকলে কি ওই বকাটে ছেলেগুলোর সাহস হত আমার ঘরে উঁকি মারার। মেয়েটার স্কুলের পরীক্ষা শেষ হয়েছে একটু যে ঘরে থাকবে তার উপায় নেই । আমার বাপু ভয় করে। তুমি কিছু অন্য উপায় কর । না মেয়েটাকে বিয়ে দিও না । থাক না আর দু চার বছর পরে না হয় দিও । ও কি করবে এই কাঁচা বয়েসে ?
 
এখন বিয়ে না দিলে পরে তোর মেয়ের ল্যাজ মোটা হয়ে যাবে । দুটো পাস করলেই নাক উঁচু করবে । আমি কোথা থেকে ওর বিয়ে দেব তখন আমার কাছে টাকা নেই । এখন মালিক রাজি হয়েছেন ১০০০০ টাকা আগাম দেবেন বলে । ধার দেনা করে আরও ১০০০০ যোগাড় করবো । মুন্নীর নামে পোষ্ট অফিসে ২০০০০ আছে । তোর সোনার গয়নাগুলো ........
 
মঞ্জু কথা থামিয়ে উঁহু ওটি হবে না । আমি টাকা জোগাড় করে দেব যা দেওয়ার । আমার সময় অসময়ে কে দেবে টাকাভালো মন্দ হলে সব সময় কি মেসো মাসি দেখবেন ?বিয়ে শাদিতে নেই নেই করে ১ লক্ষ টাকা কিছুই না । গ্রামের লোকজন আছেন । শাড়ি গয়না লোক লৌকিকতা তত্ত্ব তালাস কত কি খরচ । মেয়ের বিয়ে কি চাট্টি খানি কথা?”
 
তাহলে তুই বরং ওকে তোর বোনের বাড়ি টাকি’ তে পাঠিয়ে দে । ওদের ওখানে অনেক জমি জমা আছে । চাষ বাস আছে । কোন অভাব নেই । ওখানে না হয় কিছু দিন থাকুক । আমি এর মধ্যে জামাইয়ের বাড়ি থেকে কিছু সময় নিয়ে নি । তবে ওরা গর রাজি হলে কি করবো ?
 
মুন্নীকে ওর মেসো টাকি’ থেকে এসে নিয়েযায় ওঁদের বাড়িতে । মুন্নীর ওখানে মাসতুতো ভাই শোভনের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায় । শোভন টাকি সরকারী মহাবিদ্যালয়ে পড়ে বি.এস.সি কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে। শোভন মুন্নীকে সাইন্স নিয়ে ওদের ই কলেজে ভর্তি হতে বলে। মুন্নীর রেজাল্ট ভালই ছিল মাধ্যমিকের । শোভন বলে কোন অসুবিধে হবে না সাইন্স পড়তে। তা ছাড়া ও আছে ওকে গাইড করতে। মুন্নী জেন আকাশের চাঁদ পেল এখানে এসে । এত আপন করে ফেলেছিল ওরা মুন্নীকে যে মুন্নী বুঝতেই পারলনা ও বাড়ি ছেড়ে আছে বলে। স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট মার্ক শিট সব সঙ্গে নিয়ে এসেছিল । এমন সুন্দর দাদাকে পেয়ে ও সত্যি কৃতজ্ঞতা জানাল সকলকে । চোখ ছল ছল করে মাসীকে বলে , “তোমরা না থাকলে আমার বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিত আমার চেয়ে অনেক বয়েসে বড় এক লোকের সঙ্গে । সারা জীবনের জন্য পড়াশোনা শিকেয় তুলে এক লাঞ্ছিত জীবন অতিবাহিত করতে হত ঘর সংসারের জন্য। আমি আমার মাকে দেখেছি । মা কি সাংঘাতিক পরিশ্রম করে আমার পড়ার জন্য। আমি তোমাদের ঋণ কি করে শোধ করবো ? ”
 
মাসী বলেন .. থামত । এই টুকু মেয়ের কথা দেখ ! ওরে আমরা কি তোর কেউনা । হলাম ই বা তোর মাসী .. তবে সর্বনাশী নই বলে বুকে টেনে নেন মুন্নীকে । তুই আমাদের মেয়ে । এখানেই থাকবি । পড়াশুনো করে নিজের পায়ে দাঁড়াবি । আমি জানতাম তোর বাবার মতলব । মেয়েকে ঘাড় থেকে নামাবার জন্য এই কচি বয়েসে কেউ বিয়ে দেয় ! কি যে মতি গতি জানিনা বাপু।
মুন্নী ওর দাদার সঙ্গে টাকি সহরের কাছে ইছামতী নদীর ধারে যায় । ওখানে সুন্দর বসার জায়গা আছে। ওপারে বাংলা দেশ । শোভন মুন্নীকে বোঝায় এই ইছামতী নদী ভারত বাংলা দেশের সীমা রূপে পরিগণিত হয়। ইছামতী তিন ভাগে বিভক্ত ১. পদ্মা নদীর শাখা নদী মাথাভাঙা থেকে এই ইছামতী নদী ২০৮ কিলোমিটার বয়ে হাসনাবাদের কাছে কালিন্দী নদীতে মিলিত হয়। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মুন্সি-গঞ্জের কাছে পদ্মা নদীর দক্ষিণ দিক থেকে বেরিয়ে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার মজি-দিয়া তে আবার দুভাগে বিভক্ত হয় ইছামতী এবং চুরনি নদী রূপে । ২. ভারতে ১৯.৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে ইছামতী আবার বাংলাদেশের মুবারক-পুরের কাছে মোড় নিয়ে বাংলা দেশে প্রবেশ করে। প্রায় ৩৫.৫ কিলোমিটার বাংলা দেশে প্রবাহিত হয়ে আবার ৩. পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার দত্ত-ফুলিয়াতে এসে পড়ে । এই নদীর প্রাধান্য অনেক কারন এটাই ভারত বাংলা দেশের সীমা নির্ধারণ করে। ইচ্ছানুসারে নদীর মোড় তাই বোধ হয় ইছামতী নাম করন । অবশ্য এটা আমার মনে হয়।
মুন্নী খুব পরিতৃপ্ত নয়নে তার দাদার দিকে তাকিয়ে বলে ,“তুমি আমাকে কত কিছু বোঝাচ্ছ দাদা । প্রত্যেকটা কথা সুন্দর ভাবে বোঝাচ্ছ । এরকম ভাবে আমাকে কেউ বলে দেওয়ার ছিলনা । আমার সৌভাগ্য আমি তোমার মত দাদা পেয়েছি। এখানে না এলে আমার কি হত দাদা?”
... দূর বোকা মেয়ে । সব সময় মনে রাখবি ওপরে ভগবান আছেন । মানুষের সুখ দুঃখ তিনি ই নির্ণয় করেন । তাঁর প্রতি ভক্তি ভাব রেখে সব কাজ করলে তোর চলা পথ সরল হবে । কোন দুঃখ দুর্দশা থাকবে না । তুই ভালো ভাবে পড়া শুনো কর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
... তুমি ত আছো আমাকে ঠিক রাস্তা দেখাতে । আমার চিন্তা কি? 
মুন্নী একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলে , “চল দাদা সন্ধ্যা হয়ে এল ঘরে ফিরে যাই।
... হ্যাঁ চল । 
..........XXX……..

অপরাধ গল্প ডবল মার্ডার (সত্যি ঘটনা অবলম্বনে) ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৬.১১.২০১৫ / রাত ৮.২৫



 অপরাধ গল্প
ডবল মার্ডার   (সত্যি ঘটনা অবলম্বনে) 
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৬.১১.২০১৫ / রাত ৮.২৫

ডঃ প্রফুল্ল মিশ্র এবং তাঁর স্ত্রী ডঃ সুষমা মিশ্র একটি ডুপ্লেক্স এপার্টমেন্ট কিনে অবসরের পর কোন এক সহরে   নির্জন নিরিবিলি পরিবেশে থাকতেন। ওনাদের তিন ছেলে ডঃ সুপ্রভাত মিশ্র বড় ছেলে সে সিঙ্গাপুরে ডাক্তার । মেজ ছেলে  সুহৃৎ মিশ্র , সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ,নিউ জার্সি , আমেরিকাতে । ছোট সুকমল মিশ্র এম.বি.এ  পাঠরত । ওনাদের কোন মেয়ে নেই ।
প্রফুল্ল এবং সুষমার কাছে কোন ছেলেই থাকে না । তাই ওনারা একাকীত্ব বোধ কাটাতে মন্দিরে পূজার্চনা করা এবং বিভিন্ন ধর্ম কর্জে নিজেদের সময় অতিবাহিত করেন। প্রত্যেক দিন দুজনে প্রাতঃ ভ্রমণে ভোর ৫ টায় উঠেই বেরিয়ে পড়েন। ট্র্যাকিং সুট পরে শীতকালে  দুজনে শরীর চর্চা করেন ত বটেই তা ছাড়া সকাল বেলায় ফুল তুলে নিয়ে এসে সকাল ৭ টার মধ্যে প্রাতঃ কর্ম সেরে ঠাকুর পূজো সেরে নেন। দুজনেই ডাক্তার তাই শরীর চর্চা , যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি অভ্যাসে নিজেদের শারীরিক ভাবে ফিট রাখেন। প্রফুল্ল বাবু চোখের ডাক্তার এবং সুষমা দেবী স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তাই ওনারা জীবনের সমস্ত উপার্জন ছেলেদের উচ্চ শিক্ষার জন্য খর্চা করতে কোন কুণ্ঠাবোধ করেন নি । এর ফল স্বরূপ প্রত্যেকটি ছেলে সুযোগ্য সন্তান হয়েছে। বাবা মায়ের মত তারাও সরল এবং নম্র ধীর স্বভাবের।
বাড়িতে কাজের লোক বলতে একটি ঠিকে ঝি , সকাল ৬.৩০ আসে । আরেকটি রাঁধুনি দিদি তিনি সকাল ৮ টায় আসেন । রোজকার মতন স্বামী স্ত্রী প্রাতঃ ভ্রমণ সেরে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন সকাল ৬ টায় । সকাল ৬.৩০ সময় ঠিকে ঝি  কমলা গেটে কলিং বেল টিপলে কেউ সাড়া দেয়না। ঘরের ভেতর থেকে কোন আওয়াজ প্রায় ৫ মিনিট না পাওয়াতে কমলা পাসের ডুপ্লেক্সে ইঞ্জিনিয়ার স্বর্ণদ্বীপ সাহা বাবুর ঘরে নক করে এবং জানায় সব কথা ।  ওনাদের চাকর এসে বেল টেপে কিন্তু কোন সাড়া শব্দ ঘরের ভেতর থেকে আসেনা । এতে সকলের সন্দেহ হয় এমনিতেই আজকাল সিনিয়র সিটিজেনদের একলা পেয়ে হামেশাই নানা ক্রাইম হচ্ছে সেইরকম কিছু হল নাত ! কমলার যেন হটাত ছ্যাঁক করে ওঠে । ইতিমধ্যে আসে পাসের থেকে লোক আসে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের জিপ আসে সঙ্গে ইনস্পেক্টর , ফরেনসিক এক্সপার্ট ইত্যাদি। ওনারা বোধ হয় আঁচ করেছেন কোন দুর্ঘটনার কথা । তা নাহলে দল বল নিয়ে পুলিশ কেন যেখানে কারুর টিকি পাওয়া যায়না সাধারণত ।
পুলিশের লোকজন স্বদল বলে ঘরে ঢোকে ছাত দিয়ে ওপরের ঠাকুর ঘরে । ঘরে ঢুকে সকলে হতভম্ব । সুষমা দেবী রান্না ঘরে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন মাথায় শক্ত আঘাত । গ্যাসে চায়ের সসপ্যান বসান কিন্তু গ্যাস বন্ধ । ড্রইং রুমের মেঝেতে প্রফুল্ল বাবু পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছেন গলায় ফাঁস লাগান । দুজনেই একসঙ্গে ইহ-ধাম ত্যাগ করেছেন । ড্রইং রুমের টেবিলে সুষমা দেবীর মোবাইলে সাতটা মিস কল সিঙ্গাপুর থেকে তাঁর বড় ছেলের  ।
আসলে সিঙ্গাপুর থেকে ডঃ সুপ্রভাত মিশ্র তাঁর বন্ধু ডিসিপি ,  চিরঞ্জিত সেনকে  ফোনে কিছু একটা  সন্দেহ করে ফোন করেন কারন অতগুলো মিসকল হওয়ার কথা নয়। বাবা মা রোজ ওই সময় ফোনে সুপ্রভাতের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা নানা কথা সারেন । ঠাকুমা নাতীর কথা হয় । সেদিন সেরকম কিছুই হয়নি। তাই সুপ্রভাত কিছু একটা দুর্ঘটনা আঁচ করেন।
 তাঁর  অনুমান অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় । বডি পোষ্ট মর্টমে পাঠান হয় । কাজের ঠিকে ঝি কমলাকে পুলিশ জিজ্ঞাসা বাদ করে । সে সমস্ত ঘটনা উল্লেখ করে কিন্তু সেদিন রান্নার দিদির পাত্তা ছিলনা । বেলা গড়িয়ে ১০টা বাজলো সে আসেনি সেদিন। পুলিশের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। পুলিশের জীপ ছোটে রাঁধুনি দিদির তল্লাশে । কিন্তু তার হদিশ মেলেনা । সে নাকি বাপের বাড়ি গিয়েছে তাদের পাসের বাড়ির লোক বলে। কিন্তু কিছু না জানিয়ে গিয়েছে কি জানিয়ে গিয়েছে তা বলা মুস্কিল কারন ডাক্তার দম্পতী নেই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার । কাজের ঝি কি করে এর উত্তর দেবে।
ফরেনসিক এক্সপার্ট , ডগ স্কোয়ার্ডের তালিম প্রাপ্ত কুকুর ছাতে উঠে ওপর থেকেই লাফ দিয়ে পেছনের সজনে গাছের আড়ালে পুকুরের দিকে ছুটল কিন্তু পুকুর পাড় থেকে ফিরে এল। জলে কেউ সাঁতরে গেলে তাকে সনাক্ত করা কুকুরের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। যে বা যারা এই খুন করেছে তারা চতুরতার সঙ্গে কিছু সুরহা ছেড়া যায়নি । কিছু আসবাব পত্র এবং আলমারি খোলা হয়েছে । কিন্তু তাতে কোন হাতের ছাপ নেই কিম্বা ফুট প্রিন্ট ও নেই। তাই অপরাধী সনাক্ত করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের এই নিরীহ দম্পতীকে খুন করার মোটিভ  কি ? চিরঞ্জিত সেন খুব চিন্তায় পড়লেন । এবং বন্ধুকে ফোনে সব জানিয়ে দিলেন। তদন্ত চলছে পাঁচটি টিমে বিভক্ত হয়ে ।     
 ছোট ছেলে সুকমল এসে গিয়েছে । তার দুই দাদা পরের দিন সন্ধ্যে বেলায় এসে পৌঁছোয় । পোষ্ট মর্টমের রিপোর্ট পরের দিন এল ।  খুন সকাল ৬.০০ থেকে ৬.৩০ র  মধ্যে হয়েছে । ঠিকে ঝি আসাতে  কেউ সাড়া দেয়নি তাই । স্বাভাবিক । কিন্তু খুনি এত সকালে এসে এই অপরাধ ঘটান এত পুরো সুপারি কিলারের ব্যাপার । পুলিশের ঘাম ছুটল । বন্ধুর বাবা মায়ের খুন । কিছু সুরহা বার করতেই হবে।  
তদন্ত চলছে পাঁচটি টিমে বিভক্ত হয়ে ইনভেস্টিগেশন চলে।  রান্নার দিদিকে পুলিশ হেপাজতে রাখা হয়েছে । তার দিকে সন্দেহ বেশি । এ ছাড়া ডাক্তার দম্পতীর ড্রাইভার , মুন্না যাদব কে পুলিশ জেরা চালাচ্ছে । আরও কিছু সন্দেহের ব্যক্তি যাদের ওই ঘরে যাওয়া আসা ছিল তাদের একে একে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে।
পরে জানা গেল রান্নার দিদি নীহারিকা বিবাহিতা হয়েও মুন্নার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল । তাই তারা দুজন ই পুলিশের কাষ্ঠাডিতে রইল । এরপর মুন্নার বিগত হিষ্ট্রি জেনে পুলিশ তার ক্রাইমের সঙ্গে কিছু লিঙ্ক পেল । নীহারিকা বাপের বাড়ির নাম করে ডায়মন্ড হারবার বেড়াতে যায় মুন্নার সঙ্গে । ওটাই সন্দেহের কারন । তারা সুপারি কিলার দিয়ে ওই লোম হর্ষক খুন ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের ধারনা। কিন্তু সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ । তদন্ত চলছে।