যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
সপ্তম পর্ব
অনেক দিন পর দুপুরের খাওয়াটা জগা ননা ভালই বানিয়েছিল। ইলিশ মাছের ঝাল, মোচার ঘণ্ট, ফুল কপির তরকারি,পাঁপড় ভাজা, টমাটোর চাটনি, পায়েস, মিষ্টি,দই ইত্যাদি। সব আইটেমই ভালোই বানিয়েছিল। ভাতটা আমি এমনিতেই কম খাই। এই বয়েসে মোটা হলে আর দেখতে হবে না। বন্ধুরা টিটকিরি মারবে।
খেয়ে বিকেলে পার্কে বেরলাম। রাস্তায় 'শ্রাবন্তির' সঙ্গে দেখা। ও পার্কে যাচ্ছিল। আমাকে ফোনে আগে থেকেই বলেছিল পার্কে যাওয়ার জন্য। আমার সঙ্গে পা মেলাল। শ্রাবন্তি আমার সঙ্গে স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত পড়েছে। একই কলেজে একই ক্লাসে পড়েছি ১২ক্লাস অবধি। আমার সঙ্গে আই আই টি এন্ট্রান্সও দিয়েছিল। বেচারি পায়নি। খুব ভেঙ্গে পড়েছিল। জয়েন্টের রেজাল্ট ভালো ছিল। এখন শিবপুরে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ভালই পড়ে তবে বড্ড পাকা মেয়ে।
কিন্তু মেয়েটা ভালো। আমাকে খুব ভালবাসে। মিথ্যে কথা বলব না আমিও ওকে ভালবাসি।
কিরে কবে এলি?
আজকে।
কতদিন থাকবি?
পরশু চলে যাবো।
কেন ওখানে কেউ নতুন বন্ধু হয়েছে বুঝি ?
তোদের মেয়েদের ওই এক কথা! এত জেলাস কেন বলতো তোরা ?
বাবা! বিবেকানন্দ হলি নাকি? আমি কি জিজ্ঞেস করছি তুই কি ভাবছিস! আমি বলছি তোর নতুন কোন ছেলে বন্ধুর কথা।
কেন তার সঙ্গে লাইন মারবি?
দেখেছিস কে জেলাস্!
ছাড়। তোর সেমিস্টার শেষ হয়েছে?
হ্যাঁ, তোর ?
সে জন্যই তো আসতে পেরেছি।
তাই বল। হ্যাঁরে মাসিমা কেমন আছেন ? না না ‘মা’ বলি কি বল?
ভালো। তবে ‘মা’ বলতে পারিস আমার মা’কে।
তোদের বাড়ি নিয়ে যাবি?
রক্ষে কর আর কেল করিস না! মা’ যা রেগে আছেন দাদার ব্যাপারে!
কেন তোর বৌদি ত তোর দাদার প্রজেক্টে আছেন না ? কি মজা দুজনে খুব এনঞ্জয় করছে বল। তোর ইচ্ছে করে না স্টেস্ এ যেতে বি.টেক এর পর ?
না দাদা যে ভুল করেছে আমি তা করব না।
তোর দাদা বৌদির ফটো দেখাবি।
কি হবে দেখে ?
ইন্সপায়ার্ড হব! আমারাও যাবো।
মানে?
ওরে ভোঁদাই, বিবেকানন্দ! এই আমায় কিস্ করবি?
তুই খুব ফাজিল হয়ে গেছিস। আমি যাচ্ছি। বাই।
...ওরে ওরে থাম থাম। যাসনি। বাবা কি মেজাজ!
কেন আমার পেছনে লেগে আছিস? দু দিনের জন্য এসেছি তাও তুই আমাকে সিডিউস্ করছিস? কেন ? কলেজে ফোন ত করিস। হস্টেলে ছেলেরা আমাকে বলে তোর গার্লফ্রেন্ড!
আমি কি বলি বল?
কেন তুই বলবি হ্যাঁ। আমার হবু বৌ। দেখবি ওরা চুপসে যাবে। ঠিক কি না।
সুশান্ত চুপ করে যায়। ওর মা’র কথা বলে। ওর মা কত কষ্ট পাচ্ছে দাদা ওই কান্ড করাতে।
দেখ ‘সু’ আমাকে আর বোঝাস না ! তোর দাদা যা করেছেন ঠিক করেছেন। অমন সুন্দর দেখতে বৌ আবার সেম প্রফেশনে আছেন ওনারা। তোর বৌদির বাবা মা আই .এ.এস অফিসার। আর কি চাইতিস তোরা?
ওইটাই তো মায়ের অসুবিধে। মা ঘরোয়া মেয়ে...
রাখ রাখ ওই গেঁয়ো...
এটা খুব অব্জেক্সনেবল কথা বলেছিস কিন্তু। আমি এটা পছন্দ করি না কিংবা আশা করি না তোর কাছ থেকে অন্তত।
এই! আমি তোর মা’কে মানে মাসিমাকে বলেছি নাকি? আমি কথাটা শেষ করিনি...
ঝগড়া করতে আমি ভালো বাসি না। তুই তোর কলেজের কথা বল না।
সে তো জানি বিবেকানন্দ! মাই সুইট হার্ট। আই লাভ ইউ। কিরে কিছু বলছিস না যে। তুই কি ঋতুপর্ণ ঘোষ নাকি রে? এতো দিন পর এলি বন্ধুরা কি বলবে তোকে ভোঁদাই! বলে হাসে।
দেখ বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। ঋতুপর্ণ ঘোষের কথা বলছিস! ওনার মতন আর একটা নির্দেশক দেখা তো বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে।
কেন গৌতম ঘোষ, কৌশিক গাঙ্গুলী কি খারাপ নির্দেশক?
না খারাপ না। আমি বলিনি সে কথা।
হ্যাঁরে চুপ করে আছিস কেন? তোর পাশে একটা মেয়ে, তোর গার্লফ্রেন্ড বসে তোকে কিস করতে বলছে আর দেখ এখন সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছে। পাসে তুই আর আমি। কি রোমান্টিক না। আমি মেয়ে হয়ে তোকে বলছি কিস করতে। কিরে তুই...?
ফাজলামি করিস না। আমি এ সব পছন্দ করি না। আমি যাচ্ছি। বাই।
যন্ত্রমানব@ভালবাসা.কম
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
অষ্টম পর্ব
বস না। আমি মেয়ে হয়ে বসেছি তুই কেন লজ্জা পাচ্ছিস? সত্যি তোরা দুই ভাই এক ক্যাটেগরির! ডিব্বা কোথাকার! বলে হাসে।
ওই ববির ডায়লগটা মনে রেখেছিস আর ওর অ্যাপ্লিকেশনটাও তোর জানা।
তা কি করবো? তোরা যদি চুপ করে থাকিস কিছু না বলে আমরা মেয়েরা কথা বলতে বাধ্য হই।
প্রসঙ্গ বদলাতে চেষ্টা করলো সুশান্ত। তুই কখন পড়াশোনা করিস? আমার সেমিস্টারের পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন করতে হবে। চল যাই। মা চিন্তা করবেন।
ওরে মাতৃভক্ত ছেলেরে। সত্যি তোদের মত ছেলে পাওয়া মুস্কিল। গুড গুড বয়। ওরে আমার ‘ভোলা রে’। বলে একটু আলত থাপ্পড় দিল পেছনে।
তুই কিন্তু আমার ‘কোকা কোলা’ হতে পারবি না।
কেন? আই আই টি তে পেলাম না বলে বলছিস।
না তা কেন?
তবে?
তবে আবার কি! তুই নিজেই ভেবে দেখ। আমি এবার চলি। বাই।
বাই। আবার কবে আসবি?
দেখি। ফাজলামি না করে পড়াশুনোর দিকে মন দে ।
আমাকে একটু পায়ের ধুলো দিবি ? তোর মত ভালো ছেলে আমাদের কলেজে একটাও দেখিনি! শালা মেয়ে দেখলে জিব দিয়ে জল পড়ে আর মাষ্টার গুলো আরও হারামি। খালি ছুঁক ছুঁক করে।
মেয়েদের মুখে শালা শব্দটা খুব খারাপ লাগে শুনতে। তুই ওটা না বললেই পারিস। পায়ের ধুলোর দাম আছে। দিতে পারবি ?
হ্যাঁ। দিতে পারবো।
তবে বি.টেক-এ ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে দেখা।
আই একসেপ্ট ইট মাই লাভ। কিন্তু তোকেও তাই হতে হবে। তারপর কিন্তু আমি যা বলবো তোকে মানতে হব ।
চেষ্টা করবো। তারপর ঠাকুরের ইচ্ছা। মায়ের আশীর্বাদ থাকলে নিশ্চয় হবে।
দু-জনে দু -দিকে চলে গেল।
সুদীপ্ত, সুদীপ্তা দুজনেই প্রজেক্টের কাজে খুব ব্যস্ত থাকে। নতুন প্রজেক্ট আর ক্লায়েন্ট নিয়ে ওরা নিজেদের কাজে এতো মশগুল থাকে যে ভাল করে কথা বলার সময় পায় না। এদিকে সুদীপ্তর মা অন্য কথা ভাবেন। ছেলের ফোনের জন্যে বসে থাকেন ভোরে। অনেকদিন ফোন না পেয়ে সুশান্ত কে দাদার খোঁজ নিতে বলেন। সুশান্ত পরের সেমিস্টারের জন্য প্রস্তুতি চালায়। টপ রাঙ্কের জন্য রাত দিন পড়াশুনো করতে থাকে। ওদিকে শ্রাবন্তি আর ফোন করে না। ও নিশ্চয় ভালো করে প্রিপারেশন করছে।
একদিন মা দুই ছেলের খোঁজ নেওয়ার জন্য মামাকে বলেন, দাদা একটু ফোন করবি ছেলে দুটোকে। অনেক দিন কোন খবর পাই না। কি করছে দু-জনে কে জানে ?
নাম্বার আছে?
মা, সুশান্তর নাম্বারটা রেখেছিলেন , বললেন এই নে ।
মামা সুশান্তকে ফোন করাতে ফোন সুইচ অফ দেখল।
মামা বিব্রত হলেন পরে বুঝলেন নিশ্চয় ক্লাসে অথবা পড়াতে ব্যস্ত । বোনকে বললেন ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই ওরা দুজনে নিজেদের কাজে ব্যস্ত। তুই যা আমি পরে খবর নিয়ে বলব তোকে ।
আচ্ছা । বলে মা চলে গেলেন ঠাকুর ঘরে ।
নিউইয়র্ক শহর-
আলো ঝলমলে রাস্তায় হারিয়ে গিয়েছে সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা। গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ঘুরতে। আজ শনিবার ওদের ছুটি। বলা বাহুল্য সুদীপ্ত এখানকার ড্রাইভিং ট্রেনিং পাস করে লাইসেন্স পেয়েছে। সুদীপ্তাও জানে তবে এসউভি চালাতেই ও ভালোবাসে। এখানকার রাস্তাতে গাড়ী চালানোর মেজাজই আলাদা। লঙ ড্রাইভে যেতে মজা লাগে। সারা শহরের শপিং মল ওদের মুখস্থ। কোথায় ইন্ডিয়ান ডিশ পাওয়া জায় সেখান থেকে কিনে আনে। সুদীপ্তা ইন্টারনেট দেখে রান্না শেখে। ওরা ওই খায়। দুধটা ভালো আর ফোর সিরিয়ালের আটা দিয়ে রুটি বানায়। তবে রুটিও কিনতে পাওয়া যায়। কাল পার্টি আছে। সুদীপ্ত এখানে প্রজেক্ট ম্যানেজার হল তাই। এতো তাড়াতাড়ি পি.এম. হওয়া আর নতুন প্রজেক্টের দায়িত্ব নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ওর প্রজেক্টের কাজের জন্য একজন সিনিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার (SPM ) ওকে গাইড করবেন।
আজ শনিবার ওহিও তে পার্টি দিচ্ছে সুদীপ্ত এবং সুদীপ্তা দুজনে। প্রায় জনা ১৬ র মত নিমন্ত্রিত ছিলেন। সুদীপ্তার মা বাবা ইন্ডিয়া থেকে ফোনে উইশ করলেন ওদের দুজনকে। সুদীপ্ত অনেক দিন পর মা’কে প্রণাম জানালো । নতুন প্রমোশনের কথা জানালো। মা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলেন, মামা, মামি সকলেই খুব খুশি হলেন এই সংবাদে। সুশান্তকে ফোনে পেল না সুদীপ্ত। মনটা একটু খারাপ হল। পার্টি রাত প্রায় ১০ টা অবধি চলল। এখন সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই ওহিও তে থাকবে।
No comments:
Post a Comment