Friday, September 4, 2015

৩ জি ফ্রেন্ড / ত্রিভুবন জিত মুখার্জী / ১৩.০৪.২০১৫ / নীল ষষ্ঠী /





     

         ৩ জি ফ্রেন্ড 
ত্রিভুবন জিত মুখার্জী / ১৩.০৪.২০১৫ / নীল ষষ্ঠী /
প্রথম কলেজে নাম লেখানোর পর যা হয় আমাদের ও তাই হয়েছিল ; মানে ডানা গজিয়ে ছিল ! ক্লাস বাঙ্ক করে শপিং মলে কফি খাওয়া , জমিয়ে আড্ডা দেওয়া , গার্ল ফ্রেন্ডকে পিলিও-নে বসিয়ে মোটর বাইক নিয়ে ঘোরা , পিজা খাওয়া ইত্যাদি । আমরা তিন বন্ধু গাঙ্গুলী , ঘোষ আর ঘটক । অন্য বন্ধুরা , আমাদের ৩ জি ফ্রেন্ড বলতো । কারন আমাদের প্রত্যেকের পদবি ‘G’ দিয়ে আরম্ভ তাই ‘৩ জি ফ্রেন্ড’ ।
কলেজে ক্রিকেট খেলা হলে ‘গঙ্গুলী’ আমাদের কলেজের ভালো ওপনার ছিল তাই , ওই প্রথম বল ফেস করতো। রিভার্স সুইপ ভালো করতে পারতো । ‘ঘোষ’ , ইয়র্কর বল করতো , উইকেট নিতে ওর জুড়ি কেউ ছিলোনা। আমি , উইকেট কিপিং করতাম আমাদের কলেজের খেলার সময় । মিডল অর্ডারে খেলতাম ব্যাটিং এর সময় । ২০১৫ ওয়ার্ল্ড কাপের সময় আমাদের প্ল্যান ছিল অস্ট্রেলিয়া যাব বলে । তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেদের ওইসব বিলাসিতা , বাবা মা কি করে রাখে বলুন ? অগত্যা ওটা স্বপ্নেই থেকে গেল । পরে ভাবি ভাগ্যিস যাইনি । ক্রিকেট খেলার জন্য গাঙ্গুলী-ঘোষ বেশি পপুলার ছিল । গাঙ্গুলী-ঘোষের মেয়ে বন্ধুর শেষ নেই । আমার সঙ্গে কিছু মেয়ে বন্ধুর , হায় হ্যালোর সম্পর্ক । ব্যাস ওই টুকু ! তবে গোধূলি শেষ পর্যন্ত টিকে যায়। ।ক্লাস বাঙ্ক করে বাইকে তেল ফেলে সকলে মিলে ডায়মন্ড হারবার বেড়াতে বেরুলাম। সঙ্গে তিন বন্ধুর গার্ল ফ্রেন্ড গার্গী , গোপা , গোধূলি । ওরাও ৩জি । ব্যাপারটা খটকা লাগছে না ! কিন্তু সত্যি । চলে ত গেলেম কিন্তু পথ তো কম নয় ! ১৫০ কি.মি. আসা যাওয়া। রাস্তা কদর্য। আসা জাওয়া ৪ ঘণ্টা লাগবেই । ১ ঘণ্টা ঘোরা বেড়ান । সঙ্গে মেয়েরা আছে । ডায়মন্ড হারবার ভালো যায়গা নয় । সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে । রিস্ক নিতে রাজি হলাম না। আমি বলি চল জোকা ঘুরে চলে আসি । তাড়া তাড়ি ফিরতে পারবো , তা ছাড়া আই.আই.এম ক্যাম্পাসটাও ঘোরা হবে । কিছু ভেবে সকলে বলে তবে তাই চল ।
গার্গী বলে, “কিন্তু যদি নতুন ফ্যাসাদে পড়ি”।
মানে ! গাঙ্গুলী বলে ।
মানে আমার জাঠতুত ভাই ওখানে পড়েন । আমায় দেখলে কেলেঙ্কারি কান্ড হবে ।
সেকি ? তবে ত মুস্কিল ।
হ্যাঁ তাই ।
আমি বলি, “তবে চল ন্যাসে-নাল লাইব্রেরিতে যাই” ।
গোধূলি বাদ হো হো করে হেঁসে ওঠে সকলে ।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বলি কেন কি হল ?
ঘোষ বলে, “তুই কলেজের লাইব্রেরিতে পড় , আমরা ঘুরে আসি বরং” ।
গোধূলি আমার সাপোর্টে বলে, “ও ঠিক ই তো বলেছে । মিছি মিছি অতো দূরে যাওয়ার প্রয়োজন কি আছে বল !” আমি বাবা যেতে পারবোনা ।
তবে তোমরা দুজনে অঙ্গুল চোষ । আমরা চলি বলে স্টার্ট দিয়ে দুটো বাইক বেরিয়ে যায় ।
গোধূলি বলে , “দেখলে কাণ্ড । আমি আর ওদের সঙ্গে নেই” ।
আমার খারাপ লাগলো ঠিক ই তবে ভাবি না গিয়ে ঠিক করেছি।
বাধ্য ছেলের মত অঙ্কর ক্লাসে দুজনে গুটি গুটি পায়ে এগোই ।
আরম্ভ হয়নি ক্লাস। তবে এখুনি সার এসে ক্যালকুলাস আরম্ভ করবেন ।........ ০০ ....... রাতে টিভি তে নিউজ দেখে অবাক । দুই বাইক আরোহীর ডায়মন্ড হারবার থেকে কোলকাতা গামী বাসের সঙ্গে ধাক্কা । সামনের চাকা পাঙ্ক-চার হওয়াতে বাসটি ভার সাম্য হারিয়ে ফেলে । বাইকে সম্ভবত দুই পড়ুয়া তাদের গার্ল ফ্রেন্ড নিয়ে বেরিয়েছিল কোথাও। কেউ বাঁচেনি। পুলিস ঘটনা স্থল পরিদর্শনে যান । তদন্ত চালু আছে । এখন স-বিস্তারিত খবর যানা যায়নি ।
আমার গা ছ্যাঁত করে উঠলো । চোখে জল এলো অথচ কাউকে বলতে পাচ্ছিনা । ঘোষের মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে কল এলো । সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করলাম ।
হ্যালো । কে বল্টু(গাঙ্গুলী) বলছিস ?
হ্যাঁ কেন কি হল ?
না । আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ।
কেন তুই কি ভাবলি আমরা মরে গেলাম এক্সিডেন্টে ! আমি ওই নিউজটা দেখেই তোকে ফোন করছি । বুম্বাও(ঘোষ) বোধ হয় তোকে ফোন করবে ।
বাজে কথা বলিস না । তোরা কখন ফিরলি ?
আমরা গেলাম কই !
মানে !
মানে , নিউ মার্কেটে শপিং মলে আইসক্রিম খেয়ে বাড়ি ফিরলাম। তোরা গেলিনা আইসক্রিম মিস করলি ।
ভালো হয়েছে যাইনি । আজ ক্লাসে অনেক পড়ান হয়েছে । আর ক্লাস বাঙ্ক করে কোথাও যাবনা !

No comments:

Post a Comment