জামাইষষ্ঠী
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
২৪ মে ২০১৫ ছিল জামাইষষ্ঠী। বাঙ্গালিদের একটা বিশেষ দিন জামাই বাবাজীদের দীর্ঘায়ু কামনা এবং কন্যার সংসারের মঙ্গল কামনা এটাই বোধ হয় এই পর্বের প্রধান উদ্দেশ্য।
ষষ্ঠীপূজায় ব্রতীরা সকালে স্নান সেরে ষষ্ঠীর উপবাস করেন। নতুন পাখার ওপর আম্রপল্লব,আমসহ পাঁচফল আর ১০৮টি দুর্বা বাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণের সঙ্গে রাখেন। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে পূজার সামনে রাখতে হয়। ধান এই পূজার সমৃদ্ধির প্রতীক, বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দুর্বা চিরসবুজ, চির সতেজ অসীমতার বেঁচে থাকার ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দুর্বা হল দীর্ঘ জীবনের প্রতীক।
শাশুড়ি, মেয়ে-জামাতার দীর্ঘায়ু কামনা করে ধানদূর্বা দিয়ে উলুধ্বনিসহ ষাট ষাট বলে বরণ করেন। পাখার বাতাস দেন। প্রবাদে আছে, যম-জামাই ভাগনা-কেউ নয় আপনা। কারণ যম মানুষের মৃত্যু দূত। জামাই এবং ভাগনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করে খাওয়াতে হয়। তাই মেয়ে যাতে সুখে-শান্তিতে তার দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে এজন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত করেন। আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসমাগ্রীও প্রদান করেন। এর প্রতিদানে জামাই বাবাজী তাঁর শাশুড়ি মাতাকে নতুন শাড়ী, স্ত্রী এবং শালিকে নতুন শাড়ী কিংবা পছন্দ অনুযায়ী ড্রেস মেটেরিয়াল কিংবা ড্রেস কিনে দেন। আমি ত তাই করে এসেছি। এ ছাড়া সিনেমা দেখান, হোটেলে খাওয়ান বেড়ান এই সব তো আছেই। বলতে গেলে ট্যাঁকের জোর না থাকলে ওই জামাইষষ্ঠী হবে না। গিভ এন্ড টেক। কিছু পেতে হলে বেশ কিছু দাও।
জামাইষষ্ঠীতে জামাই আদর কার না ভালো লাগে। শাশুড়ি মাতার হাতের রান্না রকমারি ব্যঞ্জন, পাঁচ ফল,দই মিষ্টি। নতুন জামাই আদরটা বেশি হয় আবার পুরণ হলে একটু কমে যায়। আপনি যদি একমাত্র মেয়ের বর হন তো কথাই নেই। আদর যত্নর ত্রুটি হয় না। যদি ছোট শালি থাকে, সর্বনাশ পকেট গড়ের মাঠ নিশ্চিত।
সেই পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা ষষ্ঠী পূজা করেন। ষষ্ঠী সন্তান সন্ততির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। ওনাকে তুষ্ট করলে সন্তান সন্ততি সুখে শান্তিতে থাকেন এবং নীরোগ থাকেন।
আমার শশুর বাড়ি উত্তর কলকাতায়। ১৯৭৮ সাল থেকে ক্রমাগত শাশুড়ি মাতা বেঁচে থাকা পর্যন্ত জামাই আদর পেয়ে এসেছি। প্রথম জামাই ষষ্ঠীর দিন ট্যাক্সি থেকে নামছি হটাত রাস্তার ধারে একটা বাড়ির দেওয়ালে লেখা দেখে আশ্চর্য হলাম। লেখাটা এই রকম, “এখানে জামাই ভাড়া পাওয়া যায়”। লেখাটা পড়ে গিন্নীর দিকে তাকালাম।
গিন্নীর বিরক্তি ভরা উত্তর চলত, ও পাড়ার চ্যাংড়া ছেলেদের কীর্তি। পড়াশুনো করে না ... ও দিকে তাকিও না চল।
একটু পরে কিছু ডেঁপো ছেলেকে বলতে শুনি, “পরের বছর আমরাও জামাই হব। কি বল? শাশুড়ির আদর খাবো।”
আমার হাঁসি পায়। মনে হল শালা বাবুদের ড়েকে কিছু টাকা দি মিষ্টি খাওয়ার জন্য।
হটাত ছেলেগুলো আমার শালাকে আসতে দেখে দে দৌড়। খুবই বয়েসে ছোট ছেলে। এই সময়টা ওদের পড়ার বয়েস। তবে রসিকতাটা মন্দ না। আহা... ওদের ও ত সাধ হয় জামাই হওয়ার! তবে তার জন্য উপযুক্ত হওয়া চাই। তাই না?
No comments:
Post a Comment