Thursday, April 2, 2015

অনু গল্প ‘রিঙ্কির কান্না’ ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / রাম নবমী/ ২৮.০৩.২০১৫/ রাত ০৯.৩০


 
 অনু গল্প  ‘রিঙ্কির কান্না’
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / রাম নবমী/ ২৮.০৩.২০১৫/ রাত ০৯.৩০

আমার বাড়ীর সামনের ঘরটাতে এক অল্প বয়েসই স্বামী স্ত্রী থাকেন । তাঁদের একটি মেয়ে নাম রিঙ্কিবাবা মা দুজনেই অফিসে চলে যাওয়ার সময় মেয়েটি রোজ  চিৎকার করে কাঁদে । মেয়েটিকে তার বাবা মা এক পরিচারিকার কাছে রেখে অফিস যেতে বাধ্য হন। পরিচারিকাটির নাম মিতামিতা সকাল ৮ টার মধ্যে চলে আসে যায় রাত ৭ টায় । ও ঘরের সমস্ত কাজ ; রান্নাবান্না , মেয়েকে দেখা , তাকে খাওয়ান , কাপড় চোপড় কাচা ইত্যাদি সব কাজ করে । মিতা কেষ্ট-পুর থেকে আসে । ও বলে , ওর ঘরে ওর স্বামী , এক ছেলে রাহুল’  সে নাকি গাড়ি চালায় , আর  ছেলের  বৌ সোমাআছে। মিতার বরটা পাঁড় মাতাল ওর চেয়ে বয়েসে নাকি অনেক বড় । এ কথা অবশ্য মিতা বলেনি , আমাদের বাড়ির  কাজের লোক মঞ্জু বলে।  সে নাকি ইলেকট্রিকের মিস্ত্রী । এ সব কথা বলার উদ্দেশ্য মিতা প্রায় আমাদের বাড়ি রিঙ্কিকে নিয়ে আসে । ওর মুখেই সব সোনা ।
আমি ভেতরের ঘরে থেকে আমার স্ত্রী আর মিতার কথোপকথন শুনতে পাই । কানে তুলো দিয়ে ত রাখতে পারিনা । আমার স্ত্রী , রিঙ্কিকে কখন কখন ভাত খাইয়ে  দেন । মেয়েটার ওপর আমাদের বেজায় মায়া পড়ে গিয়েছে । সকালে ওর কান্না শুনলে আমার খুব রাগ হয় আবার দুঃখ হয় । ভাবি এরকম চাকরি কি না করলেই নয় । এখনকার চাকুরেজিবি মহিলারা প্রায় দেখি ছেলে মেয়েদের পরিচারিকার হাতে মানুষ করছেন । এরা বাবা মার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । রিঙ্কি যেরকম ভাবে জন্মথেকে মিতার কাছে আছে ও , মিতাকেই ওর মা বলে মনে করে। মিতাও..রিঙ্কি অন্ত প্রাণ । বলা বাহুল্য মেয়েটা দিন দিন নানা রোগে ভোগে বিশেষ করে সর্দি কাশি আর জ্বর । ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার লম্বা প্রেসক্রিপশন করে ওষুধের ফর্দ তুলে দেন ।  ওষুধে ওষুধে মেটা দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছে । পরের মেয়ে বলার কিছু উপায় নেই কিন্তু মনে মনে রাগ হয়।
এর মধ্যে এক দিন শুনি রিঙ্কির বাবা আমেরিকা চলে যাচ্ছে ছ মাসের জন্য । কাজের জন্য যেতে বাধ্য কি করবে ওই সফটওয়ারের চাকরিটাই ওই রকম । আমি ভাবলাম স্বামী স্ত্রী দুজনেই বোধ হয় যাবে ..কিন্তু না একা রিঙ্কির বাবাই যাবে । বোধ হয় রিঙ্কির মায়ের , মা বাবা এসে থাকবেন ওদের কাছে .. কিন্তু না সে গুড়ে বালি । পরে শুনি রিঙ্কির ঠাকুর্দা ঠাকুমা আসছেন এই ছমাস ওদের কাছে থাকার জন্য । ভালোই হল রাঙ্কির এবার একটু আদর যত্ন হবে আর আমার এক সঙ্গি জুটবে কথা বলার । আমার ই বয়েসের হবেন বোধ হয় রিঙ্কির ঠাকুর্দা  ।
‘অরুণাভ’ রিঙ্কির বাবার নাম । আমেরিকা যাওয়ার আগের দিন আমাদের বাড়ি এসে দেখা করে গেল । খুব অমায়িক ব্যাবহার ছেলেটার । লম্বা ফর্ষা দ্বপ্তিময় চেহারা । ধীর স্থির ভদ্র ছেলে। এরকম ছেলে আজকাল দেখা যায়না। প্রণাম করে বলল ,“কাকু অনেকদিন আসবো আসব ভাবি আর আসা হয়না । নানান কাজের মধ্যে থাকি বুঝতেই পাচ্ছেন । আমার স্ত্রী কন্যা আপনাদের হেফাজতে রইল আপনারা মাঝে মধ্যে একটু খোঁজ রাখবেন। রিঙ্কি কে নিয়েই চিন্তা ।
আম বলি , কিছু চিন্তা করনা বাবা । আমরা তোমাদের পড়শি , তোমার পিতৃ তুল্য আমি । কি বল ?
হ্যাঁ কাকু নিশ্চই ! তাই এলাম আপনাকে দেখা করতে । আমার মা বাবা এসে পড়বেন বোধ হয় আজ ই । কিন্তু ওনারা এখানে নতুন । তাই আপনাদের ভরসা । একটু দেখবেন কাকু ।
তুমি কেন চিন্তা করছ ? এটা ত আমার কর্তব্য , তা ছাড়া রিঙ্কি আমাদের এখানে রোজ আসে । ওর জন্য চিন্তা করনা । মিতা আছে , তোমার কাকিমা আছেন । ও ঠিক হয়ে যাবে ।  তুমি কবে ফিরবে ?
প্রজেক্টের কাজ শেষ হলেই ফিরবো । তা ছ সাত মাস নিশ্চই লেগে যাবে । দেখি কি হয় !! একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে  কথা গুলো বলে অরুণাভ ।
সন্ধ্যার ফ্লাইটে অরুণাভর বাবা মা এসে পড়লেন । এক দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত আমরা ।
এখন আর রিঙ্কি কাঁদে না কারন ওর ঠাকুর্দা ঠাকুমা এসেগিয়েছেন । সারাদিন ওদের সঙ্গেই থাকে খেলে । ঠাকুমা ওকে পার্কে নিয়ে যায় । ওর অনেক বন্ধু হয়েছে , সব দিদি দাদা ওকে নিয়ে খেলা করে পার্কে। সারা পার্ক মাতিয়ে রাখে সব্বাইকে । ওর মা অফিস যাওয়ার সময় টাটা করে । অফিস ফেরত কিন্তু ক্যাডবেরি চকোলেট চাই।
আমি এখন নিশ্চিন্ত । অরুণাভ এলে বলবো রিঙ্কি ওর ঠাকুমা ঠাকুর্দা কে পেয়ে কত খুশি ।

  

No comments:

Post a Comment