Thursday, August 21, 2014

৭ম,৮ম,৯ম,১০ ম ও ১১ দশ পর্ব “আবিষ্কারের নেশা” (পূর্ব প্রকাশিতর পর) ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ৯.৮.২০১৪/ ২০.৮.২০১৪ ।

আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
৭ম পর্ব 
অয়নকে নিয়ে শালিনী ওর নিজের ঘরে বসে। খুব ই অন্তরঙ্গ বন্ধু ওরা দুজনে মনে হচ্ছিল। একে অপরকে নাহলে চলবেনা মনে হচ্ছিল। হাঁসি ঠাট্টার মধ্যে সময় কেটে যাচ্ছিল। মা এতদিনে নিশ্চিন্ত। বোধহয় লোকনাথ বাবার পূজাটা আজই দেবেন। কাল মঙ্গল বার হয়তো কাল-ই দক্ষিণেশ্বরে পূজা দিতে যাবেন।
শালিনীঃ- তুমি বিয়ের পর আমাকে নিজের স্বাধীন মত কাজ করতে দেবে?
অয়নঃ- কেন তুমি কি পরাধীন দেশের নাগরিক নাকি যে আমায় এই কথা বলছ!
বাঃ যাচাই করবোনা। পরে আমাকে যদি বাধা দাও। মুচকি হাঁসে শালিনী।
কি হবে না হবে সে সিচুএসন অনুযায়ী ঠিক হবে। তবে তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় আমি কে হস্তক্ষেপ করার!
ঠিক আছে আমি কিন্তু রিসার্চ চালিয়ে যাবো। চাকরি পেলে তাও করবো।
আজকাল এসব কেউ বলেনা শালু।
শালু! গ্রেট!! আবার বল। ভাগ্যিস শালি বলে বসেনি!!
কেন খারাপ লাগছে শুনতে?
না না। আমার মা ওই নামে ডাকে আমায়। তুমি ত আমার মায়ের দলে তাই ডাকতে পার। ও কে। ইটস ওকে।
আমাকে একটা গুড নাইট কিস্ দেবে?
আবার বাজে কথা!
দাও না।
শালু উঠে পালাতে যাবে, অয়ন হাত ধরে নিজের দিকে টেনে আনে।
কি হচ্ছে মা দেখলে কি ভাববেন। উম উম.... না ছাড়ো।
খুব অসভ্য তুমি। কলেজে ত এরকম ছিলে না।
অয়ন ঘোরে ছিল শালুর সান্নিধ্য তাকে মাতাল করেছে। একটা গান মনে পড়ে গেল ঃ
চাঁদ তুমি কেন এতো সুন্দর হলে:
চাঁদ তুমি কেন এতো সুন্দর হলে
তোমায় দেখে আমি মনের জানলা খুলে
পূর্ণিমাতে তুমি জেন অপরূপ লাগো
আমার প্রেয়সী বলে তুমি ভাল লাগো...(১)
একমুঠো আকাশে ভরা জ্যোৎস্না দিলে
অবাক হয়ে দেখি তোমায় সব ভুলে
রাত্রির অন্ধকার যেন যাতনা ভরা
ভুলে আছি আমি দেখে জোছনা ভরা...(২)
তারা ভরা আকাশে মেঘ ছিল বেশ
আমার কথাটা-তো হয়নিক শেষ
চাঁদের আলো এলো আমার দ্বারে
মনের জানালা খুলে এলো মোর ঘরে...(৩)
চাঁদ তুমি কেন এতো সুন্দর হলে
তোমায় দেখে আমি মনের জানলা খুলে
পূর্ণিমাতে তুমি জেন অপরূপ লাগো
আমার প্রেয়সী বলে তুমি ভাল লাগো...

শালিনী গান শুনছিল। খুব সুন্দর গানটা।
রাত অনেক হল শালু, ডাইনিং টেবিলে তোরা চলে আয় মা।
অয়ন অপ্রস্তুত হয়ে বলে, ‘আজ আসি’। বাকিটা কাল পাওনা রইলো, কেমন!
এই বলে উঠে পড়ে।
শালু অয়নকে দোর অব্ধি এগিয়ে দিল সঙ্গে মা। মা বলেন তুমি রাতের ডিনারটা এখানে সেরে জেতে বাবা!
না মাসিমা আবার একদিন আসবো। আজ অনেক খেয়েছি শালুর দিকে তাকিয়ে বলল।
আচ্ছা এসো বাবা। সাবধানে যেও কেমন।
আচ্ছা। আসি তবে।
এসো।
শালিনীর আজ দিনটা অন্য রকম কাটল। এরকম ওর কোনদিন হয়নি। আজ পর্যন্ত মন খুলে কারুর সঙ্গে কথা ব্যকন্ত, এক বাবা ছাড়া। বাবার জন্য মনটা খুব উতলা হয় মাঝে মাঝে। চোখে জল আসে। নিজেকে বোঝায়। সবাই ত সব সময় থাকবেনা পৃথিবীতে। যার যতদিন পরমায়ু সে তত দিন থাকবে। এটাই নিয়তির নিয়ম।
আয়নার সামনে শালু দাঁড়িয়ে।
আয়নার ভেতোরের শালু র প্রশ্নঃ কি আজ যে বেশ খুশি খুশি লাগছে। তোমার রিসার্চ তোমার পড়াশুনো সব জলাঞ্জলি দিলে ওই ছেলেটির জন্য! বাঃ শালিনী বাঃ!!
আমিও মানুষ আমার ও ইচ্ছা আছে। এতো দিন শুধু পড়াশুনো করেছি আর পড়িয়েছি। আজ নিজে পড়ছি।
কি?
ভালোবাসার পড়া। ওটাও দরকার।
তাইনাকি? তবে তোমার মা সারদামনির আশ্রম?
না ওটা আমার দ্বারা হবেনা। আমি অত কঠোর হতে পারবোনা। আমাকে জীবনের স্বাদ নিতে হবে। তা ছাড়া আমি চাইনা মাকে দুঃখ দিতে। মা দিন দিন আমার জন্য যা চিন্তা করছিলেন তাতে মায়ের অসুখ হত। আমি তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারতামনা। আমার দিদি জামাইবাবু সকলে আমার ওপর অখুশি ছিলেন। আমার নিজের জন্য আমি অন্যদের আর মনে কষ্ট দিতে রাজি নই। দেখা যাগ কি হয়।
ও আচ্ছা। তা বেশ। তবে তুমি অয়নকে ভালবেসে ফেলেছ।
বিয়ে জখন করতেই হবে তখন জাকে চিনি জানি তাকেই না হয় করলাম তাতে ক্ষতি কি!
হ্যাঁ তাও ঠিক।
তবে আর কেন এবার এসো। আমার ঘুম পেয়েছে।
চলবে

আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

৬ষ্ঠ পর্ব

শালিনী, নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না। ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা। এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল। আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে, “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে? 
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না? সত্যি বল। যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই!! 
উত্তর: মোটে না। ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে। আমি অপমানিত হয়েছি। তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে। তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে। সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই। 
না। আমি কোন প্রশ্রয় দি নি। ওটা ওর বোঝার ভুল। আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে। পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি, শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না। খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে। প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি। তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ। 
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী। ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে। তোমার চাওয়া পাওয়া, ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে! তোমার বলা উচিত ছিল। 
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না। 
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে। তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা?
তা তো বলিনি। হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট, স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয়। বাহ্য চাক চিক্যকে নয়। মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয়। 
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই!
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না। প্রসঙ্গ বদলাও। আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে। সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা, সন্ন্যাসিনী। তারা কর্মে বিশ্বাস করে। তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয়। তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা, অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা। এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায়। কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ। শান্ত সুন্দর। 
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে? 
বলা মুস্কিল। আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব। 
কিন্তু তোমার অয়ন! 
আমার অয়ন কেন বলছ? ও কেবল ই বন্ধু। আর কিছু না। 
মন থেকে বলছ! 
একদম। 
কিন্তু আমি মানি না। তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই। 
কেন থাকবে না? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে, কাজে কর্মে, চাল চলনে। 
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন? 
আমি মেয়ে, মা.. আমার দোষ দেবেন! 
নাও হতে পারে। বলে দেখ। 
সম্ভব নয়।

পাসের বাড়ী থেকে গানের সুর ভেসে এলো--
কি করে ভুলিব তোমারে 
আঁখি জল ঝরে, বারে বারে 
বসেছি একাকী হায় 
তোমা বিনা অসহায়।
দিবস রজনী গুনি 
কবে তুমি আসিবে শুনি? ...(১)
এ মন মানে না আর 
মনে পড়ে বার বার 
তোমা বিনা মন লাগে না 
এ ফাগুন রাতে এসো না 
কিছুতে কিছু মন লাগে না 
ও প্রিয়ে তুমি কি বোঝ না!...(২)
আমার হৃদয় জুড়ে বসে আছে,
পাইনা কেন তারে কাছে।
নিশুতি রাত গেল,
তারাগুলো নিভে গেল, 
আকাশে চাঁদ ছিল,
এ শুভ লগনে কে এলো। ...(৩)

ঠিক সেই সময় ফোনটা বেজে উঠলো। এই সময় কার ফোন এলো! 
হ্যালো! কে? 
কে বলত! 
অয়ন?
তবে আমার কথাই ভাবছিলে বল! 
বাজে কথা রাখ, কবে আসছ কোলকাতা?
কি মনে হচ্ছে?
হেঁয়ালি কর না প্লিজ। 
এখানেই এসেছি ৭ দিনের ছুটিতে। তোমার বাড়ীতে-ত আমার জাওয়া নিষেধ তাই তোমাকে কোথায় দেখা করব .........? 
খুব বাজে লাগছে আমার। আসলে তোমার ওপর রাগটা ওনাদের ওপর ঝাড়লাম। আমি অনুতপ্ত। আজ আমাদের বাড়ী আসবে? 
কে? আমি! রক্ষে কর আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেই করে দেবে তুমি। 
যাহ্। তা কখন হয়! রাগ করেছিলাম ঠিক ই তবে তুমিও ত কিছু বলনি আমায়। তোমার উচিৎ ছিলনা আমাকে বোঝানোর! 
তা ছিল। আসলে আমি নিজেও কি করতে কি করে বসে ছিলাম সে জন্য অনুতপ্ত। কোন মুখে তোমায় কিছু বলতাম।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা। ঠিক আছে তুমি আজ এসো আমাদের বাড়ী। আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু। 
ডন। 
ডন।। Bye . Sincerely I will wait for you .
বিকেলে সত্যি অয়ন এলো শালিনীদের বাড়ী। 
আয়না টা যতো নষ্টের গোঁড়া। ওই আয়নাই মেয়েদের ভাবুক করে আর নিজের রূপ সম্বন্ধে সচেতন করে। যতো অনা-ছিষ্টির কথা ওই আয়নাই বলে। নিজেকে খুঁটিয়ে দ্যাখে আর ভাবনার দুনিয়ায় বিচরণ করে। 
হটাত তার মোবাইল টা বেজে উঠলো।
অসময়ে কার ফোন এলো? শালিনীকে অপ্রস্তুত মনে হল। 
হ্যালো! কে? 
আমি অয়ন। তুমি কি আমার নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছ?
ও। না না। একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। 
কার কথা ভাবছিলে?
কেন বলবো? 
বলই না শুনি!
শালিনী সাধারণত সাজ গোছ করে না। আজ সামান্য প্রসাধন করাতে সুন্দর লাগছিল তাকে।
মা দেখে বলেন কিরে শালু কি হল বলতো? 
কেন কি আবার হবে? তোমার সবেতেই আমাকে ছুঁড়ে প্রশ্ন! 
না মা, আমি ত জানি তোকে। মা আমার কি সুন্দর দেখতে লাগছে আজ। অনেক দিন দেখিনি তোকে রে। শুধু বকেছি। চোখ পুঁছে ফেলেন মা!
ওই! ওমনি কান্না কাটি!! কেন তুমি আমার জন্য এতো ভাবো বলত!
তুই কি করে বুঝবি মা? মা হলে বুঝবি। 
ওই এক কথা ‘মা’ হলে বুঝবি! 
বিকেলে একজন আসবে মা, বলে লজ্জায় শালু মাকে জড়িয়ে ধরে। 
কে সে শুনি? আমি কি সত্যি শুনছি। হে ঠাকুর, আমার ডাক শোন তুমি। 
মা তুমি না সবেতে উতলা হও।
অয়ন কে ডেকেছি। ও আসবে। ভালো কিছু খাবার কর ত। 
কি বলিস শালু সত্যি! দাঁড়া তোর দিদি জামাই বাবুকে ডাকি তবে। 
না ওদের এখন ডাকতে হবে না। পরে। আমার কিছু কথা আছে ওর সঙ্গে তারপর।
ঠিক আছে তাই হবে। মা রান্না ঘরে চলে জান হাঁসি হাঁসি মুখে।
এতদিন পর মাকে খুশি দেখে শালিনী নিজে বেশ খুশি। মাকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ হয়নি। রিসার্চ করার সুযোগ দিলে অয়নকে তার বিয়ে করতে আপত্তি নেই। সত্যি ত সে সন্ন্যাসিনী হবে না। সংসার জখন করতেই হবে তবে দেরি করে লাভ নেই। তবে অয়নের মতা মত জানতে হবে। আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা চলবে না। আমাকে আমার মত থাকতে দিতে হবে। 
বিকেলে অয়ন সত্যি এলো শালিনী র বাড়ী। বাড়ীর সামনেটাতে একটা সরু রাস্তা আছে তাই অয়নের নতুন পোলো গাড়ীটা পার্ক করতে অসুবিধে হচ্ছিল। 
শালিনী, আজ ফুলদানিতে সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে।ঘরটা খুব অগোছালো লাগছিল। অনেকটা নিজেই গুছিয়েছে। দরজায় নতুন পর্দা লাগিয়েছে। মা উঁকি মেরে মেয়ের সব কান্ড কারখানা দেখে মুখটিপে হাসছিলেন। যাগ ঠাকুর শুনলেন। বাবা লোকনাথ তোমার পূজো দেব দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর পূজো দেব .... আমার শালুর বিয়ে হয়ে জাগ সব ঠাকুরের মানত অনুযায়ী পূজো দেব। 
ঘরে নক করাতে শালিনী আসে ঘরের দোর খুলতে।
অয়ন শালিনীকে দেখে অবাক হয়। সত্যি আজ শালিনী কে সুন্দর দেখাচ্ছিল। খুব স্মার্ট মেয়ে শালিনী। তাই সামান্য প্রসাধনে ওর ব্যক্তিত্য ফুটে ওঠে চোখে মুখে। 
‘এসো’শালিনী অয়নের উদ্যেশ্যে বলে। 
ঘরে ঢুকে অয়ন, নতুন সাজে ঘর দেখে মনে মনে খুসি হয়। এজে তার শালিনীর হাতের ছোঁয়া দেখেই বুঝতে পারে। 
কি দেখছ হাঁ করে! 
তোমাকে আর তোমার টেষ্ট কে দেখে। অপুর্ব। 
Thanks a lot . কি খাবে বল। 
তুমি দেবে?
আবার অসভ্যতামি! 
যা বাব্বা! তুমি কি এই রকম ভাবে আমাকে শাসন করবে? 
হ্যাঁ দরকার হলে তাই করবো। না করার কি আছে? তোমাদের মতন পুরুষদের আমি চিনি। সুধু খাই খাই ভাব। 
মা ঘরে ঢোকেন চা জলখাবার নিয়ে। মাথায় ঘোমটা দেখে শালিনী হেঁসে ফেলে। তোমার ভাসুর নাকি গো মা? ও আমার বয়সি! আমরা এক ক্লাসে পোড়তাম। আমার বন্ধু অয়ন। 
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে অয়ন। 
থাক থাক বাবা। তুমি কত দিনের জন্য এসেছ?
এক সপ্তাহ থেকে চলে যাবো। 
ও মাত্র এক সপ্তাহ। 
তোমার বাবা মা কেমন আছেন? 
ভালো। 
তোমরা গল্প কর আমি আসি, কেমন! আজ এখানে খেয়ে জাবে বাবা। 
মায়ের, এই ‘বাবা’, ‘মা’ ডাকগুলো খুব সেকেলে লাগে শালিনীর। 
তোমার মা খুব স্নেহ ময়ি। 
হ্যাঁ সত্যি তাই। আমার মা খুব স্নেহ ময়ি। এখন থেকে হাত করে রাখ পরে কাজে লাগবে। 
কেন? 
কেন আবার। আমার নামে নালিশ করবে। মা তোমার পক্ষ নেবেন সর্বদা। 
তা তুমি জদি আমার কথা না শোন তবে ........ বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ হল। 
কে এল? শালিনী বাইরে গিয়ে অবাক জিজু, দিদি, টুকাই সব এসে হাজির।
আমরা আর থাকতে পারলামনারে, দিদি বলে উঠলো।
বেশ করেছিস। আয়না। কি জিজু তোমার খবর?
আমার খবর ভালো না।
কেন?
আমার ওই গানটার কথা মনে পড়ছে, “মেরা পিয়া ঘর আয়া ও রাম জি” বলে হেঁসে ওঠেন। 
যাঃ। সব সময় আমার পেছনে লাগা। কোন কাজ নেই তোমার না! টুকাইকে কে কোলে নিয়ে ঘরে ঢোকে শালু। আলাপ করিয়ে দি ....
‘অয়ন’ আমার বন্ধু সেই কলেজ থেকে। ইনি আমার দিদি জামাইবাবু ...
নমস্কার। বুঝতেই পাচ্ছি। শালি না থাকলে, “ঘর লাগে শুনা শুনা, জামাইবাবু না থাকলে, দিল হুম হুম করে ঘবরায়ে...”
হা হা করে হেঁসে ওঠে সবাই।
মা সকলের জন্য চা জলখাবার নিয়ে আসেন। দিদি, জিজু ; সেন মহাশয়ের সন্দেশ মিষ্টি আর গরম ক্লাব কচুড়ি এনেছেন। 
আজ মা, দিদি,জিজু সকলে খুশি। টুকাই শালুর কানে কানে বলে নতুন মেসোর ওটা কি গাড়িগো? খুব সুন্দর গাড়ীটা। 
তুই মায়ের কাছে জা। এখানে বড়দের কাছে থাকতে নেই। পরে আসিস আমার কাছে। 
আচ্ছা বলে চলে যায় টুকাই।
চলবে

আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

৫ম পর্ব

শালিনীর জ্ঞান ফিরতে দেরি হলনা। খুব দুর্বল এবং মানসিক চিন্তায় প্রেশার লো। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে গেলেন। অর্ক ; সমস্ত ওষুধ, হেলথ ড্রিংক , তাজা ফল বাজার থেকে সঙ্গে সঙ্গে কিনে আনল। কিন্তু শালিনীর ওই এক প্রশ্ন , “ওনারা কেন এসেছিলেন?” 
বোঝ ঠ্যালা!
মা বলেন , “ঘরে কি লোক আসবেনা মা! তুই কেন ও নিয়ে চিন্তা করছিস?”
না তা আসবে না কেন মা , তবে এনাদের ত আগে কখন দেখি নি , তাই!  
ও পরে শুনবি। এখন একটু ফ্রুট জুস খা দেখিনি। কিচ্ছুটি ত মুখে দি-সনা। শরীরের কি হাল করেছিস বেঙ্গালোরে গিয়ে। খেতিস না নিশ্চয়! 
কোন উত্তর না দিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব খেয়ে নেয়। সত্যি ও একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছে। সেটা যে কারনেই হোক না কেন। 
পরের রবিবার অয়নের বাবা মা আসবেন কথা বলতে।
এরমধ্যে অয়নের ফোন এসে গিয়েছে মায়ের উদ্দেশে। ওই এক কথা , শালিনীর বাড়ী গিয়ে বিয়ের কথা পাড়তে।
অয়নের মা বাবা সময় মত রবিবার আবার আসেন। সঙ্গে মিষ্টির বাক্স। শালিনীকে বৌমা বানিয়েই ছাড়বেন। অয়নের পছন্দই ওনাদের পছন্দ। এটাই এখনকার রীতি নিয়ম। 
যথা রীতি কথো প কথনের পর ... শালিনী , মায়ের ডাকে ঘরে ঢোকে। পরনে শালোয়ার। দিদি , জিজু আর টুকাই। 
আজ খুব একটা রুক্ষ ভাব না করে সিচুএশন স্টাডি করছিল।
তুমি ত শালিনী না? অয়নের মায়ের প্রশ্ন।
আগে থেকে আট ঘাট বেঁধে এসেছেন মহিলা .... শালু ভাবে। হ্যাঁ আমি শালিনী।
আপনাদের ..... বলার আগেই দিদি বলে ,“ইনি অয়নের মা! আর উনি অয়নের বাবা”
নমস্কার। অয়ন আসে নি কেন? শালিনীর উল্টো প্রশ্ন।
না মা ও বেঙ্গালুরু তে থাকে।
আমি জানি।
ভদ্র মহিলা সাদা মাটা আর ভদ্রলোক , মানে অয়নের বাবা এখন খুব স্মার্ট আছেন।
তুমি কি অয়ন কে চেন মা? অয়নের বাবার প্রশ্ন।
হ্যাঁ ও আমার ক্লাস মেট। কেন বলুন তো! 
মা এসে বলেন ওনারা তোকে দেখতে এসেছেন।
আমায় দেখতে এসেছেন? মানে! আমাকে ত কিছু বল নি মা। অয়ন আমার ক্লাস মেট। ও , আমার বন্ধু তার চেয়ে বেশি কিছু না। এই বলে চলে জায় ঘর ছেড়ে।
মেয়ের রাগ জানেন মা। কিছু অঘটন ঘটার আগেই আগন্তুকদের চা জল খাবার এগিয়ে দেন।
এবার অয়নের বাবা মা সত্যি অপমানিত বোধ করেন। মাপ করবেন বোন , অনেক আপ্যায়িত হলাম এবার আমরা উঠি। এই বলে ওনারা উঠে পড়েন।
অর্ক দা , দিদি কিছু বলার আগেই ওনারা ঘর ছেড়ে চলে জান। ওদিকে মা মুখে কাপড় চেপে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। ঘরে একটা গম্ভীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শালিনীর ঘর ভেতর থেকে বন্দ।
তুই কি আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি শালু! তুই কি চাস মা!! দরজায় কড়া নাড়েন মা। দরজা খোল। কথা শোন আমার মা। 
অর্ক , দিদি , টুকাই স্তব্ধ। গোটা ব্যাপারটা একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কারুর মুখে কোন সাড়া শব্দ নেই। অর্ক খুব অপ্রস্তুত মনে করছিল। এই পরিস্থিতিতে মাকে ছেড়ে জাওয়া যাচ্ছেনা আবার থাকাও যাচ্ছেনা। টুকাই ও গিয়ে মাসির ঘরের দরজা ধাক্কায়। ও মাসি দরজা খোলনা। আমি ত এসেছি তোমার সঙ্গে কথা বলতে।
দরজা খুলে শালিনী টুকাইকে কোলে তুলে নেয়। আজ প্রথম তার চোখে জল। কেউ কিছু বলার আগেই শালিনী ঘরে ঢ়ুকে পড়ে। দিদি ঘরে গিয়ে শালিনীকে বোঝাতে চেষ্টা করে। কোন ফল হয়না। 
মাসির চোখে জল দেখে টুকাই কেঁদে ফেলে। ও মাসি কি হয়েছে? তুমি কেন কাঁদছ? 
কোই না ত। আমি কম্প্যুটারে বসেছিলাম তাই। তুই ক্যাডবেরি খাবি? 
না আমি কিচ্ছু খাবোনা। আগে বল তুমি কেন কাঁদছিলে?
তোর নতুন জামা কেনা না হলে তুই কাঁদি-সনা! আমার নতুন শাড়ী কেনা হয়নি তাই আমি কাঁদছিলাম। 
আমি বাবাকে বলব তোমায় নতুন শাড়ী কিনে দেবে। 
দুর বাবা কেন কিনে দেবে আমার মা কিনে দেবে। আমার মা আছে না! মা বাবা ছাড়া অন্য কারুর কাছথেকে কিছু নিতে নেই। ঠাকুর রাগ করেন। 
তবে যে তুমি আমায় পূজোতে , জন্ম দিনে নতুন ড্রেস কিনে দাও। 
আমি ত তোর মা’সি! মানে , মা’ দেখ। ‘মা’ মানে ‘মা’। ‘সি’ মানে কি? 
দেখ।
তাহলে কি হল, “মা দেখ” তাই না। তাই আমি তোকে ড্রেস কিনে দি। তুই ত আমার সোনাই মা। আজ তুই আমার কাছে থাকবি? 
হ্যাঁ।
তাহলে মা বাবা কি করবে? 
মা আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না! 
তুই থাকতে পারবিনা বল। কিরে ঠিক না! 
হ্যাঁ , মা আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়ায়। তুমি গল্প জানো। 
খুব জানি। শুনবি গল্প। আজ আমার কাছে থাকলে তোকে গল্প শোনাবো। 
তাহলে থাকবো। কিন্তু আমার স্কুল? 
ও তাইতো। না স্কুল বন্দ করা চলবেনা। 
তাহলে কি করে থাকবো?
তাইতো! কি করে থাকবি! 
মা আসেন ঘরে চায়ের কাপ নিয়ে। 
আমায় ডাকলে পারতে। আমি নিজে যেতাম।
থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। বাড়ী হেস্ত নেস্ত করে ছাড়লে। আমার মরন না হওয়া ওবধি তোমার শান্তি নেই। নেই নেই করে ২৯ বছর বয়েস হল তোমার। এর পর কি হবে? 
ঠিক উল্টো টা মা। আমি না মরলে তোমার শান্তি নেই। তুমি ভালোকরে জানো আমার পছন্দ অপছন্দ। তবুও তুমি আমাকে জোর করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করতে চাও। কখন খেয়াল রেখেছ তোমার মেয়ের মনের কথা। কি মা তুমি? 
আর কত খেয়াল রাখতাম তোর। সকাল থেকে সন্ধ্যে ওভধি তোর সেবা করাই আমার কাজ। তুই আমার খেয়াল রাখিস? 
এবার শালিনী গলা নামিয়ে বলে, মা তুমি আমার কথা ভেবোনা। আমি ঠিক আছি। আমার লখ্যে পৌঁছতে দাও। আমার পড়াশুনা শেষ হয়নি। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই। কেন তুমি বোঝনা। আমাকে না জিগ্যাসা করে ঘরে লোক ডাকো! এটা কি ঠিক বল! আমি ত বলেছি আমার সময় হলে আমি নিজে তোমাকে জানাবো। 
সে দিন আর আসবে না রে। তার আগেই আমি মরে যাবো।
অমন করনা মা। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনা। 
মা মেয়ের ঝগড়ার মধ্যে দিদি নাক গলায়না। দিদি খুব শান্ত স্বভাবের। শালিনী ঠিক উল্টো। ওর বাবার মত এক রোখা , এক গুয়েঁ , জেদি মেয়ে। তাই বাবার খুব প্রিয় ছিল শালিনী। 
এর কোন সমাধান হবে বলে মনে হয়না। জিজু, দিদিকে টুকাইকে নিয়ে ফিরে জান। জিজুকে আজ খুব গম্ভীর মনে হচ্ছিল। শালিনীকে কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা। ও আলাদা ধাতে গড়া। ওর চিন্তা ধারা সম্পুর্ণ আলাদা। এর পর ও কি এ বাড়ীতে কেউ আসবে শালিনীকে দেখতে? 
মা মেয়ের মধ্যে কথা নেই। শালিনী নিজের ঘরে। মা রান্না ঘর আর পূজোর ঘর এই করে দিন কাটাচ্ছেন।
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল। নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না। ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা। এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল। আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে? 
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না? সত্যি বল। যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই!! 
উত্তর: মোটে না। ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে। আমি অপমানিত হয়েছি। তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে। তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে। সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই। 
না। আমি কোন প্রশ্রয় দি নি। ওটা ওর বোঝার ভুল। আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে। পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না। খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে। প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি। তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ। 
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী। ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে। তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে! তোমার বলা উচিত ছিল। 
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না। 
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে। তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা? 
তা তো বলিনি। হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয়। বাহ্য চাক চিক্যকে নয়। মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয়। 
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই!
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না। প্রসঙ্গ বদলাও। আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে। সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী। তারা কর্মে বিশ্বাস করে। তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয়। তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা। এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায়। কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ। শান্ত সুন্দর। 
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে? 
বলা মুস্কিল। আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব। 
কিন্তু তোমার অয়ন! 
আমার অয়ন কেন বলছ? ও কেবল ই বন্ধু। আর কিছু না। 
মন থেকে বলছ! 
একদম। 
কিন্তু আমি মানি না। তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই। 
কেন থাকবে না? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে, কাজে কর্মে , চাল চলনে। 
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন? 
আমি মেয়ে , মা.. আমার দোষ দেবেন!
নাও হতে পারে। বলে দেখ। 
সম্ভব নয়।


আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

৮ম পর্ব

সকালে ঘুম থেকে উঠেই
অয়নের ফোন ।
সুপ্রভাত শালু ।
সুপ্রভাত । এমন ভাব দেখাচ্ছ যেন আমাকে অনেক দিন দেখনি !
সকাল সকাল আমাকে বকছ । 
তা কেন ! তবে এইতো মাত্র কয়েক ঘণ্টা কেটেছে ! সকাল সকাল ফোন করলে মা কি ভাববেন বলত ?
কি আবার ভাববেন ? আমাদের বিয়ে হবে তার আগে একটু ঘুর-বোনা ! আজ কোথায় যাবে বল ?
না আজ আমি কোথাও যাবো না ।
কেন ?
আমার কাজ আছে । দেখ অয়ন তুমি আমাকে ভালো করে যান আমি অহেতুক অকারণে কোথাও বেরুতে ভালো বাসিনা । আমার অন্য কাজ আছে ।
ওকে বাবা । টেক ইট ইজি ।
নো আই কান্ট টেক ইট ইজি । এইখানেই তোমার আমার মধ্যে পার্থক্য !
মানে?
মানে সিম্পল ...।
শালিনী যানে কথাগুলো অয়নের ভাল লাগবে না তাও ও বলতে বাধ্য হয়, “আজ  আমার বাবার মৃত্যু দিবস। আজ আমি একা থাকতে চাই অয়ন । আমাকে একা থাকতে দাও !”  
অয়ন বোঝে শালিনীর মনের অবস্থা । তাই আর কথা বাড়ায়না । “ও আচ্ছা আমি দুঃখিত । আমি জানতাম না । তুমি তোমার মত থাক ।  বলে ফোন কেটে দেয়”  
শালিনীর চোখের জল যেন শ্রাবণের ধারার মত অবিশ্রান্ত বয়ে যায় । কিছুতেই ভুলতে পারেনা বাবার সেই অকাল মৃত্যুর  দিনের কথা ।
একাকীত্বর মধ্যে  বাবার কথাগুলো মনে পড়ে ,“ মৃত্যু , ধ্রুব সত্য কিন্তু তাকে কেউ সহজ ভাবে নিতে পারেনা মা । আজ আমি রোগ শয্যায় পড়ে আছি কাল হয়তো থাকবোনা । তখন তোরা আমার ছবি টাঙিয়ে ফুলের মালা দিয়ে তিনটে ধুপ জ্বালিয়ে আমাকে স্মরণ করবি কিন্তু আমি নিজেও জানি না তোদের ডাক আমার কাছে পৌঁছবে কি না ! খুব আশ্চর্য লাগে আমার !”

বাবা তুমি কেন  এরকম বাজে কথা বলে আমাদের মনে দুঃখ দিচ্ছ ? আমাদের মনে কষ্ট হয় না তোমার এই কথা শুনলে ? তুমি কি চাও আমরা কষ্ট পাই?  
নারে মা । আমি চাইনা তোরা কষ্ট পাস ।  নিয়তির কাছে সকলেই বাঁধা । কি করি বল ? পেটের ব্যথাটা বেড়েছে । আমি বুঝতে পারছি আর বেশি দিন নয় ।
সেই দিন বেল ভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয় বাবাকে ।  অর্কদা , আমরা সকলে শত চেষ্টা করেও বাবাকে বাঁচাতে পারিনা । ডাক্তার চক্রবর্তী অপারেশনের পর  বাবাকে দুদিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর বলেন পেসেন্ট কোমায় আছে । অবস্থা ক্রিটিকাল বাঁচানো সম্ভব নয় । আমাদের তখন টাকা জলের মত খর্চা হচ্ছে । মা রাত দিন ঠাকুরকে ডাকছেন আর চোখের জলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন । তবুও ঠাকুর শুনলেন না মায়ের ডাক । শেষে বাবা রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জুলাই ২ তারিখে । সারাজীবন আমার মনে থাকবে সেই  দিনটার কথা  । আমার চরম দুঃখের দিন সেই দিনটা ।  আমি ওই দিন একা থাকি ।
পরের দিন ঃ-  
জুলাই তিন তারিখে NISER এ জয়েন করার জন্য চিঠি আসে । শালিনী হার্ড কপি সফট কপি দুটোই পেয়ে অয়নকে জানায় । জুলাই ৭ তারিখে জয়েনিং ডেট ।
অয়ন বলে তুমি যা ভালো বোঝ তাই কর । তোমার কেরিয়ারের ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করার কে?
তা নয় তবুও তোমাকে জানালাম ।
Advertisement for : Faculty Position in National Institute of Science Education and Research for  “Assiistant Professor, Physics , NISER Bhubaneswar, Odisha, India. Pay Band 3 15600 to 39100 INR Grade Pay 7600. Free Quarter within Institute Campus. 
এই বিজ্ঞাপনের অপেক্ষায় আমি ছিলাম । আমার গাইড আমাকে বলেছিলেন ওই বিজ্ঞাপন বেরুবে বলে ।  আমি এক মাস আগে বেঙ্গালুরু জাওয়ার আগে ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলাম । ওটার জন্যই বেঙ্গালুরু জাই পোষ্ট ডক্টরাল রিসার্চের জন্য। ৬ মাস ওখানে কাজ করি। ওই কাজের সুবাদেই  আজ এই এপএন্টমেন্ট লেটার পাই ।  
আমার স্বপ্ন অয়ন। ওই Institute এ কাজ করার সুযোগ পাব চিন্তা করতে পারিনি । আমি আজ খুব খুশি । আমি জানিনা তুমি কতটা খুশি !  


আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
৯ম পর্ব
অয়নের সকালটা কেমন যাবে জানেনা। সকাল সকাল মেঘলা আকাশ। আকাশ ভারাক্রান্ত। ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। শ্রাবণের বর্ষণমুখর দিনে, মনে মনে কবিতা রচনা করার প্রবল চেষ্টা। কলম  নিয়ে বসে পড়ে। নিজের ডাইরিতে লিখতে থাকে: 
শ্রাবণ ধারা
আজি শ্রাবণ ধারায় বসিয়া আছি তোমার পথ চাহিয়া
তুমি আসিবে বলিয়া মন আমার ওঠে গান গাহিয়া।
একি অবিশ্রান্ত ধারা চিত্তে জাগায় পুলক আমায় 
বর্যণ মুখর দিবসে বসিয়া আমার ই আঙ্গিনায়।।
একি ক্লান্ত বিষম দিবস রজনী যায় যে বোহিয়া
নাহি মানে কভু কোন বাধা কোন বাঁধনের হিয়া।
আঁকি তোমারি চিত্র নিত্য আমার মানস পটে
উত্থাল যৌবনের উন্মত্তো হৃদয় প্রেক্ষাপটে
নাহি কভু ভুলি জাতনা বিরহের বহ্নি শ্রোতে।
একি ঘন মেঘের আচ্ছাদনে আঁধার রাতে
গুনি মুহুর্ত প্রহরগুলি যায় অনিদ্রার রাতে।।
তুমি আসিবে বলিয়া মন আমার ওঠে গান গাহিয়া।
আজি শ্রাবন ধারায় বসিয়া আছি তোমার পথ চাহিয়া।।

অয়ন কাল ফিরে যাবে বেঙ্গালুরু। বাবা মাকে শালিনীর কথা বলেছে।
ওনারা কিছু উত্তর দেন নি।
মা বলেছেন তোমার যেখানে পছন্দ সেখানেই আমরা তোমার বিয়ের ঠিক করবো। তবে ওই মেয়ে খুব অহংকারী। ওইখানেই কি তুমি মন স্থির করেছ?
হ্যাঁ মা। ও একটু জেদি কিন্তু আজকাল ওর মত মেয়ে তোমরা খুঁজলে পাবে না। 

কেন পাবো না!
না মা পাবে না।
আমি বলে রাখছি,  ও যা  করেছে সেটার জন্য আমি দায়ি।
আসলে আমি ওকে বুঝতে ভুল করি। ও যে অন্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা সেটা আমার বোঝা উচিত ছিল।

শালিনীকে খুব খুশি খুশি লাগছিল।  হঠাৎ শালিনীর মুখেও রবীন্দ্র সঙ্গীতের এক গানের কলি ঃ-   
আজি ঝর ঝর শ্রাবণ দিনে 
জানিনে জানিনে কিছুতে কিছু যে মন মানে না
ঝর ঝর মুখর বাদর দিনে ...।
পরে সুরু করে তার প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত,  শ্রাবন্তি র কণ্ঠেঃ
শাও্বন গগনে ঘোর ঘনঘটা
       নিশীথ যামিনী রে ...।
কুঞ্জপথে সখি,  কৈসে যাওব
       অবলা কামিনী রে ...।।
মায়ের ডাকে শালিনীর গান থামে। স্নান সেরে খেয়ে নে। কাল জাওয়া। আবার ওই অচেনা অজানা জায়গা। 
তোমার কোন চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আমি ত একাই সব জায়গায় যাই।  এবারে  আমাকে  অয়ন ভুবনেশ্বরে ছেড়ে নেক্সট ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু ফিরে যাবে। এর আগের বার ত আমি একা গিয়েছিলাম বেঙ্গালুরু তখন কোন অসুবিধে হয়েছিল  কি?
তা হয়নি। তা তোমরা যা ভাল বোঝ তাই কর। আমি আর কদিন মা! তোমার বিয়েটা ভালয় ভালয় হলে বাঁচি।
হ্যাঁ মা তা আর বলতে! তোমার গলা থেকে মাছের কাঁটা নামবে!! তাই না?
ওই আরম্ভ হল। একটু যদি মায়ের মনটা বুঝতিস শালু। উনি আমাকে একলা ফেলে চলে গেলেন এই জঞ্জালে আমি ছট পট করছি। ঠাকুর জানেন সে কথা। মা রান্না ঘরে চলে যান।
শালিনী নিজের ঘরে ওর  জিনিষগুলো ভাল ভাবে চেক করে নেয়। দুটো ট্রলি ব্যাগ,  কিছু বই একটা মেকআপ বক্স (অয়ন ওকে প্রে-সেন্ট করেছিল) আর অন্য টুকি টাকি জিনিস। বাকি যদি কিছু সেরকম প্রয়োজন হয় তবে সেগুল ওখানেই কিনে নেবে। ফ্লাইটে কম লাগেজ ভাল এখন ত ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে ২৫ কেজির বেশি নিতে দেয়না।  এক্সট্রা লাগেজের জন্য $ 100  চার্জ করে। তবু ডোমেস্টিক ফ্লাইটে অতটা রেস্ট্রিক্সন নেই।  কাল সন্ধ্যা ৭ টার  ফ্লাইট। সন্ধ্যা ৫ টায় চেক ইন। সিকুরিটি চেকের পর সন্ধ্যায়  INDIGO র ফ্লাইট  No  6E447 CCA to BBA Dep. Time 19.05 hrs।  অয়ন বিকেল ৫ টার  সময় নেতাজী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ডোমেস্টিক টার্মিনালের কাছে আমার জন্য অপেক্ষা করবে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে।
মা দক্ষিণেশ্বরের কালী ঠাকুরের ফুল দিয়ে মাথায় আশীর্বাদ করে শালিনীকে রওনা করেন ওর মা ।  শালিনী বিকেল ৪.৩০ টের সময় ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মা দুর্গা দুর্গা বলে।      

নেতাজী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট :
সন্ধ্যা ৫ টায় চেক ইন। সিক্যুরিটি চেকের পর ১৯টা ০৫ এ  ইন্ডিগো র ফ্লাইট। অয়ন বিকেল ৫ টার  সময় নেতাজী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের ডোমেস্টিক টার্মিনালে  আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।  
এয়ারপোর্টে পৌঁছেই অয়নকে দেখে ধাতস্থ হয়। অয়ন ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এর কাছেই ছিল। শালিনীকে দেখে কাছে চলে আসে। লাগেজ গুল সঙ্গে নিয়ে অয়ন ওয়েটিং লাউঞ্জে চলে যায়। দুজনে এই-প্রথম এক সঙ্গে ফ্লাইটে যাত্রা করবে তাও মাত্র এক ঘণ্টার। সিকুরিটি চেকের পর কন-ভয়রে লাগেজ চলে যায়। ইন্ডিগোর ফ্লাইট নাম্বার 6E447 Dep. Time 19.05 hrs. From CCA to BBI মানে কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর। ভুবনেশ্বরে ১৯।৫৫ অর্থাৎ  ৮ টায় পৌঁছবে। Indigo Airlines এর বাস যাত্রীদের নিয়ে প্লেনের কাছে পৌঁছে দেয়। দুজনে পাশা পাশী উইন্ডোর পাসের দুটো সিটে বসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন টেক অফ করে। উইন্ডোর সার্সি দিয়ে বঙ্গপ সাগরের দৃশ্য। নিচে সুন্দর বনের কিছুটা দৃশ্য দেখা জায়। আকাশ পরিষ্কার তাই দেখতে অসুবিধে নেই। এর পর খণ্ড খণ্ড মেঘের মধ্যে দিয়ে প্লেন এগিয়ে চলে নিচে নীল জল রাশি। সব মিলিয়ে মনোরম দৃশ্য।
অয়নঃ-  কফি খাবে শালু।
শালিনীঃ- না ওই হাড় মাগ্যি কফি খাওয়ার আমার কোন ইচ্ছে নেই।
এই ফ্লাইটে কিছু কমপ্লিমেন্টরই নেই। কিং ফিশারে তাও কিছু স্ন্যাক্স দিত।
কিছুক্ষণের মধ্যেই  ভুবনেশ্বর এসে-গেল। ধউলি শান্তি স্তূপ দেখা গেল। আকাশ থেকে ভুবনেশ্বরের এরিয়াল সার্ভে করে-ফেললাম দুজনে। ওটা লিঙ্গরাজ মন্দির বোধ হয়। বেশ সহর ভুবনেশ্বর।

বিজু পট্টনায়ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ার পোর্টঃ
ছোট এয়ারপোর্ট হলেও বেশ সুন্দর ভুবনেশ্বর এয়ারপোর্ট। রাতের আলো ঝলমলে শহর। রাস্তা সুন্দর পরিষ্কার। এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেক আউটের পর অয়নকে সঙ্গে নিয়ে কারে উঠি। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করি,  কত সময় লাগবে,  ওখানে কাছে হোটেল আছে কিনা,  ইন্সটিট্যুটে থাকার ব্যবস্থা আছে কিনা ইত্যাদি। ড্রাইভারের কাছে শুনি  গেস্ট রুম আছে এবং ক্যান্টিনে বলা আছে আমাদের জন্য রাতের ডিনার এর জন্য।  আমরা শুনে ধাতস্থ হই। আমাদের দুজনকে NISER Institute থেকে কার রিসিভ করে নিয়ে যায়।  এয়ারপোর্ট থেকে সোজা রাস্তা সচিবালয় মার্গ ধরে ডানদিকে ঘুরে আবার সৈনিক স্কুল পেরিয়ে আবার ডান দিকে ঘুরলেই একটু পরে  National Institute of Science Education and Research,  Bhubaneswar.

খুব সুন্দর ইন্সটিট্যুট। ছিম ছাম পরিষ্কার ক্যাম্পাস। আমাদের দুজনকেই রিসিভ করার জন্য ডঃ জয়দীপ ভট্টাচার্য,  রিডার আসেন। অমায়িক ভদ্রলোক।  উনি  Jawaharlal Neheru Centre for Advance Scientific Research, Bangalore থেকে Ph.D করেছেন শুনে শালিনী খুব আগ্রহের সঙ্গে ওনার সঙ্গে বাক্যালাপে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এখানকার পরিবেশ এবং রিসার্চের স্কোপ অনেক বলে উনি বলেন। শালিনী  ওনার সঙ্গে কথা বলতে এতই মসগুল ছিল যে অয়নের কথা একদম  ভুলে যায়। পরের দিন বিকেল বেলা ৫ টায় অয়নের  Indigo  Airlines  এর 6E265 ফ্লাইট বেঙ্গালুরু যাওয়ার।  19.05 এ ছাড়বে রাত 22.20 পৌঁছবে।

অয়ন শালিনী এবং ডঃ ভট্টাচার্য র কথার মধ্যে শালিনীর উদ্দেশ্যে বলে শালিনী তাহলে আমি যাই!   
ও মা সেকি? আপনার ত এখানেই থাকার ব্যবস্থা আছে। বাই দি বাই আমি জয়দীপ ভট্টাচার্য এখানে ছোট খাট একটা  পোষ্টে  আছি।
শালিনী খুব অপরাধী মনে করে নিজেকে। অয়নের দিকে তাকিয়ে বলে সরি অয়ন আমার পরিচয় করান উচিত ছিল। আসলে...।
আসলে তুমি এখানে এসে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছ। হ্যাঁ ডঃ ভট্টাচার্য আমি ‘অয়ন’। বাকিটা শালিনীর কাছ থেকে জেনে নেবেন। আমার তাড়া আছে। বাই! বলে গট গট করে নিজের লাগেজ নিয়ে চলে জায়।

শালিনী এই পরিস্থিতি কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। অয়ন! অয়ন!! দাঁড়াও লক্ষ্মীটি,  আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। 
অয়ন পিছু ফেরে না। এগিয়ে চলে। সে খুব অপমানিত বোধ করেছে। হবু বৌয়ের কাছথেকে এরকম উদাসীনতা আশা করেনি।


১০ ম পর্ব “আবিষ্কারের নেশা” 
(পূর্ব প্রকাশিতর পর)  ত্রিভুবনজিৎ  মুখার্জী ৯.৮.২০১৪ ।

এখানে শালিনী ভালোই আছে । সকাল ৯ টা থেকে ক্লাস । গেস্ট হাউস থেকেই ক্লাস করছে । নিজের পড়াশুনোর জন্য লাইব্রেরী তে বইয়ের অভাব নেই । রেফারেন্স বইগুল লাইব্রেরিয়ানের কাছথেকে একে একে নিচ্ছিল । কার্ডে ৬ টা বই পায় তাই সেগুল বেছে নিতে নিতে হঠাৎ ডঃ ভট্টাচার্য র সঙ্গে দেখা।
গুড মর্নিং ।  কেমন লাগছে আমাদের ইন্সটিটিউট ?
ভেরি গুড মর্নিং সার । হ্যাঁ ভালোই লাগছে । আমি এইরকম পরিবেশ ই খুঁজছিলাম । আপনাদের ল্যাব দারুণ। আমার খুব ভালো লাগছে এখানে ।
কোন অসুবিধে হলে বলবেন। এখানকার  একটা প্লাস পয়েন্ট কি জানেন এখানে ছেলে মেয়েরা ওয়েল ডিসিপ্লিন্ড তারা নিজের পড়াশুনো আর কেরিয়ারের কথাই শুধু ভাবে ; অন্যদিকে মন দেওয়ার সময় পায়না   । আসলে সকলেই ভাল মেরিটের ছেলে মেয়ে তাই ওদের পড়াতে অসুবিধে হয় না। আপনি কি বলেন?
হ্যাঁ নিশ্চই । স্টুডেন্ট লাইফে ডিসিপ্লিনটা র গুরুত্ব অনেক । যারা সেটা মেনে চলে তাদের জীবনে উন্নতির সোপান আপনা হতে আসে । ঠিক এস্কেলেটরের মতন তর তর করে এগিয়ে যাবে কোন বাধা থাকবেনা।
ঠিক বলেছেন । আমি একটু আসছি পরে দেখা হবে কেমন !
হ্যাঁ সার ।
আজ শালিনীর কোয়ার্টার এলটমেন্ট এর চিঠি আসে । খুব সুন্দর ছিম ছাম পরিবেশের মধ্যে কোয়ার্টার গুলো । ওর স্কেল অনুযায়ী  কোয়ার্টার এলট করা হয়েছে । বিব্লকের সেকেন্ড ফ্লোরে ডি-৫’  সামনে ফুলের  বাগান । ছোট্ট লন আছে । বিকেলে অনেকেই ওখানে সময় কাটান। বিব্লকে প্রায় সবাই ব্যাচেলার । একজন ম্যারেড এখানকার একাউন্টস অফিসার । উনি সদ্য বিয়ে করেছেন। ভদ্রলোক সাউথ ইন্ডিয়ান মনে হচ্ছে । আলাপ হয় নি । কাল রবিবার কোয়ার্টারে শিফট করবে । আজ দেখে-গেল । অফিস থেকে চাবি আর রেজিস্টার নিয়ে একজন কেরানী এসে শালিনীকে চাবি দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে গেল ।
সারাদিনের ক্লাসের পর টুকি টাকি জিনিষ কিনতে কাছেই মার্কেটে যায় বিকেলে । সব প্রয়োজনীয় জিনিষ একে একে গুছিয় কিনে একটা অটো নিয়ে ফেরে । এখানকার রাস্তাগুলো খুব পরিষ্কার , কলকাতার মতন খানা ডোবায় ভর্তি রাস্তা নয় এখানে । এখন ও কোথাও যাওয়া হয়নি । মাইনে পেলে মা বলেছেন লিঙ্গরাজ  মহাপ্রভুর মন্দিরে গিয়ে পূজো দিতে । 


  
শালিনী  রবিবার সকালে ১৫ মিনিট ধ্যানে বসে । মেডিটেশন বা ধ্যান একটি বিশেষ ধরনের একাগ্রতা  যাদ্বারা যে কোন  কাজ খুব সহজেই করা যায় । মানুষের মনকে স্থির করতে সাহায্য করে । প্রত্যেক মানুষের দিনে ১৫ ২০ মিনিট মেডিটেশন করা প্রয়োজন । ও এটা বহুদিন ধরে চালিয়ে আসছে । 
শালিনী তার প্রথম ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে কিছু তথ্য এবং এই বিষয় পাঠের আবশ্যকতা সম্পর্কে বক্তব্য রাখে । ছাত্র ছাত্রীরা ওর লেকচার মন দিয়ে শোনে । ওর  অধ্যাপনা এবং গবেষণার অভিজ্ঞতার কিছু বিষয় বস্তুর কথা ছাত্র ছাত্রীদের  সামনে তুলে ধরে তাদের  বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য । সব  ছেলে মেয়েরা ধৈর্য নিয়ে সম্পূর্ণ লেকচার শোনে । এটা যেহেতু ইন্ট্রোডাক্টারি লেকচার সেটাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করতে পেরেছে বলে শালিনী মনে করে কারন সব ছাত্র ছাত্রীরা এক স্বরে ওর কথাগুলোর গুরুত্ব এবং আবশ্যকতা উপলব্ধি করে ওকে ধন্যবাদ দেয় ক্লাসের শেষে । এটাই ওর কাছে চরম পাওনা শিক্ষিকা হিসেবে। প্রথম ক্লাসের অভিজ্ঞতার কথা অয়ন কে রাতে ফোনে বলে । যদিও অয়ন এ বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দেয়না। তা এই কথোপকথন থেকে স্পষ্ট  ।
শালিনী: আজ আমি ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীদের কাছথেকে খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি । আমি আজ খুব স্যাটিস্ফায়েড ।
অয়নঃ তুমি ত ভালো টিচার ।আগেও পড়িয়েছ স্কটিশে । রিসার্চ ও করেছএ আর বেশি কি কথা !
না অয়ন এখানে পড়ানোর আলাদা মর্যাদা আছে সেটা তুমি বুঝবেনা ।
তা হয়তো ঠিক । তবে ...!
তবে !! তবে কি ?
না মানে আমি বেঙ্গালুরুথেকে বদলি হতে পারবোনা । কারন আমার বর্তমান কোম্পানি র প্যাকেজ ভালো এবং এখানে আমার ফিউচার যথেষ্ট ভাল ।
আমি ত তোমায় তা বলিনি । তুমি তোমার কাজে থাক আমি আমার কাজে থাকি ।
শালু সেটাতে কি আমাদের বিবাহিত জীবন সুখীর হবে ? তুমি বল !
কিন্তু অয়ন আমি এই কাজে এত মসগুল এবং সন্তুষ্ট তোমাকে ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছিনা ।
এত ছাত্র ছাত্রী পড়াও তাদের বোঝাতে পার কিন্তু আমার বেলায় তোমার সব অভিজ্ঞতা চুপসে যায় । কি হয় তোমার বলত ?
ওরা ছাত্র ওদের কথা আলাদা । তুমি কি আমার ছাত্র হতে চাও ?
এবার বোধ হয় তাই হতে হবে । তাতে তোমার সান্নিধ্য পাব তোমার সঙ্গে এক বিছানায়...!
ও ছাড়া কি আর কিছু চিন্তা কর না তুমি ?
কি ছাড়া ?
আমি জানিনা যাঃ তুমি খুব ...!  
আমি কি ?
বলবনা ।
তবে রাখি !
না না প্লিজ রেখোনা । আমি এই সময় টুকু পাই তোমার সঙ্গে কথা বলার । একটু কথা বলনা ।
সুধু কথায় কি হবে ? কিছু কাজে কর । এক কাজ কর তুমি কম্প্যুটারে এস স্কাই-পিতে । আস্তে পারবে ?
না আমার স্কাই পি একাউন্ট নেই ।
খুলে নাও । এখন রিসেন্ট ভার্সন আছে । চ্যাট করবো তোমার সঙ্গে । তোমায় একটু দেখতে পাব অন্তত বল ।
দেখে কি করবে ?
এসেই দেখনা !
কাল চেষ্টা করবো । বাই ।
শালিনী যানে অয়ন অধৈর্য হচ্ছে ওকে পাওয়ার জন্য । সেটাই স্বাভাবিক ছেলেদের ক্ষেত্রে । শুধু ছেলেরা কেন মেয়েদের ক্ষেত্রেও ওটাই স্বাভাবিক কিন্তু ও কেন আলাদা ও নিজেই জানেনা ।
রাতে খাওয়ার পর বিছানায় গিয়ে সারাদিনের ক্লান্তিটা আরামে কাটাতে চাইল ।  অয়নের ফোন দেখে  আশ্চর্য  না হয়ে পারলোনা ।
হ্যালো ! এখন শুতে যাওনি ?
না ঘুম পাচ্ছেনা । তোমার মুখটা মনে পড়ছে ।
তুমি ছুটি নিয়ে চলে এস ।
কি বলছ তুমি ? তোমার মাথাটি খারাপ হয়েছে ?
হ্যাঁ তাই হয়েছে আমার তোমাকে চাই ।
কিন্তু বিয়ের আগে সেটা সম্ভব না । তা ছাড়া আমার নতুন চাকরিতে কে আমায় ছুটি দেবে ?
আমি কিছু জানিনা । আমার কথা তোমাকে শুনতে হবে
তাই ! যদি না শুনি !!
হ্যাঁ তাই ।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা । আমার একটা বেগালুরুতে ট্রেনিং আছে এক মাসের । সেটা বোধ হয় পরের মাসের ১০ তারিখ নাগাদ । এখন কিছু ঠিক হয়নি । তবে যেতেই হবে।
তা ১০ তারিখ অব্ধি আমি কি করব ?
আঙ্গুল চোষ ।  কথাগুলো বলে ফোন কেটে দেয় ।
চলবেঃ-

১১ দশ পর্ব 
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবানজিৎ  মুখার্জী  / ২০।৮।২০১৪
এখানে বেশ খাটুনি আছে । সকাল ৮টা থেকে ক্লাস । প্রাক্টিকাল ক্লাস । প্রায় সেমিনারসিম্পোসিয়াম তাছাড়া কুইজ ,আওয়ার্লিমান্থলি টেস্ট প্রশ্ন পত্র করা ছাত্র ছাত্রীদের প্রপারলি গাইড করা ইত্যাদি। নিজেকে তৈরি করতে হয় তার জন্য লাইব্রেরিতে রিসার্চ টপিক পড়া । রেফারেন্সের জন্য বিভিন্ন বই পড়ে তবেই ক্লাসে জাওয়া । এখানকার পড়াশুনোর ধরন সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। স্টুডেন্ট টিচার রেলেসনশিপ কিছুটা পরিবারের মতন। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীকে প্রপারলি গাইড করা অধ্যাপক অধ্যাপিকার দায়িত্ব যেটা সচর আচর অন্য সাধারণ শিক্ষানুষ্ঠানে দেখা যায়না । তাই এখানে শুধু থিওরি নয় প্রাক্টিকাল সেমিনার , সিম্পসিয়াম কি করে কন্ডাক্ট করতে হয়  এবং বিষয় সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞানের বিকাশের মূল বীজমন্ত্র দেওয়া হয় জাতে  এখান-থেকে সর্বোৎকৃষ্ট ছাত্র ছাত্রী পাস করে বেরিয়ে সেই বিষয়ে সম্পুর্ণ জ্ঞান আরোহণ করে  আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে পারে ।
শালিনী একদম সময় পায়না । কোনমতে সকালে দুটো পাউরুটির টোষ্ট এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ে । সকাল ৮ টা থেকে প্রাক্টিকাল  বেলা ১.৩০ টায় ক্যান্টিনে লাঞ্চ খায় । বেলা  ২.০০ থেকে আবার ক্লাস । সারাদিন কি করে সময়গুলো চলে যায় বোঝা যায়না । কাউকে বেশি ফোন করতে পারেনা । রাতে যা মায়ের সঙ্গে আর অয়নের সঙ্গে দুটো কথা হয় ।
সারাদিনের খাটা খাটুনিতে রাতের ডিনারের জন্য দুটো রুটি একটু তরকারি আনিয়ে নেয় কাছের হোটেল থেকে । খাওয়ার এক কাপ গরম দুধ খেয়ে সোজা বিছানায় । চোখ বুজলেই গভীর নিদ্রা ।
 সারাদিনের এই ব্যস্তময় জীবন মানুষকে অন্য কিছু ভাববার সময় দেয়না ।  তাই অয়নের কথা ভাববার অবকাশ নেই। অয়ন কিন্তু রেগে যায় বারে বারে। ও শালিনীকে চাকরি ছাড়তে বলেছে । শালিনীর সাফ কথা ,“আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে অসম্ভব ।” কথাটা শুনে অয়ন চুপসে যায় । কিছু করার নেই । নারী স্বধীনতার যুগে ওর কথা কে শোনে আর শুনবেই-বা কেন !  
শালিনী ডঃ ভট্টাচার্যর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ কারন উনি সমস্ত সময় সব বিষয়ে  ওকে গাইড করে যান । সব সেমিনারে ডঃ ভট্টাচার্য শালিনীর পাসেই থাকেন । এই ডঃ ভট্টাচার্য লোকটি খুব অমায়িক । উনি কেন অবিবাহিত জানতে ইচ্ছে করে শালিনীর । কিন্তু কারুর ব্যক্তিগত ব্যাপারে জিগ্যেস করা ওর রুচিতে বাধে ।
 একদিন রবিবারে সকালে মর্নিং ওয়াকে শালিনীর সঙ্গে দেখা ডঃ ভট্টাচার্য ।
ডঃ ভট্টাচার্যঃ-  গুড মর্নিং 
শালিনীঃ-    মর্নিং সার ।
আমাকে সার বলেন কেন ? আমি আপনার কলিগ ।
না তা হয়না সার । আপনি সিনিয়ার । তা ছাড়া আপনি প্রফেসার আমি আপনার ছাত্রীর মতন । আমি অনেক জুনিয়ার । আপনাকে সার না বললে ছাত্র ছাত্রীরা কি শিখবে আমাদের কাছ থেকে !
কিন্তু আমরা বন্ধু ত হতে পারি ।
বন্ধু ! না সার বন্ধু !! ও সব ফেস বুকে চলে প্রাক্টিকাল লাইফে নয় ।
বন্ধুর কোন বয়েস হয়না । আমি আপনার কলিগ্ , বন্ধু হতে আপত্তি কোথায় ?
না আপত্তি নেই তবে সহমতিও নেই ... আমার বন্ধু আছে । আমি এনগেজড    বলে শালিনী একটু এগিয়ে যায় । আমার একটু পার্সোনাল কাজ আছে , আমি আসি সার । নমস্কার ।  বলে এগিয়ে যায় ।
ক্ষিপ্র গতিতে পা চালিয়ে নিজের ঘরে পৌঁছে এক গ্লাস জল খায় । অয়নকে ফোন করে । অয়ন তুমি আমাদের বিয়ের দিন ঠিক কর । আমাদের বিয়ে হওয়া উচিৎ ।
শালুর কথা শুনে অয়ন হচ কচিয়ে যায় । কি হল শালু ? কিছু হয়েছে ?
না কিছু হয়নি! তবে বিয়ে যখন করব বলে স্থির করেছি তখন আর দেরি করে লাভ নেই। তোমার মা বাবা কে বলে দিন স্থির কর আমি আমার মাকে ফোন করে সব বলছি । এই মাসেই কোন দিন ঠিক কর ।
আ-মিকি যাবো শালু ?
না তার দরকার নেই । তুমি এলেই  হ্যাঁলাম করবে হয়ত সকলের সামনেই ... 
না করব না । প্রমিস্ । আমি নেক্সট ফ্লাইটে যাচ্ছি । কোম্পানির কাজ আছে  কলকাতাতে । এমনি যেতাম । না হয় তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাব । কি বল ?
তোমাকে কিছু বলার উপায় নেই । আমার ছুটি নেই । কি করে তোমার সঙ্গে যাব ? বি প্রাক্টিকাল অয়ন সব বিষয় ছেলে মানুষী করা তোমার স্বভাব ।
আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে । একটু হামি খাব ।
আমি কিন্তু ফোন কেটে দেব ।
না না কেট না প্লিজ ।
তবে ওসব কথা বলছ কেন ?
কি সব কথা ডার্লিং !
জানিনা । তোমরা সব এক গোয়ালের ষাঁড় ।
তোমরা ! মানে !!  আর কেউ জুটেছে বুঝি !!! ওই চশমা পরা লোকটা নিশ্চয় ঘুর ঘুর করছে ? আমি জানতাম ওর মতলব ভালোনা ।
কি জাতা বলছ ! উনি আমার সিনিয়ার প্রফেসার । আমার গাইড । ওনার বিষয় এসব বলতে তোমার লজ্জা করছে না । সকলকে তোমার দাঁড়ি পাল্লায় ওজন করনা অয়ন।
তাহলে আমি তোমার কাছে জাবনা । তুমি আমাকে সব সময় বাজে কথা  শোনাও কিন্তু শালু । আমি সহ্য করি তোমাকে ভালবাসি বলে ।
আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি বলে আজ তোমাকেই সন্মান দিয়ে বলছি বিয়ের প্রস্তুতি কর । আর দেরি করা ভালনয় ।
 শালুর মুখে আজ ভালবাসার কথা শুনে অয়ন স্তব্ধ হয়ে যায় । শালু সত্যি তুমি আমাকে ভালবাস ?
হ্যাঁ ! না বাসার কি আছে ? মেয়েরা একবার ই ভালবাসে মশাই । তোমাকেই ভালবাসি অন্য কাউকে নয় । এটা তুমি জানতে না!
কি করে জানব । মুখ ফুটে বলনি কোন দিন আজ বললে । সর্বদাই কলেজ , রিসার্চ , স্টুডেন্ট এই তোমার মুখে শুনেছি ।  প্রেম , ভালবাসা এসব তোমার মুখে দুর্লভ ।
আমিও মানুষ , আমি অন্যদের থেকে কি করে আলাদা হব বল।
তা ঠিক তবে তুমি বড্ড রুক্ষ । অন্যদের মত নও । আবার অন্য মেয়েদের মত শস্তাও নও যেটা আমাকে সবচেয়ে  বেশি আকৃষ্ট করে তোমার প্রতি
তাই ! যানতাম-না । যেনে খুশি হলাম ।
আমিও যেনে খুশি হলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে ।
তবে তোমার মা বাবাকে বল প্রস্তাব নিয়ে যেতে আমাদের বাড়ী ।
বলে দেখব । বাবা কি রাজি হবেন ? মাকে আমি রাজি করিয়ে নেব ।
শালু একটা মিষ্টি হামি দেবে ?
দিলামবলে ফোন  ছেড়ে দেয় শালুলজ্জায় মুখ লালা হয়ে যায় তার । একি ছেলে মানুষী করছে সে !  এটা ছাত্র ছাত্রীরা করে থাকে । না: এবার সংযত হতে হবে তাকে ।
চলবে ঃ-

No comments:

Post a Comment