Saturday, August 30, 2014

আবিষ্কারের নেশা ১১, ১২,১৩,১৪ পর্ব / ত্রিভুবানজিৎ মুখার্জী / ২০।৮।২০১৪


আবিষ্কারের নেশা

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

১১শ পর্ব 

এখানে বেশ খাটুনি আছে । সকাল ৮টা থেকে ক্লাস । প্রাক্টিকাল ক্লাস । প্রায় সেমিনার, সিম্পোসিয়াম তাছাড়া কুইজ ,আওয়ার্লি, মান্থলি টেস্ট , প্রশ্ন পত্র করা ছাত্র ছাত্রীদের প্রপারলি গাইড করা ইত্যাদি। নিজেকে তৈরি করতে হয় তার জন্য লাইব্রেরিতে রিসার্চ টপিক পড়া । রেফারেন্সের জন্য বিভিন্ন বই পড়ে তবেই ক্লাসে জাওয়া । এখানকার পড়াশুনোর ধরন সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের। স্টুডেন্ট টিচার রেলেসনশিপ কিছুটা পরিবারের মতন। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীকে প্রপারলি গাইড করা অধ্যাপক অধ্যাপিকার দায়িত্ব যেটা সচর আচর অন্য সাধারণ শিক্ষানুষ্ঠানে দেখা যায়না । তাই এখানে শুধু থিওরি নয় প্রাক্টিকাল সেমিনার , সিম্পসিয়াম কি করে কন্ডাক্ট করতে হয়  এবং বিষয় সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞানের বিকাশের মূল বীজমন্ত্র দেওয়া হয় জাতে  এখান-থেকে সর্বোৎকৃষ্ট ছাত্র ছাত্রী পাস করে বেরিয়ে সেই বিষয়ে সম্পুর্ণ জ্ঞান আরোহণ করে  আরও গবেষণা চালিয়ে যেতে পারে ।
শালিনী একদম সময় পায়না । কোনমতে সকালে দুটো পাউরুটির টোষ্ট এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ে । সকাল ৮ টা থেকে প্রাক্টিকাল  বেলা ১.৩০ টায় ক্যান্টিনে লাঞ্চ খায় । বেলা  ২.০০ থেকে আবার ক্লাস । সারাদিন কি করে সময়গুলো চলে যায় বোঝা যায়না । কাউকে বেশি ফোন করতে পারেনা । রাতে যা মায়ের সঙ্গে আর অয়নের সঙ্গে দুটো কথা হয় ।
সারাদিনের খাটা খাটুনিতে রাতের ডিনারের জন্য দুটো রুটি একটু তরকারি আনিয়ে নেয় কাছের হোটেল থেকে । খাওয়ার এক কাপ গরম দুধ খেয়ে সোজা বিছানায় । চোখ বুজলেই গভীর নিদ্রা ।
 সারাদিনের এই ব্যস্তময় জীবন , মানুষকে অন্য কিছু ভাববার সময় দেয়না ।  তাই অয়নের কথা ভাববার অবকাশ নেই। অয়ন কিন্তু রেগে যায় বারে বারে। ও শালিনীকে চাকরি ছাড়তে বলেছে । শালিনীর সাফ কথা ,“আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে অসম্ভব ।” কথাটা শুনে অয়ন চুপসে যায় । কিছু করার নেই । নারী স্বধীনতার যুগে ওর কথা কে শোনে আর শুনবেই-বা কেন !  
শালিনী ডঃ ভট্টাচার্যর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ কারন উনি সমস্ত সময় সব বিষয়ে  ওকে গাইড করে যান । সব সেমিনারে ডঃ ভট্টাচার্য শালিনীর পাসেই থাকেন । এই ডঃ ভট্টাচার্য লোকটি খুব অমায়িক । উনি কেন অবিবাহিত জানতে ইচ্ছে করে শালিনীর । কিন্তু কারুর ব্যক্তিগত ব্যাপারে জিগ্যেস করা ওর রুচিতে বাধে ।

একদিন রবিবারে সকালে মর্নিং ওয়াকে শালিনীর সঙ্গে দেখা ডঃ ভট্টাচার্য ।
ডঃ ভট্টাচার্যঃ-  গুড মর্নিং ।
শালিনীঃ-    মর্নিং সার ।
আমাকে সার বলেন কেন ? আমি আপনার কলিগ ।
না তা হয়না সার । আপনি সিনিয়ার । তা ছাড়া আপনি প্রফেসার আমি আপনার ছাত্রীর মতন । আমি অনেক জুনিয়ার । আপনাকে সার না বললে ছাত্র ছাত্রীরা কি শিখবে আমাদের কাছ থেকে !
কিন্তু আমরা বন্ধু ত হতে পারি ।
বন্ধু ! না সার বন্ধু !! ও সব ফেস বুকে চলে প্রাক্টিকাল লাইফে নয় ।
বন্ধুর কোন বয়েস হয়না । আমি আপনার কলিগ্ , বন্ধু হতে আপত্তি কোথায় ?
না আপত্তি নেই তবে সহমতিও নেই ... আমার বন্ধু আছে । আমি এনগেজড    বলে শালিনী একটু এগিয়ে যায় । আমার একটু পার্সোনাল কাজ আছে , আমি আসি সার । নমস্কার ।  বলে এগিয়ে যায় ।
ক্ষিপ্র গতিতে পা চালিয়ে নিজের ঘরে পৌঁছে এক গ্লাস জল খায় । অয়নকে ফোন করে । অয়ন তুমি আমাদের বিয়ের দিন ঠিক কর । আমাদের বিয়ে হওয়া উচিৎ ।
শালুর কথা শুনে অয়ন হচ কচিয়ে যায় । কি হল শালু ? কিছু হয়েছে ?
না কিছু হয়নি! তবে বিয়ে যখন করব বলে স্থির করেছি তখন আর দেরি করে লাভ নেই। তোমার মা বাবা কে বলে দিন স্থির কর আমি আমার মাকে ফোন করে সব বলছি । এই মাসেই কোন দিন ঠিক কর ।
আ-মিকি যাবো শালু ?
না তার দরকার নেই । তুমি এলেই  হ্যাঁলাম করবে হয়ত সকলের সামনেই ... । 
না করব না । প্রমিস্ । আমি নেক্সট ফ্লাইটে যাচ্ছি । কোম্পানির কাজ আছে  কলকাতাতে । এমনি যেতাম । না হয় তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাব । কি বল ?
তোমাকে কিছু বলার উপায় নেই । আমার ছুটি নেই । কি করে তোমার সঙ্গে যাব ? বি প্রাক্টিকাল অয়ন সব বিষয় ছেলে মানুষী করা তোমার স্বভাব ।
আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে । একটু হামি খাব ।
আমি কিন্তু ফোন কেটে দেব ।
না না কেট না প্লিজ ।
তবে ওসব কথা বলছ কেন ?
কি সব কথা ডার্লিং !
জানিনা । তোমরা সব এক গোয়ালের ষাঁড় ।
তোমরা ! মানে !!  আর কেউ জুটেছে বুঝি !!! ওই চশমা পরা লোকটা নিশ্চয় ঘুর ঘুর করছে ? আমি জানতাম ওর মতলব ভালোনা ।
কি জাতা বলছ ! উনি আমার সিনিয়ার প্রফেসার । আমার গাইড । ওনার বিষয় এসব বলতে তোমার লজ্জা করছে না । সকলকে তোমার দাঁড়ি পাল্লায় ওজন করনা অয়ন।
তাহলে আমি তোমার কাছে জাবনা । তুমি আমাকে সব সময় বাজে কথা  শোনাও কিন্তু শালু । আমি সহ্য করি তোমাকে ভালবাসি বলে ।
আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি বলে আজ তোমাকেই সন্মান দিয়ে বলছি বিয়ের প্রস্তুতি কর । আর দেরি করা ভালনয় ।
 শালুর মুখে আজ ভালবাসার কথা শুনে অয়ন স্তব্ধ হয়ে যায় । শালু সত্যি তুমি আমাকে ভালবাস ?
হ্যাঁ ! না বাসার কি আছে ? মেয়েরা একবার ই ভালবাসে মশাই । তোমাকেই ভালবাসি অন্য কাউকে নয় । এটা তুমি জানতে না!
কি করে জানব । মুখ ফুটে বলনি কোন দিন আজ বললে । সর্বদাই কলেজ , রিসার্চ , স্টুডেন্ট এই তোমার মুখে শুনেছি ।  প্রেম , ভালবাসা এসব তোমার মুখে দুর্লভ ।
আমিও মানুষ , আমি অন্যদের থেকে কি করে আলাদা হব বল।
তা ঠিক তবে তুমি বড্ড রুক্ষ । অন্যদের মত নও । আবার অন্য মেয়েদের মত শস্তাও নও যেটা আমাকে সবচেয়ে  বেশি আকৃষ্ট করে তোমার প্রতি।
তাই ! যানতাম-না । যেনে খুশি হলাম ।
আমিও যেনে খুশি হলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো বলে ।
তবে তোমার মা বাবাকে বল প্রস্তাব নিয়ে যেতে আমাদের বাড়ী ।
বলে দেখব । বাবা কি রাজি হবেন ? মাকে আমি রাজি করিয়ে নেব ।
শালু একটা মিষ্টি হামি দেবে ?
‘দিলাম’ বলে ফোন  ছেড়ে দেয় শালু । লজ্জায় মুখ লালা হয়ে যায় তার । একি ছেলে মানুষী করছে সে !  এটা ছাত্র ছাত্রীরা করে থাকে । না: এবার সংযত হতে হবে তাকে ।
চলবে
গল্প বিভাগটি কেমন লাগছে, অনলাইনে মতামত লিখে জানান

১২ দশ পর্ব আবিষ্কারের নেশা 
ত্রিভুবানজিৎ মুখার্জী / ২০।৮।২০১৪
ডঃ ভট্টাচার্য কেন শালিনীর প্রতি ঘনিষ্ঠ হতে চাইছিলেন সেটা ওর জানার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই তবুও কেন যেন মনে হল ওনার থেকে আপাতত দূরে থাকা শ্রেয় । কিন্তু শালিনী যা ভাবছে সেটা নাও হতে পারে । উনি হয়ত নেহাত বন্ধুত্বের খাতিরেই ওর কাছে বন্ধুত্বর হাত বাড়িয়েছিলেন । শালিনীর কি ওইরকম ব্যাবহার করা কি উচিৎ হল ! বোধ হয় না । 
ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে । কি সব আজে বাজে চিন্তা তার মাথায় আসছে ! 
যথারীতি ক্লাসে গিয়ে ক্লাস আরম্ভ করল । সকলকে বারে বারে জিজ্ঞাসা ,“আর ইউ ক্লিয়ার । শ্যাল আই রিপিট এগেন । ডোন্ট হেজিটেট টু টেল মি ইফ ইউ কান্ট আন্ডারস্তেন্ড। ওকে এটা বলা ওর স্কটিশে পড়ানো থেকেই অভ্যাস । 
ক্লাসের পর কমন রুমে যায় লাইব্রেরী থেকে এক গাদা বই নিয়ে । কমন রুমে ঢ়ুকতেই একটা বই পড়েযায় হাত থেকে । খুব অপ্রস্তুত বোধ করে , কারন ডঃ ভট্টাচার্য বইটা নিঃশব্দে তুলে দেন শালুর হাতে । 
ডঃ ভট্টাচার্য:- আপনি এত রেফারেন্স বই পড়ার সময় পান ? 
শালিনী:- হ্যাঁ সার । সময় করে নিতে হবেই । আপনারা সিনিয়ার , আপনাদের কথা আলাদা , তাছাড়া আপনি কত ছেলে মেয়েকে তাদের রিসার্চে গাইড করেছেন তারা আপনার আন্ডারে ডক্টরেট করেছে । আমিত নতুন সার । আমি না পড়লে নিজে বিষয়টার প্রতি ক্লিয়ার কনসেপ্ট না থাকলে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াব কি করে ? আমার পড়াশুনো বিশেষ প্রয়োজন । তাই ক্লাসের পর কমন রুমে এসে রেফারেন্স বইগুল পড়ে নি । নিজের নোট নিজে তৈরি করি । 
ঠিক বলেছেন । এটা অনেকেই করে না ছাত্র ছাত্রীকে লাইব্রেরী-থেকে বই নিয়ে পড়তে বলেন । কিছু রেফারেন্স ও দিয়ে দেন । তবে আমাদের এখানে সকলে সম্পূর্ণ প্রস্তুতির পর ক্লাসে যান । এটা এখানকার সিস্টেম । আমার দেখে ভাল লাগল আপনি এখানকার সিস্টেম ফলো করছেন । ডার্টস গুড । কিপ ইট আপ । ইফ ইউ নিড এনি রেফারেন্স প্লিজ টেল মি । ওকে । আসি তাহলে । 
হ্যাঁ সার । শালুর ঘাম ছুটছিল কথা বলতে বলতে । তা ছাড়া সকালের ব্যাবহারে ও খুব লজ্জিত কিন্তু সার কিছু মনে করেন নি মনে হচ্ছে । এখানে ও ছাড়া মৌসুমি মিশ্র নামে আরেকজন মহিলা আছেন উনিও নতুন । কিন্তু উনি এখানকার বাসিন্দা তাই ওঁর সঙ্গে প্রায় দেখা হয়না । ওনার ফ্যাকাল্টি আলাদা । 
সারাদিনের ক্লাস সেরে সন্ধ্যাতে ফেরে । সন্ধ্যার সময় খুব টায়ার্ড থাকে । মা থাকলে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতেন মুখের সামনে । এই সময় চায়ের বিশেষ প্রয়োজন । মাকে খুব মিস করছে শালু । কিন্তু কিছু করার নেই নিজেকে কষ্ট করতে হবে মা ত চিরদিন থাকবেন না ওর মুখে মুখে জোগাতে । 
মায়ের কথ ভাবতেই মায়ের ফোন । এটা কি টেলিপ্যাথি না কি ? 
হ্যালো ! হ্যালো !! শালু মা । কেমন আছিস ? তোর কোন খবর না পেয়ে ফোন করছি । 
আমি ভাল আছি মা। এখুনি তোমার কথা মনে করছিলাম। তোমাকে আরেকটু পরেই ফোন করতাম তোমরা কেমন আছ মা ? টুকাই , দিদি , জিজু সব কেমন আছে? তোমাদের কথা সব সময় মনে করি মা। একটা কথা তোমাকে বলি । অয়নের বাবা মা তোমার ওখানে যাবেন । ওরা গেলে সব যানতে পারবে । আমি এখন স্নান সেরে একটু পড়াশুনো করব । এখন রাখি। 
আমার কথা না শুনে , “অমনি রাখিতুই কি রে ? তোর হৃদয় বলে কি কিছু নেই! আমার কথা কি মনে পড়ে না !! ওনারা কেন আসবেন বল ত মা ? 
হৃদয় আছে মা । তোমার কথা ভাবি । সকলের কথা ভাবি । আমি কি করে বলব বল ওনারা কেন আসছেন ? 
তুই সব জানিস । কি হয়েছে শালু বলনা?
আমার বলতে লজ্জা করে । তুমি সব জানবে । বললাম ত ওনারা আসবেন । আমি রাখি এবার। 
আচ্ছা বাবা আচ্ছা । মেয়ে আমার এতদিন পর কথা বলবে ...তাও সব পেটে রেখে কথা বলে । কিছু খুলে বলতে পারে না । কি হয়েছে তোর ? 
কি আবার হবে ? ভালই আছি । আমার ঘুম পাচ্ছে মা । 
এই বললি পড়বি আবার এখন ঘুম পাচ্ছে । কি হয়েছে তোর বলত ? 
বললাম ত অয়নের মা বলবেন বলে । 
কেন তোমার মুখ থেকে শুন-বোনা কেন? 
আমি জানিনা । তুমি বিরক্ত করনা ত । 
ও বুঝেছি ! তা ভাল । ঠিক আছে কবে আসবে তারা ? 
আমি কি করে বলব এসবের উত্তর । ওই জন্য আমি কিছু বলতে চাইনা তোমাদের । আমি রাখছি মা । ভাল থেক । নিজের দিকে নজর দিও । আমার কথা ভেবনা । 
না তোমার কথা ভাববোনা ! ঠিক আছে খেয়ে ঘুমিয়ে পড় । ও হ্যাঁ ভাল কথা , অয়ন ফোন করে তোকে ? 
হ্যাঁ অয়ন ফোন করে , বারে বারে করে । ফোন ধরলে তোমার মত ছাড়তে চায়না । সব সমান তোমরা । কথাগুলো একটু জোরেই বলল । তারপর ভাবল পাশের ঘরে লোক শুনলে কি ভাববে ? রাখছি মা । ভাল থেক ।
তুমিও ভাল থেক মা ।
আবার অয়নের ফোন । ওঃ এবার ফোন স্বিচ অফ করে রেখে দেবে । ভাল লাগে না তার। 
হ্যালো । হ্যাঁ । কি বল ? ভাল আছ ?
হ্যাঁ ভাল । তুমি কার সঙ্গে কথা বলছিলে শালু ? 
কেন তোমার কি সেটা জানার খুব প্রয়োজন ! যদি না বল থাক । আমি কি তোমাকে এটুকু জিজ্ঞাসা করতে পারি না ! 
নিশ্চয় পার তবে কৌতূহল ভালোনা । আমার মাএবার বুঝলে ! 
ও ! মাসিমা ! তা তুমি কি বললে ?
তোমার সবেতে এত প্রশ্ন কেন শুনি! 
তুমি রাগ করছ কেন শালু ? আমি মিষ্টি করে কথা বলছি তুমি রাগ করছ ! 
সারাদিনের খাটুনির পর তোমার ওই মিষ্টি করে কথা আমার ভাল লাগে না। বুঝেছ। 
সত্যি তুমি খুব রাফ । স্টিল আই এডমায়ার ইউ । আই লাভ ইউ পুছো কিউঁ?
শালু হেঁসে ফেলে । কিন্তু চেপে রাখে । এই হিন্দি কথা বলবে নাত । ফাজিল কোথাকার । লোফার রা ওরকম কথা বলে । আমার ওসব খুব বাজে লাগে । তুমি না মাল্টি ন্যসনাল ফার্মে কাজ কর রেস্পন্সিবিল পোষ্টে । তোমার মুখে এসব মানায় না অয়ন। 
কাল ফ্লাইটে যাচ্ছি তোমার কাছে । বাবা বলেছেন যেতে । তোমার কাছ হয়ে চলে যাব কোলকাতা । কিন্তু থাকবো কোথায় শালু ? তোমার কাছে থাকতে দেবে আমাকে ?
না । আমার কোয়ার্টারে নট এলাউড । হোটেলে থাকবে । 
সেখানে কি তুমি আসবে ? দেখা কি করে হবে ? 
আসবোনা কি দেখা করবোনা । আমার কাজ আছে । বাই । 
ওকে বাই ডিয়ার । 
শালু দ্বন্দ্বে পড়ে । অয়নের কথা বার্তা পালটে যাচ্ছে । ওসব চিপ কথা শালু একদম পছন্দ করে না । অথচ ওকে বিয়ে করার ডিসিশন নিয়েছে । ওর সঙ্গে কি শালু সুখী হবে বিয়ের পর ??????
চলবে


আবিষ্কারের নেশা
১৩ দশ পর্ব 
ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী / ২৯.০৮.২০১৪ / বেলা ১১.৪৪
শালিনী মন স্থির করতে পারছেনা বিয়ের ব্যাপারে । অথচ বয়েস থাকতে , বিশেষ করে মায়ের মণ  রাখতে বিয়েটা সেরে ফেলতেই হবে । এত দিন এড়িয়ে চলেছে এখন না করে উপায় নেই। মায়ের বয়েস হচ্ছে । ওনার দিকটাও ভাবা প্রয়োজন ।
আজ রবিবার । সারাদিন বিশ্রাম । ঘর গুছতে গুছতে মায়ের কথা ভাবছিল । আজ মায়ের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলবে সে । সেদিন মা নিশ্চয় খারাপ কিছু ভেবেছেন । ওর ব্যাবহার টা অনেক সময় রুক্ষ হয়েযায় । ও নিজেও বোঝেনা সে কথা । লোকে খারাপ ভাবে । হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো ....... কে ?
আমি ডঃ ভট্টাচার্য ।
ও ! হ্যাঁ সার .... দরজা খুলে গুড মর্নিং সার । আপনি কষ্ট করে এলেন কেন ? আমাকে ডাকলেই আমি চলে যেতাম পার্কে ! আসুন আসুন সার বসুন। 
ভেরি গুড মর্নিং । আজ আপনি মর্নিং ওয়াকে যান নি ? আসলে  আপনি ঘর দোর কেমন সাজিয়েছেন দেখতে এলাম । আপনার অসুবিধে হবে না ত !
না না অসুবিধের কি আছে সার আপনি বসুন আমি চা করে আনি ।
ডঃ ভট্টাচার্য শালিনীর ঘর গোছানোর সুখ্যাতি না করে থাকতে পারলেন না ... ( শালিনী চা বিস্কুট হাতে ঢ়ুকছিল ঘরে) ... আপনি সুন্দর গুছিয়েছেন ঘরটা । আপনার টেস্টএর  প্রশংসা না করে থাকতে   পারছিনা । 
( চা দিতে দিতে) ... এটা বাড়িয়ে বললেন সার ।  কি এমন গুছিয়েছি । কিছুই ত নেই গোছানর মত ।  কিছু বই , রবীন্দ্র রচনাবলী , শরৎ রচনাবলী , মাদার টেরেসার ছবি , পরম পুরুষ শ্রী শ্রী  রাম কৃষ্ণ ও শারদা মায়ের যুগল ছবি । এ ছাড়া একটা এল সি ডি   টিভি আর পাশে একটা ল্যাপ্ টপ ।  পাসের ঘরে একটা  সিঙ্গিল বেডের খাট । ওটা গেস্ট রুম থেকে এনেছেনতুন খাট এলে ফিরিয়ে দেবে ।
চা খেতে খেতে সার চায়ের সুখ্যাতি করলেন । এটা ত বাগানের চা (দার্জিলিং টি) । বাঃ কি ফ্লেভার ! একটা কবিতা মনে পড়ছে ।




সকালের চা
ভরা পেয়ালায় তৃপ্ত মনে শেষ চুমুকেই মহা শূন্যতা
ধুমায়িত উষ্ণ শিহরন ক্ষণে মনের কাটায় বিষণ্ণতা

উদ্বুদ্ধ হলাম খানিক ক্ষণে কাটিয়ে দিলাম নীরবতা,
যত আলস্য নেই অবশ্য সকালের এই স্তব্ধতা
এক পেয়ালা চা অবশ্য পুলক অনুভবের পূর্ণতা,
এর অন্যথা জীবন ব্যর্থ নেই তাতে কোন পূর্ণতা।

 বাঃ । খুব সুন্দর । এটা কি আপনার লেখা ।
না না । এটা জিনি লিখেছেন তিনি নেপথ্যে থাকেন । মানে থাকতে ভাল বাসেন। 
 ও তাই ।  হ্যাঁ আমার মামা এনেছেন এই চা । উনি ডুয়ার্ষে চা বাগানের ম্যানেজার । উনি মাঝে মাঝে   নিয়ে আসেন আসার সময় । আমাদের বাড়ীতে তাই ওই দার্জিলিং এর চায়ের চলন । বাবা ওই চা খেতে খুব ভাল বাসতেন ... চুপ করে যায় শালিনী ।
কি হল ? চুপ করে গেলেন যে !
আপনার কথা শুনব বলে । হেঁসে জবাব দেয় শালিনি  ।
আমার কথা ! ও না শোনাই ভাল!!  ছোট বেলায় বাবাকে হারাই । মা স্কুলের টিচারি করতেন । অনেক কষ্টে মানুষ হয়েছি । কঠিন অর্থের অভাবে দিন কাটিয়েছি । টিউশনি করে লেখা পড়া করেছি। ধার দেনা করে এক বোনের বিয়ে দিয়েছি । এখন মা একা । রিটায়ার করেছেন । একাই থাকেন । আমি মাসে একবার যেতে চেষ্টা করি। নানান কাজে হয়ে ওঠে না । ওই ফোনে যা কথা হয় ।
শালিনীকে একটু অন্য মনস্ক দেখাচ্ছিল । কি এক চিন্তায় মসগুল মনে হচ্ছিল। হঠাৎ বলে ,হ্যাঁ সার তারপর ?
বোনের বিয়ের জন্য নিজের কথা ভাববার সময় পাইনি । 
এই সময় মায়ের ফোন এল । সাইলেন্ট মোডে ছিল তাই আওয়াজ হয়নি ।  সরি সার কিছু মনে করবেন না । মায়ের ফোন । একটু কথা বলি !
 হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয় । আমি আসি তাহলে ।
হ্যাঁ সার আপনি আসুন । (আসলে শালিনী এটাই চাইছিল । এর মধ্যে সারের অজান্তে মাকে একটা মিস কল দেয় সাইলেন্ট মোডে , তাই মা কল ব্যাক করেন) । 
ওপার থেকে .... শালু মা তোর শাশুড়ি একা এসেছিলেন ।
শাশুড়ি ! আকাশ থেকে  পড়ে !! কি বলছ তুমি ? আমার আবার  শাশুড়ি ??
হবু শাশুড়ি ... মেয়ের আমার সব কথায় খুঁত ধরা ! পারিনা !! শোন মা ।
বল । তা কি বলেছেন ? এখানে তোমার আরেক জামাই আমার পেছনে লেগেছেন । ভাবছি তোমায় নিয়ে আসবো ।
কে শুনি ? ভাল ছেলে ? অয়নের চেয়ে ভাল ??
তোমার কি মনে হয় মা ! তুমি বড্ড লোভী !!  ভাল ছেলে হলেই অয়নকে ছেড়ে তাকে ধরতে হবে ? অয়নকে আমি কথা দিয়েছি মা ।  আমি আমার কথার মূল্য হারাতে পারি না ।
তা ঠিক বলেছিস মা । হ্যাঁরে ওরা ত কিছুই দাবি দাবা করছে না । ওদের শুধু ১০০ জন বরযাত্রী আসবে । তাদের আদর যত্ন করতে হবে ।
ও বাবা ! এত দুর কথা গড়িয়েছে ! মাআমার করিত কর্মা । তা তুমি কি বললে
কি আবার বলব । তোর দিদি জামাই বাবু ছিলেন । ওরা দফা করেছেন ৫০ জনের জন্য । আজকালকার বাজারে ১০০ জনের আয়োজন করা চাট্টিখানি কথা ! তা ছাড়া আমাদের আত্মীয় স্বজন আছেন না !!
তারপর । এত বিশাল আয়োজন ! তা তুমি আমায় ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার জন্য আর কি কি আয়োজন করেছ বল-দেখি!! 
তোর সবেতে ঠেস দিয়ে কথা বলা । এই স্বভাব টা ছাড় শালু । শ্বশুর বাড়ী গেলে কি করবি শুনি?
আমি ওখানে যাব বলে কি করে জানলে ? আমি আমার কাজের যায়গায় ফিরে আসবো । ওই সব বৌ সেজে আদিখ্যেতা আমার পোষাবে না । রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে চলে আসবো । ও সব আয়োজন বন্দ কর । আমার সময় নেই টাকাও নেই । তাতে বিয়ে হয় ত হবে নাহলে নাই । টাকার শ্রাধ্য আমি করতে পারবোনা  । কে দেবে অত টাকা শুনি ? বাবা গত হওয়ার  পর যা টাকা আছে সে তোমার কিছু ভাল মন্দ হলে তখন ! কে দেখবে ? আমি তোমায় নিয়ে আসবো আমার কাছে । যত সব বুজরুকি ..১০০ জন বরযাত্রী .. মগের মুলুক !! দেশের লোক খেতে পাচ্ছেনা ওদের ১০০ জনের খাওয়ানোর জন্য আয়োজন দরকার । কি সব সেকেলে চিন্তা ধারা ।
ঠিক আছে আমি সব শুনলাম । তুমি এখানে আমার কাছে আসার জন্য তৈরি হও । আমি গিয়ে তোমায় নিয়ে আসবো । এখানে একা থাকতে অসুবিধে আছে ।
রক্ষে কর মা ।  তোমার রাত দিন কট কটানি কে শুনবে ?
তবে যে বল আমার জন্য তোমার চিন্তায় ঘুম হয়না !
সেত হয় না । আমি ‘মা’ । তুমি ত ‘মা’ হও নি কি করে বুঝবে মা ?
তাহলে তুমি আসবে না ! আমার এখানে অসুবিধে হচ্ছে । আমার প্রাইভেসি নষ্ট হচ্ছে ।
প্রাইভেসি ! কেন কে আবার তোর ‘প্রাইভেসি’ নস্ট করছে শুনি । 
তুমি চিনবে না তুমি আসবে কিনা বল ? আমি তোমাকে শনিবার আনতে যাব । দু দিনের ছুটি আছে । তা ছাড়া আমার কাছে কিছু দিন থেকেই দেখ না ।
ঠিক আছে তাই হবে । শনিবার কখন আসবি ?
এখানথেকে জন শতাব্দী তে যাব । পরের দিন ফিরে আসব । ওখানে ওই ট্রেনটা দেড়টা নাগাদ পৌঁছয় । মানে বাড়ীতে ঢ়ুকতে ৩ টে ত বটেই । গিয়ে ভাত খাব । তোমার হাতের রান্না অনেক দিন খাইনি ।
মেয়ের আদিখ্যেতা দেখ ! আজ বাদে কাল বিয়ে হলে তোর মা থাকবে ? তখন কি করবি শুনি ?
হোটেল থেকে আনিয়ে খাব । এখন ত তাই করছি মা । রান্নার সময় কোথায় ?
অয়নের ফোন এল বোধ হয় ; এখন রাখি মা । ভাল থেক । ওইসব বিয়ের আয়োজন করতে হবে না । অয়নের সঙ্গে আমি কথা বলব তারপর ও যা বলবে তাই হবে । রাখি ।
আচ্ছা । তাই হবে । আমি জানি সবেতেই তোমার খবরদারি । সে ছেলেটাকে তুমি ই বলবে সে কি আমার জানতে বাকি আছে ! গোবিন্দের ইচ্ছা মা আমি কে !!
আবার কে কলিং বেল বাজায় ? দরজার কাছে গিয়ে আই পিসে দ্যাখে অয়ন সঙ্গে সিকুরিটি  !
দরজা খুলে অয়নকে দেখে হচ কচিয়ে যায়  ... ওমা তুমি ! কিছু না জানিয়ে এলে যে !!  সিকুরিটির দিকে তাকিয়ে বলে তুমি এস ।  উনি আমার পরিচিত ।
কেন আমার ত আজ ই  আশার কথা । তুমি যান না ? সেদিন ই ত কথা হল । তুমি আমাকে হোটেলে উঠতে বললে মনে নেই ।
ও হ্যাঁ হ্যাঁ !! তা কোন হোটেলে উঠেছ শুনি ?
 খুব নামজাদা হোটেল “হটেল মে ফেয়ার লাগুন” ৩ ষ্টার হোটেল । একটা সুট নিয়েছি  ।  আমাকে বসতে বলবে না ।  ফ্লাইটে কিছু খাইনি । চল বাইরে খেয়ে আসি ।
৩ষ্টার হোটেলে সুট নিয়েছে শুনে শালিনীর মনে খটকা লাগে । কিন্তু কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বলে ,  “ওমা সেকি ? আমি আনিয়ে দিচ্ছি । তবে তোমার ওই হটেলে আমি জেতে পারবোনা । একদিন ছুটি পাই সেটা বাড়ীতেই থেকে কাটাই । তাছাড়া এখানে আমি কোথাউ বেরোই না । খুব প্রয়জন হলে সিকুরিটি কিম্বা অন্য কাউকে দিয়ে আনিয়ে নি ।”
কিন্তু আমি যে তোমার জন্য সুট বুক করলাম ।  ঠিক আছেআমার সময় কম । নেক্সট ফ্লাইট ৫ টায় । এই ক ঘন্টা একটু তোমার সঙ্গে কাটাব । 
অসভ্যতামি করবে না কিন্তু । লক্ষ্মী ছেলের মত যা বলব তাই করবে । এখানে দেওয়ালের ও চোখ কান  আছে । আমি একা মহিলা বুঝতেই পারছ । এখন ও আমাদের বিয়ে হয়নি ।  
হ্যাঁ তাই করব । বলে ত দেখ । আগে বাথ রুমে যাব । বাথ রুমটা কোথায় ?
শালিনী , অয়ন কে  বাথ রুম দেখিয়ে সিকুরিটির কাছে গেল হোটেল থেকে ওদের দুজনের জন্য খাবার আনাতে  তারপর মিসেস নায়ারের বাড়ী গিয়ে ওনার সঙ্গে কিছু কথা বলে  কোয়ার্টারে ফিরতে ফিরতে  মিনিট কুড়ি ত্রিশ সময় লেগেছে  । কোয়ার্টারে এসে দ্যাখে দর্জা হাট করে খোলা । ভেতরে কেউ নেই । অয়নের একটা চিরকুট দ্যাখে কম্পুটার টেবিলে ওপর ,  তাতে লেখাঃ- “সরি ডিয়ার আমি এসেছিলাম   তোমার সানিধ্য পেতে , তোমার হোটেল থেকে আনান খাবার খেতে নয় । আমাকে তুমি এভাবে অপমান করতে পার না ।আমি তোমার জন্য দামি হোটেলের স্যুট বুক করেছিলাম । আমরা দুজনে সময় কাটাব বলে কিন্তু তুমি শুনলেনা ।  তুমি নিজেকে কি মনে কর ? আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্য কি এতই পাগোল ? আমার বাবা মায়ের কাছে আমি অনেক স্নেহ পেয়ে বড় হয়েছি ।  তোমার আমাকে এতই সন্দেহ যে তুমি আমাকে একা ফেলে চলে গেলে বাইরে! এটা কি ধরনের ভদ্রতা! ফর ইওর ইনফমেশন আমি আর কোন দিন কোন সম্পর্ক রাখবোনা তোমার সঙ্গে। গুডবাই!”
শালিনী থর থর করে কাঁপে চিঠিটা হাতে ধরে । দু চোখ বেয়ে জল বোয়ে যায় । অয়নকে ও সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে । এখন তার মূল্য ওকে দিতে হবে । ওর বিষয় ভ্রান্ত ধারনা অয়নের । সেটা ওকে বোঝাতে হবে । কোন পর পুরুষের সঙ্গে হোটেলে সময় কাটান ওর মতন মেয়ের রুচিতে বাধে ।  কিন্তু কি করে বোঝাবে ও .......!!!!!!  
চলবে   


আবিষ্কারের নেশা
১৪  দশ পর্ব 
ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী / ২৯.০৮.২০১৪ / বেলা ১১.৪৪

শালিনী সত্যি খুব দুঃখ পেয়েছে অয়নের ওই ব্যাবহারে । তার প্রাণে হয়ত সঙ্গীতের মুর্ছনা নেই কিন্তু কিছু শব্দ বেরিয়ে আসে  সেগুল জুড়লে বোধ হয় একটা গান লেখা হয়ে যাবে । মনে ব্যাথা পেলে বোধ হয়  আপনা হতে বেদনার গান লেখনির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে । শালিনী তার ব্যতিক্রম নয় কথাগুল ভাবতে ভাবতে ওর চোখে জল আসে ।  
আজ শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরে
তোমার বিরহের বেদনা তে রক্ত ঝরে
মুখে নেই ভাষা আছে সুধু ভালোবাসা
বুঝি আমি তোমার চোখের যে ভাষা ...... .......(১)
অশনি সঙ্কেত ওই আকাশে গুরু গম্ভীর নাদে
মেঘের পরশে আজ বাতাস যে কাঁদে
তবু ঝরে মোর আঁখি হতে অবিশ্রান্ত ধারা
কম্পিল যে আজ মৃদু তালে ধরণী ধরা ......... (২)
তোমারি ছবি দেখি মনের আঙ্গিনায়
ভুলিনিগো তোমারে ভুলিনি যে হায়
বিরহ যাতনা যে আর নাহি সয়
স্মৃতিটুকু রেখেছি মনে এই ভরসায়
ফিরিয়া আসিবে তুমি সেই ভরসায় .............( ৩ )
আজ শ্রাবণের ধারার মত অশ্রু ঝরে
তোমার বিরহের বেদনা তে রক্ত ঝরে
.
এই বিশাল পৃথিবীতে একলা মহিলা নিজের সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে তার সমস্ত কাজ সুচারু রূপে করা এক কঠিন পরীক্ষার মত ।  তাতে উত্তীর্ণ হওয়া শক্ত । তার মনকে শক্ত করতে হবে । ভেঙ্গে পড়লে চলবে না । অয়ন বুঝতে পারলোনা যে এটা এমন এক প্রতিষ্ঠান যেখানে কোন রকম অশালীনতা  বরদাস্তর বাইরে । সামান্য কিছু ঘটলে শালিনীর ক্যারিয়ারের ওপর আঁচ পড়বে সেটা সে কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারবে না । কারুর কাছে মুখ দেখাতে পারবে না সেটা কি অয়ন বোঝেনা !!
অয়নকে বোঝানর জন্য ফোন করে কিন্তু ও কেটে দেয়। বাড়ীতে কাউকে বোঝাতে পারবেনা । মা তাকেই দুসবে বারে বারে । এটাই বোধ হয় মেয়েদের প্রধান সমস্যা । অগত্যা বাড়ী যাওয়ার কথা ভুলে নিজের কাজে মন দেয় । ডঃ ভট্টাচার্য সত্যি ভদ্র লোক । উনি কিন্তু শালিনীর অনেক খারাপ ব্যাবহার সহ্য করেছেন । কিছু কখন মুখ ফুটে বলেন নি। বেশ কিছুদিন এরকম চলেশালিনী বেঙ্গালুরুর ট্রেনিং টা পরে যেতে চায় । ওর মন একদম ভালো-না কদিন ধরে । মেয়েদের মনে প্রথম বসন্তে কোন পুরুষের আগমন হলে সাধারণত সেই আঁচড়টা থেকেযায় । সেটা ভুলতে পারে না ওরা  । ওটাই অনাবিল প্রেমের নিদর্শন । ওতে কিছু খামতি থাকে না । এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম। তাই শালিনীর জীবনের প্রথম প্রেম তার মনে দাগ রেখে গেল। ও সেটা শত চেষ্টা করেও মুছতে পারছেনা ।

এক রবিবারে  মা ; জিজু , দিদি , টুকাইকে সঙ্গে করে হাজির হলেন ভুবনেশ্বর । শালিনী ওদের  দেখে  আশ্চর্য হয় । বলে কিগো তোমরা কিছু না বলে চলে এলে যে । আমাকে খবর দেবে ত !
মা বলেন:-  সবাই তোকে সারপ্রাইজ দেব ভাবলাম । কোই অয়নদের বাড়ীথেকে ত কেউ এলেন না ।
শালিনী:-  আমি কি করে বলব মা  এখানে বসে ? ওরা আসবে কি না আসবে ওদের ব্যাপার । ওরা বড়লোক ওদের খেয়াল খুশী অনুজাই চলে । খেয়াল হয়েছিল আমাকে বিয়ে করবে বলে এখন সে খেয়াল মাথা-থেকে চলে গিয়েছে । ব্যাস । আমি দিব্বি আছি । আমাকে আর কেউ আর বিরক্ত করবেনা বিয়ের ব্যাপারে । তোমরা সব একে একে ফ্রেস হয়ে নাও । দুটো বাথ রুম আছে ।
একটা বন্দ থাকে । তোমরা এলে  ভালই হল । আজ চল সকলে মিলে পুরী যাই ।
টুকাইকে পেয়ে শালু খুব খুশি ।
একটা টয়টা ইনো-ভা ভাড়া করে সকলে পুরী বেড়াতে গেল বেলা ১২ টা নাগাদ । ওখানে , “হলিডে রিসোর্ট হোটেলে”  জিজু .. দুটো রুম বুক করেছিল । জিজু , দিদি দুজনে  ব্যাঙ্কের থেকে এল টি সি পায় তাই ওরা প্রত্যেক বছর কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায় । শালিনীকে অনেকবার বলেছে ওরা ওদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য কিন্তু ওত অন্য ধাতের মেয়ে । ওসব বেড়াতে যাওয়া ওর ভালো লাগে না । কিন্তু এবারে মা সঙ্গে তাই মানা করলনা । তাছাড়া এমনিতেই ওর কেমন দম বন্দ লাগছিল ।
পুরী বেড়ানটা ভালই লাগছিল । সমুদ্র , নুলিয়া , জগন্নাথ ঠাকুর দর্শন এর বিশেষ আকর্ষণ । মা মানত করেছেন শালুর বিয়ে হলে পূজো দেবেন। মা সত্যি উতলা হচ্ছেন ওর জন্য । তার-পরদিন শালুর ক্লাস ও সকাল সকাল মাকে নিয়ে ট্রেনে ফিরে আসে ভুবনেশ্বর ।  দিদিরা ওখানে আরও দুদিন থাকবে ।
অনেক দিন পর মাকে পেয়ে শালু খুব খুশি ।
অনেক দিন বাদে মায়ের হাতের রান্না খাবে । সত্যি মা নাথাকলে ওর খুব বাজে লাগে ।তাই নিজে   বাজার থেকে সব  গুছিয়ে কিনে এনেছে । বাজার থেকে ফেরার সময় মাকে ওর কোয়ার্টারের  সামনে  ডঃ ভট্টাচার্য র সঙ্গে কথা  বলতে দেখে আশ্চর্য হয়।  কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই সারকে  গুড মর্নিং সার বলে উইশ করে
আপনার মা এসেছেন বলেন-নিত মিস সান্যাল !
হ্যাঁ সার , মা আজ আমার সঙ্গে এসেছেন ।
বাঃ এত আনন্দের কথা । আমার কথা বলার লোক এসে-গিয়েছেন । আমার একটু সময় কাটবে । কোন আপত্তি নেইত আপনার !
মা বলেন, “ওমা সে কি কথা ! এত আনন্দের কথা । আমাদের ও সময় কাটবেআপনার মা বাবা কি দেশে ?
না মাসিমা ছোট বেলা থেকেই আমি পিতৃ হারা । মা স্কুলের টিচার ছিলেন ।  তিনি অনেক কষ্টে আমাকে মানুষ করেন। এখন উনি কলকাতায় আছেন মামার বাড়ীতে । 
মাকে নিয়ে আসেন না কেন ?
মায়ের বয়েস হয়েছে তাই উনি ওখানেই থাকতে ভাল বাসেন।
ও তাই বুঝি । তুমি বাছা একদিন আমার এখানে আমার হাতের রান্না খেও । আমি গুছিয়ে নি তারপর তোমায় খবর দেব কেমন !
শালিনী ও ঘর-থেকে সব শুনছিল । মায়ের আক্কেল দেখে অর গা রি রি করে উঠলো । একদম সেকেলে । হুট করে সকলকে আপন করে ফেলে । আগু পিছু ভাবে না কি হতে পারে !
তোমার বিয়ে হয়েছে বাবা ? সার লজ্জায় বলেন না মাসিমা হয়নি । আমি পরে আসবো একদিন । এখন জাই । কাল ক্লাসের জন্য পড়াশুনো করতে হবে ।
সার জাওয়ার পর শালু মায়ের ওপর খড়গ হস্ত । কি দরকার তোমার ওনার সঙ্গে এত কথার শুনি ? তুমি এখানেও ওই এক কান্ড করবে দেখছি । সকলকে ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করবে তার বিয়ে হয়েছে কিনা ! কি তুমি মা ! কেন  বোঝ না এসব বলতে নেই।  আমি পারব না তোমাকে বোঝাতে । তা তোমার নতুন জামাইকে কবে খাওয়াচ্ছ শুনি ? বিদ্রূপের সঙ্গে বলে কথা-গুল ।
মা হতবাক হয়ে-জান ওর কথা শুনে । ওই ছেলেটি খুব ভাল শালু । ওর সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগছিল তাই বললাম । তুই রাগ করছিস কেন মা ? ওত তোদের এখানেই পড়ায় । পাত্র হিসেবে-ত ভালই ।
মা .. মা .. তোমাকে নিয়ে আমার মাথা খারাপ হয়ে জাবে । গর্জে ওঠে শালু।
মা চুপসে জান । জানেন মেয়ের রাগের কথা । 
পরের দিন শালু যথারীতি কলেজে  চলে জায় 

আবিষ্কারের নেশা ( শেষ পর্ব )
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী /৯ .৯.২০১৪ / রাত ১০.৩০ /
বিয়ের মোটে সাত দিন বাকি । ওখানে নিশ্চই সকলে ব্যাস্ত। শালু এখানথেকেই ছুটির জন্য দরখাস্ত পাঠিয়ে দিয়েছে । ছুটি মঞ্জুর ও হয়ে গিয়েছে । তাই ওরা দুজনে সোজা কোলকাতা যাবে । অয়ন ফ্লাইটের টিকিট কেটে রেখেছে । ওরা তিন দিন আগে পৌঁচচ্ছে । অয়নের আজ সারাদিন কোন কাজ ছিলনা । আজ শনিবার এমনিতেই ওদের ছুটি । খোশ মেজাজে আছে সে । একটা নতুন গান শুনছিল এবারের পূজোর গান বোধ হয় । নতুন গানটা । ভালোই সুর হয়েছে । গানটা মন দিয়ে শুনছিল অয়ন । হঠাৎ শালুর ফোন এল ...।
তোমার সুরের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ হলাম ,
তোমার সুরের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ হলাম ,
সুরের আকাশে তোমায় যে দেখলাম ,
হেরিলে আমার মন উদাস হলাম ,
মেঘের পরশে যে শীতল হলাম ।.................. (১)
তোমাকে না দেখে উদাস হলাম ,
তবুও বোঝে না মন কেন যে আমার ,
কেন বসে আছি ...বল এক বার ,
যেওনা তুমি গো প্রিয়া শোন একবার ..............(২)
তোমা বিনা লাগে না যে ভালো আমার ,
বসে আছি পথ চেয়ে তোমার আসার ,
প্রহর গুনি সুধু তোমার আশায় ,
মন দেওয়া নেওয়া হবে সেই আশায় ,
মাতাল হব আমি তোমার ই নেশায়। ..............(৩)
তোমার সুরের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ হলাম ,
সুরের আকাশে তোমায় যে দেখলাম ,
হেরিলে আমার মন উদাস হলাম ,
মেঘের পরশে যে শীতল হলাম ।..................... (১)
তোমাকে না দেখে উদাস হলাম ,
তবুও বোঝে না মন কেন যে আমার ,
কেন বসে আছি ...বল এক বার ,
যেওনা তুমি গো প্রিয়া শোন একবার .................(২)
তোমার সুরের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ যে তাই ,
সুরের আকাশে তোমাকে দেখি যে তাই ,
আমি কত যে তোমাকে ভালোবাসি,
আকাশের চাঁদ তারা... তারাও খুসি,
মেঘের পরশে যে শীতল হলাম ,
এবার বলনা ... তোমার , দেখা কি পেলাম। .....................(৪)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৮.০৮.২০১৪ /
গানটা মোবাইলে আপলোড করে সেভ করে রাখলো পরে শুনবে ।
শালুঃ কি হল গান শুনছো যে , আমার ফোন বেজেই যাচ্ছে ...!
অয়নঃ বল তোমার কথাই ভাবছিলাম ।
টিকিট কেটেছ ?
সে আর বলতে ! তোমার বলার অপেক্ষা রাখি নাকি ! কাতা হয়ে গিয়েছে । তুমি তৈরি থেক আমি তোমায় পিক উপ করে নেব। কেমন ।
ঠিক আছে । আমার কিছু কেনা কাটার আছে সেগুল সেরে নিতে হবে ডিনারের আগে । (অয়নের সঙ্গে আজ দেখা হওয়ার কথা । রাতের ডিনার এক সঙ্গে খাবে ওরা ।)
ওকে । তুমি অন্যসব জিনিষ পত্র গুছিয়ে নিয়েছ ?
সব গোছান হয়ে গিয়েছে ‘চাঁদ’ । এসে দেখতে পার ।
শালুর গলায় হঠাৎ ‘চাঁদ’ কথাটা শুনে অয়নের আশ্চর্য লাগলো । পরে ভাবে ভালো মুডে আছে রাগিয়ে কাজ নেই ।
আজ ওদের দুজনের কোলকাতা ফেরার কথা । দুজনে এক সঙ্গে ফিরছে অনেক দিন পর । মনটা দুজেনেরি খুশী । বাড়ী ফিরে অনেক কাজ ।
শালুকে খুব শান্ত সুন্দর দেখাচ্ছিল । ফ্লাইটে দুজনে পাশা পাশি সিটে বসে গল্প করছিল।
প্লেনটা , রান ওয়েতে ল্যান্ড করার আগে সিট বেল্ট পোঁরে নিল । আঃ স্বস্তির নিঃশ্বাস নীল দুজনে । ঘর ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না । ওদের ই বা লাগবে কেন ?
শালিনীর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে ।
বাড়ী ফিরে শালু দ্যাখে বিয়ের পুরো ধুম ধাম আয়োজন । অদের আত্মীয় স্বজন সব এসে গিয়েছেন । দুই মামা মামি , মেস মাসি , এক কাকা উনি অবিবাহিত । মামাতো , মাসতুত ভাইরা সবাই এসেছে । দিদি জিজু টুকাই আছে । জিজুর মাথায় সব দায়িত্ব । ক্যাটারার যোগাড় , হলদিরামের ব্যাঙ্কে-ট হলে বিয়ের আয়োজন হয়েছে । সমস্ত কেনা কাটা ... দিদি জিজু মিলে করেছে । শালুকে, মা সব দেখাচ্ছিলেন ... শালুর মনটা অন্যমনস্ক দেখে বোঝেন ওর নিশ্চই বাবার কথা ভাবছে ।
কিরে কি হল মা ... অমন অন্য মনস্ক কেন তুই ?
কিছুনা ত ... ! কি আবার হবে ?
তবে গয়না গুল দেখছিস না কেন ? ডিজাইন টা দ্যাখ !!
(মুখ ফিরিয়ে নিয়ে) তুমিত যান আমার ও সব একদম ভালো লাগে না । এত টাকা খরচের কি ছিল ? তোমার ভবিষ্যৎ , তোমার শরীর অসুস্থ হলে কে দেখবে মা ? যদি ডাক্তার ওষুধের হঠাৎ প্রয়োজন হয় । তুমি ত সব শেষ করে দিয়েছ দেখছি ! টাকাগুলো এরকম ভাবে নষ্ট করলে ? আমরা কে কখন কোথায় থাকি !
মেয়ের কথা দ্যাখ ! ওরকম বলে না । নষ্ট আবার কি রে ? মেয়ের বিয়ে একবার ই হয় । আমার যা গয়না ছিল সেগুলো তোদের দুই বোন কে দিয়েছি । গড়ানোর মজুরি যা লেগেছে । ওরে তোরা সুখে থাকলেই আমার সুখ । আমার আবার কি হবে ? দিব্বি থাকবো । তখন ত আর তোর চিন্তা থাকবে না ! ঠাকুরের নাম নেব আর গুরুদেবের আশ্রমে যাব ।
এত টাকা নষ্ট করেছ তোমরা । সাধারণ ভাবে কি বিয়ে হয়না ? এ’ত এলাহি আয়োজন !!
জিজু দিদি ঘরে ঢ়কে । কিরে পছন্দ হয়েছে তোর ? দিদি বলে ।
তুইকি আমায় নতুন দেখছিস দিদি ? আমি এসব পরি কোন দিন ! সং সেজে যাত্রা করতে যাব ? সাধারণ ভাবে কি বিয়ে হয় না ।
না হয় না ... মা বলেন । কেন হবে ? আমার কি নেই কিছু ! হা ঘরের মত বিয়ে দিতে হবে কেন?
গায়ে হলুদঃ-
গায়ে হলুদের দিন বরের বাড়ী থেকে তত্ত্ব এল । সকলে হুমড়ি খেয়ে দেখছে কি এল বলে ।
শালু , কি সুন্দর তত্ত্ব পাঠিয়েছে । খুব সুন্দর হয়েছে ।
শালু বলে, “তোরা খুশি ত , তাহলেই হল।” আমি ওসবের কিছু বুঝি না ।
সমাজের সব রীতি সময় নির্ভরশীল । সমস্ত রীতির মধ্যে সময়ের ছাপ পড়ে তাই নাকি গয়না ছাড়া বিয়ে হয়না । তাই বাঙ্গালীদের বিবাহ উৎসবে শাড়ী গয়না এসবের আকর্ষণ এখন ও প্রচলিত । শালিনী যত বোঝালেও এদের মগজে ওই ব্যাপারটা থাকবেই কেউ ঘোচাতে পারবেনা
আজ শালিনীর বিবাহ উৎসবঃ-
এই দিনটার জন্য শালুর মা বসেছিলেন । আজ তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। তার প্রধান দায়িত্ব সুচারু রূপে পালন করতে পারলে দক্ষিণেশ্বরে মায়ের পুজো দেবেন । মেয়ে যে বিয়েতে রাজি হয়েছে এটাই তাঁর চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য । অয়নের মতন জামাই তাদের মতন ঘর পাবেন বলে আশা করেন নি । তবে মেয়ে তাঁর ‘মা সরস্বতীর’ প্রতীক । তার সুপাত্র জুটেছে তার ই পছন্দ অনুসারে । সেটাই সব চাইতে বড় কথা । সারা পাড়া সানাইয়ের সুরে মুখরিত ।

সানাইয়ের সুর আমায় বলে
ছোট বেলাকে যাচ্ছ ফেলে ,
সুরু হবে নতুন জীবন ,
হিয়ার মাঝে থাকবে স্বজন ,
ফুল ফুটবে হৃদয় মাঝে ,
স্মৃতিটুকু থাক তার ই মাঝে ।
সব আত্মীয় স্বজন রা বিয়ের আয়োজন এবং খাওয়ার প্রশংসায় পঞ্চ মুখ । বর বধূকে আশীর্বাদ করে যে যার ঘরে ফিরে গেলেন । শালিনী তার নতুন জীবন আরম্ভ করবে শ্বশুর বাড়ীতে । শ্বশুর বাড়ীতে ওর সুখ্যাতিতে সব্বাই আনন্দে আত্মহারা । মোটা মুটি বিবাহ সুসম্পন্ন হল। বর বধূ বিদায় নিল কন্যা ঘর হইতে । সকলের চোখে জল । মা দিদি টুকাই সকলের কান্না কাটি দেখে শালিনী সামলাতে পারলোনা নিজেকে । তার ও চোখে জল ! বিদায় ত একদিন নিতেই হবে এটাই হিন্দু ধর্মের নিয়ম । কনকাঞ্জলি র সময় কন্যা পেছন থেকে এক মুঠো চাল ছুঁড়ে পিতৃ মাতৃ ঋণ শোধ করা হাস্যস্কর ব্যাপার । কি মনে করতো এই পুরন দিনের ব্রাহ্মণ সমাজ ? এটা যে বাবা মাকে কত অপমান করা তা তাদের ঘটে ছিলনা ! আজ এই সমাজে তাই মহিলাদের প্রত্যেক পদক্ষেপে ঘাৎ প্রতিঘাৎ সহ্য করে চলতে হয় । শিক্ষার প্রসার ঘটেছে কিন্তু কুসংস্কার এখন মানুষের মনে আছে । মানুষ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বিচার ধারা পাল্টান প্রয়োজন ।
বিবাহ বাসরঃ-
বিবাহ বাসরে অয়ন শালিনী র জুড়ী সকলের পছন্দ । অয়নের বন্ধুরা এই প্রথম শালিনীকে দ্যাখে । ওর বিষয় আগে শুনেছিল তবে চাক্ষুষ দেখেনি । খুব জাঁক যমকে ওদের বিয়ের রিসেপপ্সন এখানে হয় । বাপের বাড়ীর গয়না আবার শ্বশুর বাড়ীর গয়নার ভারে শালিনী খুব অস্বস্তি বোধ করছিল । এগুলো সত্যি বাড়া বাড়ি লোক দেখান বলে মনে হয় শালুর । মুখে কিছু না বললেও পরের দিন মনে মনে ভাবে শাশুড়ি মায়ের হাতে তুলে দেবে সে সব গয়না। কি হবে তার এগুলো ? মা বারে বারে বলে দিয়েছেন, ওখানে এমন কিছু না করতে যা তাদের সম্মান হানীর কারন হতে পারে । এ সব নিছক লোক দেখানি সেকেলে । এ সব সম্পূর্ণ বন্দ করা উচিৎ । যে দেশে এখন মানুষ দু মুঠো মুখে ভাত দিতে পারেনা অভাবের তাড়নায় সেখানে এগুলো তার মতে বিলাসিতা ।
মনে মনে ভাবছিল ওইসময় আরও গহনার প্রেসেন্টেসন আসে । অয়নের মাসি,পিসী,মামা মামি,কাকা সকলে যেন কম্পিটিশন করে গয়না দিতে লাগেন । অয়ন কে তার বিরক্তির কথা জানায় চুপি চুপি। ও বলে আজকের দিনটা চুপ থাকতে । পরে সব সমাধান হয়ে যাবে । অয়ন ওর মাকে ও বলে রেখেছে আগে থেকে ।
যাইহোক ক্রমে রাত অনেক হল । বর বধূ বাসর ঘরে গেল। সকলের হাঁসির ফোয়ারা ।
অয়ন , শালুর জন্য হীরের আংটি কিনে রেখেছে বাসরে দেওয়ার জন্য কিন্তু দেওয়ার সাহস নেই কারন ও জানে শালু খুব অসন্তুষ্ট হবে । ওটা ওর মতে টাকা নষ্ট করা । তবুও একবার দেখানোর ইচ্ছা ।
অয়নঃ- শালু , আমি তোমার জন্য একটা হীরের আংটি কিনেছি দেখবে ।
শালুঃ- ওই আংটি টাকি তোমার চেয়ে বেশি দামি ?
অয়নঃ- সত্যি বলছ !
শালুঃ- কেন মিথ্যের কি আছে শুনি !
অয়নঃ- তুমি সত্যি কি ধাতে গড়া ভগবান জানেন। মেয়েরা প্রেসেন্টেসেন দিলে খুশী হয় আর তুমি ?
শালুঃ- কে খুশী হয় আমার জানার ইচ্ছে নেই তবে আমি খুশী হইনা ।
অয়নঃ- তবে কিসে খুশী শুনি ?
শালুঃ- তোমার সান্নিধ্য । তোমার ভালোবাসা । ব্যাস আর কিছু চাই না ।
অয়ন:- ফ্যাল ফ্যাল করে দ্যাখে তার শালুকে । তার শালুর প্রতি গভীর শ্রধ্যা আসে । সত্যি আজকালকার মেয়েদের চেয়ে ও কত আলাদা । ওর মধ্যে লোভ নেই আছে আত্ম মর্যাদা , স্বাভিমান , সততা । অয়ন ধন্য শালুর মত স্ত্রী পেয়ে । সে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলো শালুকে । সে শালুর ‘আবিষ্কারের নেশাকে’ মর্যাদা দেয় দেবে । এটাই তার প্রতিজ্ঞা ।
সমাপ্ত