Thursday, June 26, 2014

৫ম পর্ব আবিষ্কারের নেশা পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ- ত্রিভুবন জিত মুখার্জী ।


৫ম পর্ব আবিষ্কারের নেশা
পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ-

শালিনীর জ্ঞান ফিরতে দেরি হলনা । খুব দুর্বল এবং মানসিক চিন্তায় প্রেশার লো । ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে গেলেন । অর্ক ; সমস্ত ওষুধ, হেলথ ড্রিংক , তাজা ফল বাজার থেকে সঙ্গে সঙ্গে কিনে আনল । কিন্তু শালিনীর ওই এক প্রশ্ন , “ওনারা কেন এসেছিলেন?”
বোঝ ঠ্যালা !
মা বলেন , “ঘরে কি লোক আসবেনা মা ! তুই কেন ও নিয়ে চিন্তা করছিস ?”
না তা আসবে না কেন মা , তবে এনাদের ত আগে কখন দেখি নি , তাই !
ও পরে শুনবি । এখন একটু ফ্রুট জুস খা দেখিনি । কিচ্ছুটি ত মুখে দি-সনা । শরীরের কি হাল করেছিস বেঙ্গালোরে গিয়ে । খেতিস না নিশ্চয় !
কোন উত্তর না দিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব খেয়ে নেয় । সত্যি ও একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছে । সেটা যে কারনেই হোক না কেন ।
পরের রবিবার অয়নের বাবা মা আসবেন কথা বলতে ।
এরমধ্যে অয়নের ফোন এসে গিয়েছে মায়ের উদ্দেশে । ওই এক কথা , শালিনীর বাড়ী গিয়ে বিয়ের কথা পাড়তে ।
অয়নের মা বাবা সময় মত রবিবার আবার আসেন । সঙ্গে মিষ্টির বাক্স । শালিনীকে বৌমা বানিয়েই ছাড়বেন । অয়নের পছন্দই ওনাদের পছন্দ । এটাই এখনকার রীতি নিয়ম ।
যথা রীতি কথো প কথনের পর ... শালিনী , মায়ের ডাকে ঘরে ঢোকে । পরনে শালোয়ার । দিদি , জিজু আর টুকাই ।
আজ খুব একটা রুক্ষ ভাব না করে সিচুএশন স্টাডি করছিল ।
তুমি ত শালিনী না ? অয়নের মায়ের প্রশ্ন ।
আগে থেকে আট ঘাট বেঁধে এসেছেন মহিলা .... শালু ভাবে । হ্যাঁ আমি শালিনী ।
আপনাদের ..... বলার আগেই দিদি বলে ,“ইনি অয়নের মা ! আর উনি অয়নের বাবা”
নমস্কার । অয়ন আসে নি কেন? শালিনীর উল্টো প্রশ্ন ।
না মা ও বেঙ্গালুরু তে থাকে ।
আমি জানি ।
ভদ্র মহিলা সাদা মাটা আর ভদ্রলোক , মানে অয়নের বাবা এখন খুব স্মার্ট আছেন ।
তুমি কি অয়ন কে চেন মা ? অয়নের বাবার প্রশ্ন ।
হ্যাঁ ও আমার ক্লাস মেট । কেন বলুন তো !
মা এসে বলেন ওনারা তোকে দেখতে এসেছেন ।
আমায় দেখতে এসেছেন ? মানে ! আমাকে ত কিছু বল নি মা । অয়ন আমার ক্লাস মেট । ও , আমার বন্ধু তার চেয়ে বেশি কিছু না । এই বলে চলে জায় ঘর ছেড়ে ।
মেয়ের রাগ জানেন মা । কিছু অঘটন ঘটার আগেই আগন্তুকদের চা জল খাবার এগিয়ে দেন।
এবার অয়নের বাবা মা সত্যি অপমানিত বোধ করেন। মাপ করবেন বোন , অনেক আপ্যায়িত হলাম এবার আমরা উঠি । এই বলে ওনারা উঠে পড়েন ।
অর্ক দা , দিদি কিছু বলার আগেই ওনারা ঘর ছেড়ে চলে জান । ওদিকে মা মুখে কাপড় চেপে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন । ঘরে একটা গম্ভীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় । শালিনীর ঘর ভেতর থেকে বন্দ ।
তুই কি আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি শালু ! তুই কি চাস মা !! দরজায় কড়া নাড়েন মা । দরজা খোল । কথা শোন আমার মা ।
অর্ক , দিদি , টুকাই স্তব্ধ । গোটা ব্যাপারটা একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে । কারুর মুখে কোন সাড়া শব্দ নেই । অর্ক খুব অপ্রস্তুত মনে করছিল । এই পরিস্থিতিতে মাকে ছেড়ে জাওয়া যাচ্ছেনা আবার থাকাও যাচ্ছেনা । টুকাই ও গিয়ে মাসির ঘরের দরজা ধাক্কায় । ও মাসি দরজা খোলনা । আমি ত এসেছি তোমার সঙ্গে কথা বলতে ।
দরজা খুলে শালিনী টুকাইকে কোলে তুলে নেয় । আজ প্রথম তার চোখে জল । কেউ কিছু বলার আগেই শালিনী ঘরে ঢ়ুকে পড়ে । দিদি ঘরে গিয়ে শালিনীকে বোঝাতে চেষ্টা করে । কোন ফল হয়না ।
মাসির চোখে জল দেখে টুকাই কেঁদে ফেলে । ও মাসি কি হয়েছে ? তুমি কেন কাঁদছ ?
কোই না ত । আমি কম্প্যুটারে বসেছিলাম তাই । তুই ক্যাডবেরি খাবি ?
না আমি কিচ্ছু খাবোনা । আগে বল তুমি কেন কাঁদছিলে ?
তোর নতুন জামা কেনা না হলে তুই কাঁদি-সনা ! আমার নতুন শাড়ী কেনা হয়নি তাই আমি কাঁদছিলাম ।
আমি বাবাকে বলব তোমায় নতুন শাড়ী কিনে দেবে ।
দুর বাবা কেন কিনে দেবে আমার মা কিনে দেবে । আমার মা আছে না ! মা বাবা ছাড়া অন্য কারুর কাছথেকে কিছু নিতে নেই । ঠাকুর রাগ করেন ।
তবে যে তুমি আমায় পূজোতে , জন্ম দিনে নতুন ড্রেস কিনে দাও ।
আমি ত তোর মা’সি ! মানে , মা’ দেখ । ‘মা’ মানে ‘মা’ । ‘সি’ মানে কি ?
দেখ ।
তাহলে কি হল, “মা দেখ” তাই না । তাই আমি তোকে ড্রেস কিনে দি । তুই ত আমার সোনাই মা । আজ তুই আমার কাছে থাকবি ?
হ্যাঁ ।
তাহলে মা বাবা কি করবে?
মা আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না !
তুই থাকতে পারবিনা বল । কিরে ঠিক না !
হ্যাঁ , মা আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়ায় । তুমি গল্প জানো ।
খুব জানি । শুনবি গল্প । আজ আমার কাছে থাকলে তোকে গল্প শোনাবো ।
তাহলে থাকবো । কিন্তু আমার স্কুল ?
ও তাইতো । না স্কুল বন্দ করা চলবেনা ।
তাহলে কি করে থাকবো ?
তাইতো ! কি করে থাকবি !
মা আসেন ঘরে চায়ের কাপ নিয়ে ।
আমায় ডাকলে পারতে । আমি নিজে যেতাম ।
থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না । বাড়ী হেস্ত নেস্ত করে ছাড়লে । আমার মরন না হওয়া ওবধি তোমার শান্তি নেই । নেই নেই করে ২৯ বছর বয়েস হল তোমার । এর পর কি হবে ?
ঠিক উল্টো টা মা । আমি না মরলে তোমার শান্তি নেই । তুমি ভালোকরে জানো আমার পছন্দ অপছন্দ । তবুও তুমি আমাকে জোর করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করতে চাও । কখন খেয়াল রেখেছ তোমার মেয়ের মনের কথা । কি মা তুমি ?
আর কত খেয়াল রাখতাম তোর । সকাল থেকে সন্ধ্যে ওভধি তোর সেবা করাই আমার কাজ । তুই আমার খেয়াল রাখিস ?
এবার শালিনী গলা নামিয়ে বলে, মা তুমি আমার কথা ভেবোনা । আমি ঠিক আছি । আমার লখ্যে পৌঁছতে দাও । আমার পড়াশুন শেষ হয়নি । আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই । কেন তুমি বোঝনা । আমাকে না জিগ্যাসা করে ঘরে লোক ডাকো ! এটা কি ঠিক বল ! আমি ত বলেছি আমার সময় হলে আমি নিজে তোমাকে জানাবো ।
সে দিন আর আসবে না রে । তার আগেই আমি মরে জাবো ।
অমন করনা মা । আমার ভুল হয়ে গিয়েছে । আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনা ।
মা মেয়ের ঝগড়ার মধ্যে দিদি নাক গলায়না । দিদি খুব শান্ত স্বভাবের । শালিনী ঠিক উল্টো । ওর বাবার মত এক রোখা , এক গুয়েঁ , জেদি মেয়ে । তাই বাবার খুব প্রিয় ছিল শালিনী ।
এর কোন সমাধান হবে বলে মনে হয়না । জিজু, দিদিকে টুকাইকে নিয়ে ফিরে জান । জিজুকে আজ খুব গম্ভীর মনে হচ্ছিল । শালিনীকে কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা । ও আলাদা ধাতে গড়া । ওর চিন্তা ধারা সম্পুর্ণ আলাদা । এর পর ও কি এ বাড়ীতে কেউ আসবে শালিনীকে দেখতে ?
মা মেয়ের মধ্যে কথা নেই । শালিনী নিজের ঘরে । মা রান্না ঘর আর পূজোর ঘর এই করে দিন কাটাচ্ছেন ।
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল । নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না । ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা । এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল । আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে ?
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না ? সত্যি বল । যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি ! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই !!
উত্তর: মোটে না । ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না । ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে । আমি অপমানিত হয়েছি । তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল । আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে । তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে । সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই ।
না । আমি কোন প্রশ্রয় দি নি । ওটা ওর বোঝার ভুল । আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে । পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না । খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে । প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি । তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ ।
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী । ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে । তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে ! তোমার বলা উচিত ছিল।
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না ।
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে । তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা ?
তা তো বলিনি । হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয় । বাহ্য চাক চিক্যকে নয় । মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয় ।
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই !
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না । প্রসঙ্গ বদলাও । আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে । সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী । তারা কর্মে বিশ্বাস করে । তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয় । তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা । এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায় । কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ । শান্ত সুন্দর ।
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে ?
বলা মুস্কিল । আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব ।
কিন্তু তোমার অয়ন !
আমার অয়ন কেন বলছ ? ও কেবল ই বন্ধু । আর কিছু না ।
মন থেকে বলছ !
একদম ।
কিন্তু আমি মানি না । তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই ।
কেন থাকবে না ? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে , কাজে কর্মে , চাল চলনে ।
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন ?
আমি মেয়ে , মা.. আমার দোষ দেবেন !
নাও হতে পারে । বলে দেখ ।
সম্ভব নয় ।
চলবেঃ-

৬ষ্ঠ পর্বঃ- পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ- আবিষ্কারের নেশা । ত্রিভুবন জিত মুখার্জী । ২৬.০৬.২০১৪



৬ষ্ঠ পর্বঃ-
পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ-
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল । নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না । ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা । এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল । আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে ?
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না ? সত্যি বল । যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি ! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই !!
উত্তর: মোটে না । ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না । ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে । আমি অপমানিত হয়েছি । তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল । আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে । তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে । সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই ।
না । আমি কোন প্রশ্রয় দি নি । ওটা ওর বোঝার ভুল । আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে । পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না । খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে । প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি । তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ ।
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী । ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে । তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে ! তোমার বলা উচিত ছিল।
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না ।
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে । তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা ?
তা তো বলিনি । হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয় । বাহ্য চাক চিক্যকে নয় । মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয় ।
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই !
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না । প্রসঙ্গ বদলাও । আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে । সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী । তারা কর্মে বিশ্বাস করে । তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয় । তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা । এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায় । কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ । শান্ত সুন্দর । ওদের কাছথেকে সাধারন মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে ।
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে ?
বলা মুস্কিল । আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব ।
কিন্তু তোমার অয়ন !
আমার 'অয়ন' কেন বলছ ? ও কেবল ই আমার বন্ধু । আর কিছু না ।
মন থেকে বলছ !
একদম ।
কিন্তু আমি মানি না । তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই ।
কেন থাকবে না ? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে , ব্যাবহারে , কাজে কর্মে , চাল চলনে ।
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন ?
আমি মেয়ে , মা.. আমার দোষ দেবেন !
নাও হতে পারে । বলে দেখ ।
সম্ভব নয় ।
আয়না টা যতো নষ্টের গোঁড়া । ওই আয়নাই মেয়েদের ভাবুক করে আর নিজের রূপ সম্বন্ধে সচেতন করে । যতো অনা-ছিষ্টির কথা ওই আয়নাই বলে । নিজেকে খুঁটিয়ে দ্যাখে আর ভাবনার দুনিয়ায় বিচরণ করে । শালিনী ও তাই করছিল । নিজেকে খুঁটিয়ে দেখছিল। এইসময় ...............
পাসের বাড়ী থেকে গানের সুর ভেসে এলোঃ-
কি করে ভুলিব তোমারে
আঁখি জল ঝরে , বারে বারে
বসেছি একাকী হায়
তোমা বিনা অসহায় ।
দিবস রজনী গুনি
কবে তুমি আসিবে শুনি ? ........(১)
এ মন মানে না আর
মনে পড়ে বার বার
তোমা বিনা মন লাগে না
এ ফাগুন রাতে এসো না
কিছুতে কিছু মন লাগে না
ও প্রিয়ে তুমি কি বোঝ না !...............(২)
আমার হৃদয় জুড়ে বসে আছে ,
পাইনা কেন তারে কাছে ।
নিশুতি রাত গেল ,
তারাগুলো নিভে গেল ,
আকাশে চাঁদ ছিল ,
এ শুভ লগনে কে এলো । .................(৩)
ঠিক সেই সময় ফোনটা বেজে উঠলো । এই সময় কার ফোন এলো !
হ্যালো ! কে ?
কে বলত !
অয়ন ?
তবে আমার কথাই ভাবছিলে বল !
বাজে কথা রাখ , কবে আসছ কোলকাতা ?
কি মনে হচ্ছে ?
হেঁয়ালি কর না প্লিজ।
এখানেই এসেছি ৭ দিনের ছুটিতে । তোমার বাড়ীতে-ত আমার জাওয়া নিষেধ তাই তোমাকে কোথায় দেখা করব .........?
খুব বাজে লাগছে আমার । আসলে তোমার ওপর রাগটা ওনাদের ওপর ঝাড়লাম । আমি অনুতপ্ত । আজ আমাদের বাড়ী আসবে ?
কে ? আমি ! রক্ষে কর আমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেই করে দেবে তুমি।
যাহ্‌ । তা কখন হয় ! রাগ করেছিলাম ঠিক ই তবে তুমিও ত কিছু বলনি আমায় । তোমার উচিৎ ছিলনা আমাকে বোঝানোর !
তা ছিল । আসলে আমি নিজেও কি করতে কি করে বসে ছিলাম সে জন্য অনুতপ্ত । কোন মুখে তোমায় কিছু বলতাম ।
আচ্ছা বাবা আচ্ছা । ঠিক আছে তুমি আজ এসো আমাদের বাড়ী । আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু।
ডন ।
ডন ।। Bye . Sincerely I will wait for you .
শালিনী সাধারণত সাজ গোছ করে না । আজ সামান্য প্রসাধন করাতে সুন্দর লাগছিল তাকে ।
মা দেখে বলেন কিরে শালু কি হল বলতো ?
কেন কি আবার হবে ? তোমার সবেতেই আমাকে ছুঁড়ে প্রশ্ন !
না মা , আমি ত জানি তোকে । মা আমার কি সুন্দর দেখতে লাগছে আজ । অনেক দিন দেখিনি তোকে রে । শুধু বকেছি । চোখ পুঁছে ফেলেন মা !
ওই ! ওমনি কান্না কাটি !! কেন তুমি আমার জন্য এতো ভাবো বলত !
তুই কি করে বুঝবি মা ? মা হলে বুঝবি।
ওই এক কথা ‘মা’ হলে বুঝবি !
বিকেলে একজন আসবে মা , বলে লজ্জায় শালু মাকে জড়িয়ে ধরে ।
কে সে শুনি ? আমি কি সত্যি শুনছি । হে ঠাকুর , আমার ডাক শোন তুমি ।
মা তুমি না সবেতে উতলা হও ।
অয়ন কে ডেকেছি । ও আসবে । ভালো কিছু খাবার কর ত ।
কি বলিস শালু সত্যি ! দাঁড়া তোর দিদি জামাই বাবুকে ডাকি তবে ।
না ওদের এখন ডাকতে হবে না । পরে । আমার কিছু কথা আছে ওর সঙ্গে তারপর ।
ঠিক আছে তাই হবে । মা রান্না ঘরে চলে জান হাঁসি হাঁসি মুখে ।
এতদিন পর মাকে খুশি দেখে শালিনী নিজে বেশ খুশি । মাকে দুঃখ দেওয়া উচিৎ হয়নি । রিসার্চ করার সুযোগ দিলে অয়নকে তার বিয়ে করতে আপত্তি নেই । সত্যি ত সে সন্ন্যাসিনী হবে না । সংসার জখন করতেই হবে তবে দেরি করে লাভ নেই । তবে অয়নের মতা মত জানতে হবে । আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা চলবে না। আমাকে আমার মত থাকতে দিতে হবে ।
বিকেলে অয়ন সত্যি এলো শালিনী র বাড়ী । বাড়ীর সামনেটাতে একটা সরু রাস্তা আছে তাই অয়নের নতুন পোলো গাড়ীটা পার্ক করতে অসুবিধে হচ্ছিল ।
শালিনী , আজ ফুলদানিতে সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে ।ঘরটা খুব অগোছালো লাগছিল । অনেকটা নিজেই গুছিয়েছে । দরজায় নতুন পর্দা লাগিয়েছে । মা উঁকি মেরে মেয়ের সব কান্ড কারখানা দেখে মুখটিপে হাসছিলেন । যাগ ঠাকুর শুনলেন । বাবা লোকনাথ তোমার পূজো দেব দক্ষিণেশ্বরে মা কালীর পূজো দেব .... আমার শালুর বিয়ে হয়ে জাগ সব ঠাকুরের মানত অনুযায়ী পূজো দেব ।
ঘরে নক করাতে শালিনী আসে ঘরের দোর খুলতে ।
অয়ন , শালিনীকে দেখে অবাক হয় । সত্যি আজ শালিনী কে সুন্দর দেখাচ্ছিল। খুব স্মার্ট মেয়ে শালিনী । তাই সামান্য প্রসাধনে ওর ব্যক্তিত্য ফুটে ওঠে চোখে মুখে ।
‘এসো’শালিনী অয়নের উদ্যেশ্যে বলে ।
ঘরে ঢুকে অয়ন , নতুন সাজে ঘর দেখে মনে মনে খুসি হয় । এজে তার শালিনীর হাতের ছোঁয়া দেখেই বুঝতে পারে ।
কি দেখছ হাঁ করে !
তোমাকে আর তোমার টেষ্ট কে দেখে । অপুর্ব ।
Thanks a lot . কি খাবে বল ।
তুমি দেবে ?
আবার অসভ্যতামি !
যা বাব্বা ! তুমি কি এই রকম ভাবে আমাকে শাসন করবে ?
হ্যাঁ দরকার হলে তাই করবো । না করার কি আছে ? তোমাদের মতন পুরুষদের আমি চিনি । সুধু খাই খাই ভাব ।
মা ঘরে ঢোকেন চা জলখাবার নিয়ে । মাথায় ঘোমটা দেখে শালিনী হেঁসে ফেলে । তোমার ভাসুর নাকি গো মা ? ও আমার বয়সি ! আমরা এক ক্লাসে পোড়তাম । আমার বন্ধু অয়ন ।
পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে অয়ন ।
থাক থাক বাবা । তুমি কত দিনের জন্য এসেছ ?
এক সপ্তাহ থেকে চলে যাবো ।
ও মাত্র এক সপ্তাহ ।
তোমার বাবা মা কেমন আছেন ?
ভালো ।
তোমরা গল্প কর আমি আসি , কেমন ! আজ এখানে খেয়ে জাবে বাবা ।
মায়ের , এই ‘বাবা’ , ‘মা’ ডাকগুলো খুব সেকেলে লাগে শালিনীর ।
তোমার মা খুব স্নেহ ময়ি ।
হ্যাঁ সত্যি তাই । আমার মা খুব স্নেহ ময়ি । এখন থেকে হাত করে রাখ পরে কাজে লাগবে ।
কেন ?
কেন আবার । আমার নামে নালিশ করবে । মা তোমার পক্ষ নেবেন সর্বদা ।
তা তুমি জদি আমার কথা না শোন তবে ........ বাইরে কলিং বেলের আওয়াজ হল ।
কে এল ? শালিনী বাইরে গিয়ে অবাক জিজু , দিদি,টুকাই সব এসে হাজির ।
আমরা আর থাকতে পারলামনারে , দিদি বলে উঠলো ।
বেশ করেছিস । আয়না । কি জিজু তোমার খবর ?
আমার খবর ভালো না ।
কেন?
আমার ওই গানটার কথা মনে পড়ছে , “মেরা পিয়া ঘর আয়া ও রাম জি” বলে হেঁসে ওঠেন ।
যাঃ। সব সময় আমার পেছনে লাগা । কোন কাজ নেই তোমার না ! টুকাইকে কে কোলে নিয়ে ঘরে ঢোকে শালু । আলাপ করিয়ে দি ....
‘অয়ন’ আমার বন্ধু সেই কলেজ থেকে । ইনি আমার দিদি জামাইবাবু .....
নমস্কার । বুঝতেই পাচ্ছি । শালি না থাকলে , “ঘর লাগে শুনা শুনা , জামাইবাবু না থাকলে, দিল হুম হুম করে ঘবরায়ে...”
হা হা করে হেঁসে ওঠে সবাই ।
মা সকলের জন্য চা জলখাবার নিয়ে আসেন । দিদি , জিজু ; সেন মহাশয়ের সন্দেশ মিষ্টি আর গরম ক্লাব কচুড়ি এনেছেন।
আজ মা, দিদি ,জিজু সকলে খুশি । টুকাই শালুর কানে কানে বলে নতুন মেসোর ওটা কি গাড়িগো ? খুব সুন্দর গাড়ীটা ।
তুই মায়ের কাছে জা । এখানে বড়দের কাছে থাকতে নেই । পরে আসিস আমার কাছে ।
আচ্ছা বলে চলে যায় টুকাই।
চলবে:-

Wednesday, June 18, 2014

পূর্ব প্রকাশিতর পর আবিষ্কারের নেশা

পূর্ব প্রকাশিতর পর 
আবিষ্কারের নেশা

তুই কি আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি শালু ! তুই কি চাস মা !! দরজায় কড়া নাড়েন মা । দরজা খোল । কথা শোন আমার মা ।
অর্ক , দিদি , টুকাই স্তব্ধ । গোটা ব্যাপারটা একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে । কারুর মুখে কোন সাড়া শব্দ নেই । অর্ক খুব অপ্রস্তুত মনে করছিল । এই পরিস্থিতিতে মাকে ছেড়ে জাওয়া যাচ্ছেনা আবার থাকাও যাচ্ছেনা । টুকাই ও গিয়ে মাসির ঘরের দরজা ধাক্কায় । ও মাসি দরজা খোলনা । আমি ত এসেছি তোমার সঙ্গে কথা বলতে ।
দরজা খুলে শালিনী টুকাইকে কোলে তুলে নেয় । আজ প্রথম তার চোখে জল । কেউ কিছু বলার আগেই শালিনী ঘরে ঢ়ুকে পড়ে । দিদি ঘরে গিয়ে শালিনীকে বোঝাতে চেষ্টা করে । কোন ফল হয়না ।
 মাসির চোখে জল দেখে টুকাই কেঁদে ফেলে । ও মাসি কি হয়েছে ? তুমি কেন কাঁদছ ?
কোই না ত । আমি কম্প্যুটারে বসেছিলাম তাই । তুই ক্যাডবেরি খাবি ?
না আমি কিচ্ছু খাবোনা । আগে বল তুমি কেন কাঁদছিলে ?
তোর নতুন জামা কেনা না হলে তুই কাঁদি-সনা ! আমার নতুন শাড়ী কেনা হয়নি তাই আমি কাঁদছিলাম ।
আমি বাবাকে বলব তোমায় নতুন শাড়ী কিনে দেবে ।
দুর বাবা কেন কিনে দেবে আমার মা কিনে দেবে । আমার মা আছে না ! মা বাবা ছাড়া অন্য কারুর কাছথেকে কিছু নিতে নেই । ঠাকুর রাগ করেন ।
তবে যে তুমি আমায় পূজোতে , জন্ম দিনে নতুন ড্রেস কিনে দাও ।
আমি ত তোর মাসি ! মানে , মাদেখ । মামানে মা।   সিমানে কি
দেখ ।
তাহলে কি হল, “মা দেখ” তাই না । তাই আমি তোকে ড্রেস কিনে দি । তুই ত আমার সোনাই মা । আজ তুই আমার কাছে থাকবি ?
হ্যাঁ ।
তাহলে মা বাবা কি করবে?
মা আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না !
তুই থাকতে পারবিনা বল । কিরে ঠিক না !
হ্যাঁ , মা আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়ায় । তুমি গল্প জানো ।
খুব জানি । শুনবি গল্প । আজ আমার কাছে থাকলে তোকে গল্প শোনাবো ।
তাহলে থাকবো । কিন্তু আমার স্কুল ?
ও তাইতোনা স্কুল বন্দ করা চলবেনা ।
তাহলে কি করে থাকবো ?
তাইতো ! কি করে থাকবি !
মা আসেন ঘরে চায়ের কাপ নিয়ে ।
আমায় ডাকলে পারতে । আমি নিজে যেতাম ।
থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না । বাড়ী হেস্ত নেস্ত করে ছাড়লে । আমার মরন না হওয়া ওবধি  তোমার শান্তি নেই । নেই নেই করে ২৯ বছর বয়েস হল তোমার । এর পর কি হবে ?  
ঠিক উল্টো টা মা । আমি না মরলে তোমার শান্তি নেই । তুমি ভালোকরে জানো আমার পছন্দ অপছন্দ । তবুও তুমি আমাকে জোর করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করতে চাও । কখন খেয়াল রেখেছ তোমার মেয়ের মনের কথা । কি মা তুমি ?  

আর কত খেয়াল রাখতাম তোর । সকাল থেকে সন্ধ্যে ওভধি তোর সেবা করাই আমার কাজ । তুই আমার খেয়াল রাখিস ?

এবার শালিনী গলা নামিয়ে বলে, মা তুমি আমার কথা ভেবোনা । আমি ঠিক আছি । আমার লখ্যে পৌঁছতে দাও । আমার পড়াশুন শেষ হয়নি । আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই । কেন তুমি বোঝনা । আমাকে না জিগ্যাসা করে ঘরে লোক ডাকো ! এটা কি ঠিক বল ! আমি ত বলেছি আমার সময় হলে আমি নিজে তোমাকে জানাবো
সে দিন আর আসবে না রে । তার আগেই আমি মরে জাবো ।
অমন করনা মা । আমার ভুল হয়ে গিয়েছে । আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনা ।
মা মেয়ের ঝগড়ার মধ্যে দিদি নাক গলায়না । দিদি খুব শান্ত স্বভাবের । শালিনী ঠিক উল্টো । ওর বাবার মত এক রোখা , এক গুয়েঁ , জেদি মেয়ে । তাই বাবার খুব প্রিয় ছিল শালিনী । 
এর কোন সমাধান হবে বলে মনে হয়না । জিজু, দিদিকে টুকাইকে নিয়ে ফিরে জান । জিজুকে আজ খুব গম্ভীর মনে হচ্ছিল । শালিনীকে কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা । ও আলাদা ধাতে গড়া । ওর চিন্তা ধারা সম্পুর্ণ আলাদা । এর পর ও কি এ বাড়ীতে কেউ আসবে শালিনীকে দেখতে ?
মা মেয়ের মধ্যে কথা নেই । শালিনী নিজের ঘরে । মা রান্না ঘর আর পূজোর ঘর এই করে দিন কাটাচ্ছেন ।
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল । নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না । ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা । এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল । আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না ? সত্যি বল । যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে  শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি ! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই !!
উত্তর: মোটে না । ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না । ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে । আমি অপমানিত হয়েছি । তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল । আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে  যানে । তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে । সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই ।
না । আমি কোন প্রশ্রয় দি নি । ওটা ওর বোঝার ভুল । আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে । পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না । খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে । প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি । তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ ।
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী । ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে ।  তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে ! তোমার বলা উচিত ছিল।
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না ।
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে । তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা ?
তা তো বলিনি । হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয় । বাহ্য চাক চিক্যকে নয় । মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয় ।
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই !
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না । প্রসঙ্গ বদলাও । আমি মা শারদা মায়েরআশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে । সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী । তারা কর্মে বিশ্বাস করে । তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয় । তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা । এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায় ।  কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ । শান্ত সুন্দর ।
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে ?
বলা মুস্কিল । আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব ।
কিন্তু তোমার অয়ন !
আমার অয়ন কেন বলছ ? ও কেবল ই বন্ধু । আর কিছু না ।
মন থেকে বলছ !
একদম ।
কিন্তু আমি মানি না । তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই ।
কেন থাকবে না ? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে , কাজে কর্মে , চাল চলনে ।
তবে তুমি মাকে সেটা বলছ না কেন ?
আমি মেয়ে মা.. আমার দোষ দেবেন !
 নাও হতে পারে । বলে দেখ ।
সম্ভব নয় ।
চলবে ঃ-

৪র্থ পর্ব আবিষ্কারের নেশা পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ- শালিনীর জ্ঞান.......

৪র্থ পর্ব আবিষ্কারের নেশা 
পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ-  

শালিনীর জ্ঞান ফিরতে দেরি হলনা । খুব দুর্বল এবং মানসিক চিন্তায় প্রেশার লো । ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে গেলেন । অর্ক ; সমস্ত ওষুধ, হেলথ ড্রিংক , তাজা ফল বাজার থেকে সঙ্গে সঙ্গে কিনে আনল । কিন্তু শালিনীর ওই এক প্রশ্ন , “ওনারা কেন এসেছিলেন?”  বোঝ ঠ্যালা !
মা বলেন , “ঘরে কি লোক আসবেনা মা ! তুই কেন ও নিয়ে চিন্তা করছিস ?”
না তা আসবে না কেন মা , তবে এনাদের ত আগে কখন দেখি নি তাই !
ও পরে শুনবি । এখন একটু ফ্রুট জুস খা দেখিনি । কিচ্ছুটি ত মুখে দি-সনা । শরীরের কি হাল করেছিস বেঙ্গালোরে গিয়ে । খেতিস না নিশ্চয় ! 
কোন উত্তর না দিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব খেয়ে নেয় । সত্যি ও একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছে । সেটা জে কারনেই হোক না কেন । 
পরের রবিবার অয়নের বাবা মা আসবেন কথা বলতে ।
এরমধ্যে অয়নের ফোন এসে গিয়েছে মায়ের উদ্দেশে । ওই এক কথা , শালিনীর বাড়ী গিয়ে বিয়ের কথা পাড়তে ।
অয়নের মা বাবা সময় মত রবিবার আবার আসেন । সঙ্গে মিষ্টির বাক্স । শালিনীকে  বৌমা বানিয়েই ছাড়বেন । অয়নের পছন্দই অনাদের পছন্দ । এটাই এখনকার রীতি নিয়ম ।
যথা রীতি কথো প কথনের পর ... শালিনী , মায়ের ডাকে ঘরে ঢোকে । পরনে শালোয়ার । দিদি , জিজু আর টুকাই । 
আজ খুব একটা রুক্ষ ভাব না করে সিচুএশন স্টাডি করছিল ।
তুমি ত শালিনী না ? অয়নের মায়ের প্রশ্ন ।
আগে থেকে আট ঘাট বেঁধে এসেছেন মহিলা .... শালু ভাবে । হ্যাঁ আমি শালিনী ।
আপনাদের ..... বলার আগেই দিদি বলে ,“ইনি অয়নের মা ! আর উনি অয়নের বাবা
নমস্কার । অয়ন আসে নি কেন? শালিনীর উল্টো প্রশ্ন ।
না মা ও বেঙ্গালুরু তে থাকে ।
আমি জানি ।
ভদ্র মহিলা সাদা মাটা আর ভদ্রলোক , মানে অয়নের বাবা এখন খুব স্মার্ট আছেন ।  তুমি কি অয়ন কে চেন মা ? অয়নের বাবার প্রশ্ন ।
হ্যাঁ ও আমার ক্লাস মেট । কেন বলুন তো ! 
মা এসে বলেন ওনারা তোকে দেখতে এসেছেন ।
আমায় দেখতে এসেছেন ? মানে ! আমাকে ত কিছু বল নি মা । অয়ন আমার ক্লাস মেট । ও , আমার  বন্ধু তার চেয়ে বেশি কিছু না । এই বলে চলে জায় ঘর ছেড়ে ।
মেয়ের রাগ জানেন মা । কিছু অঘটন ঘটার আগেই আগন্তুকদের চা জল খাবার এগিয়ে দেন।
এবার অয়নের বাবা মা সত্যি অপমানিত বোধ করেন। মাপ করবেন বোন অনেক আপ্যায়িত হলাম এবার আমরা উঠি । এই বলে ওনারা উঠে পড়েন ।
অর্ক দা , দিদি কিছু বলার আগেই ওনারা ঘর ছেড়ে চলে জান । ওদিকে মা  মুখে কাপড় চেপে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন । ঘরে একটা গম্ভীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় । শালিনীর ঘর ভেতর থেকে বন্দ ।

Monday, June 9, 2014

আবিষ্কারের নেশা প্রথম পর্ব ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / মহা শিবরাত্রি / ২৭.০২.২০১৪ /রাত ০৮.২৯ মি ।


আবিষ্কারের নেশা
প্রথম পর্ব
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / মহা শিবরাত্রি / ২৭.০২.২০১৪ /রাত ০৮.২৯ মি ।
শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয় । বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন । নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী । আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য ।
কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হচ্ছে । আজকে শুক্রবার । প্রায় এরকম হয় বিশেষ করে শুক্রবার । বাসে লোকে বাদুড় ঝোলার মতন অফিস ,স্কুল - কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে। কি অবস্থা কোলকাতার ! লোকগুলো প্রাণ হাতে নিয়ে যাওয়া আসা করে ।
শালিনী কি করে বাড়ি ফিরবে ? উল্টো-ডাঙ্গায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। লোকের ভিড়ে ভিড় । বাসের চেয়ে লোকের সংখ্যা ক্রমশ বেশি হচ্ছে । ও এরকম বাদুড় ঝোলার মতন বাসে উঠতে পারবে না । খুব চিন্তায় ছিল। অটো এই রুটে বেশি জায় না আজকাল । তবুও অটোর ভরসায় দাঁড়িয়ে রইল ।
হঠাৎ ‘অয়ন’ এসে ‘শালিনীর’ কাছে দাঁড়াল ।
অয়ন ঃ “ কি ব্যাপার ? বাড়ি ফিরবে কি করে ? বাসের অবস্থা দেখছ !”
শালিনী ঃ “তুমি কোন দিকে যাবে?”
আমি ‘বাঙ্গুর’ , তুমি ?
আমি ‘তেঘোরিয়া!’
বাসের আজ খুব বাজে অবস্থা । কেষ্টপুরে এতো রাস্তা জ্যাম থাকে , কি করে যাবে ?
যেতে ত হবেই ।
চল অটো আসছে উঠে পড়ি । দেরি করনা ।
কিন্তু কিন্তু করে অটোতে উঠলো শালিনী ...। পার্সের অবস্থা খুব একটা ভালোনা ... দুটো কুড়ি টাকার নোট আছে । তবুও অন্য উপায় নেই দেখে উঠে পডে । বাড়ি পৌঁছতে সেই সাতটা সোয়া সাতটা ত হবেই । গিয়ে স্নান সেরে কালকের ক্লাসের জন্য প্রিপারেসন । হ্যাঁ , শালিনী ‘ফিজিক্স’ পড়ায় ‘স্কটিশে’ । ও , পি.এচ.ডির পর ভাবা এটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC) এবং ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্স , ভুবনেশ্বরে এক সঙ্গে দু জায়গায় সাইন্টিস্টের জব পায় , কিন্তু কোলকাতা ছাডবেনা শালিনী ! তাই স্কটিশে অধ্যাপিকার অফারটা আপাততঃ একসেপ্ট করল।
অয়ন , শালিনীর ক্লাস মেট । ও এম.টেকের পর আই আই এম , কোলকাতা (জোকা) থেকে এম বি এ করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল ফার্মে আছে । মাঝে মাঝে দ্যাখা হয় শালিনীর সঙ্গে ব্যাস আর কিছু না ।
কোম্পানির থেকে এই জন্য বলে গাডী কিনতে । আমি গাড়ীর লোণ নিতে কুণ্ঠা বোধ করছি কারন এই জব ছেডে দেব শিগগিরি । নতুন চাকরী ..ওই লোণের ঝামেলায় পড়তে চাই না ..... কথাগুলো একসঙ্গে বলে অটোয় উঠে পডে অয়ন ।
শালিনী ও উঠে পডে ওর পেছনে । রাস্তা ঘাটে একটা পুরুষের প্রয়োজন সঙ্গে থাকা ...তাই বিনা দ্বিধায় উঠে পডে শালিনী ।
অয়ন বাঙ্গুরে নেবে জায় । বাগুইহাটির কাছে আবার জ্যাম ..... তখন ৭টা বেজে গিয়েছে । আর একটুখানি রাস্তা ... দুর নিজের গাডী থাকলে এসবের ঝামেলা থাকেনা । কিন্তু কোলকাতার রাস্তায় ড্রাইভিং ...! রক্ষে কর ! কথাটা ভাবতেই একটা গোলমালের আওয়াজ পেল ।
রে রে করে এক অটো চালক এক ভদ্রলোক এর সঙ্গে বচসা । রাস্তার লোকগুলো বোবার মতন হেঁটে পার হচ্ছে । জেন কিছুই হয় নি ! নির্বিকার !! আসলে কোলকাতায় থাকলে চোখ কান মুখ সব বন্ধ রাখা দরকার । কথাগুলো কানে এল ; ৮ টাকা ভাডা ১০০ টাকা দিলে আমি কি টাকার গাছ রেখেছি ? কত খুচরো নিয়ে ঘুরবো । শালা সকাল থেকে মাল পডে নি পেটে ।
লোকটিও ছাড়ার পাত্র নয় তিনিও বলছেন , আমরাই বা খুচরো পাই কোথা থেকে ? একশো টাকা বার করলেই শেষ । ভদ্রলোক লোকাল বোধ হয় নাহলে এতো সাহস হবে না !সমানে বচসা চালিয়েছেন।
আপনার কাছে ভাঙ্গানি আছে দাদা ?
কত ?
২০ টাকা !
হয়েযাবে দিদি। আপনি কোথায় নাববেন ?
লোকনাথ বাবার মন্দিরের কাছে ।
ওখান অবধি ২০ টাকাই ভাডা ।
শালিনী র যেন গা থেকে জ্বর নাবলো । প্রত্যেক দিন অটো আর প্যাসেঞ্জারের মারপিট রক্তা রক্তি কাগজে দেখে ওর রাস্তা ঘাটে ভয় করে । কাল খুচরো সঙ্গে রাখবে । বাসের ওপর ভরসা নেই । বাস মালিকেরা স্ট্রাইক এর ডাক দিয়েছিল । ডিসেলের যা দাম বেড়েছে ! ওদের ই বা দোষ কি ? তবে ভাড়া বাড়েনি রক্ষা ।
ঘরে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় তারপর সোজা বাথরুমে ঢুকে পডে । শাওয়ার খুলে স্নান । আঃ ! রোজ রোজ এই বিচ্ছিরি জার্নি যেন পোষায় না । এর একটা বিহিত করতে হবে । এ মাসে মাইনে পেলে একটা লোণ করবে ... কারের লোণ । বাজেটের পর কারের দাম কমেছে । দেখি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কি বলেন ? শালিনীর জামাই বাবু সল্ট লেক স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার । উনি যদি কিছু আডভাইস করেন ত । ওর পে সার্টিফিকেট এর জন্য কাল এপ্লাই করবে প্রিন্সিপাল কে । হয়ে যাবে বোধ হয় । তবে ও তো ইউ জি সি স্কেল পায় নি এখন। এদিকে ৭ম পে কমিশন বসে গিয়েছে । সত্যি গরিব মানুষ গুলো কি খাবে এর পর ? হু হু করে যা দাম বাড়বে ইলেকশনের পর .. কি দেশের অবস্থা .. কেউ বোঝার নেই ! আশ্চর্য !!
মা চা নিয়ে হাজির ।
তুমি কেন আনলে মা ? আমি নিজে করে নিতাম ।
থাক মা । আর ও টুকু করতে হবে না । স্বশুর বাড়ী গিয়ে কর । এখন তোমার মা বেঁচে আছে ।
সন্ধ্যে বেলায় বাজে কথা বোলোনা মা ! তুমি কি করে জানলে আমি , তোমার ওই শ্বশুর বাড়িতে যাবো বলে?
আমার নয়.. তোমার মা , সবাই যায় । তুমিও যাবে ।
আর যদি আমি না যাই । আমি যদি তোমার কাছে থাকি । আপত্তি আছে ?
আদিখ্যেতা দেখো মেয়ের ! হ্যাঁ আছে মা । সব দিন তো আমি বেঁচে থাকবো না !
তোর সঙ্গে ওই ‘অয়ন’ বলে ছেলেটা পড়তো না ! কেমন দেখতেরে ওকে ? নিয়ে আয় না এক দিন ।
কেন বলত ? আমি ডাকলেই ও আসবে কি করে বুঝলে ? ওর সঙ্গে আর দেখা হয় না আমার । আমাকে ও সব বলবে না । আমার এখন কিছুই হলনা ... তোমাদের মেয়েকে বাডী থেকে বিদেই না করলে ভাত হজম হয় না ?
ও মা সে কি কথা ? আমি তাই বলেছি নাকি ? এই যে বললি অয়ন তোর সঙ্গে এক ই অটোতে এলো বলে !
তাতে কি হয়েছে ? অটোতে এলো বলে ওমনি তাকে বাড়িতে ডাকতে হবে ? তুমি যে কি না মা ! আশ্চর্য ! তোমরা পারো বটে !!
ঠিক আছে , আমি তোর মামাকে বোলব একটা বিঙ্গাপন দিতে আনন্দ বাজার পত্রিকাতে, “পাত্র পাত্রী কলমে”।
কিসের ?
চা টা খেয়ে নে মা । জুড়িয়ে যাচ্ছে যে।
তোর বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে কি এসব চিন্তা করতে হত রে মা ? সব ই গোবিন্দের ইচ্ছা ।
দেখ মা আমাকে ওই বিয়ে ফিয়ের ব্যাপারে বিরক্ত করলে আমি কিন্তু বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যাবো ।
তবে কি সারা জীবন আইবুডো মেয়ে বসে থাকবে ?
ওই সব গেঁও কথা শুনতে আমার একদম ভাল লাগেনা । কলেজ থেকে ফিরেছি আমাকে একটু রেষ্ট নিতে দাও । তোমার ওই এক ঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান আমাকে এই ঘর ছাড়তে বাধ্য করবে। আমাকে পরে দোষ দিওনা ! কথাটা বলে গট গট করে চায়ের কাপ হাতে নিজের ঘরে চলে গেল শালিনী ।
শালিনীর মা হতবাক হয়ে মেয়ের কথা শুনছিলেন । মনে মনে ভাবলেন আজকালকার মেয়েরা দুটো লেখা পড়া শিখে নিজেদের কি মনে করে ? আমি হলাম গেঁও ! কথায় বলে,“সোমত্ত মেয়ে ঘরে থাকলে মায়ের গলায় মাছের কাঁটার মতন আটকে থাকে । না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে ।” আমার হয়েছে যতো জ্বালা !! এইবলে রান্না ঘরে চলে জান ।
শালিনী র মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো ।
হ্যালো । কে বলছেন ?
অয়ন । একটা সুখবর আছে । আমি গাড়ী কিনছি ।
তাই ! কংগ্রাচুলেসন । কি গাড়ী ?
ভক্স ওয়াগন এর এর ‘পোলো’ মডেলটা আমার প্রিয় ওটাই কিনছি । কোম্পানী ৪% ইন্টারেস্টে লোন দিচ্ছে । বাবা বললেন ,“কিনে নাও । এখন যা কোলকাতার রাস্তার অবস্থা , রাস্তার ধুলো আর পলিউসন থেকে রক্ষ্যা পাবে । পরে ফ্লাই ওভার হয়েগেলে গাড়ী চালাতে অসুবিধে হবে না ।” ড্রাইভিং টা জানি তবে আরেকটু হাথ পাকাতে হবে ।
হুম । ঠিক বলেছেন তোমার বাবা । কবে খাওয়াচ্ছো ?
যদি বল কাল ।
কাল আমার একটা ক্লাস আছে । ঠিক আছে বোলব । বাই ।
শালিনী খুব একটা সায় দেয় না অয়ন কে । শালিনী অয়ন দুজনেই পড়া শুনয় ভাল ছিল। শালিনী র ফিজিক্স ভাল লাগতো তাই অনার্স নিয়ে পড়ে । পরে এম এস সি , পি এচ ডি । এখন ও ডক্টর শালিনী সান্যাল ।
অয়ন প্রথম থেকেই আই আই টি র জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। বি টেক এর পর ক্যাট দিয়ে জোকা তেই এম বি এ করে মার্কেটিং এ । ফেলোশিপ করতে পারতো কিন্তু ভালো চাকরির অফার পেয়ে কাজে জএন করে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে । পরে মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে কোলকাতায় পোস্টিং পায় একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে । পে প্যাকেজ ভালো তা ছাডা কোম্পানির ফ্যাসিলিটি অনেক ।
শালিনী কোম্পানি জব একদম পছন্দ করে না । বলে গলায় লেংটি(টাই) বেঁধে কোম্পানির দালালি যা মার্কেটিং তাই । যতই মাইনে পাগ না টিচিং জব শ্রেষ্ঠ । ওতে নিজের সাবজেক্টের সম্পর্কে ছাত্র/ছাত্রী দের আকৃষ্ট করা তাদের ভালো করে বিষয়টা বোঝান । রিসার্চ করা । এ সব সমাজ সেবার কাজ । ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ আছে মার্কেটিং এ আছে ? আয়ন খুব ভাল ছেলে জানি কিন্তু ও কি করল ? নিজের মাথাটা কোম্পানিকে বিক্রি করে দিল! ভাল সেলস দেখালে উন্নতি নাহলে ...! এরা টাকা ছাডা জীবনে আর কিছুর মূল্য দেয়না । খুব মেটেরিয়ালিসটিক হয়ে যায় । খুব একটা শান্তিতে থাকে না। কাজের প্রেসারে খিট খিটে হয়ে যায় । অকাল বৃধ্য হয়ে চুল উঠে টাক পড়ে জায় । ম্যাগো টাকটা শালিনী একদম পছন্দ করে না। নিজেই নিজের মনে কথাগুলো ভাবতে থাকে , কিন্তু একি তারতো এ সব ভাবার দরকার নেই । মাথাটা ঝাঁকিয়ে নোট টা প্রিপায়ার করছিল বি এস সি পার্ট ওয়ানের থার্মোডাইনামিক্সের ক্লাসের জন্য ।
শালিনীর ক্লাস শেষ না হতেই অয়নের ফোন । অনিচ্ছা সত্যে কল রিসিভ করে “হ্যালো” বলল ।
আসছ ত !
কোথায় ?
পার্ক হোটেলে ।
ও বাবা আমি ওসব জায়গায় জাইনা । আমি ফুচকা খেতে ভালো বাসি গল্প করতে করতে ।
কি ফুচকা ? তুমি কি বাচ্চা ?
হ্যাঁ । তুমি চলে এস আজ আমি খাওয়াচ্ছি তোমায় । দেখবে কিরকম টেস্ট ।
সরি ম্যাডাম আমি রাস্তার জিনিষ খাই না । ওতে হেপাটাইটিস হয় । তোমার টেস্ট টা সেই স্কুল পডুয়া মেয়েদের মতন । একটু মড হও । ডক্টরেট করেও ...।
না না আমি মড কোনদিন হতে পারবো না আয়ন। আমি আমিতে থাকতে চাই।
তবে তোমার সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি ঠিক মিলবে না ।
আমিত মেলাতে চাইনা । তুমি কল করেছিলে আমি করি নি । আর কেমিস্ট্রি র কথা আসছে কোথা থেকে ? আমরা শুধু বন্ধু তাই নয় কি ?
অয়ন অপমানিত মনে করল নিজেকে। ছিঃ একটা অর্ডিনারি শিক্ষিকা সে কিনা এতো ডাঁটের কথা বলে ! আর না । ওকে বাই এজ ইউ লাইক । বলে ফোন কেটে দিল।
শালিনী ওটাই চাইছিল। ও এক দম ওই হোটেলে বসে হ্যা হ্যা করে শস্তা মেয়েদের মত কারুর ঘাডে খাওয়া পছন্দ করে না। নিজের ঘর আর কলেজ ছাডা কোথাউ কারুর সঙ্গে যায়নি । প্রফেসাররা তাই ওকে খুব স্নেহ করতেন ইউনিভার্সিটিতে ।
এদিকে মা , মামাকে দিয়ে এক বিঙ্গাপণ দিয়েছেন । হঠাৎ রবিবারের আনন্দ বাজার পত্রিকায় পাত্র পাত্রী বিঙ্গাপনের পেজটাতে লাল কালি দিয়ে গোল করা দেখে বিস্ময় হয় শালিনীর । পডে দ্যাখে , ওমা এত তার জন্যই ... । আশুক মামা দেখাচ্ছি মজা । আমাকে কি পেয়েছে এরা । একটা কমডিটি না কি ? খুব রাগ হয় মা’র ওপর ।
হঠাৎ ল্যান্ড ফোনে রিং হয় । ও ঘর থেকে মা ছুটে আসেন ফোন ধরতে ।
হ্যালো ! কে বলছেন?
আপনি একটা বিঙ্গাপণ দিয়েছেন ...।
হ্যাঁ ।
মায়ের কাছ থেকে ফোনটা ছাডিয়ে ... মেয়ের মাথা খারাপ আছে আর কালো বেঁটে চলবে !!
ও দিক থেকে লাইন কেটে যায়।
একি করলি শালু ?
ঠিক করেছি । যার বিয়ে তার মতা মত নিয়েছ ? কি ভাব তোমরা ? আমি গোলাম না বাজারের মাছ ? কি ভাবো তোমরা ?? এরকম করলে আমি সত্যি ঘর ছেড়ে চলে যাব । রাগে থর থর করে কাঁপে শালু ।
মায়ের চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু । মা চায়ের কাপটা শালুর হাতে দিয়ে বলেন আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি না তুই ? তোর বাবা আমাকে কি জ্বালা যন্ত্রণায় রেখে গেলেন ।
তুমি শান্ত হও মা ।বাবকে কেন টানছ এর মধ্যে । তোমার গলার কাঁটা আমি.. বাবার ছিলাম না ! আমার বিয়ের কথা একদম ভেবো না । সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলব । তবে এখন না। শান্ত হও । আমার অনেক কাজ বাকি।
আমি জানি রে সে দিন আসবে না । আমি ত তোর মা আমি জানি তোকে ! তুই মা’ হলে বুঝবি ।
আমার ওইরকম মা হওয়ার প্রয়োজন নেই যে মা তার সন্তানকে বুঝতে চায় না !
এই কাটা কাটা কথা আমি সহ্য করব কিন্তু পরের ছেলে সহ্য করবে কেন ?
আমিতো কারুর মাথার দিব্বি দি নি আমার কথা সহ্য করতে । তুমি কেন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনা । আমি আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বামী ঘর দোর বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে থাকতে চাই না পৃথিবীতে । পৃথিবীতে আরও অনেক কাজ আছে যা মেয়েরা করতে পারবে। করা উচিৎ বলে আমি মনে করি । এই বিশাল পৃথিবী তার প্রত্যেক কোনে আছে বিভিন্ন মানুষ তারা সুধু বাচ্চা জন্ম না দিয়ে দেশের অনেক উপকারে আস্তে পারে । জন্ম নিয়ন্ত্রণ এই জন্য অসফল হচ্ছে আমাদের দেশে । ছেলে মেয়ে চাকরি পেলেই মা বাবাদের মাথা ব্যথা ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করা । এতে কি হচ্ছে ? অনেক ভাল ব্রেন নষ্ট হচ্ছে ।
আমি অত পডাশুন করিনি তোর মত । আমি তাই জানিনা মা । আমার ভাবনা চিন্তা তোর সঙ্গে কোন দিন খাপ খায় নি...........
বেলা বারোটা নাগাদ দিদি জামাই বাবু এলেন । সঙ্গে টুকাই ।
মা রকমারি রান্না করে রেখেছেন। সেকেলে শ্বাশুডিদের মত মাথায় ঘোমটা দিয়ে জামাই বাবু কে বলেন, “এসো বাবা এসো ।”
টুকাই শালিনীকে দেখে দউডে আসে । মাসি আমার ক্যাডবেরি তা দাও ।
দাঁড়া আনছি বলে ফ্রিজের দিকে এগুলো ।
শ্রাবন্তি, শালিনীর দিদি আর অর্ক শালিনীর জামাই বাবু । দুজনেই মাকে কিছু জিঙ্গাসা করতে যাচ্ছিল শালিনীকে দেখে চুপসে গেল ।
শালিনী বুঝেও না বোঝার ভান করল । জিজু কি খবর তোমার ? অর্ক কে দেখে বলল শালিনী ।
তুমি না থাকলে মন উদাস থাকে সখী ।
তাই তবে দিদিকে ছেড়ে এখানেই থাক ঘর জামাই হয়ে ।
তাও আচ্ছা সখী ।
তবেরে দেখাচ্ছি তোমাকে ।
সকলে হেঁসে ফেলে । সত্যি অর্ক-দা খুব মাই ডিয়ার ।
টুকাই বলে ,“ঘর জামাই কি গো মা” ?
গোয়ালে চাষির ঘরের বলদ । গলায় দড়ি বাঁধা থাকে খেতে দিলে খায় আর জোয়াল কাঁধে গরুর গাড়ী টানে । তাকে বলে ঘর জামাই । বুঝলি ।
যা: কি সব বাজে কথা বলে মা । একদম বাজে । মিথ্যা কথা বলছ তুমি ।
শালিনী , টুকাইকে ক্যাডবেরি দিয়ে বোঝায় পরের ছেলেকে ঘরে খাইয়ে দাইয়ে রাখাকে ঘর জামাই বলে । এখন এটুকু জান পরে বড হলে পুরোটা জানবি ।
অর্ক বলেন, “শালু তোর জন্য তবে তাই দেখি।”
ভাল হবেনা বলছি অর্ক-দা ।
তোর অয়নের খবর কি ? আমাকে ফোন নাম্বারটা দে না ! আমি কথা বলে দেখি ।
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে শালিনী । কি ? সে খবর ও মা তোমাদের দিয়েছে ।
মা! মা!
কি হল ? অত চ্যাঁচাচ্ছিস কেন ?
তুমি কেন এই সব বল আমার নামে । কি পাও ?
কি বলেছি?
গট গট করে নিজের ঘরে ঢুকে জায় শালিনী ।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে । মনে মনে ভাবে বার্কের কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব । খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা । বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে । এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি ? ইউ জি সি পেতে অনেক দেরি । সেই থোড় বডি খাড়া ... খাড়া বডি থোড় !! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হায়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে । বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে । বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে । শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয় । বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন । নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী । আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য । ওর প্রফেসার বিদেশে অনেক ভালো অফার পেয়েছিলেন কিন্তু উনি ভারতে ফিরে কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাই শ্রেয় মনে করেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শালিনী স্কটিশে অধ্যাপিকার চাকরিতে যোগদান করে । কিন্তু ওখানেও মন বসে না কারন ও আরও অনেক রিসার্চ করতে চায় । আমেরিকাতে গেলে সম্ভব। আমেরিকা জাওয়ার টাকা নেই। যেটুকু পুঁজি আছে সেটা ফুরলে চলবে কি করে ? তাই কোলকাতা থেকেই রিসার্চ এর চিন্তা করে।
স্কটিশ থেকে ছুটি নিয়ে নেয় এক মাসের । মনে অনেক স্বপ্ন অনেক আশা উদ্দীপনা আর আবিষ্কারের ব্যগ্রতা ওকে সব পেছনে ফেলে এগিয়ে নিয়েছে। পোষ্ট ডক্টরাল প্রোগ্রাম এর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে সিলেক্টেড হয় । ফেলোশিপের টাকায় অনায়াসে চলবে । আর শালিনীকে কেউ বিরক্ত করবে না বিয়ের জন্য ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / মহা শিবরাত্রি / ২৭.০২.২০১৪ ।

২ য় পর্ব আবিষ্কারের নেশা ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।


২ য় পর্ব
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে । মনে মনে ভাবে বার্কের ( ভাবা এটমিক এনার্জি কমিশন) কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব । খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা । বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে । এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি ? ইউ জি সী পেতে অনেক দেরি । সেই থোড বডি খাডা ... খাডা বডি থোড !! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হাইয়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে । বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে । বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে । শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্পলায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয় । বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে আই আই এস সী , বেঙ্গালুরু তে যোগা যোগ করতে চায়। আজ বাবা থাকলে ওকে নিশ্চয় উৎসাহ দিতেন হাইয়ার রিসার্চের জন্য পরের দিন বেঙ্গালুরুর ফ্লাইটে শালিনী চলে-গেল। ওখানে এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে ওঠে । সকালে আই আই এস সী ( Indian Institute of Science) এতে যায় । Carbon Nanotube Based Sensors Funded by: DST, Project no. 563 কাজে সুযোগ পায় প্রফেসর ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর আন্ডারে । শালিনী যা চাইছিল তাই পেল এখানে ।
এরমধ্যে অয়নের সঙ্গে হঠাৎ দেখা একটা শপিং মলের কাছে । শালিনীকে দেখে অয়ন হতভম্ব হয়ে যায়। দুজনে চোখা চোখই হয় । ওরা অপোসিট ফুট ধরে হাঁটছিল পরস্পরকে দেখে দুজনেই দাঁড়ালো ।
“কি ব্যাপার এখানে” ? অয়নের প্রশ্নের অপেক্ষায় যেন ছিল শালিনী
“কেন আমার কি এখানে আস্তে মানা” ! ভুরু কুঁচকে শালিনীর জবাব অয়নকে ছুঁড়ে ।
তা কেন !
তবে ?
কৌতূহল! , মানে just inquisitiveness বলতে পারো ।
মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee , am I correct !
Yes Madam !
কোথায় উঠেছ ?
কেন যাবে নাকি সেখানে ?
আবার ওই এক উত্তর just for inquisitiveness !
আমারও এক উত্তর মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee !!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে ।
কফি খাবে ?
তা হলে মন্দ হত না !! তবে পেমেন্ট আমি করবো ।
তোমায় নিয়ে পারা মুস্কিল । কেন আমি দিলে ক্ষতি কি ?
না না আমি দিলে তোমার ক্ষতি কি শুনি ?
তর্ক কোর না আজ অন্তত আমার কথা একটু রাখ শালিনী । চল কে এফ সী কাউন্টারে জাই ।

অয়নের সান্নিধ্য এই বিদেশ ভুঁইতে খারাপ লাগ-ছিলনা । সত্যি নারীর কাছে পুরুষ মানুষের প্রয়োজন আছে ; নারী যতোই উচ্চ শিক্ষিতা , উচ্চ পদাধিকারী হোক না কেন !এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম ।
হঠাৎ অয়ন বলে ,“কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেল । কি ভাবছ ? ”
কিছু না ! বিব্রত বোধ করে শালিনী । কি আবার ভাববো । মা একা আছেন ওনার কথাই মনে হচ্ছিল !! কেমন আছেন কে জানে ?
কেন ফোন করনি ?
হ্যাঁ রাত্তিরে করি কিন্তু কাল করিনি । সত্যি মা’কে ফোন করেনি শালিনী ।
অয়নকে ঘুণাক্ষরেও যানতে দি লোনা ওর কথাই ভাবছিল বলে ~ ! মেয়েরা পারেও বটে !! অয়ন কিছু স্ন্যাক্সের অর্ডার দেয়। কে এফ সী চিকেন আর পিটযা ।
এতোগুলো কেন আনাচ্ছ ? আমি অত খাইনা !
জানি আজ খেতেই হবে । তুমি ত কফি খাওয়ালে আমি মানা করিনি এবার আমি যা খাওয়াবো তুমি প্লিজ মানা করনা ।
আমি ওসব খাইনা অয়ন । আমরা ভেতো বাঙ্গালী ওই সব খাবার খেলে পেটের অসুখ হবে , তখন কে দেখবে ?
কেন ! আমি , আমি দেখবো !!
আহারে ! কি আমার কলির কেষ্ট ~ আমায় করবে তুষ্ট ?
নাইবা হলাম কলির কেষ্ট ~ তোমার জন্য নয় করবো কষ্ট !
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে ।
খাওয়া শেষ করে অয়ন শালিনীকে ছেড়ে আসে কোরমঙ্গালা অবধি ট্যাক্সিতে ।
রাস্তায় অনেক কথা হয়। শালিনীর পোষ্ট ডক্টরেট এর জন্য ফেলোশিপ । রিসার্চ এর স্কোপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অয়ন এখন বেঙ্গালুরুতেই থাকে নতুন কোম্পানিতে । মাঝে মাঝে চেন্নাই , দিল্লী জায় কোম্পানির কাজে।
শালিনী এখন আর অয়ন কে অপছন্দ করেনা কেন নিজেই জানেনা । আসলে বন্ধু হিসেবেই ওকে গ্রহণ করেছে । নিজের মনকে বোঝায় বন্ধুত্বতে দোষ কি ?
ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর সব সময় ব্যস্ত থাকেন নিজের রিসার্চ নিয়ে। শালিনীকে গাইড করছেন একটা নতুন বিষয় নিয়ে কার্বন নেনো টিউব বেসড সেন্সার্স । বেশ কিছু তথ্য ভিত্তিক কনফারেন্স এবং সিম্পোজিয়াম এর মধ্যে সময় কাটে সকলের। পরিবেশটা সরস্বতীর আরাধনা ছাড়া কিছু নেই । যে যার রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত । খাওয়ার সময় থাকেনা এদের । এরা এতোই মসগুল হয়ে থাকে রিসার্চ নিয়ে । শালিনী জীবনে অনেক রিসার্চ করলো । নতুন কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে । ইউনিভার্সিটি গ্রান্টের টাকা এই বছর শেষ । এর পর কি ?
হঠাৎ অয়নের ফোন । হ্যালো ! বল অয়ন ।
আজ শনিবার আমার অফিস ছুটি ।
কিন্তু আমার নয় ।
জানি , ছুটি নাওনা !
হুম দেখছি । “আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ প্রায় শেষ । এবার বাড়ী যেতে হবে । ফেলোশিপের টাকা আর পাবো না । আবার সেই মায়ের ঘেন ঘেনানি” । কথাগুল্প মনে মনে ভাবে শালিনী ।
কি হল ? উত্তর দিচ্ছ না কেন ?
অয়ন তোমাকে একটা কথ বলি । তুমি কিছু মনে করবে না বল।
ঠিক আছে বল । আচ্ছা কথাটা না হয় দেখা হলেই বলবে । আমি আসছি তোমাকে নিতে ।
মানা করতে পারলো না শালিনী । কিছু একটা অলস আবেগের বসে বলে বসে “ঠিক আছে এস কিন্তু রাত করতে পারবোনা ” ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন এসে হাজির ।
চল ।
কোথায়?
চলইনা ।
‘আই-নক্স’ এ SANDLER BARRYMORE ‘BLENDED
’ ।
হলে সিনেমা দেখতে দেখতে পপ কর্ন খাচ্ছিল দুজনে । আজ জেন শালিনী জীবনের সব বাঁধন থেকে মুক্ত । নিজেকে হারিয়ে দিতে চায় অয়নের কাছে । কিন্তু তাতে শালীনতা থাকা প্রয়োজন ।
হঠাৎ বেড় রুম সিন শালিনীকে বিব্রত করে । নায়িকার অনাবৃত বক্ষ যুগল আর ঘন ঘন চুম্বনের দৃশ্য অয়নকেও কিছুটা উত্তেজিত করে ফেলে ।
শালিনীর হাত অজান্তে স্পর্শ করে ফেলে ।
শালিনী হাত সরিয়ে নেয় এবং উঠে পড়ে বলে , “চল রাত অনেক হয়েছে আমার আর ভালো লাগছেনা” ।
সেকি ! মাঝ খান থেকেই চলে যাবে ?
হ্যাঁ যেতেই হবে লোকের সামনে অসভ্যতামি আমি পছন্দ করি না। তোমার জানা উচিত ছিল । চোখথেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছিল ।
কিছু সিন ক্রিয়েটের আগেই অয়ন বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে ।
অয়ন বিব্রত বোধ করে । বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করে। শেষে শালিনী আর ও উঠে পড়ে একটা ট্যাক্সিতে। কিন্তু একি ! শালিনী সামনের সিটে ড্রাইভারের কাছে বসে !!
রাস্তায় কোন কথাই হয় না। অয়ন অপরাধীর মত পেছনে চুপটি করে বাধ্য ছেলের মত বসে-পড়ে । মনে মনে ভাবে এই মহিলার জেদ ভাঙ্গতেই হবে । এটা তারকাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। কিন্তু এই মহিলা অন্যদের মত সোজা সরল নয় । এরমধ্যে সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা নেই । রুক্ষ বাস্তব ধর্মী এক অহংকারী মহিলা । এর কাছে কামনা বাসনা প্রাধান্য পায়না । তবে কি সত্যি তাই ? আরও ভেতোরে ঢুকতে হবে বুঝতে হবে । সে যে ব্যাপার টা করলো তাতে ভুল থেকে গেল । এখন হয়তো শালিনী আর কথা বলবে না কিছুদিন।
শালিনীর বাসা এসে-গেল । গাড়ী-থেকে নেবে ড্রাইভারের হাতে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলে “ভাই সাব মিটারে কিত্না হুয়া” ?
৯০ রুপিস মাদাম । ঠিক হ্যায় রখ লিজিয়ে ।
অয়নকে গুড নাইট বলে নেবে গট গট করে হেঁটে যায় উত্তরের অপেক্ষা না রেখে।
অয়নও ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।