৫ম পর্ব আবিষ্কারের নেশা
পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ-
পূর্ব প্রকাশিতর পরঃ-
শালিনীর জ্ঞান ফিরতে দেরি হলনা । খুব দুর্বল এবং মানসিক চিন্তায় প্রেশার লো । ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে গেলেন । অর্ক ; সমস্ত ওষুধ, হেলথ ড্রিংক , তাজা ফল বাজার থেকে সঙ্গে সঙ্গে কিনে আনল । কিন্তু শালিনীর ওই এক প্রশ্ন , “ওনারা কেন এসেছিলেন?”
বোঝ ঠ্যালা !
মা বলেন , “ঘরে কি লোক আসবেনা মা ! তুই কেন ও নিয়ে চিন্তা করছিস ?”
না তা আসবে না কেন মা , তবে এনাদের ত আগে কখন দেখি নি , তাই !
ও পরে শুনবি । এখন একটু ফ্রুট জুস খা দেখিনি । কিচ্ছুটি ত মুখে দি-সনা । শরীরের কি হাল করেছিস বেঙ্গালোরে গিয়ে । খেতিস না নিশ্চয় !
কোন উত্তর না দিয়ে বাধ্য মেয়ের মত সব খেয়ে নেয় । সত্যি ও একটু দুর্বল হয়ে গিয়েছে । সেটা যে কারনেই হোক না কেন ।
পরের রবিবার অয়নের বাবা মা আসবেন কথা বলতে ।
এরমধ্যে অয়নের ফোন এসে গিয়েছে মায়ের উদ্দেশে । ওই এক কথা , শালিনীর বাড়ী গিয়ে বিয়ের কথা পাড়তে ।
অয়নের মা বাবা সময় মত রবিবার আবার আসেন । সঙ্গে মিষ্টির বাক্স । শালিনীকে বৌমা বানিয়েই ছাড়বেন । অয়নের পছন্দই ওনাদের পছন্দ । এটাই এখনকার রীতি নিয়ম ।
যথা রীতি কথো প কথনের পর ... শালিনী , মায়ের ডাকে ঘরে ঢোকে । পরনে শালোয়ার । দিদি , জিজু আর টুকাই ।
আজ খুব একটা রুক্ষ ভাব না করে সিচুএশন স্টাডি করছিল ।
তুমি ত শালিনী না ? অয়নের মায়ের প্রশ্ন ।
আগে থেকে আট ঘাট বেঁধে এসেছেন মহিলা .... শালু ভাবে । হ্যাঁ আমি শালিনী ।
আপনাদের ..... বলার আগেই দিদি বলে ,“ইনি অয়নের মা ! আর উনি অয়নের বাবা”
নমস্কার । অয়ন আসে নি কেন? শালিনীর উল্টো প্রশ্ন ।
না মা ও বেঙ্গালুরু তে থাকে ।
আমি জানি ।
ভদ্র মহিলা সাদা মাটা আর ভদ্রলোক , মানে অয়নের বাবা এখন খুব স্মার্ট আছেন ।
তুমি কি অয়ন কে চেন মা ? অয়নের বাবার প্রশ্ন ।
হ্যাঁ ও আমার ক্লাস মেট । কেন বলুন তো !
মা এসে বলেন ওনারা তোকে দেখতে এসেছেন ।
আমায় দেখতে এসেছেন ? মানে ! আমাকে ত কিছু বল নি মা । অয়ন আমার ক্লাস মেট । ও , আমার বন্ধু তার চেয়ে বেশি কিছু না । এই বলে চলে জায় ঘর ছেড়ে ।
মেয়ের রাগ জানেন মা । কিছু অঘটন ঘটার আগেই আগন্তুকদের চা জল খাবার এগিয়ে দেন।
এবার অয়নের বাবা মা সত্যি অপমানিত বোধ করেন। মাপ করবেন বোন , অনেক আপ্যায়িত হলাম এবার আমরা উঠি । এই বলে ওনারা উঠে পড়েন ।
অর্ক দা , দিদি কিছু বলার আগেই ওনারা ঘর ছেড়ে চলে জান । ওদিকে মা মুখে কাপড় চেপে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন । ঘরে একটা গম্ভীর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় । শালিনীর ঘর ভেতর থেকে বন্দ ।
তুই কি আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি শালু ! তুই কি চাস মা !! দরজায় কড়া নাড়েন মা । দরজা খোল । কথা শোন আমার মা ।
অর্ক , দিদি , টুকাই স্তব্ধ । গোটা ব্যাপারটা একটা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে । কারুর মুখে কোন সাড়া শব্দ নেই । অর্ক খুব অপ্রস্তুত মনে করছিল । এই পরিস্থিতিতে মাকে ছেড়ে জাওয়া যাচ্ছেনা আবার থাকাও যাচ্ছেনা । টুকাই ও গিয়ে মাসির ঘরের দরজা ধাক্কায় । ও মাসি দরজা খোলনা । আমি ত এসেছি তোমার সঙ্গে কথা বলতে ।
দরজা খুলে শালিনী টুকাইকে কোলে তুলে নেয় । আজ প্রথম তার চোখে জল । কেউ কিছু বলার আগেই শালিনী ঘরে ঢ়ুকে পড়ে । দিদি ঘরে গিয়ে শালিনীকে বোঝাতে চেষ্টা করে । কোন ফল হয়না ।
মাসির চোখে জল দেখে টুকাই কেঁদে ফেলে । ও মাসি কি হয়েছে ? তুমি কেন কাঁদছ ?
কোই না ত । আমি কম্প্যুটারে বসেছিলাম তাই । তুই ক্যাডবেরি খাবি ?
না আমি কিচ্ছু খাবোনা । আগে বল তুমি কেন কাঁদছিলে ?
তোর নতুন জামা কেনা না হলে তুই কাঁদি-সনা ! আমার নতুন শাড়ী কেনা হয়নি তাই আমি কাঁদছিলাম ।
আমি বাবাকে বলব তোমায় নতুন শাড়ী কিনে দেবে ।
দুর বাবা কেন কিনে দেবে আমার মা কিনে দেবে । আমার মা আছে না ! মা বাবা ছাড়া অন্য কারুর কাছথেকে কিছু নিতে নেই । ঠাকুর রাগ করেন ।
তবে যে তুমি আমায় পূজোতে , জন্ম দিনে নতুন ড্রেস কিনে দাও ।
আমি ত তোর মা’সি ! মানে , মা’ দেখ । ‘মা’ মানে ‘মা’ । ‘সি’ মানে কি ?
দেখ ।
তাহলে কি হল, “মা দেখ” তাই না । তাই আমি তোকে ড্রেস কিনে দি । তুই ত আমার সোনাই মা । আজ তুই আমার কাছে থাকবি ?
হ্যাঁ ।
তাহলে মা বাবা কি করবে?
মা আমাকে ছেড়ে থাকতেই পারবে না !
তুই থাকতে পারবিনা বল । কিরে ঠিক না !
হ্যাঁ , মা আমাকে গল্প বলে ঘুম পাড়ায় । তুমি গল্প জানো ।
খুব জানি । শুনবি গল্প । আজ আমার কাছে থাকলে তোকে গল্প শোনাবো ।
তাহলে থাকবো । কিন্তু আমার স্কুল ?
ও তাইতো । না স্কুল বন্দ করা চলবেনা ।
তাহলে কি করে থাকবো ?
তাইতো ! কি করে থাকবি !
মা আসেন ঘরে চায়ের কাপ নিয়ে ।
আমায় ডাকলে পারতে । আমি নিজে যেতাম ।
থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না । বাড়ী হেস্ত নেস্ত করে ছাড়লে । আমার মরন না হওয়া ওবধি তোমার শান্তি নেই । নেই নেই করে ২৯ বছর বয়েস হল তোমার । এর পর কি হবে ?
ঠিক উল্টো টা মা । আমি না মরলে তোমার শান্তি নেই । তুমি ভালোকরে জানো আমার পছন্দ অপছন্দ । তবুও তুমি আমাকে জোর করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বার করতে চাও । কখন খেয়াল রেখেছ তোমার মেয়ের মনের কথা । কি মা তুমি ?
আর কত খেয়াল রাখতাম তোর । সকাল থেকে সন্ধ্যে ওভধি তোর সেবা করাই আমার কাজ । তুই আমার খেয়াল রাখিস ?
এবার শালিনী গলা নামিয়ে বলে, মা তুমি আমার কথা ভেবোনা । আমি ঠিক আছি । আমার লখ্যে পৌঁছতে দাও । আমার পড়াশুন শেষ হয়নি । আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই । কেন তুমি বোঝনা । আমাকে না জিগ্যাসা করে ঘরে লোক ডাকো ! এটা কি ঠিক বল ! আমি ত বলেছি আমার সময় হলে আমি নিজে তোমাকে জানাবো ।
সে দিন আর আসবে না রে । তার আগেই আমি মরে জাবো ।
অমন করনা মা । আমার ভুল হয়ে গিয়েছে । আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনা ।
মা মেয়ের ঝগড়ার মধ্যে দিদি নাক গলায়না । দিদি খুব শান্ত স্বভাবের । শালিনী ঠিক উল্টো । ওর বাবার মত এক রোখা , এক গুয়েঁ , জেদি মেয়ে । তাই বাবার খুব প্রিয় ছিল শালিনী ।
এর কোন সমাধান হবে বলে মনে হয়না । জিজু, দিদিকে টুকাইকে নিয়ে ফিরে জান । জিজুকে আজ খুব গম্ভীর মনে হচ্ছিল । শালিনীকে কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনা । ও আলাদা ধাতে গড়া । ওর চিন্তা ধারা সম্পুর্ণ আলাদা । এর পর ও কি এ বাড়ীতে কেউ আসবে শালিনীকে দেখতে ?
মা মেয়ের মধ্যে কথা নেই । শালিনী নিজের ঘরে । মা রান্না ঘর আর পূজোর ঘর এই করে দিন কাটাচ্ছেন ।
শালিনী , নিজের ঘরে আয়নার সামনে চুল আঁচড়াচ্ছিল । নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চিনতে পারে না । ও এমনিতেই কোন প্রসাধনের ধার ধারেনা । এতো সিম্পল মেয়ে আজকাল পাওয়া মুস্কিল । আয়নার ভেতরের শালিনী প্রশ্ন ছুঁড়ছে , “তুমি কি সত্যি সুখী?”
উত্তর: হ্যাঁ! না হওয়ার কি আছে ?
প্রশ্ন: অয়নকে কি তুমি ভালো বাস না ? সত্যি বল । যদি তাই হয় তবে ওর সঙ্গে শপিং মল সিনেমা গিয়েছিলে কেন শুনি ! ওর প্রতি তোমার উইকনেস নেই !!
উত্তর: মোটে না । ওকে বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না । ওর সিনেমা হলের ব্যাবহার আমাকে বিব্রত করেছে । আমি অপমানিত হয়েছি । তাই আমি ওর মা বাবাকে কোন পাত্তা দিই নি। ওর আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল । আমি নিজে একজন শিক্ষিকা আমার এই সব ছ্যাবলামি পছন্দ নয় তা সে ভালো করে যানে । তবুও ....!
ছেলেরা আবেগের বসে ওই রকম করে বসে । সেটা হয়তো তোমার কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে তাই ।
না । আমি কোন প্রশ্রয় দি নি । ওটা ওর বোঝার ভুল । আমাকে ভালো বাসলে আমার সম্মান রাখতে শিখতে হবে । পাবলিক প্লেসে আমার হাত ধরাকে আমি , শালিনী সান্যাল প্রশ্রয় দি না । খুব চিপ ছেলে মেয়েরা এরকম করে থাকে । প্রেম একটা হৃদয়ের ব্যাপার সেটা কে জৈবিক ক্ষুধাতে পরিণত করে যারা তাদের আমি কামুক বলি । তারা আমার কাছে ঘৃণ্য মানুষ ।
তোমার যুক্তি তোমার কাছে শালিনী । ওর মানসিকতা তোমার সঙ্গে হয়তো মিল নাও খেতে পারে । তোমার চাওয়া পাওয়া , ভালো লাগা...ভালো না লাগা এ সব কি পুরুষ মানুষ বুঝতে পারে ! তোমার বলা উচিত ছিল।
এই টুকু না বুঝলে ওর আমার সঙ্গে থাকা উচিত হবে না ।
তোমার কি পুরুষ সংগ খারাপ লাগে । তুমি মন থেকে অয়ন কে ভালো বাসনা ?
তা তো বলিনি । হ্যাঁ অয়ন ইনটেলিজেন্ট , স্মার্ট ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করবে আমার থেকে অনেক অনেক ভালো সুন্দর দেখতে মেয়ে হয়তো ওর জন্য পাগল হবে তবে শালিনী সান্যাল নয় .......!! শালিনী মনুষ্যত্বকে প্রাধান্য দেয় । বাহ্য চাক চিক্যকে নয় । মানুষ মানুষের মতন ব্যাবহার করলে তবেই সে গ্রহণিয় ।
ওই যে জৈবিক ক্ষুধার কথা বললে ওটা কি তোমার নেই !
বাজে প্রশ্নর জবাব আমি দি না । প্রসঙ্গ বদলাও । আমি “মা শারদা মায়ের” আশ্রমে জাই আড়িয়াদহতে । সেখানে আমার মত অনেক নারী অবিবাহিতা , সন্ন্যাসিনী । তারা কর্মে বিশ্বাস করে । তার কেউ ই বিয়ের জন্য পাগল নয় । তাদের লক্ষ্য এক মানুষের সেবা , অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা । এর মধ্যেই তারা সমাজ সেবার মুল মন্ত্র পায় । কি সুন্দর আধ্যাত্মিক পরিবেশ । শান্ত সুন্দর ।
তবে কি তুমি সন্ন্যাসিনী হবে ?
বলা মুস্কিল । আমাকে আশ্রম গ্রহণ করলে হয়তো তাই হব ।
কিন্তু তোমার অয়ন !
আমার অয়ন কেন বলছ ? ও কেবল ই বন্ধু । আর কিছু না ।
মন থেকে বলছ !
একদম ।
কিন্তু আমি মানি না । তোমার মনের মধ্যে অয়নের জন্য কোন স্থান নেই ।
কেন থাকবে না ? তার জন্য ওকে আমার মন জয় করতে হবে ব্যাবহারে , কাজে কর্মে , চাল চলনে ।
তবে তুমি মা’ কে সেটা বলছ না কেন ?
আমি মেয়ে , মা.. আমার দোষ দেবেন !
নাও হতে পারে । বলে দেখ ।
সম্ভব নয় ।
চলবেঃ-