Thursday, November 28, 2013

ভূতকোঠির গল্প / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯।১১।২০১৩


আমার নিজের অভিঙ্গতা থেকে বলি একটা সত্যি ঘটনার কথা । এখন পুরী বদলে গিয়েছে । এখন ওখানে ভুতেদের থাকার জায়গা নেই । ঘন জন বসতি । কিন্তু একদিন ছিল কিছু পোড বাডীতে বিশেষ করে ভূতকোঠিতে কোন লোক জেতে ভয় পেত । আমি এটা ১৯৬০ দশকের কথা বলছি। ১৯৬২-৬৩ হবে বোধ হয় । ঠিক মনে নেই। তবে এখন ওখানে আপার্টমেন্ট হয়ে গিয়েছে।

পুরীতে ক্যাথোলিক চার্চের পেছনে লাগাও বিশাল এক বাডী আছে । লাল রঙের বাডীটা । অবস্থিতিটা বলছি , যারা পুরী গিয়েছেন লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা ; পুরীর ভি আই পি রোড ধরে- আর্মস্ট্রং রোড দিয়ে সমুদ্রর দিকে যাওয়ার সময় ডান দিকে পডে ওই বাডীটা । ভগ্ন প্রায় কিন্তু বিশাল বাডী । প্রায় দু একরের মত যায়গা নিয়ে বাডীটা একটা বিশাল উঁচু যায়গার ওপর অবস্থিত । রাস্তা থেকে লক্ষ্য করলেই মনে হয় পোড বাডী । কিন্তু না ওটা কিছুদিন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস হয়েছিল । তার আগের এবং পরের কথা বলি । এই বাডীটা আমাদের পৈতৃক পুরীর বাডী থেকে একদম কাছে পায়ে হাঁটার দূরত্বের মধ্যে । এর বিষয় অনেক গল্প শুনেছিলাম তাই ছেলেবেলায় আমি ঐ বাডীর ধারে কাছে জেতা-মনা ।
কি এক কারনে আমার ছেলেবেলার বন্ধু ‘জগা’ র সঙ্গে খেলাধুলোর পর বাডী ফিরছিলাম ঠিক ঐ বাডীর পাস দিয়ে যে রাস্তা গিয়েছে সেটা দিয়ে । প্রায় সন্ধ্যে হয়ে আসছিল । শীত কালের বিকেল ছিল । গা ছম ছম করছিল । আমি প্রায় দৌড়ে চলেছি । জগা আমায় ডাকছে পেছন থেকে । আমি কর্ণ পাত না করে চোঁ চাঁ দৌড়লাম। চার্চের কাছে পৌঁছে দেখি জগা আসেনি তখন । কি হল জানার কৌতূহল হল কিন্তু ভয়ে ফিরে গেলামনা । জগার বাডী আমাদের বাডীর কাছে তাই ওর ওপরের ভাই ‘বসন্ত’দা কে খবর দিলাম। জায়গাটা বুঝিয়ে দিলাম । আমাকে বসন্ত দা সঙ্গে যেতে বললো । ওর আরও দুজন বন্ধুকে সঙ্গে করে আমরা ঠিক যেতে বেরুচ্ছে সেই সময় জগা আসছিল দেখলাম । আমাকে দেখে কিছুই না বলে জগা সটান ঘরে ঢুকে গেল। নিজেকে অপরাধী মনে হল । ঘরে ফিরে এলাম নাহলে মা’ বকা বকি করবেন । সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসতে হবে । বাডীতে কিছুই বলা হয়নি ।
পরের দিন জগা স্কুলে আসেনি দেখলাম । ওর দাদা বলল ,জগার জ্বর হয়েছে । ওর বাবা শুনলে বকবেন তাই যাইনি ভয়ে । কিন্তু পরে ডাক এলো । ওর মা ডেকে পাঠিয়েছেন । অগত্যা যেতেই হল । ডাক্তারের কোন ওষুধ কাজ করছিলো না । তখনকার এল এম পি ডাক্তার ; আজকালকার এম ডি র চেয়ে বেশি প্রাক্টিকাল । কিন্তু ওনার ওষুধ ও কাজ দিল না । আমায় ডাক্তার বাবু জিঙ্গাসা করলেন কি হয়েছিল ঘটনা । আমি পুরোটা বলার পর আবার ওষুধ লিখে দিলেন । কিন্তু জ্বর রিমিসনের নাম নেই। শেষে ওঝাকে ডাকা হল । ওঝা এসে কি কেরামতি করলো কেজানে , জগা , ওঝাকে দেখেই গাল মন্দ করতে লাগলো ।
ঝাঁটার বাডি পডাতে কি সব আওডাতে লাগল বুঝলামনা। কিন্তু ফল দিল। এর পর শুনি আমি আসার পর জগা একটা ছায়ার মত কি দেখে ভয় পায় । আমাদের দুজনের ই বয়েস অল্প ছিল। তাই ঘটনাটার গুরুত্ব কেউ দিলোনা ।

বেশ কিছু দিন পর আমাদের পিসতুতো দাদা 'দিলুদা' বর্ধমান থেকে এলেন । উনি খুব মজার মানুষ ছিলেন এবং সাহসী । দুর্গ স্টেশনের এসিস্টান্ট স্টেশন মাষ্টার ছিলেন। রেলের পাস ছিল তাই চলে আসতেন ছুটি পেলে । আমার মা ওনাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন তাই আমাদের মা' কে খুব ভালোবাসতেন । এলেই খুব খাওয়া দাওয়া হত । এরপর আমার মুখে দিলুদা ওই গল্প শোনেন । শুনে বলেন,"চলত কোথায় উড়ে ভূত আছে দেখি" ।                                                                                 আমি পডি ফাঁপরে । আমরা সকলেই বলি ওই দুঃসাহস করনা । অনেক ঘটনা ঘটেছে ওখানে । কে কার কথা শোনে । বললেন ,"আমি রাতে ডিউটি করি একা ; আদ্যা-পীঠ,কালীঘাট,তারাপীঠ সব ঘোরা আমার। ফি বছর জাই । চল দেখি তোদের উডে ভূত কি করে আমার !"।                                                                                                                                         মা রেগে অস্থির বলেন,"ও দিলু রক্ষ্যে কর বাবা ওখানে যাসনে ।" দিলুদা বলেন, "কিছু হবেনা বডমামি, তুমি না বাংলা দেশের মেয়ে! তোমরা দেখ আমি রাতে ওখানে যাব"।                                                                                                        

 মা নিজের মাথার দিব্বি দিয়ে বলেন,"তোর মাকে এখুনি ফোন করছি , তোকে আমার দিব্বি বাবা যাসনে ওখানে " ওটা খুব বাজে জায়গা । অনেক ঘটনা ঘটেছে । ঠিক আছে তুমি যখন বলছও জাবনা । তবে ...! তবে কি? শুনি! মা বলেন
এরপর সিনেমা দেখার নাম করে আমার ওপরের ভাইকে সঙ্গে করে ওই ভুতুড়ে বাডীতে গেলেন। তারপরের ঘটনা না শুনলেই ভাল । মেজদা বলে ওর সাঙ্গ পাঙ্গ কে নিয়ে যায় ওই ভূত-কোঠিতে । দিলুদা গেট পেরিয়ে ভেতোরে ঢুকতেই ওনার কাল ঘাম ছোটে । একটু গিয়েই ফিরে আসেন বলেন বডমামির কথা মনে পডলো চল চলে যাই । কি দেখেছেন কিছুই বোঝা গেলনা ।
ভূত সত্যি আছে কিনা আমরা জানিনা । মনে হয় আমাদের মনের ভুল । তবে কিছু নিশ্চই আছে ।

No comments:

Post a Comment