Friday, July 26, 2013

ওরাও বাঁচতে চায়ঃ- ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ২৫.০৭.২০১৩ / ০৮.০৫

   ওরাও বাঁচতে চায়

  ©ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

 

*** সব ঘটনা কাল্পনিক

আমাবস্যার রাত চারিদিকে অন্ধকার সামনে একটা কালো রঙের স্করপিও খ্যাঁচ্ করে ব্রেক কষল   গাড়িথেকে চারজন নামলো পরনে জিন্স আর ব্ল্যাক টি শার্ট চোখে কালো চশমা হাতে গ্লোভস্ আর পিস্তল মনে হচ্ছে মুখটা ঢাকা সাদা মাস্কে। মাথায় সাদা ফেল্ট্ ক্যাপ চারজন চার দিকে গেলো টি এম কাউন্টারের ভেতর আমি একা বসে। রাতের ডিউটি একটু চোখ টা ধরে এসেছিল ঘুমের আমেজে সামনের দৃশ্য দেখে ঘুমের বারোটা বেজে গেল কিছু একটা অঘটন ঘটবে বোলে মনে হচ্ছিল তন্দ্রাচ্ছন্ন  চোখটা খুলতেই,.. “এই শালা ঘুমচ্ছিস কি ওঠ শালা রাত জাগা প্যাঁচা ঘুমচ্ছিস কিরে?” 

কথাটা শুনে মেজাজ টা চটে গেল নিজেকে সামলে নিলাম আমার হাতে একটা লাঠি ছাড়া আর কিছু নেই পরনে শুধু সিকিউরিটি গার্ডের ড্রেস হাতে দুমড়ন একটা গত কালের আনন্দ  বাজার পত্রিকা কাল খবরটা চোখে পড়েছিল,“কলকাতার টি এম লুটেরারা গাড়ি নিয়ে  ডাকাতি করছে, সিসি টিভি ফুটেজে ধরা পড়ছেনা  ওরা দলে বলে আসছে সঙ্গে মারণাস্ত্র

ভয় লাগলো  আবার রাগ হল! তোরা গরীবের পেটে লাথি মেরে চিট ফান্ড এর টাকা লুটলি এখন ব্যাঙ্কের টি এম লুটছিস !! আলু পিঁয়াজের দাম বাড়ালি দুমুঠো যে নুন ভাত খাবো  তাও তোরা শান্তিতে খেতে দিবি না। কি চাস তোরা ? আমরা গরিবরা না খেয়ে মরি আর তোরা  দেশ লুটে মস্তি করবি কথাটা মনে মনে ভাবছিলাম .......

..হটাতএই শালা আমার সামনে দাঁড়া নইলে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব! টুঁ শব্দ করবিনা”  সামনের ছেলেটা বলল  

আমি কেন সামনে দাঁড়াবো ?

ন্যাকা! জানিস না ! দাঁড়া বে জান প্যারী হ্যায় তো !!একটু ইতস্তত বোধ করে পকেট হাতড়ে কি একটা বারকরতে চেষ্টা করছিল (নিশ্চই লাইনে নতুন মানে প্রফেশনাল নয়)   

... ঠিক সেই সময় আমি ওর মাথায় আমার ডাণ্ডা দিয়ে এক ঘা বসিয়ে দিলাম। দিয়ে দৌড়ে ওখান থেকে পালালাম ওই ছেলেটা আচমকা এটা হবে আশা করে ছিলোনা চিৎকার করে তলায় পড়ে গেল। আমি প্রাণ বাঁচাতে ছুটলাম মোবাইলে মেসেজ দিতে মেসেজ বক্স থেকে শেভ করা   মেসেজ টা আমার ব্যাঙ্কের বি এম কে পাঠিয়ে দিলাম সেন্ট হল দেখলাম...ঠিক সেই সময় গুলির শব্দ হল। হটাত আমার বাঁ হাতে  কি একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ মতন ঢুকে গেল আমি যন্ত্রণায় পড়ে গেলাম। জ্ঞান ছিলোনা কারণ জ্ঞান ফিরতে দেখি আমি হসপিটালে। কাছে আমার স্ত্রী পুত্র বসে।

ডাক্তার বাবু জিগ্যেস করলেনকেমন লাগছে? যন্ত্রণা হচ্ছে ? আপনার অপারেশন হয়েছে , ভয়  নেই গুলি বার করে দিয়েছি। আপনার ছেলেই আপনাকে রক্ত দিয়েছে। ব্লাড গ্রুপ এক;   পসিটিভ ওষুধ ইনজেকশন সব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দিয়েছেন। ভয়ের কিছু নেই। আপনি সুস্থ বোধ করলে পুলিস আসবে আপনার স্টেটমেন্ট নিতে আপনি যা যা ঘটেছে মনে করে বলতে পারবেন  তো?”

-মাথা নাড়িয়ে বললাম , হ্যাঁ স্যার পারবো।

পুলিস অফিসার এলেন সেই সময় কি ব্যাপার কেমন আছেন?

ভালো

-কে কে ছিল কেমন দেখতে একটু আন্দাজ করতে পারবেন।

- হ্যাঁ স্যার আমি একা কাউন্টারের ভেতর ছিলাম এমনিতেই জায়গাটা ফাঁকা তাতে রাতে কেউ  আসে পাসে থাকে না তখন পুলিসের মোবাইল পেট্রলিং কাউকে কাছে দেখি নি স্যার।

-আমি সে কথা আপনাকে জিগ্যেস করি নি ; কে ছিল কে না ছিল ! যা জিগ্যেস করছি তার উত্তর  দিন। একটু গম্ভীর ভাবে বললেন।

 - আমি একা কাউন্টারের ভেতর ছিলাম একটা কালো রঙের স্করপিও ....

-স্করপিও বলে কি করে জানলেন ? তখন অন্ধকার ছিল বলছেন !

-হ্যাঁ স্যার্ , কিন্তু টী এম এর আলো ছিল সেই আলোতে গাড়িটা দেখে বুঝতে পারি তা ছাড়া -আমি গাড়ি চিনি সার আমি আগে গাড়ি চালাতাম।

- আচ্ছা ! নাম্বার দেখেছিলেন?

-না স্যার ওটা দেখতে পারিনি কারণ গাড়িটা সাইড করা ছিল একটু দুরে।

-হুঁ আর কিছু ?

-ওই গাড়িথেকে চারটে লোক কালো পোশাকে বেরুলো। 

-কালো বলে কি করে জানলেন?

-আমি রাত কানা নই স্যার। একটু আলো পড়েছিল ওতেই দেখেছি ওরা কি পরেছিল।

-হুঁ তা বটে  

 কথা বলতে একটু কষ্ট হচ্ছে স্যার

ডক্টর বললেন,“পেসেন্ট কে একটু রেস্ট দিন

ঠিক আছে পরে আসবো। ঠিক ঠিক বলবেন

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।

বৌ কাছেই ছিল বলল আমরা না খেয়ে থাকবো তাও আচ্ছা তোমাকে চাকরি আর করতে হবে না।

-সংসার কি করে চলবে ?

-সে আমি বুঝবো এখন

এখানে বলে রাখি ,আমার বৌযমুনাএকটি বাচ্চা মেয়েকে সারা দিন রাখে। ঘরের রান্না বান্না যাবতীয় কাজ ওই করে মেয়েটির বাবা মা দুজনেই সকাল থেকে অফিসে যায়। যমুনা মেয়েটিকে ছোট থেকে বড় করেছে। ওরা মাস গেলে ৫০০০ টাকা মাইনে দেয় আমি ৬০০০ টাকা পাই রাত দিন এক করে খাটতে হয়। এই কটা সামান্য টাকায় আমাদের অনেক কষ্টে  চলে যায়। তবে এই দুর্দিনে আর সংসার টানতে পারছিনা দেশে মা বোন আছে তাদের টাকা পাঠাতে হয়। তারা না হলে না খেয়ে  মরবে। মা, বি পি এল এর চাল পায়। বোন ক্ষেত খামারে কাজ করে। বিয়ে করেছিল স্বামী ছেড়ে দিয়েছে

হটাত যমুনা বলে উঠলো কি ভাবছ ? আমি আছি।

-কি করে যে কি করি বুঝে উঠতে পারছিনা আমি কবে হাসপাতাল থেকে যাবো পুলিসের চক্কর আমার খুব বাজে লাগে। জল তেষ্টা পাচ্ছে

যমুনা একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনেছে দেখলাম। সত্যি আমার অনেক খেয়াল রাখে। ছেলেটাও মন মরা হয়ে গিয়েছে

যমুনা বলল তুমি চিন্তা করনা আমার মালকিন বলেছেন উনি ৫০০০ টাকা আগাম দেবেন বলে পুজোতে যে বোনাস পাই সেটা আগে থেকে দেবেন উনি।

-তোকে আমি অনেক দুঃখ দিলাম যমুনা বলতে বলতে চোখে জল এলো  

- মা এই সময় আমি থাকবেনা কে থাকবে শুনি ? তোমার বোন ? স্বামীর ঘর করতে পারলনিকো , তোমাকে কি দেখবে শুনি!

আমি এখানে আছি , খেটে খাচ্ছি কাজ করতে পারে না ? সোহাগ বলি কোথা থেকে আসবে শুনি ? গা জ্বলে যায় আদিখ্যেতা দেখলে ! মরণ !!

-আমি ঘরে ফিরে আমার আগের মালিকের ট্যাক্সি চালাবো দেখিস ঠিক চলে যাবে

রক্ষে কর

ডাক্তার এসে বললেন ওনাকে রেস্ট দিন।

পরের দিন সকাল বেলাতে স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার পুলিস অফিসার এলেন

আজ কেমন আছেন ?

-ভালো

-কথা বলতে কষ্ট হবেনা ?

-না

-আচ্ছা আপনি কালো রঙের স্করপিও বলছিলেন না !

-হ্যাঁ স্যার লোকটাকে কেমন দেখতে বলতে পারবেন

- লোক নয় স্যার একটা কম বয়েসের ছেলে

-কি করে জানলেন ?

- আমাকে থ্রেট করছিল   মেরে ফেলবে বলছিল যদি আমি ওকে টি এম ভাঙ্গা তে  সাহায্য না করি

- আচ্ছা কেমন দেখতে ওকে?

-রোগা লম্বা আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। নন বেঙ্গলি মনে হল সার গলার স্বর চিনতে পারবো সি সি টি ভি ফুটেজে সব কভার করে থাকবে সার

-কি হয়েছে না হয়েছে সেটা আপনার জানার প্রয়োজন নেই যা জিগ্যেস করছি তাই বলুন।

মুখ কেন দেখেন নি?

-মুখে মাস্ক ছিল স্যার  

-হুঁ। নন বেঙ্গলি কেন বললেন ?

-কথা শুনে তাই মনে হল স্যার।

- আপনি গাড়ি চালাতেন না ?

-হ্যাঁ স্যার।

-আপনি কি করলেন আসাতে ?

- এসেই আমাকে বাজে গালা গালি দিয়ে উঠতে বলে আমাকে সামনে দাঁড়াতে বলল আমি মানা করাতে পকেট খোঁজে আমি বুঝলাম মেশিন খুঁজছে সঙ্গে সঙ্গে মাথায় লাঠি মেরে ওখান  থেকে দৌড়ে পালালাম নিজেকে বাঁচাতে

- যদি মরে যেত

-ব্যাঙ্কের টি এম ভাঙ্গবে , আমি ছেড়ে দেব স্যার ! আমি কি করতে আছি তাহলে ?

-কিন্তু যদি মরে যায় ! সেটাও   হতে পারে !! 

একটু ভেবে বললাম, আমার আত্মরক্ষার জন্য এবং ব্যাঙ্কের লক্ষ লক্ষ টাকা যা  টি এম আছে  তার সুরক্ষার জন্য আমি ওটা করতে বাধ্য হয়েছি স্যার    যদি এই কারণে আমাকে শাস্তি পেতে হয় তবে আমার কিছু বলার নেই

পুলিস অফিসার সমস্ত বয়ান নথিভুক্ত করেন

আমি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে এলাম। ব্যাঙ্ক , আমার সাহসিকতাতে  খুশি হয়ে আমাকে মেন ব্রাঞ্চ এর   সিকিউরিটি গার্ড করে মাইনে বেড়ে  ৯০০০ টাকা হয় বৌ বলল গুলি খাওয়ার পর  মাইনে বাড়ল সবকটা ছেলে ধরা পড়েছে     

আমি বলি, “সততা নিয়ে কাজ করলে ভগবান সহায় হন ”  আমাদের সংসার এখন সচ্ছল

 

*১১৮৮ শব্দের মধ্যে লেখা   





No comments:

Post a Comment