তার পরের দিন
পুলিশ এসে পঞ্চানন বাবুকে ধরে নিয়ে যায়
প্রথমে পঞ্চানন বাবু ওয়ারেন্ট দেখতে চান কিন্তু
পুলিশ কিছু না দেখিয়েই ধরে নিয়ে যায় তাঁকে । সবাই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকে
যে জার ঘরে চলে যায় । রুদ্রাক্ষ সব দেখে নির্বাক হয়ে
যায় । বয়স অল্প হলেও তার মনে প্রতিবাদের
বহ্নিশিখা জ্বলতে থাকে সে বোঝে যা হচ্ছে সেটা অন্যায় ।তাই পেছন থেকে পুলিশ এর জীপ কে লখ্য
করে ঢিল ছোঁড়ে । বাড়িতে দউড়ে চলে যায়। বাবাকে বলাতে, বাবা গুম হয়ে বসে থাকেন, মা কিছু বললে বিরক্ত হন । আকাশ পানে চেয়ে কিছু বিড় বিড়
করেন।
এর পরের ঘটনা গ্রামেতে ক্যাম্প বসে
। তাহসিলদার, আর আই,আমিন চেন নিয়ে মাপ জোপ আরম্ভ করে
দেয় । পল্লিসভা হয়
তাতে কিছু লোক নিশিকান্ত বাবুর গুণ্ডাদের ভয়ে টুঁ শব্দটি করেনা। হঠাৎ বাবা
বাডিথেকে একটা কাটারি নিয়ে নিশিকান্তর দিকে দৌড়ন রাগে গজরাতে গজরাতে বলেন তোর
চোদ্দ পুরুষের বাপের জমিদারী যে আমাদের জমি নিতে এসেছিস । সবাই রে রে করে
বাবাকে আটকান । তহসিলদার বোঝান তোমরা ক্ষতি পুরন পাবে । অনেক টাকা পাবে
। এখানে সই কর । বাবা কাগজটা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে
ফেলেন । রাগে বলেন বাবু আপনারা আমাদের অন্ন র থালা ছিনিয়ে নিয়ে
টাকা দেখাচ্ছেন । টাকা আমরা চাইনা । নিশিকান্ত গর্জে উঠে বলল , এই
কুঞ্জ তোর গায়ে মেলা চর্বি হয়েছে না ? দেখাচ্ছি তোকে মজা। গ্রামের উন্নতি চাসনা তো গ্রাম
ছেডে চোলেযা ।
পরের দিন পুলিশ এসে কুঞ্জকেও নিয়ে গেল কোন ওয়ারেন্ট না
থাকা সত্তেও । দেশের আইন ব্যাবাস্থা র প্রতি কুঞ্জর ঘৄনা ধরেগেল ।
পুলিশের দারোগা বাবু বল্লেন , তোর এত সাহস তুই লোক প্রতিনিধির কথা না শুনে কাটারী নিয়ে মারতে গিয়েছিলিশ ; সেটা কি অস্বিকার করবি । সাক্ষীপ্রমান তোর বাডির লোক ই দেবে ।ওয়ারেন্ট
এর প্রয়োজন কি ? কুঞ্জর নিজের জন্যে চিন্তা
হয়না । তার বউ ছেলের যদি কোন ক্ষতি হয় তারচে তার মৄত্যু ভাল । হাউ হাউ করে কাঁদতে
লাগলো । হাজতে নিশিকান্ত আর ভগবান চৌধুরী , বিধায়ক এসে
কুঞ্জ কে বল্লেন ,” দেখ কুঞ্জ আমরা তোমাকে ইচ্ছে করলেই জেল হাজতে পাঠাতে পারি কিন্তু তাতে কি লাভ
তোমার বউ ছেলে না খেয়ে মারা যাবে
।নিশিকান্ত বলে , তুই কি তাই
চাস ?” কুঞ্জ হাউ হাউ
করে কেঁদে বলে ,”না বাবু ওরকমটি করবেন না ! আমি আপনারা
যা চাইবেন তাই করব ।“ নিশিকান্তর ক্রুর হাঁসি কুঞ্জ র চোখে এড়ালোনা। কথায় আছে হাতি কাদায় পডলে ব্যাং এও
লাথি মারে । কুঞ্জ র অবস্থা কিছুটা তাই । দারোগা বাবু বল্লেন , বাবুদের অশেষ
দয়া তা নাহলে তোর নামে ৪ টে দফা লাগিয়ে তোকে জেলে ভরতাম বুঝলি
। কালকেই কোরট্ এ হাজির করা হত
৷ভগবান বুঝলি সাখ্যাৎ ভগবান , যেমন নাম সেইরকম কাজ । আমাদের বিধায়ক মহাশয় তোকে ছাডাতে
নিজে এসেছেন ।তুই কিনা কাটারি নিয়ে গিয়েছিলিশ মারতে । ধর্ম নেইরে এ জুগে ধর্ম নেই
। যার ভাল করবি সেই তোকে বাঁশ দেবে । আঃ কি হচ্ছে ? বিধায়ক বলেন । আমি যে জন্য
এসেছি সেটা করুন । এই সময় বাইরে লক্ষীর গলার আওয়াজ এল
!লক্ষী গজরাতে গজরাতে ভেতরে ঢুকলো , আ মরন মিনশে! আদিখ্যেতা
দেখলে গা জ্বলে যায় !! আমার বর ছাডা কি কেউ ছিলনা এ গেরামে
মুখপোডারা ? হাজতে ভরতে তোদের
হাথ কাঁপলোনা ? কাল থেকে মানুষটা ভাতে মুখ দেয়নি । শুকিয়ে
রোগা কাঠি হয়ে গেছে গা । মরন হয় না তোদের ? আমি যদি কোন পাপ না কোরে থাকি এর যবাব
দিও হে ঠাকুর ! তুমি
ভরষা !!
“দেখছিস কুঞ্জ তোর বউ এর চোপা?” দারগা বাবু বলে
উঠলেন । স্যার এর একটা বিহিৎ করুন । মেয়েমানুষের চোপা ! এই কে তোকে থানাতে আসতে
বলেছে? যা এক্ষুনি । নাহলে এক্ষুনি তোকেও লক আপ এ
ভর্তি করে দেব ।
সাধে কি আর বলে মেয়ে মানুষ ? মুখের কথা দেখ ? যেন খই
ফুটছে । উঁহ ! দারোগা বলেন। গরিবের কি
কেউ নেই ? আমি কি সাধে এখানে এয়েছি ?লক্ষী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আমরা এখানে কুঞ্জ কে ছাডাতে এসেছি । আপনি ঘরে যান । সব ঠিক হয়ে যাবে । যাচ্ছি
যাচ্ছি । কে আর থানাতে আসে
বাবু গরজ না পড়লে।লক্ষী গজরাতে গজরাতে থানা ছেড়ে চলে যায়।
দেখলেন স্যার দেখলেন এদের । এরা লাথির ভাষা বোঝে ভালো কথা
বললে মাথায় চড়ে। কুঞ্জ র মনে হচ্ছিল গিয়ে ঠাস্ করে এক থাপ্পড মারে নিশিকান্ত কে ।
কিন্তু ওর হাত পা বাঁধা ।ছিঃ শেষে কিনা থানাতে? লজ্যা ঘৄনাতে নিজেকে ছোট মনে
হয়।কিন্তু মাস্টার মোসাই ? কি অভিসন্ধী এদের কে জানে ? বলা মুশকিল । বাডি গেলে
যানতে পারব ? লক্ষী ত্ত বা কেমন? থানায় কখন মেয়েছেলে আসে ? সবাই কি ভাবল?
কুঞ্জ বাড়ি ফিরল তার পরদিন মাষটার মোসাই ও ফিরে এলেন । মাষটার মোসাইএর এখানে কেউ থাকেন না
।উনি একাই এই গ্র।মে প্রায় বছর দশেক আছেন ।তিনি নিজে ছাত্রদের শিখিয়েছেন অন্যায়কে
সহ্য করা এবং অন্যায় করা দুটই এক অপরাধ । অন্যায়কে প্রতিবাদ কর হিঁসা দিয়ে নয় যুক্তি
দিয়ে । কুঞ্জ যেটা করল সেটা ভূল । সে
ভূলের মাসুল তাকে দিতে হল।
No comments:
Post a Comment