Saturday, July 28, 2012

রুদ্রাক্ষ ...... প্রথম ভাগ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী

রুদ্রাক্ষ ১ম পর্ব । 

  ত্রিভুবনজিৎ  মুখার্জ্জী

ছোট্ট গ্রাম, নাম তার হরিনারায়ানপুর । চাষ আবাদ করে চলে গ্রামবাসীরা । অর্থনৈতিক সচ্ছলতা  নেই বললেই হয় । কৃষি প্রধান গ্রাম । সকলেই  মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠিন পরিশ্রম করে সংসার চালায় । যে বছর ভাল বৃষ্টি হয় ফসল ভাল , নাহলে কপালে হাত  । ফি বছর বন্যা তে গ্রাম প্লাবিত হয় আর ফসল হানি হয় । গ্রামে কুঁড়ে ঘরই বেশি । যারা গ্রাম ছেড়ে সহরে চলে গিয়েছে তারা প্রায় গ্রামের মুখ দেখেননা বললেই চলে ।দুর্গা পুজোর সময় আসে , কদিন থেকে চলেযায় ।  এমনি এক গ্রামের বাসিন্দা কুঞ্জ বিহারি প্রধান । তার এক মাত্র ছেলের নাম রুদ্রাক্ষ প্রধান ।ডাক নাম রুদ্র ।  শিব রাত্রির দিন  রুদ্রাক্ষ র জন্ম তাই নাম ‘রুদ্রাক্ষ’  । ছেলেটা ধীর স্থির মিষ্ট স্বভাবের ।  
কুঞ্জ আর তার স্ত্রী , লক্ষ্মী দুঃখে কষ্টে দিন কাটাত । রুদ্রাক্ষ গ্রামের স্কুল এ ক্লাস থ্রি তে পড়ত । ভালই পড়াশুনো করত । মাস্টার মশাই রুদ্রাক্ষ কে  খুব স্নেহ করতেন । মা বাবার চোখের মণি যেমন গুনে তেমন কাজে । পড়াশুনো থেকে আরম্ভ করে ক্ষেত খামারের কাজ সব ই করত রুদ্রাক্ষ বাবার সঙ্গে  । 
                                                            
                                
একদিন গ্রামেতে লোকের ভিড । অনেক গাডি তার সঙ্গে কিছু নেতা ,  গ্রামের মোড়ল নিশিকান্ত চৌধুরী । বাবুদের দেখে গ্রামের ছেলে ছোকরা, বুড় বুড়ি সকলেই একজোট হল। নিশিকান্ত বাবু  বললেন, এই গ্রামের সুদিন এল । আপনাদের  আর দুঃখ কষ্ট থাকবে না ।আপনারা  এবার গাডি ঘোড়া চডে বাবুদের মত থাকবেন  । এখানে বাঁধ হবে । সরকার আপনাদের  জন্য এখানে বাঁধ করলে কৃষির উন্নতি সাধন এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে । আপনাদের  ছেলে মেয়ে পড়াশুন করে অনেক বড হবে ।বিস্থাপিত ৭২৬ পরিবারের জন্য সরকার আলাদা বসতি নির্মাণ করবেন । আজ তাই আপনাদের  কাছে আমাদের অঞ্চলের মাননীয় বিধায়ক, শ্রী ভগবান চৌধুরী মহাশয় উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পের বিষয় বিস্তারিত সূচনা দেবেন। সভাতে, করতালির বদলে বিরোধিতা আরম্ভ হল। স্কুলের এক শিক্ষক শ্রী পঞ্চানন প্রধান বিরোধিতার সুর আরম্ভ করে বললেন,সরকার আগে বিস্থাপিতদের জন্য নতুন বসতি,রাস্তা,স্কুল,ডাক্তারখানা,পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ করুন  তারপর আমরা এই বিষয়ে সম্মতি জানাবো । নিশিকান্ত চৌধুরী খেপে লাল। গর্জে উঠলেন আপনার মাস্টারিটা বিধায়ক মহাশয় এক্ষুনি ঘুঞ্চিয়ে দেবেন,  আপনার সাহস ত কম নয়! শিক্ষক মহাশয় বিনম্রতার সঙ্গে বললেন আপনারা এই গরীব গ্রামবাসী দের জমি নিয়ে নেবেন আর তার বিনিময়ে যা যা ঘোষণা করছেন তার ... বিধায়ক মাহাশয় হাত থামিয়ে নিশিকান্ত কে বসতে বললেন । তার পর শুরু করলেন আমি এখানে কারুর পেটের দানা ছিনিয়ে নিতে আসিনি বরং কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে এসেছি
                                   
। আপনারা ধৈর্য্য ধরে শুনুন সমস্ত বিষয়টা তারপর আপনাদের কথা শুনব। এই যোজনার জন্য সরকার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এবং এর সুবাদে সমুদায় ৯৯৫০ হেক্টার জমিতে সেচের সুবিধে হবে । আপনাদের পরিবারের কেউ একজন সরকারি চাকরী পাবে। সাতটি পুনর্বসতি কলোনি তে সকল বিস্থাপিতদের থইথান করা হবে । 

      এর মধ্যে কিছু লোক চেঁচা মিচি শুরু করে দেয় । নিশিকান্ত সরকারী দালাল আমরা এ ভিটে মাটি ছাডবোনা। আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেডে কোথাউ যাবনা । ছেলেদের চিৎকারের সঙ্গে অন্যরাও সুর মেলাল । বিধায়ক মহাশয় জত বোঝালেও কেউ রাজি হলনা কি চিৎকার থামল না । অগত্যা সরকারি বাবুদের নিয়ে সবাই ফিরে গেলেন

                                                                                                                                   

No comments:

Post a Comment