Saturday, July 28, 2012

অভ্যর্থনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাঃ-
অভ্যর্থনা
----------
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
----------------- 

প্রথম দৃশ্য
গ্রামের পথ

চতুর্ভুজবাবু এম| এ| পাস করিয়া গ্রামে আসিয়াছেন; মনে করিয়াছেন গ্রামে হুলস্থূল পড়িবে।
সঙ্গে একটা মোটাসোটা কাবুলি বিড়াল আছে

নীলরতনের প্রবেশ

নীলরতন।
এই যে চতুবাবু, কবে আসা হল?

চতুর্ভুজ।
কালেজে এম| এ| এক্‌জামিন দিয়েই--

নীলরতন।
বা বা, এ বেড়ালটি তো বড়ো সরেস।

চতুর্ভুজ।
এবারকার এক্‌জামিনেশন ভারি--

নীলরতন।
মশায়, বেড়ালটি কোথায় পেলেন?

চতুর্ভুজ।
কিনেছি। এবারে যে সবজেক্ট নিয়েছিলুম--

নীলরতন।
কত দাম লেগেছে মশায়?

চতুর্ভুজ।
মনে নেই। নীলরতনবাবু, আমাদের গ্রামের থেকে কেউ কি পাস হয়েছে?

নীলরতন।
বিস্তর। কিন্তু এমন বেড়াল এ মুল্লুকে নেই।

চতুর্ভুজ।
(স্বগত) আ মোলো, এ যে কেবল বেড়ালের কথাই বলে-- আমি যে পাস করে এলুম সে কথা যে আর তোলে না।

জমিদারবাবুর প্রবেশ

জমিদার।
এই-যে চতুর্ভুজ, এতকাল কলকাতায় বসে কী করলে বাপু?

চতুর্ভুজ।
আজ্ঞে এম| এ| দিয়ে আসছি।

জমিদার।
কী বললে? মেয়ে দিয়ে এসেছ? কাকে দিয়ে এসেছ?

চতুর্ভুজ।
তা নয়-- বি| এ| দিয়ে--

জমিদার।
মেয়ের বিয়ে দিয়েছ? তা, আমরা কিছুই জানতে পারলেম না?

চতুর্ভুজ।
বিয়ে নয়-- বি|এ|--

জমিদার।
তবেই হল। তোমরা শহরে বল বি|এ| , আমরা পাড়াগাঁয়ে বলি বিয়ে। সে কথা যাক, এ বেড়ালটি তোফা দেখতে।

চতুর্ভুজ।
আপনার ভ্রম হয়েছে; আমার--

জমিদার।
ভ্রম কিসের-- এমন বেড়াল তুমি এ জেলার মধ্যে খুঁজে বের করো দেখি!

চতুর্ভুজ।
আজ্ঞে না, বেড়ালের কথা হচ্ছে না--

জমিদার।
বেড়ালের কথাই তো হচ্ছে-- আমি বলছি এমন বেড়াল মেলে না।

চতুর্ভুজ।
(স্বগত) আ খেলে যা!

জমিদার।
বিকেলের দিকে বেড়ালটি সঙ্গে করে আমাদের ও দিকে একবার যেয়ো। ছেলেরা দেখে ভারি খুশি হবে।

চতুর্ভুজ।
তা হবে বৈকি। ছেলেরা অনেক দিন আমাকে দেখে নি।

জমিদার।
হাঁ-- তা তো বটেই-- কিন্তু আমি বলছি, তুমি যদি যেতে না পার তো বেড়ালটি বেণীর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিয়ো-- ছেলেদের দেখাব।

[ প্রস্থান ]

সাতুখুড়োর প্রবেশ

সাতুখুড়ো।
এই-যে, অনেক দিনের পর দেখা।

চতুর্ভুজ।
তা আর হবে না! কতগুলো এক্‌জামিন--

সাতুখুড়ো।
এই বেড়ালটি--

চতুর্ভুজ।
(সরোষে) আমি বাড়ি চললেম। [ প্রস্থানোদ্যম

সাতুখুড়ো।
আরে, শুনে যাও-না-- এ বেড়ালটি--

চতুর্ভুজ।
না মশায়, বাড়িতে কাজ আছে।

সাতুখুড়ো।
আরে, একটা কথার উত্তরই দাও-না -- এ বেড়ালটি--

[ কোনো উত্তর না দিয়া হন্‌হন্‌ বেগে চতুর্ভুজের প্রস্থান ]

সাতুখুড়ো।
আ মোলো! ছেলেপুলেগুলো লেখাপড়া শিখে ধনুর্ধর হয়ে ওঠেন। গুণ তো যথেষ্ট-- অহংকার চার পোয়া!

[ প্রস্থান ]

দ্বিতীয় দৃশ্য
চতুর্ভুজের বাটীর অন্তঃপুর

দাসী।
মাঠাকরুন, দাদাবাবু একেবারে আগুন হয়ে এসেছেন।

মা।
কেন রে?

দাসী।
কী জানি বাপু!

চতুর্ভুজের প্রবেশ

ছোটো ছেলে।
দাদাবাবু, এ বেড়ালটি আমাকে--

চতুর্ভুজ।
(তাহাকে এক চপেটাঘাত) দিন রাত্রি কেবল বেড়াল বেড়াল বেড়াল!

মা।
বাছা সাধে রাগ করে! এত দিন পরে বাড়ি এল, ছেলেগুলি বিরক্ত করে খেলে। যা, তোরা সব যা! (চতুর্ভুজের প্রতি) আমাকে দাও বাছা-- দুধভাত রেখে দিয়েছি, আমি তোমার বেড়ালকে খাইয়ে আনছি।

চতুর্ভুজ।
(সরোষে) এই নাও মা, তোমরা বেড়ালকেই খাওয়াও আমি খাব না, আমি চললেম।

মা।
(সকাতরে) ও কী কথা! তোমার খাবার তো তৈরি আছে বাপ, এখন নেয়ে এলেই হয়।

চতুর্ভুজ।
আমি চললেম-- তোমাদের দেশে বেড়ালেরই আদর, এখানে গুণবানের আদর নেই।

বিড়ালের প্রতি লাথি-বর্ষণ

মাসিমা।
আহা, ওকে মেরো না-- ও তো কোনো দোষ করে নি।

চতুর্ভুজ।
বেড়ালের প্রতিই যত তোমাদের মায়ামমতা-- আর মানুষের প্রতি একটু দয়া নেই।

[ প্রস্থান ]

ছোটো মেয়ে।
(নেপথ্যের দিকে নির্দেশ করিয়া) হরিখুড়ো দেখে যাও, ওর লেজ কত মোটা।

হরি।
কার?

মেয়ে।
ঐ-যে ওর!

হরি।
চতুর্ভুজের?

মেয়ে।
না, ঐ বেড়ালের।

তৃতীয় দৃশ্য
পথ। ব্যাগ হস্তে চতুর্ভুজ। সঙ্গে বিড়াল নাই

সাধুচরণ।
মশায়, আপনার সে বেড়ালটি গেল কোথায়?

চতুর্ভুজ।
সে মরেছে!

সাধুচরণ।
আহা, কেমন করে মোলো?

চতুর্ভুজ।
(বিরক্ত হইয়া) জানি নে মশায়!

পরানবাবুর প্রবেশ

পরান।
মশায়, আপনার বেড়াল কী হল?

চতুর্ভুজ।
সে মরেছে।

পরান।
বটে! মোলো কী করে?

চতুর্ভুজ।
এই তোমরা যেমন করে মরবে। গলায় দড়ি দিয়ে।

পরান।
ও বাবা, এ যে একেবারে আগুন।

চতুর্ভুজের পশ্চাতে ছেলের পাল লাগিল

হাততালি দিয়া 'কাবুলি বিড়াল' 'কাবুলি বিড়াল' বলিয়া খেপাইতে লাগিল

রুদ্রাক্ষ ...... প্রথম ভাগ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী

রুদ্রাক্ষ ১ম পর্ব । 

  ত্রিভুবনজিৎ  মুখার্জ্জী

ছোট্ট গ্রাম, নাম তার হরিনারায়ানপুর । চাষ আবাদ করে চলে গ্রামবাসীরা । অর্থনৈতিক সচ্ছলতা  নেই বললেই হয় । কৃষি প্রধান গ্রাম । সকলেই  মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠিন পরিশ্রম করে সংসার চালায় । যে বছর ভাল বৃষ্টি হয় ফসল ভাল , নাহলে কপালে হাত  । ফি বছর বন্যা তে গ্রাম প্লাবিত হয় আর ফসল হানি হয় । গ্রামে কুঁড়ে ঘরই বেশি । যারা গ্রাম ছেড়ে সহরে চলে গিয়েছে তারা প্রায় গ্রামের মুখ দেখেননা বললেই চলে ।দুর্গা পুজোর সময় আসে , কদিন থেকে চলেযায় ।  এমনি এক গ্রামের বাসিন্দা কুঞ্জ বিহারি প্রধান । তার এক মাত্র ছেলের নাম রুদ্রাক্ষ প্রধান ।ডাক নাম রুদ্র ।  শিব রাত্রির দিন  রুদ্রাক্ষ র জন্ম তাই নাম ‘রুদ্রাক্ষ’  । ছেলেটা ধীর স্থির মিষ্ট স্বভাবের ।  
কুঞ্জ আর তার স্ত্রী , লক্ষ্মী দুঃখে কষ্টে দিন কাটাত । রুদ্রাক্ষ গ্রামের স্কুল এ ক্লাস থ্রি তে পড়ত । ভালই পড়াশুনো করত । মাস্টার মশাই রুদ্রাক্ষ কে  খুব স্নেহ করতেন । মা বাবার চোখের মণি যেমন গুনে তেমন কাজে । পড়াশুনো থেকে আরম্ভ করে ক্ষেত খামারের কাজ সব ই করত রুদ্রাক্ষ বাবার সঙ্গে  । 
                                                            
                                
একদিন গ্রামেতে লোকের ভিড । অনেক গাডি তার সঙ্গে কিছু নেতা ,  গ্রামের মোড়ল নিশিকান্ত চৌধুরী । বাবুদের দেখে গ্রামের ছেলে ছোকরা, বুড় বুড়ি সকলেই একজোট হল। নিশিকান্ত বাবু  বললেন, এই গ্রামের সুদিন এল । আপনাদের  আর দুঃখ কষ্ট থাকবে না ।আপনারা  এবার গাডি ঘোড়া চডে বাবুদের মত থাকবেন  । এখানে বাঁধ হবে । সরকার আপনাদের  জন্য এখানে বাঁধ করলে কৃষির উন্নতি সাধন এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে । আপনাদের  ছেলে মেয়ে পড়াশুন করে অনেক বড হবে ।বিস্থাপিত ৭২৬ পরিবারের জন্য সরকার আলাদা বসতি নির্মাণ করবেন । আজ তাই আপনাদের  কাছে আমাদের অঞ্চলের মাননীয় বিধায়ক, শ্রী ভগবান চৌধুরী মহাশয় উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পের বিষয় বিস্তারিত সূচনা দেবেন। সভাতে, করতালির বদলে বিরোধিতা আরম্ভ হল। স্কুলের এক শিক্ষক শ্রী পঞ্চানন প্রধান বিরোধিতার সুর আরম্ভ করে বললেন,সরকার আগে বিস্থাপিতদের জন্য নতুন বসতি,রাস্তা,স্কুল,ডাক্তারখানা,পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ করুন  তারপর আমরা এই বিষয়ে সম্মতি জানাবো । নিশিকান্ত চৌধুরী খেপে লাল। গর্জে উঠলেন আপনার মাস্টারিটা বিধায়ক মহাশয় এক্ষুনি ঘুঞ্চিয়ে দেবেন,  আপনার সাহস ত কম নয়! শিক্ষক মহাশয় বিনম্রতার সঙ্গে বললেন আপনারা এই গরীব গ্রামবাসী দের জমি নিয়ে নেবেন আর তার বিনিময়ে যা যা ঘোষণা করছেন তার ... বিধায়ক মাহাশয় হাত থামিয়ে নিশিকান্ত কে বসতে বললেন । তার পর শুরু করলেন আমি এখানে কারুর পেটের দানা ছিনিয়ে নিতে আসিনি বরং কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে এসেছি
                                   
। আপনারা ধৈর্য্য ধরে শুনুন সমস্ত বিষয়টা তারপর আপনাদের কথা শুনব। এই যোজনার জন্য সরকার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এবং এর সুবাদে সমুদায় ৯৯৫০ হেক্টার জমিতে সেচের সুবিধে হবে । আপনাদের পরিবারের কেউ একজন সরকারি চাকরী পাবে। সাতটি পুনর্বসতি কলোনি তে সকল বিস্থাপিতদের থইথান করা হবে । 

      এর মধ্যে কিছু লোক চেঁচা মিচি শুরু করে দেয় । নিশিকান্ত সরকারী দালাল আমরা এ ভিটে মাটি ছাডবোনা। আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেডে কোথাউ যাবনা । ছেলেদের চিৎকারের সঙ্গে অন্যরাও সুর মেলাল । বিধায়ক মহাশয় জত বোঝালেও কেউ রাজি হলনা কি চিৎকার থামল না । অগত্যা সরকারি বাবুদের নিয়ে সবাই ফিরে গেলেন

                                                                                                                                   

রুদ্রাক্ষ ২য় ভাগ

 তার পরের  দিন পুলিশ এসে পঞ্চানন বাবুকে ধরে নিয়ে যায়
 প্রথমে পঞ্চানন বাবু ওয়ারেন্ট দেখতে চান কিন্তু পুলিশ কিছু না দেখিয়েই ধরে নিয়ে যায় তাঁকে   সবাই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকে যে জার ঘরে  চলে যায় রুদ্রাক্ষ সব দেখে নির্বাক হয়ে যায় বয়স অল্প হলেও তার মনে প্রতিবাদের বহ্নিশিখা জ্বলতে থাকে সে বোঝে যা হচ্ছে সেটা অন্যায় তাই পেছন থেকে পুলিশ এর জীপ কে লখ্য করে ঢিল ছোঁড়ে বাড়িতে দউড়ে চলে যায়।  বাবাকে বলাতে,  বাবা গুম হয়ে বসে থাকেন, মা কিছু বললে বিরক্ত হন আকাশ পানে চেয়ে কিছু বিড় বিড় করেন।
      এর পরের ঘটনা গ্রামেতে ক্যাম্প বসে তাহসিলদার, আর আই,আমিন চেন নিয়ে মাপ জোপ আরম্ভ করে দেয় পল্লিসভা হয়
                        
তাতে কিছু লোক নিশিকান্ত বাবুর গুণ্ডাদের ভয়ে টুঁ শব্দটি করেনা। হঠাৎ বাবা বাডিথেকে একটা কাটারি নিয়ে নিশিকান্তর দিকে দৌড়ন রাগে গজরাতে গজরাতে বলেন তোর চোদ্দ পুরুষের বাপের জমিদারী যে আমাদের জমি নিতে এসেছিস সবাই রে রে করে বাবাকে আটকান তহসিলদার বোঝান তোমরা ক্ষতি পুরন পাবে অনেক টাকা পাবে এখানে সই কর বাবা কাগজটা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলেন রাগে বলেন বাবু আপনারা আমাদের অন্ন র থালা ছিনিয়ে নিয়ে টাকা দেখাচ্ছেন টাকা আমরা চাইনা নিশিকান্ত গর্জে উঠে বলল , এই কুঞ্জ তোর গায়ে মেলা চর্বি হয়েছে না ? দেখাচ্ছি তোকে মজা। গ্রামের উন্নতি চাসনা তো গ্রাম ছেডে চোলেযা
পরের দিন পুলিশ এসে কুঞ্জকেও নিয়ে গেল কোন ওয়ারেন্ট না থাকা সত্তেও । দেশের আইন ব্যাবাস্থা র প্রতি কুঞ্জর  ঘৄনা ধরেগেল । পুলিশের দারোগা বাবু বল্লেন , তোর এত সাহস তুই লোক প্রতিনিধির কথা না শুনে  কাটারী নিয়ে মারতে গিয়েছিলিশ ; সেটা কি অস্বিকার করবি । সাক্ষীপ্রমান তোর বাডির লোক ই দেবে ।ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন কি ? কুঞ্জর নিজের জন্যে চিন্তা  হয়না । তার বউ ছেলের যদি কোন ক্ষতি হয় তারচে তার মৄত্যু ভাল হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । হাজতে নিশিকান্ত আর ভগবান চৌধুরী , বিধায়ক এসে কুঞ্জ কে বল্লেন ,” দেখ কুঞ্জ আমরা তোমাকে ইচ্ছে  করলেই জেল হাজতে পাঠাতে পারি কিন্তু তাতে কি লাভ তোমার বউ ছেলে না খেয়ে মারা যাবে ।নিশিকান্ত বলে ,  তুই কি তাই চাস ?”  কুঞ্জ হাউ হাউ
                              
করে কেঁদে বলে ,”না বাবু ওরকমটি করবেন না ! আমি আপনারা যা  চাইবেন তাই করব ।“  নিশিকান্তর ক্রুর হাঁসি কুঞ্জ র চোখে এড়ালোনা কথায় আছে হাতি কাদায় পডলে ব্যাং এও লাথি মারে । কুঞ্জ র অবস্থা কিছুটা তাই । দারোগা বাবু বল্লেন , বাবুদের অশে দয়া তা নাহলে তোর নামে ৪ টে দফা লাগিয়ে তোকে জেলে ভরতাম বুঝলি । কালকেই  কোরট্ এ হাজির করা হত ৷ভগবান বুঝলি সাখ্যাৎ ভগবান , যেমন নাম সেইরকম কাজ ।  আমাদের বিধায়ক মহাশয় তোকে ছাডাতে নিজে এসেছেন ।তুই কিনা কাটারি নিয়ে গিয়েছিলিশ মারতে । ধর্ম নেইরে এ জুগে ধর্ম নেই । যার ভাল করবি সেই তোকে বাঁশ দেবে । আঃ কি হচ্ছে ? বিধায়ক বলেন । আমি যে জন্য এসেছি সেটা করুন । এই সময় বাইরে লক্ষীর গলার আওয়াজ এল !লক্ষী গজরাতে গজরাতে ভেতরে ঢুকলো , আ মরন মিনশে! আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায় !! আমার বর ছাডা কি কেউ ছিলনা এ গেরামে মুখপোডারা হাজতে ভরতে তোদের হাথ কাঁপলোনা ?  কাল  থেকে মানুষটা ভাতে মুখ দেয়নি । শুকিয়ে রোগা কাঠি হয়ে গেছে গা । মরন হয় না তোদের ? আমি যদি কোন পাপ না কোরে থাকি এর যবাব দিও হে ঠাকুর তুমি ভরষা !!
দেখছিস কুঞ্জ তোর বউ এর চোপা?” দারগা বাবু বলে উঠলেন । স্যার এর একটা বিহিৎ করুন । মেয়েমানুষের চোপা ! এই কে তোকে থানাতে আসতে বলেছে? যা এক্ষুনি । নাহলে এক্ষুনি তোকেও লক আপ এ   
                            
ভর্তি করে দেব ।  সাধে কি আর বলে মেয়ে মানুষ ? মুখের কথা দেখ ? যেন খই ফুটছে । উঁহ ! দারোগা বলেন।  গরিবের কি কেউ নেই ? আমি কি সাধে এখানে এয়েছি ?লক্ষী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আমরা এখানে  কুঞ্জ কে ছাডাতে এসেছি আপনি ঘরে যান । সব ঠিক হয়ে যাবে ।  যাচ্ছি  যাচ্ছি কে আর থানাতে আসে বাবু গরজ না পড়লে।লক্ষী গজরাতে গজরাতে থানা ছেড়ে চলে যায়।
দেখলেন স্যার দেখলেন এদের । এরা লাথির ভাষা বোঝে ভালো কথা বললে মাথায় চড়ে। কুঞ্জ র মনে হচ্ছিল গিয়ে ঠাস্ করে এক থাপ্পড মারে নিশিকান্ত কে । কিন্তু ওর হাত পা বাঁধা ।ছিঃ শেষে কিনা থানাতে? লজ্যা ঘৄনাতে নিজেকে ছোট মনে হয়।কিন্তু মাস্টার মোসাই ? কি অভিসন্ধী এদের কে জানে ? বলা মুশকিল । বাডি গেলে যানতে পারব ? লক্ষী ত্ত বা কেমন? থানায় কখন মেয়েছেলে আসে ? সবাই কি ভাবল?                                                        
কুঞ্জ বাড়ি ফিরল তার পরদিন মাষটার মোসাই ও  ফিরে এলেন । মাষটার মোসাইএর এখানে কেউ থাকেন না ।উনি একাই এই গ্র।মে প্রায় বছর দশেক আছেন ।তিনি নিজে ছাত্রদের শিখিয়েছেন অন্যায়কে সহ্য করা এবং অন্যায় করা দুটই এক অপরাধ । অন্যায়কে প্রতিবাদ কর হিঁসা দিয়ে নয় যুক্তি  দিয়ে । কুঞ্জ যেটা করল সেটা ভূল । সে ভূলের মাসুল তাকে দিতে হল। 

রুদ্রাক্ষ ৩য় ভাগ


  
                                      আপনারা ভাবছেন রুদ্রাক্ষ হারিয়ে গেল ? নাকি কোথাউ নিরুদ্দেশ হয়েগেল ?  সেরকম কিছুই হয় নি । রাস্তায় মাস্টারমশাই রুদ্রাক্ষ কে কাটারি হাতে দেখে থমকে যান  তারপর আন্দাজ করেন কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে । তখন ভো্র হয়ে আসছিল । সূ্র্য্য পূর্ব গগনে উদিয়মান তার রক্তিম আভা রুদ্র(রুদ্রাক্ষ) র মুখমন্ডল কে রক্তিম করে তুলেছে । একটা দিব্য জ্যোতি তার মুখমন্ডল থেকে যেন ঠিক্ রে বেরুচ্ছে । মাস্টারমোসাইকে  রুদ্র  দেখে কাটারি টা হাত থেকে ফেলেদিয়ে ডুক্ রে কেঁদে ওঠে , কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,”ওরা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে । ওদের আমি ছাড়বোনা।“  মাস্টারমোশাই রুদ্র কে কোলে তুলে নেন তারপর বলেন রুদ্র তুমিনা ভাল ছেলে ! ভাল ছেলেরা কি কাটারি ধরে ? আমিত আছি তোমার ভয় কি ?  তোমার মা তোমায় না দেখে অধীর হবেন । চল আমরা তোমাদের বাডী যাই ।
রুদ্র , মন্ত্র মুগ্ধের মত লক্ষী ছেলেটি র মত মাস্টারমশায়ের সঙ্গে বাডী ফিরে এল । ততক্ষনে পাডার লোকেরা ভীড় জমিয়েছে কুঞ্জ র ঘরে । মাস্টারমোসাই কে দেখে সবাই মনে বল পেল । সকলের এক প্রশ্ন কি করনিয় কারন সকলেই মর্মাহত । মাস্টার বলেন আগে শব শৎকার তার পর যা করনিয় । কিন্তু জনতা বলে আমরা বিধায়ক কে ঘেরাউ করব নিশিকান্ত র বাডি ঘেরাও করব । কুঞ্জ র অকাল মৄত্যুর র জন্য নিশিকান্ত চৌধুরী আর বিধায়ক ভগবান চৌধুরী দায়ি । সরকার এই মৄত্যুর জন্য ক্ষতিপুরন না দেওয়া ওবধি আমরা শব নিশিকান্ত র বাডীর সামনে রেখে ধারনা দেব। পরের দিন কাগজে বড বড করে বেরুলো হরিনারায়নপুর এ চাষী ম্রিত্যু । এন জি ও, পত্রকার , বিরোধী নেতাদের শ্রোত ছুটল । কেন কুঞ্জ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল? কি হবে লক্ষী র সিঁদুরের ? কেউ কি তার সোয়ামি কে ফেরাতে পারবে গা ? এ প্রশ্ন আপনাদের কাছে রাখলাম । এরকম হাজার হাজার রুদ্রাক্ষ র জন্ম হচ্ছে এ দেশে এরকম হাজার হাজার কুঞ্জ দারীদ্রের কশা ঘাতে মৄত্যু কে স্বাগত করতে বাধ্য হচ্ছে । থেকে জাচ্ছে কিছু  নিশিকান্ত,নিতাই,নিধিরাম,পুলিশ দারোগা র মতন স্বারথপর রক্ত পিপাষু মানুষ রুপি নরপশু এ জুগে তাদের ই সংখ্যা বেশি । 
  
                                                      ত্রিভুবনজিৎ  মুখার্জ্জী 

Wednesday, July 11, 2012


                  বিশ্বজিৎ রায়