Thursday, November 8, 2018

রামচন্দ্র ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ০৯.১১.২০১৮ বেলা ১২.২৯



   
রামচন্দ্র

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী  

মানুষ জন্মালে মৃত্যু সুনিশ্চিত । তবুও মানুষের গর্ব ,অহংকার , লোভ , কামনা বাসনা এবং অন্যের ওপর প্রতিপত্তি বিস্তারের অদম্য ইচ্ছা । নিজেকে জাহির করার জন্য কি না করছে মানুষ ! টাকা বাড়ি ধন সম্পদ সব ই এই পার্থিব দুনিয়ায় পড়ে থাকবে । ফুড়ুৎ করে কখন চলে যাবে তার প্রাণ বায়ু । পড়ে থাকবে নশ্বর দেহ খানি । সব যেনেও অজ্ঞানীর মতন যত অকাজ কুকাজ করা । এই জন্য মানুষ ঈশ্বরকে প্রার্থনা করে সৎ গুরুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে । যদি প্রকৃত সৎ গুরুর সন্ধান পায় এবং তাঁর গুরু বাণী অনুযায়ী নিজেকে সংযত করে দৈনন্দিন কাজ করে তবেই সে মুক্তি পায় এবং তার চলা পথ সুগম হয়।

পিতা মাতার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা  এবং তাদের প্রতি কর্তব্য করা । তাদের যত্ন নেওয়া । এসব ই আজকাল প্রায় লুপ্ত । তাই দেশে অনাচার ব্যভিচার দুরাচার সব রকম কদর্য কাণ্ড কারখানা হচ্ছে। অপরাধ এবং অপরাধীর সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। পুলিশ প্রশাসন কি করবে ? তাদের কাজের ওপর অনেক চাপ বৃদ্ধি হচ্ছে। তারা কি শান্তিতে আছে ?কথাগুলো লিখতে লিখতে লিখে ফেললাম ।

আজ এক অসহায় বৃদ্ধের কথা লিখছি নাম রাম চন্দ্র দাস । নিবাস মউরীগ্রাম । রাম চন্দ্রর দুই পুত্র । পত্নী গত হয়েছেন প্রায় দু বছর । পত্নীর অবর্তমানে রাম চন্দ্র ভারাক্রান্ত মন নিয়ে প্রায় ই চুপ চাপ বসে থাকে বাইরের বারান্দায় । মাটির বারান্দা । ওপরে খড়ের চাল। গোয়ালে একটা গোরু সেও আর দুধ দেয় না। রাম চন্দ্র ওই গরুর মতন অকেজো কারণ সে আর রোজগার ক্ষম নয়। অহেতুক মাঝে মাঝেই তার ছেলেরা তাকে শাসায় । ছেলেদের মুখ ঝামটা খেয়ে রামচন্দ্র মনে মনে ভাবে কোন বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবে। হয়ত সেখানে আর পাঁচটা লোকের সংস্পর্শে তার মন মেজাজ ভালো থাকবে। ঠাকুরের নাম সংকীর্তন করে সময় কাটাবে ।

একদিন তার বড় ছেলে শুধোয় , “বাবা তুমি এই বাড়ি আর জমি আমাদের দুই ভাইয়ের নামে করে দাও। আমরা যে যার সংসার আলাদা ভাবে করি। রোজ আর ঝুট ঝামেলা ভালো লাগেনা।

রামচন্দ্র ফ্যাল ফ্যাল করে তার বড় ছেলের মুখের পানে চেয়ে দ্যাখে:

ফিরে যায় ২৫ বছর পেছনে ছোট্ট ছেলেটির কথা ভেবে । ঘর আলো করে এই ছেলে জন্মাবার পর ঘটা করে অন্নপ্রাশন দেয় । বন্ধু বান্ধব রা বলে ভাগ্যি করে ছেলে পেয়েছ চন্দ্র । রামচন্দ্র খুব গর্ব অনুভব করে । সত্যি ত সে খুব ভাগ্যবান । প্রথম পুত্র তাই নাম দেয় সৌম্য জিৎ । ক্রমে ছেলেটি স্কুলে যায় এবং দেখতে দেখতে স্কুল ফাইনাল পাস করে আই টি আই ট্রেনিং নেয়। এখন সে নিজেই হাউস ওয়ারিং এর কাজ করে। বেশ স্বচ্ছন্দে সংসার চলে। ছোট ছেলে রণজিৎ চায়ের দোকান দিয়েছে ব্লক অফিসের সামনে । সেও বেশ দু পয়সা রোজগার করে। হটাত কি হল কি জানি দুই ভাইয়ের মধ্যে বচসা আরম্ভ হয়। ক্রমে ঘর সম্পত্তি ভাগের কথা হয়। রাম চন্দ্র নিজেকে কত ভাগ্যবান ভাবত আজ তার ভাগ্য চোখের সামনে দুই ভাইয়ের ঝগড়া বচসা দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে ।

হটাত ধমকের সুরে বড় ছেলের গলার আওয়াজে তার অস্তিত্ব অনুভব করে এক অসহায় পিতার ন্যায় । সে একটাই কথা বলে ,“একটু মানিয়ে চলনা বাবা আমি মরে-গেলে তোরা যা ইচ্ছে  করিস!এই বলে চোখের জল পুঁছতে থাকে কাঁধের গামছা দিয়ে। মা থাকলে কি তোরা এরকম টি করতিস বাবা?

সৌম্য গজ গজ করে চলে যায় কাজে।

দুপুরে রণজিৎ এসে সেই এক কথা । তোমার কি হয়েছে বলত বাবা ? মা চলে যেতে দিব্বি ত বৌদের খাটিয়ে খাচ্ছ । কাজ কর্ম ত কিছুই করনা। বসে বসে খেতে ভালো লাগে?

হা ঈশ্বর ! একটাই কথা রাম চন্দ্রর মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

বিকেলে রণজিৎ একটা সাইকেলে রামচন্দ্র কে বসিয়ে ডাক্তার খানায় নিয়ে যায় । ওখানে ডাক্তার কে বলে বাবার মানসিক রোগ হয়েছে । চিকিৎসার প্রয়োজন । ডাক্তার রামচন্দ্রকে নানা প্রশ্ন করেন শেষে রণজিৎ এর খোঁজ করেন । কোথায় রণজিৎ ? সে মনে করে ওই ডাক্তার খানাতেই রামচন্দ্র মানসিক রোগী হিসেবে বাকি জীবন টা কাটিয়ে দেবে ............ ।

রামচন্দ্র সুধু মানুষের মুখের পানে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আর মুখে বিড় বিড় করে । তবে কি সে সত্যি মানসিক রোগীর জীবন যাপন করবে ? 
সেইদিন থেকে রামচন্দ্রর মুখের হাঁসি আর নেই সে এক নিথর জড় পদার্থ পালটিয়ে গিয়েছে । মানুষের মুখের দিকে তাকায় আর বলে আমার ছেলে নাতি নাতনী কেমন আছে বলতে পারো ? তাদের বলনা আমি খুব কষ্টে আছে এখানে। 
লোকে পাগলের প্রলাপ বলে এড়িয়ে যায় । কি নিদারুণ সেই দৃশ্য । হা ঈশ্বর !!!! তাই বলি যার শেষ ভালো তার সব ভালো । কিন্তু রামচন্দ্র ত কোন পাপ করেনি । তবে কেন সে এই যন্ত্রণা ভোগ করছে ? 

No comments:

Post a Comment