এই গল্পটির জন্য আমি ১.০২.২০১৮ তে ২০০০ টাকা সম্মান জনক পুরষ্কার পেয়েছে আনন্দ বাজার পত্রিকা থেকে. ১৭ ই জানুয়ারি ২০১৮ 'দেশ' পত্রিকার ৩২ পৃষ্ঠায় আমার লেখা গল্প 'আবিষ্কারের নেশা' প্রকাশিত । আপনারা গল্পটি পড়ে সুচিন্তিত মন্তব্য পোষ্ট করবেন।
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
দ্বিতীয় পর্ব
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে। মনে মনে ভাবে বার্কের (ভাবা এটমিক এনার্জি কমিশন) কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার অ্যাপ্লাই করব। খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা। বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে। এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি? ইউ জি সী পেতে অনেক দেরি। সেই থোড় বড়ি খাড়া ...খাড়া বড়ি থোড় ! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হাইয়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে। বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে। বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে। শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্পলায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে আই আই এস সী , বেঙ্গালুরু তে যোগা যোগ করতে চায়। আজ বাবা থাকলে ওকে নিশ্চয় উৎসাহ দিতেন হাইয়ার রিসার্চের জন্য পরের দিন বেঙ্গালুরুর ফ্লাইটে শালিনী চলে-গেল। ওখানে এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে ওঠে। সকালে আই আই এস সী ( Indian Institute of Science) এতে যায়। Carbon Nano tube Based Sensors Funded by: DST, Project no. 563 কাজে সুযোগ পায় প্রফেসর ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর আন্ডারে। শালিনী যা চাইছিল তাই পেল এখানে।
এরমধ্যে অয়নের সঙ্গে হঠাৎ দেখা একটা শপিং মলের কাছে। শালিনীকে দেখে অয়ন হতভম্ব হয়ে যায়। দুজনে চোখা চোখই হয়। ওরা অপোসিট ফুট ধরে হাঁটছিল পরস্পরকে দেখে দুজনেই দাঁড়ালো।
“কি ব্যাপার এখানে”? অয়নের প্রশ্নের অপেক্ষায় যেন ছিল শালিনী
“কেন আমার কি এখানে আস্তে মানা”! ভুরু কুঁচকে শালিনীর জবাব অয়নকে ছুঁড়ে।
তা কেন!
তবে?
কৌতূহল! , মানে just inquisitiveness বলতে পারো।
মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee , am I correct!
Yes Madam!
কোথায় উঠেছ?
কেন যাবে নাকি সেখানে?
আবার ওই এক উত্তর just for inquisitiveness!
আমারও এক উত্তর মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee!!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে।
কফি খাবে?
তা হলে মন্দ হত না!! তবে পেমেন্ট আমি করবো।
তোমায় নিয়ে পারা মুস্কিল। কেন আমি দিলে ক্ষতি কি?
না না আমি দিলে তোমার ক্ষতি কি শুনি?
তর্ক কোর না আজ অন্তত আমার কথা একটু রাখ শালিনী। চল কে এফ সী কাউন্টারে জাই।
অয়নের সান্নিধ্য এই বিদেশ ভুঁইতে খারাপ লাগ-ছিলনা। সত্যি নারীর কাছে পুরুষ মানুষের প্রয়োজন আছে ; নারী যতোই উচ্চ শিক্ষিতা , উচ্চ পদাধিকারী হোক না কেন!এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম।
হঠাৎ অয়ন বলে ,“কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কি ভাবছ? ”
কিছু না! বিব্রত বোধ করে শালিনী। কি আবার ভাববো। মা একা আছেন ওনার কথাই মনে হচ্ছিল!! কেমন আছেন কে জানে?
কেন ফোন করনি?
হ্যাঁ রাত্তিরে করি কিন্তু কাল করিনি। সত্যি মা’কে ফোন করেনি শালিনী।
অয়নকে ঘুণাক্ষরেও যানতে দি লোনা ওর কথাই ভাবছিল বলে ~! মেয়েরা পারেও বটে!! অয়ন কিছু স্ন্যাক্সের অর্ডার দেয়। কে এফ সী চিকেন আর পিটযা।
এতোগুলো কেন আনাচ্ছ? আমি অত খাইনা!
জানি আজ খেতেই হবে। তুমি ত কফি খাওয়ালে আমি মানা করিনি এবার আমি যা খাওয়াবো তুমি প্লিজ মানা করনা।
আমি ওসব খাইনা অয়ন। আমরা ভেতো বাঙ্গালী ওই সব খাবার খেলে পেটের অসুখ হবে , তখন কে দেখবে?
কেন! আমি , আমি দেখবো!!
আহারে! কি আমার কলির কেষ্ট ~ আমায় করবে তুষ্ট?
নাইবা হলাম কলির কেষ্ট ~ তোমার জন্য নয় করবো কষ্ট!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে।
খাওয়া শেষ করে অয়ন শালিনীকে ছেড়ে আসে কোরমঙ্গালা অবধি ট্যাক্সিতে।
রাস্তায় অনেক কথা হয়। শালিনীর পোষ্ট ডক্টরেট এর জন্য ফেলোশিপ। রিসার্চ এর স্কোপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অয়ন এখন বেঙ্গালুরুতেই থাকে নতুন কোম্পানিতে। মাঝে মাঝে চেন্নাই , দিল্লী জায় কোম্পানির কাজে।
শালিনী এখন আর অয়ন কে অপছন্দ করেনা কেন নিজেই জানেনা। আসলে বন্ধু হিসেবেই ওকে গ্রহণ করেছে। নিজের মনকে বোঝায় বন্ধুত্বতে দোষ কি?
ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর সব সময় ব্যস্ত থাকেন নিজের রিসার্চ নিয়ে। শালিনীকে গাইড করছেন একটা নতুন বিষয় নিয়ে কার্বন নেনো টিউব বেসড সেন্সার্স। বেশ কিছু তথ্য ভিত্তিক কনফারেন্স এবং সিম্পোজিয়াম এর মধ্যে সময় কাটে সকলের। পরিবেশটা সরস্বতীর আরাধনা ছাড়া কিছু নেই। যে যার রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত। খাওয়ার সময় থাকেনা এদের। এরা এতোই মসগুল হয়ে থাকে রিসার্চ নিয়ে। শালিনী জীবনে অনেক রিসার্চ করলো। নতুন কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টের টাকা এই বছর শেষ। এর পর কি?
হঠাৎ অয়নের ফোন। হ্যালো! বল অয়ন।
আজ শনিবার আমার অফিস ছুটি।
কিন্তু আমার নয়।
জানি , ছুটি নাওনা!
হুম দেখছি। “আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ প্রায় শেষ। এবার বাড়ী যেতে হবে। ফেলোশিপের টাকা আর পাবো না। আবার সেই মায়ের ঘেন ঘেনানি”। কথাগুল্প মনে মনে ভাবে শালিনী।
কি হল? উত্তর দিচ্ছ না কেন?
অয়ন তোমাকে একটা কথ বলি। তুমি কিছু মনে করবে না বল।
ঠিক আছে বল। আচ্ছা কথাটা না হয় দেখা হলেই বলবে। আমি আসছি তোমাকে নিতে।
মানা করতে পারলো না শালিনী। কিছু একটা অলস আবেগের বসে বলে বসে “ঠিক আছে এস কিন্তু রাত করতে পারবোনা ”।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন এসে হাজির।
চল।
কোথায়?
চলইনা।
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
৪র্থ পর্ব
হাওড়া ষ্টেশন এ গাড়ী ইন করে প্রায় আধ ঘণ্টা লেটে। নিজের লাগেজ গুছিয়ে প্ল্যাট ফর্মে হাঁটা দেয়।
প্রি পেড ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে।
বাড়ি পৌঁছে শান্তি। সোজা বাথ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়।
মা’ জল খাবার নিয়ে মুখের সামনে , সঙ্গে চা।
চলে এলি ভালো হল। বাবা আমার চিন্তা গেল। মেয়টা কোথায় রইলো কি খেল!
প্রত্যেক দিন ত তোমায় ফোন করতাম। তবু চিন্তা!
হবেনা?
কেন?
ও তুই বুঝবিনা। বই ছাড়া ত কিছু জানিশনা। নে খেয়ে নে। পরে কথা হবে।
সত্যি খিধে পাচ্ছিল। ট্রেনের যা খাবার! গা গুলোয় খেলে। লোকে বাধ্য হয় তাই খায়।
বিকেলে দিদি এলো।
কিরে শালু ফিরে এলি?
কি করতাম তাহলে?
কেন তোর রিসার্চ!
শেষ করেই ত এলাম। ছোট প্রোজেক্ট। এবার দেখি কি করি। নাইজারে (NISER) সাইন্টিস্ট চায় দেখি পাই কিনা। ওটা ভালো ইন্সটিটিউট , মাইনে ভালো। পেলে চলে যাবো। আমাকে আমার রিসার্চ চালিয়ে যেতে হবে , আমার টার্গেটে না পৌঁছন পর্যন্ত।
সারা জীবন টা কি এই করেই কাটাবি?
এ ছাড়া আর কি করবো বল? আমি ত তোদের মত গুছিয়ে ঘর সংসার করতে পারবো না।
কেন পারবি না! আমারা কি পারতাম? পারতে হবে সংসারের সেই নিয়ম।
এই খানেই তোর আমার মধ্যে মত ভেদ! “ওই সংসারের সেই নিয়ম” কথাটা আমি মানতে রাজি নই।
অফিস থেকে জিজু এসে হাজির। টুকাই আগে থেকেই এসে গিয়েছে। মাসির কাছে বেঙ্গালুরুর গল্প শুনছে।
হঠাৎ বাইরে রাস্তায় একটা প্রাইভেট কার আমাদের বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো।
কার থেকে সু-টেড বুটেড এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক এবং সঙ্গে এক ভদ্রমহিলা। হাতে মিষ্টি।
শালিনী কিছুই বুঝলোনা। ও নিজের ঘরে চলে গেল। এনাকে ত কোন দিন আমাদের বাড়ী দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। ইনি কে? হঠাৎ মাথায় কারেন্ট লাগার মত একটা শক পেল। অজ্ঞান হয়ে গেল শালিনী। ভাগ্যিস বিছানায় পড়ে গিয়েছিল নাহলে কি হত কে জানে।
টুকাই ঘরে ঢুকে মাসিকে বিছানায় ও ভাবে পড়ে যেতে দেখে তার মাকে ডাকে। টুকাইয়ের ডাকে দিদি গিয়ে দ্যাখে শালিনী বিছানায় অস্বাভাবিক ভাবে পডে গিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ডাক্তার আসেন। অর্ক নিয়ে আসে সঙ্গে করে।
যারা এসেছিলেন তারা হতভম্ব। বাড়ী সুধু সকলের হৈ চৈ। কি হল কি হল?
ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বৈঠক খানায় বসে আছেন। কেউ কাছে নেই অথচ যেতেও পারছেন না ওনারা।
শেষে ভদ্রমহিলা ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখলেন শালিনী বিছানায় শুয়ে। ডাক্তার , প্রেশার পালস দেখে জ্ঞান ফেরানোর জন্য চিকিৎসা সুরু করেন।
শালিনীর মা কপালে হাত জোড় করে ঠাকুর কে ডাকতে শুরু করেন।
কিছুক্ষণ পরে শালিনীর জ্ঞান ফেরে। ডাক্তার বাবু অর্ক কে কিছু প্রেসক্রিপশন দিয়ে চলে যান। অর্ক সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ নিয়ে আসে।
শালিনীর মা’র এতক্ষণ খেয়াল ই ছিল না ঘরের অতিথিদের কথা। কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বলেন মেয়েটা বেঙ্গালুর থেকে এসে খুব দুর্বল লাগছিল। আজ কি যে হল আপনারা আসার সঙ্গে সঙ্গে এরকম অজ্ঞান হয়ে জাওয়া এই প্রথম বার ....
না না আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। এটা তো অপ্রত্যাশিত। কেউ কি জানতো এরকম হবে বলে। আমরা বরং আরেক দিন আসবো কেমন!
শালিনীর দিদি ও ঘর থেকে আসে চা জলখাবার নিয়ে।
মা বলেন ব
শালিনীর চোখের জল যেন শ্রাবণের ধারার মত অবিশ্রান্ত বয়ে যায় । কিছুতেই ভুলতে পারেনা বাবার সেই অকাল মৃত্যুর দিনের কথা । বাবl ছিলেন শালিনীর রোল মডেল। ওনার অকাল মৃত্যু , ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলনা । বাবাই তাকে বলেন প্রত্যেক মেয়ের উচিৎ পড়াশুনো করে উপযুক্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে , যাতে , সে পরনির্ভরশীল না হয়।
একাকীত্বর মধ্যে বাবার কথাগুলো মনে পড়ে ,“ মৃত্যু , ধ্রুব সত্য কিন্তু তাকে কেউ সহজ ভাবে নিতে পারেনা মা । আজ আমি রোগ শয্যায় পড়ে আছি কাল হয়তো থাকবোনা । তখন তোরা আমার ছবি টাঙিয়ে ফুলের মালা দিয়ে তিনটে ধুপ জ্বালিয়ে আমাকে স্মরণ করবি কিন্তু আমি নিজেও জানি না তোদের ডাক আমার কাছে পৌঁছবে কি না ! খুব আশ্চর্য লাগে আমার !” বাবার কথাগুলো ঠিক কিনা জানে না কিন্তু অবাধ্য অশ্রু বুঝতে চায়না।অনেক সময় সব রিসার্চ ফেলে ওর মনে হয় “মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায় ও কি করে” বইটা এনে পড়ে । আবিষ্কারের নেশা তাকে সংসারের সব সুখ দুঃখ ভুলে টেনে নেয় তার কাজের যায়গায়............ এর পর
একাকীত্বর মধ্যে বাবার কথাগুলো মনে পড়ে ,“ মৃত্যু , ধ্রুব সত্য কিন্তু তাকে কেউ সহজ ভাবে নিতে পারেনা মা । আজ আমি রোগ শয্যায় পড়ে আছি কাল হয়তো থাকবোনা । তখন তোরা আমার ছবি টাঙিয়ে ফুলের মালা দিয়ে তিনটে ধুপ জ্বালিয়ে আমাকে স্মরণ করবি কিন্তু আমি নিজেও জানি না তোদের ডাক আমার কাছে পৌঁছবে কি না ! খুব আশ্চর্য লাগে আমার !” বাবার কথাগুলো ঠিক কিনা জানে না কিন্তু অবাধ্য অশ্রু বুঝতে চায়না।অনেক সময় সব রিসার্চ ফেলে ওর মনে হয় “মৃত্যুর পর মানুষ কোথায় যায় ও কি করে” বইটা এনে পড়ে । আবিষ্কারের নেশা তাকে সংসারের সব সুখ দুঃখ ভুলে টেনে নেয় তার কাজের যায়গায়............ এর পর
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
প্রথম পর্ব
শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন। নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী। আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য।
কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হচ্ছে। আজকে শুক্রবার। প্রায় এরকম হয় বিশেষ করে শুক্রবার দিন। বাসে লোকে বাদুড় ঝোলার মতন অফিস ,স্কুল - কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে। কি অবস্থা কোলকাতার ! লোকগুলো প্রাণ হাতে নিয়ে যাওয়া আসা করে।
শালিনী কি করে বাড়ি ফিরবে? উল্টো-ডাঙ্গায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। লোকের ভিড়ে ভিড়। বাসের চেয়ে লোকের সংখ্যা ক্রমশ বেশি হচ্ছে। ও এরকম বাদুড় ঝোলার মতন বাসে উঠতে পারবে না। খুব চিন্তায় ছিল। অটো এই রুটে বেশি জায় না আজকাল। তবুও অটোর ভরসায় দাঁড়িয়ে রইল।
হঠাৎ ‘অয়ন’ ( শালিনীর ক্লাস মেট ) এসে ‘শালিনীর’ কাছে দাঁড়াল।
অয়ন ঃ “ কি ব্যাপার? বাড়ি ফিরবে কি করে? বাসের অবস্থা দেখছ !”
শালিনী ঃ “তুমি কোন দিকে যাবে?”
আমি ‘বাঙ্গুর’ , তুমি?
আমি ‘তেঘোরিয়া!’
বাসের আজ খুব বাজে অবস্থা। কেষ্টপুরে এতো রাস্তা জ্যাম থাকে , কি করে যাবে?
যেতে ত হবেই।
চল অটো আসছে উঠে পড়ি। দেরি করনা।
কিন্তু কিন্তু করে অটোতে উঠলো শালিনী ...। পার্সের অবস্থা খুব একটা ভালোনা ... দুটো কুড়ি টাকার নোট আছে। তবুও অন্য উপায় নেই দেখে উঠে পড়ে । বাড়ি পৌঁছতে সেই সাতটা সোয়া সাতটা ত হবেই। গিয়ে স্নান সেরে কালকের ক্লাসের জন্য প্রিপারেসন। হ্যাঁ , শালিনী ‘ফিজিক্স’ পড়ায় ‘স্কটিশে’। ও , পি.এচ.ডির পর ভাবা এটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC) এবং ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্স , ভুবনেশ্বরে এক সঙ্গে দু জায়গায় সাইন্টিস্টের জব পায় , কিন্তু কোলকাতা ছাড়বেনা শালিনী ! তাই স্কটিশে অধ্যাপিকার অফারটা আপাততঃ একসেপ্ট করল।
অয়ন , শালিনীর ক্লাস মেট। ও এম.টেকের পর আই আই এম , কোলকাতা (জোকা) থেকে এম বি এ করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল ফার্মে আছে। মাঝে মাঝে দ্যাখা হয় শালিনীর সঙ্গে ব্যাস আর কিছু না।
কোম্পানির থেকে এই জন্য বলে গাড়ি কিনতে। আমি গাড়ির লোণ নিতে কুণ্ঠা বোধ করছি কারন এই জব ছেড়ে দেব শিগগিরি। নতুন চাকরী ..ওই লোণের ঝামেলায় পড়তে চাই না ..... কথাগুলো একসঙ্গে বলে অটোয় উঠে পড়ে অয়ন।
শালিনী ও উঠে পড়ে ওর পেছনে। আজকাল রাস্তা ঘাটে একটা পুরুষের প্রয়োজন সঙ্গে থাকা ...তাই বিনা দ্বিধায় উঠে পড়ে শালিনী।
অয়ন বাঙ্গুরে নেবে জায়। বাগুইহাটির কাছে আবার জ্যাম ..... তখন ৭টা বেজে গিয়েছে। আর একটুখানি রাস্তা ... দুর নিজের গাডি থাকলে এসবের ঝামেলা থাকেনা। কিন্তু কোলকাতার রাস্তায় ড্রাইভিং ...! রক্ষে কর! কথাটা ভাবতেই একটা গোলমালের আওয়াজ পেল।
রে রে করে এক অটো চালক এক ভদ্রলোক এর সঙ্গে বচসা করছে । রাস্তার লোকগুলো বোবার মতন হেঁটে পার হচ্ছে। জেন কিছুই হয় নি ! নির্বিকার !! আসলে কোলকাতায় থাকলে চোখ কান মুখ সব বন্ধ রাখা দরকার। কথাগুলো কানে এল ; ৮ টাকা ভাডা ১০০ টাকা দিলে আমি কি টাকার গাছ রেখেছি? কত খুচরো নিয়ে ঘুরবো। শালা সকাল থেকে মাল পড়ে নি পেটে। খুচরো কোথা থেকে পাবো । পকেটে খুচরো নিয়ে গাড়িতে উঠতে পারেন না ?
লোকটিও ছাড়ার পাত্র নয় তিনিও বলছেন , আমরাই বা খুচরো পাই কোথা থেকে? একশো টাকা বার করলেই শেষ। ভদ্রলোক লোকাল বোধ হয় নাহলে এতো সাহস হবে না ! সমানে বচসা চালিয়েছেন।
আপনার কাছে ভাঙ্গানি আছে দাদা?
কত?
২০ টাকা!
হয়েযাবে দিদি। আপনি কোথায় নাববেন?
লোকনাথ বাবার মন্দিরের কাছে।
ওখান অবধি ২০ টাকাই ভাড়া ।
শালিনী র যেন গা থেকে জ্বর নাবলো। প্রত্যেক দিন অটো আর প্যাসেঞ্জারের মারপিট রক্তা রক্তি কাগজে দেখে ওর রাস্তা ঘাটে ভয় করে। কাল খুচরো সঙ্গে রাখবে। বাসের ওপর ভরসা নেই। বাস মালিকেরা স্ট্রাইক এর ডাক দিয়েছিল। ডিসেলের যা দাম বেড়েছে! ওদের ই বা দোষ কি? তবে ভাড়া বাড়েনি রক্ষা।
ঘরে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় তারপর সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়ে । শাওয়ার খুলে স্নান। আঃ ! রোজ রোজ এই বিচ্ছিরি জার্নি যেন পোষায় না। এর একটা বিহিত করতে হবে। এ মাসে মাইনে পেলে একটা লোণ করবে ... কারের লোণ। বাজেটের পর কারের দাম কমেছে। দেখি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কি বলেন? শালিনীর জামাই বাবু সল্ট লেক স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। উনি যদি কিছু আডভাইস করেন ত। ওর পে সার্টিফিকেট এর জন্য কাল এপ্লাই করবে প্রিন্সিপাল কে। হয়ে যাবে বোধ হয়। তবে ও তো ইউ জি সি স্কেল পায় নি । এদিকে ৭ম পে কমিশন বসে গিয়েছে। সত্যি গরিব মানুষ গুলো কি খাবে এর পর? হু হু করে যা দাম বাড়বে । ইলেকশনের পর .. কি দেশের অবস্থা .. কেউ বোঝার নেই ! আশ্চর্য !!
মা , চা নিয়ে হাজির।
তুমি কেন আনলে মা? আমি নিজে বানিয়ে নিতাম।
থাক মা। আর ও টুকু করতে হবে না। স্বশুর বাড়ী গিয়ে কর। এখন তোমার মা বেঁচে আছে।
সন্ধ্যে বেলায় বাজে কথা বোলোনা মা ! তুমি কি করে জানলে , আমি , তোমার ওই 'শ্বশুর বাড়িতে' যাবো বলে?
আমার নয়.. তোমার মা , সবাই যায়। তুমিও যাবে।
আর যদি আমি না যাই। আমি যদি তোমার কাছে থাকি। আপত্তি আছে?
আদিখ্যেতা দেখো মেয়ের ! হ্যাঁ আছে মা। সব দিন তো আমি বেঁচে থাকবো না!
তোর সঙ্গে ওই ‘অয়ন’ বলে ছেলেটা পড়তো না! কেমন দেখতেরে ওকে? নিয়ে আয় না এক দিন।
কেন বলত? আমি ডাকলেই ও আসবে কি করে বুঝলে? ওর সঙ্গে আর দেখা হয় না আমার। আমাকে ও সব বলবে না। আমার এখন কিছুই হলনা ... তোমাদের মেয়েকে বাড়ি থেকে বিদেই না করলে ভাত হজম হয় না?
ও মা সে কি কথা? আমি তাই বলেছি নাকি? এই যে বললি অয়ন তোর সঙ্গে এক ই অটোতে এলো বলে!
তাতে কি হয়েছে? অটোতে এলো বলে ওমনি তাকে বাড়িতে ডাকতে হবে? তুমি যে কি না মা! আশ্চর্য! তোমরা পারো বটে!!
ঠিক আছে , আমি তোর মামাকে বোলব একটা বিজ্ঞাপণ দিতে "আনন্দ বাজার পত্রিকাতে" , “পাত্র পাত্রী কলমে”।
কিসের?
চা টা খেয়ে নে মা। জুড়িয়ে যাচ্ছে যে।
তোর বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে কি এসব চিন্তা করতে হত রে মা? সব ই গোবিন্দের ইচ্ছা।
দেখ মা আমাকে ওই বিয়ে ফিয়ের ব্যাপারে বিরক্ত করলে আমি কিন্তু বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যাবো। "গোবিন্দের ইচ্ছে" ত 'গোবিন্দর' ওপর ছেড়ে দাও না !
তবে কি সারা জীবন আইবুডো মেয়ে বসে থাকবে ঘরে ?
ওই সব গেঁও কথা শুনতে আমার একদম ভাল লাগেনা। কলেজ থেকে ফিরেছি আমাকে একটু রেষ্ট নিতে দাও। তোমার ওই এক ঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান আমাকে এই ঘর ছাড়তে বাধ্য করবে। আমাকে পরে দোষ দিওনা ! কথাটা বলে গট গট করে চায়ের কাপ হাতে নিজের ঘরে চলে গেল শালিনী।
শালিনীর মা হতবাক হয়ে মেয়ের কথা শুনছিলেন। মনে মনে ভাবলেন আজকালকার মেয়েরা দুটো লেখা পড়া শিখে নিজেদের কি মনে করে? আমি হলাম গেঁও! কথায় বলে,“সোমত্ত মেয়ে ঘরে থাকলে মায়ের গলায় মাছের কাঁটার মতন আটকে থাকে। না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে।” আমার হয়েছে যতো জ্বালা!! এইবলে রান্না ঘরে চলে গেলেন।
শালিনী র মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো।
হ্যালো। কে বলছেন?
অয়ন। একটা সুখবর আছে। আমি গাড়ি কিনছি।
তাই ! কংগ্রাচুলেসন। কি গাড়ি ?
ফক্স ওয়াগন এর এর ‘পোলো’ মডেলটা আমার প্রিয় ওটাই কিনছি। কোম্পানী ৪% ইন্টারেস্টে লোন দিচ্ছে। বাবা বললেন ,“কিনে নাও। এখন যা কোলকাতার রাস্তার অবস্থা , রাস্তার ধুলো আর পলিউসন থেকে রক্ষ্যা পাবে। পরে ফ্লাই ওভার হয়েগেলে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হবে না।” ড্রাইভিং টা জানি তবে আরেকটু হাত পাকাতে হবে।
হুম। ঠিক বলেছেন তোমার বাবা। কবে খাওয়াচ্ছো?
যদি বল কাল।
কাল আমার একটা ক্লাস আছে। ঠিক আছে বলব। বাই।
শালিনী খুব একটা সায় দেয় না অয়ন কে। শালিনী অয়ন দুজনেই পড়া শুনয় ভাল ছিল। শালিনী র ফিজিক্স ভাল লাগতো তাই অনার্স নিয়ে পড়ে। পরে এম এস সি , পি এচ ডি করে । এখন ও ডক্টর শালিনী সান্যাল।
অয়ন প্রথম থেকেই আই আই টি র জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। বি টেক এর পর ক্যাট দিয়ে জোকা তেই এম বি এ করে মার্কেটিং এ। ফেলোশিপ করতে পারতো কিন্তু ভালো চাকরির অফার পেয়ে কাজে জএন করে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে। পরে মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে কোলকাতায় পোস্টিং পায় একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে। পে প্যাকেজ ভালো তা ছাড়া কোম্পানির ফ্যাসিলিটি অনেক।
শালিনী কোম্পানি জব একদম পছন্দ করে না। বলে গলায় লেংটি(টাই) বেঁধে কোম্পানির দালালি যা মার্কেটিং তাই। যতই মাইনে পাও না টিচিং জব শ্রেষ্ঠ। ওতে নিজের সাবজেক্টের সম্পর্কে ছাত্র/ছাত্রী দের আকৃষ্ট করা তাদের ভালো করে বিষয়টা বোঝান। রিসার্চ করা। এ সব সমাজ সেবার কাজ। ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ আছে মার্কেটিং এ আছে? আয়ন খুব ভাল ছেলে জানি কিন্তু ও কি করল? নিজের মাথাটা কোম্পানিকে বিক্রি করে দিল! ভাল সেলস দেখালে উন্নতি নাহলে ...! এরা টাকা ছাড়া জীবনে আর কিছুর মূল্য বোঝেনা । খুব মেটেরিয়ালিসটিক হয়ে যায়। খুব একটা শান্তিতে থাকে না। কাজের প্রেসারে খিট খিটে হয়ে যায়। অকাল বৃধ্য হয়ে চুল উঠে টাক পড়ে জায়। ম্যাগো টাকটা শালিনী একদম পছন্দ করে না। নিজেই নিজের মনে কথাগুলো ভাবতে থাকে ,কিন্তু একি তারতো এ সব ভাবার দরকার নেই। মাথাটা ঝাঁকিয়ে নোট টা প্রিপায়ার করছিল বি এস সি পার্ট ওয়ানের থার্মোডাইনামিক্সের ক্লাসের জন্য।
শালিনীর ক্লাস শেষ না হতেই অয়নের ফোন। অনিচ্ছা সত্যে কল রিসিভ করে “হ্যালো” বলল।
আসছ ত!
কোথায়?
পার্ক হোটেলে।
ও বাবা আমি ওসব জায়গায় জাইনা। আমি ফুচকা খেতে ভালো বাসি গল্প করতে করতে।
কি ফুচকা? তুমি কি বাচ্চা?
হ্যাঁ। তুমি চলে এস আজ আমি খাওয়াচ্ছি তোমায়। দেখবে কিরকম টেস্ট।
সরি ম্যাডাম আমি রাস্তার জিনিষ খাই না। ওতে হেপাটাইটিস হয়। তোমার টেস্ট টা সেই স্কুল পডুয়া মেয়েদের মতন। একটু মড হও। ডক্টরেট করেও ...।
না না আমি মড কোনদিন হতে পারবো না আয়ন। আমি আমিতে থাকতে চাই।
তবে তোমার সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি ঠিক মিলবে না।
আমিত মেলাতে চাইনা। তুমি কল করেছিলে আমি করি নি। আর কেমিস্ট্রি র কথা আসছে কোথা থেকে? আমরা শুধু বন্ধু তাই নয় কি?
অয়ন অপমানিত মনে করল নিজেকে। ছিঃ একটা অর্ডিনারি শিক্ষিকা সে কিনা এতো ডাঁটের কথা বলে ! আর না। ওকে বাই এজ ইউ লাইক। বলে ফোন কেটে দিল।
শালিনী ওটাই চাইছিল। ও এক দম ওই হোটেলে বসে হ্যা হ্যা করে শস্তা মেয়েদের মত কারুর ঘাডে খাওয়া পছন্দ করে না। নিজের ঘর আর কলেজ ছাডা কোথাউ কারুর সঙ্গে যায়নি। প্রফেসাররা তাই ওকে খুব স্নেহ করতেন ইউনিভার্সিটিতে।
এদিকে মা , মামাকে দিয়ে এক বিজ্ঞাপণ দিয়েছেন। হঠাৎ রবিবারের আনন্দ বাজার পত্রিকায় পাত্র পাত্রী বিজ্ঞাপনের পেজটাতে লাল কালি দিয়ে গোল করা দেখে বিস্ময় হয় শালিনীর। পড়ে দ্যাখে , ওমা এত তার জন্যই ...। মামা এলে দেখাচ্ছি মজা। আমাকে কি পেয়েছে এরা। একটা কমোডিটি না কি? খুব রাগ হয় মা’র ওপর।
হঠাৎ ল্যান্ড ফোনে রিং হয়। ও ঘর থেকে মা ছুটে আসেন ফোন ধরতে।
হ্যালো ! কে বলছেন?
আপনি একটা বিজ্ঞাপণ দিয়েছেন ...।
হ্যাঁ।
মায়ের কাছ থেকে ফোনটা ছাড়িয়ে ... মেয়ের মাথা খারাপ আছে আর কালো বেঁটে চলবে !!
ও দিক থেকে লাইন কেটে যায়।
একি করলি শালু?
ঠিক করেছি। যার বিয়ে তার মতা মত নিয়েছ? কি ভাব তোমরা? আমি 'গোলাম' না 'বাজারের মাছ' ? কি ভাবো তোমরা?? এরকম করলে আমি সত্যি ঘর ছেড়ে চলে যাব। রাগে থর থর করে কাঁপে শালু। রেগে গেলে শালিনীর জ্ঞান থাকেনা । লঘু গুরু কিছুই মানে না ।
মায়ের চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু। মা চায়ের কাপটা শালুর হাতে দিয়ে বলেন , "আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি না তুই? তোর বাবা আমাকে কি জ্বালা যন্ত্রণায় রেখে গেলেন। মেয়ের মাথায় এমন বিষ ঢুকিয়ে গিয়েছেন মেয়ে বিয়ের নামেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে । আমি বিধবা মানুষ কতদিন এই জ্বালা সহ্য করব । ভগবান আমায় রেহাই দাও এই মেয়ের হাত থেকে" ।
তুমি শান্ত হও মা। বাবকে কেন টানছ এর মধ্যে। উনি কি স্বর্গে গিয়েও শান্তি পাবেন না ! তোমার গলার কাঁটা আমি.. বাবার ছিলাম না ! আমার বিয়ের কথা একদম ভেবো না। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলব। তবে এখন না। শান্ত হও। আমার অনেক কাজ বাকি।
আমি জানি রে সে দিন আসবে না। আমি ত তোর মা আমি জানি তোকে! তুই মা’ হলে বুঝবি।
আমার ওইরকম মা হওয়ার প্রয়োজন নেই যে মা তার সন্তানকে বুঝতে চায় না!
এই কাটা কাটা কথা আমি সহ্য করব কিন্তু পরের ছেলে সহ্য করবে কেন?
আমিতো কারুর মাথার দিব্বি দি নি আমার কথা সহ্য করতে। তুমি কেন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনা। আমি আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বামী ঘর দোর বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে থাকতে চাই না পৃথিবীতে। পৃথিবীতে আরও অনেক কাজ আছে যা মেয়েরা করতে পারবে। করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এই বিশাল পৃথিবী তার প্রত্যেক কোনে আছে বিভিন্ন মানুষ তারা সুধু বাচ্চা জন্ম না দিয়ে দেশের অনেক উপকারে আস্তে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ এই জন্য অসফল হচ্ছে আমাদের দেশে। ছেলে মেয়ে চাকরি পেলেই মা বাবাদের মাথা ব্যথা ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করা। এতে কি হচ্ছে? অনেক ভাল ব্রেন নষ্ট হচ্ছে।
আমি অত পড়াশুন করিনি তোর মত। আমি তাই জানিনা মা। আমার ভাবনা চিন্তা তোর সঙ্গে কোন দিন খাপ খায় নি...........
বেলা বারোটা নাগাদ দিদি জামাই বাবু এলেন। সঙ্গে টুকাই।
মা রকমারি রান্না করে রেখেছেন। সেকেলে শ্বাশুডিদের মত মাথায় ঘোমটা দিয়ে জামাই বাবু কে বলেন, “এসো বাবা এসো।”
টুকাই শালিনীকে দেখে দউড়ে আসে। মাসি আমার ক্যাডবেরি টা দাও।
দাঁড়া আনছি বলে ফ্রিজের দিকে এগুলো।
শ্রাবন্তি, শালিনীর দিদি আর অর্ক শালিনীর জামাই বাবু। দুজনেই মাকে কিছু জিঙ্গাসা করতে যাচ্ছিল শালিনীকে দেখে চুপসে গেল।
শালিনী বুঝেও না বোঝার ভান করল। জিজু কি খবর তোমার? অর্ক কে দেখে বলল শালিনী।
তুমি না থাকলে মন উদাস থাকে সখী।
তাই তবে দিদিকে ছেড়ে এখানেই থাক ঘর জামাই হয়ে।
তাও আচ্ছা সখী।
তবেরে দেখাচ্ছি তোমাকে।
সকলে হেঁসে ফেলে। সত্যি অর্ক-দা খুব মাই ডিয়ার।
টুকাই বলে ,“ঘর জামাই কি গো মা”?
শ্রাবন্তি বলে, গোয়ালে চাষির ঘরের বলদ। গলায় দড়ি বাঁধা থাকে । খেতে দিলে খায় আর জোয়াল কাঁধে গরুর গাড়ি টানে। তাকে বলেই "ঘর জামাই"। বুঝলি।
যা: কি সব বাজে কথা বলে মা। একদম বাজে। মিথ্যা কথা বলছ তুমি।
শালিনী , টুকাইকে ক্যাডবেরি দিয়ে বোঝায় পরের ছেলেকে ঘরে খাইয়ে দাইয়ে রাখাকে ঘর জামাই বলে। এখন এটুকু জান পরে বড় হলে পুরোটা জানবি।
অর্ক বলেন, “শালু তোর জন্য তবে তাই দেখি।”
ভাল হবেনা বলছি অর্ক-দা।
তোর অয়নের খবর কি? আমাকে ফোন নাম্বারটা দে না ! আমি কথা বলে দেখি।
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে শালিনী। কি? সে খবর ও মা তোমাদের দিয়েছে।
মা! মা!
কি হল? অত চ্যাঁচাচ্ছিস কেন?
তুমি কেন এই সব বল আমার নামে। কি পাও?
কি বলেছি?
গট গট করে নিজের ঘরে ঢুকে যায় শালিনী।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে। মনে মনে ভাবে বার্কের কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব। খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা। বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে। এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি? ইউ জি সি পেতে অনেক দেরি। সেই থোড় বড়ি খাড়া ... খাড়া বড়ি থোড়!! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হায়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে। বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে। শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন। নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী। আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য। ওর প্রফেসার বিদেশে অনেক ভালো অফার পেয়েছিলেন কিন্তু উনি ভারতে ফিরে কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাই শ্রেয় মনে করেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শালিনী স্কটিশে অধ্যাপিকার চাকরিতে যোগদান করে। কিন্তু ওখানেও মন বসে না কারন ও আরও অনেক রিসার্চ করতে চায়। আমেরিকাতে গেলে সম্ভব। আমেরিকা জাওয়ার টাকা নেই। যেটুকু পুঁজি আছে সেটা ফুরলে চলবে কি করে? তাই কোলকাতা থেকেই রিসার্চ এর চিন্তা করে।
স্কটিশ থেকে ছুটি নিয়ে নেয় এক মাসের। মনে অনেক স্বপ্ন অনেক আশা উদ্দীপনা আর আবিষ্কারের ব্যগ্রতা ওকে সব পেছনে ফেলে এগিয়ে নিয়েছে। পোষ্ট ডক্টরাল প্রোগ্রাম এর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে সিলেক্টেড হয়। ফেলোশিপের টাকায় অনায়াসে চলবে। আর শালিনীকে কেউ বিরক্ত করবে না বিয়ের জন্য।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
প্রথম পর্ব
শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন। নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী। আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য।
কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হচ্ছে। আজকে শুক্রবার। প্রায় এরকম হয় বিশেষ করে শুক্রবার দিন। বাসে লোকে বাদুড় ঝোলার মতন অফিস ,স্কুল - কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে। কি অবস্থা কোলকাতার ! লোকগুলো প্রাণ হাতে নিয়ে যাওয়া আসা করে।
শালিনী কি করে বাড়ি ফিরবে? উল্টো-ডাঙ্গায় বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। লোকের ভিড়ে ভিড়। বাসের চেয়ে লোকের সংখ্যা ক্রমশ বেশি হচ্ছে। ও এরকম বাদুড় ঝোলার মতন বাসে উঠতে পারবে না। খুব চিন্তায় ছিল। অটো এই রুটে বেশি জায় না আজকাল। তবুও অটোর ভরসায় দাঁড়িয়ে রইল।
হঠাৎ ‘অয়ন’ ( শালিনীর ক্লাস মেট ) এসে ‘শালিনীর’ কাছে দাঁড়াল।
অয়ন ঃ “ কি ব্যাপার? বাড়ি ফিরবে কি করে? বাসের অবস্থা দেখছ !”
শালিনী ঃ “তুমি কোন দিকে যাবে?”
আমি ‘বাঙ্গুর’ , তুমি?
আমি ‘তেঘোরিয়া!’
বাসের আজ খুব বাজে অবস্থা। কেষ্টপুরে এতো রাস্তা জ্যাম থাকে , কি করে যাবে?
যেতে ত হবেই।
চল অটো আসছে উঠে পড়ি। দেরি করনা।
কিন্তু কিন্তু করে অটোতে উঠলো শালিনী ...। পার্সের অবস্থা খুব একটা ভালোনা ... দুটো কুড়ি টাকার নোট আছে। তবুও অন্য উপায় নেই দেখে উঠে পড়ে । বাড়ি পৌঁছতে সেই সাতটা সোয়া সাতটা ত হবেই। গিয়ে স্নান সেরে কালকের ক্লাসের জন্য প্রিপারেসন। হ্যাঁ , শালিনী ‘ফিজিক্স’ পড়ায় ‘স্কটিশে’। ও , পি.এচ.ডির পর ভাবা এটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC) এবং ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্স , ভুবনেশ্বরে এক সঙ্গে দু জায়গায় সাইন্টিস্টের জব পায় , কিন্তু কোলকাতা ছাড়বেনা শালিনী ! তাই স্কটিশে অধ্যাপিকার অফারটা আপাততঃ একসেপ্ট করল।
অয়ন , শালিনীর ক্লাস মেট। ও এম.টেকের পর আই আই এম , কোলকাতা (জোকা) থেকে এম বি এ করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল ফার্মে আছে। মাঝে মাঝে দ্যাখা হয় শালিনীর সঙ্গে ব্যাস আর কিছু না।
কোম্পানির থেকে এই জন্য বলে গাড়ি কিনতে। আমি গাড়ির লোণ নিতে কুণ্ঠা বোধ করছি কারন এই জব ছেড়ে দেব শিগগিরি। নতুন চাকরী ..ওই লোণের ঝামেলায় পড়তে চাই না ..... কথাগুলো একসঙ্গে বলে অটোয় উঠে পড়ে অয়ন।
শালিনী ও উঠে পড়ে ওর পেছনে। আজকাল রাস্তা ঘাটে একটা পুরুষের প্রয়োজন সঙ্গে থাকা ...তাই বিনা দ্বিধায় উঠে পড়ে শালিনী।
অয়ন বাঙ্গুরে নেবে জায়। বাগুইহাটির কাছে আবার জ্যাম ..... তখন ৭টা বেজে গিয়েছে। আর একটুখানি রাস্তা ... দুর নিজের গাডি থাকলে এসবের ঝামেলা থাকেনা। কিন্তু কোলকাতার রাস্তায় ড্রাইভিং ...! রক্ষে কর! কথাটা ভাবতেই একটা গোলমালের আওয়াজ পেল।
রে রে করে এক অটো চালক এক ভদ্রলোক এর সঙ্গে বচসা করছে । রাস্তার লোকগুলো বোবার মতন হেঁটে পার হচ্ছে। জেন কিছুই হয় নি ! নির্বিকার !! আসলে কোলকাতায় থাকলে চোখ কান মুখ সব বন্ধ রাখা দরকার। কথাগুলো কানে এল ; ৮ টাকা ভাডা ১০০ টাকা দিলে আমি কি টাকার গাছ রেখেছি? কত খুচরো নিয়ে ঘুরবো। শালা সকাল থেকে মাল পড়ে নি পেটে। খুচরো কোথা থেকে পাবো । পকেটে খুচরো নিয়ে গাড়িতে উঠতে পারেন না ?
লোকটিও ছাড়ার পাত্র নয় তিনিও বলছেন , আমরাই বা খুচরো পাই কোথা থেকে? একশো টাকা বার করলেই শেষ। ভদ্রলোক লোকাল বোধ হয় নাহলে এতো সাহস হবে না ! সমানে বচসা চালিয়েছেন।
আপনার কাছে ভাঙ্গানি আছে দাদা?
কত?
২০ টাকা!
হয়েযাবে দিদি। আপনি কোথায় নাববেন?
লোকনাথ বাবার মন্দিরের কাছে।
ওখান অবধি ২০ টাকাই ভাড়া ।
শালিনী র যেন গা থেকে জ্বর নাবলো। প্রত্যেক দিন অটো আর প্যাসেঞ্জারের মারপিট রক্তা রক্তি কাগজে দেখে ওর রাস্তা ঘাটে ভয় করে। কাল খুচরো সঙ্গে রাখবে। বাসের ওপর ভরসা নেই। বাস মালিকেরা স্ট্রাইক এর ডাক দিয়েছিল। ডিসেলের যা দাম বেড়েছে! ওদের ই বা দোষ কি? তবে ভাড়া বাড়েনি রক্ষা।
ঘরে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় তারপর সোজা বাথরুমে ঢুকে পড়ে । শাওয়ার খুলে স্নান। আঃ ! রোজ রোজ এই বিচ্ছিরি জার্নি যেন পোষায় না। এর একটা বিহিত করতে হবে। এ মাসে মাইনে পেলে একটা লোণ করবে ... কারের লোণ। বাজেটের পর কারের দাম কমেছে। দেখি ব্যাঙ্ক ম্যানেজার কি বলেন? শালিনীর জামাই বাবু সল্ট লেক স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। উনি যদি কিছু আডভাইস করেন ত। ওর পে সার্টিফিকেট এর জন্য কাল এপ্লাই করবে প্রিন্সিপাল কে। হয়ে যাবে বোধ হয়। তবে ও তো ইউ জি সি স্কেল পায় নি । এদিকে ৭ম পে কমিশন বসে গিয়েছে। সত্যি গরিব মানুষ গুলো কি খাবে এর পর? হু হু করে যা দাম বাড়বে । ইলেকশনের পর .. কি দেশের অবস্থা .. কেউ বোঝার নেই ! আশ্চর্য !!
মা , চা নিয়ে হাজির।
তুমি কেন আনলে মা? আমি নিজে বানিয়ে নিতাম।
থাক মা। আর ও টুকু করতে হবে না। স্বশুর বাড়ী গিয়ে কর। এখন তোমার মা বেঁচে আছে।
সন্ধ্যে বেলায় বাজে কথা বোলোনা মা ! তুমি কি করে জানলে , আমি , তোমার ওই 'শ্বশুর বাড়িতে' যাবো বলে?
আমার নয়.. তোমার মা , সবাই যায়। তুমিও যাবে।
আর যদি আমি না যাই। আমি যদি তোমার কাছে থাকি। আপত্তি আছে?
আদিখ্যেতা দেখো মেয়ের ! হ্যাঁ আছে মা। সব দিন তো আমি বেঁচে থাকবো না!
তোর সঙ্গে ওই ‘অয়ন’ বলে ছেলেটা পড়তো না! কেমন দেখতেরে ওকে? নিয়ে আয় না এক দিন।
কেন বলত? আমি ডাকলেই ও আসবে কি করে বুঝলে? ওর সঙ্গে আর দেখা হয় না আমার। আমাকে ও সব বলবে না। আমার এখন কিছুই হলনা ... তোমাদের মেয়েকে বাড়ি থেকে বিদেই না করলে ভাত হজম হয় না?
ও মা সে কি কথা? আমি তাই বলেছি নাকি? এই যে বললি অয়ন তোর সঙ্গে এক ই অটোতে এলো বলে!
তাতে কি হয়েছে? অটোতে এলো বলে ওমনি তাকে বাড়িতে ডাকতে হবে? তুমি যে কি না মা! আশ্চর্য! তোমরা পারো বটে!!
ঠিক আছে , আমি তোর মামাকে বোলব একটা বিজ্ঞাপণ দিতে "আনন্দ বাজার পত্রিকাতে" , “পাত্র পাত্রী কলমে”।
কিসের?
চা টা খেয়ে নে মা। জুড়িয়ে যাচ্ছে যে।
তোর বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে কি এসব চিন্তা করতে হত রে মা? সব ই গোবিন্দের ইচ্ছা।
দেখ মা আমাকে ওই বিয়ে ফিয়ের ব্যাপারে বিরক্ত করলে আমি কিন্তু বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যাবো। "গোবিন্দের ইচ্ছে" ত 'গোবিন্দর' ওপর ছেড়ে দাও না !
তবে কি সারা জীবন আইবুডো মেয়ে বসে থাকবে ঘরে ?
ওই সব গেঁও কথা শুনতে আমার একদম ভাল লাগেনা। কলেজ থেকে ফিরেছি আমাকে একটু রেষ্ট নিতে দাও। তোমার ওই এক ঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান আমাকে এই ঘর ছাড়তে বাধ্য করবে। আমাকে পরে দোষ দিওনা ! কথাটা বলে গট গট করে চায়ের কাপ হাতে নিজের ঘরে চলে গেল শালিনী।
শালিনীর মা হতবাক হয়ে মেয়ের কথা শুনছিলেন। মনে মনে ভাবলেন আজকালকার মেয়েরা দুটো লেখা পড়া শিখে নিজেদের কি মনে করে? আমি হলাম গেঁও! কথায় বলে,“সোমত্ত মেয়ে ঘরে থাকলে মায়ের গলায় মাছের কাঁটার মতন আটকে থাকে। না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে।” আমার হয়েছে যতো জ্বালা!! এইবলে রান্না ঘরে চলে গেলেন।
শালিনী র মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো।
হ্যালো। কে বলছেন?
অয়ন। একটা সুখবর আছে। আমি গাড়ি কিনছি।
তাই ! কংগ্রাচুলেসন। কি গাড়ি ?
ফক্স ওয়াগন এর এর ‘পোলো’ মডেলটা আমার প্রিয় ওটাই কিনছি। কোম্পানী ৪% ইন্টারেস্টে লোন দিচ্ছে। বাবা বললেন ,“কিনে নাও। এখন যা কোলকাতার রাস্তার অবস্থা , রাস্তার ধুলো আর পলিউসন থেকে রক্ষ্যা পাবে। পরে ফ্লাই ওভার হয়েগেলে গাড়ি চালাতে অসুবিধে হবে না।” ড্রাইভিং টা জানি তবে আরেকটু হাত পাকাতে হবে।
হুম। ঠিক বলেছেন তোমার বাবা। কবে খাওয়াচ্ছো?
যদি বল কাল।
কাল আমার একটা ক্লাস আছে। ঠিক আছে বলব। বাই।
শালিনী খুব একটা সায় দেয় না অয়ন কে। শালিনী অয়ন দুজনেই পড়া শুনয় ভাল ছিল। শালিনী র ফিজিক্স ভাল লাগতো তাই অনার্স নিয়ে পড়ে। পরে এম এস সি , পি এচ ডি করে । এখন ও ডক্টর শালিনী সান্যাল।
অয়ন প্রথম থেকেই আই আই টি র জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে। বি টেক এর পর ক্যাট দিয়ে জোকা তেই এম বি এ করে মার্কেটিং এ। ফেলোশিপ করতে পারতো কিন্তু ভালো চাকরির অফার পেয়ে কাজে জএন করে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে। পরে মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে কোলকাতায় পোস্টিং পায় একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে। পে প্যাকেজ ভালো তা ছাড়া কোম্পানির ফ্যাসিলিটি অনেক।
শালিনী কোম্পানি জব একদম পছন্দ করে না। বলে গলায় লেংটি(টাই) বেঁধে কোম্পানির দালালি যা মার্কেটিং তাই। যতই মাইনে পাও না টিচিং জব শ্রেষ্ঠ। ওতে নিজের সাবজেক্টের সম্পর্কে ছাত্র/ছাত্রী দের আকৃষ্ট করা তাদের ভালো করে বিষয়টা বোঝান। রিসার্চ করা। এ সব সমাজ সেবার কাজ। ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ আছে মার্কেটিং এ আছে? আয়ন খুব ভাল ছেলে জানি কিন্তু ও কি করল? নিজের মাথাটা কোম্পানিকে বিক্রি করে দিল! ভাল সেলস দেখালে উন্নতি নাহলে ...! এরা টাকা ছাড়া জীবনে আর কিছুর মূল্য বোঝেনা । খুব মেটেরিয়ালিসটিক হয়ে যায়। খুব একটা শান্তিতে থাকে না। কাজের প্রেসারে খিট খিটে হয়ে যায়। অকাল বৃধ্য হয়ে চুল উঠে টাক পড়ে জায়। ম্যাগো টাকটা শালিনী একদম পছন্দ করে না। নিজেই নিজের মনে কথাগুলো ভাবতে থাকে ,কিন্তু একি তারতো এ সব ভাবার দরকার নেই। মাথাটা ঝাঁকিয়ে নোট টা প্রিপায়ার করছিল বি এস সি পার্ট ওয়ানের থার্মোডাইনামিক্সের ক্লাসের জন্য।
শালিনীর ক্লাস শেষ না হতেই অয়নের ফোন। অনিচ্ছা সত্যে কল রিসিভ করে “হ্যালো” বলল।
আসছ ত!
কোথায়?
পার্ক হোটেলে।
ও বাবা আমি ওসব জায়গায় জাইনা। আমি ফুচকা খেতে ভালো বাসি গল্প করতে করতে।
কি ফুচকা? তুমি কি বাচ্চা?
হ্যাঁ। তুমি চলে এস আজ আমি খাওয়াচ্ছি তোমায়। দেখবে কিরকম টেস্ট।
সরি ম্যাডাম আমি রাস্তার জিনিষ খাই না। ওতে হেপাটাইটিস হয়। তোমার টেস্ট টা সেই স্কুল পডুয়া মেয়েদের মতন। একটু মড হও। ডক্টরেট করেও ...।
না না আমি মড কোনদিন হতে পারবো না আয়ন। আমি আমিতে থাকতে চাই।
তবে তোমার সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি ঠিক মিলবে না।
আমিত মেলাতে চাইনা। তুমি কল করেছিলে আমি করি নি। আর কেমিস্ট্রি র কথা আসছে কোথা থেকে? আমরা শুধু বন্ধু তাই নয় কি?
অয়ন অপমানিত মনে করল নিজেকে। ছিঃ একটা অর্ডিনারি শিক্ষিকা সে কিনা এতো ডাঁটের কথা বলে ! আর না। ওকে বাই এজ ইউ লাইক। বলে ফোন কেটে দিল।
শালিনী ওটাই চাইছিল। ও এক দম ওই হোটেলে বসে হ্যা হ্যা করে শস্তা মেয়েদের মত কারুর ঘাডে খাওয়া পছন্দ করে না। নিজের ঘর আর কলেজ ছাডা কোথাউ কারুর সঙ্গে যায়নি। প্রফেসাররা তাই ওকে খুব স্নেহ করতেন ইউনিভার্সিটিতে।
এদিকে মা , মামাকে দিয়ে এক বিজ্ঞাপণ দিয়েছেন। হঠাৎ রবিবারের আনন্দ বাজার পত্রিকায় পাত্র পাত্রী বিজ্ঞাপনের পেজটাতে লাল কালি দিয়ে গোল করা দেখে বিস্ময় হয় শালিনীর। পড়ে দ্যাখে , ওমা এত তার জন্যই ...। মামা এলে দেখাচ্ছি মজা। আমাকে কি পেয়েছে এরা। একটা কমোডিটি না কি? খুব রাগ হয় মা’র ওপর।
হঠাৎ ল্যান্ড ফোনে রিং হয়। ও ঘর থেকে মা ছুটে আসেন ফোন ধরতে।
হ্যালো ! কে বলছেন?
আপনি একটা বিজ্ঞাপণ দিয়েছেন ...।
হ্যাঁ।
মায়ের কাছ থেকে ফোনটা ছাড়িয়ে ... মেয়ের মাথা খারাপ আছে আর কালো বেঁটে চলবে !!
ও দিক থেকে লাইন কেটে যায়।
একি করলি শালু?
ঠিক করেছি। যার বিয়ে তার মতা মত নিয়েছ? কি ভাব তোমরা? আমি 'গোলাম' না 'বাজারের মাছ' ? কি ভাবো তোমরা?? এরকম করলে আমি সত্যি ঘর ছেড়ে চলে যাব। রাগে থর থর করে কাঁপে শালু। রেগে গেলে শালিনীর জ্ঞান থাকেনা । লঘু গুরু কিছুই মানে না ।
মায়ের চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু। মা চায়ের কাপটা শালুর হাতে দিয়ে বলেন , "আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি না তুই? তোর বাবা আমাকে কি জ্বালা যন্ত্রণায় রেখে গেলেন। মেয়ের মাথায় এমন বিষ ঢুকিয়ে গিয়েছেন মেয়ে বিয়ের নামেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে । আমি বিধবা মানুষ কতদিন এই জ্বালা সহ্য করব । ভগবান আমায় রেহাই দাও এই মেয়ের হাত থেকে" ।
তুমি শান্ত হও মা। বাবকে কেন টানছ এর মধ্যে। উনি কি স্বর্গে গিয়েও শান্তি পাবেন না ! তোমার গলার কাঁটা আমি.. বাবার ছিলাম না ! আমার বিয়ের কথা একদম ভেবো না। সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলব। তবে এখন না। শান্ত হও। আমার অনেক কাজ বাকি।
আমি জানি রে সে দিন আসবে না। আমি ত তোর মা আমি জানি তোকে! তুই মা’ হলে বুঝবি।
আমার ওইরকম মা হওয়ার প্রয়োজন নেই যে মা তার সন্তানকে বুঝতে চায় না!
এই কাটা কাটা কথা আমি সহ্য করব কিন্তু পরের ছেলে সহ্য করবে কেন?
আমিতো কারুর মাথার দিব্বি দি নি আমার কথা সহ্য করতে। তুমি কেন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনা। আমি আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বামী ঘর দোর বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে থাকতে চাই না পৃথিবীতে। পৃথিবীতে আরও অনেক কাজ আছে যা মেয়েরা করতে পারবে। করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। এই বিশাল পৃথিবী তার প্রত্যেক কোনে আছে বিভিন্ন মানুষ তারা সুধু বাচ্চা জন্ম না দিয়ে দেশের অনেক উপকারে আস্তে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ এই জন্য অসফল হচ্ছে আমাদের দেশে। ছেলে মেয়ে চাকরি পেলেই মা বাবাদের মাথা ব্যথা ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করা। এতে কি হচ্ছে? অনেক ভাল ব্রেন নষ্ট হচ্ছে।
আমি অত পড়াশুন করিনি তোর মত। আমি তাই জানিনা মা। আমার ভাবনা চিন্তা তোর সঙ্গে কোন দিন খাপ খায় নি...........
বেলা বারোটা নাগাদ দিদি জামাই বাবু এলেন। সঙ্গে টুকাই।
মা রকমারি রান্না করে রেখেছেন। সেকেলে শ্বাশুডিদের মত মাথায় ঘোমটা দিয়ে জামাই বাবু কে বলেন, “এসো বাবা এসো।”
টুকাই শালিনীকে দেখে দউড়ে আসে। মাসি আমার ক্যাডবেরি টা দাও।
দাঁড়া আনছি বলে ফ্রিজের দিকে এগুলো।
শ্রাবন্তি, শালিনীর দিদি আর অর্ক শালিনীর জামাই বাবু। দুজনেই মাকে কিছু জিঙ্গাসা করতে যাচ্ছিল শালিনীকে দেখে চুপসে গেল।
শালিনী বুঝেও না বোঝার ভান করল। জিজু কি খবর তোমার? অর্ক কে দেখে বলল শালিনী।
তুমি না থাকলে মন উদাস থাকে সখী।
তাই তবে দিদিকে ছেড়ে এখানেই থাক ঘর জামাই হয়ে।
তাও আচ্ছা সখী।
তবেরে দেখাচ্ছি তোমাকে।
সকলে হেঁসে ফেলে। সত্যি অর্ক-দা খুব মাই ডিয়ার।
টুকাই বলে ,“ঘর জামাই কি গো মা”?
শ্রাবন্তি বলে, গোয়ালে চাষির ঘরের বলদ। গলায় দড়ি বাঁধা থাকে । খেতে দিলে খায় আর জোয়াল কাঁধে গরুর গাড়ি টানে। তাকে বলেই "ঘর জামাই"। বুঝলি।
যা: কি সব বাজে কথা বলে মা। একদম বাজে। মিথ্যা কথা বলছ তুমি।
শালিনী , টুকাইকে ক্যাডবেরি দিয়ে বোঝায় পরের ছেলেকে ঘরে খাইয়ে দাইয়ে রাখাকে ঘর জামাই বলে। এখন এটুকু জান পরে বড় হলে পুরোটা জানবি।
অর্ক বলেন, “শালু তোর জন্য তবে তাই দেখি।”
ভাল হবেনা বলছি অর্ক-দা।
তোর অয়নের খবর কি? আমাকে ফোন নাম্বারটা দে না ! আমি কথা বলে দেখি।
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে শালিনী। কি? সে খবর ও মা তোমাদের দিয়েছে।
মা! মা!
কি হল? অত চ্যাঁচাচ্ছিস কেন?
তুমি কেন এই সব বল আমার নামে। কি পাও?
কি বলেছি?
গট গট করে নিজের ঘরে ঢুকে যায় শালিনী।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে। মনে মনে ভাবে বার্কের কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব। খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা। বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে। এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি? ইউ জি সি পেতে অনেক দেরি। সেই থোড় বড়ি খাড়া ... খাড়া বড়ি থোড়!! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হায়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে। বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে। শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন। নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী। আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য। ওর প্রফেসার বিদেশে অনেক ভালো অফার পেয়েছিলেন কিন্তু উনি ভারতে ফিরে কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাই শ্রেয় মনে করেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শালিনী স্কটিশে অধ্যাপিকার চাকরিতে যোগদান করে। কিন্তু ওখানেও মন বসে না কারন ও আরও অনেক রিসার্চ করতে চায়। আমেরিকাতে গেলে সম্ভব। আমেরিকা জাওয়ার টাকা নেই। যেটুকু পুঁজি আছে সেটা ফুরলে চলবে কি করে? তাই কোলকাতা থেকেই রিসার্চ এর চিন্তা করে।
স্কটিশ থেকে ছুটি নিয়ে নেয় এক মাসের। মনে অনেক স্বপ্ন অনেক আশা উদ্দীপনা আর আবিষ্কারের ব্যগ্রতা ওকে সব পেছনে ফেলে এগিয়ে নিয়েছে। পোষ্ট ডক্টরাল প্রোগ্রাম এর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে সিলেক্টেড হয়। ফেলোশিপের টাকায় অনায়াসে চলবে। আর শালিনীকে কেউ বিরক্ত করবে না বিয়ের জন্য।
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
দ্বিতীয় পর্ব
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে। মনে মনে ভাবে বার্কের (ভাবা এটমিক এনার্জি কমিশন) কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের চাকরিটাতে আবার অ্যাপ্লাই করব। খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা। বাইরে গেলে এক্সপোসার হবে। এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি? ইউ জি সী পেতে অনেক দেরি। সেই থোড় বড়ি খাড়া ...খাড়া বড়ি থোড় ! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ করে হাইয়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে। বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে। বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে। শালিনীর থিসিসটা “এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্পলায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো ফিজিক্সের বিষয়। বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে আই আই এস সী , বেঙ্গালুরু তে যোগা যোগ করতে চায়। আজ বাবা থাকলে ওকে নিশ্চয় উৎসাহ দিতেন হাইয়ার রিসার্চের জন্য পরের দিন বেঙ্গালুরুর ফ্লাইটে শালিনী চলে-গেল। ওখানে এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে ওঠে। সকালে আই আই এস সী ( Indian Institute of Science) এতে যায়। Carbon Nano tube Based Sensors Funded by: DST, Project no. 563 কাজে সুযোগ পায় প্রফেসর ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর আন্ডারে। শালিনী যা চাইছিল তাই পেল এখানে।
এরমধ্যে অয়নের সঙ্গে হঠাৎ দেখা একটা শপিং মলের কাছে। শালিনীকে দেখে অয়ন হতভম্ব হয়ে যায়। দুজনে চোখা চোখই হয়। ওরা অপোসিট ফুট ধরে হাঁটছিল পরস্পরকে দেখে দুজনেই দাঁড়ালো।
“কি ব্যাপার এখানে”? অয়নের প্রশ্নের অপেক্ষায় যেন ছিল শালিনী
“কেন আমার কি এখানে আস্তে মানা”! ভুরু কুঁচকে শালিনীর জবাব অয়নকে ছুঁড়ে।
তা কেন!
তবে?
কৌতূহল! , মানে just inquisitiveness বলতে পারো।
মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee , am I correct!
Yes Madam!
কোথায় উঠেছ?
কেন যাবে নাকি সেখানে?
আবার ওই এক উত্তর just for inquisitiveness!
আমারও এক উত্তর মেয়েদের ব্যাপারে কৌতূহল থাকা মোটেই ভালো না Mr Ayon Banerjee!!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে।
কফি খাবে?
তা হলে মন্দ হত না!! তবে পেমেন্ট আমি করবো।
তোমায় নিয়ে পারা মুস্কিল। কেন আমি দিলে ক্ষতি কি?
না না আমি দিলে তোমার ক্ষতি কি শুনি?
তর্ক কোর না আজ অন্তত আমার কথা একটু রাখ শালিনী। চল কে এফ সী কাউন্টারে জাই।
অয়নের সান্নিধ্য এই বিদেশ ভুঁইতে খারাপ লাগ-ছিলনা। সত্যি নারীর কাছে পুরুষ মানুষের প্রয়োজন আছে ; নারী যতোই উচ্চ শিক্ষিতা , উচ্চ পদাধিকারী হোক না কেন!এটাই বোধ হয় প্রকৃতির নিয়ম।
হঠাৎ অয়ন বলে ,“কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কি ভাবছ? ”
কিছু না! বিব্রত বোধ করে শালিনী। কি আবার ভাববো। মা একা আছেন ওনার কথাই মনে হচ্ছিল!! কেমন আছেন কে জানে?
কেন ফোন করনি?
হ্যাঁ রাত্তিরে করি কিন্তু কাল করিনি। সত্যি মা’কে ফোন করেনি শালিনী।
অয়নকে ঘুণাক্ষরেও যানতে দি লোনা ওর কথাই ভাবছিল বলে ~! মেয়েরা পারেও বটে!! অয়ন কিছু স্ন্যাক্সের অর্ডার দেয়। কে এফ সী চিকেন আর পিটযা।
এতোগুলো কেন আনাচ্ছ? আমি অত খাইনা!
জানি আজ খেতেই হবে। তুমি ত কফি খাওয়ালে আমি মানা করিনি এবার আমি যা খাওয়াবো তুমি প্লিজ মানা করনা।
আমি ওসব খাইনা অয়ন। আমরা ভেতো বাঙ্গালী ওই সব খাবার খেলে পেটের অসুখ হবে , তখন কে দেখবে?
কেন! আমি , আমি দেখবো!!
আহারে! কি আমার কলির কেষ্ট ~ আমায় করবে তুষ্ট?
নাইবা হলাম কলির কেষ্ট ~ তোমার জন্য নয় করবো কষ্ট!
দুজনেই হা হা করে হেঁসে ওঠে।
খাওয়া শেষ করে অয়ন শালিনীকে ছেড়ে আসে কোরমঙ্গালা অবধি ট্যাক্সিতে।
রাস্তায় অনেক কথা হয়। শালিনীর পোষ্ট ডক্টরেট এর জন্য ফেলোশিপ। রিসার্চ এর স্কোপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
অয়ন এখন বেঙ্গালুরুতেই থাকে নতুন কোম্পানিতে। মাঝে মাঝে চেন্নাই , দিল্লী জায় কোম্পানির কাজে।
শালিনী এখন আর অয়ন কে অপছন্দ করেনা কেন নিজেই জানেনা। আসলে বন্ধু হিসেবেই ওকে গ্রহণ করেছে। নিজের মনকে বোঝায় বন্ধুত্বতে দোষ কি?
ডঃ অরুণাভ চক্রবর্তীর সব সময় ব্যস্ত থাকেন নিজের রিসার্চ নিয়ে। শালিনীকে গাইড করছেন একটা নতুন বিষয় নিয়ে কার্বন নেনো টিউব বেসড সেন্সার্স। বেশ কিছু তথ্য ভিত্তিক কনফারেন্স এবং সিম্পোজিয়াম এর মধ্যে সময় কাটে সকলের। পরিবেশটা সরস্বতীর আরাধনা ছাড়া কিছু নেই। যে যার রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত। খাওয়ার সময় থাকেনা এদের। এরা এতোই মসগুল হয়ে থাকে রিসার্চ নিয়ে। শালিনী জীবনে অনেক রিসার্চ করলো। নতুন কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টের টাকা এই বছর শেষ। এর পর কি?
হঠাৎ অয়নের ফোন। হ্যালো! বল অয়ন।
আজ শনিবার আমার অফিস ছুটি।
কিন্তু আমার নয়।
জানি , ছুটি নাওনা!
হুম দেখছি। “আমাদের প্রোজেক্ট এর কাজ প্রায় শেষ। এবার বাড়ী যেতে হবে। ফেলোশিপের টাকা আর পাবো না। আবার সেই মায়ের ঘেন ঘেনানি”। কথাগুল্প মনে মনে ভাবে শালিনী।
কি হল? উত্তর দিচ্ছ না কেন?
অয়ন তোমাকে একটা কথ বলি। তুমি কিছু মনে করবে না বল।
ঠিক আছে বল। আচ্ছা কথাটা না হয় দেখা হলেই বলবে। আমি আসছি তোমাকে নিতে।
মানা করতে পারলো না শালিনী। কিছু একটা অলস আবেগের বসে বলে বসে “ঠিক আছে এস কিন্তু রাত করতে পারবোনা ”।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন এসে হাজির।
চল।
কোথায়?
চলইনা।
‘আই-নক্স’ এ SANDLER BARRYMORE ‘BLENDED’।
হলে সিনেমা দেখতে দেখতে পপ কর্ন খাচ্ছিল দুজনে। আজ জেন শালিনী জীবনের সব বাঁধন থেকে মুক্ত। নিজেকে হারিয়ে দিতে চায় অয়নের কাছে। কিন্তু তাতে শালীনতা থাকা প্রয়োজন।
হঠাৎ বেড় রুম সিন শালিনীকে বিব্রত করে। নায়িকার অনাবৃত বক্ষ যুগল আর ঘন ঘন চুম্বনের দৃশ্য অয়নকেও কিছুটা উত্তেজিত করে ফেলে।
শালিনীর হাত অজান্তে স্পর্শ করে ফেলে।
শালিনী হাত সরিয়ে নেয় এবং উঠে পড়ে বলে , “চল রাত অনেক হয়েছে আমার আর ভালো লাগছেনা”।
সেকি! মাঝ খান থেকেই চলে যাবে?
হ্যাঁ যেতেই হবে লোকের সামনে অসভ্যতামি আমি পছন্দ করি না। তোমার জানা উচিত ছিল। চোখথেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছিল।
কিছু সিন ক্রিয়েটের আগেই অয়ন বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে।
অয়ন বিব্রত বোধ করে। বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করে। শেষে শালিনী আর ও উঠে পড়ে একটা ট্যাক্সিতে। কিন্তু একি! শালিনী সামনের সিটে ড্রাইভারের কাছে বসে!!
রাস্তায় কোন কথাই হয় না। অয়ন অপরাধীর মত পেছনে চুপটি করে বাধ্য ছেলের মত বসে-পড়ে। মনে মনে ভাবে এই মহিলার জেদ ভাঙ্গতেই হবে। এটা তারকাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। কিন্তু এই মহিলা অন্যদের মত সোজা সরল নয়। এরমধ্যে সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা নেই। রুক্ষ বাস্তব ধর্মী এক অহংকারী মহিলা। এর কাছে কামনা বাসনা প্রাধান্য পায়না। তবে কি সত্যি তাই? আরও ভেতোরে ঢুকতে হবে বুঝতে হবে। সে যে ব্যাপার টা করলো তাতে ভুল থেকে গেল। এখন হয়তো শালিনী আর কথা বলবে না কিছুদিন।
শালিনীর বাসা এসে-গেল। গাড়ী-থেকে নেবে ড্রাইভারের হাতে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলে “ভাই সাব মিটারে কিত্না হুয়া”?
৯০ রুপিস মাদাম। ঠিক হ্যায় রখ লিজিয়ে।
অয়নকে গুড নাইট বলে নেবে গট গট করে হেঁটে যায় উত্তরের অপেক্ষা না রেখে।
অয়নও ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।
হলে সিনেমা দেখতে দেখতে পপ কর্ন খাচ্ছিল দুজনে। আজ জেন শালিনী জীবনের সব বাঁধন থেকে মুক্ত। নিজেকে হারিয়ে দিতে চায় অয়নের কাছে। কিন্তু তাতে শালীনতা থাকা প্রয়োজন।
হঠাৎ বেড় রুম সিন শালিনীকে বিব্রত করে। নায়িকার অনাবৃত বক্ষ যুগল আর ঘন ঘন চুম্বনের দৃশ্য অয়নকেও কিছুটা উত্তেজিত করে ফেলে।
শালিনীর হাত অজান্তে স্পর্শ করে ফেলে।
শালিনী হাত সরিয়ে নেয় এবং উঠে পড়ে বলে , “চল রাত অনেক হয়েছে আমার আর ভালো লাগছেনা”।
সেকি! মাঝ খান থেকেই চলে যাবে?
হ্যাঁ যেতেই হবে লোকের সামনে অসভ্যতামি আমি পছন্দ করি না। তোমার জানা উচিত ছিল। চোখথেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছিল।
কিছু সিন ক্রিয়েটের আগেই অয়ন বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে।
অয়ন বিব্রত বোধ করে। বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ করে। শেষে শালিনী আর ও উঠে পড়ে একটা ট্যাক্সিতে। কিন্তু একি! শালিনী সামনের সিটে ড্রাইভারের কাছে বসে!!
রাস্তায় কোন কথাই হয় না। অয়ন অপরাধীর মত পেছনে চুপটি করে বাধ্য ছেলের মত বসে-পড়ে। মনে মনে ভাবে এই মহিলার জেদ ভাঙ্গতেই হবে। এটা তারকাছে চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। কিন্তু এই মহিলা অন্যদের মত সোজা সরল নয়। এরমধ্যে সৌন্দর্যের ছিটে ফোঁটা নেই। রুক্ষ বাস্তব ধর্মী এক অহংকারী মহিলা। এর কাছে কামনা বাসনা প্রাধান্য পায়না। তবে কি সত্যি তাই? আরও ভেতোরে ঢুকতে হবে বুঝতে হবে। সে যে ব্যাপার টা করলো তাতে ভুল থেকে গেল। এখন হয়তো শালিনী আর কথা বলবে না কিছুদিন।
শালিনীর বাসা এসে-গেল। গাড়ী-থেকে নেবে ড্রাইভারের হাতে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলে “ভাই সাব মিটারে কিত্না হুয়া”?
৯০ রুপিস মাদাম। ঠিক হ্যায় রখ লিজিয়ে।
অয়নকে গুড নাইট বলে নেবে গট গট করে হেঁটে যায় উত্তরের অপেক্ষা না রেখে।
অয়নও ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
৩য় পর্ব
এখানকার কাজ শেষ। বাড়ী ফেরার তাড়া। ইয়শোওন্তপুর হাওড়া সুপারফাষ্ট এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে। শালিনী একাই ফিরছে ২ এসি কোচে। সঙ্গে একটা ট্রলি ব্যাগ আর কিছু ছোট খাটো জিনিষ। খুব ব্যস্ত লাগছিলো। অনেকটা পথ কোরমঙ্গালা থেকে ইয়শোওন্তপুর ষ্টেশন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বগিতে উঠে। জিনিষ পত্র ঠিক জায়গায় রেখে একটা টাইম ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো। যে যার বার্থ এ উঠে বসছে। সামনের বার্থের এক ভদ্রমহিলা শালিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন “কোলকাতা যাবে বুঝি?”
হ্যাঁ। আপনি?
আমিও। সঙ্গে কেউ নেই?
‘না’ ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে ওলটাতে।
ও! আমিও একলা যাচ্ছি মা। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু কথা বলে সময় কাটাবো।
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। বলুন না।
আমি এখানে আমার ছেলে বৌ এর কাছে এসেছিলাম।
আপনার ছেলে কি করেন?
ছেলে বৌমা দুজনেই ইনফোসিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
ও তাই! ভালো।
তুমি?
আমি! আমি আপাতত কিছু করিনা।
তোমার বিয়ে হয়েছে?
কথাটা শুনেই শালিনী বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে। আমায় কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিতা?
না মা। জিগ্যেস করলাম বলে কিছু মনে করনা।
না না। আচ্ছা মাসিমা বিয়ে ছাড়া কি মেয়েদের কিছু কাজ নেই! বিয়ে না করে কি মেয়েরা সমাজের অন্য কোন ভালো কাজ করতে পারে না! আপনার কি মনে হয়।
কাজ তো অনেক আছে মা। কেউ এভারেস্ট অভিযানে যাচ্ছে , কেউ ক্রিকেট খেলছে , কেউ সাঁতার কাটছে , কেউ সিনেমা করছে .......
এগুলো সমাজের মঙ্গলের কাজ কিনা জানিনা তবে হ্যাঁ নাম যশের জন্য ঠিক আছে।
তুমি কি কিছুই কর না মা?
দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার? ... উল্টো প্রশ্ন শালিনীর।
কিছু একটা কর নিশ্চয়। কি কর মা?
কলেজে পড়াতাম এখন পড়াইনা। বেকার বলতে পারেন।.... ইচ্ছে করেই কিছু খুলে বলল না , আবার বিয়ের কথা না পেড়ে বসেন মহিলা। ম্যাগাজিনটায় চোখ বুলতে লাগলো। প্রত্যেক বয়স্কা মহিলাদের এই এক প্রশ্ন ; বিয়ে , ছেলে মেয়ে বিরক্ত লাগে এক ঘেয়ে কথা শুনতে। অন্য কোন প্রশ্ন নেই?
মহিলা , মনের মতন উত্তর না পেয়ে চুপসে গেলেন। উনিও একটা বোই বার করে মুখের সামনে ধরলেন।
খুব অলস লাগছিল শালিনীর। অনেকটা পথ এক টানা অটো তে। সেই সকালে বেরুন। ট্রেনে এসির ঠাণ্ডাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা। টি টি র ডাকে উঠে পড়ে।
টিকিট চেকিং এর পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সামনের মহিলাও ঘুমিয়ে পড়েন।
রাতে ট্রেনের জঘন্য খাবার খেতে রুচিতে বাধলেও উপায় নেই। ডিনারে , ভেজ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। আসলে জেগে থাকলেই ভদ্রমহিলার প্রশ্ন বাণে জর্জরিত হতে হবে। অহেতুক কথা বাড়বে তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
৩য় পর্ব
এখানকার কাজ শেষ। বাড়ী ফেরার তাড়া। ইয়শোওন্তপুর হাওড়া সুপারফাষ্ট এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে। শালিনী একাই ফিরছে ২ এসি কোচে। সঙ্গে একটা ট্রলি ব্যাগ আর কিছু ছোট খাটো জিনিষ। খুব ব্যস্ত লাগছিলো। অনেকটা পথ কোরমঙ্গালা থেকে ইয়শোওন্তপুর ষ্টেশন। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল বগিতে উঠে। জিনিষ পত্র ঠিক জায়গায় রেখে একটা টাইম ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো। যে যার বার্থ এ উঠে বসছে। সামনের বার্থের এক ভদ্রমহিলা শালিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন “কোলকাতা যাবে বুঝি?”
হ্যাঁ। আপনি?
আমিও। সঙ্গে কেউ নেই?
‘না’ ম্যাগাজিনের পাতা ওলটাতে ওলটাতে।
ও! আমিও একলা যাচ্ছি মা। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু কথা বলে সময় কাটাবো।
হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। বলুন না।
আমি এখানে আমার ছেলে বৌ এর কাছে এসেছিলাম।
আপনার ছেলে কি করেন?
ছেলে বৌমা দুজনেই ইনফোসিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।
ও তাই! ভালো।
তুমি?
আমি! আমি আপাতত কিছু করিনা।
তোমার বিয়ে হয়েছে?
কথাটা শুনেই শালিনী বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে। আমায় কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিতা?
না মা। জিগ্যেস করলাম বলে কিছু মনে করনা।
না না। আচ্ছা মাসিমা বিয়ে ছাড়া কি মেয়েদের কিছু কাজ নেই! বিয়ে না করে কি মেয়েরা সমাজের অন্য কোন ভালো কাজ করতে পারে না! আপনার কি মনে হয়।
কাজ তো অনেক আছে মা। কেউ এভারেস্ট অভিযানে যাচ্ছে , কেউ ক্রিকেট খেলছে , কেউ সাঁতার কাটছে , কেউ সিনেমা করছে .......
এগুলো সমাজের মঙ্গলের কাজ কিনা জানিনা তবে হ্যাঁ নাম যশের জন্য ঠিক আছে।
তুমি কি কিছুই কর না মা?
দেখে কি মনে হচ্ছে আপনার? ... উল্টো প্রশ্ন শালিনীর।
কিছু একটা কর নিশ্চয়। কি কর মা?
কলেজে পড়াতাম এখন পড়াইনা। বেকার বলতে পারেন।.... ইচ্ছে করেই কিছু খুলে বলল না , আবার বিয়ের কথা না পেড়ে বসেন মহিলা। ম্যাগাজিনটায় চোখ বুলতে লাগলো। প্রত্যেক বয়স্কা মহিলাদের এই এক প্রশ্ন ; বিয়ে , ছেলে মেয়ে বিরক্ত লাগে এক ঘেয়ে কথা শুনতে। অন্য কোন প্রশ্ন নেই?
মহিলা , মনের মতন উত্তর না পেয়ে চুপসে গেলেন। উনিও একটা বোই বার করে মুখের সামনে ধরলেন।
খুব অলস লাগছিল শালিনীর। অনেকটা পথ এক টানা অটো তে। সেই সকালে বেরুন। ট্রেনে এসির ঠাণ্ডাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা। টি টি র ডাকে উঠে পড়ে।
টিকিট চেকিং এর পর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। সামনের মহিলাও ঘুমিয়ে পড়েন।
রাতে ট্রেনের জঘন্য খাবার খেতে রুচিতে বাধলেও উপায় নেই। ডিনারে , ভেজ খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে। আসলে জেগে থাকলেই ভদ্রমহিলার প্রশ্ন বাণে জর্জরিত হতে হবে। অহেতুক কথা বাড়বে তার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়।
আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
৪র্থ পর্ব
হাওড়া ষ্টেশন এ গাড়ী ইন করে প্রায় আধ ঘণ্টা লেটে। নিজের লাগেজ গুছিয়ে প্ল্যাট ফর্মে হাঁটা দেয়।
প্রি পেড ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়ে।
বাড়ি পৌঁছে শান্তি। সোজা বাথ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়।
মা’ জল খাবার নিয়ে মুখের সামনে , সঙ্গে চা।
চলে এলি ভালো হল। বাবা আমার চিন্তা গেল। মেয়টা কোথায় রইলো কি খেল!
প্রত্যেক দিন ত তোমায় ফোন করতাম। তবু চিন্তা!
হবেনা?
কেন?
ও তুই বুঝবিনা। বই ছাড়া ত কিছু জানিশনা। নে খেয়ে নে। পরে কথা হবে।
সত্যি খিধে পাচ্ছিল। ট্রেনের যা খাবার! গা গুলোয় খেলে। লোকে বাধ্য হয় তাই খায়।
বিকেলে দিদি এলো।
কিরে শালু ফিরে এলি?
কি করতাম তাহলে?
কেন তোর রিসার্চ!
শেষ করেই ত এলাম। ছোট প্রোজেক্ট। এবার দেখি কি করি। নাইজারে (NISER) সাইন্টিস্ট চায় দেখি পাই কিনা। ওটা ভালো ইন্সটিটিউট , মাইনে ভালো। পেলে চলে যাবো। আমাকে আমার রিসার্চ চালিয়ে যেতে হবে , আমার টার্গেটে না পৌঁছন পর্যন্ত।
সারা জীবন টা কি এই করেই কাটাবি?
এ ছাড়া আর কি করবো বল? আমি ত তোদের মত গুছিয়ে ঘর সংসার করতে পারবো না।
কেন পারবি না! আমারা কি পারতাম? পারতে হবে সংসারের সেই নিয়ম।
এই খানেই তোর আমার মধ্যে মত ভেদ! “ওই সংসারের সেই নিয়ম” কথাটা আমি মানতে রাজি নই।
অফিস থেকে জিজু এসে হাজির। টুকাই আগে থেকেই এসে গিয়েছে। মাসির কাছে বেঙ্গালুরুর গল্প শুনছে।
হঠাৎ বাইরে রাস্তায় একটা প্রাইভেট কার আমাদের বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ালো।
কার থেকে সু-টেড বুটেড এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক এবং সঙ্গে এক ভদ্রমহিলা। হাতে মিষ্টি।
শালিনী কিছুই বুঝলোনা। ও নিজের ঘরে চলে গেল। এনাকে ত কোন দিন আমাদের বাড়ী দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। ইনি কে? হঠাৎ মাথায় কারেন্ট লাগার মত একটা শক পেল। অজ্ঞান হয়ে গেল শালিনী। ভাগ্যিস বিছানায় পড়ে গিয়েছিল নাহলে কি হত কে জানে।
টুকাই ঘরে ঢুকে মাসিকে বিছানায় ও ভাবে পড়ে যেতে দেখে তার মাকে ডাকে। টুকাইয়ের ডাকে দিদি গিয়ে দ্যাখে শালিনী বিছানায় অস্বাভাবিক ভাবে পডে গিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ডাক্তার আসেন। অর্ক নিয়ে আসে সঙ্গে করে।
যারা এসেছিলেন তারা হতভম্ব। বাড়ী সুধু সকলের হৈ চৈ। কি হল কি হল?
ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বৈঠক খানায় বসে আছেন। কেউ কাছে নেই অথচ যেতেও পারছেন না ওনারা।
শেষে ভদ্রমহিলা ভেতরের ঘরে গিয়ে দেখলেন শালিনী বিছানায় শুয়ে। ডাক্তার , প্রেশার পালস দেখে জ্ঞান ফেরানোর জন্য চিকিৎসা সুরু করেন।
শালিনীর মা কপালে হাত জোড় করে ঠাকুর কে ডাকতে শুরু করেন।
কিছুক্ষণ পরে শালিনীর জ্ঞান ফেরে। ডাক্তার বাবু অর্ক কে কিছু প্রেসক্রিপশন দিয়ে চলে যান। অর্ক সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ নিয়ে আসে।
শালিনীর মা’র এতক্ষণ খেয়াল ই ছিল না ঘরের অতিথিদের কথা। কাছে গিয়ে হাত জোড় করে বলেন মেয়েটা বেঙ্গালুর থেকে এসে খুব দুর্বল লাগছিল। আজ কি যে হল আপনারা আসার সঙ্গে সঙ্গে এরকম অজ্ঞান হয়ে জাওয়া এই প্রথম বার ....
না না আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। এটা তো অপ্রত্যাশিত। কেউ কি জানতো এরকম হবে বলে। আমরা বরং আরেক দিন আসবো কেমন!
শালিনীর দিদি ও ঘর থেকে আসে চা জলখাবার নিয়ে।
মা বলেন ব
No comments:
Post a Comment