পঙ্কজ
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৮.০৩.২০১৮ /
রবিবার বেলা ১১.২৪ /
কখন কখন মানুষের এমন বিপদ আসে,যে তার
পক্ষে বাঁচা অসম্ভব হয়ে ওঠে।ঠিক সেই সময় কেউ বিপদ থেকে উদ্ধার করলে হয়তো সে
নিশ্চিত মরণ থেকে রক্ষ্যা পায়। সেইসময় বিপদে পড়েথাকা ব্যক্তিটির কাছে যে তাকে
বাঁচাল সে হয়ে জান সাক্ষাত ভগবান। নয়কি?
পঙ্কজ পাঁজা । নবম শ্রেণীর ছাত্র । ছিপ ছিপে গড়ন । মিস কালো রং । পড়াশুনোয়
অষ্টরম্ভা । স্কুলের মাষ্টার মশাই প্রায় ওকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। উনি প্রায়ই
অসন্তুষ্ট হন পঙ্কজের ওপর কারন পড়াশুনোয় পঙ্কজের একদম মন নেই। গ্রামের নদীর
ধারে পঙ্কজের ঘর সারা দিন ওই নদীতে সাঁতার কাটা, ছিপ
নিয়ে মাছ ধরা ইত্যাদি । ক্লাসে প্রায় সব বিষয়ে ৩০এর নিচে নম্বর। তবে হ্যাঁ খেলা
ধুলোয় ও খুব ভালো । দৌড়ন , সাঁতার কাটাতে ওর জুড়ি কেউ নেই ।
এ ছাড়া বাস্কেট বল , ভলি ত আছেই। মাষ্টার মশাই বলেন যা
স্পোর্টস হস্টেলে গিয়ে থাক আমার মাথা খাসনে।
পঙ্কজ মাথা চুলকে বলে,সার আমার দ্বারা
পড়াশুনোটা হবেনিকো । ওই স্কুল ফাইনাল অবধি
আমাকে একটু সহ্য করেন । ওটা পাস করলেই পড়া ছেড়ে স্পোর্টস হস্টেলে নাম
লেখাবো । দেখবেন সার আমার নাম একদিন কাগজে বেরুবে তখন আপনি বলবেন এই পঙ্কজ আমাদের স্কুলের
ছাত্র । আমার ছাত্র । গর্বে আপনার ........
সার ধমকে উঠলেন থাম থাম ! তোর জন্য আমার গর্ব হবে কেন ?
তুই অঙ্কে ১০ , ইংলিশে ১৫ এমনকি বাংলায় মাত্র
২৫ পেয়েছিস এবার । কি করে তুই আশা করিস স্কুল ফাইনালটা পাস করবি ? তোর মতন গর্দ্ধব অপদার্থ ছাত্রর জন্য আমার গর্ব হবে ? ছ্যা ছ্যা !! যা বাড়ি যা । বাবাকে বল তোকে স্কুল থেকে টি.সি নিয়ে অন্য
গ্রামের স্কুলে ভর্তি করবেন । কাল একবার আমায় দ্যাখা করতে বলিস তোর বাবাকে।
পঙ্কজ মাথা চুলকিয়ে বলে এমন শাস্তি দেবেন না সার । আমি বাবার কাছে মার খাবো
।
তাই খা । আমার মাথা খাসনে। সরকারের নিয়ম স্কুলে ছাত্রদের শাস্তি দেওয়া
যাবেনা । তোদের মতন গাড়ল ছাত্রদের নিয়ে কি হবে ?
পঙ্কজ মাথা চুলকোয় আর মাষ্টার মশাইয়ের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে
থাকে।
রবিবার সকালে পঙ্কজ প্রত্যেক দিনের মতন নদীর ধারে যায়। আনমনা হয়ে আপন মনে
নদীর পাড়ে ঘুরছিল । মাথায় একটা চিন্তা স্কুল ফাইনাল টা কি করে পাস করে ।
হটাত প্রায় মাঝ নদীতে হাত দেখতে পেয়ে ঝপাং করে জলে ঝাঁপ দিল। দ্রুত গতিতে
সাঁতার কেটে হাতটা যে জায়গায় দেখা যাচ্ছিল ওইদিকে সাঁতরে চলে গিয়ে হাতটা ধরে হিড়
হিড় করে টেনে আনে পাড়ের দিকে। পঙ্কজ জানে হাত ধরে না টানলে ডুবে যাওয়া লোক প্রাণের
দায়ে যে বাঁচাতে আসে তাকে আঁকড়ে ধরে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ভগবানের অশেষ
করুণা মহিলাটিকে পঙ্কজ বাঁচাতে পেরেছে।
এক পেট জল খাওয়ার জন্য পেট ফুলে জয় ঢাক। পাড়ে তখন লোকের ভিড় । একজন এসে
মহিলাটির পেটে চাপ দিয়ে জল বার করে দিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মহিলাটি সুস্থ হয়ে
ওঠেন। সবাই বলে আজ পঙ্কজ না থাকলে এই সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে মহিলাটি কখনই বাঁচত
না। গ্রামের এক ধনি পরিবারে বৌ মহিলাটি । নদীতে স্নান সারতে এসে চোরা বালিতে পা
পড়ে যায়। স্রোতের টানে মহিলাটি প্রায় মাঝ
নদীতে চলে যায় ।
পঙ্কজ কে দেখে মহিলাটি বলেন তুমি আমার কাছে ভগবান ভাই। আজ তুমি না থাকলে
আমি কিছুতেই বাঁচতাম না। সকলে পঙ্কজ কে ধন্য ধন্য করে।
গ্রামের প্রধান এবং ব্লক অধিকারীর সুপারিশে জেলা শাসক স্বয়ং গ্রামে এসে
পঙ্কজ কে প্রশংসা পত্র প্রদান করেন। ওর
নাম এই রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতির সাহসিকতার মেডেলের জন্য সুপারিস করা হয়। পরের বছর প্রজাতন্ত্র
দিবসে পঙ্কজ সাহসিকতার জন্য মেডেল পায়। কাগজে নাম এবং ফটো বেরোয় ।
পঙ্কজ মাষ্টার মশাইকে দেখা করতে স্কুলে যায় । গড় হয়ে প্রণাম করে।
মাষ্টার মশাই ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে একটাই কথা বলেন ,
আমি এবং আমার স্কুল সত্যি আজ গর্বিত তোর জন্য । সত্যি তুই সাহসী ছেলে । তোর
কথা অক্ষ্যরে অক্ষ্যরে ফলেছে। এইরকম
সাহসের কাজ সর্বদা করবি । ভগবান তোর সহায় হবেন।
সকলের দ্বারা পড়াশুনো হয়না। কিন্তু সে তার সাহসিকতা দিয়ে অনেক সময়
উল্লেখনীয় কাজ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এই গল্পটি তার ই এক প্রতিচ্ছবি
।
৬০৪ শব্দ
No comments:
Post a Comment