Monday, December 7, 2015

কোণার্ক নাট্য উৎসব ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৪.১২.২০১৫













       কোণার্ক নাট্য উৎসব 
           ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৪.১২.২০১৫

জুলাই ২০১৫ ঋতবাক এর বর্ষপূর্তি সংখ্যায় , সংস্কৃতির উৎস সন্ধানে শিরোনামে “কোণার্ক” এর বিষয় আমার লেখা একটা নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছিল । সেই লেখাটিতে কোণার্ক এর বিশেষ কার্যক্রম “কোণার্ক নৃত্য উৎসবের” বিষয় সূচনা ছিল। প্রত্যেক বছরের মত এই বছর ডিসেম্বর মাসে ‘কোণার্ক’ উৎসব মুখরিত । সারা ভারতবর্ষের কলাপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। গত ১লা ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে “কোণার্ক নৃত্য উৎসবের” আয়োজন হয়েছে যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন নৃত্যাঙ্গনা এবং সঙ্গীত শিল্পীরা একত্রিত হয়েছেন এই বিশেষ কার্যক্রমটি সফল করতে । এখানে বলে রাখি কোণার্ক এর মুক্তাঙ্গনে এই বিশেষ কার্যক্রম সুসম্পন্ন হয় ফ্লাড লাইটের আলোর রোশনিতে। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা । আমার কিছু অভিজ্ঞতার চিত্র এই লেখার মাধ্যমে বর্ণনা করতে চেষ্টা করলাম। কোণার্কের হোটেল , রেস্তরাঁ সব উপচে উঠছে লোক স্রোতে । আমাদের কোণার্কের পান্থনিবাসে রিসারভেসন ছিল দুদিনের জন্য । 
আজ কোণার্কের তৃতীয় সন্ধ্যায় আলোর রোশনাইতে কোণার্ক উৎসব মুখর। গুরু গম্ভীর মৃদঙ্গ র তালে নর্তক নর্তকীদের নৃত্য পরিবেশন যেন স্বর্গের ইন্দ্রপুরী । সে এক মনোরম অনুভূতি । 
প্রথম দিবস ১লা ডিসেম্বর ২০১৫ মঙ্গলবার ঃ- উড়িষ্যার পর্যটন বিভাগ এবং সঙ্গীত নাটক একাডেমীর মিলিত উদ্যমে এই উৎসবের আয়োজন । ওড়শী ও মনিপুরী নৃত্যের ঝংকারে মুখরিত হল অর্কক্ষেত্র । অনেক বিদেশী পর্যটক এসেছিলেন সেদিন । প্রথম দিনের সুরু হয় ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দেমাতরম্’ , ‘যুগ্মদ্বন্দ পল্লবী’ আদি-গুরু শঙ্করাচার্যর রচনা থেকে ‘অর্ধনারীশ্বর’ এবং পরে সন্থ কবীরের দোহা ও গুরুবাণী র আধারে পরিবেষণ করেছিলেন নৃত্যাঙ্গণারা । ওড়শী নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও রতিকান্ত মহাপাত্র র ছাত্রীরা যথাক্রমে রাজশ্রী , মনস্বিতা , সিপ্রা , ঐশ্বর্য্যা , প্রীতিশি , প্রিয়াঙ্কা , প্রজ্ঞা ও পারমিতা নৃত্য পরিবেষণ করেন । 
দ্বিতীয় পর্যায়ে জহরলাল নেহেরু ড্যান্স একাডেমী , মণিপুর থেকে আসা নৃত্য শিল্পীরা মনিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন। এতে তাঁরা লাল হরওবা , ঢোল ঢোলক ঢোলম , তনুম ডেরেনা ও পুঙ্গ চোলম
। মণিপুর দলের মুখ্য অজিত সিং সমেত ৯ জন নৃত্য শিল্পী এবং ৮ জন সঙ্গীত শিল্পী মনিপুরী নৃত্য পরিবেষণ করেন। 
আরেকটা আকর্ষণ ছিল সেটা হল বিখ্যাত বালুকা শিল্পী পদ্মভূষণ সুদর্শন পট্টনায়কের চন্দ্রভাগার কূলে বালুকা কলা প্রদর্শন । আমরা ভাগ্যবান এই প্রখ্যাত শিল্পীদের কলা দেখার সুযোগ পাই। 
দ্বিতীয় দিন ২রা ডিসেম্বর ২০১৫ , বুধবার ঃ- 
দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় ভক্তি রসাত্মক আসামের সত্রিয়া একাডেমীর নৃত্য পরিবেষণ হয় বৈষ্ণব ভাবে সমর্পিত । রঙ্গমঞ্চের পরিবেশকে আধ্যাত্মিক ভাবাবেগে সকল দর্শককে মুগ্ধ করেছিল। আসামের গুরু যতীন গোস্বামীর নির্দেশনায় সত্রিয়া নৃত্য পরিবেষণ করেন আসামের নৃত্যাঙ্গনারা । শেষে শ্রীমদ ভগবৎ গীতায় বর্ণিত নবধা ভক্তি কলাপ্রেমির মনে আধ্যাত্মিক ভাবাবেগের উদ্রেক করে । সক্রিয়া নৃত্য শিল্পী সুপ্রিয়া গোস্বামী , সিম্ফি সোনাওাল , অরুণিমা গোগই , ডঃ লিমা দাস ও প্রভাকর গোস্বামী । কবি তালুকদার ও ক্ষীরোদ বোরা কণ্ঠদান করেছিলেন। 
এরপর এহমদাবাদের ওড়শী নৃত্যাঙ্গনারা পল্লবী ও গুজরাটের সন্থ নরসিংহ মেহেট্টার রচনা থেকে মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় রচনা “বৈষ্ণব জন তো ...” নৃত্যাভিনয় ভক্তিরসে রসা-প্লুত করেছিল। নৃত্যশিল্পী সত্যপ্রিয়া , হিরনা , অর্পিতা , সুরচিতা ইত্যাদি শিল্পীরা সুন্দর নৃত্য পরিবেষণ করেন। 
তৃতীয় দিন ৩রা ডিসেম্বর ২০১৫ , বৃহস্পতিবার ঃ- 
তৃতীয় দিনের সন্ধ্যায় মুখ্য আকর্ষণ ওড়শী ও কুঞ্চিপুড়ি নৃত্যের যাদু । ওড়শী নৃত্য মহাভারতের কথাবস্তু থেকে আধারিত বৃহন্যলা পরিবেষণ করা হয়। দেবরাজ ইন্দ্র কে ফাল্গুনির দিব্যাস্ত্র প্রদানের জন্য প্রার্থনা সুরু করে বিরাটের রাজ্যে পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময় থেকে কীচক বধ পর্যন্ত কথা বস্তুকে আধার করে এক জীবন্ত প্রতিবেদন যা সত্যি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গুরু বৈজয়ন্তী কাশি ও সাথী কলাকাররা পরিবেষণ করেন “কন্যাকুমারী ও রানী রুদ্রাম্মা দেবী । 
৫ ডিসেম্বর ২০১৫ অবধি এই নাট্য উৎসব চলবে । 
এই উৎসবে প্রায় ৩ লক্ষ্য দর্শক বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন। প্রচুর বিদেশী পর্যটক আসেন এই উৎসব দেখতে ।
        

No comments:

Post a Comment