Saturday, December 19, 2015

অনু গল্প “টকিং বার্বি ডল” ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ১৯.১২.২০১৫ /



  অনু গল্প টকিং বার্বি ডল
   
 ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী  / ১৯.১২.২০১৫ /  

ছোট্ট মেয়েটা নাম তার  'দীপান্বিতা'  আমার নাতনীর বয়সী হবে।আমাদের আবাসনেই থাকে আমার বাড়ির পাসে । তার ৫ম জন্মদিন ১লা জানুয়ারি তে। আমাকে দু মাস আগেই বলে রেখেছে ,দাদু , আমার জন্মদিন ১লা জানুয়ারিতে । তুমি কিন্তু আমাকে গিফট দেবে । আমি মা বাবাকে বলে  তোমার পছন্দর খাবার আনাবো।
আমি বলি  নিশ্চয়ই মা। তুই তো আমার আহ্লাদী ঠাকুমা । তোকে গিফট না দিলে কাকে দেব বল !
হুম মনে থাকে জেন ।
ঠিক আছে মনে থাকবে দেখিস। তবে আমি যদি তার আগে মরে যাই ।
বালাই শাঠ ও কথা বলছ কেন  তুমি না থাকলে আমায় গল্প কে শোনাবে? পাকা বুড়ীর মত বলে।
তবে তোকে গল্প শোনাবার জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হবে !
 তা কেন । তুমি শুনিও না কিন্তু তুমি থাক নাহলে আমিও তোমার সঙ্গে চলে যাব আকাশে।
দূর বোকা মেয়ে । তবে ওই পক্ষী রাজ ঘোড়া চড়ে তোর অস্ট্রেলিয়ান রাজকুমার যে মেলবোর্ন থেকে আসবে সে কাকে নিয়ে যাবে তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া য়।
খুব রেগে যায় । তুমি খুব বাজে । ও আমার বন্ধু ।  আমাকে না রাগালে তোমার বুঝি ভাত হজম হয়না?
আমি হাঁসি । খুব মজা পাই ওকে রাগাতে আবার ও নাহলেও চলে না । ওই ত আমার প্রকৃত বন্ধু। 
অস্ট্রেলিয়ান রাজকুমার এর সিক্রেট  হচ্ছে .... ওর ই স্কুলের এক ছেলে তার জন্ম অস্ট্রেলিয়ার  মেলবোর্নে । সে নাকি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড । তাই এই রসিকতা। ওই বলেছিল সে কথা । ছেলেটি দেখতে ভারি সুন্দর কিন্তু ও আসলে মহারাষ্ট্রিয়ান । নাম অমিত আকোল্কার । 
এই অমিতকে নিয়ে দীপান্বিতার যত গল্প । ও কি টিফিন আনে , স্কুলে টিচার ওকে কি বলে। কেমন ড্রইং করে ইত্যাদি।
আমি চুপ করে শুনি । মাঝে মাঝে হুঁ  বলি । তারপর বলি তোর বেষ্ট ফ্রেণ্ড দের ডাক-বিনা ?
ডাকবোত । চকলেট দেব গিফট দেব । আরও কত কি ।
আজকাল বাবা মায়েরা , ছেলে মেয়েদের জন্মদিন ইউরোপিয়ান স্টাইলে ওদের ধারায় করে । আমাদের আমলে বাবা মা নতুন ড্রেস পরিয়ে মন্দিরে পূজো দিতেন । সেদিন একটা বিশেষ দিন বলে গণ্য হত ।  বাড়িতে পায়েস নিশ্চই হত । সেটা মুখে দিয়েই মা বাবা আশীর্বাদ করতেন । গড় হয়ে প্রণাম করে তাঁদের আশীর্বাদ ই সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল।  সে রীতি প্রায় নেই । এখন কেবল কেক কাটা আর গিফট নেওয়া পরে গিফট দেওয়া । বেলুন দিয়ে সাজান , লাইটের ডেকোরেশন ইত্যাদি।
......... দিপুরা (আমি ওকে এই নামি ডাকি) বেশ কদিন হল  কোথায় গিয়েছে। আমি কোন খবর পাইনা ওদের। মনে মনে খুঁজি । আহা মেয়েটার ওপর মায়া পড়ে গিয়েছে । ওর টক টক কথা , চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচ আমার মন কেড়ে নিয়েছে।  ওর মা বাবা কেও দেখিনা কদিন। মনে মনে ভাবি হয়ত স্কুলের পড়াশুনোর চাপ। তারপর নাচের  ক্লাস , গানের ক্লাস , ড্রইং ক্লাস , ক্যারাটের ক্লাস ...... । সত্যি আজকাল মা বাবারা নিজেদের ছেলে মেয়ের ওপর এতো প্রেশার দেয় যে তাদের নিজের মতন বাঁচার অধিকারটুকু যেন ছিনিয়ে নেয় । সব এক একটা রোবটে পরিণত হচ্ছে আর সেই রোবটের রিমোট টা আছে মায়ের হাতে । যেমন বোতাম টিপবে ঠিক সেই রকম চলবে । খাও খাবে ... নাচো নাচবে ... গান কর গান করবে ...!!!!! এ কি ?   
 আমার মনে আছে কিন্তু দিপুর কথা । ওর বার্থ ডে গিফটের ফরমাস টকিং বার্বি ডল সেটা নিয়েই যাই ১লা জানুয়ারির দিন সন্ধ্যায় । কিন্তু একি ফ্ল্যাট টা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন ? কেউ কি নেই ! লোকজন ত থাকার কথা । মিউজিক ,লাইট সব কোথায় ? তা ছাড়া কোন লোক জন নেই । তবে কি ওর বার্থ ডে পার্টি  হবেনা ! কিন্তু কেন?  এই ভেবে মনটা এক অজানা আশংকায় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে ফ্ল্যাটের  কলিং বেল টিপলাম। দরজা খুলে দিলেন ওর বাবা । আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন । উনি বললেন , “দিপুর ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছে । ওরা মুম্বাই গিয়েছিল ওকে দেখাতে আশা ক্যানসার হসপিটাল এন্ড চিলড্রেন হসপিটাল এবং টাটা ক্যানসার হসপিটাল , মুম্বাইতে। কেমো দেওয়া হয়েছে। ওকে দেখলে চিনতে পারবেন না।
আমি আর দুঃখ রাখতে পারলামনা। ও যে আমাকে বলেছিল আমার সঙ্গে আকাশে চলে যাবে ।  তবে কি ও জানতো ওর রোগের কথা ! ওর সেদিনের কথাগুলো আমার ভিডিও রেকর্ডিং এর মত চোখের সামনে ভেশে উঠলো ; বালাই শাঠ ও কথা বলছ কেন  তুমি না থাকলে আমায় গল্প কে শোনাবে? তবে তোকে গল্প শোনাবার জন্য আমায় বেঁচে থাকতে হবে !  আমার চোখ ভারাক্রান্ত হল। আমি কেঁদে ফেললাম হাউ হাউ করে । ভগবান কেন এই কচি শিশুদের এই ভয়ংকর রোগ দেন ! কেন ? আর কিছুই আমার মাথায় এলোনা তখন  কিছু না বলে দিপুর বাবার হাতে বার্বি টকিং ডলটা দিয়ে বলি এটা ওকে দিয়ে দেবেন ।  এটাই ও চেয়েছিল। মানা করবেন না । ওই আমার প্রাণের বন্ধু । এই বলে দ্রুত পায়ে ওখান থেকে ফিরে আসি আমার নিজের ফ্ল্যটে । সারাদিন আমি ঠাকুর ঘরে গিয়ে ওর আরোগ্যের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি । আমি কি করতে পারি এ ছড়া ।     

Thursday, December 17, 2015

সন্দেহ / ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বুধবার / ইং ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/



   সন্দেহ 

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী /  ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪২২ বুধবার / ইং ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/

 অনেক কষ্টে এক ভাড়াটে পেলাম । Quicker . OLX . 99.com সব সাইটেই ফ্রি এড পোষ্ট করেছিলাম । শেষে ভাগ্য ভাল একটি ছোট্ট পরিবারস্বামি স্ত্রী এবং তাদের এক মেয়ে ‘পায়েল’  আমার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকলো 
  বিনোদ ছেলেটি আমার ছেলের বয়সী হবে তবে বিহারী (এখন ঝাড়খণ্ডের) নাম বিনোদ পাণ্ডে বাড়ি রাঁচিতে এবং ওর স্ত্রী বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ কন্যা সুরূপা ব্যানার্জী বাড়ি বর্ধমানে । বিনোদ কিন্তু সুন্দর বাংলা বলে । কেউ বুঝতেই পারবে না ও অবাঙ্গালী বলে। প্রথমে আমার স্ত্রীর একটু আপত্তি ছিল ওদের ভাড়া দিতে কিন্তু আমি তাঁকে বুঝিয়ে বলাতে উনি শেষে  রাজি হলেন । বাড়িটা আসলে স্ত্রীর নামে তাই উনি রাজি নাহলে কার সাধ্য ভাড়াটে  বসায় । আমি বলি এরকম ত একছার হচ্ছে । বাঙ্গালী মেয়েদের অবাঙ্গালী বর আর বাঙ্গালী ছেলেদের অবাঙ্গালী বৌ । ঠিক আছে । বোঝা পড়া ঠিক হলে ক্ষতি কি ? আমাদের যুগের কথা আলাদা । এখন যুগ পাল্টেছে ছেলে মেয়েদের রুচি পাল্টেছে। বলেনা “সময় কা সাথ বদলো” । এখন আমাদের বদলাতে হবে যুগের সঙ্গে। তাছাড়া ওরা ভাড়া থাকবে ওদের বিবাহিত জীবনের সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক। ভাড়া দেবে বাড়িতে থাকবে ব্যাশ ।  
মনে মনে ভাবি  বিবাহ নামক অনুষ্ঠানটি প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছে কারন সত্যি এই অপচয় আজকালকার যুগে না হলেই ভালো । কি বলেন ওই পণ্ডিতের কিছু মন্ত্র উচ্চারণ আর ১০০ ২০০ লোক খাওয়ানো  যেন জমিদারের বাড়ি ! ওসব টাকা নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। আসল হল মনের মিলন আর সুখে স্বচ্ছন্দে সংসার করা । হোক না ভিন জাতের ভিন ধর্মের । আমার মতে বর কোনের মধ্যে ভালো বোঝা -পড়া থাকলেই সেটাকে সুখী সংসার বলে বলা উচিৎ ।   না হলে ওই মন্ত্র ফন্ত্রতে কি হবে বলুন এ সব কথা কিন্তু স্ত্রীকে বলিনি । রক্ষে করুন কুরুক্ষেত্র সুরু হবে উনি শুনলে। 
অগ্রিম ভাড়া দুমাসের রেখে ঘরখানি সম্পূর্ণ নতুন রং করালাম । যা যা ছোট খাট রিপেয়ারের  প্রয়োজন ছিল সব ঠিক ঠাক করে চাবি দিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিলাম। এ যুগে ভালো ভাড়াটে পাওয়া ভাগ্যের কথা ।
বিনোদ আই টি সেক্টারে কাজ করে । ফিরতে প্রায় রাত ১ টা ২ টো বাজে । সেক্টার ফাইভ থেকে     বাগুইহাটি  । রাতে গাড়ি না হলে আসা অসম্ভব ব্যাপার ।  ওর নতুন মারুতি ব্যালেনো নিয়েই অফিস  যায় আসে । বেশ পাকা হাতের চালানো ছেলেটার । ওর সঙ্গে আমার ছেলের অনেকটা মিল আছে , লম্বা ফর্শা গড়ন । সেই জন্য ওর প্রতি একটু বেশি স্নেহ উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। আমার মেয়ে নেই তাই সুরূপা কে আমি নিজের মেয়ের মত দেখি । আমাদের ফ্ল্যাট টা ওই কমপ্লেক্সের মধ্যেই তাই  ছুটির দিনে ওরা  প্রায় আমার ফ্ল্যাটে চলে আসে মেয়েটিকে নিয়ে বেশ গল্প ,আড্ডা ,চায়ের আসর আর সুরূপার মধুর কন্ঠে অনুপম রায়ের লেখা চতুষ্কোণ ছায়া ছবির,“বসন্ত এসে গেছে” ভালোই লাগছিল । দিনগুলো বড় আনন্দে কাটছিল।    
আমার ড্রাইভার না থাকলে মাঝে মাঝে বিনোদ আমাদের বুড়ো বুড়িকে শনি-রবিবার শপিং মলে নিয়ে যায়। কেনা কাটা সেরে আমরা ফিরি । এই ভাবেই চলছিল।
এরমধ্যে বিনোদ সুরূপার মধ্যে কিছু ব্যাপারে খটা খটি লাগে । হটাত একদিন শুনি সুরূপা মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে । ব্যাপারটা আমাদের জানার কথা নয় কিন্তু একদিন ওদের বাড়ির রান্নার মাসী এসে আমাদের জানায়,“বাবু আপনাদের ফ্ল্যটের চাবি দিতে বলে তিন দিনের জন্য কোথায় গিয়েছেন । তিনদিন পর উনি ফিরলে চাবি নিয়ে যাবেন”  
গিন্নী বলেন “কোথায় গিয়েছেন বলে গিয়েছেন ? সুরূপা কোথায় ?”  
কাজের মাসী বলে , “বাবু  বললেন , মা সেই আগের সপ্তাহে বর্ধমান চলে গিয়েছেন পায়েল কে  নিয়ে”
সে কি ! আমাদের ত কিছুই বলে নি ।
আমি সঙ্গে সঙ্গে বিনোদ কে তার মোবাইল নাম্বারে ফোন করি । কিন্তু ফোন সুইচ অফ থাকায় পরে সুরূপা কে ফোন করি । কিন্তু কাউকে পাইনা ফোনে।  
দুশ্চিন্তা বাড়ল । আমার ই যত জ্বালা । এই কমপ্লেক্সে অনেকেই ভাড়াটে রেখেছেন  কিন্তু আমার  ভাড়াটে দ্যাখ যত ঝুট ঝামেলা বাড়ায় । ভারি মুস্কিল কি করি এখন তিন দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই ।
রবিবার বিকেল ৫.৩০ নাগাদ কলিং বেলের শব্দে আমার নিদ্রাচ্ছন্ন ভাবটায় পূর্ণচ্ছেদ পড়ে । উঠে গিয়ে দোর খুলতেই দেখি বিনোদ সামনে । আমাকে প্রণাম করে বলে আঙ্কেল চাবিটা দিন।
আমি ওকে ভেতরে ডেকে বলি বস । এখন চা খাওয়ার সময় এসো চা খাই। গিন্নী ভেতরে দিবা নিদ্রায় । ওনাকে ব্যস্ত করা ঠিক হবেনা তাই নিজেই ইন্ডাক্সন হিটারে চায়ের জল চাপাচ্ছি - পেছন থেকে শুনি , “আদিখ্যেতা
পেছন ফিরতেই দেখি দয়াময়ী পরম কল্যাণময়ী আমার স্ত্রী । দু চক্ষু থেকে অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে । 
আমতা আমতা করে বলি ওই বিনোদ এসেছে ।
জানি । আমি কালা নই । আমি থাকতে তুমি লোক এলে কোনদিন চা করেছ যে আজ করছ ?
আস্তে শুনতে পাবে । 
এক গাল হেঁসে গিন্নী বিনোদকে বসাতে ড্রয়িং রুমে গেলেন। তারপর ওর কুশল কামনা করে সুরূপার কথা জিগ্যেস করেন।
বিনোদ যেন চুপসে গেল ওই কথা শুনে। বলল অ্যান্টি ও বাপের বাড়ি গিয়েছে কিছু দিন পরে আসবে। আমি চাবিটা নিতে এসেছি ।  
ও তা বেশ । এই বলে চা করতে উঠছিলেন কিন্তু বাধা দিয়ে বিনোদ বলে অ্যান্টি আমি চা খাইনা । এখন অফিসে যেতে হবে । আজ ই ফিরলাম বাড়ি থেকে। চাবিটা দিন আমার রাত হবে তাই চাবিটা সঙ্গে রাখি । আমি উঠি কেমন। গিন্নী বাধা দিলেন না।
আমরা দুজনে বিনোদের দিকে তাকালাম । মনে হচ্ছিল ও একটা কিছু লুকচ্ছে এবং কিছু চিন্তায় মন ভারাক্রান্ত । কারন ও বেশ অন্যমনস্ক মনে হচ্ছিল।
রাতে সুরূপার কাছথেকে ফোন এলো ।
 হ্যালো অ্যান্টি আমি সুরূপা বলছি । বিনোদ পৌঁছেছে ?
হ্যাঁ মা ও এসে আমার কাছথেকে চাবি নিয়ে গিয়েছে।
ও ঠিক আছে। অ্যান্টি ওর সঙ্গে কি কেউ ছিল ?
না কেউ ছিলনা । কেন বলত মা !  
না কিছু না। আপনারা ভালো থাকবেন । আমি আপনাদের বিরক্ত করলাম ।
না না সেকি মা । কবে আসবে তুমি ?
বলতে পারছিনা । তবে একটু দেরি হতে পারে ।
ও আচ্ছা ।
ফোনটা রেখে গিন্নী আমায় বলেন কিছু  বুঝলে?” 
না কিছু বুঝিনি ।
ডাল মে কুছ কালা হ্যায় ।
 মানে কালি ডাল ! সে কি ? সেত অনেক দিন আগে ‘শোলে’ ফিল্মে ছিল ।
নিকুছি করেছে তোমার শোলে ফিল্ম । যা বলছি তাই শোন ।
বল ।
গিন্নী তুমি কি ‘গোয়েন্দা গিন্নী’  দেখে ইন্সপায়ার্ড হচ্ছ । এরকম সন্দেহ হচ্ছে কেন তোমার ওই নিরপরাধ প্রাণি দুটির ওপর। ওরা কি করেছে ?
আমার ভালো ঠেকছে না বাপু । কিছু একটা হয়েছে দুজনের মধ্যে । এখন হুট করে বাড়ি ছাড়লে আবার ভাড়াটে কোথায় পাবো ?
হ্যাঁ তা ঠিক  তবে ওদের স্বমী স্ত্রী র মধ্যে কি হল তাতে আমাদের কি? 
তবে কি করতে হবে ?
ছেলে কে ফোন করতে হবে । ও বিনোদের বিষয় ঠিক খোঁজ নিয়ে বার করবে । ওর অনেক বন্ধু  বান্ধব আছে বিনোদের কোম্পানিতে । দেখি আজ রাত্তিরে ফোন করে ও কি বলে।
যেমন বলা তেমন কাজ গিন্নীর । রাত ১১.৩০ এ ঠিক ফোন করতে যাবে ওমনি ফোনটা বেজে ওঠে ।
হ্যালো মা , আমি বাবাই বলছি । কেমন আছ তোমরা ?
ভালো । তুই কেমন আছিস বাবা ?  
ভালো ।
শোন বাবা ওই বিনোদ বলে যে ছেলেটি আছে না তার বিষয় একটু জানার ছিল ।
 আমি ওই ব্যাপারেই তোমাদের ফোন করছি । বিনোদ কোম্পানি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করতে পারে । আমার বন্ধু সার্থক বলছিল ।  ওর বৌ ত ওকে ডিভোর্স করবে বলে শুনলাম । তোমরা কিছু জানতেনা ওই মেয়েটার বন্ধু শালিনী বিনোদের প্রোজেক্ট এ আছে । ও বিনোদের বৌকে সব বলে দিয়েছে। তাই বিনোদ খুব আপ সেট । এমনিতে বিনোদ ছেলেটা খুব ভালো । ও ভালো স্টুডেন্ট ছিল।  ও নাকি ওর দাদার ছেলেকে পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলে পড়াচ্ছে । ওর দাদা বৌদি গত হয়েছেন অনেক দিন এক রোড এক্সিডেন্টে । তাই বিনোদ ছেলেটির সব দায়িত্ব নিয়ে ওকে মানুষ করছে । সুরূপা বিনোদের মধ্যে এই নিয়ে খুব অশান্তি । সুরূপার সন্দেহ ওটা বিনোদের আগের পক্ষের বৌ এর ছেলে । সুরূপার সন্দেহ  বিনোদ এই কথা গোপন করে সুরূপাকে ঠকিয়েছে ।  বোঝ ঠ্যালা । মেয়েদের মন সর্বদা সন্দেহে থাকে বিশেষ করে আই টি প্রফেশনে ছেলেদের ওপর  । বিনোদ এই বিষয় সুরূপাকে আগে  কিছু বলে নি অশান্তির ভয়ে। আমাকে সার্থক সব বলেছে । বিনোদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট সার্চ করে সুরূপা টেরপায় ,বিনোদ প্রায় প্রত্যেক  মাসে পুরুলিয়া স্টেট ব্যাঙ্কে এক বিশেষ একাউন্টে টাকা পাঠায় ওর ভাইয়ের ছেলের জন্য । বিনোদ ওর ফ্যামিলির প্রতি সব কর্তব্য করে। ভাইয়ের ছেলেকে কে দেখবে ও না দেখলে ! এতে অন্যায় কোথায় মা ?       আমি যা জানি শালিনী বিনোদ কে বিয়ে করতে চেয়েছিল । বিনোদ পাত্তা দেয়নি । তাই শালিনীর বিনোদের প্রতি এই প্রতিশোধ । শালিনী বিনোদের ভাইয়ের ছেলের কথা প্রথম থেকেই  জানতো ।  বিনোদ কে জিগ্যেস কর ও কি একলা থাকবে না সুরূপা আসবে । যদি আসে কবে ?  
       সে কি তা শালিনী কেমন মেয়ে রে ! এরকম লাগানে জোটানে মেয়ে সাংঘাতিক !   ভাইয়ের  ছেলে যদি সত্যি  হয় তবে সেটা অন্যায় নয়। তা ছাড়া আমি দেখেছি বিনোদ সুরূপাকে ভালোই রেখেছে। ও শপিং মলে গেলেই খুব দামি দামি জিনিষ কিনে দেয় । মেয়েটার সর্বদা খাই খাই ভাব ।  বিনোদ মানা করেনা কোন কিছুতেই। বেচারা মেশিনের মতন টাকা  রোজগার করে । ওর মেয়েটিকেও ভালো স্কুলে পড়াচ্ছে । মডার্ন হাই তে । খরচ ত আছে । কোন অভাব ই ত রাখেনি ছেলেটা ।  কি জানি বাপু আজকাল মেয়েদের কি সব হয় বুঝিনা  । তা আমরা কি করব বল। 
আচ্ছা। যদি বলে আসতে দেরি হবে !  
 আমি যাচ্ছি  পরের সপ্তাহে । আমি সব ঠিক ঠাক করে দেব ।
সকালে মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছি । পরনে ট্র্যাক স্যুট আর ট্র্যাক সু । মাথায় মাফলার । আমার বন্ধুর সঙ্গে অদিতি মুন্সির কীর্তন গানের কথা হচ্ছিল। অদিতি মুন্সির গান শুনতে সারা বিশ্বের কীর্তন প্রেমীরা অধীর আগ্রহে বসে থাকেন টিভির সামনে। আমি ওর গান গুলি ভিডিও রেকর্ডিং করে আমার স্মার্ট ফোনে রেখেছি । লং ড্রাইভে গেলে ওই গান পথের ক্লান্তি দূর করে আর মনে দেয় অপার আনন্দ । ওর মধ্যে এক ঐশ্বরিক শক্তি আছে যা মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে । বাপি লাহিড়ী বলেই দিয়েছেন ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল । ও আর দুর্নিবার এক বিরল প্রতিভার অধিকারী । প্রথম দিন থেকেই অদিতি মাতিয়ে রেখেছে সকলকে । কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে-গেলাম আমার মর্নিং ওয়াকের বন্ধু শুভদিপকে । আমরা এক ই বয়েসি । তাই বন্ধুত্ব ।
ঘরে ফিরে দেখি বাবাই এসে গিয়েছে । মা ব্যাটাতে অনেক দিনের ব্যবধানে অফুরন্ত জমে থাকা  গল্প চলেছে চা জলখাবার খেতে খেতে। ছুটলাম দিশি মুর্গী আনতে । বাবাই ওটাই পছন্দ করে ।  কালা মিয়াঁর দোকানে বেশ ভিড় । ও আমাকে দেখেই বুঝেছে আমার মনের কথা । আহা ঈশ্বর কালা মিয়াঁকে পাঠিয়েছেন চপার হাতে আমাদের মতন মুর্গী রসিকদের রসনা তৃপ্ত করতে । বলা বাহুল্য কালো মোরগ এর টেস্ট ই আলাদা । পালক সমেত এক কিলো তিনশো গ্রাম মানে ড্রেসিং এর পর দাঁড়াবে কাঁটায় কাঁটায় এক কিলো । পারফেক্ট । চলে এলেম দাদা ঠাকুরের গানটা মনে করে ,“আমি মুর্গী হাটায় চুপ করে জাই কিনতে রাম পাখি...পথে দেখি সারি সারি ষ্টেশনারী আসল জিনিস ফাঁকি .....”  
ঘরে ফিরে দেখি বিনোদ আমাদের বাড়িতে বাবাইয়ের সঙ্গে কিছু একটা সিরিয়াস টপিক নিয়ে আলোচনারত । বাবাই এসে গিয়েছে আমি আর ওসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিনা। হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা গিন্নীর হাতে দিয়ে হাত ধুতে যাচ্ছি ....  গিন্নী বলেন রসুন পিঁয়াজ আননি কেন ?
আমি বলি বাটার চিকেন করে-দাওনা । ওটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো ।
বাটার চিকেন কি বিনা বাটারে হবে ?
আঃ কি হচ্ছে মা ! আমি এনে দেব এখন বাবাই বলে।
আমি নিশ্চিন্ত হয়ে সিনিয়ার সিটিজেন ক্লাবে চলে যাই এক হাত তাস খেলতে। এখন দু ঘন্টার জন্য নিশ্চিন্ত ।
ঘরে ফিরলাম দেড়টার সময়। বাবাই বিনোদ কে লাঞ্চে ডেকেছে । ভালোই করেছে । ওদের দেখলে দু ভাই মনে হয় । বাবাই , ‘আরসালানARSALAN’ এর বিরিয়ানি সঙ্গে মটন কিমা আর সেন মহাশয়েরসন্দেশ  এনেছে। অনেক দিন পর ভুরি ভোজ হবে ।  
আমার পাতে দেখলাম দুটো তাওয়া রুটি ভেজি-টেবিল সুপ আর চার পিস বাটার চিকেন । মিষ্টি খাওয়া বারণ মাংস ত একদম ই নয় । বাবাই বিনোদ সুস্বাদু খাওয়াতে মত্ত । আমি মনে মনে মাগো আনন্দময়ী নিরানন্দ করনা গানটা গেয়ে লাঞ্চ সেরে উঠে পড়লাম। ওদের দিকে তাকিয়ে হাঁসি মুখে বলি আমি এবার উঠি তোমরা খাও বাবা ।
বিনোদ বলে সেকি আঙ্কল আপনি ত কিছুই খেলেন না ।
না মানে আমার শরীর ত  ভালো নেই । সুগার হাই আবার হাইপার টেনশন তাই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ডায়েট কন্ট্রোল । বুঝতেই পাচ্ছ । তুমি নিশ্চিন্তে খাও । আমি উঠি কেমন।
দুপুরে বাবাই মাকে বলল মা ঘাবড়ানোর কিছু নেই । বিনোদ অন সাইটে যাচ্ছেনা শুনলাম। ও  কোম্পানিও পালটাচ্ছেনা  । ও সব গুজব। ওদের মধ্যে একটু মন মালিন্য হয়েছে । সেটা বিনোদ ভাং-লোনা । ও ঠিক হয়ে যাবে । ঘর ছাড়ছেনা কারন ও রাজার হাটে একটা ফ্ল্যাট বুক করেছে তার ই এম আই চলছে । সেটা না শোধ হওয়া পর্যন্ত আমাদের ফ্ল্যাটেই থাকবে। ও সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার এ প্রমোশন পাচ্ছে। ভালোই মাইনে । তোমরা কিছু চিন্তা করনা। আমি আজকের ফ্লাইটেই ফিরে যাবো বিকেলে ৫.৩০ তে।  
এদিকে সুরূপার বাবা পুরুলিয়াতে গিয়ে বিনোদের ভাইপো বিজয় পাণ্ডের সব ডিটেলস জোগাড়  করেন সৈনিক স্কুলের এক কেরানীকে হাত করে। ওনারা নিশ্চিন্ত হন এই ব্যাপারে যে ওই ছেলেটি সত্যি সত্যি বিনোদের ভাইপো । ওর বাবার নাম প্রমোদ পাণ্ডে মা সঙ্গীতা পাণ্ডে । ওনাদের সত্যি সত্যি রোড এক্সিডেন্টে ই মৃত্যু হয়। বিনোদ ই এখন বিজয় এর  বাবা মা অভিভাবক সব । সুরূপার বাবা  সিদ্ধান্ত নেন সুরূপাকে নিজে বিনোদের কাছে পৌঁছে দেবেন।
আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম যেদিন কিনা সুরূপার বাবা আসবেন। এই সুবাদে ওনার সঙ্গে আলাপ হয়ে যাবে।  
সকাল সকাল একটা ‘ওলা OLA’ ট্যাক্সি এসে হাজির । ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে এক প্রবীণ ভদ্রলোক সঙ্গে  সুরূপা । আমি মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরেই দেখি ওদের । সুরূপা আমায় দেখে হাঁসি মুখে আলাপ করিয়ে দেয় ওর বাবার সঙ্গে । কর মর্দন করে দুজনে দুজনকে উইশ করি । আমি ওনাকে চায়ের  নিমন্ত্রণ করি বিকেলে । ভদ্রলোক বলেন আজ ই উনি ফিরে যাচ্ছেন তাই পরে অন্য কোন দিন আসবেন।
ভুল বোঝা বুঝি বিবাহিত জীবনে একটু আধটু সবার ই হয় সেটাকে নিজেদের মধ্যে সমাধান করাটাই বাঞ্ছনীয় । এখন বিনোদ সুরূপা সুখী দম্পতী । আমি খুব খুশী ওদের দেখে। সুরূপা বিনোদের কাছে ক্ষমা চায় তার অহেতুক সন্দেহর জন্য । বিনোদ সাদা মাটা ছেলে ও হাঁসি মুখে সব ভুলে যায় । আমি চাই ওরা সুখে স্বচ্ছন্দে সংসার ধর্ম পালন করে আনন্দে থাকুক ।   
     

  

Monday, December 7, 2015

কোণার্ক নাট্য উৎসব ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৪.১২.২০১৫













       কোণার্ক নাট্য উৎসব 
           ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ০৪.১২.২০১৫

জুলাই ২০১৫ ঋতবাক এর বর্ষপূর্তি সংখ্যায় , সংস্কৃতির উৎস সন্ধানে শিরোনামে “কোণার্ক” এর বিষয় আমার লেখা একটা নিবন্ধ প্রকাশ পেয়েছিল । সেই লেখাটিতে কোণার্ক এর বিশেষ কার্যক্রম “কোণার্ক নৃত্য উৎসবের” বিষয় সূচনা ছিল। প্রত্যেক বছরের মত এই বছর ডিসেম্বর মাসে ‘কোণার্ক’ উৎসব মুখরিত । সারা ভারতবর্ষের কলাপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। গত ১লা ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে “কোণার্ক নৃত্য উৎসবের” আয়োজন হয়েছে যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন নৃত্যাঙ্গনা এবং সঙ্গীত শিল্পীরা একত্রিত হয়েছেন এই বিশেষ কার্যক্রমটি সফল করতে । এখানে বলে রাখি কোণার্ক এর মুক্তাঙ্গনে এই বিশেষ কার্যক্রম সুসম্পন্ন হয় ফ্লাড লাইটের আলোর রোশনিতে। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা । আমার কিছু অভিজ্ঞতার চিত্র এই লেখার মাধ্যমে বর্ণনা করতে চেষ্টা করলাম। কোণার্কের হোটেল , রেস্তরাঁ সব উপচে উঠছে লোক স্রোতে । আমাদের কোণার্কের পান্থনিবাসে রিসারভেসন ছিল দুদিনের জন্য । 
আজ কোণার্কের তৃতীয় সন্ধ্যায় আলোর রোশনাইতে কোণার্ক উৎসব মুখর। গুরু গম্ভীর মৃদঙ্গ র তালে নর্তক নর্তকীদের নৃত্য পরিবেশন যেন স্বর্গের ইন্দ্রপুরী । সে এক মনোরম অনুভূতি । 
প্রথম দিবস ১লা ডিসেম্বর ২০১৫ মঙ্গলবার ঃ- উড়িষ্যার পর্যটন বিভাগ এবং সঙ্গীত নাটক একাডেমীর মিলিত উদ্যমে এই উৎসবের আয়োজন । ওড়শী ও মনিপুরী নৃত্যের ঝংকারে মুখরিত হল অর্কক্ষেত্র । অনেক বিদেশী পর্যটক এসেছিলেন সেদিন । প্রথম দিনের সুরু হয় ঋষি বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দেমাতরম্’ , ‘যুগ্মদ্বন্দ পল্লবী’ আদি-গুরু শঙ্করাচার্যর রচনা থেকে ‘অর্ধনারীশ্বর’ এবং পরে সন্থ কবীরের দোহা ও গুরুবাণী র আধারে পরিবেষণ করেছিলেন নৃত্যাঙ্গণারা । ওড়শী নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও রতিকান্ত মহাপাত্র র ছাত্রীরা যথাক্রমে রাজশ্রী , মনস্বিতা , সিপ্রা , ঐশ্বর্য্যা , প্রীতিশি , প্রিয়াঙ্কা , প্রজ্ঞা ও পারমিতা নৃত্য পরিবেষণ করেন । 
দ্বিতীয় পর্যায়ে জহরলাল নেহেরু ড্যান্স একাডেমী , মণিপুর থেকে আসা নৃত্য শিল্পীরা মনিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন। এতে তাঁরা লাল হরওবা , ঢোল ঢোলক ঢোলম , তনুম ডেরেনা ও পুঙ্গ চোলম
। মণিপুর দলের মুখ্য অজিত সিং সমেত ৯ জন নৃত্য শিল্পী এবং ৮ জন সঙ্গীত শিল্পী মনিপুরী নৃত্য পরিবেষণ করেন। 
আরেকটা আকর্ষণ ছিল সেটা হল বিখ্যাত বালুকা শিল্পী পদ্মভূষণ সুদর্শন পট্টনায়কের চন্দ্রভাগার কূলে বালুকা কলা প্রদর্শন । আমরা ভাগ্যবান এই প্রখ্যাত শিল্পীদের কলা দেখার সুযোগ পাই। 
দ্বিতীয় দিন ২রা ডিসেম্বর ২০১৫ , বুধবার ঃ- 
দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় ভক্তি রসাত্মক আসামের সত্রিয়া একাডেমীর নৃত্য পরিবেষণ হয় বৈষ্ণব ভাবে সমর্পিত । রঙ্গমঞ্চের পরিবেশকে আধ্যাত্মিক ভাবাবেগে সকল দর্শককে মুগ্ধ করেছিল। আসামের গুরু যতীন গোস্বামীর নির্দেশনায় সত্রিয়া নৃত্য পরিবেষণ করেন আসামের নৃত্যাঙ্গনারা । শেষে শ্রীমদ ভগবৎ গীতায় বর্ণিত নবধা ভক্তি কলাপ্রেমির মনে আধ্যাত্মিক ভাবাবেগের উদ্রেক করে । সক্রিয়া নৃত্য শিল্পী সুপ্রিয়া গোস্বামী , সিম্ফি সোনাওাল , অরুণিমা গোগই , ডঃ লিমা দাস ও প্রভাকর গোস্বামী । কবি তালুকদার ও ক্ষীরোদ বোরা কণ্ঠদান করেছিলেন। 
এরপর এহমদাবাদের ওড়শী নৃত্যাঙ্গনারা পল্লবী ও গুজরাটের সন্থ নরসিংহ মেহেট্টার রচনা থেকে মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় রচনা “বৈষ্ণব জন তো ...” নৃত্যাভিনয় ভক্তিরসে রসা-প্লুত করেছিল। নৃত্যশিল্পী সত্যপ্রিয়া , হিরনা , অর্পিতা , সুরচিতা ইত্যাদি শিল্পীরা সুন্দর নৃত্য পরিবেষণ করেন। 
তৃতীয় দিন ৩রা ডিসেম্বর ২০১৫ , বৃহস্পতিবার ঃ- 
তৃতীয় দিনের সন্ধ্যায় মুখ্য আকর্ষণ ওড়শী ও কুঞ্চিপুড়ি নৃত্যের যাদু । ওড়শী নৃত্য মহাভারতের কথাবস্তু থেকে আধারিত বৃহন্যলা পরিবেষণ করা হয়। দেবরাজ ইন্দ্র কে ফাল্গুনির দিব্যাস্ত্র প্রদানের জন্য প্রার্থনা সুরু করে বিরাটের রাজ্যে পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময় থেকে কীচক বধ পর্যন্ত কথা বস্তুকে আধার করে এক জীবন্ত প্রতিবেদন যা সত্যি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গুরু বৈজয়ন্তী কাশি ও সাথী কলাকাররা পরিবেষণ করেন “কন্যাকুমারী ও রানী রুদ্রাম্মা দেবী । 
৫ ডিসেম্বর ২০১৫ অবধি এই নাট্য উৎসব চলবে । 
এই উৎসবে প্রায় ৩ লক্ষ্য দর্শক বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন। প্রচুর বিদেশী পর্যটক আসেন এই উৎসব দেখতে ।