আবিষ্কারের নেশা
ত্রিভুবনজিৎ
মুখার্জী / মহা শিবরাত্রি / ২৭.০২.২০১৪ /রাত ০৮.২৯ মি ।
শালিনীর থিসিসটা
“এপ্লিকেশন অফ ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা ন্যানো
ফিজিক্সের বিষয় । বিষয়টা একেবারে
নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা যোগ করতে চায়। শালিনীর
প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন । নতুন বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই
ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী । আজ বাবা বেঁচে থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের
জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের জন্য ।
কলেজ থেকে ফিরতে দেরি হচ্ছে । আজকে
শুক্রবার । প্রায় এরকম হয় বিশেষ করে
শুক্রবার । বাসে লোকে বাদুড় ঝোলার
মতন অফিস ,স্কুল - কলেজ থেকে বাড়ি ফেরে। কি অবস্থা কোলকাতার ! লোকগুলো প্রাণ হাতে নিয়ে
যাওয়া আসা করে ।
শালিনী কি করে বাড়ি ফিরবে ? উল্টো-ডাঙ্গায় বাসের
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। লোকের ভিড়ে ভিড় । বাসের চেয়ে লোকের সংখ্যা ক্রমশ বেশি হচ্ছে
। ও এরকম বাদুড় ঝোলার মতন বাসে উঠতে পারবে না । খুব চিন্তায় ছিল। অটো এই রুটে বেশি জায় না
আজকাল । তবুও অটোর ভরসায় দাঁড়িয়ে রইল ।
হঠাৎ ‘অয়ন’
এসে ‘শালিনীর’ কাছে
দাঁড়াল ।
অয়ন ঃ
“ কি ব্যাপার ? বাড়ি
ফিরবে কি করে ? বাসের অবস্থা দেখছ !”
শালিনী ঃ
“তুমি কোন দিকে যাবে?”
আমি ‘বাঙ্গুর’
, তুমি ?
আমি ‘তেঘোরিয়া!’
বাসের আজ খুব বাজে অবস্থা । কেষ্টপুরে এতো
রাস্তা জ্যাম থাকে , কি করে যাবে ?
যেতে ত হবেই ।
চল অটো আসছে উঠে পড়ি । দেরি করনা ।
কিন্তু কিন্তু করে অটোতে উঠলো শালিনী ...।
পার্সের অবস্থা খুব একটা ভালোনা ... দুটো কুড়ি
টাকার নোট আছে । তবুও অন্য উপায়
নেই দেখে উঠে পডে । বাড়ি পৌঁছতে সেই সাতটা
সোয়া সাতটা ত হবেই । গিয়ে স্নান সেরে
কালকের ক্লাসের জন্য প্রিপারেসন । হ্যাঁ , শালিনী ‘ফিজিক্স’ পড়ায় ‘স্কটিশে’ । ও ,
পি.এচ.ডির পর ভাবা এটমিক রিসার্চ সেন্টার (BARC) এবং ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্স , ভুবনেশ্বরে
এক সঙ্গে দু জায়গায় সাইন্টিস্টের জব পায় ,
কিন্তু কোলকাতা ছাডবেনা শালিনী ! তাই স্কটিশে অধ্যাপিকার অফারটা
আপাততঃ একসেপ্ট করল।
অয়ন , শালিনীর
ক্লাস মেট । ও এম.টেকের পর আই আই এম , কোলকাতা
(জোকা) থেকে এম বি এ করে একটা মাল্টি
ন্যাশনাল ফার্মে আছে । মাঝে মাঝে দ্যাখা
হয় শালিনীর সঙ্গে ব্যাস আর কিছু না ।
কোম্পানির থেকে এই জন্য বলে গাডী কিনতে ।
আমি গাড়ীর লোণ নিতে কুণ্ঠা বোধ করছি কারন এই জব ছেডে দেব শিগগিরি । নতুন চাকরী ..ওই লোণের ঝামেলায় পড়তে চাই না
..... কথাগুলো একসঙ্গে বলে অটোয় উঠে পডে অয়ন ।
শালিনী ও উঠে পডে ওর পেছনে । রাস্তা ঘাটে
একটা পুরুষের প্রয়োজন সঙ্গে থাকা ...তাই বিনা দ্বিধায় উঠে পডে শালিনী ।
অয়ন বাঙ্গুরে নেবে জায় । বাগুইহাটির কাছে
আবার জ্যাম ..... তখন ৭টা বেজে গিয়েছে । আর একটুখানি রাস্তা ... দুর নিজের গাডী
থাকলে এসবের ঝামেলা থাকেনা । কিন্তু কোলকাতার রাস্তায় ড্রাইভিং ...! রক্ষে কর !
কথাটা ভাবতেই একটা গোলমালের আওয়াজ পেল ।
রে রে করে এক অটো চালক এক ভদ্রলোক এর সঙ্গে
বচসা । রাস্তার লোকগুলো বোবার মতন
হেঁটে পার হচ্ছে । জেন কিছুই হয় নি ! নির্বিকার !! আসলে কোলকাতায় থাকলে চোখ কান
মুখ সব বন্ধ রাখা দরকার । কথাগুলো কানে এল
; ৮
টাকা ভাডা ১০০ টাকা দিলে আমি কি টাকার গাছ
রেখেছি ? কত খুচরো নিয়ে ঘুরবো । শালা সকাল থেকে মাল
পডে নি পেটে ।
লোকটিও ছাড়ার পাত্র নয় তিনিও বলছেন , আমরাই বা খুচরো পাই কোথা থেকে ? একশো টাকা বার করলেই শেষ
। ভদ্রলোক লোকাল বোধ হয় নাহলে এতো সাহস হবে না !সমানে বচসা চালিয়েছেন।
আপনার কাছে ভাঙ্গানি আছে দাদা ?
কত ?
২০ টাকা !
হয়েযাবে দিদি। আপনি কোথায় নাববেন ?
লোকনাথ বাবার মন্দিরের কাছে ।
ওখান অবধি ২০ টাকাই ভাডা ।
শালিনী র যেন গা থেকে জ্বর নাবলো ।
প্রত্যেক দিন অটো আর প্যাসেঞ্জারের মারপিট রক্তা রক্তি কাগজে দেখে ওর রাস্তা ঘাটে
ভয় করে । কাল খুচরো সঙ্গে রাখবে । বাসের ওপর ভরসা
নেই । বাস মালিকেরা স্ট্রাইক এর ডাক দিয়েছিল । ডিসেলের যা দাম বেড়েছে !
ওদের ই বা দোষ কি ? তবে ভাড়া বাড়েনি রক্ষা ।
ঘরে পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় তারপর সোজা বাথরুমে ঢুকে পডে । শাওয়ার খুলে স্নান । আঃ ! রোজ রোজ
এই বিচ্ছিরি জার্নি যেন পোষায় না । এর একটা বিহিত করতে হবে । এ মাসে মাইনে পেলে
একটা লোণ করবে ... কারের লোণ । বাজেটের পর কারের দাম কমেছে । দেখি ব্যাঙ্ক
ম্যানেজার কি বলেন ? শালিনীর জামাই বাবু সল্ট লেক স্টেট ব্যাঙ্কের ম্যানেজার । উনি যদি
কিছু আডভাইস করেন ত । ওর পে সার্টিফিকেট এর জন্য কাল এপ্লাই করবে প্রিন্সিপাল কে ।
হয়ে যাবে বোধ হয় । তবে ও তো ইউ জি সি স্কেল পায় নি এখন। এদিকে ৭ম পে কমিশন বসে
গিয়েছে । সত্যি গরিব মানুষ গুলো কি খাবে এর পর ? হু
হু করে যা দাম বাড়বে ইলেকশনের পর .. কি দেশের অবস্থা .. কেউ বোঝার নেই ! আশ্চর্য !!
মা চা নিয়ে হাজির ।
তুমি কেন আনলে মা ? আমি
নিজে করে নিতাম ।
থাক মা । আর ও টুকু করতে হবে না । স্বশুর
বাড়ী গিয়ে কর । এখন তোমার মা বেঁচে আছে ।
সন্ধ্যে বেলায় বাজে কথা বোলোনা মা ! তুমি
কি করে জানলে আমি , তোমার ওই শ্বশুর বাড়িতে যাবো বলে?
আমার নয়.. তোমার মা , সবাই যায় । তুমিও যাবে ।
আর
যদি আমি না যাই । আমি যদি তোমার কাছে থাকি । আপত্তি আছে ?
আদিখ্যেতা দেখো মেয়ের ! হ্যাঁ আছে মা । সব
দিন তো আমি বেঁচে থাকবো না !
তোর সঙ্গে ওই ‘অয়ন’
বলে ছেলেটা পড়তো না ! কেমন দেখতেরে ওকে ? নিয়ে
আয় না এক দিন ।
কেন বলত ? আমি
ডাকলেই ও আসবে কি করে বুঝলে ? ওর সঙ্গে আর দেখা হয় না
আমার । আমাকে ও সব বলবে না । আমার এখন কিছুই হলনা
... তোমাদের মেয়েকে বাডী থেকে বিদেই না করলে ভাত হজম হয় না ?
ও মা সে কি কথা ?
আমি তাই বলেছি নাকি ? এই যে বললি অয়ন তোর সঙ্গে এক ই অটোতে এলো বলে !
তাতে কি হয়েছে ? অটোতে
এলো বলে ওমনি তাকে বাড়িতে ডাকতে হবে ?
তুমি যে কি না মা ! আশ্চর্য ! তোমরা পারো বটে !!
ঠিক আছে , আমি
তোর মামাকে বোলব একটা বিঙ্গাপন দিতে আনন্দ বাজার
পত্রিকাতে, “পাত্র পাত্রী কলমে”।
কিসের ?
চা টা খেয়ে নে মা । জুড়িয়ে যাচ্ছে যে।
তোর বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে কি এসব চিন্তা
করতে হত রে মা ? সব ই গোবিন্দের ইচ্ছা ।
দেখ মা আমাকে ওই বিয়ে ফিয়ের ব্যাপারে
বিরক্ত করলে আমি কিন্তু বাইরে চাকরি নিয়ে চলে যাবো ।
তবে কি সারা জীবন আইবুডো মেয়ে বসে থাকবে ?
ওই সব গেঁও কথা শুনতে আমার একদম ভাল লাগেনা
। কলেজ থেকে ফিরেছি আমাকে একটু রেষ্ট নিতে দাও । তোমার ওই এক ঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান
আমাকে এই ঘর ছাড়তে বাধ্য করবে। আমাকে পরে দোষ দিওনা ! কথাটা বলে গট গট করে চায়ের
কাপ হাতে নিজের ঘরে চলে গেল শালিনী ।
শালিনীর মা হতবাক হয়ে মেয়ের কথা শুনছিলেন ।
মনে মনে ভাবলেন আজকালকার মেয়েরা দুটো লেখা পড়া শিখে নিজেদের কি মনে করে ? আমি হলাম
গেঁও ! কথায় বলে,“সোমত্ত মেয়ে ঘরে থাকলে মায়ের গলায় মাছের কাঁটার মতন আটকে থাকে ।
না পারবে গিলতে না পারবে ফেলতে ।” আমার
হয়েছে যতো জ্বালা !! এইবলে রান্না ঘরে চলে জান ।
শালিনী র মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো ।
হ্যালো । কে বলছেন ?
অয়ন । একটা সুখবর আছে । আমি গাড়ী কিনছি ।
তাই ! কংগ্রাচুলেসন । কি গাড়ী ?
ভক্স ওয়াগন এর এর ‘পোলো’ মডেলটা আমার প্রিয় ওটাই কিনছি । কোম্পানী
৪% ইন্টারেস্টে লোন দিচ্ছে । বাবা বললেন ,“কিনে নাও । এখন যা কোলকাতার রাস্তার
অবস্থা , রাস্তার ধুলো আর পলিউসন থেকে রক্ষ্যা পাবে । পরে
ফ্লাই ওভার হয়েগেলে গাড়ী চালাতে অসুবিধে হবে না ।” ড্রাইভিং টা জানি তবে আরেকটু হাথ পাকাতে হবে
।
হুম । ঠিক বলেছেন তোমার বাবা । কবে
খাওয়াচ্ছো ?
যদি বল কাল ।
কাল আমার একটা ক্লাস আছে । ঠিক আছে বোলব ।
বাই ।
শালিনী খুব একটা সায় দেয় না অয়ন কে ।
শালিনী অয়ন দুজনেই পড়া শুনয় ভাল ছিল। শালিনী র ফিজিক্স ভাল লাগতো তাই অনার্স নিয়ে
পড়ে । পরে এম এস সি , পি এচ ডি । এখন ও ডক্টর শালিনী সান্যাল ।
অয়ন প্রথম থেকেই আই আই টি র জন্য নিজেকে
প্রস্তুত করে। বি টেক এর পর ক্যাট দিয়ে জোকা তেই এম বি এ করে মার্কেটিং এ ।
ফেলোশিপ করতে পারতো কিন্তু ভালো চাকরির অফার পেয়ে কাজে জএন করে ম্যানেজমেন্ট
ট্রেনি হিসেবে । পরে মার্কেটিং ম্যানেজার হয়ে কোলকাতায় পোস্টিং পায় একটা মাল্টি
ন্যাশনাল কোম্পানিতে । পে প্যাকেজ ভালো তা ছাডা কোম্পানির ফ্যাসিলিটি অনেক ।
শালিনী কোম্পানি জব একদম পছন্দ করে না ।
বলে গলায় লেংটি(টাই) বেঁধে কোম্পানির দালালি যা মার্কেটিং তাই । যতই মাইনে পাগ না
টিচিং জব শ্রেষ্ঠ । ওতে নিজের সাবজেক্টের
সম্পর্কে ছাত্র/ছাত্রী দের আকৃষ্ট করা তাদের ভালো করে বিষয়টা বোঝান ।
রিসার্চ করা । এ সব সমাজ সেবার কাজ । ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ আছে মার্কেটিং এ আছে ?
আয়ন খুব ভাল ছেলে জানি কিন্তু ও কি করল ? নিজের মাথাটা কোম্পানিকে বিক্রি করে দিল!
ভাল সেলস দেখালে উন্নতি নাহলে ...! এরা
টাকা ছাডা জীবনে আর কিছুর মূল্য দেয়না । খুব মেটেরিয়ালিসটিক হয়ে যায় । খুব একটা
শান্তিতে থাকে না। কাজের প্রেসারে খিট খিটে হয়ে যায় । অকাল
বৃধ্য হয়ে চুল উঠে টাক পড়ে জায় । ম্যাগো
টাকটা শালিনী একদম পছন্দ করে না।
নিজেই নিজের মনে কথাগুলো ভাবতে থাকে , কিন্তু একি তারতো এ সব ভাবার দরকার
নেই । মাথাটা ঝাঁকিয়ে নোট টা প্রিপায়ার করছিল বি এস সি পার্ট ওয়ানের
থার্মোডাইনামিক্সের ক্লাসের জন্য ।
শালিনীর ক্লাস শেষ না হতেই অয়নের ফোন । অনিচ্ছা
সত্যে কল রিসিভ করে “হ্যালো” বলল ।
আসছ ত !
কোথায় ?
পার্ক হোটেলে ।
ও বাবা আমি ওসব জায়গায় জাইনা । আমি ফুচকা
খেতে ভালো বাসি গল্প করতে করতে ।
কি ফুচকা ? তুমি কি বাচ্চা ?
হ্যাঁ । তুমি চলে এস আজ আমি খাওয়াচ্ছি
তোমায় । দেখবে কিরকম টেস্ট ।
সরি ম্যাডাম আমি রাস্তার জিনিষ খাই না ।
ওতে হেপাটাইটিস হয় । তোমার টেস্ট টা সেই
স্কুল পডুয়া মেয়েদের মতন । একটু মড হও । ডক্টরেট করেও ...।
না না আমি মড কোনদিন হতে পারবো না আয়ন। আমি
আমিতে থাকতে চাই।
তবে তোমার সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি ঠিক মিলবে
না ।
আমিত মেলাতে চাইনা । তুমি কল করেছিলে আমি
করি নি । আর কেমিস্ট্রি র কথা আসছে কোথা থেকে ? আমরা শুধু বন্ধু তাই নয় কি ?
অয়ন অপমানিত মনে করল নিজেকে। ছিঃ
একটা অর্ডিনারি শিক্ষিকা সে কিনা এতো
ডাঁটের কথা বলে ! আর না । ওকে বাই এজ ইউ লাইক । বলে ফোন কেটে দিল।
শালিনী ওটাই চাইছিল। ও এক দম ওই হোটেলে বসে
হ্যা হ্যা করে শস্তা মেয়েদের মত কারুর ঘাডে খাওয়া পছন্দ করে না। নিজের ঘর আর কলেজ
ছাডা কোথাউ কারুর সঙ্গে যায়নি । প্রফেসাররা তাই ওকে খুব স্নেহ করতেন
ইউনিভার্সিটিতে ।
এদিকে মা , মামাকে দিয়ে এক বিঙ্গাপণ
দিয়েছেন । হঠাৎ রবিবারের আনন্দ বাজার পত্রিকায় পাত্র পাত্রী বিঙ্গাপনের পেজটাতে
লাল কালি দিয়ে গোল করা দেখে বিস্ময় হয় শালিনীর । পডে দ্যাখে , ওমা এত তার জন্যই
... । আশুক মামা দেখাচ্ছি মজা । আমাকে কি পেয়েছে এরা । একটা কমডিটি না কি ? খুব
রাগ হয় মা’র ওপর ।
হঠাৎ ল্যান্ড ফোনে রিং হয় । ও ঘর থেকে মা
ছুটে আসেন ফোন ধরতে ।
হ্যালো ! কে বলছেন?
আপনি একটা
বিঙ্গাপণ দিয়েছেন ...।
হ্যাঁ ।
মায়ের কাছ থেকে ফোনটা ছাডিয়ে ... মেয়ের
মাথা খারাপ আছে আর কালো বেঁটে চলবে !!
ও দিক থেকে লাইন কেটে যায়।
একি করলি শালু ?
ঠিক করেছি । যার বিয়ে তার মতা মত নিয়েছ ? কি ভাব তোমরা ? আমি গোলাম না
বাজারের মাছ ? কি ভাবো তোমরা ?? এরকম করলে আমি
সত্যি ঘর ছেড়ে চলে যাব । রাগে থর থর করে কাঁপে শালু ।
মায়ের চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু । মা চায়ের কাপটা
শালুর হাতে দিয়ে বলেন আমাকে শান্তিতে মরতে দিবি না তুই ? তোর বাবা আমাকে কি জ্বালা যন্ত্রণায় রেখে গেলেন ।
তুমি শান্ত হও মা ।বাবকে কেন টানছ এর মধ্যে । তোমার
গলার কাঁটা আমি.. বাবার ছিলাম না ! আমার
বিয়ের কথা একদম ভেবো না । সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে বলব । তবে এখন না। শান্ত হও ।
আমার অনেক কাজ বাকি।
আমি জানি রে সে দিন আসবে না । আমি ত তোর মা আমি
জানি তোকে ! তুই মা’ হলে বুঝবি ।
আমার ওইরকম মা হওয়ার প্রয়োজন নেই যে মা তার
সন্তানকে বুঝতে চায় না !
এই কাটা কাটা কথা আমি সহ্য করব কিন্তু পরের ছেলে
সহ্য করবে কেন ?
আমিতো কারুর মাথার দিব্বি দি নি আমার কথা সহ্য করতে
। তুমি কেন আমাকে বুঝতে চেষ্টা করনা । আমি আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বামী ঘর দোর
বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে থাকতে চাই না পৃথিবীতে । পৃথিবীতে আরও অনেক কাজ আছে যা মেয়েরা
করতে পারবে। করা উচিৎ বলে আমি মনে করি । এই বিশাল পৃথিবী তার প্রত্যেক কোনে আছে
বিভিন্ন মানুষ তারা সুধু বাচ্চা জন্ম না দিয়ে দেশের অনেক উপকারে আস্তে পারে । জন্ম
নিয়ন্ত্রণ এই জন্য অসফল হচ্ছে আমাদের দেশে । ছেলে মেয়ে চাকরি পেলেই মা বাবাদের মাথা ব্যথা ছেলে মেয়েকে
বিয়ে দিয়ে সংসারী করা । এতে কি হচ্ছে ? অনেক ভাল ব্রেন
নষ্ট হচ্ছে ।
আমি অত পডাশুন করিনি তোর মত । আমি তাই জানিনা মা ।
আমার ভাবনা চিন্তা তোর সঙ্গে কোন দিন খাপ খায় নি...........
বেলা বারোটা নাগাদ দিদি জামাই বাবু এলেন । সঙ্গে
টুকাই ।
মা রকমারি রান্না করে রেখেছেন। সেকেলে শ্বাশুডিদের
মত মাথায় ঘোমটা দিয়ে জামাই বাবু কে বলেন, “এসো বাবা এসো ।”
টুকাই শালিনীকে দেখে দউডে আসে । মাসি আমার
ক্যাডবেরি তা দাও ।
দাঁড়া আনছি বলে ফ্রিজের দিকে এগুলো ।
শ্রাবন্তি, শালিনীর দিদি আর
অর্ক শালিনীর জামাই বাবু । দুজনেই মাকে কিছু জিঙ্গাসা করতে যাচ্ছিল শালিনীকে দেখে চুপসে গেল ।
শালিনী বুঝেও না বোঝার ভান করল । জিজু কি খবর তোমার ? অর্ক কে দেখে বলল শালিনী ।
তুমি না থাকলে মন উদাস থাকে সখী ।
তাই তবে দিদিকে ছেড়ে এখানেই থাক ঘর জামাই হয়ে ।
তাও আচ্ছা সখী ।
তবেরে দেখাচ্ছি তোমাকে ।
সকলে হেঁসে ফেলে । সত্যি অর্ক-দা খুব মাই ডিয়ার ।
টুকাই বলে ,“ঘর জামাই কি গো
মা” ?
গোয়ালে চাষির ঘরের বলদ । গলায় দড়ি বাঁধা থাকে খেতে
দিলে খায় আর জোয়াল কাঁধে গরুর গাড়ী টানে । তাকে বলে ঘর জামাই । বুঝলি ।
যা: কি সব বাজে কথা বলে মা । একদম বাজে । মিথ্যা কথা
বলছ তুমি ।
শালিনী , টুকাইকে ক্যাডবেরি দিয়ে বোঝায় পরের ছেলেকে
ঘরে খাইয়ে দাইয়ে রাখাকে ঘর জামাই বলে । এখন এটুকু জান পরে বড হলে পুরোটা জানবি ।
অর্ক বলেন, “শালু তোর জন্য
তবে তাই দেখি।”
ভাল হবেনা বলছি
অর্ক-দা ।
তোর অয়নের খবর কি ? আমাকে ফোন
নাম্বারটা দে না ! আমি কথা বলে দেখি ।
তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে শালিনী । কি ? সে খবর ও মা তোমাদের দিয়েছে ।
মা! মা!
কি হল ? অত চ্যাঁচাচ্ছিস
কেন ?
তুমি কেন এই সব বল আমার নামে । কি পাও ?
কি বলেছি?
গট গট করে নিজের ঘরে ঢুকে জায় শালিনী ।
কম্প্যুটার খুলে সিভি ফাইলটা খোলে । মনে মনে ভাবে
বার্কের কিম্বা ইন্সটিট্যুট অফ ফিজিক্সের
চাকরিটাতে আবার এপ্লাই করব । খুব ভুল হয়েছে ঘরে থাকা । বাইরে গেলে
এক্সপোসার হবে । এই স্কটিশে আমার ভবিষ্যৎ কি ? ইউ জি সি পেতে
অনেক দেরি । সেই থোড় বডি খাড়া ... খাড়া বডি থোড় !! ওর প্রফেসারের সঙ্গে যোগা যোগ
করে হায়ার রিসার্চের কথা মনে মনে চিন্তা করে । বাবা ওর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছেন
সেটা নিয়ে ফরেনের কোন ভাল ইউনিভার্সিটিতে পোষ্ট ডক্টরেট রিসার্চ করলে উন্নতি আছে ।
বিদেশের ডিগ্রীর দাম আছে । শালিনীর থিসিসটা
“এপ্লিকেশন অফ
ন্যানো টেকনোলজি ইন এপ্লায়েড ইলেক্ট্রনিক্স” যেটা
ন্যানো ফিজিক্সের বিষয় । বিষয়টা একেবারে নতুন তাই ও এটা নিয়ে ভারতীয়
বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে যোগা
যোগ করতে চায়। শালিনীর প্রফেসার ওকে দিয়ে এই রিসার্চ ওয়ার্ক করিয়ে ছিলেন । নতুন
বিষয়ের নতুন দিগন্ত , তাই ভুরি ভুরি প্রশংসা পায় শালিনী । আজ বাবা বেঁচে
থাকলে কখনো শালিনীকে বিয়ের জন্য উৎব্যাস্ত করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন আরো রিসার্চের
জন্য । ওর প্রফেসার বিদেশে অনেক ভালো অফার পেয়েছিলেন কিন্তু উনি ভারতে ফিরে
কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাই শ্রেয়
মনে করেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শালিনী স্কটিশে অধ্যাপিকার চাকরিতে যোগদান
করে । কিন্তু ওখানেও মন বসে না কারন ও আরও অনেক রিসার্চ করতে চায় । নয় আমেরিকাতে গেলে সম্ভব। আমেরিকা জাওয়ার টাকা
নেই। যেটুকু পুঁজি আছে সেটা ফুরলে চলবে কি করে ? তাই কোলকাতা
থেকেই রিসার্চ এর চিন্তা করে।
স্কটিশ থেকে ছুটি নিয়ে নেয় এক মাসের । মনে
অনেক স্বপ্ন অনেক আশা উদ্দীপনা আর আবিষ্কারের ব্যগ্রতা ওকে সব পেছনে ফেলে এগিয়ে
নিয়েছে। পোষ্ট ডক্টরাল প্রোগ্রাম এর জন্য ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা তে
সিলেক্টেড হয় । ফেলোশিপের টাকায় অনায়াসে চলবে । আর শালিনীকে কেউ বিরক্ত
করবে না বিয়ের জন্য ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / মহা শিবরাত্রি / ২৭.০২.২০১৪
।
No comments:
Post a Comment