৩য় পর্ব
সুদীপ্ত , সুদীপ্তা দুজনেই প্রজেক্টের কাজে খুব ব্যাস্ত থাকে । নতুন প্রজেক্ট আর ক্লায়েন্ট নিয়ে ওরা নিজেদের কাজে এতো মসগুল থাকে যে ভালকরে কথা বলার সময় পায় না। এদিকে সুদীপ্তর মা অন্য কথা ভাবেন। ছেলের ফোনের জন্যে বসে থাকেন ভোরে । অনেকদিন ফোন না পেয়ে সুশান্ত কে দাদর খোঁজ নিতে বলেন। সুশান্ত পরের সেমিষ্টারের জন্য প্রস্তুতি চালায়। টপ র্যানঙ্কের জন্য রাত দিন পডাশুন করতে থাকে। ওদিকে শ্রাবন্তি আর ফোন করেনা । ও নিশ্চই ভালো করে প্রিপারেসন করছে ।
একদিন মা দুই ছেলের খোঁজের জন্য মামাকে বলেন,দাদা একটু ফোন করবি ছেলে দুটোকে অনেক দিন কোন খবর পাই না । কি করছে দু জনে কে জানে ?
নাম্বার আছে?
মা, সুশান্তর নাম্বারটা রেখেছিলেন , বললেন এই নে ।
মামা সুশান্ত কে ফোন করাতে ফোন স্বিচ অফ দেখাল ।
মামা বিব্রত হলেন পরে বুঝলেন নিশ্চই ক্লাসে অথবা পডাতে ব্যাস্ত । বোনকে বললেন ব্যাস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই ওরা দুজনে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। তুই যা আমি পরে খবর নিয়ে বোলব তোকে ।
আচ্ছা । বলে মা চলে গেলেন ঠাকুর ঘরে ।
নিউয়র্ক সহরঃ-
আলো ঝলমলে রাস্তায় হারিয়ে গেছে সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা । গাডী নিয়ে বেরিয়ে পডেছে ঘুরতে।আজ শনিবার ওদের ছুটি ।বলা বাহুল্য সুদীপ্ত এখানকার ড্রাইভিং ট্রেনিং পাস করে লাইসেন্স পেয়েছে। সুদীপ্তাও জানে তবে এস।উ।ভি চালাতেই ও ভালোবাসে। এখানকার রাস্তাতে গাডী চালানোর মেজাজই আলাদা । লঙ ড্রাইভে যেতে মজা লাগে। সারা শহরের শপিং মল ওদের মুখস্ত। কোথায় ইন্ডিয়ান ডিশ পাওয়া জায় সেখান্থেকে আনে। স্রিম্প প্যাক আনে ব্রকলি আর কেপ্সিকাম দিয়ে সুদীপ্তা ইন্টারনেট দেখে রান্না শেখে । ওরা ওই খায় । দুধ টা ভালো আর ফোর সিরিয়ালের আটা দিয়ে রুটি বানায়। কাল পার্টি আছে। সুদীপ্ত এখানে প্রজেক্ট ম্যানেজার হল তাই। এতো তাডাতাডি পি।এম হওয়া আর নতুন প্রজক্টে এর দায়িত্ত নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ওর প্রজেক্টের কাজের জন্য একজন সিনিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার (SPM ) ওকে গাইড করবেন।
আজ শনিবার ওহিও তে পার্টি দিচ্ছে সুদীপ্ত এবং সুদীপ্তা দুজনে। প্রায় জনা ১৬ র মত নিমন্ত্রিত ছিলেন। সুদীপ্তার মা বাবা উইস করলেন ওদের দুজনকে। সুদীপ্ত অনেক দিন পর মাকে প্রনাম জানালো । নতুন প্রমোশনের কথা জানালো । মা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলেন,মামা,মামি সকলেই খুব খুশি হলেন এই সম্বাদে । সুশান্ত কে ফোনে পেল না সুদীপ্ত । মনটা একটু খারাপ হল। পার্টি রাত প্রায় ১০ টা অবধি চলল । এখন সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই ওহিও তে থাকবে।
সুদীপ্ত কাজে এতো ব্যস্ত থাকতো যে মাঝে মাঝে সুদীপ্তা ওকে কাছে পেত না। এমনকি রাতে সুদীপ্ত অফিসে থাকতে আরম্ভ করে। রাতের পর রাত সুদীপ্তা র অশহ্য লাগে । মাকে ফোন করে বলে । মা বলেন কাজের মানুষ দের একটু সহ্য করতে হয় মা । আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু ও ত কঞ্জারভেটিভ ছেলে হয়তো ওর মা কিছু বারুন করেছেন।
না মা সেরকম নয়। ওর মা’র সঙ্গে অনেকদিন কথা বলে নি ও ফোনে। এমন কি আমার সঙ্গে দু একটা কথা তাও অফিসের ছাডা অন্য কথা নয়। এরা কিরকম পুরুষ মানুষ ? এদের কি ইচ্ছে বলে কিছু নেই মা?
মাই চাইল্ড্ । ইউ হ্যাভ গ্রোন আপ্ । টেক ইওর ওন ডিসিসন্ । আই উইল টক টু ইওর ডেড্ ওকে । কুল বেবি কুল।
এর মধ্যে সুদীপ্তার অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হয়। অর্ণব, প্লেন্টো টেক্সাসে , ভাইস চেয়ারম্যান অফ দি বোর্ড ক্লাউড সিকিইরিটি তে কাজ করে। ও এখানকার গ্রীন কার্ড হোল্ডার । অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সুদীপ্তা ওর সঙ্গে বেশি মেলা মেসা করতে থাকে । শপিং মলে উইক্ ডেয়েসে শপিং করে । সুদীপ্ত কাজে ব্যাস্ত। ও কম্পানি চেঞ্জ করবে শুনছি।
অর্ণবের কথা মাকে বলেছে । মা সেরকম সায় দেন নি। বলেছেন, “তোমার জীবন সঙ্গি তুমি নিজে বেছে নাও যেরকম আমরা করেছি । তবে আমি এক জনকেই ভালো বেসেছিলাম তিনি তোমার বাবা।” নাও ইট ইস আপ্ টু ইঊ ! উই হ্যাভ গিভেন ইউ ফ্রিডম বাট ইউ মাস্ট নট টেক দ্যা এডভান্টেজ অফ ইট ।
মামা আই লাভ সুদীপ্ত বাট হি নেগ্লেক্টস মে মামা ! কান্তে কান্তে বলে।
মে বি হি ইস ওভার এম্বিসিয়াস । ওয়েট এন্ড সি । ডোন্ট ট্রাস্ট নেটিভ এমেরিকান মাই বেবি ।
ওকে মামা । বাই।
বাই।
সুদীপ্ত রাত করে ফিরেছে । ওর মুখে ক্লান্তির ভাব । এসেই সুয়ে পোডলো । সুদীপ্তা বিছানায় কাছে টেনে কিস করতে চাইলো কিন্তু সুদীপ্ত বললো কালকে ললিপপ খাবো আজ শুয়ে পড প্লিজ। আমি খুব টায়ার্ড ।
কি ভাব তুমি আমাকে সু ? আমার কোন ইচ্ছে নেই ! কেন আমাকে তুমি এভোয়েড করছো ?
না না আমাকে ভূল বুঝো না। আমি সত্যি টায়ার্ড । আমাকেও বুঝতে চেষ্টা কর।
আমি ..আমি.. না থাক !
সুদীপ্ত শুয়ে পডেছে । একটা বাচ্চা ছেলের মত লাগছে ওকে।
সুদীপ্তা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমতে চেষ্টা করলো ।
সকালে ঘুম থেকে সুদীপ্ত এম্নিতেই তাডা তাডি উঠে পডে কিন্তু আজ ওর আগে সুদীপ্তাকে না দেখে আশ্চর্্য্য লাগলো ।একটা ভাঁজ করা চিঠি ড্রেসিং টেবিলের ওপোর দেখে ছ্যাঁক করে উঠলো ।
দীর্ঘদিন রইলাম তোমার হয়ে সুদিপ্ত , তোমায় ভালবেসে, অভ্যাসে অনভ্যাসে, সুখে দুঃখে । অথচ দেখ, তোমায় ছেড়ে যেতে একটুও কষ্ট হচ্ছেনা আমার । এত ভালবাসলে আমায়, আমি কি একটুও বাসিনি তবে ? খুব বেসেছি। কিন্তু আমার ওপর তোমার অধিকার বোধ, তোমার মালিকানা, তোমার নিজস্ব পছন্দ অপছন্দগুলোকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া, আমার আলাদা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রাটাই মানতে না চাওয়াটা মনে মনে হাঁপিয়ে তুলত আমায়, হাঁপিয়ে তুলছিল । আমি মুক্তি চাইছিলাম। চাইছিলাম একমুঠো আকাশ। একটু বাতাসের দমকা স্পর্শ। একটুকরো স্বাধীনতা । আর আজ যে তোমায় শুধু সেইকারণেই সেভাবে ভালোবাসিনা। ভালোবাসতে পারছিনা।কারন ভালোবাসার নাটকে আমি অভ্যস্ত নই। একথা তোমাকে জানাতে খুব খারাপ লাগছে ! হয়ত হ্যাঁ, আবার, হয়ত না । ভাবছো তো তোমাকে বহুদিন ধরে প্রতারনা করেছি । কিন্তু মনের দিক দিয়ে না । সেজন্য সত্যি বড় কষ্ট হয়েছে বুকের ভিতর ! বার বার বলতে চেয়েছি তোমাকে। আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসহীনতার চোরাবালির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারছিনা! অথচ যতবার এসব বলতে গিয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়েছি, ভেসে গেছি তোমার ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে, মাদকতায়, সমর্পনে। আমার মনের মানুষটিকে তোমার চেনার কথা নয় । তোমার চোখের আড়ালে ওর সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেও তো কম দিন হলনা। আমেরিকা তে আসার পর থেকে তুমি শুধু কাজ নিয়ে মাতলে। আমাকে অবঙ্গা করেছ । হয়তো না জেনে কিন্তু তুমি তোমার ব্যক্তি স্বাধিনতা কে প্রাধান্য দিয়েছ । আমি অন্ধকারে হাত বাডিয়ে তমাকে অন্ধের মত খুঞ্জেছি । পাইনি আমি সেই সুদিপ্ত কে যে আমায় অকুন্ঠ ভালোবাস্তো। আজ আর এসব কথার কোন অর্থ নেই । দুই পরিবারের সম্মতিতেই আমরা বিয়ে করে নিয়েছি সুদিপ্ত। আমি তোমাকে ঠকাই নি । আমি জা চাই তা পেলাম না তোমার কাছ থেকে তাই চাইছিলাম মুক্তি । তোমার অহমিকার কাছে আমি নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলাম না ।আমার দ্বিতীয় স্বামি অর্ণব খুব ভালো ছেলে ও আমার সব কথা শুনেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হল।আমিও স্বাধিন। ও খুব নরম মনের ভালো মানুষ । বিশ্বাস কর, খুব সুখে থাকব আমি ওর সাথে । আমায় নিয়ে আর না ভেবে নিজের খেয়াল রেখো । ওটাই বাস্তব । একা থেক না আর । পারলে খুব তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করে নিও । তোমার মা আমাকে কখন পছন্দ করতেন না তাই তুমি মুক্ত। আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম । তুমি হয়তো আমার জন্য দুঃখ করবে তবে সেটা সাময়িক । পরে কাজের চাপে ভুলে যাবে । ভাল থেক । এটা লিখতে লিখতে আমার চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে । কাল সারা রাত আমি শুতে পারিনি আমিও ত মানুষ কিন্তু তোমার মত যন্ত্রমানুষ নই। বাই বাই । ভালো থেক আমাকে ভূলতে চেষ্টা কর । পারলে একটা ফুট ফুটে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে কর।
সুদীপ্ত চিঠিটা ধরে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগলো । ভূল তার, কিন্তু জীবনে একটা মেয়ের সংস্পর্শে এসেছিল সে এরকম প্রতারনা করবে বুঝে উঠতে পারেনি। বাবা মায়ের কথা মনে পডলো । হয়তো মা চাইছিলেন না। তাই এরকম হল তার জীবনে । সে ফিরে যাবে ইন্ডিয়া তে। নতুন করে জীবন শুরু করবে আবার । জন্ত্র মানুষ নয় সুধু মানুষ হয়ে । মাকে নিয়ে যাবে বেঙ্গালুরুতে । তিরুপতী দর্শন করাবে । ভাইকে আরো পডাবে । সে যেন তার মত দুঃখ না পায়।
****এটা শেষ নয় এটাই আরম্ভ ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯.০৭.২০১৩ / সোমবার ।
সুদীপ্ত , সুদীপ্তা দুজনেই প্রজেক্টের কাজে খুব ব্যাস্ত থাকে । নতুন প্রজেক্ট আর ক্লায়েন্ট নিয়ে ওরা নিজেদের কাজে এতো মসগুল থাকে যে ভালকরে কথা বলার সময় পায় না। এদিকে সুদীপ্তর মা অন্য কথা ভাবেন। ছেলের ফোনের জন্যে বসে থাকেন ভোরে । অনেকদিন ফোন না পেয়ে সুশান্ত কে দাদর খোঁজ নিতে বলেন। সুশান্ত পরের সেমিষ্টারের জন্য প্রস্তুতি চালায়। টপ র্যানঙ্কের জন্য রাত দিন পডাশুন করতে থাকে। ওদিকে শ্রাবন্তি আর ফোন করেনা । ও নিশ্চই ভালো করে প্রিপারেসন করছে ।
একদিন মা দুই ছেলের খোঁজের জন্য মামাকে বলেন,দাদা একটু ফোন করবি ছেলে দুটোকে অনেক দিন কোন খবর পাই না । কি করছে দু জনে কে জানে ?
নাম্বার আছে?
মা, সুশান্তর নাম্বারটা রেখেছিলেন , বললেন এই নে ।
মামা সুশান্ত কে ফোন করাতে ফোন স্বিচ অফ দেখাল ।
মামা বিব্রত হলেন পরে বুঝলেন নিশ্চই ক্লাসে অথবা পডাতে ব্যাস্ত । বোনকে বললেন ব্যাস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই ওরা দুজনে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। তুই যা আমি পরে খবর নিয়ে বোলব তোকে ।
আচ্ছা । বলে মা চলে গেলেন ঠাকুর ঘরে ।
নিউয়র্ক সহরঃ-
আলো ঝলমলে রাস্তায় হারিয়ে গেছে সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা । গাডী নিয়ে বেরিয়ে পডেছে ঘুরতে।আজ শনিবার ওদের ছুটি ।বলা বাহুল্য সুদীপ্ত এখানকার ড্রাইভিং ট্রেনিং পাস করে লাইসেন্স পেয়েছে। সুদীপ্তাও জানে তবে এস।উ।ভি চালাতেই ও ভালোবাসে। এখানকার রাস্তাতে গাডী চালানোর মেজাজই আলাদা । লঙ ড্রাইভে যেতে মজা লাগে। সারা শহরের শপিং মল ওদের মুখস্ত। কোথায় ইন্ডিয়ান ডিশ পাওয়া জায় সেখান্থেকে আনে। স্রিম্প প্যাক আনে ব্রকলি আর কেপ্সিকাম দিয়ে সুদীপ্তা ইন্টারনেট দেখে রান্না শেখে । ওরা ওই খায় । দুধ টা ভালো আর ফোর সিরিয়ালের আটা দিয়ে রুটি বানায়। কাল পার্টি আছে। সুদীপ্ত এখানে প্রজেক্ট ম্যানেজার হল তাই। এতো তাডাতাডি পি।এম হওয়া আর নতুন প্রজক্টে এর দায়িত্ত নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ওর প্রজেক্টের কাজের জন্য একজন সিনিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার (SPM ) ওকে গাইড করবেন।
আজ শনিবার ওহিও তে পার্টি দিচ্ছে সুদীপ্ত এবং সুদীপ্তা দুজনে। প্রায় জনা ১৬ র মত নিমন্ত্রিত ছিলেন। সুদীপ্তার মা বাবা উইস করলেন ওদের দুজনকে। সুদীপ্ত অনেক দিন পর মাকে প্রনাম জানালো । নতুন প্রমোশনের কথা জানালো । মা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলেন,মামা,মামি সকলেই খুব খুশি হলেন এই সম্বাদে । সুশান্ত কে ফোনে পেল না সুদীপ্ত । মনটা একটু খারাপ হল। পার্টি রাত প্রায় ১০ টা অবধি চলল । এখন সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই ওহিও তে থাকবে।
সুদীপ্ত কাজে এতো ব্যস্ত থাকতো যে মাঝে মাঝে সুদীপ্তা ওকে কাছে পেত না। এমনকি রাতে সুদীপ্ত অফিসে থাকতে আরম্ভ করে। রাতের পর রাত সুদীপ্তা র অশহ্য লাগে । মাকে ফোন করে বলে । মা বলেন কাজের মানুষ দের একটু সহ্য করতে হয় মা । আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু ও ত কঞ্জারভেটিভ ছেলে হয়তো ওর মা কিছু বারুন করেছেন।
না মা সেরকম নয়। ওর মা’র সঙ্গে অনেকদিন কথা বলে নি ও ফোনে। এমন কি আমার সঙ্গে দু একটা কথা তাও অফিসের ছাডা অন্য কথা নয়। এরা কিরকম পুরুষ মানুষ ? এদের কি ইচ্ছে বলে কিছু নেই মা?
মাই চাইল্ড্ । ইউ হ্যাভ গ্রোন আপ্ । টেক ইওর ওন ডিসিসন্ । আই উইল টক টু ইওর ডেড্ ওকে । কুল বেবি কুল।
এর মধ্যে সুদীপ্তার অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হয়। অর্ণব, প্লেন্টো টেক্সাসে , ভাইস চেয়ারম্যান অফ দি বোর্ড ক্লাউড সিকিইরিটি তে কাজ করে। ও এখানকার গ্রীন কার্ড হোল্ডার । অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সুদীপ্তা ওর সঙ্গে বেশি মেলা মেসা করতে থাকে । শপিং মলে উইক্ ডেয়েসে শপিং করে । সুদীপ্ত কাজে ব্যাস্ত। ও কম্পানি চেঞ্জ করবে শুনছি।
অর্ণবের কথা মাকে বলেছে । মা সেরকম সায় দেন নি। বলেছেন, “তোমার জীবন সঙ্গি তুমি নিজে বেছে নাও যেরকম আমরা করেছি । তবে আমি এক জনকেই ভালো বেসেছিলাম তিনি তোমার বাবা।” নাও ইট ইস আপ্ টু ইঊ ! উই হ্যাভ গিভেন ইউ ফ্রিডম বাট ইউ মাস্ট নট টেক দ্যা এডভান্টেজ অফ ইট ।
মামা আই লাভ সুদীপ্ত বাট হি নেগ্লেক্টস মে মামা ! কান্তে কান্তে বলে।
মে বি হি ইস ওভার এম্বিসিয়াস । ওয়েট এন্ড সি । ডোন্ট ট্রাস্ট নেটিভ এমেরিকান মাই বেবি ।
ওকে মামা । বাই।
বাই।
সুদীপ্ত রাত করে ফিরেছে । ওর মুখে ক্লান্তির ভাব । এসেই সুয়ে পোডলো । সুদীপ্তা বিছানায় কাছে টেনে কিস করতে চাইলো কিন্তু সুদীপ্ত বললো কালকে ললিপপ খাবো আজ শুয়ে পড প্লিজ। আমি খুব টায়ার্ড ।
কি ভাব তুমি আমাকে সু ? আমার কোন ইচ্ছে নেই ! কেন আমাকে তুমি এভোয়েড করছো ?
না না আমাকে ভূল বুঝো না। আমি সত্যি টায়ার্ড । আমাকেও বুঝতে চেষ্টা কর।
আমি ..আমি.. না থাক !
সুদীপ্ত শুয়ে পডেছে । একটা বাচ্চা ছেলের মত লাগছে ওকে।
সুদীপ্তা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমতে চেষ্টা করলো ।
সকালে ঘুম থেকে সুদীপ্ত এম্নিতেই তাডা তাডি উঠে পডে কিন্তু আজ ওর আগে সুদীপ্তাকে না দেখে আশ্চর্্য্য লাগলো ।একটা ভাঁজ করা চিঠি ড্রেসিং টেবিলের ওপোর দেখে ছ্যাঁক করে উঠলো ।
দীর্ঘদিন রইলাম তোমার হয়ে সুদিপ্ত , তোমায় ভালবেসে, অভ্যাসে অনভ্যাসে, সুখে দুঃখে । অথচ দেখ, তোমায় ছেড়ে যেতে একটুও কষ্ট হচ্ছেনা আমার । এত ভালবাসলে আমায়, আমি কি একটুও বাসিনি তবে ? খুব বেসেছি। কিন্তু আমার ওপর তোমার অধিকার বোধ, তোমার মালিকানা, তোমার নিজস্ব পছন্দ অপছন্দগুলোকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া, আমার আলাদা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রাটাই মানতে না চাওয়াটা মনে মনে হাঁপিয়ে তুলত আমায়, হাঁপিয়ে তুলছিল । আমি মুক্তি চাইছিলাম। চাইছিলাম একমুঠো আকাশ। একটু বাতাসের দমকা স্পর্শ। একটুকরো স্বাধীনতা । আর আজ যে তোমায় শুধু সেইকারণেই সেভাবে ভালোবাসিনা। ভালোবাসতে পারছিনা।কারন ভালোবাসার নাটকে আমি অভ্যস্ত নই। একথা তোমাকে জানাতে খুব খারাপ লাগছে ! হয়ত হ্যাঁ, আবার, হয়ত না । ভাবছো তো তোমাকে বহুদিন ধরে প্রতারনা করেছি । কিন্তু মনের দিক দিয়ে না । সেজন্য সত্যি বড় কষ্ট হয়েছে বুকের ভিতর ! বার বার বলতে চেয়েছি তোমাকে। আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসহীনতার চোরাবালির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারছিনা! অথচ যতবার এসব বলতে গিয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়েছি, ভেসে গেছি তোমার ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে, মাদকতায়, সমর্পনে। আমার মনের মানুষটিকে তোমার চেনার কথা নয় । তোমার চোখের আড়ালে ওর সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেও তো কম দিন হলনা। আমেরিকা তে আসার পর থেকে তুমি শুধু কাজ নিয়ে মাতলে। আমাকে অবঙ্গা করেছ । হয়তো না জেনে কিন্তু তুমি তোমার ব্যক্তি স্বাধিনতা কে প্রাধান্য দিয়েছ । আমি অন্ধকারে হাত বাডিয়ে তমাকে অন্ধের মত খুঞ্জেছি । পাইনি আমি সেই সুদিপ্ত কে যে আমায় অকুন্ঠ ভালোবাস্তো। আজ আর এসব কথার কোন অর্থ নেই । দুই পরিবারের সম্মতিতেই আমরা বিয়ে করে নিয়েছি সুদিপ্ত। আমি তোমাকে ঠকাই নি । আমি জা চাই তা পেলাম না তোমার কাছ থেকে তাই চাইছিলাম মুক্তি । তোমার অহমিকার কাছে আমি নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলাম না ।আমার দ্বিতীয় স্বামি অর্ণব খুব ভালো ছেলে ও আমার সব কথা শুনেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হল।আমিও স্বাধিন। ও খুব নরম মনের ভালো মানুষ । বিশ্বাস কর, খুব সুখে থাকব আমি ওর সাথে । আমায় নিয়ে আর না ভেবে নিজের খেয়াল রেখো । ওটাই বাস্তব । একা থেক না আর । পারলে খুব তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করে নিও । তোমার মা আমাকে কখন পছন্দ করতেন না তাই তুমি মুক্ত। আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম । তুমি হয়তো আমার জন্য দুঃখ করবে তবে সেটা সাময়িক । পরে কাজের চাপে ভুলে যাবে । ভাল থেক । এটা লিখতে লিখতে আমার চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে । কাল সারা রাত আমি শুতে পারিনি আমিও ত মানুষ কিন্তু তোমার মত যন্ত্রমানুষ নই। বাই বাই । ভালো থেক আমাকে ভূলতে চেষ্টা কর । পারলে একটা ফুট ফুটে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে কর।
সুদীপ্ত চিঠিটা ধরে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগলো । ভূল তার, কিন্তু জীবনে একটা মেয়ের সংস্পর্শে এসেছিল সে এরকম প্রতারনা করবে বুঝে উঠতে পারেনি। বাবা মায়ের কথা মনে পডলো । হয়তো মা চাইছিলেন না। তাই এরকম হল তার জীবনে । সে ফিরে যাবে ইন্ডিয়া তে। নতুন করে জীবন শুরু করবে আবার । জন্ত্র মানুষ নয় সুধু মানুষ হয়ে । মাকে নিয়ে যাবে বেঙ্গালুরুতে । তিরুপতী দর্শন করাবে । ভাইকে আরো পডাবে । সে যেন তার মত দুঃখ না পায়।
****এটা শেষ নয় এটাই আরম্ভ ।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯.০৭.২০১৩ / সোমবার ।
No comments:
Post a Comment