Thursday, February 13, 2014

ফুটবল বনাম আই পি এল ক্রিকেট ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৩.০২.২০১৪ / বেলা ১২.৩৫

ফুটবল বনাম আই পি এল ক্রিকেট
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৩.০২.২০১৪ / বেলা ১২.৩৫ 
আমাদের ছোট বেলার কথা মনে পডে । স্কুল থেকে ফিরে বই খাতা ছুঁড়ে ফেলে খেলার মাঠে ছুটতাম খেলতে । হয় ফুটবল নয় ক্রিকেট কিম্বা ভলিবল । খেলা না করলে আমাদের পেটের ভাত হজম হত না । বিকেল ৫ টা থেকে ৬টা , টানা এক ঘণ্টা খেলে বাডী ফিরতাম । তখন ক্লাবে খেলার জন্য মাসে ১ টাকা জোগাড় করতে নাকে খত দিতে হত মায়ের কাছে । অবশ্য ১ টাকার মূল্য অনেক ছিল সে যুগে । এখনকার ১০০ টাকার সমান ।আমাদের ক্লাবের ছেলেরা এক একজন এক এক দিকে পারদর্শী, কেউ ভালো সেন্টার ফরোয়ার্ড ত কেউ  ভালো গোল স্কোরার । ক্লাবে ক্লাবে র মধ্যে ফুটবল ম্যাচ হত । কোন বিধায়ক কিম্বা মন্ত্রী আসতেন না , আসতেন ভালো কোচ । যিনি আমাদের ফুটবল গুরু । আমাদের ভুল শুধরে দিতেন আমাদের প্রেরণা দিতেন । আমরা তাঁকে শ্রী গোস্ট পালেরমতন সম্মান করতাম , পায়ের ধুলো নিতাম কারন তাঁর কাছথেকে অনেক কিছু খেলার টেকনিক শিখতাম ।  আমাদের দ্রোণাচার্য ছিলেন সেরকম এক ব্যক্তি তাঁর নাম ‘শঙ্কর মিত্র’ । আমরা শঙ্কর দা বলে ডাক্তাম। শঙ্কর দা অধুনা বাংলা দেশের খুলনার লোক । একটু বাঙ্গাল কথা বলতেন বটে তবে খেলা সেখাতেন চমৎকার ।
 আমাকে ডেকে বলতেন, মাছ ভাত খাইসস ?
আমি বলতাম আমি মাছ খাইনা , মাংস খাই ।
তোর দ্বারা কিসসু হোই-বোনা , ঘোটির পোলা । এদিকে আহ । নে বল থুইয়া কিক কর দেহি  ।  
বল রেখে কিক করতাম । বেশি দুর যেতো না । কিক করার টেকনিক ও ভুল ছিল ।শঙ্কর দা শেখাতেন ঃ ফ্লাইং সট , সিজার কাট , স্পিন সট আর কত কিছু মনে নেই ঠিক । বলা বাহুল্য ঘটির পোলা বললে মনে কষ্ট হত বটে কিন্তু মানুষটার মধ্যে কোন ক্ষেদ ছিলনা । অমায়িক স্নেহী মানুষ আমাদের সকলকে খুব ভালো বাসতেন ।
বলা বাহুল্য আজকাল ওরকম কোচ নেই কি ছেলেরা খেলার মাঠ ও দেখেনি । ওদের ই বা দোষ দি কি করে খেলার মাঠ ত প্রোমোটার কায়দা করে কিনে এপার্টমেন্ট করে ভালো মাল কামাচ্ছে । ডোবা বুজিয়ে , পানা পুকুর বুজিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বুডো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাতু ফোটার মত এপার্টমেন্ট গজাচ্ছে । ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে অধিকাংশ মেদবহুল বপু বিচ্ছিরী ধরনের মোটা । আইসক্রিম আর ফাস্ট ফুডের জমানায় খুব কম বয়েসে মুটিয়ে যাচ্ছে সব। খেলার মাঠের চেয়ে শপিং মলে প্রজাপতির সঙ্গে ফুর্তি করলে কাজ দেবে । মনে মনে ভাবি  শরীর চর্চা যে কত প্রয়োজন তা বুঝতে সময় লাগবে এদের। অল্প বয়েসে ডায়াবেটিস , হাইপার টেনশন , থাইরয়েডে ভুগছে । ডাক্তার রা ভালো দু পয়সা কামাচ্ছে । আমাদের আমলে এতো ডাক্তার ও ছিলনা আর এতো রোগ ও ছিলনা । লোকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কাজ করতো । তখন ৮০-৯০ বছর অনায়াসে মানুষ বাঁচত এখন ৬০ বছরেই সব ধুঁকছে আর ওষুধ গিলছে । ডায়েট কন্ট্রোল করছে এটা খাওয়া মানা ওটা খাওয়া মানা
প্রসঙ্গে আসি , সেই শঙ্কর দা আমাদের যিনি খেলা শেখাতেন তাঁর সঙ্গে অনেক দিন পরে হাতি-বাগানে দেখা । বুডো হয়ে গিয়েছেন , চুল পডে গিয়েছে ,কিন্তু দাঁত আসতো আর সুঠাম শক্ত পেটানো চেহারা সেখানে আমাকে বুডো লাগে । এখন সোজা হাঁটছেন ।
ও শঙ্কর দা চিন্তে পার ?
কে আপনি ? ঠিক চিনলাম না ।
তোমার ঘোটির পোলা গো আমি । চিন্তে পারো বলে প্রণাম করি।
আমার মাথায় হাত রেখে বলেন, ওরে তুই হালার পো ঘোটির পোলা এতো বুডা হইলি কি কোইরা দেখছস মাছ না খাইয়া কি হাল করশস শরীরের । আমারে দেখ আর তোরে দেখ ! কি করিস ?

মনে রেখেছ তবে ।  গত বছর রিটায়ার করেছি । এখন কোলকাতায় ছেলের কাছে আছি ।
মনে থাকবেনা ক্যান ?   ঘর করিস নাই ? ছেলের বাসায় থাকস ক্যান?
করেছি গো তবে ছেলে বৌ আর নাতনী কে নিয়ে বুডো বুডি বেশ আছি ।
দ্যাখো কান্ড । নিজেরে বুডা বলিস ক্যান ? ওই জন্যই বুডা হয়ে যাচ্ছিস ।
তা যা বলেছ । তুমি কোথায় আছ ?
তা কইও না । ভালো না । তোর বৌদি যাওয়ার পর শরীর মন আমার ও ভালো নাই । আছি ! চলে যাচ্ছে !!  পেনসন ত বাড়েনা তেমন । ওই টাকায় কি হইবো ? বাপ দাদার বাডি ঘর না থাকলে পথে বসতে হইত ।  
চল না শঙ্কর দা এক কাপ চা খাই ।
আমি ত চা খাইনা । তুই জানস না !
হুম । তা ঠিক । ভুলে গিয়েছি । এখন কোচিং দাও ?
ধুর ! ফুট বল আর কেউ খেলে নাকি !! হালার পো এক খান ব্যাট ধইরা ঝাড়ু মারে আর আলেকজান্ডারের মত মাথায় হেলমেট পায়ে হাতে প্যাড পইরা এক সঙ্গের খেলা । হালা গুষ্টির পিণ্ডির খেলা । মাথায় ঝাড়ু মারি অমন খেলার । ফুট বলটার সর্বনাশ করলো হালারা। যে পোলা পানেরা খেলা দেখতে যায় ওদের জিগাও ব্যাট হাতে খেলতে পারবে হালারা ? কোটি কোটি টাকা আই পি এল খেলায় লুটছে হালারা। স্কুল কলেজের পড়ুয়া ছেলেদের মাথা চিবুচ্ছে । আমার নাতী ত ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া ক্রিকেট খেলে ।পডা শুনা গেছে গিয়া । 
তুমি কি ক্রিকেটের বিদ্বেষী ?
না তা নয়তবে সব খেলায় প্রাধান্য থাইক্লে খেলা খেলোওাড হকলের মঙ্গল হয় । দেহ য়ুবরাজরে ১৪ কোটি দিয়া রয়েল চেলেঞ্জার্স কিনলো, দিনেশ কার্তিক রে ১২.৫ কোটি দিয়া দিল্লী ডেয়ার  ডেভিলস .....
আমি থামিয়ে, তুমি ত সব রিসেন্ট খবর রাখ ক্রিকেটের , বিশেষ করে আই পি এল  ২০১৪ র ।
আরে কাগজ পডলেই ত খবর পাই । টিভি তে ত ফলাও কইরা বলে । আর কত প্রচার হত ! ফুটবলের যা দশা ..... একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন শঙ্কর দা ।
এখন সৌরভ দাদা গিরিতে এঙ্করিং করছে ।
আর কি করতো ? কোটি কোটি টাকায় ভাসতো এহেন টাকার জন্য ওইসব করতেই হইবো । কিছু ত করবে !
যা বলেছ । আরেকদিন আসবো তোমায় দেখা করতে । পায়ের ধুলো নিয়ে বললাম  তোমার মোবাইল নাম্বার দাও দাদা।  
আমার নাম্বার থেই-ক্যা তোর নাম্বারে কল কর । আমার নাম্বার মনে থাকে না।
ও তা দাও বলে নাম্বার শেভ করে বিদায় নিলাম।  
ফড়িয়া পুকুরে নাতনীর জন্মদিনের জন্য একটা গিফট কিনতে এসেছিলাম । কেসিও ইলেক্ট্রনিক অরগ্যানের ফরমাস আমার নাতনীর । এখন গান শিখছে । ওর দিদা ডবল রিডের হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছেন । আজকাল ছেলে মেয়েদের আবদার শুনলে চক্ষু চডক গাছ হয় । অবশ্য আমরাই লায় দি ওদের ।
ফিরছিলাম ছেলের গাডিতে । আবার রাস্তায় পেন্টুর সঙ্গে দেখা । আজ সব পুরন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে । কি ব্যাপার আমার ভাগ্য !
এই পেন্টু কোথায় চললি ? পেন্টু অন্যমনস্ক ছিল তাই শুনতে পারে নি বোধ হয় । গাডিথেকে নামবার ও উপায় নেই । কোথায় পারকিং করবে? মন্টা খারাপ হয়ে গেল কি যে করি। পুরন দিনের বন্ধু দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পডে । সেই দিনগুলো কত সুন্দর ছিল । হারিয়ে যাই পুরন স্মৃতিতে । এমন সময় ছেলে পাসে বলে বাবা সিট বেল্ট টা পরে নিন রাজারহাট দিয়ে যাচ্ছি  ।
এ্যাঁ !  ও হ্যাঁ !!   






        

No comments:

Post a Comment