ফুটবল বনাম আই পি এল ক্রিকেট
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৩.০২.২০১৪ / বেলা
১২.৩৫
আমাদের ছোট বেলার কথা মনে পডে । স্কুল থেকে
ফিরে বই খাতা ছুঁড়ে ফেলে খেলার মাঠে ছুটতাম খেলতে । হয় ফুটবল নয় ক্রিকেট কিম্বা
ভলিবল । খেলা না করলে আমাদের পেটের ভাত হজম হত না । বিকেল ৫ টা থেকে ৬টা , টানা এক ঘণ্টা খেলে বাডী ফিরতাম । তখন ক্লাবে খেলার জন্য মাসে ১
টাকা জোগাড় করতে নাকে খত দিতে হত মায়ের কাছে । অবশ্য ১ টাকার মূল্য অনেক ছিল সে
যুগে । এখনকার ১০০ টাকার সমান ।আমাদের ক্লাবের ছেলেরা এক একজন এক এক দিকে পারদর্শী,
কেউ ভালো সেন্টার ফরোয়ার্ড ত কেউ
ভালো গোল স্কোরার । ক্লাবে ক্লাবে র মধ্যে ফুটবল ম্যাচ হত । কোন বিধায়ক
কিম্বা মন্ত্রী আসতেন না , আসতেন ভালো কোচ । যিনি
আমাদের ফুটবল গুরু । আমাদের ভুল শুধরে দিতেন আমাদের প্রেরণা দিতেন । আমরা তাঁকে ‘শ্রী গোস্ট পালের’ মতন সম্মান করতাম , পায়ের ধুলো নিতাম কারন তাঁর কাছথেকে অনেক কিছু খেলার টেকনিক
শিখতাম । আমাদের দ্রোণাচার্য ছিলেন সেরকম
এক ব্যক্তি তাঁর নাম ‘শঙ্কর মিত্র’ । আমরা শঙ্কর দা বলে ডাক্তাম। শঙ্কর দা অধুনা
বাংলা দেশের খুলনার লোক । একটু বাঙ্গাল কথা বলতেন বটে তবে খেলা সেখাতেন চমৎকার ।
আমাকে
ডেকে বলতেন, মাছ ভাত খাইসস ?
আমি বলতাম আমি মাছ খাইনা , মাংস খাই ।
তোর দ্বারা কিসসু হোই-বোনা , ঘোটির পোলা । এদিকে আহ । নে বল থুইয়া কিক কর দেহি ।
বল রেখে কিক করতাম । বেশি দুর যেতো না ।
কিক করার টেকনিক ও ভুল ছিল ।শঙ্কর দা শেখাতেন ঃ ফ্লাইং সট , সিজার
কাট , স্পিন সট আর কত কিছু মনে নেই ঠিক । বলা
বাহুল্য ঘটির পোলা বললে মনে কষ্ট হত বটে কিন্তু মানুষটার মধ্যে কোন ক্ষেদ ছিলনা ।
অমায়িক স্নেহী মানুষ আমাদের সকলকে খুব ভালো বাসতেন ।
বলা বাহুল্য আজকাল ওরকম কোচ নেই কি ছেলেরা
খেলার মাঠ ও দেখেনি । ওদের ই বা দোষ দি কি করে খেলার মাঠ ত প্রোমোটার কায়দা করে
কিনে এপার্টমেন্ট করে ভালো মাল কামাচ্ছে । ডোবা বুজিয়ে , পানা
পুকুর বুজিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বুডো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাতু ফোটার মত এপার্টমেন্ট
গজাচ্ছে । ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে অধিকাংশ মেদবহুল বপু বিচ্ছিরী ধরনের মোটা ।
আইসক্রিম আর ফাস্ট ফুডের জমানায় খুব কম বয়েসে মুটিয়ে যাচ্ছে সব। খেলার মাঠের চেয়ে
শপিং মলে প্রজাপতির সঙ্গে ফুর্তি করলে কাজ দেবে । মনে মনে ভাবি শরীর
চর্চা যে কত প্রয়োজন তা বুঝতে সময় লাগবে এদের। অল্প বয়েসে ডায়াবেটিস , হাইপার টেনশন , থাইরয়েডে ভুগছে । ডাক্তার
রা ভালো দু পয়সা কামাচ্ছে । আমাদের আমলে এতো ডাক্তার ও ছিলনা আর এতো রোগ ও ছিলনা ।
লোকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কাজ করতো । তখন ৮০-৯০ বছর অনায়াসে মানুষ বাঁচত এখন
৬০ বছরেই সব ধুঁকছে আর ওষুধ গিলছে । ডায়েট কন্ট্রোল করছে এটা খাওয়া মানা ওটা খাওয়া
মানা
প্রসঙ্গে আসি , সেই
শঙ্কর দা আমাদের যিনি খেলা শেখাতেন তাঁর সঙ্গে অনেক দিন পরে হাতি-বাগানে দেখা ।
বুডো হয়ে গিয়েছেন , চুল পডে গিয়েছে ,কিন্তু
দাঁত আসতো আর সুঠাম শক্ত পেটানো চেহারা সেখানে আমাকে বুডো লাগে । এখন সোজা হাঁটছেন
।
ও শঙ্কর দা চিন্তে পার ?
কে আপনি ? ঠিক
চিনলাম না ।
তোমার ঘোটির পোলা গো আমি । চিন্তে পারো বলে
প্রণাম করি।
আমার মাথায় হাত রেখে বলেন, ওরে তুই হালার পো ঘোটির পোলা এতো বুডা হইলি কি কোইরা ? দেখছস মাছ না খাইয়া কি হাল
করশস শরীরের । আমারে দেখ আর তোরে দেখ ! কি করিস ?
মনে রেখেছ তবে । গত বছর রিটায়ার করেছি । এখন কোলকাতায় ছেলের
কাছে আছি ।
মনে থাকবেনা ক্যান ? ঘর
করিস নাই ? ছেলের বাসায় থাকস ক্যান?
করেছি গো তবে ছেলে বৌ আর নাতনী কে নিয়ে
বুডো বুডি বেশ আছি ।
দ্যাখো কান্ড । নিজেরে বুডা বলিস ক্যান ?
ওই জন্যই বুডা হয়ে যাচ্ছিস ।
তা যা বলেছ । তুমি কোথায় আছ ?
তা কইও না । ভালো না । তোর বৌদি যাওয়ার পর
শরীর মন আমার ও ভালো নাই । আছি ! চলে যাচ্ছে !!
পেনসন ত বাড়েনা তেমন । ওই টাকায় কি হইবো ? বাপ
দাদার বাডি ঘর না থাকলে পথে বসতে হইত ।
চল না শঙ্কর দা এক কাপ চা খাই ।
আমি ত চা খাইনা । তুই জানস না !
হুম । তা ঠিক । ভুলে গিয়েছি । এখন কোচিং
দাও ?
ধুর ! ফুট বল আর কেউ খেলে নাকি !! হালার পো
এক খান ব্যাট ধইরা ঝাড়ু মারে আর আলেকজান্ডারের মত মাথায় হেলমেট পায়ে হাতে প্যাড
পইরা এক সঙ্গের খেলা । হালা গুষ্টির পিণ্ডির খেলা । মাথায় ঝাড়ু মারি অমন খেলার ।
ফুট বলটার সর্বনাশ করলো হালারা। যে পোলা পানেরা খেলা দেখতে যায় ওদের জিগাও ব্যাট
হাতে খেলতে পারবে হালারা ? কোটি কোটি টাকা আই পি এল
খেলায় লুটছে হালারা। স্কুল কলেজের পড়ুয়া ছেলেদের মাথা চিবুচ্ছে । আমার নাতী ত
ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া ক্রিকেট খেলে ।পডা শুনা গেছে গিয়া ।
তুমি কি ক্রিকেটের বিদ্বেষী ?
না তা নয় । তবে
সব খেলায় প্রাধান্য থাইক্লে খেলা খেলোওাড হকলের মঙ্গল হয় । দেহ য়ুবরাজরে ১৪ কোটি দিয়া
রয়েল চেলেঞ্জার্স কিনলো, দিনেশ কার্তিক রে ১২.৫ কোটি
দিয়া দিল্লী ডেয়ার ডেভিলস .....
আমি থামিয়ে, তুমি
ত সব রিসেন্ট খবর রাখ ক্রিকেটের , বিশেষ করে আই পি এল ২০১৪ র ।
আরে কাগজ পডলেই ত খবর পাই । টিভি তে ত ফলাও
কইরা বলে । আর কত প্রচার হত ! ফুটবলের যা দশা ..... একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন
শঙ্কর দা ।
এখন সৌরভ ‘দাদা
গিরি’ তে এঙ্করিং করছে ।
আর কি করতো ? কোটি
কোটি টাকায় ভাসতো এহেন টাকার জন্য ওইসব করতেই হইবো । কিছু ত করবে !
যা বলেছ । আরেকদিন আসবো তোমায় দেখা করতে ।
পায়ের ধুলো নিয়ে বললাম তোমার মোবাইল
নাম্বার দাও দাদা।
আমার নাম্বার থেই-ক্যা তোর নাম্বারে কল কর
। আমার নাম্বার মনে থাকে না।
ও তা দাও বলে নাম্বার শেভ করে বিদায়
নিলাম।
ফড়িয়া পুকুরে নাতনীর জন্মদিনের জন্য একটা গিফট
কিনতে এসেছিলাম । কেসিও ইলেক্ট্রনিক অরগ্যানের ফরমাস আমার নাতনীর । এখন গান শিখছে
। ওর দিদা ডবল রিডের হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছেন । আজকাল ছেলে মেয়েদের আবদার শুনলে
চক্ষু চডক গাছ হয় । অবশ্য আমরাই লায় দি ওদের ।
ফিরছিলাম ছেলের গাডিতে । আবার রাস্তায়
পেন্টুর সঙ্গে দেখা । আজ সব পুরন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে । কি ব্যাপার আমার
ভাগ্য !
এই পেন্টু কোথায় চললি ? পেন্টু অন্যমনস্ক ছিল তাই শুনতে পারে নি বোধ হয় । গাডিথেকে নামবার
ও উপায় নেই । কোথায় পারকিং করবে? মন্টা খারাপ হয়ে গেল কি যে
করি। পুরন দিনের বন্ধু দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পডে । সেই দিনগুলো কত সুন্দর ছিল ।
হারিয়ে যাই পুরন স্মৃতিতে । এমন সময় ছেলে পাসে বলে বাবা সিট বেল্ট টা পরে নিন
রাজারহাট দিয়ে যাচ্ছি ।
এ্যাঁ !
ও হ্যাঁ !!
No comments:
Post a Comment