Monday, February 24, 2014

গৃহ শিক্ষক "সনাতন স্যার" / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী /২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৪


গৃহ শিক্ষক সনাতন স্যার 
আজ মনে পড়ছে আমার ছোটবেলার গৃহ শিক্ষকের কথা । সনাতন স্যারের কথা। উনি খুব গরীব ঘরের মেধাবী ছেলে তাই আমার বাবা ওনাকে আমাদের বাডির একটা গেস্ট রুমে থাকতে দিয়েছিলেন। উনি আমাকে এবং আমার ছোট ভাইকে পডাতেন । আমার তখন ক্লাস ফোর আমার ভাইয়ের ক্লাস টু । দুজনেই সনাতন স্যারের কাছে অঙ্ক করতাম । স্যার খুব ভালো অঙ্ক বোঝাতেন ।
স্যার আমাদের বাডিতে থেকেই বি.এ পরীক্ষা দিলেন । খুব ভালো রেজাল্ট করেছিলেন । ফার্স্ট ক্লাস ডিস্টিংশন উইথ অঙ্ক অনার্স । স্যারের ইচ্ছে ছিল বি.এস.সি পডা ফিজিক্স অনার্স নিয়ে কিন্তু হয়ে ওঠেনি নানা কারনে। আমাকে ছোট বেলা থেকেই খুব উৎসাহ দিতেন সাইন্স নিয়ে পডতে । নানা রকমের ছোট ছোট এক্সপেরিমেন্ট করে বোঝাতেন সেটা কি করে হচ্ছে । আমি ক্লাস সেভেনে টু ট্রানজিস্টার রেডিও বানাই । সেটার সাফল্যে স্যার আমাকে একটা সোল্ডারিং আয়রন কিনে দেন। তখন রেডিও বানান একটা দারুণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু স্যার সার্কিট ডায়াগ্রাম করে প্রত্যেকটা কম্পোনেন্টের যেমন ট্রান্সিস্টার , কনডেনসার , রেসিস্টান্স কি ? তাদের কাজ কি ? কটা ইলেক্ট্রোড থাকে ? এই সব বোঝাতেন আমাকে । রেসিটান্স কালার কোড দেখে কি করে রেসিস্টান্স বোঝা যায় , পি.এন.পি ট্রান্সিস্টার কি ? এন.পি.এন ট্রান্সিস্টার কি ? ডায়াগ্রাম করে বোঝাতেন। তখনো আই.সি আবিষ্কার হয়নি। এখনকার ছেলেরা ইন্টার নেট দেখে বিনা মাষ্টারে অনেক কিছু যানতে পারে। তখনকার কালে তা সম্ভব ছিলনা।
আমার হবি হয়ে গেল সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট বানানো । ক্লাস টেন এ প্রথম সেভেন ট্রান্সিস্টার রেডিও বানাই ঘরে বসে। একটু একটু করে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বেল কোম্পানির সিলিকন ট্রানজিস্টার কিনে , পি সি বি কিনে তাতে অন্যান্য কম্পোনেন্ট সোল্ডার করে বসাই। পুরো সেট তৈরি করতে ৭,৮ দিন সময় লাগে । প্রথম আমার তৈরি সেই ট্রানজিস্টারে বিবিধ ভারতীর গান শুনি । যদিও সামান্য নয়েজ ছিল । স্যারের প্রচেষ্টায় আমি অনেক কিছু শিখি । পরে স্যার চাকরী পেয়ে চলে যান অনেক দুরে । আমার আর সেরকম যোগা যোগ রইল-না । অনেক দিন পর একটা পোষ্ট কার্ড পেলাম ডিফেন্সে জয়েন করেছেন ক্লারিকালে । আম্বালাতে পোষ্টেড ।
আমার এই খুট খাট ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ চলতে থাকে বাডিতে বসে । কখন বার্গ্লার অ্যালার্ম , ব্যাটারি এলিমিনেটার , ক্ল্যাপ স্বিচ , ড্যান্সিং লাইট , ১০+১০ ওয়াট স্টিরিও এমপ্লিফায়ার ইত্যাদি। পরে ম্যুসিক ডোর বেল বানালাম ।তখন সাইন্স টু ডে বলে একটা ম্যাগাজিন বেরুত । তাতে অনিল ভি.বোরকার নামে এক লেখক “ইউ টু কেন ডু ইট” বলে লেখা বার করতেন যাতে বিভিন্ন সার্কিট ডায়াগ্রাম থাকতো । বলা বাহুল্য তখনকার দিনে আমরা কম্পুটার আবিষ্কারের কথা স্বপ্নেও ভাবি নি । ইলেক্ট্রনিক্সে ভারত তখন অতটা প্রগতি করে নি আজ যা করেছে । জাপানি ট্রান্সিস্টার স্যানিও , ন্যাশনাল পানাসোনিক , ওদিকে জার্মান গ্রুন্ডিগ এইসব ইম্পোর্টেড নাম তখন খুব বিলাসিতার বস্তু ছিল। লোকেদের বাডিতে একটা জি.ই.সি রেডিও থাকলে বিরাট ব্যাপার মনে করত সবাই ।
এরপর কলেজে ঢুকে সব ছেডে দিলাম। আজ এই জন্যই স্যারকে মনে পডছে যে তিনি আমাকে উজাড় করে স্নেহ দিয়েছিলেন আর ছোট ভাইয়ের মত বোঝাতেন সব সুন্দর করে। আমি ওনার অনুপস্থিতি খুব খুব মনে করছি । উনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা করি ভগবানের কাছে ।
আজ ইলেক্ট্রনিক্সের যুগে মহাকাশ যান থেকে এরোপ্লেন , মিসাইল , মোবাইল , কার , ঘডি , খেলনা সবেতেই ওই ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যাবহার । সবেতেই সফটওয়্যারের ব্যাবহার । আমি যা কম্পুটারে বসে বাংলা টাইপ করছি সেটাও সফটওয়্যারের কামাল। তাই বড আশ্চর্য লাগে পৃথিবীতে আরো কত আবিষ্কার বাকি আছে আরও কত নতুন নতুন জিনিষ যা আমাদের ভাবনার বাইরে তা হয়ত আবিষ্কার হবে । আমরা তখন থাকবো না হয়ত আমাদের পরের প্রজন্ম দেখবে ব্যাবহার করবে । বিজ্ঞানের এটাই ম্যাজিক ।

Friday, February 21, 2014

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্ব ভাষা দিবস । সেই উপলখ্যে শ্রধ্যেয় ফাল্গুনী মুখপাধ্যায়ের কলম থেকে কিছু লেখা পোষ্ট করলামম ঃ-

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্ব ভাষা দিবস । সেই উপলখ্যে শ্রধ্যেয় ফাল্গুনী মুখপাধ্যায়ের কলম থেকে কিছু লেখা পোষ্ট করলামম ঃ-

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস । একুশে ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস’ সেইসঙ্গে ‘ভাষা শহিদ দিবস’ও বটে । একুশে, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবীতে ১৯৫২’র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের প্রতি এবং ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন,তেমনই বিশ্বের যেকোন প্রান্তে সব ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে সম্মান জানানোর দিন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে যেখানেই যারা আত্মদান করেছেন তাঁদের প্রতি বিনম্র প্রণাম নিবেদনের দিনও ।
শুনতে ভালো লাগবেনা, এ বাংলায় একুশের ভাষা শহীদ স্মরণে আমাদের আবেগেও কিছু ফাঁকিবাজি আছে । ১৯৬১র উনিশে মে’র বরাক উপত্যকার  মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে ১১জন শহীদের জীবন দানের কথা আমরা ভুলে যাই,কিংবা বড়ই ক্ষীণকন্ঠে উচ্চারণ করি ।  বাঙালির আর এক স্বদেশ ‘বাংলাদেশের’ সুখ্যাত ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন বরাকের ভাষা সংস্কৃতি চেতনার কথা এই ভাবে প্রকাশ করেছেন “১১জন শহিদের স্মৃতিস্তম্ভের ভেতরে সূর্য হয়ে আছে তাদের ভাষার লড়াইএর ইতিহাস” আমরা– বাংলা ভাষার তথাকথিত মূল ভুখন্ডের বাঙালিরা তবে সেই সূর্যের দীপ্তিতে একাত্মবোধ করবো না কেন ! 
বাহান্নর ভাষা শহিদদের প্রতি বিনম্র প্রণাম নিবেদন করছে ‘অন্যনিষাদ’, একই সঙ্গে একষট্টির বরাকের এগারো জন ভাষা শহিদদের প্রতিও শ্রদ্ধাবনত প্রণাম নিবেদন করছে ।
এই ‘অন্যনিষাদ সপ্তাহ’তেই পেরিয়ে এলাম বাঙালির প্রাণের কবি জীবনানন্দ দাশের ১১৬তম জন্মদিন – ১৭ই ফেব্রুয়ারি । ‘অন্যনিষাদ’এর এই ৩য় বর্ষ ১৮তম  সংখ্যায় শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করলাম সেই প্রাণের কবিকে বারোটি কবিতার মধ্য দিয়ে ।
বাংলা আকাডেমি, ঢাকার উপ-পরিচালক ডঃ তপন বাগচী বাহান্নর ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে একটি তথ্যবহুল লেখা দিয়েছেন ‘অন্যনিষাদ’কে ।আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই  ডঃবাগচীকে ।
৩২টি লেখায় সাজিয়েছি ‘ভাষা প্রণাম’ ও ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী জীবনানন্দ’ সঙ্খ্যাটি । পাঠকের মতামত পেলে খুশি হবো ।

                   

Tuesday, February 18, 2014

পরোপকার ঃ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৯.০২.২০১৪ বেলা ১১.২৫।


পরোপকার

নিমাই দা । এমন পরোপকারী , সদা মিষ্ট হাস্য এক অমায়িক ব্যক্তিত্বের লোক সচর আচর পাওয়া মুস্কিল । কারুর কোন বিপদ হলে নিমাই-দা ঝাঁপিয়ে পডে তার বিপদে সাহায্য করেন । পাড়ায় কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাঁসপাতালে নিয়ে যাবেন নিমাই-দা । কেউ ডাকলেই হল এক ডাকে নিমাই-দা সঙ্গে সঙ্গে হাজির । ডাক্তার বদ্যি সব ই নিমাই-দার চেনা। পাড়ায় কোন ফাংশন হবে , পূজো হবে , নিমাই-দাকে না জানিয়ে কেউ কিছু করতে পারে না । সবাই কেমন যেন নির্ভরশীল ওর ওপর । থানা পুলিস সব জায়গায় নিমাই-দাকে সবাই চেনে । আর সুধু চেনা নয় কাজেও লাগেন নিমাই-দা । এরকম নিঃস্বার্থ পরোপকারী লোক এ যুগে পাওয়া মুস্কিল। তাই সকলের প্রিয় নিমাই দা । এল আই সির এজেন্ট এবং আরও কিছু ছোট খাটো কাজ যেমন টিভি মেরামত , কম্প্যুটার এর কাজ করে নিজের খরচ চালান। অনেক সময় টাকা না নিয়েই কাজ করে দেন। বিয়ে করেন নি যদিও বিয়ের বয়েস পার হয়নি ।বলেন বিয়ে করলে বৌকে খাওয়াবো কি? ওটা আমার কাছে বিলাসিতা । এইতো তোদের নিয়ে দিব্বি আছি ।
ওর বাডির লোক বলেন , উনি নাকি খাওয়ার থালা ফেলে চলে জান কেউ ডাকলে । নিমাই-দার বাবা অনেক দিন অসুস্থ থেকে হঠাৎ মারা জান । তাই সেইথেকে উনি মুসডে পড়েন । বাবাকে খুব ভালো বাসতেন ত । বাবা চলে জাওয়াতে ওনাদের বাডিতে উনি সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেয়েছিলেন , কেউ না জানুক পাডা পড়শি জানে সে কথা। মনের কথা মনেই রাখেন । ভাইরা যে যার স্বার্থ নিয়ে চলে । অন্য কারুর সঙ্গে সেরকম জানাশোনা নেই শুধু নিমাই দা কেই সকলে খোঁজে । সামনে কর্পোরেশনের ভোট। আমাদের পাডার অনেকেই চায় নিমাই-দা কর্পোরেটর হলে কিছু কাজ হবে । কিন্তু নিমাই-দাকে কোন পার্টি টিকিট দেবে ? সবাই তো গুছনর জন্য ভোটে নামে ওকে কে টিকিট দেবে?
নিমাই-দার মতন নিঃস্বার্থ লোক ভোটে নামলে পার্টির কি লাভ হবে ? তাই পাডার কিছু বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে স্থির করেন নিমাই-দা নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে ড্যাংড্যাং করে জিতে দেখাব । সকলে দেখুক জানুক লোকের জন্যে কাজ করলেই লোকে তাকে ভোট দিয়ে জেতায় । যেমন ভাবা তেমন কাজ । সকলে ধরল নিমাই-দাকে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য ।
নিমাই দা কিন্তু গরে রাজি হলেন। সবাইকে হাত জোড় করে বললেন ওই ভোটে দাঁড়ানোর জন্য যেন কেউ তাঁকে অনুরোধ না করেন। লোকের জন্য কিছু করতে পারলে তিনি ধন্য হন। তিনি একটি ইংরাজি প্রোভার্ব কে মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন সেটা হল, “সার্ভিস টু হিউম্যান বিইংগ ইজ সার্ভিস টু গড ।” তাই মানুষের সেবার মাধ্যমে তিনি ভগবানের সেবা করেন এটাই তাঁর ধারনা। পাডার সবাই কিন্তু বলেন, “নিমাই দা তুমি ভোটে না দাঁড়ালে আমরা ভোট বর্জন করবো , তুমি কি সেটা চাও !”

অগত্যা নিমাই-দা সকলের জেদের কাছে মাথা নুইয়ে সকলের মুখে হাসি দেখার জন্য নমিনেশন ফর্ম ভরলেন। ২৮ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রার্থিপত্র দাখিল হল মহা ধুম ধামে রিটার্নিং অফিসারের কাছে । নির্দল প্রার্থী ভাবে নিমাই দার নমিনেশন দাখিল হওয়াতে আমাদের পাডার প্রোমটার জগদীশ মণ্ডল যে কিনা মিউনিসিপাল কন্ট্রাক্টটার তার স্বার্থে বাধা পডল । রুলিং পার্টির হয়ে সেই টিকিট পেয়েছে কিন্তু জেতার আশা ক্ষীণ । অগত্যা বিধায়ক মহাশয় হস্তক্ষেপ করলেন এই ব্যাপারে কারণ বিষয়টা জটিল আর সম্মানের ব্যাপার । তিনি নিমাই দাকে নমিনেসন তুলে নিতে বললেন ।
বলেন, “লোকে তাঁকে দাঁড় করিয়েছে তাই তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে” ।

বিধায়ক মহাশয় কথাটায় খুব একটা খুশি হলেন না। যাওয়ার আগে বলে গেলেন ব্যাপারটা ভাল করে ভেবে দেখতে ।

জগদীশ মণ্ডলের কথা বলে রাখা ভাল । প্রথমে বিল্ডিং মেটি-রিয়াল সাপ্লাই করতো । এখন এলাকায় ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ লাগিয়ে জমি জলের দরে কিনে এপার্টমেন্ট করে । পুকুর , ডোবা বুজিয়ে নিম্ন মানের সিমেন্ট , লোহার ছড ব্যাবহার করে এপার্টমেন্ট করে মোটা টাকা কামাচ্ছে । কারো টুঁ শব্দ করার উপায় নেই । রুলিং পার্টির লোক , হাতে মাথা কাটতে দু মিনিট সময় লাগবেনা । পাডার কিছু ছোঁড়া জগদীশের কাছে নেশা করার টাকা পায়, তারা দাপিয়ে বেডায় । জগদীশের এরাই সৈনিক ।
নিমাই-দাকে বাডীর সকলে এই ঝামেলাতে মাথা ঘামাতে বারন করেন । মা বলেন কেন সুখে থাকতে ভুতে কিলোয় তোকে জানিনা । পরের জন্য মাথা ঘামিয় নিজের জীবনটা বরবাদ করলি ।
নিমাই দা হাসি মুখে বলেন , মা কেন তুমি বোঝনা আমি এই নিয়ে শান্তিতে আছি । বেশ ত চলে যাচ্ছে । আমার কি চাহিদা বল ? তুমি আছ বৌদিরা আছেন এইতো বেশ ।
চোখের জল মুছে মা বলেন তোর চিন্তায় আমার ঘুম হয়না । বাউণ্ডুলে জীবন বেছে নিলি । অন্য সব ভাইরা যে যার গুছিয়ে সংসার করছে তুই ব্যতিক্রম । আমি মলে কে তোকে ভাতের থালা মুখে ধরবে ? খেয়াল রাখিস কিছু ! এখন ওই অলক্ষুণে জগদীশ মণ্ডলের বিপরীতে ভোটে দাঁড়াচ্ছিস। তোর কোন ক্ষতি হলে পাডার লোক আসবে তোর কাছে ? সব্বাইকে চিনিরে ।
বালাই সাট তুমি কোন দুঃখে মরবে ? ও সব ভেবোনা । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
না ভাববো না ! উনি চলে গেলেন আমার হয়েছে জত মরণ।
আমার লক্ষ্মী মা । তুমি না তারাপীঠে যাবে বলছিলে মায়ের পূজো দিতে । চল সামনের মঙ্গলবার তোমায় তারাপীঠ নিয়ে যাবো । এখন খিদে পেয়েছে কিছু দাও খেতে।
ও নিমাই দা ! নিমাই দা !!
কিরে কি হল বল্টু ?
আর বোলনা । ঝন্টু গিয়েছিল কলেজে । ওকে কলেজ ইউনিয়নের ছেলেরা মেরেছে ।
কেন?
ও তোমার নমিনেশনে সমর্থন করেছিল বলে । বলেছে , কলেজে যদি পডতে চাস আমাদের কথা মত চলতে হবে ।
সে আবার কি ?
তাইতো ! এর একটা হেস্ত ন্যস্ত করতে হবে । জগদীশ হন্যে হয়ে লেগেছে । এতো মাল কামাচ্ছে তাও পেট ভরছেনা । ও বলেছে নিমাই কে বল নমিনেশন উইথ-ড্র করতে নাহলে যা হবে তার জন্য তৈরি থাকতে ।
নিমাই কিছু ভাবছিল । হঠাৎ কিছু লোক ঘরে ঢুকে ওকে জবরদস্তী নিয়ে গেল ।
মা চিৎকার করে পাডার লোকেদের ডাকলেন । কেউ এলোনা কাছে । মা হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলেন “আমার ছেলে কি দোষ করেছে ওকে ছেড়ে দাও ! ওকে ছেড়ে দাও !! তোমাদের পায়ে পড়ি। ও সারা জীবন পরের উপকার করেছে । এই কি তার প্রতিদান ?”
পাডার বুদ্ধিজীবীরা থানায় গিয়ে ডায়েরি করলেন। থানার বড়বাবু বলেন, “আপনারা কেন উটকো ঝামেলা বাড়ান বলুন তো ? আপনাদের কি কোন কাজ নেই ? আমি দেখছি কি করা যায়।”
না আমাদের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি চাই ।
প্রতিশ্রুতি ! ‘কেন মশাই আমি কি মন্ত্রী না এম এল এ ? আমার অনেক কাজ । আসুন’ হাত জোড় করে বলেন বড়বাবু ।
রাতে নিমাই দাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেল পুকুর পাড়ে । মাথায় শক্ত আঘাত । পাডার ছেলেরা সব্বাই মিলে ডাক্তারখানায় নিয়ে যায় । চার বোতল রক্ত লাগে । মাথায় ছটা স্টিচ লাগে । এখন শয্যাশায়ী । পাশে মা আর দুট ছেলে ।
পরের দিন বিরোধী পার্টির মিছিল বেরোয় । জুলুম বাজি চলবে না । চলবে না ......

হায়রে বিধাতা । তুমি কি সত্যি আছো ? মনে ত হয় না। মিথ্যাচারে ঘৃণ্য রাজনীতিতে দেশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে তবুও তুমি দিব্বি বসে আছো ভোগ খাচ্ছ চোখ,মুখ,কান বন্দ করে । বাঃ বেশ !

Friday, February 14, 2014

যন্ত্র মানব ৩য় পর্ব ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ।

৩য় পর্ব 
সুদীপ্ত , সুদীপ্তা দুজনেই প্রজেক্টের কাজে খুব ব্যাস্ত থাকে । নতুন প্রজেক্ট আর ক্লায়েন্ট নিয়ে ওরা নিজেদের কাজে এতো মসগুল থাকে যে ভালকরে কথা বলার সময় পায় না। এদিকে সুদীপ্তর মা অন্য কথা ভাবেন। ছেলের ফোনের জন্যে বসে থাকেন ভোরে । অনেকদিন ফোন না পেয়ে সুশান্ত কে দাদর খোঁজ নিতে বলেন। সুশান্ত পরের সেমিষ্টারের জন্য প্রস্তুতি চালায়। টপ র্যানঙ্কের জন্য রাত দিন পডাশুন করতে থাকে। ওদিকে শ্রাবন্তি আর ফোন করেনা । ও নিশ্চই ভালো করে প্রিপারেসন করছে । 
একদিন মা দুই ছেলের খোঁজের জন্য মামাকে বলেন,দাদা একটু ফোন করবি ছেলে দুটোকে অনেক দিন কোন খবর পাই না । কি করছে দু জনে কে জানে ? 
নাম্বার আছে?
মা, সুশান্তর নাম্বারটা রেখেছিলেন , বললেন এই নে । 
মামা সুশান্ত কে ফোন করাতে ফোন স্বিচ অফ দেখাল । 
মামা বিব্রত হলেন পরে বুঝলেন নিশ্চই ক্লাসে অথবা পডাতে ব্যাস্ত । বোনকে বললেন ব্যাস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই ওরা দুজনে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত। তুই যা আমি পরে খবর নিয়ে বোলব তোকে ।
আচ্ছা । বলে মা চলে গেলেন ঠাকুর ঘরে । 
নিউয়র্ক সহরঃ-
আলো ঝলমলে রাস্তায় হারিয়ে গেছে সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা । গাডী নিয়ে বেরিয়ে পডেছে ঘুরতে।আজ শনিবার ওদের ছুটি ।বলা বাহুল্য সুদীপ্ত এখানকার ড্রাইভিং ট্রেনিং পাস করে লাইসেন্স পেয়েছে। সুদীপ্তাও জানে তবে এস।উ।ভি চালাতেই ও ভালোবাসে। এখানকার রাস্তাতে গাডী চালানোর মেজাজই আলাদা । লঙ ড্রাইভে যেতে মজা লাগে। সারা শহরের শপিং মল ওদের মুখস্ত। কোথায় ইন্ডিয়ান ডিশ পাওয়া জায় সেখান্থেকে আনে। স্রিম্প প্যাক আনে ব্রকলি আর কেপ্সিকাম দিয়ে সুদীপ্তা ইন্টারনেট দেখে রান্না শেখে । ওরা ওই খায় । দুধ টা ভালো আর ফোর সিরিয়ালের আটা দিয়ে রুটি বানায়। কাল পার্টি আছে। সুদীপ্ত এখানে প্রজেক্ট ম্যানেজার হল তাই। এতো তাডাতাডি পি।এম হওয়া আর নতুন প্রজক্টে এর দায়িত্ত নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ওর প্রজেক্টের কাজের জন্য একজন সিনিয়ার প্রজেক্ট ম্যানেজার (SPM ) ওকে গাইড করবেন। 
আজ শনিবার ওহিও তে পার্টি দিচ্ছে সুদীপ্ত এবং সুদীপ্তা দুজনে। প্রায় জনা ১৬ র মত নিমন্ত্রিত ছিলেন। সুদীপ্তার মা বাবা উইস করলেন ওদের দুজনকে। সুদীপ্ত অনেক দিন পর মাকে প্রনাম জানালো । নতুন প্রমোশনের কথা জানালো । মা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলেন,মামা,মামি সকলেই খুব খুশি হলেন এই সম্বাদে । সুশান্ত কে ফোনে পেল না সুদীপ্ত । মনটা একটু খারাপ হল। পার্টি রাত প্রায় ১০ টা অবধি চলল । এখন সুদীপ্ত-সুদীপ্তা দুজনেই ওহিও তে থাকবে। 

সুদীপ্ত কাজে এতো ব্যস্ত থাকতো যে মাঝে মাঝে সুদীপ্তা ওকে কাছে পেত না। এমনকি রাতে সুদীপ্ত অফিসে থাকতে আরম্ভ করে। রাতের পর রাত সুদীপ্তা র অশহ্য লাগে । মাকে ফোন করে বলে । মা বলেন কাজের মানুষ দের একটু সহ্য করতে হয় মা । আমি জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু ও ত কঞ্জারভেটিভ ছেলে হয়তো ওর মা কিছু বারুন করেছেন।
না মা সেরকম নয়। ওর মা’র সঙ্গে অনেকদিন কথা বলে নি ও ফোনে। এমন কি আমার সঙ্গে দু একটা কথা তাও অফিসের ছাডা অন্য কথা নয়। এরা কিরকম পুরুষ মানুষ ? এদের কি ইচ্ছে বলে কিছু নেই মা?
মাই চাইল্ড্ । ইউ হ্যাভ গ্রোন আপ্ । টেক ইওর ওন ডিসিসন্ । আই উইল টক টু ইওর ডেড্ ওকে । কুল বেবি কুল।
এর মধ্যে সুদীপ্তার অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হয়। অর্ণব, প্লেন্টো টেক্সাসে , ভাইস চেয়ারম্যান অফ দি বোর্ড ক্লাউড সিকিইরিটি তে কাজ করে। ও এখানকার গ্রীন কার্ড হোল্ডার । অর্ণবের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সুদীপ্তা ওর সঙ্গে বেশি মেলা মেসা করতে থাকে । শপিং মলে উইক্ ডেয়েসে শপিং করে । সুদীপ্ত কাজে ব্যাস্ত। ও কম্পানি চেঞ্জ করবে শুনছি। 
অর্ণবের কথা মাকে বলেছে । মা সেরকম সায় দেন নি। বলেছেন, “তোমার জীবন সঙ্গি তুমি নিজে বেছে নাও যেরকম আমরা করেছি । তবে আমি এক জনকেই ভালো বেসেছিলাম তিনি তোমার বাবা।” নাও ইট ইস আপ্ টু ইঊ ! উই হ্যাভ গিভেন ইউ ফ্রিডম বাট ইউ মাস্ট নট টেক দ্যা এডভান্টেজ অফ ইট । 
মামা আই লাভ সুদীপ্ত বাট হি নেগ্লেক্টস মে মামা ! কান্তে কান্তে বলে।
মে বি হি ইস ওভার এম্বিসিয়াস । ওয়েট এন্ড সি । ডোন্ট ট্রাস্ট নেটিভ এমেরিকান মাই বেবি । 
ওকে মামা । বাই। 
বাই।
সুদীপ্ত রাত করে ফিরেছে । ওর মুখে ক্লান্তির ভাব । এসেই সুয়ে পোডলো । সুদীপ্তা বিছানায় কাছে টেনে কিস করতে চাইলো কিন্তু সুদীপ্ত বললো কালকে ললিপপ খাবো আজ শুয়ে পড প্লিজ। আমি খুব টায়ার্ড ।
কি ভাব তুমি আমাকে সু ? আমার কোন ইচ্ছে নেই ! কেন আমাকে তুমি এভোয়েড করছো ? 
না না আমাকে ভূল বুঝো না। আমি সত্যি টায়ার্ড । আমাকেও বুঝতে চেষ্টা কর। 
আমি ..আমি.. না থাক ! 
সুদীপ্ত শুয়ে পডেছে । একটা বাচ্চা ছেলের মত লাগছে ওকে।
সুদীপ্তা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমতে চেষ্টা করলো । 
সকালে ঘুম থেকে সুদীপ্ত এম্নিতেই তাডা তাডি উঠে পডে কিন্তু আজ ওর আগে সুদীপ্তাকে না দেখে আশ্চর্্য্য লাগলো ।একটা ভাঁজ করা চিঠি ড্রেসিং টেবিলের ওপোর দেখে ছ্যাঁক করে উঠলো । 
দীর্ঘদিন রইলাম তোমার হয়ে সুদিপ্ত , তোমায় ভালবেসে, অভ্যাসে অনভ্যাসে, সুখে দুঃখে । অথচ দেখ, তোমায় ছেড়ে যেতে একটুও কষ্ট হচ্ছেনা আমার । এত ভালবাসলে আমায়, আমি কি একটুও বাসিনি তবে ? খুব বেসেছি। কিন্তু আমার ওপর তোমার অধিকার বোধ, তোমার মালিকানা, তোমার নিজস্ব পছন্দ অপছন্দগুলোকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া, আমার আলাদা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রাটাই মানতে না চাওয়াটা মনে মনে হাঁপিয়ে তুলত আমায়, হাঁপিয়ে তুলছিল । আমি মুক্তি চাইছিলাম। চাইছিলাম একমুঠো আকাশ। একটু বাতাসের দমকা স্পর্শ। একটুকরো স্বাধীনতা । আর আজ যে তোমায় শুধু সেইকারণেই সেভাবে ভালোবাসিনা। ভালোবাসতে পারছিনা।কারন ভালোবাসার নাটকে আমি অভ্যস্ত নই। একথা তোমাকে জানাতে খুব খারাপ লাগছে ! হয়ত হ্যাঁ, আবার, হয়ত না । ভাবছো তো তোমাকে বহুদিন ধরে প্রতারনা করেছি । কিন্তু মনের দিক দিয়ে না । সেজন্য সত্যি বড় কষ্ট হয়েছে বুকের ভিতর ! বার বার বলতে চেয়েছি তোমাকে। আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্কটাকে বিশ্বাসহীনতার চোরাবালির ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারছিনা! অথচ যতবার এসব বলতে গিয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়েছি, ভেসে গেছি তোমার ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে, মাদকতায়, সমর্পনে। আমার মনের মানুষটিকে তোমার চেনার কথা নয় । তোমার চোখের আড়ালে ওর সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেও তো কম দিন হলনা। আমেরিকা তে আসার পর থেকে তুমি শুধু কাজ নিয়ে মাতলে। আমাকে অবঙ্গা করেছ । হয়তো না জেনে কিন্তু তুমি তোমার ব্যক্তি স্বাধিনতা কে প্রাধান্য দিয়েছ । আমি অন্ধকারে হাত বাডিয়ে তমাকে অন্ধের মত খুঞ্জেছি । পাইনি আমি সেই সুদিপ্ত কে যে আমায় অকুন্ঠ ভালোবাস্তো। আজ আর এসব কথার কোন অর্থ নেই । দুই পরিবারের সম্মতিতেই আমরা বিয়ে করে নিয়েছি সুদিপ্ত। আমি তোমাকে ঠকাই নি । আমি জা চাই তা পেলাম না তোমার কাছ থেকে তাই চাইছিলাম মুক্তি । তোমার অহমিকার কাছে আমি নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলাম না ।আমার দ্বিতীয় স্বামি অর্ণব খুব ভালো ছেলে ও আমার সব কথা শুনেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হল।আমিও স্বাধিন। ও খুব নরম মনের ভালো মানুষ । বিশ্বাস কর, খুব সুখে থাকব আমি ওর সাথে । আমায় নিয়ে আর না ভেবে নিজের খেয়াল রেখো । ওটাই বাস্তব । একা থেক না আর । পারলে খুব তাড়াতাড়ি একটা বিয়ে করে নিও । তোমার মা আমাকে কখন পছন্দ করতেন না তাই তুমি মুক্ত। আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম । তুমি হয়তো আমার জন্য দুঃখ করবে তবে সেটা সাময়িক । পরে কাজের চাপে ভুলে যাবে । ভাল থেক । এটা লিখতে লিখতে আমার চোখ থেকে অবিরাম অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে । কাল সারা রাত আমি শুতে পারিনি আমিও ত মানুষ কিন্তু তোমার মত যন্ত্রমানুষ নই। বাই বাই । ভালো থেক আমাকে ভূলতে চেষ্টা কর । পারলে একটা ফুট ফুটে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে কর। 
সুদীপ্ত চিঠিটা ধরে বাচ্চা ছেলের মত কাঁদতে লাগলো । ভূল তার, কিন্তু জীবনে একটা মেয়ের সংস্পর্শে এসেছিল সে এরকম প্রতারনা করবে বুঝে উঠতে পারেনি। বাবা মায়ের কথা মনে পডলো । হয়তো মা চাইছিলেন না। তাই এরকম হল তার জীবনে । সে ফিরে যাবে ইন্ডিয়া তে। নতুন করে জীবন শুরু করবে আবার । জন্ত্র মানুষ নয় সুধু মানুষ হয়ে । মাকে নিয়ে যাবে বেঙ্গালুরুতে । তিরুপতী দর্শন করাবে । ভাইকে আরো পডাবে । সে যেন তার মত দুঃখ না পায়।
****এটা শেষ নয় এটাই আরম্ভ । 
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯.০৭.২০১৩ / সোমবার ।

Thursday, February 13, 2014

ফুটবল বনাম আই পি এল ক্রিকেট ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৩.০২.২০১৪ / বেলা ১২.৩৫

ফুটবল বনাম আই পি এল ক্রিকেট
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১৩.০২.২০১৪ / বেলা ১২.৩৫ 
আমাদের ছোট বেলার কথা মনে পডে । স্কুল থেকে ফিরে বই খাতা ছুঁড়ে ফেলে খেলার মাঠে ছুটতাম খেলতে । হয় ফুটবল নয় ক্রিকেট কিম্বা ভলিবল । খেলা না করলে আমাদের পেটের ভাত হজম হত না । বিকেল ৫ টা থেকে ৬টা , টানা এক ঘণ্টা খেলে বাডী ফিরতাম । তখন ক্লাবে খেলার জন্য মাসে ১ টাকা জোগাড় করতে নাকে খত দিতে হত মায়ের কাছে । অবশ্য ১ টাকার মূল্য অনেক ছিল সে যুগে । এখনকার ১০০ টাকার সমান ।আমাদের ক্লাবের ছেলেরা এক একজন এক এক দিকে পারদর্শী, কেউ ভালো সেন্টার ফরোয়ার্ড ত কেউ  ভালো গোল স্কোরার । ক্লাবে ক্লাবে র মধ্যে ফুটবল ম্যাচ হত । কোন বিধায়ক কিম্বা মন্ত্রী আসতেন না , আসতেন ভালো কোচ । যিনি আমাদের ফুটবল গুরু । আমাদের ভুল শুধরে দিতেন আমাদের প্রেরণা দিতেন । আমরা তাঁকে শ্রী গোস্ট পালেরমতন সম্মান করতাম , পায়ের ধুলো নিতাম কারন তাঁর কাছথেকে অনেক কিছু খেলার টেকনিক শিখতাম ।  আমাদের দ্রোণাচার্য ছিলেন সেরকম এক ব্যক্তি তাঁর নাম ‘শঙ্কর মিত্র’ । আমরা শঙ্কর দা বলে ডাক্তাম। শঙ্কর দা অধুনা বাংলা দেশের খুলনার লোক । একটু বাঙ্গাল কথা বলতেন বটে তবে খেলা সেখাতেন চমৎকার ।
 আমাকে ডেকে বলতেন, মাছ ভাত খাইসস ?
আমি বলতাম আমি মাছ খাইনা , মাংস খাই ।
তোর দ্বারা কিসসু হোই-বোনা , ঘোটির পোলা । এদিকে আহ । নে বল থুইয়া কিক কর দেহি  ।  
বল রেখে কিক করতাম । বেশি দুর যেতো না । কিক করার টেকনিক ও ভুল ছিল ।শঙ্কর দা শেখাতেন ঃ ফ্লাইং সট , সিজার কাট , স্পিন সট আর কত কিছু মনে নেই ঠিক । বলা বাহুল্য ঘটির পোলা বললে মনে কষ্ট হত বটে কিন্তু মানুষটার মধ্যে কোন ক্ষেদ ছিলনা । অমায়িক স্নেহী মানুষ আমাদের সকলকে খুব ভালো বাসতেন ।
বলা বাহুল্য আজকাল ওরকম কোচ নেই কি ছেলেরা খেলার মাঠ ও দেখেনি । ওদের ই বা দোষ দি কি করে খেলার মাঠ ত প্রোমোটার কায়দা করে কিনে এপার্টমেন্ট করে ভালো মাল কামাচ্ছে । ডোবা বুজিয়ে , পানা পুকুর বুজিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বুডো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাতু ফোটার মত এপার্টমেন্ট গজাচ্ছে । ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে অধিকাংশ মেদবহুল বপু বিচ্ছিরী ধরনের মোটা । আইসক্রিম আর ফাস্ট ফুডের জমানায় খুব কম বয়েসে মুটিয়ে যাচ্ছে সব। খেলার মাঠের চেয়ে শপিং মলে প্রজাপতির সঙ্গে ফুর্তি করলে কাজ দেবে । মনে মনে ভাবি  শরীর চর্চা যে কত প্রয়োজন তা বুঝতে সময় লাগবে এদের। অল্প বয়েসে ডায়াবেটিস , হাইপার টেনশন , থাইরয়েডে ভুগছে । ডাক্তার রা ভালো দু পয়সা কামাচ্ছে । আমাদের আমলে এতো ডাক্তার ও ছিলনা আর এতো রোগ ও ছিলনা । লোকে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কাজ করতো । তখন ৮০-৯০ বছর অনায়াসে মানুষ বাঁচত এখন ৬০ বছরেই সব ধুঁকছে আর ওষুধ গিলছে । ডায়েট কন্ট্রোল করছে এটা খাওয়া মানা ওটা খাওয়া মানা
প্রসঙ্গে আসি , সেই শঙ্কর দা আমাদের যিনি খেলা শেখাতেন তাঁর সঙ্গে অনেক দিন পরে হাতি-বাগানে দেখা । বুডো হয়ে গিয়েছেন , চুল পডে গিয়েছে ,কিন্তু দাঁত আসতো আর সুঠাম শক্ত পেটানো চেহারা সেখানে আমাকে বুডো লাগে । এখন সোজা হাঁটছেন ।
ও শঙ্কর দা চিন্তে পার ?
কে আপনি ? ঠিক চিনলাম না ।
তোমার ঘোটির পোলা গো আমি । চিন্তে পারো বলে প্রণাম করি।
আমার মাথায় হাত রেখে বলেন, ওরে তুই হালার পো ঘোটির পোলা এতো বুডা হইলি কি কোইরা দেখছস মাছ না খাইয়া কি হাল করশস শরীরের । আমারে দেখ আর তোরে দেখ ! কি করিস ?

মনে রেখেছ তবে ।  গত বছর রিটায়ার করেছি । এখন কোলকাতায় ছেলের কাছে আছি ।
মনে থাকবেনা ক্যান ?   ঘর করিস নাই ? ছেলের বাসায় থাকস ক্যান?
করেছি গো তবে ছেলে বৌ আর নাতনী কে নিয়ে বুডো বুডি বেশ আছি ।
দ্যাখো কান্ড । নিজেরে বুডা বলিস ক্যান ? ওই জন্যই বুডা হয়ে যাচ্ছিস ।
তা যা বলেছ । তুমি কোথায় আছ ?
তা কইও না । ভালো না । তোর বৌদি যাওয়ার পর শরীর মন আমার ও ভালো নাই । আছি ! চলে যাচ্ছে !!  পেনসন ত বাড়েনা তেমন । ওই টাকায় কি হইবো ? বাপ দাদার বাডি ঘর না থাকলে পথে বসতে হইত ।  
চল না শঙ্কর দা এক কাপ চা খাই ।
আমি ত চা খাইনা । তুই জানস না !
হুম । তা ঠিক । ভুলে গিয়েছি । এখন কোচিং দাও ?
ধুর ! ফুট বল আর কেউ খেলে নাকি !! হালার পো এক খান ব্যাট ধইরা ঝাড়ু মারে আর আলেকজান্ডারের মত মাথায় হেলমেট পায়ে হাতে প্যাড পইরা এক সঙ্গের খেলা । হালা গুষ্টির পিণ্ডির খেলা । মাথায় ঝাড়ু মারি অমন খেলার । ফুট বলটার সর্বনাশ করলো হালারা। যে পোলা পানেরা খেলা দেখতে যায় ওদের জিগাও ব্যাট হাতে খেলতে পারবে হালারা ? কোটি কোটি টাকা আই পি এল খেলায় লুটছে হালারা। স্কুল কলেজের পড়ুয়া ছেলেদের মাথা চিবুচ্ছে । আমার নাতী ত ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া ক্রিকেট খেলে ।পডা শুনা গেছে গিয়া । 
তুমি কি ক্রিকেটের বিদ্বেষী ?
না তা নয়তবে সব খেলায় প্রাধান্য থাইক্লে খেলা খেলোওাড হকলের মঙ্গল হয় । দেহ য়ুবরাজরে ১৪ কোটি দিয়া রয়েল চেলেঞ্জার্স কিনলো, দিনেশ কার্তিক রে ১২.৫ কোটি দিয়া দিল্লী ডেয়ার  ডেভিলস .....
আমি থামিয়ে, তুমি ত সব রিসেন্ট খবর রাখ ক্রিকেটের , বিশেষ করে আই পি এল  ২০১৪ র ।
আরে কাগজ পডলেই ত খবর পাই । টিভি তে ত ফলাও কইরা বলে । আর কত প্রচার হত ! ফুটবলের যা দশা ..... একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন শঙ্কর দা ।
এখন সৌরভ দাদা গিরিতে এঙ্করিং করছে ।
আর কি করতো ? কোটি কোটি টাকায় ভাসতো এহেন টাকার জন্য ওইসব করতেই হইবো । কিছু ত করবে !
যা বলেছ । আরেকদিন আসবো তোমায় দেখা করতে । পায়ের ধুলো নিয়ে বললাম  তোমার মোবাইল নাম্বার দাও দাদা।  
আমার নাম্বার থেই-ক্যা তোর নাম্বারে কল কর । আমার নাম্বার মনে থাকে না।
ও তা দাও বলে নাম্বার শেভ করে বিদায় নিলাম।  
ফড়িয়া পুকুরে নাতনীর জন্মদিনের জন্য একটা গিফট কিনতে এসেছিলাম । কেসিও ইলেক্ট্রনিক অরগ্যানের ফরমাস আমার নাতনীর । এখন গান শিখছে । ওর দিদা ডবল রিডের হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছেন । আজকাল ছেলে মেয়েদের আবদার শুনলে চক্ষু চডক গাছ হয় । অবশ্য আমরাই লায় দি ওদের ।
ফিরছিলাম ছেলের গাডিতে । আবার রাস্তায় পেন্টুর সঙ্গে দেখা । আজ সব পুরন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে । কি ব্যাপার আমার ভাগ্য !
এই পেন্টু কোথায় চললি ? পেন্টু অন্যমনস্ক ছিল তাই শুনতে পারে নি বোধ হয় । গাডিথেকে নামবার ও উপায় নেই । কোথায় পারকিং করবে? মন্টা খারাপ হয়ে গেল কি যে করি। পুরন দিনের বন্ধু দেখলে ছোটবেলার কথা মনে পডে । সেই দিনগুলো কত সুন্দর ছিল । হারিয়ে যাই পুরন স্মৃতিতে । এমন সময় ছেলে পাসে বলে বাবা সিট বেল্ট টা পরে নিন রাজারহাট দিয়ে যাচ্ছি  ।
এ্যাঁ !  ও হ্যাঁ !!