গৃহ শিক্ষক সনাতন স্যার
আজ মনে পড়ছে আমার ছোটবেলার গৃহ শিক্ষকের কথা । সনাতন স্যারের কথা। উনি খুব গরীব ঘরের মেধাবী ছেলে তাই আমার বাবা ওনাকে আমাদের বাডির একটা গেস্ট রুমে থাকতে দিয়েছিলেন। উনি আমাকে এবং আমার ছোট ভাইকে পডাতেন । আমার তখন ক্লাস ফোর আমার ভাইয়ের ক্লাস টু । দুজনেই সনাতন স্যারের কাছে অঙ্ক করতাম । স্যার খুব ভালো অঙ্ক বোঝাতেন ।
স্যার আমাদের বাডিতে থেকেই বি.এ পরীক্ষা দিলেন । খুব ভালো রেজাল্ট করেছিলেন । ফার্স্ট ক্লাস ডিস্টিংশন উইথ অঙ্ক অনার্স । স্যারের ইচ্ছে ছিল বি.এস.সি পডা ফিজিক্স অনার্স নিয়ে কিন্তু হয়ে ওঠেনি নানা কারনে। আমাকে ছোট বেলা থেকেই খুব উৎসাহ দিতেন সাইন্স নিয়ে পডতে । নানা রকমের ছোট ছোট এক্সপেরিমেন্ট করে বোঝাতেন সেটা কি করে হচ্ছে । আমি ক্লাস সেভেনে টু ট্রানজিস্টার রেডিও বানাই । সেটার সাফল্যে স্যার আমাকে একটা সোল্ডারিং আয়রন কিনে দেন। তখন রেডিও বানান একটা দারুণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু স্যার সার্কিট ডায়াগ্রাম করে প্রত্যেকটা কম্পোনেন্টের যেমন ট্রান্সিস্টার , কনডেনসার , রেসিস্টান্স কি ? তাদের কাজ কি ? কটা ইলেক্ট্রোড থাকে ? এই সব বোঝাতেন আমাকে । রেসিটান্স কালার কোড দেখে কি করে রেসিস্টান্স বোঝা যায় , পি.এন.পি ট্রান্সিস্টার কি ? এন.পি.এন ট্রান্সিস্টার কি ? ডায়াগ্রাম করে বোঝাতেন। তখনো আই.সি আবিষ্কার হয়নি। এখনকার ছেলেরা ইন্টার নেট দেখে বিনা মাষ্টারে অনেক কিছু যানতে পারে। তখনকার কালে তা সম্ভব ছিলনা।
আমার হবি হয়ে গেল সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট বানানো । ক্লাস টেন এ প্রথম সেভেন ট্রান্সিস্টার রেডিও বানাই ঘরে বসে। একটু একটু করে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বেল কোম্পানির সিলিকন ট্রানজিস্টার কিনে , পি সি বি কিনে তাতে অন্যান্য কম্পোনেন্ট সোল্ডার করে বসাই। পুরো সেট তৈরি করতে ৭,৮ দিন সময় লাগে । প্রথম আমার তৈরি সেই ট্রানজিস্টারে বিবিধ ভারতীর গান শুনি । যদিও সামান্য নয়েজ ছিল । স্যারের প্রচেষ্টায় আমি অনেক কিছু শিখি । পরে স্যার চাকরী পেয়ে চলে যান অনেক দুরে । আমার আর সেরকম যোগা যোগ রইল-না । অনেক দিন পর একটা পোষ্ট কার্ড পেলাম ডিফেন্সে জয়েন করেছেন ক্লারিকালে । আম্বালাতে পোষ্টেড ।
আমার এই খুট খাট ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ চলতে থাকে বাডিতে বসে । কখন বার্গ্লার অ্যালার্ম , ব্যাটারি এলিমিনেটার , ক্ল্যাপ স্বিচ , ড্যান্সিং লাইট , ১০+১০ ওয়াট স্টিরিও এমপ্লিফায়ার ইত্যাদি। পরে ম্যুসিক ডোর বেল বানালাম ।তখন সাইন্স টু ডে বলে একটা ম্যাগাজিন বেরুত । তাতে অনিল ভি.বোরকার নামে এক লেখক “ইউ টু কেন ডু ইট” বলে লেখা বার করতেন যাতে বিভিন্ন সার্কিট ডায়াগ্রাম থাকতো । বলা বাহুল্য তখনকার দিনে আমরা কম্পুটার আবিষ্কারের কথা স্বপ্নেও ভাবি নি । ইলেক্ট্রনিক্সে ভারত তখন অতটা প্রগতি করে নি আজ যা করেছে । জাপানি ট্রান্সিস্টার স্যানিও , ন্যাশনাল পানাসোনিক , ওদিকে জার্মান গ্রুন্ডিগ এইসব ইম্পোর্টেড নাম তখন খুব বিলাসিতার বস্তু ছিল। লোকেদের বাডিতে একটা জি.ই.সি রেডিও থাকলে বিরাট ব্যাপার মনে করত সবাই ।
এরপর কলেজে ঢুকে সব ছেডে দিলাম। আজ এই জন্যই স্যারকে মনে পডছে যে তিনি আমাকে উজাড় করে স্নেহ দিয়েছিলেন আর ছোট ভাইয়ের মত বোঝাতেন সব সুন্দর করে। আমি ওনার অনুপস্থিতি খুব খুব মনে করছি । উনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা করি ভগবানের কাছে ।
আজ ইলেক্ট্রনিক্সের যুগে মহাকাশ যান থেকে এরোপ্লেন , মিসাইল , মোবাইল , কার , ঘডি , খেলনা সবেতেই ওই ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যাবহার । সবেতেই সফটওয়্যারের ব্যাবহার । আমি যা কম্পুটারে বসে বাংলা টাইপ করছি সেটাও সফটওয়্যারের কামাল। তাই বড আশ্চর্য লাগে পৃথিবীতে আরো কত আবিষ্কার বাকি আছে আরও কত নতুন নতুন জিনিষ যা আমাদের ভাবনার বাইরে তা হয়ত আবিষ্কার হবে । আমরা তখন থাকবো না হয়ত আমাদের পরের প্রজন্ম দেখবে ব্যাবহার করবে । বিজ্ঞানের এটাই ম্যাজিক ।
স্যার আমাদের বাডিতে থেকেই বি.এ পরীক্ষা দিলেন । খুব ভালো রেজাল্ট করেছিলেন । ফার্স্ট ক্লাস ডিস্টিংশন উইথ অঙ্ক অনার্স । স্যারের ইচ্ছে ছিল বি.এস.সি পডা ফিজিক্স অনার্স নিয়ে কিন্তু হয়ে ওঠেনি নানা কারনে। আমাকে ছোট বেলা থেকেই খুব উৎসাহ দিতেন সাইন্স নিয়ে পডতে । নানা রকমের ছোট ছোট এক্সপেরিমেন্ট করে বোঝাতেন সেটা কি করে হচ্ছে । আমি ক্লাস সেভেনে টু ট্রানজিস্টার রেডিও বানাই । সেটার সাফল্যে স্যার আমাকে একটা সোল্ডারিং আয়রন কিনে দেন। তখন রেডিও বানান একটা দারুণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু স্যার সার্কিট ডায়াগ্রাম করে প্রত্যেকটা কম্পোনেন্টের যেমন ট্রান্সিস্টার , কনডেনসার , রেসিস্টান্স কি ? তাদের কাজ কি ? কটা ইলেক্ট্রোড থাকে ? এই সব বোঝাতেন আমাকে । রেসিটান্স কালার কোড দেখে কি করে রেসিস্টান্স বোঝা যায় , পি.এন.পি ট্রান্সিস্টার কি ? এন.পি.এন ট্রান্সিস্টার কি ? ডায়াগ্রাম করে বোঝাতেন। তখনো আই.সি আবিষ্কার হয়নি। এখনকার ছেলেরা ইন্টার নেট দেখে বিনা মাষ্টারে অনেক কিছু যানতে পারে। তখনকার কালে তা সম্ভব ছিলনা।
আমার হবি হয়ে গেল সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট বানানো । ক্লাস টেন এ প্রথম সেভেন ট্রান্সিস্টার রেডিও বানাই ঘরে বসে। একটু একটু করে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে বেল কোম্পানির সিলিকন ট্রানজিস্টার কিনে , পি সি বি কিনে তাতে অন্যান্য কম্পোনেন্ট সোল্ডার করে বসাই। পুরো সেট তৈরি করতে ৭,৮ দিন সময় লাগে । প্রথম আমার তৈরি সেই ট্রানজিস্টারে বিবিধ ভারতীর গান শুনি । যদিও সামান্য নয়েজ ছিল । স্যারের প্রচেষ্টায় আমি অনেক কিছু শিখি । পরে স্যার চাকরী পেয়ে চলে যান অনেক দুরে । আমার আর সেরকম যোগা যোগ রইল-না । অনেক দিন পর একটা পোষ্ট কার্ড পেলাম ডিফেন্সে জয়েন করেছেন ক্লারিকালে । আম্বালাতে পোষ্টেড ।
আমার এই খুট খাট ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ চলতে থাকে বাডিতে বসে । কখন বার্গ্লার অ্যালার্ম , ব্যাটারি এলিমিনেটার , ক্ল্যাপ স্বিচ , ড্যান্সিং লাইট , ১০+১০ ওয়াট স্টিরিও এমপ্লিফায়ার ইত্যাদি। পরে ম্যুসিক ডোর বেল বানালাম ।তখন সাইন্স টু ডে বলে একটা ম্যাগাজিন বেরুত । তাতে অনিল ভি.বোরকার নামে এক লেখক “ইউ টু কেন ডু ইট” বলে লেখা বার করতেন যাতে বিভিন্ন সার্কিট ডায়াগ্রাম থাকতো । বলা বাহুল্য তখনকার দিনে আমরা কম্পুটার আবিষ্কারের কথা স্বপ্নেও ভাবি নি । ইলেক্ট্রনিক্সে ভারত তখন অতটা প্রগতি করে নি আজ যা করেছে । জাপানি ট্রান্সিস্টার স্যানিও , ন্যাশনাল পানাসোনিক , ওদিকে জার্মান গ্রুন্ডিগ এইসব ইম্পোর্টেড নাম তখন খুব বিলাসিতার বস্তু ছিল। লোকেদের বাডিতে একটা জি.ই.সি রেডিও থাকলে বিরাট ব্যাপার মনে করত সবাই ।
এরপর কলেজে ঢুকে সব ছেডে দিলাম। আজ এই জন্যই স্যারকে মনে পডছে যে তিনি আমাকে উজাড় করে স্নেহ দিয়েছিলেন আর ছোট ভাইয়ের মত বোঝাতেন সব সুন্দর করে। আমি ওনার অনুপস্থিতি খুব খুব মনে করছি । উনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা করি ভগবানের কাছে ।
আজ ইলেক্ট্রনিক্সের যুগে মহাকাশ যান থেকে এরোপ্লেন , মিসাইল , মোবাইল , কার , ঘডি , খেলনা সবেতেই ওই ইলেক্ট্রনিক্সের ব্যাবহার । সবেতেই সফটওয়্যারের ব্যাবহার । আমি যা কম্পুটারে বসে বাংলা টাইপ করছি সেটাও সফটওয়্যারের কামাল। তাই বড আশ্চর্য লাগে পৃথিবীতে আরো কত আবিষ্কার বাকি আছে আরও কত নতুন নতুন জিনিষ যা আমাদের ভাবনার বাইরে তা হয়ত আবিষ্কার হবে । আমরা তখন থাকবো না হয়ত আমাদের পরের প্রজন্ম দেখবে ব্যাবহার করবে । বিজ্ঞানের এটাই ম্যাজিক ।