Thursday, November 28, 2013

ভূতকোঠির গল্প / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯।১১।২০১৩


আমার নিজের অভিঙ্গতা থেকে বলি একটা সত্যি ঘটনার কথা । এখন পুরী বদলে গিয়েছে । এখন ওখানে ভুতেদের থাকার জায়গা নেই । ঘন জন বসতি । কিন্তু একদিন ছিল কিছু পোড বাডীতে বিশেষ করে ভূতকোঠিতে কোন লোক জেতে ভয় পেত । আমি এটা ১৯৬০ দশকের কথা বলছি। ১৯৬২-৬৩ হবে বোধ হয় । ঠিক মনে নেই। তবে এখন ওখানে আপার্টমেন্ট হয়ে গিয়েছে।

পুরীতে ক্যাথোলিক চার্চের পেছনে লাগাও বিশাল এক বাডী আছে । লাল রঙের বাডীটা । অবস্থিতিটা বলছি , যারা পুরী গিয়েছেন লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা ; পুরীর ভি আই পি রোড ধরে- আর্মস্ট্রং রোড দিয়ে সমুদ্রর দিকে যাওয়ার সময় ডান দিকে পডে ওই বাডীটা । ভগ্ন প্রায় কিন্তু বিশাল বাডী । প্রায় দু একরের মত যায়গা নিয়ে বাডীটা একটা বিশাল উঁচু যায়গার ওপর অবস্থিত । রাস্তা থেকে লক্ষ্য করলেই মনে হয় পোড বাডী । কিন্তু না ওটা কিছুদিন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস হয়েছিল । তার আগের এবং পরের কথা বলি । এই বাডীটা আমাদের পৈতৃক পুরীর বাডী থেকে একদম কাছে পায়ে হাঁটার দূরত্বের মধ্যে । এর বিষয় অনেক গল্প শুনেছিলাম তাই ছেলেবেলায় আমি ঐ বাডীর ধারে কাছে জেতা-মনা ।
কি এক কারনে আমার ছেলেবেলার বন্ধু ‘জগা’ র সঙ্গে খেলাধুলোর পর বাডী ফিরছিলাম ঠিক ঐ বাডীর পাস দিয়ে যে রাস্তা গিয়েছে সেটা দিয়ে । প্রায় সন্ধ্যে হয়ে আসছিল । শীত কালের বিকেল ছিল । গা ছম ছম করছিল । আমি প্রায় দৌড়ে চলেছি । জগা আমায় ডাকছে পেছন থেকে । আমি কর্ণ পাত না করে চোঁ চাঁ দৌড়লাম। চার্চের কাছে পৌঁছে দেখি জগা আসেনি তখন । কি হল জানার কৌতূহল হল কিন্তু ভয়ে ফিরে গেলামনা । জগার বাডী আমাদের বাডীর কাছে তাই ওর ওপরের ভাই ‘বসন্ত’দা কে খবর দিলাম। জায়গাটা বুঝিয়ে দিলাম । আমাকে বসন্ত দা সঙ্গে যেতে বললো । ওর আরও দুজন বন্ধুকে সঙ্গে করে আমরা ঠিক যেতে বেরুচ্ছে সেই সময় জগা আসছিল দেখলাম । আমাকে দেখে কিছুই না বলে জগা সটান ঘরে ঢুকে গেল। নিজেকে অপরাধী মনে হল । ঘরে ফিরে এলাম নাহলে মা’ বকা বকি করবেন । সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসতে হবে । বাডীতে কিছুই বলা হয়নি ।
পরের দিন জগা স্কুলে আসেনি দেখলাম । ওর দাদা বলল ,জগার জ্বর হয়েছে । ওর বাবা শুনলে বকবেন তাই যাইনি ভয়ে । কিন্তু পরে ডাক এলো । ওর মা ডেকে পাঠিয়েছেন । অগত্যা যেতেই হল । ডাক্তারের কোন ওষুধ কাজ করছিলো না । তখনকার এল এম পি ডাক্তার ; আজকালকার এম ডি র চেয়ে বেশি প্রাক্টিকাল । কিন্তু ওনার ওষুধ ও কাজ দিল না । আমায় ডাক্তার বাবু জিঙ্গাসা করলেন কি হয়েছিল ঘটনা । আমি পুরোটা বলার পর আবার ওষুধ লিখে দিলেন । কিন্তু জ্বর রিমিসনের নাম নেই। শেষে ওঝাকে ডাকা হল । ওঝা এসে কি কেরামতি করলো কেজানে , জগা , ওঝাকে দেখেই গাল মন্দ করতে লাগলো ।
ঝাঁটার বাডি পডাতে কি সব আওডাতে লাগল বুঝলামনা। কিন্তু ফল দিল। এর পর শুনি আমি আসার পর জগা একটা ছায়ার মত কি দেখে ভয় পায় । আমাদের দুজনের ই বয়েস অল্প ছিল। তাই ঘটনাটার গুরুত্ব কেউ দিলোনা ।

বেশ কিছু দিন পর আমাদের পিসতুতো দাদা 'দিলুদা' বর্ধমান থেকে এলেন । উনি খুব মজার মানুষ ছিলেন এবং সাহসী । দুর্গ স্টেশনের এসিস্টান্ট স্টেশন মাষ্টার ছিলেন। রেলের পাস ছিল তাই চলে আসতেন ছুটি পেলে । আমার মা ওনাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন তাই আমাদের মা' কে খুব ভালোবাসতেন । এলেই খুব খাওয়া দাওয়া হত । এরপর আমার মুখে দিলুদা ওই গল্প শোনেন । শুনে বলেন,"চলত কোথায় উড়ে ভূত আছে দেখি" ।                                                                                 আমি পডি ফাঁপরে । আমরা সকলেই বলি ওই দুঃসাহস করনা । অনেক ঘটনা ঘটেছে ওখানে । কে কার কথা শোনে । বললেন ,"আমি রাতে ডিউটি করি একা ; আদ্যা-পীঠ,কালীঘাট,তারাপীঠ সব ঘোরা আমার। ফি বছর জাই । চল দেখি তোদের উডে ভূত কি করে আমার !"।                                                                                                                                         মা রেগে অস্থির বলেন,"ও দিলু রক্ষ্যে কর বাবা ওখানে যাসনে ।" দিলুদা বলেন, "কিছু হবেনা বডমামি, তুমি না বাংলা দেশের মেয়ে! তোমরা দেখ আমি রাতে ওখানে যাব"।                                                                                                        

 মা নিজের মাথার দিব্বি দিয়ে বলেন,"তোর মাকে এখুনি ফোন করছি , তোকে আমার দিব্বি বাবা যাসনে ওখানে " ওটা খুব বাজে জায়গা । অনেক ঘটনা ঘটেছে । ঠিক আছে তুমি যখন বলছও জাবনা । তবে ...! তবে কি? শুনি! মা বলেন
এরপর সিনেমা দেখার নাম করে আমার ওপরের ভাইকে সঙ্গে করে ওই ভুতুড়ে বাডীতে গেলেন। তারপরের ঘটনা না শুনলেই ভাল । মেজদা বলে ওর সাঙ্গ পাঙ্গ কে নিয়ে যায় ওই ভূত-কোঠিতে । দিলুদা গেট পেরিয়ে ভেতোরে ঢুকতেই ওনার কাল ঘাম ছোটে । একটু গিয়েই ফিরে আসেন বলেন বডমামির কথা মনে পডলো চল চলে যাই । কি দেখেছেন কিছুই বোঝা গেলনা ।
ভূত সত্যি আছে কিনা আমরা জানিনা । মনে হয় আমাদের মনের ভুল । তবে কিছু নিশ্চই আছে ।

Friday, November 22, 2013

=অপরাধীর পেছনে= (অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী) -বিভূতি চক্রবর্তী

=অপরাধীর পেছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী)
-
বিভূতি চক্রবর্তী
(
১)

শুধুমাত্র তৎপরতা,'পুলিশ-কুকুরের'কেরামতি নয়,নয় কোন আধুনিক
বিশেষজ্ঞের অমূল্য সহায়তা,শুধুমাত্র তদন্তকার্যে তৎপরতার সাহায্যেও
কি করে যে চমৎকারভাবে অপরাধীদের পাকড়ানো সম্ভব,এ হলো সে রকম রোমাঞ্চকর অভিযানের একটি কাহিনী।
রাত তখন দুইটা।শান্ত পৃথিবী ঘুমিয়ে রয়েছে ধূসর দিগন্তের সবুজ
আঁচলে। চরাচর নিস্তব্দ,নিঃঝুম।আমার দুচোখে ঘুম নেই। বারান্দায় সেন্ট্রি
থানা পাহারা দিচ্ছে। বাইরে শোনা যাচ্ছে বাজারের দিকে 'নাইট পেট্রল পার্টির কলরব। মাঝে মাঝে দু'একটা রাতজাগা পাখীর বিচিত্র চিৎকার।
শুধু আমার চোখেই ঘুম নেই। কেস ডায়েরীর পাতর পর পাতা লিখে চলছি
আমি-তিনটা মোকদ্দমা শেষ করতে হবে আজ রাত্রির মধ্যেই। ঊর্দ্ধ্বতন অফিসারের চাপ আর ভালো লাগে না-কাজ আর কাজ,শুরু নেই,শেষ নেই- তবুও করে যেতে হবে। অধস্তন কর্মচারীদের সেন্টিমেন্ট বলে কোন
পদার্থ আছে,এ তাঁদের কাছে একেবারেই অবিশ্বাস্য। অনেক কাজের চাপে
ব্যতিব্যস্ত মন এক এক সময় ভাবে,তাঁদের ধারণা অধস্থন অফিসারদের
জন্ম বুঝি শুধু অবিরাম কাজ করে যাওয়া আর অনবরত বকুনি খাওয়ার জন্যে।
আর 'পাবলিক'ও মনে করে,পুলিশের কাজ শুধু মানুষ পিটানো। ওঁদের
কেউ যদি দেখতেন এসে আজকের পুলিশের জীবনের করুনতম দিক,প্রতিকূল
পরিবেশের কি বন্ধুর পথ বেয়ে চলতে হয় পুলিশকে তার কর্মজীবনে,তবে
হয়তো ওঁরা আপনা থেকেই এগিয়ে আসতেন পুলিশের সাহায্যকল্পে। কেন যে
বুঝেন না ওঁরা যে ওঁদের সাহায্যের জন্যই পুলিশকে ওঁদের সাহায্য করা প্রয়োজন। আজকের সমস্যা আগেকার মতো কোন একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে নয়,
নয় কোন বিশেষ অপরাধী গোষ্ঠীকে নিয়ে-আজকের সমস্যা সমাজের
অনেক স্তরেই বিস্তৃত। এই সমাজিক সমস্যাজড়িত জটিলতা দূর করা একা
সাধ্যাতীত,তার জন্য জনসাধারনের সার্বিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

.....
চ ল বে











Top of Form

=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী)

-
বিভূতি চক্রবর্তী
----------

(
পূর্ব প্রকাশিতের পর)
-
২-

......"
বড়বাবু,বড়বাবু-"
নিশুতি রাত্রির বুক চিরে এ কার আর্ত চিত্কার-হাতের লেখা থেমে গেল। আমার সেন্ট্রি
সতর্ক হয়ে দাঁড়ালো। তারপর হঠাৎ বললো-"স্যার,আপনি? কি হয়েছে?"বাইরে একটা চেনা গলা শুনলাম-"বড়বাবু কই?"আমি আমার রুম থেকে বেরিয়ে এলুম। তারপর ডাঃ রায়কে দেখে চমকে উঠলুম-"এ কি ডাক্তারবাবু,আপনি?এত রাত্রে?"
ডাঃ রায় কান্নায় ভেংগে পরলেন-বললেন,"বড়বাবু,আমার সর্বনাশ হয়েছে,একটু আগে চোরে আমার সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে।" আমি ডাঃ রায়কে সান্ত্বনা দিয়ে
বললাম,"চলুন,তাড়াতাড়ি আপনার বাড়ী যাই,ঘটনাস্থলটা দেখি কি হয়েছে?তারপর আমরা দেখবো কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।"
অপরাধ বিজ্ঞানে ঘটনাস্থলের গুরুত্ব অপরিসীম। অপরাধী কর্তৃক কোন সূত্র পড়ে থাকতে পারে ঘটনাস্থলে যা দিয়ে সহজেই তাদের পাকরাও করা সম্ভব।তাই কালবিলম্ব
না করে এস আই চৌধুরীকে সংগে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ডাক্তারবাবুর বাড়ীর দিকে।
সংগে পাঁচজন সিপাহী।
ডাক্তারবাবুর বাড়ীতে এসে দেখলাম তাঁর স্ত্রী কান্না থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
বুঝলাম,সদ্য অপহৃত অলংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীর শোকে তিনি মুহ্যমানআমি এখানে অনাবশ্যক দেরী না করে ডাক্তারবাবুকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করে
নিলাম-"আচ্ছা ডাক্তারবাবু,আপনার এই বাক্সটা কোথায় থাকতো?"
ডাক্তারবাবু ঘরের কোণে একটা বেঞ্চ দেখিয়ে বললেন,"এই বেঞ্চটার উপর"।
"
কাপড়-চোপড়?"
"
কিছু ঐ আলনায়,বাকীগুলি বাক্সে।"
"
টাকা?"
"
এই বাক্সেই।"
এবার ডাক্তারবাবুর স্ত্রীকে কিছু প্রশ্ন করলাম-
"
মাপ করবেন,আমি আপনার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি,তবু কয়েকটা প্রশ্নের জবাব না পেলে আমার অসুবিধা হবে"
ভদ্রমহিলা কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন,
"
বলুন"।
"
আপনি কখন টের পেয়েছেন?"
"
হঠাৎ একটা শব্দ শুনে।"
"
তারপর?"
"
শব্দটা শুনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকারের মধ্যেই আমি অস্পষ্ট দেখলাম, একজন লোক ঘরের ভিতর আলনা থেকে কি যেন নিয়ে দরজায় দাঁড়ানো আর
একটি লোকের কাছে দিচ্ছে।
আমি চিৎকার করে আমার স্বামীকে ডাকতেই খোলা দরজা দিয়ে লোক দুটি পালিয়ে
যায় । আমার স্বামী জেগে উঠে আলো জ্বালান।থানায় তখন ২টার ঘন্ঠা বাজে।খোলা
দরজা দিয়ে আমদের ট্রাংকটি বারান্দায় খোলা অবস্থায় পড়ে আছে।

-----
চ ল বে
Top of Form

=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ গল্প)
-
বিভূতি চক্র বর্তী 

-৩-
......একটা মোটা মুলিবাঁশ ও বাক্সের নিকট পড়ে রয়েছে,আলনায় অনেক কাপড় ই নেই। বাক্সে আমার গহনা ছিল,ডাক্তারবাবুর ৮০০ টাকা ছিল আর কিছু গরম কাপড় ছিল-সব নিয়ে গেছে।"
ছিল-সব নিয়ে গেছে।" করুন শোনালো ডাক্তারবাবুর স্ত্রীর কন্ঠস্বর। আমি ডাক্তারবাবুকে
জিজ্ঞেস করলাম,"ডাক্তারবাবু, চোরাই জিনিসের আনুমানিক মূল্য কত হবে?"
অন্তত হাজার ত্রিশেক টাকা তো হবেই"।
ঐ সব কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকে আমি ঘটনাস্থলটি দেখে যাচ্ছিলাম। কয়েকটা বস্তার টুকরা
-
যাতে ধূলার দাগ,একটা আনুমানিক ৪ ফুট শক্ত মুলি বাঁশের গুড়ি আর খোলা বাক্সটি ছাড়া
ঘটনাস্থলে উল্লেখযোগ্য আর কিছুই চোখে পড়লো না। ঘরের ভিতরে একবার তাকিয়ে দেখলাম,দরজার উপরে স্কাইলাইটের ঢাকনাটা বাইরের দিক থেকে খোলা-আর কাঁচের
ধূলার আস্তরনের উপর আলগা আলগা দাগ। সন্দেহ হলো,ঐ রাস্তা দিয়েই চোর এসেছে-
নিজের আংগুলের ছাপ না রাখার জন্যে হয়তো বাঁশের মাথায় বস্তার টুকরা বেঁধে
স্কাইলাইটের ঢাকনা ভিতরের দিকে ঠেলে দিয়েছে,তারপর ঐ রাস্তা দিয়ে একজন ভিতরে ঢুকে দরজা
খুলে দিয়েছে। চোরের সংখ্যা আনুমানিক ৩।৪ জন হবে। আর কোন জিনিষই সেখানে পেলাম না। অপরাধীদেরও কোন পাত্তা মিললো না। ডাক্তারবাবুকে বললাম,"ঘটনাস্থলটা যাতে ডিসটার্ব
না করা হয় দেখবেন,আমি ঘুরে আসছি।বাকী রাতটা আপনারা একটু ঘুমিয়ে নিন।"

* * * *

রাত ৩টা। এ এস আই চৌধুরীকে ও সিপাহীদের সংগে নিয়ে চললাম, উদয়পুরের
একটা ট্যাক্সি নিলাম সংগে। হঠাৎ পথে এক যায়গায় এসে দেখলাম কয়েক জোড়া স্পষ্ট
পায়ের ছাপ, জুতার ছাপটা সম্পর্কে নোট রাখলাম,তারপর এগিয়ে চললাম।

এইভাবে আমরা মহারাণী পর্য্যন্ত চলে এলাম। পায়ের ছাপ অনেক আগেই
অদৃশ্য হয়েছিল,তবু মহারাণী চলে এলাম এইজন্য যে অপরাধীরা উদয়পুরের দিকে গেলে
মহারাণী খেয়া পার হবেই। আমি সিপাহীদের ঐ খেয়াঘাটে থেকে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের
জন্য অপেক্ষা করতে বললাম,তাদের যথারীতি উপদেশ দিয়ে দিলাম। রাত শেষ হয়ে এসেছে-পূব আকাশে তখন শুরু হয়েছে রংএর খেলা। কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এই অরণ্য পর্বতে।
মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম অদৃশ্য মহাশিল্পীর আঁকা এই সব অতুলনীয় চিত্রসম্ভার- ভোরের আকাশ, ভোরের বাতাস,সবুজ উপত্যকা- সব মিলিয়ে এ যেন এক
রূপকথার রাজ্য। .........

.........
চ ল বে
Top of Form


=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ গল্প)
-
বিভূতি চক্রবর্তী
(
৪)
...... এস,আই চৌধুরীর ডাকে সম্বিত ফিরে এলো-"স্যার,ঐ যে মহারাণী
ফরেষ্টের শ্রমিকেরা কাজ করছে বাগানে।" ঘড়িতে দেখলাম বিকাল ৪টা বাজে। ট্যাক্সি
ড্রাইভারকে নদীর ধারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে বলে এগিয়ে গেলাম মহারাণী
ফরেষ্ট অফিসের দিকে। ফরেষ্টার তখনও ঘুমুচ্ছিলেন-ওকে না তুলে হেড গার্ডের কাছে জানতে চাইলাম কয়েক ঘন্টার মধ্যে কোন লোক এদিক দিয়ে গেছে কিনা।

হেড গার্ড আমাদের চিনতো। তাড়াতাড়ি কাছে এসে জানালো যে গত ২।৩ ঘণ্টার মধ্যে
কোন অপরিচিত লোকই এ রাস্তা দিয়ে যায় নি। আমি তাকে অনুরোধ করলাম সে
যেন একটু নজর রাখে,আর কোন সন্দেহভাজন লোক দেখলে মহারাণী
খেয়াঘাটে আমার পুলিশ পার্টির কাছে খবর দেয়।
হঠাৎ রাস্তার উপর পায়ের ছাপ দেখলাম, ছাপ গুলি অমরপুরের দিকে গেছে।
পায়ে পায়ে আমি ও চৌধুরী ঐ সব পায়ের ছাপ অনুসরন করতে করতে মাতরংগীপাড়া
পর্যন্ত এগিয়ে এলাম। কিন্তু পায়ের ছাপ আর দেখতে পাওয়া গেল না। এই স্থানটি
থেকে অনেক দূর পর্যন্ত অনেক কিছু দেখা যায়।
সকাল হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন চলাফিরা করতে শুরু
করেছে। আমি আমার বিশ্বস্ত কয়েকজন লোকের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানলাম
কাল রাত্রে কোন লোকই এ গ্রামে আসে নি। নিরাশ হয়ে ভাবছিলাম- কি করা যায়।
হঠাৎ রাস্তায় আমার ট্যাক্সির চাকার দাগের উপর টাটকা ৩।৪ জোড়া পায়ের ছাপ
দেখলাম। ঐগুলি উদয়পুরের দিকে গেছে। এর মধ্যে ৩ জোড়া দাগ জুতার। এই
জুতার দাগ আমি অমরপুরে ও পথে আরো দেখেছি। মাতরংগীতে গাড়ীটা ছেড়ে
পায়ের ছাপ ধরে ধরে আমি ও চৌধুরী এগিয়ে চললাম। ড্রাইভারকে বললাম-
মহারাণী থেকে পার্টিটা নিয়ে কিছুক্ষন পরে আমার সংগে দেখা করতে।...............
..........................................
চ ল বে

-------------------------------------------------------------------
=অপরাধীর পিছনে= 
         (অপরাধমূলক ডিটেকটিভ গল্প)
            -বিভূতি চক্রবর্তী
             (৪)
                 ...... এস,আই চৌধুরীর ডাকে সম্বিত ফিরে এলো-"স্যার,ঐ যে মহারাণী
    ফরেষ্টের শ্রমিকেরা কাজ করছে বাগানে।" ঘড়িতে দেখলাম বিকাল ৪টা বাজে। ট্যাক্সি 
    ড্রাইভারকে নদীর ধারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে বলে এগিয়ে গেলাম মহারাণী 
    ফরেষ্ট অফিসের দিকে। ফরেষ্টার তখনও ঘুমুচ্ছিলেন-ওকে না তুলে হেড গার্ডের               কাছে জানতে চাইলাম কয়েক ঘন্টার মধ্যে কোন লোক এদিক দিয়ে গেছে কিনা।
    
    হেড গার্ড আমাদের চিনতো। তাড়াতাড়ি কাছে এসে জানালো যে গত ২।৩ ঘণ্টার মধ্যে
    কোন অপরিচিত লোকই এ রাস্তা দিয়ে যায় নি। আমি তাকে অনুরোধ করলাম সে
    যেন একটু নজর রাখে,আর কোন সন্দেহভাজন লোক দেখলে মহারাণী  
    খেয়াঘাটে আমার পুলিশ পার্টির কাছে খবর দেয়। 
          হঠাৎ রাস্তার উপর পায়ের ছাপ দেখলাম, ছাপ গুলি অমরপুরের দিকে গেছে।
    পায়ে পায়ে আমি ও চৌধুরী ঐ সব পায়ের ছাপ অনুসরন  করতে করতে মাতরংগীপাড়া 
    পর্যন্ত এগিয়ে এলাম। কিন্তু পায়ের ছাপ আর দেখতে পাওয়া গেল না। এই স্থানটি
    থেকে অনেক দূর পর্যন্ত অনেক কিছু দেখা যায়।
                        সকাল হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন চলাফিরা করতে শুরু
    করেছে। আমি আমার বিশ্বস্ত কয়েকজন লোকের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানলাম
    কাল রাত্রে কোন লোকই এ গ্রামে আসে নি। নিরাশ হয়ে ভাবছিলাম- কি করা যায়।
    হঠাৎ রাস্তায় আমার ট্যাক্সির চাকার দাগের উপর টাটকা ৩।৪ জোড়া পায়ের ছাপ
    দেখলাম। ঐগুলি উদয়পুরের দিকে গেছে। এর মধ্যে ৩ জোড়া দাগ জুতার। এই
     জুতার দাগ আমি অমরপুরে ও পথে আরো দেখেছি। মাতরংগীতে গাড়ীটা ছেড়ে
     পায়ের ছাপ ধরে ধরে আমি ও চৌধুরী এগিয়ে চললাম। ড্রাইভারকে বললাম- 
     মহারাণী থেকে পার্টিটা নিয়ে কিছুক্ষন পরে আমার সংগে দেখা করতে।...............
           ..........................................। চ  ল  বে

  -------------------------------------------------------------------

Top of Form


=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী)
-
বিভূতি চক্রবর্তী 
পূর্ব প্রকাশিতের পর
--------------------
(
৫)

কিছুদূর গিয়ে ঐ পায়ের ছাপ আর দেখতে পাওয়া গেল না। বিমূড় হয়ে ভাবছিলাম-কি করবো। এমন সময় উদয়পুরগামী একটা গাড়ী পেয়ে তাতে
উঠে মাইল তিনেক এগিয়ে গেলাম। ঐ পায়ের ছাপ তবুও দেখতে পেলাম
না। আমার দৃঢ় সন্দেহ হলো লোকগুলি নিশ্চয়ই পিছনে রয়ে গেছে। গাড়ী
থেকে নেমে চৌধুরী ও আমি আবার পিছনের দিকে চলতে শুরু করলাম।
কি এক নেশার পাগলামি আমায় পেয়ে বসেছে-অপরাধীদের বের করতেই
হবে। চৌধুরী নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে,মুখে চোখে তার স্পষ্ট 
হতাশার চিহ্ন। এক যায়গায় এসে আমার পাশে একটা ঝোঁপের সামনে দাঁড়ালাম। হঠাৎ ফিস ফিস করে কাদের কথাবার্তার আওয়াজ কানে এলো।
আমরা সতর্ক হয়ে ঝোঁপের ভিতর লুকিয়ে রইলাম। মিনিট খানেকের মধ্যেই
দেখলাম,পাশের বাঁক থেকে চারজন ভদ্রলোক বেরিয়ে এদিকেই আসছে।
অবাক হয়ে গেলাম,এইমাত্র এই রাস্তা দিয়ে আমরা এসেছি। কই,পথে তো
কোন লোক দেখতে পাই নি। আশ্চর্য্য,কোথায় ছিল এরা?কোথা থেকে হঠাৎ
উড়ে এলো আমাদের সামনে? চারজন লোক আস্তে আস্তে আমাদের প্রায়
সামনে চলে এলো। লোকগুলি যথেষ্ঠ শক্তিশালী বলে মনে হলো,আর চমৎকার
পোষাক পরিচ্ছদ-নিখুঁত ভদ্রলোক।
চৌধুরীর পরনে সাদা পোষাক,আমার গায়ে পোষাকের উপর কালো একটা
ওভারকোট,আর মাথায় টুপি। লোকগুলির দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগে আমার টুপিটা
ছুঁড়ে জঙ্গলে ফেলে দিলাম,যাতে আমাকে পুলিশের লোক বলে এরা আমায়
চিনতে না পারে। ওরা আমাদের সামনে আসতেই তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার
আগ্রহ প্রকাশ করলাম-তাদের নামধাম ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলাম।ওরা আমাকে
জানালো-ওদের বাড়ী উদয়পুর,কাল রাত্রে অমরপুরের মহুয়া ফরেষ্ট অফিসের
রমেশের বাড়ীতে ছিল। আজ আবার উদয়পুর ফিরে যাচ্ছে। তারা তাদের নাম
যথাক্রমে মধু,পরেশ,হরেন্দ্র ও সুধীর বলে জানালো। ওদের কথাবার্তা বলার
ঢংটা কেমন যেন সন্দেহজনক-ওদের পোষাকের পারিপাট্যের সংগে ভাষার মোটেই মিল নেই। আমি স্থির বিশ্বাস করলাম,ওরাই আমার ইপ্সিত অপরাধীর দল। 

........
চ ল বে

************************

*
প্রত্যেক অপরাধের ঘটনার পিছনে অপরাধীরা কোন না কোন সূত্র রেখে যায়, যার সাহায্যে তদন্তকারী অফিসার অপরাধ- কাহিনীর সমস্যার সমাধান করেন। আলোচ্য ঘটনাটিতে সূত্র ছিল " পায়ের ছাপ", যার সাহায্যে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়েছিল।