Monday, September 30, 2013

সানির প্রেম কাহিনী ::. Soncita L Nova


:: সানির প্রেম কাহিনী ::.

সানির প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে খুব সকালে , যদিও ঘুম ভেঙ্গে দেখে সকাল ১১ টা বেজে গেছে  । ফ্রেশ হবার পর এক গ্লাস আমের জুশ আর এক কাপ দুধের সাথে কাচা মটর বুট মিশিয়ে খাওয়া , এতে নাকি তার চোখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় । এর পর প্রতিদিন এর মত তার '' ডি এস আর এল '' ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে বের হয় । প্রকৃতির ছবি তাকে খুব একটা টানে না , তার পর অ সে যায় পার্কের, বাগানের ছবি তুলতে । তার ক্যামেরায় সব চেয়ে বেশি স্থান পায় প্রেমিক-প্রেমিকার যুগল বন্ধী হাত , কখনো কখনো আবার একসাথে মিশে থাকা চারটি ঠোট । এভাবেই দিন চলে যায় সানির । সানির ডি এস আর এল ক্যামেরা থাকলেও তার কোন প্রেমিকা নেই 

একদিন পার্কে সানি ছবি তুলছিল পার্কে খেলতে আসা ছেলে-মেয়েদের । তখন তার চোখে পড়লো গাছের ডালে সুন্দর একটি পাখি কিচির মিচির করছে । সানি ছবি তুলতে গেল , কিছু দুষ্ট পাখি কিছুতেই স্থির থাকে না । পাখিটি উরে গেল আরেকটি গাছে , সানি সেখানেও তাক করলো তার ক্যামেরা । হঠাত তার চোখ গেল সেই গাছটির গোরায় একটি বেঞ্চে , বেঞ্চে বসে আছে সুন্দরি একটি মেয়ে , খাতায় কিছু একটা করছে । সানি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভুলে গেল পাখিটির কথা , ক্যামেরার লেঞ্চ তাক করলো মেয়েটির দিকে , তুলে নিল একটা ছবি । মেয়েটি সেটা বুঝতে পেরে তাকালো সানির দিকে , সানি ভ্যাবাচেকা হয়ে তরিঘরি করে ক্যামেরার লেঞ্চ ঘুরিয়ে নিল অন্য দিকে । যখন আবার ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকাবে ততক্ষণে মেয়েটি সেখান থেকে প্রস্থান করেছে । বেচারা সানি আবার একটি মেয়ের উপর ক্রাশ , কিন্তু খুজে পাবে তাকে কিভাবে , কিভাবে ভাব জমাবে মেয়েটির ভাবতে ভাবতে তার দিন শেষ ।

সন্ধায় বাসায় ফিরে এক বাটি লুডুস খাবে আর সারাদিন কি করলো সেটা নিয়ে প্রতিদিন এর মত ফেসবুক এ স্ট্যাটাস দেবে এর পর বসবে সারাদিন তোলা ছবি গুলো এডিটিং করতে । ছবি গুলো দেখতে দেখতে সামনে এলো পার্কের ওই মেয়েটির । কি অপূর্ব , কি মহিমা , আহা কি সৌন্দর্য এগুলো ভাবতে ভাবতে বার বার দেখতে লাগলো সানি ।

পরদিন সকালে আবার প্রতিদিন এর মত এক গ্লাস আমের জুশ আর এক কাপ দুধের সাথে কাচা মটর বুট মিশিয়ে খেয়ে আবার দৌড় দিল ওই পার্কের দিকে এই ভেবে যে মেয়েটা যদি আবার আজ ও আসে । পার্কে গিয়ে সানি ওবাক , মেয়েটি সেদিন ও এসেছে । চুপি চুপি মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কিন্তু সাহস করে বলতে পারছে না , তখন মেয়েটি -

- কিছু বলবেন ?
- না কিছু না , না মানে হাই !! ( ঘাবড়ে গিয়ে সানি বলল )
- হুম , হাই । আর কিছু ?

এটা শুনেই সানি ভয়ে আর কিছু বলল না , ঘুরে অন্য দিক ফিরে ছবি তুলতে লাগলো । সানি মনে মনে ভাবলো কি বলে কথা বলা শুরু করা যায় ! কেমন আছেন এটা বলে ?? না না এটা হবে না ! তাহলে ?? মেয়েটি খাতায় কি করছে ! হুম সে কি আকাচ্ছে এটা বলেই শুরু করি । সানি ঘুরে মেয়েটিকে বলতে যাবে আপনি কি আঁকাচ্ছেন , কিন্তু ঘুরেই দেখে মেয়েটি নেই । কিন্তু বেঞ্ছের উপর পরে রয়েছে মেয়েটির খাতাটি । সানি খাতাটি হাতে তুলে ছুটলো মেয়েটি যে দিকে গেছে সে দিকে , দৌড়াতে গিয়ে বাধা খেল সাইক্লিন করতে আসা একটি লোকের সাথে , পরে গেল দুজনেই , খাতাটি ছিটকে গেল অনেক দূরে । সানি উঠে আবার খাতাটি নিয়ে দৌড় , কিন্তু মেয়েটিকে আর পেলো না , নিজের কাছেই রেখে দিল । বাসায় ফিরে গেল সানি ।

শুরু হলো তার সন্ধার পরের নিয়মিত রুটিন , সব শেষে দেখতে লাগলো মেয়েটির খাতাটি । দারুন সব পেন্সিল দিয়ে স্কেস করে আঁকানো ছবি । বাহ ! মেয়েটির ট্যালেন্ট আছে । আমি যেসব ছবি লাখ টাকার ক্যামেরায় তুলতে পারিনা তার থেকেও ভালো ছবি আঁকিয়েছে অল্প দামের পেন্সিল দিয়ে - ভাবতে লাগলো সানি ।সানি ওবাক হলো এর মধ্যে সানির ও একটি ছবি আঁকিয়েছে । অসাধারণ হয়েছে ছবিটি , ঠিক যেন জীবন্ত সানি খাতার মধ্যে । কিন্তু সানি তাকে খাতাটা ফেরত দেবে কিভাবে !! মেয়েটি কি প্রতিদিন আসে পার্কে !! খাতার ছবি গুলো তো দেখে মনে হচ্ছে সব গুলো ঐ পার্কের ই ছবি । তাহলে সে প্রতিদিন আসে পার্কে । কিন্তু মেয়েটির মুখে হাসি নেই কেন ! সে কি হাসে না !! তাকে চমক দেওয়া যায় , তাহলে সে হাসবে । কিন্তু কিভাবে চমক দেওয়া যায় !! সানির মাথায় বুদ্ধি আসলো সে লেবুর রস দিয়ে খাতায় তার মনের একটা লাইন লিখে দিল । লেবুর রস দিয়ে লেখার কারন , খাতায় পেন্সিল দিয়ে স্কেস করলেই লেখা গুলো ভেসে উঠবে । অমনি চিন্তা , অমনি কাজ ।

পরদিন আবার ঘুম থেকে উঠে ছুটল পার্কে , কিন্তু মেয়েটি সেদিন পার্কে নেই , মন খারাপ হলো সানির । এভাবে ৫-৬ দিন সানি পার্কে গেল , রোদ বৃষ্টি মাথায় করে বসে থাকলো সানি কিন্তু মেয়েটি আসেনা । সত্তম দিন এর মত আবার সানি গেল পার্কে । সারাদিন বসে থাকলো পার্কে । বিকেলে যখন সানি উঠে চলে আসবে তখন দেখলো মেয়েটি আসছে । সানি খুশি হলো , খাতাটি বেঞ্চের উপর রেখে কিছু দূরে গিয়ে নিজেকে আড়াল করলো ।

মেয়েটি বেঞ্চের কাছে আসতেই দেখলো তার খাতাটি বেঞ্চের উপর , খাতা পেয়ে মেয়েটিও খুসি হলো , মনে মনে এদিক সেদিক তাকালো আর খুজতে লাগলো ক্যা রেখে গেল খাতাটি । কাউকে না পেয়ে খাতাটি খুলে দেখলো সব ঠিক আছে কিনা । ব্যাগ থেকে পেন্সিল বের করে আবার স্কেস শুরু করলো । কিছুক্ষন স্কেস করতেই দেখলো একটি অক্ষর ভেসে উঠছে , সে তারাতারি করে পুরো খাতাটি স্কেস করলো আর দেখলো লেখা আছে -

'' Hello Stranger !! ''

ওবাক হলো মেয়েটি , সে পরের পাতা স্কেস করতে শুরু করলো । পরের পাতায় ও লেখা আছে -

'' You Have An Amazing Talent ''

পরের পাতায় ...

'' You Should More Smile ''

পরের পাতায় ...

Because You're Beautiful ... 

মেয়েটি এই লেখা গুলো দেখে খিল খিল করে হেসে ফেললো ...
ঠিক তখন ই সানি তার সামনে গিয়ে মেয়েটির হাসি মাখা ছবি তুলে নিল , মেয়েটি সানির দিকে তাকিয়ে -



- তুমি তাহলে ?
- হুম 
- এই পুচকা দারিয়ে কেন ? পাশে এসে বসো 

Sunday, September 29, 2013

ডেথ সার্টিফিকেট / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯.০৯.২০১৩/ বেলা ৪ টে ।

**আজ এই গল্পটা বসে লিখলাম । এটা লেখার সময় আমার হাঁসি পাচ্ছিল আবার 
রাগ হচ্ছিল। পৃথিবিতে কত রকমের লোক দেখলাম চাকরি করার সময় । তার ই এক উদাহরন 
দিয়ে লিখলাম গল্প টা । 
                                           ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯.০৯.২০১৩/বেলা  ৪ টে ।

ডেথ সার্টিফিকেট
আমার এক বিচিত্র লোকের সঙ্গে পরিচয় হয় । নাম ধিরেন মল্লিক । ধিরেন বাবু আমাদের গ্রামের সরকারী ডাক্তার খানায় কেরানি র কাজ করতেন । মাস মাহিনা জাই পান না কেন কিছু উপরি না পেলে ভদ্রলোক অস্থির হতেন। এ হেন লোক সরকারী  চাকরি কি করে করেন আমার কৌতূহল হত। আমার সঙ্গে ওই ডাক্তার খানার  ডাক্তার বাবুর আলাপ  প্রায় দু বছর হবে! উনি আমাদের গ্রামে পোস্টিং পাওয়ার সময় আমি দেখা করি ওনার সঙ্গে , তারপর থেকে কথায়  কথায় আলাপ হয়ে যায়। আলাপ থেকে হৃদ্যতা । আমি যেদিন গ্রামে আস্তাম ওনার কাছে না গিয়ে পারতাম না।  একদিন ডাক্তার বাবুকে জিঙ্গাসা না  করে থাক্তে পারলামনা
ডাক্তার বাবুকে , আমি ,  পরিতোষ বাবু বলেই ডাকতাম । ওনার নাম ডাক্তার পরিতোষ সমাদ্দার। উনি আসলে হার্ট স্পেসিয়ালিষ্ট । সরকারী নিয়ম মাফিক দু বছর গ্রামে না থাকলে স্পেসিয়ালিষ্টের স্কেল পাবেন না তাই উনি দু বছর আমাদের গ্রামের ডাক্তার খানাতে ডাক্তার খুব অমায়িক  লোক এবং নিরহংকার মানুষ । আমার সঙ্গে এক্টু বেশি মেশেন কারন আমার সঙ্গে ওনার রসায়ন টা ভালো মেশে।
  পরিতোষ বাবুকে ওনার বাডিতে কথার ছলে জিঙ্গাসা করি , “আচ্ছা ওই ধিরেন বাবু কেন এরকম করেন বলুন তো”! গ্রাম সুদ্ধু লোক আমাকে বলে ওনার কথা । আমি এডিয়ে যাই । তাও ওরা বলে । বারে বারে শুনে একদিন ভাবলাম আপনাকে কথাটা বলা উচিৎ । আপনি আবার কিছু মনে করবেন না যেন !
আরে না না । আপনি বলুন না ।
না মানে , ওনার ওই টাকা পয়সার ব্যাপারে গ্রামের লোকেরা একটু অ খুশি ।
টাকা পয়সা ? খুলে বলুন ।
না আমি খুলে বোলতে পারবোনা । ওটা অসুন্দর দেখায় ।
তবে কথাটা তুললেন কেন?
সেটাই তো ভাবছি , কেন বললাম ! তবে ও কথা থাক । আপনি পরে যেনে যাবেন । আমার বলার প্রয়োজন হবে না।
আমি আমার ব্লাড প্রেসার চেক করাই ডাক্তার বাবুর কাছে । কাল রক্ত পরিক্ষার রিপোর্ট দেখে একটু চিন্তিত । আজ ডাক্তার বাবু ওষুধ লিখে দিয়েছেন । ওটা রেগুলার খেতে বলেছেন । তা ছাডা রেগুলার ব্যায়াম এবং প্রাণায়াম করতে বললেন। ডায়াট কন্ট্রোল এর  বিশেষ প্রয়জন।
কথা হচ্ছিল হঠাৎ ধিরেন বাবু এসে হাজির ।
আমি উঠে পডি । ডাক্তার বাবুর উদ্যেশে বলি , চলিডাক্তার বাবু।
আচ্ছা আসুন।
ধিরেন বাবু যে ফাইলটা আনেন সেটা আমার আন্দাজ করতে কষ্ট হোলনা । ওই বিষয়তেই কথা বলতাম কিন্তু
ওটা ওনাদের অফিসিয়াল ব্যাপার তাই মাথা না ঘামানোটাই উচিৎ মনে করলাম । আবার ডাক্তার বাবু অহেতুক বদনাম হতে পারেন তাই সেটা জানানো উচিৎ বলে মনে করলাম যার জন্য ডাক্তার বাবুর কাছে যাওয়া ।
ব্যাপারটা হল , না থাক ! ওটা এখন না বলাই শ্রেয় ।
আমি বাইরে পা রেখেছি দেখি ধিরেন বাবু আমার দিকে হন হন করে আসছেন।
ও দাদা শুনুন না !
আমি কর্ণপাত না করে এগোই ।
ও দাদা আপনাকেই বলছি , শুনুন না!
কি মুস্কিল । কি বলুন তো ?
আপনি ডাক্তার বাবুকে একটু বলুন না !
কেন বলুন-তো ?
আহা আপনার বন্ধু না !
না উনি কোন দুঃখে আমার বন্ধু হবেন ?
এটা জনতার স্বার্থে আপনাকে অনুরোধ করছি।
দেখুন আমি রাজনীতি করিনা। আপনি যেমন ছা পোষা মানুষ আমিও ঠিক তাই । আমাকে কেন ও সব বিষয় জডাচ্ছেন বলুন তো ?
দেখুন দাদা মানুষের উপকার ছাডা আমি অপকার করি না । আর তার জন্য যদি কেউ দু পয়সা দেয় না তো করতে পারিনা । আমাকেও ত খাটতে হয় বলুন!
আমার ও সব কথা শোনার প্রয়োজন নেই । আপনি যা আপনার মন চায় করুন না আমাকে কেন ও সব কথা শোনাচ্ছেন?
সাধে কি শোনাচ্ছি দাদা । আপনি হলেন ডাক্তার বাবুর খাস লোক । আপনি বললে ডাক্তার বাবু না শুনে পারবে না । আমাকে এইটুকু সাহায্য করবেন না?

দেখুন আপনি বাডা বাডি করছেন এবং আমার সরলতার সুজোগ নিচ্ছেন। আপনি কি ভাবেন মোশাই , লোকগুলো কি বোকা না হাঁদা । যান আমি আপনার কোন কথা শুনতে প্রস্তুত নই । এই বলে চলে গেলাম ওখান থেকে ।
বিকেলে আমার ঘরে ধিরেন বাবু এসে হাজির। আমাকে অনুনয় করে বলেন দাদা আপনি বললে সার্টিফিকেট গুলো সই করবেন নাহলে নয় ।
কিসের সার্টিফিকেট ? আমি বললেই বা সই করবেন কেন ? আপনি আমাকে কেন বিরক্ত করছেন । গ্রামের লোক আপনাকে কেউ পছন্দ করেন না তা জানেন ? আপনি আসুন ।
বাজ পডে মৃত্যু হলে আসে পাসের গ্রামের লোক যে টাকা পায় তার সার্টিফিকেট টা কে লেখে শুনি? আমার লেখাতে ডাক্তার সই করেন মেডিক্যাল রেপর্টে । ওটা কি আপনি না গ্রামের লোক করে দেবেনবাজ পডে মৃত্যু হলে  সরকার ৫০০০ টাকা আপাৎ কালিন সাহায্য দেন । সেটা তো নাও পেতে পারে গ্রামের লোক । আমি একটা সার্টিফিকেট লিখে দি ; যে যা দেয় খুশি মনে তাই নি । এতে দোষের কি হল? আমি ত জোর জুলুম করি না! তবে !
আপনার বলতে লজ্যা করে না? যান মশাই আপনি যান। আমার মাথা খাবেন না দয়া করে।
এ বছর আগস্ট সেপ্টেম্বরে  ঘন ঘন  বাজ পডাতে আনেক লোক মারা গিয়েছেন এবং আঘাৎ পেয়ে শয্যাশায়ী । আর সেই বাজ পডাটা ধিরেন বাবুর মত লোকের জন্য এক রোজগারের সহজ উপায় । লোকে বলে ধিরেন বাবু নাকি বাজ পডলে আনন্দে ঘরে নাচেন। একটা  সার্টিফিকেট পিছু ৫০০ টাকা রোজগার । একে চিত্রগুপ্ত বলবনা তো কি বলব বলুন ?
 একটা ডাক্তারের সার্টিফিকেট এর জন্য সাধারন লোকেদের  অপেখ্যা করে থাকতে হয়। ডাক্তার  বাবু এসবের কিছুই জানেন না হয়ত  । উনি রোগীদের নিয়ে এবং অপারেসন ক্যাম্পে এতো ব্যাস্ত থাকেন যে ফিরেই সব সার্টিফিকেটে সই করে দেন শুধু মাত্র  বিশ্বাসে । তার মধ্যে কিছু  মিথ্যে সার্টিফিকেট থাকলে ওনার চাকরি নিয়ে টানা টানি হতে পারে ।
আজ শুনলাম ডাক্তার সবকটা কেস নিজে জাচাই করে তবেই সই করবেন সার্টিফিকেটে । প্রায় ৫০ টা সার্টিফিকেট আছে ওই ফাইলে । ডেথ সার্টিফিকেট ।
ধিরেন মল্লিক আর বাজ পডলে নাচবেনা ! ওর রোজগারের রাস্তা বন্ধ । ডাক্তার বাবু ওনাকে সাস্পেন্ডের জন্য সুপারিশ করতে পারেন । তাই ধিরেন বাবু এখন চুপ ।
বি দ্রঃ-
** আমার দেখা এক অন্য নামের ধিরেন মল্লিক। এই গল্পের স্থান কাল পাত্র আলাদা কিন্তু ঘটনা সম্পুর্ণ  সত্যি  ***
               ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৯.০৯.২০১৩ / 

Wednesday, September 25, 2013

পূজোর কলকাতা । ত্রিভুবন জিৎ । ২৬.০৯.২০১৩

কত রূপে কলকাতাকে দেখলাম গো সে কলকাতা আর নেই আমার । খানা ভরা জলে ভরা কলকাতা তাতে আছে জলে জমা নালা নর্দমা , তবুও ছুটে আসি  পুজোর কদিন ছুটি কাটাতে ; কি টানে সে মা’ ই জানেন বলি কাকে? এখন ই টিকিটের জমানায় ঘরে বসে টিকিট কাটি ভিড না ঠেলে  । আমি সিনিয়র সিটিজেন তাই আমার হক দাবি লোয়ার বার্থ ।  সঙ্গে নি ট্রলি ব্যাগটা  তাতে রাখি জামা কাপোড গুছিয়ে আর সেভিং সেট টা । সঙ্গে ওষুধ আর চিরুনিটা মাথা  আঁচড়াতে হবে না ! মোবাইল চার্জার ভুলে গেলে চলবে না। ওটাই তো টেনে আনে সকলের মনটা । হটাত গিন্নীর ডাকে ভাঙে কাঁচা ঘুমটা । 
ও তবে এসে-গেল হাওডা । বাঃ বাঁচা গেল । আমরা নিজেরাই নিজেদের লাগেজ নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগুলাম প্রি পেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে। ও মা একি কান্ড এ যে  বিরাট লাইন । ও হরি , কি করি ? গিন্নী কে বললাম তুমি লাগেজ দেখো আমি দেখি লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু সুরহা হয় কিনা। 
আমার নাম্বার বোধহয়  ১০০ জনের পেছনে । বাগবাজার শুনে বলে ২০০ টাকা লাগবে । 
গিন্নী রে রে করে ওঠেন । কি গো এই টুকু রাস্তা ১৯০ টাকা দেবে । 
বাগবাজার যাওয়ার সময় কত জ্যাম আছে মাসি জানেন না ।
না আমি জানবো কি করে ? তুমি আমাকে বাগবাজার দেখাবে ? আমার জন্ম ওখানে বাডী ওখানে । তুমি আমাকে বাগবাজার দেখাবে ? আমি দেখবো । 
আঃ কি হচ্ছে ? চলই না একবারই তো দোব । আমার পায়ের ব্যথা টা খুব বেডেছে এ সি তে শুয়ে । 
আঃ কতদিন পর পূজো পূজো পরিবেশ । যাই বল ভাই ওই হাওডা স্টেশনের কাছে যত রাজ্যের নোংরা । ব্রিজের ওপর গেলেই গঙ্গার হাওয়া মন মাতানো । সকালে বেশ ভালো লাগে । পূজোর প্যান্ডেল গুলো সুন্দর সাজান আরম্ভ হয়ে গিয়েছে । যে যার থিম অনুযায়ী সাজাতে আরম্ভ করেছে । 
ট্যাক্সি বোরোলীন হাউস দিয়ে নিভেদীতা স্কুলের পাসে এসে আর যেতে পারছেনা । সামনে ডানদিকে বালতির লাইন আর বাঁ দিকে সারি সারি গাডি দাঁড করানো । অগত্যা রামদেভ দাদের বাডির কাছে ট্যাক্সি ছাডতে বাধ্য হই। ওখান থেকে আমার শ্যালক মহাশয় কে মোবাইলে কল করি । গিন্নী তার পরিচিতদের সঙ্গে আরম্ভ করে জমে থাকা সব কথা ।
কতদিন থাকবি রে ?
বিজয়ার পর চলে যাবো ।
কেন ? 
নারে থাকা হবেনা । ওর রিটায়ারমেন্টের সময় । এখন ছুটি পায় না। ওই ৭ , ৮ দিন ব্যাস । 
লক্ষ্মী পূজো অবধি থাকবি তো ?
না । মা গত হওয়ার পর আর ভাল লাগে নারে থাকতে। বাডিটা কেমন ফাঁকা লাগে 
আমি বিভাসের সঙ্গে বাডি পৌঁছে হাত পা ধুয়ে নি । 
বিকেলে বাগ বাজারের প্যান্ডেলে যাই । গঙ্গার ঘাটে গিয়ে সন্ধ্যার সময় গঙ্গা আরতি দেখি। বেশ ভালো লাগে ওই সময়টা । সেই হাতী-বাগান যেখানে আজ ৩৫ বছর ধরে আমি আর গিন্নী ছোট ছোট কেনা কাটা করি। 
স্টার থিয়েটারে পাস দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে জল আসে রে । কত সন্ধ্যা কেটেছে এখানে । গুরমুখ রায় মহাশয়ের টাকায় বিডন স্ট্রিট এ ১৮৮৩ সালে স্টার থিয়েটার প্রতিষ্ঠা হয়। নোটি বিনোদিনী খ্যাত বিনোদিনী দাসী  এবং গিরীশ ঘোষ এর যৌথ উদ্যমে স্টার থিয়েটারের জন্ম। প্রথমে এই থিয়েটারের নামকরণ বিনোদিনী র নামে করতে চান কিন্তু সেটা প্রত্যাখ্যান করেন বুদ্ধিজীবী মহল  তার নাম “স্টার থিয়েটার” রাখেন।   ২১ শে জুলাই  ১৮৮৩ সালে প্রথম নাটক ‘দক্ষ যজ্ঞ’ মঞ্চস্থ হয় । মন্মথ রায়ের ‘কারাগার’ ১লা মার্চ ১৯৩১ তারপর কত নাটক । এখানে সরযু দেবী, গিরিশ ঘোষ , শিশির ভাদুডি , উত্তম কুমার , সৌমিত্র চ্যাটার্জী, গীতা দে , সাবিত্রী চ্যাটার্জী , মাধবী মুখার্জী ইত্যাদি নামি দামি চিত্র তারকারা এই থিয়েটার হলে অভিনয় করেছেন। তাই এর ঐতিহ্য অতুলনীয় । স্বয়ং শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস , ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এখানে আসেন গিরীশ ঘোষের নাটক দেখতে। তাই স্টার থিয়েটারের সুদীর্ঘ ইতিহাস মনে প্রাণে গাঁথা । এখন সে সব দিনের কথা ভাবলে কষ্ট হয়। 
ওদিকে সারি সারি সিনেমা হল গুলোর অবস্থা দেখলে আরও কষ্ট হয়। দর্পনা , মিনার, শ্রী , উত্তরা , রুপবানি সব সিনেমা হল গুলো ধুঁকছে যেন। যেন কেউ প্রাণ নিয়ে গিয়েছে ওই হল গুলো থেকে। এইখানেই ছবিবিশ্বাস,কমল মিত্র ,  উত্তম সুচিত্রা , উত্তম সুপ্রিয়া , সৌমিত্র মাধবী , সাবিত্রী দেবী , বিকাশ রায়, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় , জহর রায় , দলিপ মুখার্জী , রবি ঘোষ ইত্যাদি অভিনেতাদের কত সুন্দর সিনেমা দেখতাম । 
মালঞ্চ র কবিরাজী , ফিস ফ্রাই । ওদিকে গোল বাডির কসা মাংস । এখন আর সেরকম নেই। এখন সব ফাস্ট ফুডের যুগে ওগুলো ক্রমশ: লোপ পেতে বসেছে। 
এখন শপিং মলের যুগ। আর মহিলারা শডী কাপোড কেনার সময় দোকানের গদিতে বসে কাপোড কেনেন না। সে যুগ চলে গেল। অবশ্য অনেক ভালো শপিং মল হয়েছে , যেমন মনি স্কয়ারের শপিং সেন্টার,সিটি সেন্টার, নিউ মার্কেটের নতুন মার্কেট । দেখার মতন।তবে ওগুলো গরীব দের জন্য নয়। 
হ্যাঁ নতুন জান অটো রিক্সার কথা না বললেই নয়। কোন ফাঁকে যে অগুলো না যায় সে না দেখলে বলা মুস্কিল । ট্রাফিক মানার সময় নেই ওদের । হলদে লাইটেই মার কাট । পূজোর সময় এই অটোরিকশা বালাদের দৌরত্ম না দেখলে নয়। দ্বিগুণ ভাডা দিয়ে জেতে হবে । তাই পায়ে হেঁটে পাডার ঠাকুর , কুমোরটুলি , শোভা বাজারের রাজ বাডী র দুর্গা পূজো , গিরীশ পার্ক । শিমলা ব্যাম সমিতি , তারপর নব বৃন্দাবনের সাবেকি পূজো । অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি , সন্ধি পূজো সব ওই নব বৃন্দাবনে সারি।
পূজোর কটা দিন সেরে বিজয়া । তারপর লক্ষ্মী পূজোর আয়োজন । ব্যাস সব পূজো শেষ । এবার বাডী ফেরা । 

Monday, September 23, 2013

ওরাও বাঁচতে চায় ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী , ২৩.০৯.২০১৩ , সোমবার , রাত ১০.৫৯ (একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে )


ওরাও বাঁচতে চায়
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী , ২৩.০৯.২০১৩ , সোমবার ,   রাত ১০.৫৯
(একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে )

অতীত আমার  স্মৃতির সাইয়েরি  
সম্পর্ক হয়েছে কালি
রং হারিয়েছি পৃথিবী থেকে
জীবনটা মরু বালি ,
চাঁদনীতে আজ জ্বলছি আমি ,
হয়েছি চোখের বালি
ব্যথিত হৃদয়ে গাইছি আমি
নেই কোন ক্ষোভ চলেছি আমি
স্মৃতি তে সাজান ফুলের কবিতা
হারিয়েছি আজ মায়ের মমতা
(আমি একটু বদলেছি কিন্তু মূল কবিতাটা বদলাইনি
ওপরের কবিতাটা এক রিক্সা-বালার লেখা কবিতা ।  নাম কৈলাস চন্দ্র পাত্র । বাডি যাজপুর জেলার কোরেই থানা অন্তর্গত রগডিতে । আমি সেই কৈলাস পাত্র , শুনবেন আমার কথা ? হ্যাঁ শুনতেই হবে কারন আমি স্কুলে পডার সুযোগ পাইনি । এক অস্পৃশ্য পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা আমার মহাপাপ ।  তাই আমাকে জীবন যুধ্যে অবতীর্ণ হতে হয় ছোটবেলা থেকে । বাবা       মারা জান এক অজানা ব্যাধিতে । ডাক্তার খানাতে ভর্তি করার পরের দিন মারা জান ।ঘরে দু ভাই এক বোন আর আমি । মায়ের মাথায় বাজ পডে কারন বাবার সঞ্চয় বলতে কিছু ই  ছিলনা । দিন আনতেন দিন খেতেন। রাজমিস্ত্রি র কাজ করতেন আমার বাবা । বাবা মারা যাওয়ার পর মা কিছু সরকারি বাবুদের বাডিতে বাসুন মাজা কাপোড কাচা ইত্যাদি কাজ করতেন । সরকারি বাবু বলতে ব্লকের বি ডি ও , জি পি ও , এস ই ও । ওই তিন চার ঘরে কাজ করে যা পেতেন তাতেই বোনের বিয়ে দেন ১৪ বছর বয়েসে । হ্যাঁ জানি ওটা আইন বহির্ভূত  কিন্তু কি করবেন এক অসহায় বিধবা নারী । শেয়াল কুকুরের তো অভাব নেই দুনিয়াতে । হায়নার মোত ছিঁডে খেত যে  নাহলে আমার বোনকে  । সে-টাকি ভাল হত ? তাই আইনের কথা মাথায় না রেখে আমরা ছোট বোনকে তুলে দিলাম ১০ বছরের বড বর পাত্রর হাতে। আমাদের জাতিতে ভালো বর পাত্র পাওয়া প্রায় অসম্ভব ।
আমার বোনের বিয়ে হয় এক পানের দোকানির সঙ্গে । ১০ হাজার টাকা পণ দিয়ে । সঙ্গে টিভি, খাট , সোনার গয়না । যা আমার মার ছিল সব দিয়ে দিতে বলেছি আমি মার সখ ছিল বড বৌ কে সোনার চুডি দিয়ে মুখ দেখবেন । হায় রে  আমার পোডা কপাল ,  মায়ের,  বৌমার  শখ দেখলে আমার হাঁসি পায় ।  
আমি গ্রামের স্কুলেতে পডতাম ক্লাস সেভেন এ ব্যাশ চুকে গেল পডা ;  বাবা মারা যাওয়ার পর ! মায়ের একার পক্ষে এতোগুল মুখে আহার জোগান সম্ভব হলনা আমাকে কাজে নামতে হল আমি যাজপুরের এক হোটেলে কাজ করতে যেতাম সকাল ৭ টায় বেরিয়ে ফিরতাম রাত ১০ টার পর সারাদিন হাড ভাঙ্গা খাটুনির পর পেটে পেতাম দুট দানা ডাল ভাত আর কিছু উচ্ছিষ্ট তরকারি সপ্তাহে ৭০ টাকা মানে মাসে ২৮০ টাকা
কি বলছেন ? লেবার অফিসার ধরেনা কেন হোটেলের মালিক কে ?
কি হবে ? গুঁজে দেবে একটা ১০০ টাকার নোট আর এক প্লেট ভালো খাসীর মাংস সঙ্গে বাসমতী চালের ভাত যাওয়ার সময় একটা ছোট বোতল কেল্লা ফতে ! কোন ব্যাটা কমপ্লেন করবে? কার ঘাডে দুটো মাথা ?
মা , বি ডি ও সাহেবকে অনেক বলেছিলেন আমাকে একটা চাকরী দেওয়ার জন্য
হেঁসে খুন বি ডি ওর স্ত্রী বলেছিলেন মহিলা, “কি বলছিস চাকরী” ! তুই কি দিবা স্বপ্ন দেখছিস কৈলাসের মা ? ও সব চাকরী ফাক্রী তোদের জন্য নয়রে তোরা না থাকলে আমাদের ঘরে কে কাজ করবে বলতো ? ছেলেকে বল রিক্সা চালাতে বুঝলি
মা চোখ মুছে ফিরে আসেন আমায় কিছু বলেন না
আমাদের পরিবারে টানা টানি পডে কারন বোনের বিয়ে তে মহাজনের কাছ থেকে সুধে টাকা ধার নিয়ে ছিলাম আমরা  মাব্যাটা প্রত্যেক মাসে ৩০০ টাকা সুধ বাবদ দিয়ে হাতে যা থাকতো নাম মাত্র টাকা 
একদিন হোটেলের কাজ করতে করতে আমার খুব খিদে পায় আমি থাকতে না পেরে একটা প্লেটে ভাত আর ডাল নিয়ে খেতে সুরু করি সে দিন আমাদের ওখানে পার্টির মিটিং ছিল অনেক বক্তা এসেছিলেন খুব গরমা গরম বক্তৃতা চলছিল হবু এম এল এ অমূল্য বাবু মাইকে  বলেন  আমাদের রাজ্যতে কেউ খালি পেটে শোবে না বি পি এল কার্ড ধারিদের ১টাকা কিলো চাল মাসে ২৫ কিলো দেওয়া হবে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য সাইকেল দেওয়া হবে গর্ভবতী মহিলাদের জননী সুরক্ষা যোজনায় ৫০০ টাকা পাবে ।  পরে আবার পুষ্টিকর খাদ্যর জন্য টাকা দেওয়া হবে আপনারা এসবের সুযোগ নিন আর আমাদের চিহ্নে ভোট দিন জাতে আমরা আপনাদের আরও সেবা করতে পারি ৫ বছর হাথ তালিতে কান ফেটে জায় ।
আমি সব শুনছিলাম হঠাৎ পিঠে এক কিল আর লাথি চড এর বর্ষণ আরম্ভ হল কিছু বলার আগেই মালিক চিৎকার শুরু করলেন , শালা নিমক হারাম বেরিয়ে যা এখুনি বের
আমি অনুনয় করে বলি, মালিক সকাল থেকে কাজ করছি পেটে দানা নেই খিধে পেয়েছিল আমার মাইনে থেকে কেটে নেবেন
তুই বের এখুনি অনেক কাজের লোক পাবো
অগত্যা মিটিংয়ে চলে জাই সেখানে আমাদের সরপঞ্চ ছিলেন ওনাকে বলি সব কথা উনি বলেন মিটিং শেষ হলে শুনবো তোর কথা তোকে না বলেছিলাম আজ এখানে থাকতে এখানেই ত খেতে পেতিস সঙ্গে ২৫ টাকা তোরা পার্টির কথা না বুঝলে আমরা কি করি বল তোদের জন্য ! বিপদে পডলে তোরা আসিস অন্য সময় টিকি দেখা জায় না
আমি বলে রাখি ওই হোটেল থেকে এসে আমি প্রতিদিন  রাতে লন্ঠনের আলোতে বই পড়তাম কবিতা  লিখতাম আমার কবিতা লেখার প্রবণতা জীবনের সব জ্বলন্ত ঘটনা নিয়ে তাতে অবসাদ , দুঃখ , বেদনা ভরা কিছু কাহিনী যা জীবনের সংগ্রামের প্রতিটি মুহূর্ত কে লিপি বধ্য করা কিছু মুখোস ধারি রাজনৈতিক ব্যক্তি র আসল রূপের কথাতাদের আসল রুপটা তুলে ধরতে  আমার লেখা কবিতা ক্রমশ উডিশ্যার বিখ্যাত খবরের কাগোজসমাজেপ্রকাশ পায় রবিবাসরীয় তে আমার আনন্দের সীমা থাকেনা সেদিন। মা’কে বলি , মা আমার লেখা বেরিয়েছে সমাজে । তিন টাকা দিয়ে আমি প্রতি রবিবারের ‘সমাজ’  কাগজ কিনি ।    
                                                        মা বলেন লেখা নিয়ে কি হবে পেটের ভাত জুটবে তোর ? একটা  রিক্সা কেন । বী ডি ও বলেছেন লোন করিয়ে দেবেন । উদ্যেশ্য টা মোটেই মহৎ নয় । বি ডি ওর মেয়েকে কলেজে নিয়ে জেতে হবে নিয়ে আস্তে হবে  বিনে পয়সায় ।   লোন শোধ না হওয়া অভধি । তবুও রাজি হলাম কারন নিজের স্বাধিন রোজগারে চলবো । কেউ লাথি মারার লোক থাকবেনা।

আমি বি পি এল  কার্ডের  জন্য সরপঞ্চ কে বলি । উনি বলেন তোর মা ,  বি ডি ও র বাডিতে কাজ করে এটুকু করাতে পারে না ! আমায় বলছিস কেন ? অগত্যা মা কে বলি । মা বহু কষ্টে কার্ড পেয়ে জান । এবার আমাদের দুঃখ ঘুঁচবে বোধ হয় । ভগবান কে আমি বিশ্বাস  করি না যেদিন আমার বাবা মারা যান বিনা চিকিৎসাতে । কিন্তু আমার মা করেন । তাই বোধ হয় একটু সদয় হলেন ভগবান ।
কিন্তু আমার মা’ ? তাকেও তো হারাতে হল এক অশুভ দিনে । মাকে নিয়ে গেলাম ডাক্তার খানায় । ডাক্তার বললেন তোমার মায়ের ক্যানসার হয়েছে । পেটেতে । আমার মাথায় বজ্রাঘাৎ হল যেন। মা বললেন কিছু হবে না আমি ঠিক হয়ে জাবো । কটকে নিয়ে গেলাম ক্যানসার হাঁসপাতালে । আমাদের এম এল এ মহাশয় একটা বেড ঠিক করে দিলেন ।  আমি ‘সমাজে’ আমার মার জন্য আবেদন করেছিলাম কিছু সাহাজ্যের জন্য । সেই সুবাদে হয়তো বেড টা পেলাম । কিন্তু মা’কে  বাঁচাতে পারলাম না ।
আরম্ভ হল আমার জীবন যুধ্য । আমি একা । আমার বোন ছোট ভাই কে নিয়ে রাখে তার কাছে।
আমি লিখতে লাগলাম একটার পর একটা কবিতা ।
                                                                        আমাকে কবিতা পাঠ উৎসবে ডাকা হল। আমার কবিতা পডে শোনালাম ।  হাততালি পেলাম আর কিছু বাহবা । মঞ্চে ঘোষণা হল “রিক্সা বালা কৈলাস চন্দ্র পাত্র” র লেখা কবিতা ।  মন্ত্র মুগধ হয়ে শুনছিল সবাই সেটাই আমার প্রেরণা সেটাই আমার পুরস্কার । আমি রিক্সা চালিয়ে কম পডাশুন করে যদি আমার লেখা কে পৌঁছে দিতে পারি লোকেদের কাছে সেটাই আমার সব পাওয়া  
একদিন শুনলাম আমার সেই হোটেল বালা যার কাছে আমি কাজ করতাম সে মারা গেছে রোড এক্সিডেন্টে । দুঃখ হল আবার মনে হল  বোধ হয় ভগবান আছেন । 
 এখন আমি স্বাধীন এক রিকশাওয়ালা যার দুখের সাথি একটা  রেডিও আর কাগজ কলম । মা সরস্বতী বিদ্যে বুদ্ধি যা দিয়েছেন তাই দিয়ে লডতে হবে অন্যায়ের বিরুধ্যে ।  আমার তো কোন বাঁধন নেই । আমি একা আর আমার কলম সাথী । সংসার করার কোন ইচ্ছে নেই । সেই  ঘ্যানর  ঘ্যানর   , সেই দুঃখ দারিদ্র্য র কষাঘাতে ছেলে মেয়েকে মানুষ করা , তাদের ইচ্ছা পূর্ণ করা এ যুগে আমার দ্বারা সম্ভব নয় । আমি আর আমার কবিতা । আমার কবিতা পাঠোৎসবের আমন্ত্রণে মঞ্চের ওপর উঠে কবিতা পাঠ সে এক অদ্ভুত শিহরন , অদ্ভুত অনুভূতি । আমি তাতেই খুশি । তাই বেছে নিলাম এক রিকশাওয়ালার জীবন যত দিন থাকবো এই শহরে লিখে যাব আমার কবিতা ।