Thursday, June 13, 2013

কাজী নজরুল ইসলাম: স্রোতের বিপরীত মাঝি / মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন /



মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন

দারিদ্রের কষাঘাতকে কিভাবে পদানত করতে হয় কাজী নজরুল ইসলামের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ও সফল কেউ নন অন্তত বাংলা সাহিত্যে অর্থ্যাৎ তিনি একমাত্র ব্যাক্তি যিনি দারিদ্রতাকে জয় করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।  তবে তিনি ব্যতিত আর একজন বিশ্ব পরিম-লে দারিদ্যতাকে জয় করে সবার আদর্শ বা নজীর বা অনুপ্রেরণার উৎস হতে পেরেছেন -তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা:) । দারিদ্রকে আলিঙ্গন করে সফল হওয়ার লড়াইয়ে নজরুল তাই সবার দৃষ্টান্তও বটে। ’হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান।’- এই চরণেই নজরুলের স্বার্থকতা নিহিত। দারিদ্রতার কারণে মানুষ সাধারণত হীনমন্যতায় ভোগে-কিন্তু নজরুল হীনমন্যতাকে জয় করে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। 
 
সময়ের চাকা আপন নিয়মেই গড়িয়ে যায় সামনের দিকে। যাবার সময় অনেক কিছু পিছনে ফেলে যায় , নিয়ে যায় অনেক হিসাববিহীন প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস। কিন্তু যাঁদের কৃতিত্বে দেশ , জাতি বা রাষ্ট্র আপন পতাকা তৈরী করে এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করে তাকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু জাতি হিসাবে আমরা দিনের পর দিন শিকড় বিহীন হয়ে পড়ছি। আমরা কেবল আবর্জণা ও অন্যদের দেখানো পথকে ধরেই সামনে যাবার প্রবনতা দেখাই। শতবাধার পরও এই উপমহাদেশের দু’জন প্রতিষ্টিত লেখক ঘোষণা দিয়েই নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। একজন উর্দূ লেখক সাহাদাত হোসেন মান্টো- অন্যজন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 
 
একটি গানে নজরুল বলে দিলেন, ’আমি চিরতরে দূরে চলে যাব,/ তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’ এই সত্যকে অকৃতজ্ঞরা ভুলে যাওয়ার ভান করলেও বা ষড়যন্ত্রকারীরা নজরুলকে সাম্প্রদায়িক আবরণে ফেলতে ছেয়েছে বারবার, তবু তিনি আপন মহিমায় জ্বল জ্বল করছেন মানব  ভূবনে। 
 
এক দূরারোগ্য সুকঠিন অসুখের শিকার হলেন নজরুল । বলা যায়, জীবন মধ্যাহ্নে নির্বাক নিশ্চুপ স্তদ্ধ হয়ে গেলেন নজরুল। কবিতা ও গানের জগতে নতুন সংযোজন নেই আর। তাঁর লেখনি বন্ধ হয়ে গেল। কন্ঠ স্তদ্ধ হলো,  হারমোনিয়াম থেমে গেল, মস্তিষ্ক বিকৃত হলো পুরোপুরি। নজরুল পরিনত হলেন বোধহীন এক অসহায় মানুষে । তবুও তাঁর গানের মতোই দূরে থেকেও তিনি সবার অন্তরে। আর এই উপলব্ধির বাস্তবতার কারণে আহমদ কবির এক প্রবন্ধে বলেন, ’নজরুলকে কে ভুলিবে? কার এমন বুকের পাঠা? আর ভুলতে পেরেছেই বা কয়জন? ’ কেউ ভুলে থাকার ভান হয়তো করেছেন, এই বিদ্রোহের মূল উৎস কিন্তু কাজী নজরুল নিজেই। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন জীবনের যন্ত্রণা, ব্যর্থতাবোধ, রোগ শোক, প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষের মানবতাকে বড়ো পরিবর্তণ এনে দেয়। মানুষ হয়ে পড়ে ক্লান্ত, বিপর্যস্ত, হতাশগ্রস্থ,।কিন্তু নজরুল এখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। 
 
’নজরুরের প্রতিভা হীরক-দ্যুতিময়।’ নজরুলের সাতন্ত্র ও অনন্যতা অনস্বীকার্য। বাংলা সাহিত্যে নজরুল কীর্তিধন্য মানুষ, কিংবদন্তীতুল্য পুরুয়। বাংলাদেশের জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও নজরুলের ভবিতব্য, অনিবার্য পরিনতি। 
 
একজন মানুষ তাঁর কাব্য জগৎ নিজের জীবনকে অস্বীকার বা বাদ দিয়ে লিখতে পারে না বা পারা সম্ভব নয়। জীবনবোধের মাধ্যমেই যদি জীবনাচরণকে নিজ কাব্যে চিত্রায়িত করা সম্ভব হয় তবে  তিনি অবশ্যই স্বার্থক। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে নজরুল একমাত্র ব্যাক্তি যিনি দারিদ্রতাকে আলিঙ্গন করে সুন্দরভাবে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে খালেদ হোসাইন বলেন , নজরুল ইসলামের পারিবারিক ঐতিহ্য; তা যত অনুল্লেখনীয় হোক না কেন, তাঁর জীবনাচার , তাঁর দারিদ্র, তাঁর স্বপ্ন , তাঁর পঠন-পাঠন, জীবনাভিজ্ঞতা ও জীবন জিজ্ঞাসা তাঁকে অনন্যসাধারণ করে তুলেছে। ’বর্তমানের কবি আমি ভাই ভবিষ্যতের নই নবী’ বলে তিনি যত নির্বেদ বা বিনয় প্রকাশ করে থাকেন না কেন, তাঁর সৃষ্টি সম্ভার অপ্রতিরোধ্যভাবে ভবিষ্যৎ-ধাবী। বিপরীত যুক্তির আশ্যয় নিয়ে বলা যায় , তিনি চির বর্তমানবতার কবি। দেশ-কাল মনুষ্যত্বের এ পরিসরে কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, প্রাসঙ্গিকতা অনিঃশেষ।
 
নজরুলের মধ্যে যত সঞ্চিত ব্যাথা , পুঞ্জিত অভিমান , আর প্রজ্বলিত বিদ্রোহ ছিলো এর পেছনে তার ব্যক্তি জীবনের দুঃখ, দারিদ্র, সামাজিক বঞ্চনা ও জাতিগত নিস্পেষণ ছিলো প্রধান কারণ। তিনি তাঁর সময়ে জীব হিসাবে ছিলেন নিতান্তই সুবিধা বঞ্চিত, মানুষ হিসাবে ছিলেন যথেষ্ট উপেক্ষিত, অবহেলিত, নাগরিক বা অধিবাসী হিসাবে ছিলেন শৃঙ্খলিত নিস্পেষিত আর একজন মুসলিম হিসাবে ছিলেন অবাঞ্চিত ও নিগৃহীত, তাই যখন জ্বলে উঠলেন তখন ন্যায় অধিকার মুক্তি, সংগ্রাম দ্রোহ যুদ্ধ সবকিছুই একসঙ্গে ঝংকৃত হলো তাঁর চারপাশে পৃথিবী জুড়ে। আর আমরা নজরুলের এই দ্রোহকেই দেখতে পাই। কখনো বুঝতে পারিনি তাঁর দ্রোহের অন্তনিহিত কারণ।
 
নজরুল দারিদ্রতাকে জয় করার রহস্য নিজেই ভেদ করেন। তিনি যখন বলেন, 
 
’একটি বেদনা মানিক আমার
মনের মনি কোঠায়
সেইতো আমার ভিজন ঘরে দুঃখ রাতের
আঁধার টুটায়।’
 
উল্লেখিত উক্তির মাঝে নজরুল মনোভাবের অন্তনিহীত পরিচয় সুস্পষ্ট। এখানে বেদনা বা ব্যাথা বলতে কবি একটি মহানুভব চেতনাকে শানিত করেছেন মাত্র। এই চেতনার মাঝে যে আলোকিত ভাবনার বিকাশ ঘটেছে তাতে দূরিভূত হয়ে গেছে কবি মানসের হৃৎ-গুহাতে জেঁকে থাকা অন্ধকার; আলোকিত হয়ে উঠেছে মনোজগতের এক রঙিন কুঠির। কবি সেখানে বেদনার রঙ যেন দেখতে পেয়েছেন এবং সে রঙে রঞ্জিত গীতমালায বরণ করেছেন কালের প্রত্যাশাকে। প্রেম এবং বিরহের রূপায়নে কবি নজরুলে এ ধরনের প্রয়াসগুলোকেই তাকে গণমানসের হৃৎ-সিংহাসনের উচ্চ মাকালে পৌছে দিয়েছে। যেখানে কাল থেকে কালান্তরে কবি নজরুল ইসলামকে অবশ্য-অবশ্যই সগৌরবে সমাসীন দেখা দিবে। 
 
দারিদ্রকে মহানুভবতায় পরিণত করতে গিয়ে নজরুল কম চেষ্টা করেন নি। বলা যায় হেন কাজ নেই তিনি জীবিকা উপর্জনের তাগিদে অবজ্ঞা করেছেন। কিন্তু সব সময়ই নিজেকে স্থির রাখতে পারেন নি। দ্বিধা-দ্বন্ধ-হতাশা গ্রাস করেছে মাঝে মাঝে তাঁকে। তাই দুঃসহ দারুণ দিনে কবির হৃদয়ে হাহাকার জাগে তা যেন মরু সাহারার প্রবল তাপে উত্তপ্ত । কবির এ উপমা খুবই ব্যঞ্জনাময়। 
 
’দুর্দিণের এই দারুণ দিনে
করুন নিলাম পানশালায়, 
হায় সাহারার প্রখর তাপে
পরাণ কাঁপে দিল কাবা।।’
 
যে দারিদ্রতাকে নিয়ে এত কথা , সে ’দারিদ্র’ কবিতাটি বিশ্লেষণের দাবী রাখে ব্যাপকভাবে সময়ের প্রয়োজনে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কাব্যটির প্রথম চরণ ছাড়া কেউ বাকী অংশের বিশ্লেষণ করে নিগূঢ় অর্থ সমাজ সংস্কার ও বাস্তবতার জন্য তুলে ধরেনি। কবিতাটি কাব্য বা সাহিত্য বিচারেও অত্যন্ত উঁচু মানের। আমরা যদি খেয়াল করি কবিতাটি সমাজের যে তীব্র নির্যাতন , মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার ফলে এদেশের অসহায় মানুষের ধকে ধুকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানোর যে জ্বালা এবং এই যন্ত্রণাকে কটাক্ষ করে জেগে উঠার প্রয়োজনে যে সাহস ও সত্যের উপলব্ধি প্রয়োজন তার বিশদ বিররণ দেয়া আছে। কিন্তু কবিতাটি আলোচনার বাহিরে থেকেছে  কারণ এদেশের বুদ্ধিজীবীরা বরাবরের মতই পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে দালালী করেন বলেই। যে যত বেশী সাধারণ মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারে ততই তার পক্ষে শোষণ করা সম্ভব। এখানে লক্ষণীয় প্রথম চরণটি উদ্ধৃতি দেয়া হয় কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয়, বরং নজরুলকে বাস্তবাদী কবি থেকে রবীন্দ্রনাথের মত কল্পনাবিলাসী কবি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সবার আগে মনে রাখতে হবে আধুনিকতার নামে যত প্রাশ্চাত্যকে আলিঙ্গন করছি , তত অশান্তির শিকড় চড়িযে দিচ্ছি। এই বাস্তবতাকে তুলে ধরতে কাজী নজরুলের ’দারিদ্র’ কবিতাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও পর্যলোচনা তুলে ধরা হলো। 
 
কবিতাটি শত লাইন বিশিষ্ট এবং প্রতি দু’লাইনের মধ্যে ছন্দের মিল রয়েছে , যা দুত্যনার সৃষ্টি করে। শতলাইনের পিছনে কারণ হিসাবে হয়তো তিনি সমাজের জুলুম, অনাচার, অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্রকে শতভাগ ইঙ্গিত করেছেন। ছন্ধের মিলের কারণ প্রাণের দ্যোতনা প্রকাশ করা। 
 
প্রথম স্তবকের শুরুতেই যেকোন পাঠকের মনে হবে একটি ভাবাবেগ ও কল্পনাবিলাসী এক অনুপ্রেরণা। সকল দুঃখ যন্ত্রণাকে ভুলে সামনে যাওয়ার উদ্ধীপ্ত উৎসাহ । ’দারিদ্র’ কবিকে করেছে ’মহান’। কেন মহান করেছে তার বর্ণনাাটি দ্বিতীয় লাইনেই ইঙ্গিত দেয়া আছে। কারণ দারিদ্র তাকে দিয়েছে ’খ্রিস্টের সম্মান’। কিন্তু এর পরেই আছে অব্যক্ত যন্ত্রণার ইঙ্গিত। আছে ক্লেদ, শ্লেষ ও কটাক্ষের বান। তিনি দারিদ্রের জন্য যে ’মুকুট শোভার কথা বলেছেন তা ’কন্টক’ বলেই উল্লেখ করেছেন। দারিদ্র’অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’ তাঁকে দিয়েছে। তিনি তাকে বলেছেণ, ’উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি,. . . .’। 
 
দ্বিতীয় স্তবকে আমরা অনেক নেতিবাচক ও হতাশাব্যঞ্জনক শব্দের সমারোহ দেখাতে পাই, যেগুলি সমাজে বুভুক্ষু  মানুষের যন্ত্রণাকে চিত্রায়িত করেছে। ’অম্লান স্বর্ণ’ , বিরস’, ’শুকালে মোর রূপ-রস-প্রাণ’, ’বুভুক্ষু’, ’শূন্য’ , বেদনা-হলুদ’, ’নর্মম’, ’করুণায়’, দূর্বল’, ’বেদনার টীকা’, এমন বহু শব্দের ব্যবহার করেছেন যে গুলি করুণ হতাশার প্রতিধ্বনি ছাড়া কিচুই নয়। এই স্তবকে আমরা অনুযোগের প্রতিধ্বনিও পাচ্ছি। তিনি যেমন বলেন, ’শীর্ণ করপুট ভরি সুন্দরের দান / যতবার নিতে যাই -হে বুভুক্ষু তুমি/ অগ্রে আসি করো পান।’ একটু পরেই তিনি বলেন, ’তুমি রবি তব তাপে শকাইয়া যায়/ করুনা-নীহার-বিন্দু! ম্লান হয়ে উঠি/ ধরণীর ছায়াঞ্চলে।’ তাই তিনি প্রশ্ন রাখেন ’অমৃত কি ফল?’ তবে এই স্তবকে হতাশা –দ্বন্ধ বা যন্ত্রণার ছবি যতই বলেছেন , ততই উজ্জীবনের অনুপ্রেরণা ও এই স্তবকে খঁজে পাই। 
’রে দূর্বল , আরার অমৃত-সাধনা
 এ-দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে!
 তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।
কাঁটা-কুঞ্জে বসি তুই ঘাঁথিবি মালিকা,
দিয়া গেনু ভালে তোর বেদনার টীকা!. . . ’
 
পরবর্তী স্তবকটি মাত্র দৃ’লাইনের । কিন্তু লাইনগুলি অত্যন্ত আবেদনময়ী। কবি এখানে বলেন, ’গাহি গান, গাঁথি মালা, কন্ঠ করে জ্বালা,/ দংশিল মোর নাগ-বালা।. . . . .’ এখানে অজানা   যন্ত্রণা ও ভবিষ্যতের কারণে ’ . . . .  ’ ব্যবহার করেছেন। 
 
পরবতৃী দু’টি স্তবক একই ধারাবাহিকতায় রচিত হলেও , এর পরের স্তবকটি আবার দারিদ্রকে আলিঙ্গন করে মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা আছে তাকে কমিয়ে ফেলার আবেদন তিনি রেখেছেন সব বঞ্চিত মানুষের কাছে। কবি বলেন, 
’সঙ্কোচ শরম বলি জানো নাকো কিছু,
উন্নত করিছ শির যার মাথা নিচু।  
মৃত্যু -পথ-যাত্রীদল তোমার ইঙ্গিতে 
গলায় পরিছে ফাঁসি হাসিতে হাসিতে। 
নিত্য অভাবে কু- জ্বালাইয়া বুকে 
সাধিতেছে মৃত্যু-যজ্ঞ পৈশাচিক সুখে।’ 
 
অন্য একটি স্তবকে কবি দারিদ্রের কষাঘাতে এবং ধনীক শাসক শ্রেণীর আঘাতে এবং শাসক শ্রেণীর নির্দেশনায় যে মৃত্যু হয়েছে এবং তার ফলে নববধুর যে আর্তনাদ, আর্তচিৎকার করুণভাবে বেজে উঠেছে তাও প্রকাশ পেয়েছে। আর্তচিৎকার করুণভাবে বেজে উঠেছে তাও প্রকাশ পেয়েছে। আর্তচিৎকারকে কবি অঙ্কণ করেছেন নি¤œলিখিতভাবে।
 
’ . . . . . কাঁদিয়া কাঁদিয়া
ডাকিছে তাদের যেন ঘরে ’সানাইয়া’!
বধূদের প্রাণ আজ সানা’য়ের সুরে
ভেসে যায় যথা আজ প্রিয়তম দূরে
আসি আসি করিতেছে। সখি বলে , বল্
মুছিলি কেন লা আঁখি, মুছিলি কাজল? . . . 
 
আরেকটু এগুলেই আমরা করুণ বিদারক যে বর্ণনা পাই , তা আমাদের সমাজের যে নিষ্ঠুরতার চিত্র। তাই কবি বলেন, 
 
পুষ্পাঞ্জলি ভরি দু’টি মাটি-মাখা হাতে
অরণী এগিয়ে আসে দেয় উপহার। 
ও যেন কনিষ্ঠা মেয়ে দুলালী আমার!---
সহসা চমকি উঠি! হায় মোর শিশু 
জাগিয়া কাঁদিছ ঘরে মোর, খাওনিকো কিছু
কালি হাতে সারাদিন তাপস নিষ্ঠুর, 
কাঁদো মোর ঘরে নিত্য তুমি ক্ষুধাতুর। 
 
সবশেষ লাইন দু’টি কেবল দীর্ঘ নি:শ্বাসের করুণ বহি:প্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়। তাই পরিশেষে আমাদের একথা বলা প্রয়োজন প্রথম স্তবকটি আমাদের জীবন সংহার ছাড়া আর কিছুই করেনি। কবি তাকে আলিঙ্গন করে জীবনকে উপভোগ করার আহবান জানিয়ে জীবনবোধে নতুন ধারার সূচনা করেছেন। তাই কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জীবনের জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করে টিকে থাকার অনুপ্রেরণা। 
 
লেখক: প্রভাষক, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও সেক্রেটারি, চারুতা ফাউন্ডেশন
 
বিডিব্রেকিং২৪ডটকম
ঢাকা, ১৩জুন ’২০১৩
২৭৩২৫৪৬৪৫

No comments:

Post a Comment