রুদ্রাক্ষ
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী ১৭.০৮.২০১২
ছোট্ট গ্রাম, নাম তার হরিনারায়ানপুর । চাষ আবাদ করে চলে গ্রামবাসীরা । অর্থনৈতিক সাচ্ছলতা নেই বললেই হয় । কৃষি প্রধান গ্রাম । সকলেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠিন পরিশ্রম করে সংসার চালায় । যে বছর ভাল বৃষ্টি হয় ফসল ভাল , নাহলে কপালে হাত । ফি বছর বন্যা তে গ্রাম প্লাবিত হয় আর ফসল হানি হয় । গ্রামে কুঁড়ে ঘরই বেসি । যারা গ্রাম ছেডে সহরে চলে গিয়েছে তারা প্রায় গ্রামের মুখ দেখেনা বললেই চলে ।দুর্গা পুজর সময় আসে , কদিন থেকে চলেযায় । এমনি এক গ্রামের বাসিন্দা কুঞ্জ বিহারি প্রধান । তার এক মাত্র ছেলের নাম রুদ্রাক্ষ প্রধান ।ডাক নাম রুদ্র । শিব রাত্রীর দিন রুদ্রাক্ষ র জন্ম তাই নাম ‘রুদ্রাক্ষ’ । ছেলেটা ধীর স্থীর মিষ্ট স্বাভাবের ।
কুঞ্জ আর তার স্ত্রী , লক্ষ্মী দুঃখে কষ্টে দিন কাটাত । রুদ্রাক্ষ গ্রামের স্কুল এ ক্লাস থ্রী তে পডত । ভালই পডাশুন করত । মাস্টার মশাই রুদ্রাক্ষ কে খুব স্নেহ করতেন । মা বাবার চোখের মণি যেমন গুনে তেমন কাজে । পডাশুন থেকে আরম্ভ করে ক্ষেত খামারের কাজ সব ই করত রুদ্রাক্ষ বাবার সঙ্গে ।
একদিন গ্রামেতে লোকের ভিড । অনেক গাডি তার সঙ্গে কিছু নেতা , গ্রামের মোডল নিশিকান্ত চৌধুরী । বাবুদের দেখে গ্রামের ছেলে ছোকরা, বুড বুডি সকলেই একজোট হল। নিশিকান্ত বাবু বললেন, এই গ্রামের সুদিন এল । আপনাদের আর দুঃখ কষ্ট থাকবে না ।আপনারা এবার গাডি ঘোঁড়া চোডে বাবুদের মত থাকবেন । এখানে বাঁধ হবে । সরকার আপনাদের জন্য এখানে বাঁধ করলে কৃষির উন্নতি সাধন এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সাচ্ছলতা আসবে । আপনাদের ছেলে মেয়ে পডাশুন করে অনেক বড হবে ।বিস্থাপিত ৭২৬ পরিবারের জন্য সরকার আলাদা বসতি নির্মাণ করবেন । আজ তাই আপনাদের কাছে আমাদের অঞ্চলের মাননীয় বিধায়ক, শ্রী ভগবান চৌধুরী মহাশয় উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পের বিষয় বিস্তারিত সূচনা দেবেন। সভাতে, করতালীর বদলে বিরোধিতা আরম্ভ হল। স্কুলের এক শিক্ষক শ্রী পঞ্চানন প্রধান বিরধিতার সুর আরম্ভ করে বললেন,সরকার আগে বিস্থপিতদের জন্য নতুন বসতি,রাস্তা,স্কুল,ডাক্তারখানা,পানীয় জলের ব্যাবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ করুন তারপর আমরা এই বিষয়ে সম্মতি জানাবো । নিশিকান্ত চৌধুরী খেঁপে লাল। গর্জে উঠলেন আপনার মাস্টারিটা বিধায়াক মহাশয় এক্ষুনি ঘুঞ্চিয়ে দেবেন, আপনার সাহস ত কম নয়! শিক্ষক মহাশয় বিনম্রতার সঙ্গে বললেন আপনারা এই গরীব গ্রামবাসী দের জমি নিয়ে নেবেন আর তার বিনিময়ে যা যা ঘোষণা করছেন তার ... বিধায়ক মাহাশয় হাত থামিয়ে নিশিকান্ত কে বসতে বললেন । তার পর শুরু করলেন আমি এখানে কারুর পেটের দানা ছিনিয়ে নিতে আসিনি বরং কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে এসেছি
। আপনারা ধৈর্য্য ধরে শুনুন সমস্ত বিষয়টা তারপর আপনাদের কথা শুনব। এই যোজনার জন্য সরকার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এবং এর সুবাদে সমুদায় ৯৯৫০ হেক্টার জমিতে সেচের সুবিধে হবে । আপনাদের পরিবারের কেউ একজন সরকারি চাকরী পাবে। সাতটি পুনর্বসতি কলোনি তে সকল বিস্থাপিতদের থইথান করা হবে ।
এর মধ্যে কিছু লোক চেঁচা মিচি শুরু করে দেয় । নিশিকান্ত সরকারী দালাল আমরা এ ভিটে মাটি ছাডবোনা। আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেডে কোথাউ যাবনা । ছেলেদের চিৎকারের সঙ্গে অন্যরাও সুর মেলাল । বিধায়ক মহাশয় জত বোঝালেও কেউ রাজি হলনা কি চিৎকার থামল না । অগত্যা সরকারি বাবুদের নিয়ে সবাই ফিরে গেলেন ।
তার পরের দিন পুলিশ এসে পঞ্চানন বাবুকে ধরে নিয়ে যায়
প্রথমে পঞ্চানন বাবু ওয়ারেন্ট দেখতে চান কিন্তু পুলিশ কিছু না দেখিয়েই ধরে নিয়ে যায় তাঁকে । সবাই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকে যে জার ঘরে চলে যায় । রুদ্রাক্ষ সব দেখে নির্বাক হয়ে যায় । বয়স অল্প হলেও তার মনে প্রতিবাদের বহ্নিশিখা জ্বলতে থাকে সে বোঝে যা হচ্ছে সেটা অন্যায় ।তাই পেছন থেকে পুলিশ এর জীপ কে লখ্য করে ঢিল ছোঁড়ে । বাড়িতে দউড়ে চলে যায়। বাবাকে বলাতে, বাবা গুম হয়ে বসে থাকেন, মা কিছু বললে বিরক্ত হন । আকাশ পানে চেয়ে কিছু বিড় বিড় করেন।
এর পরের ঘটনা গ্রামেতে ক্যাম্প বসে । তাহসিলদার, আর আই,আমিন চেন নিয়ে মাপ জোপ আরম্ভ করে দেয় । পল্লিসভা হয়
তাতে কিছু লোক নিশিকান্ত বাবুর গুণ্ডাদের ভয়ে টুঁ শব্দটি করেনা। হঠাৎ বাবা বাডিথেকে একটা কাটারি নিয়ে নিশিকান্তর দিকে দৌড়ন রাগে গজরাতে গজরাতে বলেন তোর চোদ্দ পুরুষের বাপের জমিদারী যে আমাদের জমি নিতে এসেছিস । সবাই রে রে করে বাবাকে আটকান । তহসিলদার বোঝান তোমরা ক্ষতি পুরন পাবে । অনেক টাকা পাবে । এখানে সই কর । বাবা কাগজটা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলেন । রাগে বলেন বাবু আপনারা আমাদের অন্ন র থালা ছিনিয়ে নিয়ে টাকা দেখাচ্ছেন । টাকা আমরা চাইনা । নিশিকান্ত গর্জে উঠে বলল , এই কুঞ্জ তোর গায়ে মেলা চর্বি হয়েছে না ? দেখাচ্ছি তোকে মজা। গ্রামের উন্নতি চাসনা তো গ্রাম ছেডে চোলেযা ।
পরের দিন পুলিশ এসে কুঞ্জকেও নিয়ে গেল কোন ওয়ারেন্ট না থাকা সত্তেও । দেশের আইন ব্যাবাস্থা র প্রতি কুঞ্জর ঘৄনা ধরেগেল । পুলিশের দারোগা বাবু বল্লেন , তোর এত সাহস তুই লোক প্রতিনিধির কথা না শুনে কাটারী নিয়ে মারতে গিয়েছিলিশ ; সেটা কি অস্বিকার করবি । সাক্ষীপ্রমান তোর বাডির লোক ই দেবে ।ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন কি ? কুঞ্জর নিজের জন্যে চিন্তা হয়না । তার বউ ছেলের যদি কোন ক্ষতি হয় তারচে তার মৄত্যু ভাল । হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । হাজতে নিশিকান্ত আর ভগবান চৌধুরী , বিধায়ক এসে কুঞ্জ কে বল্লেন ,” দেখ কুঞ্জ আমরা তোমাকে ইচ্ছে করলেই জেল হাজতে পাঠাতে পারি কিন্তু তাতে কি লাভ তোমার বউ ছেলে না খেয়ে মারা যাবে ।নিশিকান্ত বলে , তুই কি তাই চাস ?” কুঞ্জ হাউ হাউ
করে কেঁদে বলে ,”না বাবু ওরকমটি করবেন না ! আমি আপনারা যা চাইবেন তাই করব ।“ নিশিকান্তর ক্রুর হাঁসি কুঞ্জ র চোখে এড়ালোনা। কথায় আছে হাতি কাদায় পডলে ব্যাং এও লাথি মারে । কুঞ্জ র অবস্থা কিছুটা তাই । দারোগা বাবু বল্লেন , বাবুদের অশেষ দয়া তা নাহলে তোর নামে ৪ টে দফা লাগিয়ে তোকে জেলে ভরতাম বুঝলি । কালকেই কোরট্ এ হাজির করা হত ৷ভগবান বুঝলি সাখ্যাৎ ভগবান , যেমন নাম সেইরকম কাজ । আমাদের বিধায়ক মহাশয় তোকে ছাডাতে নিজে এসেছেন ।তুই কিনা কাটারি নিয়ে গিয়েছিলিশ মারতে । ধর্ম নেইরে এ জুগে ধর্ম নেই । যার ভাল করবি সেই তোকে বাঁশ দেবে । আঃ কি হচ্ছে ? বিধায়ক বলেন । আমি যে জন্য এসেছি সেটা করুন । এই সময় বাইরে লক্ষীর গলার আওয়াজ এল !লক্ষী গজরাতে গজরাতে ভেতরে ঢুকলো , আ মরন মিনশে! আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায় !! আমার বর ছাডা কি কেউ ছিলনা এ গেরামে মুখপোডারা ? হাজতে ভরতে তোদের হাথ কাঁপলোনা ? কাল থেকে মানুষটা ভাতে মুখ দেয়নি । শুকিয়ে রোগা কাঠি হয়ে গেছে গা । মরন হয় না তোদের ? আমি যদি কোন পাপ না কোরে থাকি এর যবাব দিও হে ঠাকুর ! তুমি ভরষা !!
“দেখছিস কুঞ্জ তোর বউ এর চোপা?” দারগা বাবু বলে উঠলেন । স্যার এর একটা বিহিৎ করুন । মেয়েমানুষের চোপা ! এই কে তোকে থানাতে আসতে বলেছে? যা এক্ষুনি । নাহলে এক্ষুনি তোকেও লক আপ এ
ভর্তি করে দেব । সাধে কি আর বলে মেয়ে মানুষ ? মুখের কথা দেখ ? যেন খই ফুটছে । উঁহ ! দারোগা বলেন। গরিবের কি কেউ নেই ? আমি কি সাধে এখানে এয়েছি ?লক্ষী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আমরা এখানে কুঞ্জ কে ছাডাতে এসেছি । আপনি ঘরে যান । সব ঠিক হয়ে যাবে । যাচ্ছি যাচ্ছি । কে আর থানাতে আসে বাবু গরজ না পড়লে।লক্ষী গজরাতে গজরাতে থানা ছেড়ে চলে যায়।
দেখলেন স্যার দেখলেন এদের । এরা লাথির ভাষা বোঝে ভালো কথা বললে মাথায় চড়ে।
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী ১৭.০৮.২০১২
ছোট্ট গ্রাম, নাম তার হরিনারায়ানপুর । চাষ আবাদ করে চলে গ্রামবাসীরা । অর্থনৈতিক সাচ্ছলতা নেই বললেই হয় । কৃষি প্রধান গ্রাম । সকলেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠিন পরিশ্রম করে সংসার চালায় । যে বছর ভাল বৃষ্টি হয় ফসল ভাল , নাহলে কপালে হাত । ফি বছর বন্যা তে গ্রাম প্লাবিত হয় আর ফসল হানি হয় । গ্রামে কুঁড়ে ঘরই বেসি । যারা গ্রাম ছেডে সহরে চলে গিয়েছে তারা প্রায় গ্রামের মুখ দেখেনা বললেই চলে ।দুর্গা পুজর সময় আসে , কদিন থেকে চলেযায় । এমনি এক গ্রামের বাসিন্দা কুঞ্জ বিহারি প্রধান । তার এক মাত্র ছেলের নাম রুদ্রাক্ষ প্রধান ।ডাক নাম রুদ্র । শিব রাত্রীর দিন রুদ্রাক্ষ র জন্ম তাই নাম ‘রুদ্রাক্ষ’ । ছেলেটা ধীর স্থীর মিষ্ট স্বাভাবের ।
কুঞ্জ আর তার স্ত্রী , লক্ষ্মী দুঃখে কষ্টে দিন কাটাত । রুদ্রাক্ষ গ্রামের স্কুল এ ক্লাস থ্রী তে পডত । ভালই পডাশুন করত । মাস্টার মশাই রুদ্রাক্ষ কে খুব স্নেহ করতেন । মা বাবার চোখের মণি যেমন গুনে তেমন কাজে । পডাশুন থেকে আরম্ভ করে ক্ষেত খামারের কাজ সব ই করত রুদ্রাক্ষ বাবার সঙ্গে ।
একদিন গ্রামেতে লোকের ভিড । অনেক গাডি তার সঙ্গে কিছু নেতা , গ্রামের মোডল নিশিকান্ত চৌধুরী । বাবুদের দেখে গ্রামের ছেলে ছোকরা, বুড বুডি সকলেই একজোট হল। নিশিকান্ত বাবু বললেন, এই গ্রামের সুদিন এল । আপনাদের আর দুঃখ কষ্ট থাকবে না ।আপনারা এবার গাডি ঘোঁড়া চোডে বাবুদের মত থাকবেন । এখানে বাঁধ হবে । সরকার আপনাদের জন্য এখানে বাঁধ করলে কৃষির উন্নতি সাধন এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সাচ্ছলতা আসবে । আপনাদের ছেলে মেয়ে পডাশুন করে অনেক বড হবে ।বিস্থাপিত ৭২৬ পরিবারের জন্য সরকার আলাদা বসতি নির্মাণ করবেন । আজ তাই আপনাদের কাছে আমাদের অঞ্চলের মাননীয় বিধায়ক, শ্রী ভগবান চৌধুরী মহাশয় উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পের বিষয় বিস্তারিত সূচনা দেবেন। সভাতে, করতালীর বদলে বিরোধিতা আরম্ভ হল। স্কুলের এক শিক্ষক শ্রী পঞ্চানন প্রধান বিরধিতার সুর আরম্ভ করে বললেন,সরকার আগে বিস্থপিতদের জন্য নতুন বসতি,রাস্তা,স্কুল,ডাক্তারখানা,পানীয় জলের ব্যাবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ করুন তারপর আমরা এই বিষয়ে সম্মতি জানাবো । নিশিকান্ত চৌধুরী খেঁপে লাল। গর্জে উঠলেন আপনার মাস্টারিটা বিধায়াক মহাশয় এক্ষুনি ঘুঞ্চিয়ে দেবেন, আপনার সাহস ত কম নয়! শিক্ষক মহাশয় বিনম্রতার সঙ্গে বললেন আপনারা এই গরীব গ্রামবাসী দের জমি নিয়ে নেবেন আর তার বিনিময়ে যা যা ঘোষণা করছেন তার ... বিধায়ক মাহাশয় হাত থামিয়ে নিশিকান্ত কে বসতে বললেন । তার পর শুরু করলেন আমি এখানে কারুর পেটের দানা ছিনিয়ে নিতে আসিনি বরং কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে এসেছি
। আপনারা ধৈর্য্য ধরে শুনুন সমস্ত বিষয়টা তারপর আপনাদের কথা শুনব। এই যোজনার জন্য সরকার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এবং এর সুবাদে সমুদায় ৯৯৫০ হেক্টার জমিতে সেচের সুবিধে হবে । আপনাদের পরিবারের কেউ একজন সরকারি চাকরী পাবে। সাতটি পুনর্বসতি কলোনি তে সকল বিস্থাপিতদের থইথান করা হবে ।
এর মধ্যে কিছু লোক চেঁচা মিচি শুরু করে দেয় । নিশিকান্ত সরকারী দালাল আমরা এ ভিটে মাটি ছাডবোনা। আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেডে কোথাউ যাবনা । ছেলেদের চিৎকারের সঙ্গে অন্যরাও সুর মেলাল । বিধায়ক মহাশয় জত বোঝালেও কেউ রাজি হলনা কি চিৎকার থামল না । অগত্যা সরকারি বাবুদের নিয়ে সবাই ফিরে গেলেন ।
তার পরের দিন পুলিশ এসে পঞ্চানন বাবুকে ধরে নিয়ে যায়
প্রথমে পঞ্চানন বাবু ওয়ারেন্ট দেখতে চান কিন্তু পুলিশ কিছু না দেখিয়েই ধরে নিয়ে যায় তাঁকে । সবাই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকে যে জার ঘরে চলে যায় । রুদ্রাক্ষ সব দেখে নির্বাক হয়ে যায় । বয়স অল্প হলেও তার মনে প্রতিবাদের বহ্নিশিখা জ্বলতে থাকে সে বোঝে যা হচ্ছে সেটা অন্যায় ।তাই পেছন থেকে পুলিশ এর জীপ কে লখ্য করে ঢিল ছোঁড়ে । বাড়িতে দউড়ে চলে যায়। বাবাকে বলাতে, বাবা গুম হয়ে বসে থাকেন, মা কিছু বললে বিরক্ত হন । আকাশ পানে চেয়ে কিছু বিড় বিড় করেন।
এর পরের ঘটনা গ্রামেতে ক্যাম্প বসে । তাহসিলদার, আর আই,আমিন চেন নিয়ে মাপ জোপ আরম্ভ করে দেয় । পল্লিসভা হয়
তাতে কিছু লোক নিশিকান্ত বাবুর গুণ্ডাদের ভয়ে টুঁ শব্দটি করেনা। হঠাৎ বাবা বাডিথেকে একটা কাটারি নিয়ে নিশিকান্তর দিকে দৌড়ন রাগে গজরাতে গজরাতে বলেন তোর চোদ্দ পুরুষের বাপের জমিদারী যে আমাদের জমি নিতে এসেছিস । সবাই রে রে করে বাবাকে আটকান । তহসিলদার বোঝান তোমরা ক্ষতি পুরন পাবে । অনেক টাকা পাবে । এখানে সই কর । বাবা কাগজটা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলেন । রাগে বলেন বাবু আপনারা আমাদের অন্ন র থালা ছিনিয়ে নিয়ে টাকা দেখাচ্ছেন । টাকা আমরা চাইনা । নিশিকান্ত গর্জে উঠে বলল , এই কুঞ্জ তোর গায়ে মেলা চর্বি হয়েছে না ? দেখাচ্ছি তোকে মজা। গ্রামের উন্নতি চাসনা তো গ্রাম ছেডে চোলেযা ।
পরের দিন পুলিশ এসে কুঞ্জকেও নিয়ে গেল কোন ওয়ারেন্ট না থাকা সত্তেও । দেশের আইন ব্যাবাস্থা র প্রতি কুঞ্জর ঘৄনা ধরেগেল । পুলিশের দারোগা বাবু বল্লেন , তোর এত সাহস তুই লোক প্রতিনিধির কথা না শুনে কাটারী নিয়ে মারতে গিয়েছিলিশ ; সেটা কি অস্বিকার করবি । সাক্ষীপ্রমান তোর বাডির লোক ই দেবে ।ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন কি ? কুঞ্জর নিজের জন্যে চিন্তা হয়না । তার বউ ছেলের যদি কোন ক্ষতি হয় তারচে তার মৄত্যু ভাল । হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । হাজতে নিশিকান্ত আর ভগবান চৌধুরী , বিধায়ক এসে কুঞ্জ কে বল্লেন ,” দেখ কুঞ্জ আমরা তোমাকে ইচ্ছে করলেই জেল হাজতে পাঠাতে পারি কিন্তু তাতে কি লাভ তোমার বউ ছেলে না খেয়ে মারা যাবে ।নিশিকান্ত বলে , তুই কি তাই চাস ?” কুঞ্জ হাউ হাউ
করে কেঁদে বলে ,”না বাবু ওরকমটি করবেন না ! আমি আপনারা যা চাইবেন তাই করব ।“ নিশিকান্তর ক্রুর হাঁসি কুঞ্জ র চোখে এড়ালোনা। কথায় আছে হাতি কাদায় পডলে ব্যাং এও লাথি মারে । কুঞ্জ র অবস্থা কিছুটা তাই । দারোগা বাবু বল্লেন , বাবুদের অশেষ দয়া তা নাহলে তোর নামে ৪ টে দফা লাগিয়ে তোকে জেলে ভরতাম বুঝলি । কালকেই কোরট্ এ হাজির করা হত ৷ভগবান বুঝলি সাখ্যাৎ ভগবান , যেমন নাম সেইরকম কাজ । আমাদের বিধায়ক মহাশয় তোকে ছাডাতে নিজে এসেছেন ।তুই কিনা কাটারি নিয়ে গিয়েছিলিশ মারতে । ধর্ম নেইরে এ জুগে ধর্ম নেই । যার ভাল করবি সেই তোকে বাঁশ দেবে । আঃ কি হচ্ছে ? বিধায়ক বলেন । আমি যে জন্য এসেছি সেটা করুন । এই সময় বাইরে লক্ষীর গলার আওয়াজ এল !লক্ষী গজরাতে গজরাতে ভেতরে ঢুকলো , আ মরন মিনশে! আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায় !! আমার বর ছাডা কি কেউ ছিলনা এ গেরামে মুখপোডারা ? হাজতে ভরতে তোদের হাথ কাঁপলোনা ? কাল থেকে মানুষটা ভাতে মুখ দেয়নি । শুকিয়ে রোগা কাঠি হয়ে গেছে গা । মরন হয় না তোদের ? আমি যদি কোন পাপ না কোরে থাকি এর যবাব দিও হে ঠাকুর ! তুমি ভরষা !!
“দেখছিস কুঞ্জ তোর বউ এর চোপা?” দারগা বাবু বলে উঠলেন । স্যার এর একটা বিহিৎ করুন । মেয়েমানুষের চোপা ! এই কে তোকে থানাতে আসতে বলেছে? যা এক্ষুনি । নাহলে এক্ষুনি তোকেও লক আপ এ
ভর্তি করে দেব । সাধে কি আর বলে মেয়ে মানুষ ? মুখের কথা দেখ ? যেন খই ফুটছে । উঁহ ! দারোগা বলেন। গরিবের কি কেউ নেই ? আমি কি সাধে এখানে এয়েছি ?লক্ষী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আমরা এখানে কুঞ্জ কে ছাডাতে এসেছি । আপনি ঘরে যান । সব ঠিক হয়ে যাবে । যাচ্ছি যাচ্ছি । কে আর থানাতে আসে বাবু গরজ না পড়লে।লক্ষী গজরাতে গজরাতে থানা ছেড়ে চলে যায়।
দেখলেন স্যার দেখলেন এদের । এরা লাথির ভাষা বোঝে ভালো কথা বললে মাথায় চড়ে।
কুঞ্জ র মনে হচ্ছিল গিয়ে ঠাস্ করে এক থাপ্পড
মারে নিশিকান্ত কে । কিন্তু ওর হাত পা বাঁধা ।ছিঃ শেষে কিনা
থানাতে? লজ্যা ঘৄনাতে নিজেকে ছোট
মনে হয়।কিন্তু মাস্টার মোসাই ? কি অভিসন্ধী
এদের কে জানে ? বলা মুশকিল । বাডি গেলে
যানতে পারব ? লক্ষী ত্ত বা কেমন? থানায় কখন মেয়েছেলে আসে ? সবাই কি ভাবল?
কুঞ্জ বাড়ি ফিরল তার পরদিন মাষটার মোসাই ও ফিরে এলেন । মাষটার মোসাইএর এখানে কেউ থাকেন না ।উনি একাই এই গ্র।মে প্রায় বছর দশেক আছেন ।তিনি নিজে ছাত্রদের শিখিয়েছেন অন্যায়কে সহ্য করা এবং অন্যায় করা দুটই এক অপরাধ । অন্যায়কে প্রতিবাদ কর হিঁসা দিয়ে নয় যুক্তি দিয়ে । কুঞ্জ যেটা করল সেটা ভূল । সে ভূলের মাসুল তাকে দিতে হল।
হাজৎ থেকে ছাডা পাওয়ার পর কুঞ্জ ঘরে ফিরে যায় । দু দিন হল খেত খামারের কাজ না হওয়াতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে । আজকাল জা পোকার উৎপাত কন কিটনাশক ই কাজ করে না । গ্রামের গ্রাম সেভক যে কিটনাশক এর চিরকুট টা লিখে দিয়েছিলেন সেটা কিনে এনেছিল কিন্তু স্প্রে করা হয়ে ওঠেনি । আজকে দেখা যাক ফসলের অবস্থা বুঝে স্প্রে করবে । রাস্তায় যেতে যেতে রুদ্রর জন্য ভাবে । ওকে এই গ্রাম থেকে সহরে পাঠিয়ে দেবে ওর কাকার কাছে । বলাবাহুল্য ভাইকে অনেক কষ্টে ডাক্তারি পড়াতে পেরেছে ।এখন সে মস্ত ডাক্তার . রুদ্র পডাসোনাতে ভালো তাই ওর সম্ভাবনা বেশি ডাক্তার হবার। ভাইএর ডাক্তারি পডার খরচ সামলাতে না পেরে কুঞ্জ জমি বন্ধক রাখে নিধিরাম বেনের কাছে । আজ সাত বছর হল সুধ গুনছে । এই সব চিন্তার সঙ্গে গোল ঘাঁট বেঁধে যায় । জমি তে গিয়ে যা কুঞ্জ দেখল সেটা ওকে আরো আঘাত করলো . ওর জমি মাপ জোপ হচ্ছে দেখে কুঞ্জ হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আমিন কে। .
আমিন : " নিধিরাম তার নামে জমি করিয়ে নিয়েছে ,এখন রেকর্ড তার নামে তুই আপত্তি করিসনি কেন সেটেল্মেন্টেএ ? "
কুঞ্জ বাড়ি ফিরল তার পরদিন মাষটার মোসাই ও ফিরে এলেন । মাষটার মোসাইএর এখানে কেউ থাকেন না ।উনি একাই এই গ্র।মে প্রায় বছর দশেক আছেন ।তিনি নিজে ছাত্রদের শিখিয়েছেন অন্যায়কে সহ্য করা এবং অন্যায় করা দুটই এক অপরাধ । অন্যায়কে প্রতিবাদ কর হিঁসা দিয়ে নয় যুক্তি দিয়ে । কুঞ্জ যেটা করল সেটা ভূল । সে ভূলের মাসুল তাকে দিতে হল।
হাজৎ থেকে ছাডা পাওয়ার পর কুঞ্জ ঘরে ফিরে যায় । দু দিন হল খেত খামারের কাজ না হওয়াতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে । আজকাল জা পোকার উৎপাত কন কিটনাশক ই কাজ করে না । গ্রামের গ্রাম সেভক যে কিটনাশক এর চিরকুট টা লিখে দিয়েছিলেন সেটা কিনে এনেছিল কিন্তু স্প্রে করা হয়ে ওঠেনি । আজকে দেখা যাক ফসলের অবস্থা বুঝে স্প্রে করবে । রাস্তায় যেতে যেতে রুদ্রর জন্য ভাবে । ওকে এই গ্রাম থেকে সহরে পাঠিয়ে দেবে ওর কাকার কাছে । বলাবাহুল্য ভাইকে অনেক কষ্টে ডাক্তারি পড়াতে পেরেছে ।এখন সে মস্ত ডাক্তার . রুদ্র পডাসোনাতে ভালো তাই ওর সম্ভাবনা বেশি ডাক্তার হবার। ভাইএর ডাক্তারি পডার খরচ সামলাতে না পেরে কুঞ্জ জমি বন্ধক রাখে নিধিরাম বেনের কাছে । আজ সাত বছর হল সুধ গুনছে । এই সব চিন্তার সঙ্গে গোল ঘাঁট বেঁধে যায় । জমি তে গিয়ে যা কুঞ্জ দেখল সেটা ওকে আরো আঘাত করলো . ওর জমি মাপ জোপ হচ্ছে দেখে কুঞ্জ হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আমিন কে। .
আমিন : " নিধিরাম তার নামে জমি করিয়ে নিয়েছে ,এখন রেকর্ড তার নামে তুই আপত্তি করিসনি কেন সেটেল্মেন্টেএ ? "
কুঞ্জ ঃ আমার কাছে
কি কোন নোটিস এসেছে যে আমি আপত্তি করব ?
আমিনঃ নোটিস তো
তোর নামে পাঠান হয়েছে তুই পাসনি ত আমরা কি করব?
কুঞ্জ ; মানে ? আমার জমি আমার বাপ দাদারআমলের ; নিধিরাম এর নামে কি করে হয় ?
আমিনঃ হয় হয় ! তুই
কি আইন জানিস ? তোর ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেশ কর সব ঠিক করে বুঝে যাবি । ও বধ হয় সই করে
দিয়েছে । কুঞ্জর মাথায় বজ্রাঘাত পড়লো যেন !কুঞ্জ বিশ্বাস করতে পারলনা? সেদিন রাত্রে
কাছের
সহরে টেলেফোনে বুথ থেকে কুঞ্জ টেলেফোনে করে । কিছুক্ষনরিংহওয়ার
পর ওপার থেকে হ্যালো স্বর আসে . কুঞ্জ র ভাই এর কন্ঠ স্বর ভেসে আসে .তুই কেমন আছিস রে
নিতাই ? ভালো! ! কেন এত রাত্রে ? হ্যাঁরে নিতাই আমাদের জমির কোনো কাগজে কি তুই সই করেছিস ?আমাদের মানে ? ওটা কি একা তোমার নাকি ?আমার ভাগ আমি বেচে দিয়েছি। কাল অপারেসন আছে ঘুমতে
দাও।কুঞ্জ আর নিজেকে সামলাতে পারলনা হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । ফোনতার হাত থেকে
পডে গেল । বাডিতে ফিরে এলো । যে কিটনাশক কিনে এনেছিল পোকা মারার জন্য সেটা সকলের
অজান্তে খেয়ে দিল রাত্তিরে । কি হল ? কি হল ? লক্ষী, কুঞ্জকে বমি করতে দেখে ঘাবডে
যায় । কি হল ? মাগো আমার সর্বনাশ হল গো । দৌড়ে যায় পাশের বাডিতে সুভ্র কে খবর দিতে
। বলে মাষ্টার মোশাই কে খবর দিতে ডাক্তার কে ডাকার জন্য । এ গ্রামে ডাক্তার নেই
আছে এক কম্পাউন্ডার, সেই সব রোগি দেখে আর অসুধ দেয় ।কম্পাউন্ডার এসে দেখেন মুখ
থেকে গেঁজা বেরুচ্ছে । দেখে সন্দেহ হয়। এটাতো সুইসাইড কেস ।রুদ্রাখ সব দেখছিল
শুনছিলকিছুই মুখ থেকে সব্দ না করে গুম হয়ে বসে ছিল । হঠাৎ বাবা যে কাটারি টা নিয়ে নিশিকান্ত কে তাডা করেছিল সেটা
নিয়ে দৌড়তে লাগলো । সবাই কে মেরে ফেলব । আমার বাবাকে আমায় ফিরিয়ে দাও নাহলে সকলকে
মেরে ফেলব । আমার বাবাকে আমায় ফিরিয়ে দাও নাহলে সকলকে মেরে ফেলব । রুদ্রাক্ষ আর
পরের দিন ফেরেনি কথায় গেল কেউ জানেনা । এরকম হাজার হাজার রুদ্রাক্ষ র জন্ম হচ্ছে এ
দেশে এরকম হাজার হাজার কুঞ্জ দারীদ্রের কশা ঘাতে মৄত্যু কে স্বাগতম করতে বাধ্য
হচ্ছে । থেকে জাচ্ছে কিছু নিশিকান্ত,নিতাই,নিধিরাম,পুলিশ দারোগা র মতন স্বার্থপর
রক্ত শোষা মানুষ রুপি পসু । পরের দিন কাগজে বড বড করে বেরুলো হরিনারায়নপুর এ চাষী
মৃত্যু । এন জি ও, পত্রকার , বিরোধীনেতাদের শ্রোতছুটল । কেউ
কি রুদ্রাক্ষর খোঁজ নিল? কেন কুঞ্জ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল? কি হবে লক্ষী র
সিঁদুরের ? কেউ কি তার সোয়ামি কে ফেরাতে পারবে গা ? এ প্রশ্ন আপনাদের কাছে রাখলাম।
পরের দিন সকালে কাগজে বড বড করে বেরুলো হরিনারায়নপুরে চাষী আত্মহত্যা । সামনে
বিধান সভাতে গরমা গরম বিতর্কের জন্য। হা হুতাষ,সান্ত্বনার ফোয়ারা ছুটল। আসোল ঘটনা
কেউ জানলোনা। কুঞ্জ কিসের জন্য আত্মহত্যা করেছে !!
**‘অন্যনিষাদে’
প্রকাশিত
No comments:
Post a Comment