Saturday, June 22, 2013

তুমি যে আমারে চাও আমি সে জানি।






১৮৮৪ র ১৯ সে এপ্রিল । আত্মহত্যার চেষ্টায় আফিম খেলেন কাদম্বরী দেবী – জোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। রবিন্দ্রনাথ এর নুতনবউঠান। মারা গেলেন দুদিন পর, ২১ শে এপ্রিল ।
এই দুদিন মৃত্যুর সঙ্গে কিভাবে যুদ্ধ করেছিলেন কাদম্বরী দেবী ? তাঁর শেষ চিকিৎসার জন্য প্রথম দিনেই এসেছিলেন সাহেব ডাক্তার ডি বি স্মিথ । ৪০০ টাকা খরচ করে আনা হয়েছিল তাঁকে, চেকে টাকা দেওয়া হল। এরপর ওষুধ এলো ২৫ টাকার । বাড়িতে তো আর সাহেব ডাক্তারকে রাখা যায় না । কিন্তু কাদম্বরী দেবীর অবস্থা ক্রমসই খারাপ হচ্ছে । তাঁর শ্বাসকষ্ট বাড়ছে । আরও গভীর হচ্ছে তাঁর আচ্ছন্নতা। বিশেষ ভয় রাত্রের দিকে। তখন হাতের কাছে ডাক্তার পাওয়া সহজ নয়। তাই সাহেব ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চললেও রাত্রে বাড়িতে রাখা হল এক জোড়া বাঙালি ডাক্তার – নীলমাধব হালদার ও সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় । তেতলার ঘরে রাখা হয়েছে কাদম্বরী দেবিকে। এঘরে কেউ থাকেন না । সুতরাং ঘরে আলো নেই। এই ঘরের জন্য দেড় টাকা খরচ করে বাতি এলো । বাতির আলোয় নিঃসাড় পরে আছেন কাদম্বরী । তাঁর শরীর থেকে প্রানের আলো ক্রমে চলে যাচ্ছে । অবস্থা খারাপ হতে, এলেন আরও একজন দামি ডাক্তার ভগবৎ চন্দ্র রুদ্র । ইনিও থাকলেন রাত্রিবেলা । এতগুলি ডাক্তারের জন্য দুবেলার মহাভোজ আস্তে লাগলো উইলসন হোটেল থেকে। কিন্তু এঁদের সমবেত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে ২১ শে এপ্রিল সোমবার সকালে মারা গেলেন কাদম্বরী দেবী। জ্যোতিরিন্দ্র-রবীন্দ্রের প্রবল পরাক্রমি পিতৃদেব গ্রিহকরতা, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কঠোর আদেশে লোপাট করা হল আত্মহত্যার সফল প্রমান। ঘুষ দিয়ে বন্ধ করা হল সংবাদপত্রের মুখ । কোন সংবাদ পত্রে ছাপা হল না কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু সংবাদ। তাঁর দেহ মর্গে পাঠানো হল না । পাছে সেখান থেকে বেরিয়ে যায় তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ওই পরাক্রমি পুরুষ দেবেন্দ্রনাথেরই হুকুমে বা নেপথ্য প্ররোচনায় হারিয়ে গেল করোনার রিপোর্ট । কাদম্বরী দেবীর অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া অবশ্যইত ’কাঠ খাট ঘৃত চন্দন ধুপ’ প্রভৃতি সহযোগে হয়েছিলো নিমতলা শ্মশানে পণ্ডিত হেমচন্দ্র বিদ্যারত্নের তত্ত্বাবধানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ । ... অনুপস্থিত তাঁর স্বামী জ্যোতিরিন্দ্রনাথ...!!!
শোনা যায় কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার পরই মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী মেজবউঠাকুরুণ জ্ঞানদানন্দিনী দেবী আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বেড়াতে গেলেন জাহাজে করে। পরে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকেও নিয়েছিলেন ... !!! ( সংগৃহীত গ্রন্থ থেকে নেওয়া )


তুমি যে আমারে চাও আমি সে জানি।
কেন যে মোরে কাঁদাও আমি সে জানি।।
এ আলোকে এ আঁধারে কেন তুমি আপনারে
ছায়াখানি দিয়ে যাও আমি সে জানি।।
সারাদিন নানা কাজে কেন তুমি নানা সাজে
কত সুরে ডাক দাও আমি সে জানি।
সারা হলে দে'য়া-নে'য়া দিনান্তের শেষ খেয়া
কোন্‌ দিক-পানে বাও আমি সে জানি।।



তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর
তুমি তাই এসেছ নীচে-
আমায় নইলে, ত্রিভুবনেশ্বর,
তোমার প্রেম হত যে মিছে ।।
আমায় নিয়ে মেলেছ এই মেলা,
আমার হিয়ায় চলছে রসের খেলা,
মোর জীবনে বিচিত্ররূপ ধরে
তোমার ইচ্ছা তরঙ্গিছে ।।
তাই তো তুমি রাজার রাজা হয়ে
তবু আমার হৃদয় লাগি
ফিরছ কত মনোহরণ বেশে,
প্রভু, নিত্য আছ জাগি ।
তাই তো, প্রভু, যেথায় এল নেমে
তোমারি প্রেম ভক্তপ্রাণের প্রেমে
মূর্তি তোমার যুগলসম্মিলনে
সেথায় পূর্ণ প্রকাশিছে ।।

Thursday, June 13, 2013

রুদ্রাক্ষ ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী ১৭.০৮.২০১২

রুদ্রাক্ষ 

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী ১৭.০৮.২০১২

ছোট্ট গ্রাম, নাম তার হরিনারায়ানপুর । চাষ আবাদ করে চলে গ্রামবাসীরা । অর্থনৈতিক সাচ্ছলতা নেই বললেই হয় । কৃষি প্রধান গ্রাম । সকলেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠিন পরিশ্রম করে সংসার চালায় । যে বছর ভাল বৃষ্টি হয় ফসল ভাল , নাহলে কপালে হাত । ফি বছর বন্যা তে গ্রাম প্লাবিত হয় আর ফসল হানি হয় । গ্রামে কুঁড়ে ঘরই বেসি । যারা গ্রাম ছেডে সহরে চলে গিয়েছে তারা প্রায় গ্রামের মুখ দেখেনা বললেই চলে ।দুর্গা পুজর সময় আসে , কদিন থেকে চলেযায় । এমনি এক গ্রামের বাসিন্দা কুঞ্জ বিহারি প্রধান । তার এক মাত্র ছেলের নাম রুদ্রাক্ষ প্রধান ।ডাক নাম রুদ্র । শিব রাত্রীর দিন রুদ্রাক্ষ র জন্ম তাই নাম রুদ্রাক্ষছেলেটা ধীর স্থীর মিষ্ট স্বাভাবের । 
কুঞ্জ আর তার স্ত্রী , লক্ষ্মী দুঃখে কষ্টে দিন কাটাত । রুদ্রাক্ষ গ্রামের স্কুল এ ক্লাস থ্রী তে পডত । ভালই পডাশুন করত । মাস্টার মশাই রুদ্রাক্ষ কে খুব স্নেহ করতেন । মা বাবার চোখের মণি যেমন গুনে তেমন কাজে । পডাশুন থেকে আরম্ভ করে ক্ষেত খামারের কাজ সব ই করত রুদ্রাক্ষ বাবার সঙ্গে । 
একদিন গ্রামেতে লোকের ভিড । অনেক গাডি তার সঙ্গে কিছু নেতা , গ্রামের মোডল নিশিকান্ত চৌধুরী । বাবুদের দেখে গ্রামের ছেলে ছোকরা, বুড বুডি সকলেই একজোট হল। নিশিকান্ত বাবু বললেন, এই গ্রামের সুদিন এল । আপনাদের আর দুঃখ কষ্ট থাকবে না ।আপনারা এবার গাডি ঘোঁড়া চোডে বাবুদের মত থাকবেন । এখানে বাঁধ হবে । সরকার আপনাদের জন্য এখানে বাঁধ করলে কৃষির উন্নতি সাধন এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সাচ্ছলতা আসবে । আপনাদের ছেলে মেয়ে পডাশুন করে অনেক বড হবে ।বিস্থাপিত ৭২৬ পরিবারের জন্য সরকার আলাদা বসতি নির্মাণ করবেন । আজ তাই আপনাদের কাছে আমাদের অঞ্চলের মাননীয় বিধায়ক, শ্রী ভগবান চৌধুরী মহাশয় উপস্থিত থেকে এই প্রকল্পের বিষয় বিস্তারিত সূচনা দেবেন। সভাতে, করতালীর বদলে বিরোধিতা আরম্ভ হল। স্কুলের এক শিক্ষক শ্রী পঞ্চানন প্রধান বিরধিতার সুর আরম্ভ করে বললেন,সরকার আগে বিস্থপিতদের জন্য নতুন বসতি,রাস্তা,স্কুল,ডাক্তারখানা,পানীয় জলের ব্যাবস্থা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ করুন তারপর আমরা এই বিষয়ে সম্মতি জানাবো । নিশিকান্ত চৌধুরী খেঁপে লাল। গর্জে উঠলেন আপনার মাস্টারিটা বিধায়াক মহাশয় এক্ষুনি ঘুঞ্চিয়ে দেবেন, আপনার সাহস ত কম নয়! শিক্ষক মহাশয় বিনম্রতার সঙ্গে বললেন আপনারা এই গরীব গ্রামবাসী দের জমি নিয়ে নেবেন আর তার বিনিময়ে যা যা ঘোষণা করছেন তার ... বিধায়ক মাহাশয় হাত থামিয়ে নিশিকান্ত কে বসতে বললেন । তার পর শুরু করলেন আমি এখানে কারুর পেটের দানা ছিনিয়ে নিতে আসিনি বরং কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে এসেছি

আপনারা ধৈর্য্য ধরে শুনুন সমস্ত বিষয়টা তারপর আপনাদের কথা শুনব। এই যোজনার জন্য সরকার ৪৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন এবং এর সুবাদে সমুদায় ৯৯৫০ হেক্টার জমিতে সেচের সুবিধে হবে । আপনাদের পরিবারের কেউ একজন সরকারি চাকরী পাবে। সাতটি পুনর্বসতি কলোনি তে সকল বিস্থাপিতদের থইথান করা হবে । 
এর মধ্যে কিছু লোক চেঁচা মিচি শুরু করে দেয় । নিশিকান্ত সরকারী দালাল আমরা এ ভিটে মাটি ছাডবোনা। আমাদের বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেডে কোথাউ যাবনা । ছেলেদের চিৎকারের সঙ্গে অন্যরাও সুর মেলাল । বিধায়ক মহাশয় জত বোঝালেও কেউ রাজি হলনা কি চিৎকার থামল না । অগত্যা সরকারি বাবুদের নিয়ে সবাই ফিরে গেলেন । 
তার পরের দিন পুলিশ এসে পঞ্চানন বাবুকে ধরে নিয়ে যায়
প্রথমে পঞ্চানন বাবু ওয়ারেন্ট দেখতে চান কিন্তু পুলিশ কিছু না দেখিয়েই ধরে নিয়ে যায় তাঁকে । সবাই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থেকে যে জার ঘরে চলে যায় । রুদ্রাক্ষ সব দেখে নির্বাক হয়ে যায় । বয়স অল্প হলেও তার মনে প্রতিবাদের বহ্নিশিখা জ্বলতে থাকে সে বোঝে যা হচ্ছে সেটা অন্যায় ।তাই পেছন থেকে পুলিশ এর জীপ কে লখ্য করে ঢিল ছোঁড়ে । বাড়িতে দউড়ে চলে যায়। বাবাকে বলাতে, বাবা গুম হয়ে বসে থাকেন, মা কিছু বললে বিরক্ত হন । আকাশ পানে চেয়ে কিছু বিড় বিড় করেন।
এর পরের ঘটনা গ্রামেতে ক্যাম্প বসে । তাহসিলদার, আর আই,আমিন চেন নিয়ে মাপ জোপ আরম্ভ করে দেয় । পল্লিসভা হয়

তাতে কিছু লোক নিশিকান্ত বাবুর গুণ্ডাদের ভয়ে টুঁ শব্দটি করেনা। হঠাৎ বাবা বাডিথেকে একটা কাটারি নিয়ে নিশিকান্তর দিকে দৌড়ন রাগে গজরাতে গজরাতে বলেন তোর চোদ্দ পুরুষের বাপের জমিদারী যে আমাদের জমি নিতে এসেছিস । সবাই রে রে করে বাবাকে আটকান । তহসিলদার বোঝান তোমরা ক্ষতি পুরন পাবে । অনেক টাকা পাবে । এখানে সই কর । বাবা কাগজটা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলেন । রাগে বলেন বাবু আপনারা আমাদের অন্ন র থালা ছিনিয়ে নিয়ে টাকা দেখাচ্ছেন । টাকা আমরা চাইনা । নিশিকান্ত গর্জে উঠে বলল , এই কুঞ্জ তোর গায়ে মেলা চর্বি হয়েছে না ? দেখাচ্ছি তোকে মজা। গ্রামের উন্নতি চাসনা তো গ্রাম ছেডে চোলেযা ।
পরের দিন পুলিশ এসে কুঞ্জকেও নিয়ে গেল কোন ওয়ারেন্ট না থাকা সত্তেও । দেশের আইন ব্যাবাস্থা র প্রতি কুঞ্জর ঘৄনা ধরেগেল । পুলিশের দারোগা বাবু বল্লেন , তোর এত সাহস তুই লোক প্রতিনিধির কথা না শুনে কাটারী নিয়ে মারতে গিয়েছিলিশ ; সেটা কি অস্বিকার করবি । সাক্ষীপ্রমান তোর বাডির লোক ই দেবে ।ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন কি ? কুঞ্জর নিজের জন্যে চিন্তা হয়না । তার বউ ছেলের যদি কোন ক্ষতি হয় তারচে তার মৄত্যু ভাল । হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । হাজতে নিশিকান্ত আর ভগবান চৌধুরী , বিধায়ক এসে কুঞ্জ কে বল্লেন ,” দেখ কুঞ্জ আমরা তোমাকে ইচ্ছে করলেই জেল হাজতে পাঠাতে পারি কিন্তু তাতে কি লাভ তোমার বউ ছেলে না খেয়ে মারা যাবে ।নিশিকান্ত বলে , তুই কি তাই চাস ?” কুঞ্জ হাউ হাউ

করে কেঁদে বলে ,”না বাবু ওরকমটি করবেন না ! আমি আপনারা যা চাইবেন তাই করব ।নিশিকান্তর ক্রুর হাঁসি কুঞ্জ র চোখে এড়ালোনা। কথায় আছে হাতি কাদায় পডলে ব্যাং এও লাথি মারে । কুঞ্জ র অবস্থা কিছুটা তাই । দারোগা বাবু বল্লেন , বাবুদের অশেষ দয়া তা নাহলে তোর নামে ৪ টে দফা লাগিয়ে তোকে জেলে ভরতাম বুঝলি । কালকেই কোরট্ এ হাজির করা হত ৷ভগবান বুঝলি সাখ্যাৎ ভগবান , যেমন নাম সেইরকম কাজ । আমাদের বিধায়ক মহাশয় তোকে ছাডাতে নিজে এসেছেন ।তুই কিনা কাটারি নিয়ে গিয়েছিলিশ মারতে । ধর্ম নেইরে এ জুগে ধর্ম নেই । যার ভাল করবি সেই তোকে বাঁশ দেবে । আঃ কি হচ্ছে ? বিধায়ক বলেন । আমি যে জন্য এসেছি সেটা করুন । এই সময় বাইরে লক্ষীর গলার আওয়াজ এল !লক্ষী গজরাতে গজরাতে ভেতরে ঢুকলো , আ মরন মিনশে! আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে যায় !! আমার বর ছাডা কি কেউ ছিলনা এ গেরামে মুখপোডারা ? হাজতে ভরতে তোদের হাথ কাঁপলোনা ? কাল থেকে মানুষটা ভাতে মুখ দেয়নি । শুকিয়ে রোগা কাঠি হয়ে গেছে গা । মরন হয় না তোদের ? আমি যদি কোন পাপ না কোরে থাকি এর যবাব দিও হে ঠাকুর ! তুমি ভরষা !!
দেখছিস কুঞ্জ তোর বউ এর চোপা?” দারগা বাবু বলে উঠলেন । স্যার এর একটা বিহিৎ করুন । মেয়েমানুষের চোপা ! এই কে তোকে থানাতে আসতে বলেছে? যা এক্ষুনি । নাহলে এক্ষুনি তোকেও লক আপ এ 

ভর্তি করে দেব । সাধে কি আর বলে মেয়ে মানুষ ? মুখের কথা দেখ ? যেন খই ফুটছে । উঁহ ! দারোগা বলেন। গরিবের কি কেউ নেই ? আমি কি সাধে এখানে এয়েছি ?লক্ষী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আমরা এখানে কুঞ্জ কে ছাডাতে এসেছি । আপনি ঘরে যান । সব ঠিক হয়ে যাবেযাচ্ছি যাচ্ছি । কে আর থানাতে আসে বাবু গরজ না পড়লে।লক্ষী গজরাতে গজরাতে থানা ছেড়ে চলে যায়।
দেখলেন স্যার দেখলেন এদের । এরা লাথির ভাষা বোঝে ভালো কথা বললে মাথায় চড়ে।
 কুঞ্জ র মনে হচ্ছিল গিয়ে ঠাস্ করে এক থাপ্পড মারে নিশিকান্ত কে । কিন্তু ওর হাত পা বাঁধাছিঃ শেষে কিনা থানাতে? লজ্যা ঘৄনাতে নিজেকে ছোট মনে হয়।কিন্তু মাস্টার মোসাই ? কি অভিসন্ধী এদের কে জানে ? বলা মুশকিল । বাডি গেলে যানতে পারব ? লক্ষী ত্ত বা কেমন? থানায় কখন মেয়েছেলে আসে ? সবাই কি ভাবল? 
কুঞ্জ বাড়ি ফিরল তার পরদিন মাষটার মোসাই ও ফিরে এলেন । মাষটার মোসাইএর এখানে কেউ থাকেন না ।উনি একাই এই গ্র।মে প্রায় বছর দশেক আছেন ।তিনি নিজে ছাত্রদের শিখিয়েছেন অন্যায়কে সহ্য করা এবং অন্যায় করা দুটই এক অপরাধ । অন্যায়কে প্রতিবাদ কর হিঁসা দিয়ে নয় যুক্তি দিয়ে । কুঞ্জ যেটা করল সেটা ভূল । সে ভূলের মাসুল তাকে দিতে হল। 
হাজৎ থেকে ছাডা পাওয়ার পর কুঞ্জ ঘরে ফিরে যায় । দু দিন হল খেত খামারের কাজ না হওয়াতে ফসলের ক্ষতি হতে পারে । আজকাল জা পোকার উৎপাত কন কিটনাশক ই কাজ করে না । গ্রামের গ্রাম সেভক যে কিটনাশক এর চিরকুট টা লিখে দিয়েছিলেন সেটা কিনে এনেছিল কিন্তু  স্প্রে করা হয়ে ওঠেনি । আজকে দেখা যাক ফসলের অবস্থা বুঝে স্প্রে করবে । রাস্তায় যেতে যেতে রুদ্রর জন্য ভাবে । ওকে এই গ্রাম থেকে সহরে পাঠিয়ে দেবে ওর কাকার কাছে । বলাবাহুল্য ভাইকে অনেক কষ্টে ডাক্তারি পড়াতে পেরেছে ।এখন সে মস্ত ডাক্তার . রুদ্র পডাসোনাতে ভালো তাই ওর সম্ভাবনা বেশি ডাক্তার হবার। ভাইএর ডাক্তারি পডার খরচ সামলাতে না পেরে কুঞ্জ জমি বন্ধক রাখে নিধিরাম বেনের কাছে । আজ সাত বছর হল সুধ গুনছে । এই সব চিন্তার সঙ্গে গোল ঘাঁট বেঁধে যায় ।   জমি তে গিয়ে যা কুঞ্জ দেখল সেটা ওকে আরো আঘাত করলো . ওর জমি মাপ জোপ হচ্ছে দেখে কুঞ্জ হতবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আমিন কে.
আমিন : " নিধিরাম তার নামে জমি করিয়ে নিয়েছে ,এখন রেকর্ড তার নামে  তুই আপত্তি করিসনি কেন সেটেল্মেন্টেএ ? "
কুঞ্জ ঃ আমার কাছে কি কোন নোটিস এসেছে যে আমি আপত্তি করব ?
আমিনঃ নোটিস তো তোর নামে পাঠান হয়েছে তুই পাসনি ত আমরা কি করব?
কুঞ্জ ; মানে ? আমার জমি আমার বাপ দাদারআমলের ; নিধিরাম এর নামে কি করে হয় ?
আমিনঃ হয় হয় ! তুই কি আইন জানিস ? তোর ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেশ কর সব ঠিক করে বুঝে যাবি । ও বধ হয় সই করে দিয়েছে । কুঞ্জর মাথায় বজ্রাঘাত পড়লো যেন !কুঞ্জ বিশ্বাস করতে পারলনা? সেদিন রাত্রে
      কাছের সহরে টেলেফোনে বুথ থেকে কুঞ্জ টেলেফোনে করে । কিছুক্ষনরিংহওয়ার পর ওপার থেকে হ্যালো স্বর আসে . কুঞ্জ র ভাই এর কন্ঠ স্বর ভেসে আস.তুই কেমন আছিস রে নিতাই ? ভালো! ! কেন এত রাত্রে ? হ্যাঁরে নিতাই আমাদের জমির কোনো কাগজে কি তুই সই করেছিস ?আমাদের মানে ? ওটা কি একা তোমার নাকি ?আমার ভাগ আমি বেচে দিয়েছি। কাল অপারেসন আছে ঘুমতে দাও।কুঞ্জ আর নিজেকে সামলাতে পারলনা হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো । ফোনতার হাত থেকে পডে গেল । বাডিতে ফিরে এলো । যে কিটনাশক কিনে এনেছিল পোকা মারার জন্য সেটা সকলের অজান্তে খেয়ে দিল রাত্তিরে । কি হল ? কি হল ? লক্ষী, কুঞ্জকে বমি করতে দেখে ঘাবডে যায় । কি হল ? মাগো আমার সর্বনাশ হল গো । দৌড়ে যায় পাশের বাডিতে সুভ্র কে খবর দিতে । বলে মাষ্টার মোশাই কে খবর দিতে ডাক্তার কে ডাকার জন্য । এ গ্রামে ডাক্তার নেই আছে এক কম্পাউন্ডার, সেই সব রোগি দেখে আর অসুধ দেয় ।কম্পাউন্ডার এসে দেখেন মুখ থেকে গেঁজা বেরুচ্ছে । দেখে সন্দেহ হয়। এটাতো সুইসাইড কেস ।রুদ্রাখ সব দেখছিল শুনছিলকিছুই মুখ থেকে সব্দ না করে গুম হয়ে বসে ছিল । হঠাৎ বাবা যে  কাটারি টা নিয়ে নিশিকান্ত কে তাডা করেছিল সেটা নিয়ে দৌড়তে লাগলো । সবাই কে মেরে ফেলব । আমার বাবাকে আমায় ফিরিয়ে দাও নাহলে সকলকে মেরে ফেলব । আমার বাবাকে আমায় ফিরিয়ে দাও নাহলে সকলকে মেরে ফেলব । রুদ্রাক্ষ আর পরের দিন ফেরেনি কথায় গেল কেউ জানেনা । এরকম হাজার হাজার রুদ্রাক্ষ র জন্ম হচ্ছে এ দেশে এরকম হাজার হাজার কুঞ্জ দারীদ্রের কশা ঘাতে মৄত্যু কে স্বাগতম করতে বাধ্য হচ্ছে । থেকে জাচ্ছে কিছু নিশিকান্ত,নিতাই,নিধিরাম,পুলিশ দারোগা র মতন স্বার্থপর রক্ত শোষা মানুষ রুপি পসু । পরের দিন কাগজে বড বড করে বেরুলো হরিনারায়নপুর এ চাষী মৃত্যুএন জি ও, পত্রকার , বিরোধীনেতাদের শ্রোতছুটল । কেউ কি রুদ্রাক্ষর খোঁজ নিল? কেন কুঞ্জ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল? কি হবে লক্ষী র সিঁদুরের ? কেউ কি তার সোয়ামি কে ফেরাতে পারবে গা ? এ প্রশ্ন আপনাদের কাছে রাখলাম। পরের দিন সকালে কাগজে বড বড করে বেরুলো হরিনারায়নপুরে চাষী আত্মহত্যা । সামনে বিধান সভাতে গরমা গরম বিতর্কের জন্য। হা হুতাষ,সান্ত্বনার ফোয়ারা ছুটল। আসোল ঘটনা কেউ জানলোনা। কুঞ্জ কিসের জন্য আত্মহত্যা করেছে !!

**‘অন্যনিষাদে’ প্রকাশিত 

রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-




রবীন্দ্রনাথের কোনো বিকল্প নাই-
 রাজিব » ১৩ জুন, ২০১৩, বৃহঃবার, ২০:৪৪
·         ইতিহাস
রবীন্দ্রনাথের একটি আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল- সংলাপের আসরে বসে অনুরুদ্ধ হলে রবীন্দ্রনাথ মুখে মুখে নূতন গল্প ও উপন্যাসের প্লট তৈরি করে দিতে পারতেন।বিস্মিত হতে হয় এই দেখে যে কত প্রথম সারির সাহিত্যিক কবির থেকে প্লট সংগ্রহ করেছেন তাঁদের গল্পের জন্য। এই সব প্লট থেকে জন্ম নিয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সব কীর্তি।প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের দেবীগল্পটি বহুপঠিত এবং সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রের কল্যাণে বহু-আলোচিত। নব-কথা গল্পসংকলন-ভুক্ত এই গল্পটির প্লটও রবীন্দ্রনাথের রচনা। নব-কথা-র দ্বিতীয় সংস্করণে প্রভাতকুমার নিজেই সেকথা উল্লেখ করেন।বিখ্যাত সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথের থেকে একটি প্লট পেয়েছিলেন। তিনি হলেন বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুল। নির্মোক-এর অমর নামক চরিত্রটি বনফুল সৃষ্টি করেছিলেন পত্রযোগে প্রাপ্ত রবীন্দ্রনাথের এই প্লটটি অনুসরণে।
অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শরৎকুমারী চৌধুরাণী ঠাকুরবাড়ির বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শরৎকুমারীর সাহিত্যরচনার অনুরাগী ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও। এই শরৎকুমারীকে রবীন্দ্রনাথ একটি প্লট দিয়ে গল্প রচনা করতে অনুরোধ করেছিলেন। পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই শরৎকুমারী সেই প্লট অবলম্বনে লিখে ফেলেন তাঁর যৌতুকগল্পটি। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ সেকথা জানতেন না। একই প্লট তিনি চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দেন। চারুচন্দ্র সেই প্লট অবলম্বনে লেখেন চাঁদির জুতোগল্পটি, যেটি স্থান পায় তাঁর বরণডালা গল্পসংকলনে।হেমেন্দ্রকুমার রায়ের লেখা থেকে জানা যায়, “বন্ধুবর চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ঐভাবে রবীন্দ্রনাথের মুখে মুখে সৃষ্ট কয়েকটি আখ্যানবস্তুর সদ্ব্যবহার করতে পেরেছিলেন।চারুচন্দ্রের চারটি উপন্যাসের প্লট রবীন্দ্রনাথের থেকে পাওয়া স্রোতের ফুল, দুই তার, হেরফের ও ধোঁকার টাটি।
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল অনেক দিন। শেষের দিকে তা একেবারে বিষিয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথকে ঈর্ষার করার কোনও কারণই নেই দ্বিজেন্দ্রলালের। তাঁর জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর সুনাম বাংলার বাইরে ছড়ায়নি। দুজনেই কবি। দুজনেই গান সৃষ্টি করেন। রবীন্দ্রনাথও নাটক লেখেন, কিন্তু নাট্যকার হিসাবে দ্বিজেন্দ্রলাল অনেক বেশি জনপ্রিয়। দুজনেই অভিজাত পরিবারের সন্তান।সারা জীবনে রবীন্দ্রনাথ কখনও নিন্দুকদের সঙ্গে পাল্লা দিতে যাননি। কোনও আক্রমণেরই তিনি প্রতিআক্রমণ-অস্ত্র শানাননি। তা বলে কি তিনি আঘাত পেতেন না? সামান্যতম আক্রমণেই তিনি আহত হতেন। তিনি লিখেছেন, কটাক্ষ যতই ক্ষুদ্র হইক, তাহারও বিদ্ধ করিবার ক্ষমতা আছে, কিন্তু সেই সব আঘাতের কথা তিনি অতি সন্তর্পণে গোপন রেখেছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল যখন থেকে রবীদ্র-বিদ্বেষী হয়ে ওঠেন, তখনও একাধিকবার রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রশংসা করেছেন।
একধিক প্রবন্ধে দ্বিজেন্দ্রলাল রবীন্দ্রনাথের কবিতার প্রতি যে দুটি অভিযোগ এনেছেন, তা হল দুর্বোধ্যতা এবং অশ্লীলতা। দ্বিজেন্দ্রলালের মতে, রবীন্দ্রনাথের কবিতা অস্পষ্ট এবং অস্বচ্ছ। তাই তার মধ্যে চিন্তার গভীরতা নেই। আর তাঁর কবিতার নীতিহীনতা দিয়ে তিনি কলুষিত করছেন এই সমাজকে। দুই কবির মধ্যে নীতিগত বিরুদ্ধ মত থাকতেই পারে। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলালের সেই প্রতিবাদের ভাষাই যে কুৎসিত।সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন যে, দ্বিজেন্দ্রলাল একদিন রবীন্দ্রনাথের প্রতি একটি চিঠি লেখায় ব্যস্ত ছিলেন, একটু পরেই তাঁর মাথায় বজ্রাঘাত হয়। স্ত্রীলোকেরা তাঁর মাথায় ঘড়া ঘড়া জল ঢালতে থাকেন, তাতে সব কাগজপত্র ভিজে যায়। একটি চিঠিতে শুধু রবীন্দ্রনাথের নামটি পড়া যাচ্ছিল। তাতেই অনুমান করা যায় যে, দ্বিজেন্দ্রলাল সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সব বিবাদ মিটিয়ে আবার পুনর্মিলনের আশাই ব্যক্ত করেছিলেন।
কবি জেনেছেন সুশাসনের জন্য চাই দেশজ ভাবনা। দেশের তরুণ সমাজকে এ কারণে করেছেন উদ্বুদ্ধ। শাণিত করতে চেয়েছেন তাদের কর্মক্ষমতা। বুঝিয়েছিলেন আধুনিক বা সভ্য হওয়ার জন্য ইউরোপীয় হওয়ার প্রয়োজন নেই। বলেছেন, ”দেশের জন্য স্বাধীন শক্তিতে যতটুকু কাজ নিজে করিতে পারি তাহাতে দুই দিকে লাভ, সেটা ফল লাভের চেয়ে বেশি বৈ কম নয়।তিনি মনুষ্যত্বের ধারণা, সংস্কৃতির বার্তা যুবসমাজের কাছে পৌঁছে দিতে স্থাপন করেছেন শান্তিনিকেতন। কারণ তিনি জানতেন যে, সামরাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার কর্তৃক শিক্ষার আলো ছাত্রদের কাছে পৌঁছবে না। তাই তিনি দেশে বিদেশে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন।সৃষ্টির স্রোতধারা প্রবাহিত হয় দুই খাতে। কখনও সেই খাত স্রষ্টাই খনন করেন। আবার কখনও তিনি মরা নদীর সোঁতায় সৃষ্টিস্রোতের নতুন প্লাবন আনেন। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিপ্রতিভার নেপথ্যেও এমন কিছু কিছু মরা নদীর সোঁতা ছিল।
১৬ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ বিলাতে অবস্থানরত জগদীশচন্দ্র বসুকে যে চিঠি লিখলেন, তাতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক প্রস্ত চর্চা করে শেষ দিকটাতে লিখলেন : 'একটা খবর তোমাদের দেওয়া হয় নাই। হঠাৎ আমার মধ্যমা কন্যা রেণুকার বিবাহ হইয়া গেছে। একটি ডাক্তার বলিল, বিবাহ করিব_আমি বলিলাম কর। যেদিন কথা তার তিন দিন পরেই বিবাহ সমাধা হইয়া গেল। এখন ছেলেটি তাহার অ্যালোপ্যাথিক ডিগ্রির ওপর হোমিওপ্যাথিক চূড়া চড়াইবার জন্য অ্যামেরিকা রওয়ানা হইতেছে। বেশি দিন সেখানে থাকিতে হইবে না। ছেলেটি ভালো, বিনয়ী ও কৃর্তী।'

আজিকে তুমি ঘুমাও, আমি জাগিয়া রব দুয়ারে-
রাখিয়া জ্বালি আলো।
তুমি তো ভালোবেসে আজি একাকী শুধু আমারে
বসিতে হবে ভালো।
আমার রাত্রি তোমার আর হবে না কভু সাজিতে
তোমার লাগি আমি
এখন হতে হৃদয় খানি সাজায়ে কুল রাজিতে
রাখিব দিনযামী।

কাজী নজরুল ইসলাম: স্রোতের বিপরীত মাঝি / মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন /



মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন

দারিদ্রের কষাঘাতকে কিভাবে পদানত করতে হয় কাজী নজরুল ইসলামের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ ও সফল কেউ নন অন্তত বাংলা সাহিত্যে অর্থ্যাৎ তিনি একমাত্র ব্যাক্তি যিনি দারিদ্রতাকে জয় করার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।  তবে তিনি ব্যতিত আর একজন বিশ্ব পরিম-লে দারিদ্যতাকে জয় করে সবার আদর্শ বা নজীর বা অনুপ্রেরণার উৎস হতে পেরেছেন -তিনি হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ (সা:) । দারিদ্রকে আলিঙ্গন করে সফল হওয়ার লড়াইয়ে নজরুল তাই সবার দৃষ্টান্তও বটে। ’হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান।’- এই চরণেই নজরুলের স্বার্থকতা নিহিত। দারিদ্রতার কারণে মানুষ সাধারণত হীনমন্যতায় ভোগে-কিন্তু নজরুল হীনমন্যতাকে জয় করে মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে। 
 
সময়ের চাকা আপন নিয়মেই গড়িয়ে যায় সামনের দিকে। যাবার সময় অনেক কিছু পিছনে ফেলে যায় , নিয়ে যায় অনেক হিসাববিহীন প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস। কিন্তু যাঁদের কৃতিত্বে দেশ , জাতি বা রাষ্ট্র আপন পতাকা তৈরী করে এক স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি করে তাকে যুগ যুগ ধরে স্মরণ করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু জাতি হিসাবে আমরা দিনের পর দিন শিকড় বিহীন হয়ে পড়ছি। আমরা কেবল আবর্জণা ও অন্যদের দেখানো পথকে ধরেই সামনে যাবার প্রবনতা দেখাই। শতবাধার পরও এই উপমহাদেশের দু’জন প্রতিষ্টিত লেখক ঘোষণা দিয়েই নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন মানুষের হৃদয়ে। একজন উর্দূ লেখক সাহাদাত হোসেন মান্টো- অন্যজন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 
 
একটি গানে নজরুল বলে দিলেন, ’আমি চিরতরে দূরে চলে যাব,/ তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’ এই সত্যকে অকৃতজ্ঞরা ভুলে যাওয়ার ভান করলেও বা ষড়যন্ত্রকারীরা নজরুলকে সাম্প্রদায়িক আবরণে ফেলতে ছেয়েছে বারবার, তবু তিনি আপন মহিমায় জ্বল জ্বল করছেন মানব  ভূবনে। 
 
এক দূরারোগ্য সুকঠিন অসুখের শিকার হলেন নজরুল । বলা যায়, জীবন মধ্যাহ্নে নির্বাক নিশ্চুপ স্তদ্ধ হয়ে গেলেন নজরুল। কবিতা ও গানের জগতে নতুন সংযোজন নেই আর। তাঁর লেখনি বন্ধ হয়ে গেল। কন্ঠ স্তদ্ধ হলো,  হারমোনিয়াম থেমে গেল, মস্তিষ্ক বিকৃত হলো পুরোপুরি। নজরুল পরিনত হলেন বোধহীন এক অসহায় মানুষে । তবুও তাঁর গানের মতোই দূরে থেকেও তিনি সবার অন্তরে। আর এই উপলব্ধির বাস্তবতার কারণে আহমদ কবির এক প্রবন্ধে বলেন, ’নজরুলকে কে ভুলিবে? কার এমন বুকের পাঠা? আর ভুলতে পেরেছেই বা কয়জন? ’ কেউ ভুলে থাকার ভান হয়তো করেছেন, এই বিদ্রোহের মূল উৎস কিন্তু কাজী নজরুল নিজেই। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন জীবনের যন্ত্রণা, ব্যর্থতাবোধ, রোগ শোক, প্রিয়জন হারানোর বেদনা মানুষের মানবতাকে বড়ো পরিবর্তণ এনে দেয়। মানুষ হয়ে পড়ে ক্লান্ত, বিপর্যস্ত, হতাশগ্রস্থ,।কিন্তু নজরুল এখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। 
 
’নজরুরের প্রতিভা হীরক-দ্যুতিময়।’ নজরুলের সাতন্ত্র ও অনন্যতা অনস্বীকার্য। বাংলা সাহিত্যে নজরুল কীর্তিধন্য মানুষ, কিংবদন্তীতুল্য পুরুয়। বাংলাদেশের জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও নজরুলের ভবিতব্য, অনিবার্য পরিনতি। 
 
একজন মানুষ তাঁর কাব্য জগৎ নিজের জীবনকে অস্বীকার বা বাদ দিয়ে লিখতে পারে না বা পারা সম্ভব নয়। জীবনবোধের মাধ্যমেই যদি জীবনাচরণকে নিজ কাব্যে চিত্রায়িত করা সম্ভব হয় তবে  তিনি অবশ্যই স্বার্থক। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে নজরুল একমাত্র ব্যাক্তি যিনি দারিদ্রতাকে আলিঙ্গন করে সুন্দরভাবে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে খালেদ হোসাইন বলেন , নজরুল ইসলামের পারিবারিক ঐতিহ্য; তা যত অনুল্লেখনীয় হোক না কেন, তাঁর জীবনাচার , তাঁর দারিদ্র, তাঁর স্বপ্ন , তাঁর পঠন-পাঠন, জীবনাভিজ্ঞতা ও জীবন জিজ্ঞাসা তাঁকে অনন্যসাধারণ করে তুলেছে। ’বর্তমানের কবি আমি ভাই ভবিষ্যতের নই নবী’ বলে তিনি যত নির্বেদ বা বিনয় প্রকাশ করে থাকেন না কেন, তাঁর সৃষ্টি সম্ভার অপ্রতিরোধ্যভাবে ভবিষ্যৎ-ধাবী। বিপরীত যুক্তির আশ্যয় নিয়ে বলা যায় , তিনি চির বর্তমানবতার কবি। দেশ-কাল মনুষ্যত্বের এ পরিসরে কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, প্রাসঙ্গিকতা অনিঃশেষ।
 
নজরুলের মধ্যে যত সঞ্চিত ব্যাথা , পুঞ্জিত অভিমান , আর প্রজ্বলিত বিদ্রোহ ছিলো এর পেছনে তার ব্যক্তি জীবনের দুঃখ, দারিদ্র, সামাজিক বঞ্চনা ও জাতিগত নিস্পেষণ ছিলো প্রধান কারণ। তিনি তাঁর সময়ে জীব হিসাবে ছিলেন নিতান্তই সুবিধা বঞ্চিত, মানুষ হিসাবে ছিলেন যথেষ্ট উপেক্ষিত, অবহেলিত, নাগরিক বা অধিবাসী হিসাবে ছিলেন শৃঙ্খলিত নিস্পেষিত আর একজন মুসলিম হিসাবে ছিলেন অবাঞ্চিত ও নিগৃহীত, তাই যখন জ্বলে উঠলেন তখন ন্যায় অধিকার মুক্তি, সংগ্রাম দ্রোহ যুদ্ধ সবকিছুই একসঙ্গে ঝংকৃত হলো তাঁর চারপাশে পৃথিবী জুড়ে। আর আমরা নজরুলের এই দ্রোহকেই দেখতে পাই। কখনো বুঝতে পারিনি তাঁর দ্রোহের অন্তনিহিত কারণ।
 
নজরুল দারিদ্রতাকে জয় করার রহস্য নিজেই ভেদ করেন। তিনি যখন বলেন, 
 
’একটি বেদনা মানিক আমার
মনের মনি কোঠায়
সেইতো আমার ভিজন ঘরে দুঃখ রাতের
আঁধার টুটায়।’
 
উল্লেখিত উক্তির মাঝে নজরুল মনোভাবের অন্তনিহীত পরিচয় সুস্পষ্ট। এখানে বেদনা বা ব্যাথা বলতে কবি একটি মহানুভব চেতনাকে শানিত করেছেন মাত্র। এই চেতনার মাঝে যে আলোকিত ভাবনার বিকাশ ঘটেছে তাতে দূরিভূত হয়ে গেছে কবি মানসের হৃৎ-গুহাতে জেঁকে থাকা অন্ধকার; আলোকিত হয়ে উঠেছে মনোজগতের এক রঙিন কুঠির। কবি সেখানে বেদনার রঙ যেন দেখতে পেয়েছেন এবং সে রঙে রঞ্জিত গীতমালায বরণ করেছেন কালের প্রত্যাশাকে। প্রেম এবং বিরহের রূপায়নে কবি নজরুলে এ ধরনের প্রয়াসগুলোকেই তাকে গণমানসের হৃৎ-সিংহাসনের উচ্চ মাকালে পৌছে দিয়েছে। যেখানে কাল থেকে কালান্তরে কবি নজরুল ইসলামকে অবশ্য-অবশ্যই সগৌরবে সমাসীন দেখা দিবে। 
 
দারিদ্রকে মহানুভবতায় পরিণত করতে গিয়ে নজরুল কম চেষ্টা করেন নি। বলা যায় হেন কাজ নেই তিনি জীবিকা উপর্জনের তাগিদে অবজ্ঞা করেছেন। কিন্তু সব সময়ই নিজেকে স্থির রাখতে পারেন নি। দ্বিধা-দ্বন্ধ-হতাশা গ্রাস করেছে মাঝে মাঝে তাঁকে। তাই দুঃসহ দারুণ দিনে কবির হৃদয়ে হাহাকার জাগে তা যেন মরু সাহারার প্রবল তাপে উত্তপ্ত । কবির এ উপমা খুবই ব্যঞ্জনাময়। 
 
’দুর্দিণের এই দারুণ দিনে
করুন নিলাম পানশালায়, 
হায় সাহারার প্রখর তাপে
পরাণ কাঁপে দিল কাবা।।’
 
যে দারিদ্রতাকে নিয়ে এত কথা , সে ’দারিদ্র’ কবিতাটি বিশ্লেষণের দাবী রাখে ব্যাপকভাবে সময়ের প্রয়োজনে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কাব্যটির প্রথম চরণ ছাড়া কেউ বাকী অংশের বিশ্লেষণ করে নিগূঢ় অর্থ সমাজ সংস্কার ও বাস্তবতার জন্য তুলে ধরেনি। কবিতাটি কাব্য বা সাহিত্য বিচারেও অত্যন্ত উঁচু মানের। আমরা যদি খেয়াল করি কবিতাটি সমাজের যে তীব্র নির্যাতন , মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার ফলে এদেশের অসহায় মানুষের ধকে ধুকে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানোর যে জ্বালা এবং এই যন্ত্রণাকে কটাক্ষ করে জেগে উঠার প্রয়োজনে যে সাহস ও সত্যের উপলব্ধি প্রয়োজন তার বিশদ বিররণ দেয়া আছে। কিন্তু কবিতাটি আলোচনার বাহিরে থেকেছে  কারণ এদেশের বুদ্ধিজীবীরা বরাবরের মতই পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে দালালী করেন বলেই। যে যত বেশী সাধারণ মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারে ততই তার পক্ষে শোষণ করা সম্ভব। এখানে লক্ষণীয় প্রথম চরণটি উদ্ধৃতি দেয়া হয় কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয়, বরং নজরুলকে বাস্তবাদী কবি থেকে রবীন্দ্রনাথের মত কল্পনাবিলাসী কবি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। সবার আগে মনে রাখতে হবে আধুনিকতার নামে যত প্রাশ্চাত্যকে আলিঙ্গন করছি , তত অশান্তির শিকড় চড়িযে দিচ্ছি। এই বাস্তবতাকে তুলে ধরতে কাজী নজরুলের ’দারিদ্র’ কবিতাটির সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও পর্যলোচনা তুলে ধরা হলো। 
 
কবিতাটি শত লাইন বিশিষ্ট এবং প্রতি দু’লাইনের মধ্যে ছন্দের মিল রয়েছে , যা দুত্যনার সৃষ্টি করে। শতলাইনের পিছনে কারণ হিসাবে হয়তো তিনি সমাজের জুলুম, অনাচার, অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্রকে শতভাগ ইঙ্গিত করেছেন। ছন্ধের মিলের কারণ প্রাণের দ্যোতনা প্রকাশ করা। 
 
প্রথম স্তবকের শুরুতেই যেকোন পাঠকের মনে হবে একটি ভাবাবেগ ও কল্পনাবিলাসী এক অনুপ্রেরণা। সকল দুঃখ যন্ত্রণাকে ভুলে সামনে যাওয়ার উদ্ধীপ্ত উৎসাহ । ’দারিদ্র’ কবিকে করেছে ’মহান’। কেন মহান করেছে তার বর্ণনাাটি দ্বিতীয় লাইনেই ইঙ্গিত দেয়া আছে। কারণ দারিদ্র তাকে দিয়েছে ’খ্রিস্টের সম্মান’। কিন্তু এর পরেই আছে অব্যক্ত যন্ত্রণার ইঙ্গিত। আছে ক্লেদ, শ্লেষ ও কটাক্ষের বান। তিনি দারিদ্রের জন্য যে ’মুকুট শোভার কথা বলেছেন তা ’কন্টক’ বলেই উল্লেখ করেছেন। দারিদ্র’অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’ তাঁকে দিয়েছে। তিনি তাকে বলেছেণ, ’উদ্ধত উলঙ্গ দৃষ্টি,. . . .’। 
 
দ্বিতীয় স্তবকে আমরা অনেক নেতিবাচক ও হতাশাব্যঞ্জনক শব্দের সমারোহ দেখাতে পাই, যেগুলি সমাজে বুভুক্ষু  মানুষের যন্ত্রণাকে চিত্রায়িত করেছে। ’অম্লান স্বর্ণ’ , বিরস’, ’শুকালে মোর রূপ-রস-প্রাণ’, ’বুভুক্ষু’, ’শূন্য’ , বেদনা-হলুদ’, ’নর্মম’, ’করুণায়’, দূর্বল’, ’বেদনার টীকা’, এমন বহু শব্দের ব্যবহার করেছেন যে গুলি করুণ হতাশার প্রতিধ্বনি ছাড়া কিচুই নয়। এই স্তবকে আমরা অনুযোগের প্রতিধ্বনিও পাচ্ছি। তিনি যেমন বলেন, ’শীর্ণ করপুট ভরি সুন্দরের দান / যতবার নিতে যাই -হে বুভুক্ষু তুমি/ অগ্রে আসি করো পান।’ একটু পরেই তিনি বলেন, ’তুমি রবি তব তাপে শকাইয়া যায়/ করুনা-নীহার-বিন্দু! ম্লান হয়ে উঠি/ ধরণীর ছায়াঞ্চলে।’ তাই তিনি প্রশ্ন রাখেন ’অমৃত কি ফল?’ তবে এই স্তবকে হতাশা –দ্বন্ধ বা যন্ত্রণার ছবি যতই বলেছেন , ততই উজ্জীবনের অনুপ্রেরণা ও এই স্তবকে খঁজে পাই। 
’রে দূর্বল , আরার অমৃত-সাধনা
 এ-দুঃখের পৃথিবীতে তোর ব্রত নহে!
 তুই নাগ, জন্ম তোর বেদনার দহে।
কাঁটা-কুঞ্জে বসি তুই ঘাঁথিবি মালিকা,
দিয়া গেনু ভালে তোর বেদনার টীকা!. . . ’
 
পরবর্তী স্তবকটি মাত্র দৃ’লাইনের । কিন্তু লাইনগুলি অত্যন্ত আবেদনময়ী। কবি এখানে বলেন, ’গাহি গান, গাঁথি মালা, কন্ঠ করে জ্বালা,/ দংশিল মোর নাগ-বালা।. . . . .’ এখানে অজানা   যন্ত্রণা ও ভবিষ্যতের কারণে ’ . . . .  ’ ব্যবহার করেছেন। 
 
পরবতৃী দু’টি স্তবক একই ধারাবাহিকতায় রচিত হলেও , এর পরের স্তবকটি আবার দারিদ্রকে আলিঙ্গন করে মনের মধ্যে যে যন্ত্রণা আছে তাকে কমিয়ে ফেলার আবেদন তিনি রেখেছেন সব বঞ্চিত মানুষের কাছে। কবি বলেন, 
’সঙ্কোচ শরম বলি জানো নাকো কিছু,
উন্নত করিছ শির যার মাথা নিচু।  
মৃত্যু -পথ-যাত্রীদল তোমার ইঙ্গিতে 
গলায় পরিছে ফাঁসি হাসিতে হাসিতে। 
নিত্য অভাবে কু- জ্বালাইয়া বুকে 
সাধিতেছে মৃত্যু-যজ্ঞ পৈশাচিক সুখে।’ 
 
অন্য একটি স্তবকে কবি দারিদ্রের কষাঘাতে এবং ধনীক শাসক শ্রেণীর আঘাতে এবং শাসক শ্রেণীর নির্দেশনায় যে মৃত্যু হয়েছে এবং তার ফলে নববধুর যে আর্তনাদ, আর্তচিৎকার করুণভাবে বেজে উঠেছে তাও প্রকাশ পেয়েছে। আর্তচিৎকার করুণভাবে বেজে উঠেছে তাও প্রকাশ পেয়েছে। আর্তচিৎকারকে কবি অঙ্কণ করেছেন নি¤œলিখিতভাবে।
 
’ . . . . . কাঁদিয়া কাঁদিয়া
ডাকিছে তাদের যেন ঘরে ’সানাইয়া’!
বধূদের প্রাণ আজ সানা’য়ের সুরে
ভেসে যায় যথা আজ প্রিয়তম দূরে
আসি আসি করিতেছে। সখি বলে , বল্
মুছিলি কেন লা আঁখি, মুছিলি কাজল? . . . 
 
আরেকটু এগুলেই আমরা করুণ বিদারক যে বর্ণনা পাই , তা আমাদের সমাজের যে নিষ্ঠুরতার চিত্র। তাই কবি বলেন, 
 
পুষ্পাঞ্জলি ভরি দু’টি মাটি-মাখা হাতে
অরণী এগিয়ে আসে দেয় উপহার। 
ও যেন কনিষ্ঠা মেয়ে দুলালী আমার!---
সহসা চমকি উঠি! হায় মোর শিশু 
জাগিয়া কাঁদিছ ঘরে মোর, খাওনিকো কিছু
কালি হাতে সারাদিন তাপস নিষ্ঠুর, 
কাঁদো মোর ঘরে নিত্য তুমি ক্ষুধাতুর। 
 
সবশেষ লাইন দু’টি কেবল দীর্ঘ নি:শ্বাসের করুণ বহি:প্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়। তাই পরিশেষে আমাদের একথা বলা প্রয়োজন প্রথম স্তবকটি আমাদের জীবন সংহার ছাড়া আর কিছুই করেনি। কবি তাকে আলিঙ্গন করে জীবনকে উপভোগ করার আহবান জানিয়ে জীবনবোধে নতুন ধারার সূচনা করেছেন। তাই কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জীবনের জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করে টিকে থাকার অনুপ্রেরণা। 
 
লেখক: প্রভাষক, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও সেক্রেটারি, চারুতা ফাউন্ডেশন
 
বিডিব্রেকিং২৪ডটকম
ঢাকা, ১৩জুন ’২০১৩
২৭৩২৫৪৬৪৫