Tuesday, January 22, 2013

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু / ওয়িকিপেডিয়া

'

 

সুভাষচন্দ্র বসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
Subhas Bose.jpg
জন্ম জানুয়ারি ২৩, ১৮৯৭
কটক, উড়িষ্যা (অধুনা (ওড়িশা), ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ (সরকারি মতে)
তাইওয়ান (সরকারি মতে)
সমাধি রেনকোজি মন্দির (সরকারি মতে, এখানে নেতাজির চিতাভষ্ম রক্ষিত)
বাসস্থান ৩৮/২ এলগিন রোড (অধুনা লালা লাজপত রাই সরণি), কলকাতা
জাতীয়তা ভারতীয়
পেশা রাজনীতিবিদ
যে জন্য পরিচিত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীআজাদ হিন্দ ফৌজের সংগঠক ও সর্বাধিনায়ক
উচ্চতা ৫ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি
উপাধি নেতাজি
রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ফরওয়ার্ড ব্লক
ধর্ম হিন্দু
দাম্পত্য সঙ্গী এমিলি শেঙ্কল
সন্তান অনিতা বসু-পাফ
পিতা-মাতা জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবী
আত্মীয় শরৎচন্দ্র বসু
ওয়েবসাইট
নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো
মিশন নেতাজি
সুভাষচন্দ্র বসু এই শব্দ উচ্চারণ (জন্ম: ২৩ জানুয়ারি, ১৮৯৭তথাকথিত মৃত্যু: ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ (যদিও এই মত বিতর্কিত) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি নেতা। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত।
সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত এবং কংগ্রেসের বৈদেশিক ও আভ্যন্তরিণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা[১] করার জন্য তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন গান্ধীজির অহিংসার নীতি ভারতের স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী ছিলেন। সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে[২] ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের পূর্ণ ও সত্বর স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করেছিল। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।"
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তাঁর মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতার সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানিজাপান ভ্রমণ করে ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে তার নেতৃত্ব দান করেন। এই বাহিনী সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দী এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুর সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফলব্রহ্মদেশে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাঁকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তাঁর ইস্তাহারকে রিয়েলপোলিটিক (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তাঁর পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরু সহ অন্যান্য যুবনেতারা তাঁকে সমর্থন করেন। শেষপর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংহের ফাঁসি ও তাঁর জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ[৩] সুভাষচন্দ্র গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী একটি আন্দোলন[৪] শুরু করেন। তাঁকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তিনি ভারতে ফিরে এলে আবার তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়।
মনে করা হয় ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর এই তথাকথিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধ প্রমাণও বিদ্যমান।

পরিচ্ছেদসমূহ

প্রথম জীবন

১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি, বর্তমান ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে (ওড়িয়া বাজার) জন্মগ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি ছিলেন কটক-প্রবাসী বিশিষ্ট বাঙালি আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর চোদ্দো সন্তানের মধ্যে নবম। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র একটি কটকের ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন; বর্তমানে এই স্কুলটির নাম স্টিওয়ার্ট স্কুল। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় কটকের রর্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। সুভাষচন্দ্র ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে সাম্মানিক সহ বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এরপর সুভাষচন্দ্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে [নিজেকে] প্রত্যাহার করে নেওয়া"। এই সময় অমৃতসর হত্যাকাণ্ড ও ১৯১৯ সালের দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র স্বরাজ নামক সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ[৫] ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু যখন কলকাতা পৌরসংস্থামেয়র নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ সালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাঁকেও বন্দী করা হয় এবং মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়। এখানে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।[৬]
সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন।[৬] স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।[৭] ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্ত্বার জন্য পরিচিত ছিলেন।

কর্মজীবন ও রাজনীতিতে প্রবেশ


বোস 1939 এর সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সভা. টনি মিত্র ছবি শ্লীলতা
প্রায় বিশ বছরের মধ্যে সুভাষ চন্দ্র মোট ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন তাকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে তাকে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৩৪ সালে তিনি তাঁর প্রথম প্রেম এমিলি সেচঙ্কল এর সাথে পরিচিত হন ভিয়েনায়তে১৯৩৭ সালে তারা ব্যাড গ্যাস্টিনে বিয়ে করেন।
তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকার তাকে শুধু মাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের উদ্দ্যেশ কিচ্ছুক্ষণের জন্য কলকাতা আসার অনুমতি দেয়।১৯৩৮ সালে তিনি গান্ধির বিরোধীতার মুখে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরা সেসনে কংগ্রেসের প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে গান্ধি পট্টভি সিতারামায়াকে সমর্থন দেন; নির্বাচনের ফলাফল শোনার পর গান্ধি বলেন "পট্টভির হার আমার হার"। কিন্তু জয়যুক্ত হলেও তিনি সুষ্ঠু ভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছেলেন না। গান্ধীর অনুগামীরা তার কাজে বাধা সৃষ্টি করছেলেন। গোবিন্দ বল্লভ পন্থ এইসময় একটি প্রস্তাব পেশ করেন যে, "কার্যনির্বাহক পরিষদকে পুনর্গঠন করা হোক"। এভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু এ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও গান্ধির বিরোধীতার ফল স্বরুপ তাকে বলা হয় পদত্যাগ পত্র পেশ করতে নইলে কার্যনির্বাহি কমিটির সকল সদস্য পদত্যাগ করবে। এ কারণে তিনি নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেণ এবং অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক (All India Forword Block) গঠন করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদের প্রস্তাবনা দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

সুভাষ চন্দ্র বসু প্রস্তাব করলেন, কবে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের স্বাধীনিতার অনুমোদন দেবে তার জন্য বসে না থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে সুবিধা নেওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নির্ভর করে অন্য দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও কুটনৈতিক সমর্থনের উপর। তাই তিনি ভারতের জন্য একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেণ।

ভারত থেকে পলায়ন

ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে সুভাষ বসু নাখোশ ছিলেন। তিনি সে সময় গৃহ বন্দি ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন ব্রিটিশরা তাঁকে যুদ্ধের আগে ছাড়বে না। তাই তিনি দুইটি মামলার বাকি থাকতেই আফগানিস্তানসোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানী পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আফগানিস্তানের পশতু ভাষা না জানা থাকায় তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্তর-পশ্চিম সিমান্ত প্রদেশের নেতা মিয়া আকবর শাহকে তার সাথে নেন। যেহেতু তিনি পশতু ভাষা জানতেন না তাই তাঁর ভয় ছিল, আফগানিস্তানবাসীরা তাকে ব্রিটিশ চর ভাবতে পারে। তাই মিয়া আকবর শাহের পরামর্শে তিনি অধিবাসীদের কাছে নিজেকে একজন কালা ও বোবা বলে পরিচিত করেণ। সেখান থেকে সুভাষ বসু মস্কো গমন করেন একজন ইতালির কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজ্জোট্টা" নামক এক নাগরিকের পরিচয়ে। মস্কো থেকে রোম হয়ে তিনি জার্মানী পৌছেন। তিনি বার্লিনে মুক্ত ভারতীয় কেন্দ্র (Free India Center) গড়ে তোলেন। ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের সাহায্য প্রার্থনা করেণ। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে হিটলারের উদাসিনতা তার মনোবল ভেঙ্গে দেয়। ফলে ১৯৪৩ সালে সুভাষ বসু জার্মান ত্যাগ করেণ। একটি জার্মান সাবমেরিন তাকে সমুদ্রের তলদেশে একটি জাপানি সাবমেরিনে পৌছিয়ে দেয়, সেখান থেকে তিনি জাপান পৌছেন।

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (INA=Indian National Army) মূলত গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারি বসুর হাতে, ১৯৪৩ সালে রাসবিহারি বসু এই সেনাবাহিনীর দ্বায়িত্ব সুভাষ চন্দ্র বসুকে হস্তান্তর করেণ । একটি আলাদা নারী বাহিনী (রানি লক্ষ্মীবাঈ কমব্যাট) সহ এতে প্রায় ৮৫,০০০ হাজার সৈন্য ছিল। এই বাহি্নীর কর্তৃত্ব ছিল প্রাদেশিক সরকারের হাতে, যার নাম দেওয়া হয় "মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার" (আরজি হুকুমাত-ই-আজাদ হিন্দ)। এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, আদালত ও আইন ছিল। অক্ষ শক্তির ৯ টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দান করে। আই.এন.এ.-র সৈন্যরা জাপানিজদের আরাকান ও মেইক্টিলার যুদ্ধে সাহায্য করে।
সুভাষ চন্দ্র বসু আশা করেছিলেন, ব্রিটিশদের উপর আই.এন.এ.-র হামলার খবর শুনে বিপুল সংখ্যাক সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে হতাশ হয়ে আই.এন.এ.-তে যোগ দেবে। কিন্তু এই ব্যাপারটি তেমন ব্যাপকভাবে ঘটল না। বিপরীতদিকে, যুদ্ধে পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে জাপান তার সৈন্যদের আই.এন.এ. থেকে সরিয়ে নিতে থাকে। একই সময় জাপান থেকে অর্থের সরবরাহ কমে যায়। অবশেষে, জাপানের আত্মস্বমর্পন এর সাথে সাথে আই.এন.এ. ও আত্মসমর্পন করে।

রাজনৈতিক চিন্তাধারা


সুভাষ চন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধি

সুভাষ চন্দ্র বসু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

বিখ্যাত উক্তি

সুভাষ চন্দ্র বসুর সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি হল, "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" (হিন্দিতে, তুম মুঝে খুন দো, ম্যায় তুমহে আজাদি দুঙা)। ৪ জুলাই ১৯৪৪ সালে বার্মাতে এক র‌্যালিতে তিনি এই উক্তি করেণ। তার আর একটি বিখ্যাত উক্তি হল "ভারতের জয় ("জয় হিন্দ"), যা কিনা পরবর্তিতে ভারত সরকার গ্রহণ করে নেয়।

নিখোঁজ ও মৃত্যু

মূল নিবন্ধ: নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য
একটি মতে নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায়, সাইবেরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।
''''আর একটি মতে ঃ বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে জানা গেছে -ঐ চিতা ভস্ম নেতাজির নয়। আসলে ভারতবর্ষে নেতাজির তুমুল জনপ্রিয়তায় ঈর্স্বানিত হয়ে একদল উঁচুতলার ভারতীয় নেতা এবং ইংরেজ সরকার মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে নেতাজীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়।তাই ভারতীয় সরকার কখনো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জনসমক্ষে আনেন নি।''''

সম্মাননা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে 'দেশনায়ক'[৮] আখ্যা দিয়ে তাসের দেশ নৃত্যনাট্যটি তাঁকে উৎসর্গ করেন। উৎসর্গপত্রে লেখেন: "স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পূণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ, সেই কথা স্মরণ ক’রে তোমার নামে ‘তাসের দেশ’ নাটিকা উৎসর্গ করলুম।"[৯] আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও, সুভাষচন্দ্রের শৌর্য ও আপোষহীন রণনীতি তাঁকে ভারতব্যাপী জনপ্রিয়তা দান করে। নেতাজির জন্মদিন বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। স্বাধীনতার পর কলকাতার একাধিক রাস্তা তাঁর নামে নামাঙ্কিত করা হয়। বর্তমানে কলকাতার একমাত্র ইন্ডোর স্টেডিয়াম নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তাঁর নামে নামাঙ্কিত। নেতাজির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে দমদম বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তিত করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখা হয়। তাঁর নামে কলকাতায় স্থাপিত হয় নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং দিল্লিতে স্থাপিত হয় নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিকলকাতা মেট্রোর দুটি স্টেশন বর্তমানে নেতাজির নামাঙ্কিত: "নেতাজি ভবন" (পূর্বনাম ভবানীপুর) ও "নেতাজি" (পূর্বনাম কুঁদঘাট)।

Thursday, January 10, 2013

মন্দারমনী’ পিক্ নিক্ ......... ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১.১.২০১৩ মঙ্গলবার



মন্দারমনীপিক্ নিক্ ......... ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ১.১.২০১৩
                                                          মঙ্গলবার





কোথাউ যে একটু পিক্ নিকে যাব তার উপায় নেই । সব কথতেই বাধা । গিন্নী গজ গজ করে উঠলেন । বাডী তো কেনা হয়েছে ৪ বছর হল । বাডী কেনার ঋনের কিস্তি চোলছে বলে বেডাতে যাব নাএ আবার কি কথা! আলু পেঁআজ কেনার সময়তেও ওই এক কথা ! আয় বুঝে ব্যায় কর ! 
ঘেন্না ধরে গেল তোমার সঙ্গে থাকতে থাকতে । এক ঘেয়ে জীবন আর ভাল লাগে না।...গিন্নি গজ্ গজ্ করে উঠলেন ।
 ধুম্রায়িত চায়ের পেয়ালা হাতে সকালের আনন্দবাজার পডতে পডতে বলি ...তবে কোথায়  যাবে বল ?
আমি কি বলব আমাদের বাডীর সবাই ত বলেতোর সংসারে তোর  কর্ত্তাই  সব !
তা তোমার কি মনে হয়?
শোন না মন্দারমনি’ যাবেওখানে গিয়ে একটু হাঁফ্ ছেডে বাঁচবো। এই প্রদুশন থেকে নিস্তার পাব। ম্যাগো সকাল থেকে খালি খেটে মর আর রান্না করো । কাজের লোক না এলে বাসুন মাজো ঘর ঝাঁট্ পোঁছ কর । আর পারিনা। আমারো ত বয়েস হচ্ছে না কি?
হ্যাঁ তা তো হচ্ছে । তা কি করব বল ! ব্যাঙ্কের কিস্তী গুলো শোধ হোগ তারপর ও সব হবে ।
মানে কোথাউ  যাবে না ?
চল বেলুডে যাই।   টাকা মাটি.. মাটি টাকা মনে হবে ।  তোমার ভাল লাগবে । সুন্দর পরিবেশ । প্রদুসন নেই চারি দিকে ফুলের বাগান আর ফুল । গঙ্গার হাওয়া। খারাপ কি?
আমি যাই সকালে অনেক কাজ আছে ।
শুভ্র এলো সঙ্গে সম্পা কে নিয়ে। আমার ছেলে বৌ । দুজনেই ইঞ্জীনিয়ার একজন সফট্ ওয়ার ইঞ্জীনিয়ার আরেকজন ভেল্ এর ই-২ ইঞ্জীনিয়ার । ওরা খুব বন্ধু । সর্বদা হাঁসি হাঁসি মুখ।  শুভ্র সম্পা দুজনেই ঢিপ্ করে প্রনাম করে বলল সকালের ফ্লাইট্ এ চলে এলাম। আপনি কেমন আছেন বাবা ?
ভাল । তোমরা ? 
খুব ভাল। মা কোথায় এটা আপনার জন্যে এনেছি । একটা শাল    
এ সবের কি প্রয়োজন ছিল মা রান্না ঘরে । তোমরা আসবে তাই 
মায়ের জন্যে অন্য একটা  প্যাকেট্ মোড়া কি যেন ! বুঝতে পারলাম না।
ওরা ভেতরে চোলে গেল । গিন্নি গলার আওয়াজ পেয়েই বেরিয়ে এসে বললেন,  তোরা এসেগেলি । নিশচিন্ত হলাম বাবা। হ্যাঁরে বেয়াই বেয়ান কেমন আছেনদ্যাখা হয় তোদের সঙ্গে তুমি কেমন আছো মা? সম্পা কে জোডিয়ে ধোরে গিন্নি বলেন। আসলে বৌমাকে খুব ভাল বাসেন ।  বৌমা আমার হীরের টুক্রো । এমন শ্বাশুডী বৌমার জুটি কম দেখা জায় । 
ভাল। আপনি এত খাটা খাটনি করবেন না মা ।
কি আর খাটুনিমঞ্জু তো আছে । ওই সব করে । আমি শুধু রান্না করি । সেটা কি আর করতাম না!
আমি একটু রান্নায় সাহাজ্য করি বৌমা বলে ।  
মাথা খারাপ । তুমি এই জার্নি করে এসে রান্না করবে ? রক্ষে কর । আমার হাথ পা এখনো ঠিক আছে মা!
মাইক্রো তে পিজা গুল গরম করবো ?
হ্যাঁ তা করতে পার । তবে সকাল সকাল ওই ইটালিয়ান পিজা না খেলেই নয় !  
বাবা খেতে ভাল বাসেন আর শুভ্র ও খায় ।
 আমার ছেলে বৌ  দুজনে দুজন কে নাম ধরেই ডাকে । আমার গিন্নী র কিন্তু এসবে কোন আপত্তি নেই আমার ও নেই। ওদের মধ্যে অ্যান্ডরস্ট্যান্ডিঁ  টা খুব ভাল। একদিগদিয়ে আমি নিশচিন্ত শ্বাশুডী বৌমার রিলেসনশিপে কোন খামতি নেই । দুজনেই দুজন কে খুব ভালবাসে। বৌমা ভাল লেমন টি বানাতে পারে। আরেক কাপ্ চা জলখাবার নিয়ে বৌমা হাজির । আমি চায়ের কাপ্ টা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় বেডাতে যাবে ?
দেখি শুভ্র কোথায় নিয়েযায় !
কেন তোমরা কিছু প্লেনিং করনি?
না সেরকম কিছু না তবে মন্দারমনি’ র কথা বলছিল ।
এখন বুঝলাম আমার গিন্নী কেন ওখানকার কথা বলছিল । তা ঠিক আছে যাওনা ঘুরে এস ।
শুভ্র এসে বললোবাবা তোমার ড্রাইভার প্রশান্ত’ কে দেখতে পাচ্ছিনা । ওকি কাজ ছেডে দিল? 
না না ওকে আমি ছাডিয়ে দিয়েছি তবে ওকে ডাকলে আসে । ডেকে দব ?
গাডীর ইঞ্জিন্ অয়েল কুলান্ট্ সব ঠিক আছে ত । বেটারীতে চার্জ আছে না আমি নিজেই ড্রাইভ্ করে নিয়েযাব । প্রশান্ত কে ডাকতে হবে না।
সেকিরে !  অতোখানি রাস্তা একা যাবি না না তা হয় না । আমি এখুনি ডেকে পাঠাচ্ছি । ধৈর্য্য ধর আমি সব ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি । প্রশান্ত র মোবাইল্ নম্বরটা সেভ্ করা ছিল ভাগ্যিস্ নাহলে কি হত ।
প্রশান্তর দীঘা,মন্দারমনি সব ঘোরা। ও ত ট্রেভেলস্ এ কাজ করে । কোন অসুবিধে হবে বোলে মনে হয়না।
বাবা আমি রোজভেলি’ তে দুটো এসি রুম বুক করে রেখেছি । তোমার কোন অসুবিধে হবেনা তুমিও চল। 
নারে তোরা ছেলেছোক্রা যাবি তাতে আমরা বুডোরা গেলে কি ভাল দেখায় বাবা। তাছাডা বাডীতে তো একজন থাকা প্রয়োজন না কি?  আমার এমনিতেই এ সি ভাল লাগেনা। নতুন বছরে বরং বাডীতে বসে নতুন গল্প,কবিতা,গান  লিখব। এখন ওটাই আমার সময় কাটানোর পরম বন্ধু । তাছাডা ফাল্গুনিদা বলেছেন লিখে যেতে । লেখাতো হয় না অভ্র’ র দয়ায় বাংলা ডি টি পি টা শিখতে পেরেছি । দেখি যদি কিছু লিখে ছাপাতে পারি !
তা তুমি যা ভাল বোঝ তাই কর । মাতো যাবে না কি ?
হ্যাঁ নিশ্চই । তোরা তাডা তাডি সব কাজ সেরে নে । খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড দুগগা দুগগা করে । যা দিনকাল পোডলো ।
বেলা এগারোটা নাগাদ সকলে বেরিয়ে পোডলো । প্রশান্ত আছে আমার কোন চিন্তা নেই।ও রাস্তা ঘাট চেনে সব ব্যাবস্থা ওই করে দেবে।
গিন্নী গজ গজ শুরু করলেন ,ওই এক কম্পুটার কেনার পর থেকে কাগজ আর কম্পুটার ! খাওয়া নেই কোথাউ বেডাতে যাওয়া নেই ঘরের এক কোনে লাইট্ জালিয়ে ঠক্ ঠক্ করে টাইপ্ করা। মাঝে মাঝে হয় চা নয় কফী ।
আমি রশিকতা করে বলি,কম্পুটারটা তোর মায়ের সতিন । যতো রাগ ওর ওপোর। কি করি বল ওই মন্দীরে গিয়ে হরিকীর্তন করা আমার পোসায় না। যত মুখোস পরা লোকের সমাগম । যা প্রবচন শুনবে ঠিক তার উল্টো কাজ করবে । ঠাকুর কে স্বার্থপরের মতন নিজের আর নিজের সংসারের জন্য হ্যাংলার মতন সব চাইবে আর মাথা ঠুকবে । ওটা তো আমি পারি  নারে। তাই নিজের সময় কাটানোর এই রাস্তাটা বেছে নিয়েছি।
ঠিক করেছ বাবা। তুমি  নিজে কাজের মধ্যে আচারের মতন মজে থাক ওটাই ঠিক । শুন্য মগজ শয়তানের কর্মশালা । মগজ কে শুন্য হোতে দিওনা। তাহলেই বিপদ।
গিন্নী ছেলে আর বৌমা । সঙ্গে হট্ কেসে জল খাবার,কমলা লেবুআপেল মিনারেল ওয়াটার আরো ওনেক কিছু । আমি বলিউলুবেডীয়াতে আমার মামা থাকেন । বয়েস হয়েছে যাবার সময় দেখা করে যেও। খুশি হবেন। আমি দোর ওব্ধি এগিয়ে দিয়ে এলাম।  ঘর ফাঁকা । ভালোই লাগবে তবে চা টা নিজে বানাতে হবে এই যা!
উলুবেডীয়াতে পউঁছে শুভ্র রিং করলো ঃ  বাবাআমরা ঠিক ঠাক পৌঁছেছি। রাস্তায় কিছু অসুবিধে হয় নি। তুমি সাবধানে থেক । ঠিক সময় খেয়ে নিও। মা চিন্তা করবে নাহলে । দাদু ভাল আছেন। এক গাল হেঁসে আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করলেন। সম্পাকে দেখে খুব খুশি । দাদুর প্রিয় নরম পাকের খেঁজুর গুডের সন্দেশ নিয়েছিলাম সেন মহাশয়ের দোকান থেকে ।দাদু ত্রিপ্তি ভরে খেয়ে সম্পাকে আর আমাকে দাদুভাই বলে খাওয়ালেন। এগুল আমরা মিস্ করি বিদেশে । কত আন্তরিকতা ! কত আপ্পায়ন ! এগুল আমাদের দেশেই বেশি আছে বিদেশে উবে গেছে । .. এক নিঃশ্বাসে কথাগুল বলে গেল শুভ 
আমার জন্য চিন্তা করিস না। আমি ভাল আছি। মঞ্জু রান্না করে গিয়েছে। আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে। কি আর খাই সবইত ডাক্তারের বারন। দুটো রুটি একটু ছেঁচকিশীতকাল বোলে ভেজিটেব্ল সুপ্ । রাত্তিরে ছানা দুটো রুটি আর গরম দুধ এক কাপ। সকাল সন্ধ্যে ৪ কাপ চা । মধ্যেখানে একবার কফী ব্যাশ্ ।
বাবা আমরা ছাডছি উলুবেডিয়া । তখন বেলা ১ টা  বাজে। এরপর ওরা কোলাঘাট থেকে বাঁ দিকে  দীঘা হাই ওয়ে ধোরে  কন্টাই(কাঁথী) বাইপাস্ রাস্তা ধোরবে । কন্টাই তে পৌঁছে  বিকেলের জলখাবার খাওয়ার কথা কিন্তু কোন ফোন এলোনা ! বোধহয় রাস্তাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমচ্ছে । প্রশান্ত টা ঠিক চালাচ্ছে তো !  শুভ্র ভালই ড্রাইভিং জানে কিন্তু ও আমেরিকা তে রাইট্ হ্যান্ড্ ড্রাইভিং এ অভ্যস্ত তাই ওকে মানা কোরেছি যেন এখানে স্টিয়ারিং না ধরে । মোবাইল্ আউট্ অফ রিচ্ দেখাচ্ছে ! গাডি যা স্পীড্ এ চোলছে বোধহয় ঘন্টায় ৮০ -১০০ কি.মি হবে। কারন উলুবেডীয়া খুব তাডা তাডি পৌঁছেছে। কোন দুর্ঘটনা হোল না তো মনে অনেক প্রশ্ন আর শঙ্কা ।
এখন বাজে ৬ টা এতোক্ষনে পৌঁছনর কথা মন্দারমনী ।রাস্তা কন্টাই থেকে খারাপ ছিল এখন কি জানিনা ।  সল্টলেক্ থেকে প্রায়  ১৮০  কি.মি । এস্প্লানেড থেকে ৬৩ কি.মি কোলাঘাট ৩ কি.মি মেচেদা ৮০কি.মি. কন্টাই ১২.৫ কি.মি চোয়ালখোলা ৪কি.মি. কালিন্দী ৪কি.মি. দাদনপাত্রবার ৬ কি.মি মন্দারমনী মোট ১৭২.৫ কি.মি.. যা  মোট চার ঘন্টা নেওয়ার কথা । উলুবেডিয়া থেকে বেলা ২.০০ টোর সময় বেরুলে সন্ধ্যে ৬.০০ টার মধ্যে পৌঁছনো উচিৎ তবে রাস্তাতে কোন অসুবিধে হলে মানে ট্রেফিক জ্যাম্ হলে হয়তো দেরি হতেও পারে। ট্রাক্ গুলো যাচ্ছেতাই ভাবে যায়। অনেক প্রশ্ন মনে আসছে আবার ভাবছি দূর  কিস্সু হবেনা । হবে আবার কিনিজে একটু কফী বানালাম সঙ্গে ওট্ এর বিস্কুট্ দুখানা। কাগজ টা পোডেছি আবার পডলাম। হঠাৎ রিং এলো বাবা কন্টাই তে পৌঁছেছি তোমার গাডীর রেডীয়েটারের পাখা আটকে গিয়েছে ইঞ্জীন্ গরম হয়ে কুলান্ট্ টগ বগ করে ফুটছিল । বনেট্ দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছিল । আমি নিজে ডিটেক্ট্ করলাম রেডিয়েটার এর ফ্যান কাজ দিচ্ছেনা।  কন্টাই এর মেকানিক্ রেডীয়টার এর ফ্যানটা বদলালো । একটা রিলে সুইচ্ বদলালাম ।   কথাগুলো একটানা বলে গেল 
ঠিক আছে । হ্যাঁ গাডীটা ত আমার মত পুরন হল । ২০০৬ সালের গাডী স্যা্নট্রো বলে চলছে । ছ বছর একটানা সার্ভিস দিয়েছে । আমি অফিস আর বাডী ছাডা ত কোথাউ  যেতাম না।  শোন সন্ধ্যে বেলায় সমুদ্র তটে ঘুরবিনা । হোটেল এ থাকবি। মাতো সমুদ্র দেখলে জলের দিকেই দৌডয় । রিপ্ কারেন্ট থাকে যা টেনে নিয়ে যায়। সাবধানে থাকিস । মাকে একা ছাডবিনা ।
ঠিক আছে । ফোন ছাডছি ?  
আচ্ছা ।
দাদনপাত্রবারে ছোট ছোট বালি স্তুপ আছে।গাডী নিয়ে যাওয়া যায় ১৩ কি.মি। 
মন্দারমনীতে রোজ্ ভ্যালি সবচেয়ে দামী হোটেল ।এসি ডবল বেড টা ৫,০০০কা এক রাত পুর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রধান আকর্সন মন্দারমনী আর দীঘা । তবে মন্দারমনী র ১৩ কি.মি সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সেই সমুদ্র সৈকতেই গাডী চালান যায়। ভারতবর্ষে নাকি অন্য কোন সমুদ্র সৈকতে এতো সুন্দর গাডী চালান যায় না । তাই বেশির ভাগ লোক গাডী নিয়ে যায় ওখানে । কিছু ফিল্ম সুটিং ও হয়েছে ওখানে।  এর আরেক বিশেষ আকর্সন লাল ক্যাঁকডা। ভারি সুন্দর এখানকার পরিবেশ । এই সমুদ্র র ঢেউ ছোট দাদনপাত্রবারে ছোট ছোট বালি স্তুপ আছে। খুব সুন্দর দেখায় ।
ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ প্লাবিত করে সমুদ্র তট ।
রোজভেলি হোটেল মন্দারমনী 
অনেকে বলে পুরীর চেয়ে নাকি ওখানকার পরিবেশ আরো সুন্দর । কিন্তু পুরীর নুলিয়া,জগন্নাথ আর আছডে পডা ঢেউ বিশেষ করে পুর্নিমা আমাবশ্যাতে সমুদ্রের গর্জন আরেক উন্মাদনা দেয়। ওর সৌন্দয্য আর আকর্সন আলাদা ।
 তবে মন্দারমনী র ১৩ কি.মি সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সেই সমুদ্র সৈকতেই গাডী চালান যায়। ভারতবর্ষে নাকি অন্য কোন সমুদ্র সৈকতে এতো সুন্দর গাডী চালান যায় না।
মন্দারমনী তে ওরা হোটেলে চেক্ ইন করে আবার ফোন করে ।   
বাবাশুভ্র বলছি । আমরা পৌঁছেগিয়েছি। গাডী ঠিক আছে । চিন্তা কর না। রাস্তাতে কোন অসুবিধে হয় নি। রেডিয়েটর এর ফ্যানটা ৫ বছর পর এম্নিতেই বদলাতে হয়। রিলে সুইচ এর ওপোর প্রেসার পডেছে তাই ওটাও বদলালাম। এগুলো মাইনর কাজ প্রশান্তর দেখা উচিৎ ছিল। আসলে এরা ড্রাইভিং ছাডা অন্ন কিছু বিশেষ যানেনা। তুমি ডিনার সেরে শুয়ে পোড । রাত জেগে লেখা লেখি কোর না। গুড নাইট্। টেক্ কেয়ার ।
ঠিক আছে তোরাও  ডিনার সেরে শুয়ে পডিস । সকালে উঠে সি বিচে যাবি । তোর,মায়ের এবং সম্পার খেয়াল রাখিস। শুভ্র রাত্রি ।
সকালে ,  বিজে ব্লক এর পার্ক এ প্রাতঃ ভ্রমনে যথা রিতি  বেরুলাম । খুব ভাল লাগছে আজ সকাল টা । পার্ক এর চারপাসের রাস্তা দিয়ে বুড বুডী ছেলে মেয়ে সকলে প্রতঃ ভ্রমনে বেরিয়েছে।মাদার ডেয়ারীর দুধ নিয়ে ঘরে ফিরলাম। অনেক দিন পর রোদ উঠছে । খুব মিষ্টি রোদ । ঘরে ঢুকছি মঞ্জু বলল দাদার ফুন এয়েছিল । বলে মাসীমা কে সকাল থেকে দেখতে পাওয়া জাচ্ছেনাকো । তোমার ফুন বন্দ বোলে এই ফুনে বলেছে । তুমি এলে ফুন করতে বলেছে। দাদারা খুঁজছে সকলে । মাসীমা র কি হয়েছে গো মেসো ?
তুই আমাকে পার্ক এ গিয়ে বললিনা কেন ?আমার মোবাইল তো চার্জ এ রেখেছি । সুইচ্ অফ আছে ।আমি তাডাহুডো করে মোবাইল টা নিয়ে ডায়াল কোরতে লাগলাম ।
ওদিক থেকে আউট্ অফ রিচ বোলছে। কি করি ! প্রশান্ত র মোবাইল ও তাই। সম্পা র নম্বর আমি যানিনা। ওকে বারে বারে বোললাম বয়েস হয়েছে ও সব যায়গায় যেও না । ওসব কি আমাদের জন্য ! বাচ্চারা  দেখুগ ওদের ভাল লাগবে । ওদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার কি প্রয়োজন । কে কার কথা শোনেএখন কোথায় গেল মানুষ টা কে যানে! হয়তো সমুদ্র দেখতে দেখতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছে । নয় কোথাউ বসে গান গাইছে । অচেনা যায়গাতে ত ও যাবেনা ওরকম ! কি হল নানা প্রশ্ন যাগে মনে ।
ফোন এল । দৌডে ধরতে যাব পা টা মুচকে গেল । খুব ব্যাথা লাগছিল । কি হল বলে মঞ্জু দৌডে এল রান্না ঘর থেকে ।
একটু ভোলিনিটা(Volini ointment) নিয়ে আয় তো , আমি বলি আর ফোন রিসিভ করি। প্রশান্ত র ফোন।
স্যার দাদারা গিয়েছেন  ম্যাডাম কে খুঁজতে । ম্যাডাম সকাল সকাল মর্নিং ও্যাকে  বেরিয়েছেন । ফিরে আসেননি । আমাকে দাদা বলেছেন আপনাকে ফোন কোরতে চিন্তা না করার জন্য।
তুই কোথায় ছিলিস তোকে কেন পাঠিয়েছি ওদের সঙ্গে খেয়াল রাখতে পারিস না।! যত্ত সব গাঞ্জা খোরের দল। দাদা কোথায় খুঁজবে ওকে। বেয়াক্কেলে সব। সকাল সকাল আমার মাথা খারাপ করিসনা। সুখে থাকতে ভূতে কিলল । আমি এখন কি করি ? দেখি বসু বাবু কে বলে । ওনার পুলিশ মহলে চেনা আছে । পূর্ব মেদিনীপুর ওনার এলাকা ছিল। আমরা এক ই সঙ্গে চাকরি থেকে অবসর নি।
বসু বাবু কে ফোন করতে যাব আবার আমার মোবাইল বেজে উঠলো । শুভ্র র ফোন। বাবা চিন্তার কোন কারন নেই। মার এক বান্ধবির সঙ্গে দেখা হয়েছিল । উনি মাকে ওনার হোটেলের রুমে নিয়ে জান । মায়ের স্কুলের বান্ধবি মালবিকা মাসী । ওরা গল্প করতে এত মসগুল যে সব ভুলে গিয়েছেন  । আমাকে দেখে মা আর মালা মাসী বলল বাবাকে বলিস না কুরুক্ষেত্র করবে । আমি গেলে বুঝিয়ে বলে দেব। চল এখন সমুদ্র দেখি। লাল ক্যাঁকডা (red crab) .মা খুব এঞ্জয় করছে এখানে। বকা বকি কর না ।
যত্ত সব আদিখ্যেতা ! এবার আজকের মধ্যে ফিরে এস দয়াকরে । স্বিচ্ অফ্ করেদিলাম।
ওরা রাত ১০.৩০ সময়  বাডী ফিরল। হই হট্টগল করতে করতে । সকলেই খুব ক্লান্ত ছিল । মঞ্জু রান্না করে গিয়েছিল। ওই খেয়েই সব শুয়ে পডল । আমার পায়ের ব্যাথা টা কমেনি । ওদের পিকনিকের দৌলতে আমার পাটা মচকাল । আঃ ব্যাথাটা কমছে না!