Tuesday, December 31, 2013

=নেতাজীর স্মৃতির খোঁজে= -সৈকত চক্রবর্তী



=নেতাজীর স্মৃতির খোঁজে=
-লেখক ডঃ সৈকত চক্রবর্তী

(প্রথম পর্ব)

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের মৃ্ত্যু আজও আমাদের কাছে রহস্যের মোড়কে আবৃত।
ছোটবেলা থেকেই জানতাম,নেতাজীর চিতাভস্ম রক্ষিত আছে "রেনকোজি"নামক
জাপানের এক বৌদ্ধমন্দিরে। অধিকাংশ দেশপ্রেমিক ভারতবাসীর মতো আমিও নেতাজীর একজন পরম ভক্ত। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান আমরা
কোন দিনই ভুলতে পরবো না। গভীর দেশপ্রেম,অনমনীয় সংকল্প আর কঠোর
আত্মত্যাগের প্রতীক নেতাজী যেভাবে দেশের ভিতরে ও পরবর্তীকালে দেশের বাইরে
গিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব দিয়ে বন্দিনী ভারতমাতার শৃংখলমোচনের জন্য
প্রবল প্রতাপশালী ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন,সেই রোমহর্ষক কাহিনী
স্মরণ করলে আজও আমরা অবাক হয়ে যাই,পরম শ্রদ্ধায় আপনা থেকেই মাথা নুয়ে
আসে সেই মহানায়কের পায়ে।
নেতাজীর জীবনকাহিনী সব সময়েই আমাকে অনুপ্রাণিত করে,জীবনের পথে
চলার দিশা দেখায়। এই মহান বিপ্লবী দেশপ্রেমিককে আমাদের দেশ আজও তাঁর
প্রাপ্য মর্য্যাদা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। দেশকে স্বাধীন করার সংকল্প নিয়ে দেশের
বাইরে থেকে তিনি যে সংগ্রাম করে ইংগ্রেজদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে তাদের শক্তির ভিতে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন এবং অবশেষে তাদের এ দেশ থেকে পালাতে
বাধ্য করেছিলেন,তাঁর শৌর্যের সেই অবিস্মরণীয় কাহিনী পড়তে পড়তে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে। নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-সুবিধার প্রতি চির-উদাসীন
নেতাজী কিন্তু তাঁর সংগ্রামী সহকর্মীদের সম্পর্কে সব সময়েই সচেতন থাকতেন, তাঁদের সুখ দুঃখের শরিক হয়ে সত্যিকারের অভিভাবকের আসন নিতেন। তাই তো
আজাদ হিন্দ বাহিনীর ৬০,০০০ সংগ্রামী ভারতবাসী এই বিপ্লবী নায়ককে তঁদের
হৃদয়ের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন এবং তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য
করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নেতাজীর উদাত্ত আহ্বান-
"তোমরা আমায় রক্ত দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো"অথবা "দিল্লী চলো,
চলো দিল্লী"বাহিনীর সবার রক্তে আগুন ধরিয়েছিল সেদিন,তাঁরা ও সম্মোহিত হয়েই
কদম কদম বাড়ায়ে গিয়েছিলেন,দেশকে মুক্ত করার কঠিন সংগ্রামে। শিবাজীর শৌর্য্য স্বামীজীর ত্যাগের মিশ্রনে তৈরী নেতাজীর কর্মবহুল জীবন নিয়ে ভাবতে
গেলে মনটা আজ কেমন উদাস হয়ে যায়। .........



=নেতাজীর স্মৃতির খোঁজে
-সৈকত চক্রবর্তী

পূর্ব প্রকাশিতের পর
------------------- 
(২য় পর্ব)
--------
"......... কোনদিন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি আমার জাপানে আসা হবে। জাপান সরকারের আমন্ত্রণে হঠাৎ জাপানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ যেদিন পেলাম সবকিছুর মাঝে জাপানে রেনকোজি মন্দির দর্শণ করার কথাই সর্বাগ্রে ভেবেছিলাম।
জাপানে এসে তাই নেতাজীর বিতর্কিত চিতাভস্ম রাখার যে স্থান,সেই রেনকোজি
মন্দির দর্শণ করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। হঠাৎ করে একদিন টোকিও
যাওয়ার ডাক পেলাম,একটা সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য-আমার পি এইচ ডির
গাইড প্রোফেসার কাজোও সাক্কার সঙ্গী হয়ে।
সেদিন ১২ই অক্টোবর,২০০৭ইং। আমার কর্মস্থান Tsu City থেকে
বেরিয়ে গেলাম সকাল ৮ টায়,চেপে বসলাম বুলেট ট্রেনে। ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার
বেগে চলে বুলেট আমাদের পৌঁছে দিল টোকিওতে,১ঘণ্টা ২০ মিনিটে-৩৮০ কিলোমিটার দূরত্বে। জাপানের সর্বোচ্চ গতিবেগসম্পন্ন বুলেট ট্রেনের কথা দেশে থাকতে অনেক শুনেছিলাম,এবার ঐ ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতায় কেমন যেন একটা
রোমাঞ্চ অনুভব করলাম। ঐ দিন সেমিনার সারার পর প্রোফেসারের অনুমতি নিয়ে
আমি থেকে গেলাম একটা হোটেলে,আমার স্বপ্নের রেনকোজি মন্দির পরিদর্শন
করবো বলে।
পরদিন,১৩ই অক্টোবর। সকালেই হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম সোজা
রেনকোজির উদ্দেশে। মন্দিরটি জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের পশ্চিমে অবস্থিত।
টোকিও ছবির মতো সুন্দর শহর,সাজানো গোছানো,পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন-কিন্তু শহর
হিসাবে খুব একটা বড় নয়। তাই লক্ষ লোকের দৈনন্দিন যাতায়াতের সুবিধার জন্য তৈরী হয় টোকিও সেন্ট্রাল রেলষ্টেশন,যেখানে মাটির নীচে সমস্ত শহর জুড়ে বিভিন্ন
স্তরে মাকরসার জালের মতো ছড়িয়ে আছে সাব-ওয়ে লাইন। বিভিন্ন
সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার মেট্রো সার্ভিস বিভিন্ন স্তরের সাবওয়েতে তাদের মেট্রো রেল চালিয়ে যাত্রীদের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের বন্দোবস্ত করে থাকে। সাব ওয়েতে
সরকারী সংস্থার রেলকে বলা হয় "টোকিও মেট্রো"। .........
-চ ল বে
---------------------------------------



=নেতাজীর স্মৃতির খোঁজে=
-সৈকত চক্রবর্তী
(তৃতীয় পর্ব)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
--------- 
"..........ফিরে আসি পূর্বপ্রসঙ্গে,রেনকোজি যাত্রায়। টোকিও শহর ছেড়ে প্রথমে এলাম টোকিও সেন্ট্রাল ষ্টেশনে,দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।
সেখানে গিয়ে মাটির নীচে সাব-ওয়ে মেট্রো সার্ভিসে দেখলাম বিভিন্ন গন্তব্যে
চলা মেট্রো রেলের তালিকা। রেনকোজি যেতে হলে আমাকে উঠতে হবে
"টোকিও মেট্রো সার্ভিসে"।                                                                                                                             মেট্রো ট্রেনের নাম"টোকিও সেন্ট্রাল -সিনজুকু-
হিগাসি কোয়েনজি"।                                                                                                                                          আমাকে যেতে হবে শেষ ষ্টেশন "হিগাসি কোয়েনজি"।
ট্রেন মিলিয়ে বসে পড়লাম,আর নামলাম এসে হিগাসি কোয়েনজি ষ্টেশনে।
সময় লাগলো ১৮ মিনিট। ষ্টেশন থেকে একটু এগিয়ে গেলেই একটা পার্ক,
আর সেই পার্কের পিছনেই মন্দিরে যখন পৌঁছলাম,তখন
বেলা প্রায় ১০ টা।
ছোট্ট এই বৌদ্ধমন্দিরটি জনবহুল শহরের মাঝে,জাপানীদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। ১৫৯৪ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ধনসম্পত্তি ও সুখের প্রতীক এই
মন্দির সাধারণ জাপানী নাগরিকদের কাছে এতটা পরিচিত না হলেও অধিকাংশ
ভারতবাসী,বিশেষ করে প্রতিটি বাঙ্গালী এই নামের সঙ্গে খুব ভালোভাবেই
পরিচিত। বর্তমান প্রধান পুরোহিতের পিতা মোচিযুকি ছিলেন তৎকালীন মন্দিরের
প্রধান। ১৮ ই আগস্ট,১৯৪৫ ইং তাঁর অনুমতি নিয়েই মন্দিরে রাখা হয়েছিল
একপাত্র চিতাভস্ম আর কিছু সামগ্রী,যা বলা হয়ে থাকে নেতাজীর।
নেতাজী জাপানে"চন্দ্র বোস"নামে খুবই পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে
জাপান যখন পুরো সামরিক শক্তি নিয়ে ইংরেজদের ও আমেরিকানদের মোকাবিলায়
ব্যস্ত,তখন বিপ্লবী রাসবিহারী বোসের হাতে গড়া আজাদ হিন্দ ফৌজ ও তার নায়ক
নেতাজী সুভাষ জাপানীদের কাছে খুবই প্রিয়। সেই নেতা চন্দ্র বোসের স্মৃতিরক্ষার্থে
এবং অন্তেষ্ঠির কাজে সাহায্যের অর্থে তৎকালীন প্রধান পুরোহিত মোচিযুকি রাজী
হন এবং অনুমতি দেন চিতাভস্ম এবং তার সঙ্গে আরো কিছু সামগ্রী রেনকোজি
মন্দিরে রাখার। শোনা যায়,ব্যক্তিগতভাবে তাঁর জানা ছিল না এই চিতাভস্ম
আসলে কার।
এই সময় জাপানের পরিস্থিতিও অনেকটা বদলে যায়।পর পর দু'টি পরমাণু
বোমার আক্রমন,আমেরিকার কাছে জাপানের পরাজয়,আত্মসমর্পণ-অনেক কিছুই
ঘটে কয়েক মাসের মধ্যে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও সুরক্ষিত রয়ে যায় রেনকোজি মন্দির এবং মন্দিরের একটা ছোট্ট কৌটায় রক্ষিত তথাকথিত নেতাজীর চিতাভস্ম
তৎসহ কিছু সামগ্রী।.........."

=নেতাজীর স্মৃতির খোঁজে=
-সৈকত চক্রবর্তী

(চতুর্থ পর্ব)

পূর্ব প্রকাশিতের পর
----------------
"............প্রতি বছর ১৮ই আগষ্ট দিনটিকে রেনকোজি
মন্দিরের পুরোহিতেরা পালন করে থাকেন নেতাজীর মৃত্যুবার্ষিকী হিসাবে।
জাপানে আমার মতো নেতাজীর ভক্ত যাঁরা রয়েছেন,তাঁরাও যোগদান করেন এই অনুষ্ঠানে। চিতাভস্ম আনার পর থেকে(১৮ই আগষ্ট,১৯৪৫ইং)
তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী জহরলাল নেহেরু(অক্টোবর ১৯৫৭ইং)এবং এক বছর পর রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ,প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী(১৯৬৯ইং),
অটল বিহারী বাজপেয়ী(৯ই ডিসেম্বর,২০০১ইং)-আরো অনেকেই এই
মন্দির দর্শণ করে গেছেন। সবাই শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন ঠিকই,কিন্তু নেতাজীর মতো একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে কেহই
তেমন আন্তরিকতা দেখান নি। শিলান্যাস করে বক্তব্য খোদাই করার মধ্যেই
তাঁদের আগ্রহ সীমাবদ্ধ ছিল।
রেনকোজি মন্দির প্রাঙ্গনে পাথরে খোদাই করা নেতাজীর আবক্ষ প্রতিমূর্তিটির সামনে এসে দাঁড়ালাম। আমার ডানদিকে কাঠের ছোট্ট একটা
টেবিলে একটি "ভিজিটারস্ বুক"আর বামদিকে মূল মন্দির ও মন্দিরের
একটি কোঠা,যেখানে রক্ষিত আছে নেতাজীর তথাকথিত চিতাভস্ম। রুদ্ধদ্বার
সেই কোঠাটির দিকে তাকিয়ে মনটা আমার বিষাদাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বিচিত্র
এক অনুভূতিতে চোখের দৃষ্টি আমার ঝাপসা হয়ে উঠে। জানি না এই চিতাভস্ম কার,আদৌ এটা কোন চিতাভস্ম কি না। তবুও সারা পূথিবীর কাছে প্রচার হয়ে গেছে এখানে,এই মন্দিরে,নেতাজীর চিতাভস্ম
রক্ষিত ছিল। ..............."


(1)নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে নেতাজীর ছবি


Friday, December 6, 2013

সমীরদার বিয়ে ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ১২.০৭.২০১৩ / বেলা ১১.৩০



সমীরদার বিয়ে

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী  ১২.০৭.২০১৩  / বেলা  ১১.৩০

পেন্টু আমার ছোটবেলার বন্ধু । আমি , পেন্টু ,খোকন তিনজনেই এক স্কুলে পড়তাম । সকালে স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতে ১ টা বাজতো । স্নান সেরে খাওয়ার পর হোম ওয়ার্ক থাকলে সেরে ফেলতাম । মা , সারা বাডির কাজ সেরে একটু বিশ্রাম নিতেন দুপুরে । ঠিক সেই ফাঁকে আমি জাল আলমারিতে রাখা নারকেলের নাড়ু সব ফাঁক করে দিতাম । মায়ের হাতের নারকেলের নাডুর স্বাদ এখন ভুলিনি। পেন্টুদের বাড়ী আমাদের বাডীর উল্টো দিকে । ওদের বিশাল বাগান বাড়ী ছিল। বাগানে রকমারি তরি তরকারি , হাঁস , গরু ,ছিল। একটা মস্ত পুকুর ছিল সেই পুকুর পাড়ে আমরা গিয়ে গল্প করতাম। হাঁস গুলো দেখতে খুব ভালো লাগতো বিশেষ করে রাজ হাঁস । আমাদের বাডীর কাছেই একটা খেলার মাঠ ছিল । আমরা সেখানে হয় ডাঙগুলি নয় চোর পুলিশ খেলতাম ।

 বিশ্বকর্মা পূজোর আগে আমাদের ঘুডির সুতোর মাঞ্জা দেওয়ার রেওয়াজ থাকতো । তাই পেন্টুদের বডী থেকে য়ানতাম হামান দিস্তা , ভাঙ্গা কাঁচ , হাঁসের ডিম । হামান দিস্তাতে কাঁচ গুঁড় করে সেটা হাঁসের ডিম ফাটিয়ে সেই কুসুমের সঙ্গে মিশিয়ে একটা মন্ড তৈরি হত । মাঠের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত সমস্ত  চৌহদ্দি  জুডে গাছের গুঁড়িতে পাক খাইয়ে সুতো জড়ানো হত । এরপর মাঞ্জা দেওয়া হত হাতে সেই মন্ড  নিয়ে । সারা দুপুর আমাদের চলতো এই কাজ । আর কিছু হাঁসের ডিম আস্ত সিদ্ধ করে খাওয়ার জন্য ।  তিনটে ইট আড়া আড়ি ভাবে রেখে আরেকটা   ইট রাখা হত যাতে উল্টো ইউ  আকৃতি হয় । এরপর শুকনো বাঁশে কাগজ দিয়ে আগুন ধরানো হত । ইটের  উনুনে সিলভারের একটা বাটিতে চারটে , ছটা ডিম সিদ্ধ হত । ডিম সিদ্ধ নুন লংকা দিয়ে খেয়ে লেগে পডতাম ঘুঁডির সুতোর মাঞ্জা দিতে । সেই আনন্দের দিন গুল ভুলতে পারিনা

পেন্টুর জাঠতুতো  দাদা, সমীরদা’ তখন সদ্য মার্চেন্ট অফিসে চাকরিতে ঢুকেছেন । সমিরদাকে সকালে বাডীর ছাদে দেখা যেত কাগজ নিয়ে পডতে । আসলে কাগজ পডা নয় মিনুদির সঙ্গে চোখে চোখ মিলিয়ে একটু ভাসা ভাসা প্রেম আরকি । মিনুদির বাডী একটা বাডীর তফাতে তাই ওনাকেও সকালে হয় বই হাতে নয় কাপড় মেলতে দেখা যেত ।   আমাদের খেলার মাঠের কাছেই একটা ইটখোলা  ছিল। সেই ইটখোলাতে সমীরদা রবিবার কিম্বা কোন ছুটির দিনে বিকেলে আসতেন । কেন আসতেন আমরা বুঝতাম না । হাতে একটা সিগারেট , পরনে পায়জামা পাঞ্জাবী আর পায়ে স্লিপার । তখন সদ্য হাওয়াই স্লিপার উঠেছে । সমীরদা সামনের বাডীর ‘মিনুদির’   সঙ্গে যে চুপি চুপি প্রেম করতেন তা আমরা বুঝতাম না তখন। মিনুদি আসতেন ইটখোলাতে সমিরদাকে দেখা করতে পরে জেনেছি ।

        মিনুদি  খুব সুন্দরী ছিলেন । যেমন রং সেইরকম মুখের গড়ন । টিয়া পাখির মতন টানা নাক আর টানা টানা চোখ ।  সে , না দেখলে বোঝানো যায়না । প্রত্যেক দিন ভোর বেলায়   মিনুদি তানপুরা নিয়ে রেওয়াজ করতেন । পাড়ার ফাংশনে  মিনুদির গান অবশ্যই থাকবে । সমিরদা নাটকেতে হিরোর রোল করতেন । অনেক ড্যান্স ড্রামা হত রবীন্দ্রনাথের  ‘তাসের দেশ’ ,’চিত্রাঙ্গদা’ ইত্যাদি । মিনুদি সব ড্যান্স ড্রামা নিজে নির্দেশনা দিতেন । পাডার মেয়েদের দিয়েই সুন্দর ভাবে পরিবেশন করতেন । সত্যি দেখার মতন। নাটক মানেই সমীরদা । রাত জেগে রিহার্সাল দেওয়া, স্ক্রিপ্ট লেখা সব সমীরদা । তাই বোধহয় সমীরদা মিনুদির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। খুব স্বাভাবিক ।

হঠাৎ পেন্টু বলল , সমিরদার বিয়ে । সমীরদার বাবা জোর করে সমীরদার বিয়ে ঠিক করেছেন এক অল্প বয়সের মেট্রিক পাস মেয়ের সাথে । সমীরদা কিন্তু ওনার মাকে মিনুদির কথা বলেছিলেন । জ্যাঠাইমা সব জানেন কিন্তু জেঠুর রাগের কাছে কেউ তিষ্টতে পারে না। এই ছিল তখনকার কালের  সমস্যা । সমীরদারা বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ ‘লাহিড়ী’ আর মিনুদিরা বদ্যি ‘সেনগুপ্ত’ !  অগত্যা সমীরদা বাডী ছাডা হলেন । অন্য জায়গায় বাসা ভাডা নিলেন। মিনুদিকে  আর রেওয়াজ করতে শোনা গেলনা ।

দুটি হৃদয়ের মিলন কি তাহলে অসম্ভব ! সেটাইতো প্রশ্ন !!   কি হল তবে ?
এর মধ্যে জ্যাঠাইমার জন্ডিস হল। সমীরদা মাতৃভক্ত ছেলে । মায়ের অসুখে কিছুতেই দূরে থাকতে পারলেন না । ফিরে এলেন বাডীতে । জেঠু ,  ডাক্তার বদ্যি সব করলেন । অনেকদিন জ্যাঠাইমা ভুগলেন শয্যাশায়ী হয়ে। ক্রমে ছেলেকে-দিয়ে প্রতিজ্ঞা করালেন মাথায় হাত রেখে সে যেন তার মা’কে ছেডে কোথাও না যায় । সমিরদা ফ্যাসাদে পডলেন । ‘ফান্দে পডে বগা কান্দেরে’ এ কিছুটা  সেই রকম ই  অবস্থা । সমীরদা ঠিক করেছিলেন মিনুদিকে বিয়ে করে আলাদা থাকবেন । ভগবান বাধ সাধলেন । জ্যাঠাইমা সমীরদা কে বলেন বাবার পছন্দের মেয়ে কে বিয়ে করতে । সমীরদা গর রাজি । কিছুতেই রাজি করান গেলনা । সরদার মা বিছানায় শয্যাশায়ী ছিলেন। আমরা জ্যাঠাইমাকে দেখতে যেতাম । আর পেন্টু আসত না খেলতে । সামনে বিশ্বকর্মা পুজো । ওই দিন ঘুড়ি ওডাতেই হবে ।

জেঠু এরমধ্যে মেয়ের বাবাকে আশীর্বাদের আয়োজন করার মনস্থ করেন ।                      সমীরদার মা  অনেক অনুনয় বিনয় করে ছেলেকে বোঝাতে চেষ্টা করেন । বাবা, কেন তুই বুঝছিস না”
 সমীরদা, “কিসের সমাজ মা! ,আমি ওই সমাজ মানিনা যেখানে ভালোবাসার কোন দাম নেই ?”
মানি না মানি না !!
হঠাৎ ঘরে জেঠু ঢুকলেন । সব নিস্তব্ধ ।

জেঠিমার চোখে জল । তিনি দোটানার মধ্যে পড়েন আর মানসিক অশান্তিতে কাটান ।
“তাহলে তোমার কি এটাই সিধান্ত খোকা” , জেঠু গম্ভীর ভাবে বলেন।
“হ্যাঁ বাবা । এটা আমার জীবনের চরম সিদ্ধান্ত যা আমাকেই নিতে হবে । আমি চাইনা কোন মেয়ের জীবন নিয়ে ছেলে খেলা করতে । আমি ওই অপরিপক্ব এক ম্যাট্রিক পাস মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী করতে চাইনা। আমি আপনার সঙ্গে এ বিষয় তর্ক করতেও চাইনা । আপনি আমায় বুঝতে চেষ্টা করুন” ।
 
    সমীরদা গড় গড় করে ডায়লগ বলার মতন বলে গেলেন।
 খোকা  তুমি নাটক করে নাটকের সংলাপ আমায় শোনাচ্ছ ! বাচালতার সীমা আছে । সীমা টপকাচ্ছ তুমি । নিজেকে কি মনে কর তুমি ? ওই বদ্যি বাডীর মেয়ে তোমার মাথাটা খেয়েছে । ঠিক আছে তুমি জদি ওকেই বিয়ে করতে চাও তবে এ বাডীর দরজা তোমার জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ ।

এ কথা শুনে সমীরদা একদম বিচলিত হলেন না । পা বাড়ালেন দরজার দিকে ......।
জেঠিমা ফুঁপিয়ে কেঁদে  ওঠেন ......  খোকা যাসনি ! খোকা যাসনি !! তোদের  বাবা ছেলের বচসাতে আমি যমের দ্বারে জেতে বসেছি । তুই আমার মরা মুখ দেখবি খোকা । আর  তোমাকেও দোহাই তুমি কেন ছেলেটার মনের কথা বুঝে উঠতে পারছোনা? কি চাও তোমরা ?
জেঠু চুপসে গেলেন এই কথায় । দাঁড়াও !! গর্জন করে ওঠেন !! খোকা দাঁড়াও !!!
সমীরদা ধীর স্থির ভাবে দাঁড়ালেন দরজার কাছে ।
জেঠু বলেন ,“ঠিক আছে  তুমি ওদের বাডীতে খবর পাঠাও”
সমিরদা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন । সত্যি বাবা ? ঢিপ করে প্রণাম করেন বাবা মাকে । আমি খবর দিচ্ছি ।

বাডীতেই  বৈঠকখানায় টেলিফোন ছিল । ফোনে খবর দেন মিনুদিকে ।
পরের দিন মিনুদিদের বাডী থেকে মিনুদির মা বাবা আসেন সঙ্গে আংটি মিষ্টির বাক্স আর জেঠিমার জন্য এক ঝুডী ফল , ডাব ইত্যাদি ।

জেঠিমা এখন অনেকটা সুস্থ বলে মনে হচ্ছে । এতদিন পর মুখে হাঁসি দেখে সবাই আশ্বস্ত ।
আজ চাকর বাকর ,পাডা পোডশি , ছেলে ছোকরা সব্বাই খুশি । সকলেই হার্দিক ভাবে এই যুগলকে বিবাহ বন্ধনে আবধ্য হতে দেখতে চান । আসলে জেঠু এ পাডার একজন গণ্য মান্য ব্যাক্তি ।  তাই বিয়ের ভোজ খুব ভাল হবে । আমরা সকলে বলি ,সমিরদা মিনুদির বিয়েতে কব্জি ডুবিয়ে খাবো ।

খুব ধুম ধাম করে বিয়ে হল । আমি নিত বর হয়ে গেলাম সমিরদার সঙ্গে গাডীতে । দেখতে একটু লাল্টু ছিলাম  তাই বোধহয় আমার ভাগ্যে নিত বর হওয়া জুটে গেল।

Thursday, November 28, 2013

ভূতকোঠির গল্প / ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী / ২৯।১১।২০১৩


আমার নিজের অভিঙ্গতা থেকে বলি একটা সত্যি ঘটনার কথা । এখন পুরী বদলে গিয়েছে । এখন ওখানে ভুতেদের থাকার জায়গা নেই । ঘন জন বসতি । কিন্তু একদিন ছিল কিছু পোড বাডীতে বিশেষ করে ভূতকোঠিতে কোন লোক জেতে ভয় পেত । আমি এটা ১৯৬০ দশকের কথা বলছি। ১৯৬২-৬৩ হবে বোধ হয় । ঠিক মনে নেই। তবে এখন ওখানে আপার্টমেন্ট হয়ে গিয়েছে।

পুরীতে ক্যাথোলিক চার্চের পেছনে লাগাও বিশাল এক বাডী আছে । লাল রঙের বাডীটা । অবস্থিতিটা বলছি , যারা পুরী গিয়েছেন লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা ; পুরীর ভি আই পি রোড ধরে- আর্মস্ট্রং রোড দিয়ে সমুদ্রর দিকে যাওয়ার সময় ডান দিকে পডে ওই বাডীটা । ভগ্ন প্রায় কিন্তু বিশাল বাডী । প্রায় দু একরের মত যায়গা নিয়ে বাডীটা একটা বিশাল উঁচু যায়গার ওপর অবস্থিত । রাস্তা থেকে লক্ষ্য করলেই মনে হয় পোড বাডী । কিন্তু না ওটা কিছুদিন টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস হয়েছিল । তার আগের এবং পরের কথা বলি । এই বাডীটা আমাদের পৈতৃক পুরীর বাডী থেকে একদম কাছে পায়ে হাঁটার দূরত্বের মধ্যে । এর বিষয় অনেক গল্প শুনেছিলাম তাই ছেলেবেলায় আমি ঐ বাডীর ধারে কাছে জেতা-মনা ।
কি এক কারনে আমার ছেলেবেলার বন্ধু ‘জগা’ র সঙ্গে খেলাধুলোর পর বাডী ফিরছিলাম ঠিক ঐ বাডীর পাস দিয়ে যে রাস্তা গিয়েছে সেটা দিয়ে । প্রায় সন্ধ্যে হয়ে আসছিল । শীত কালের বিকেল ছিল । গা ছম ছম করছিল । আমি প্রায় দৌড়ে চলেছি । জগা আমায় ডাকছে পেছন থেকে । আমি কর্ণ পাত না করে চোঁ চাঁ দৌড়লাম। চার্চের কাছে পৌঁছে দেখি জগা আসেনি তখন । কি হল জানার কৌতূহল হল কিন্তু ভয়ে ফিরে গেলামনা । জগার বাডী আমাদের বাডীর কাছে তাই ওর ওপরের ভাই ‘বসন্ত’দা কে খবর দিলাম। জায়গাটা বুঝিয়ে দিলাম । আমাকে বসন্ত দা সঙ্গে যেতে বললো । ওর আরও দুজন বন্ধুকে সঙ্গে করে আমরা ঠিক যেতে বেরুচ্ছে সেই সময় জগা আসছিল দেখলাম । আমাকে দেখে কিছুই না বলে জগা সটান ঘরে ঢুকে গেল। নিজেকে অপরাধী মনে হল । ঘরে ফিরে এলাম নাহলে মা’ বকা বকি করবেন । সন্ধ্যা হলেই পড়তে বসতে হবে । বাডীতে কিছুই বলা হয়নি ।
পরের দিন জগা স্কুলে আসেনি দেখলাম । ওর দাদা বলল ,জগার জ্বর হয়েছে । ওর বাবা শুনলে বকবেন তাই যাইনি ভয়ে । কিন্তু পরে ডাক এলো । ওর মা ডেকে পাঠিয়েছেন । অগত্যা যেতেই হল । ডাক্তারের কোন ওষুধ কাজ করছিলো না । তখনকার এল এম পি ডাক্তার ; আজকালকার এম ডি র চেয়ে বেশি প্রাক্টিকাল । কিন্তু ওনার ওষুধ ও কাজ দিল না । আমায় ডাক্তার বাবু জিঙ্গাসা করলেন কি হয়েছিল ঘটনা । আমি পুরোটা বলার পর আবার ওষুধ লিখে দিলেন । কিন্তু জ্বর রিমিসনের নাম নেই। শেষে ওঝাকে ডাকা হল । ওঝা এসে কি কেরামতি করলো কেজানে , জগা , ওঝাকে দেখেই গাল মন্দ করতে লাগলো ।
ঝাঁটার বাডি পডাতে কি সব আওডাতে লাগল বুঝলামনা। কিন্তু ফল দিল। এর পর শুনি আমি আসার পর জগা একটা ছায়ার মত কি দেখে ভয় পায় । আমাদের দুজনের ই বয়েস অল্প ছিল। তাই ঘটনাটার গুরুত্ব কেউ দিলোনা ।

বেশ কিছু দিন পর আমাদের পিসতুতো দাদা 'দিলুদা' বর্ধমান থেকে এলেন । উনি খুব মজার মানুষ ছিলেন এবং সাহসী । দুর্গ স্টেশনের এসিস্টান্ট স্টেশন মাষ্টার ছিলেন। রেলের পাস ছিল তাই চলে আসতেন ছুটি পেলে । আমার মা ওনাকে কোলে পিঠে মানুষ করেছেন তাই আমাদের মা' কে খুব ভালোবাসতেন । এলেই খুব খাওয়া দাওয়া হত । এরপর আমার মুখে দিলুদা ওই গল্প শোনেন । শুনে বলেন,"চলত কোথায় উড়ে ভূত আছে দেখি" ।                                                                                 আমি পডি ফাঁপরে । আমরা সকলেই বলি ওই দুঃসাহস করনা । অনেক ঘটনা ঘটেছে ওখানে । কে কার কথা শোনে । বললেন ,"আমি রাতে ডিউটি করি একা ; আদ্যা-পীঠ,কালীঘাট,তারাপীঠ সব ঘোরা আমার। ফি বছর জাই । চল দেখি তোদের উডে ভূত কি করে আমার !"।                                                                                                                                         মা রেগে অস্থির বলেন,"ও দিলু রক্ষ্যে কর বাবা ওখানে যাসনে ।" দিলুদা বলেন, "কিছু হবেনা বডমামি, তুমি না বাংলা দেশের মেয়ে! তোমরা দেখ আমি রাতে ওখানে যাব"।                                                                                                        

 মা নিজের মাথার দিব্বি দিয়ে বলেন,"তোর মাকে এখুনি ফোন করছি , তোকে আমার দিব্বি বাবা যাসনে ওখানে " ওটা খুব বাজে জায়গা । অনেক ঘটনা ঘটেছে । ঠিক আছে তুমি যখন বলছও জাবনা । তবে ...! তবে কি? শুনি! মা বলেন
এরপর সিনেমা দেখার নাম করে আমার ওপরের ভাইকে সঙ্গে করে ওই ভুতুড়ে বাডীতে গেলেন। তারপরের ঘটনা না শুনলেই ভাল । মেজদা বলে ওর সাঙ্গ পাঙ্গ কে নিয়ে যায় ওই ভূত-কোঠিতে । দিলুদা গেট পেরিয়ে ভেতোরে ঢুকতেই ওনার কাল ঘাম ছোটে । একটু গিয়েই ফিরে আসেন বলেন বডমামির কথা মনে পডলো চল চলে যাই । কি দেখেছেন কিছুই বোঝা গেলনা ।
ভূত সত্যি আছে কিনা আমরা জানিনা । মনে হয় আমাদের মনের ভুল । তবে কিছু নিশ্চই আছে ।

Friday, November 22, 2013

=অপরাধীর পেছনে= (অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী) -বিভূতি চক্রবর্তী

=অপরাধীর পেছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী)
-
বিভূতি চক্রবর্তী
(
১)

শুধুমাত্র তৎপরতা,'পুলিশ-কুকুরের'কেরামতি নয়,নয় কোন আধুনিক
বিশেষজ্ঞের অমূল্য সহায়তা,শুধুমাত্র তদন্তকার্যে তৎপরতার সাহায্যেও
কি করে যে চমৎকারভাবে অপরাধীদের পাকড়ানো সম্ভব,এ হলো সে রকম রোমাঞ্চকর অভিযানের একটি কাহিনী।
রাত তখন দুইটা।শান্ত পৃথিবী ঘুমিয়ে রয়েছে ধূসর দিগন্তের সবুজ
আঁচলে। চরাচর নিস্তব্দ,নিঃঝুম।আমার দুচোখে ঘুম নেই। বারান্দায় সেন্ট্রি
থানা পাহারা দিচ্ছে। বাইরে শোনা যাচ্ছে বাজারের দিকে 'নাইট পেট্রল পার্টির কলরব। মাঝে মাঝে দু'একটা রাতজাগা পাখীর বিচিত্র চিৎকার।
শুধু আমার চোখেই ঘুম নেই। কেস ডায়েরীর পাতর পর পাতা লিখে চলছি
আমি-তিনটা মোকদ্দমা শেষ করতে হবে আজ রাত্রির মধ্যেই। ঊর্দ্ধ্বতন অফিসারের চাপ আর ভালো লাগে না-কাজ আর কাজ,শুরু নেই,শেষ নেই- তবুও করে যেতে হবে। অধস্তন কর্মচারীদের সেন্টিমেন্ট বলে কোন
পদার্থ আছে,এ তাঁদের কাছে একেবারেই অবিশ্বাস্য। অনেক কাজের চাপে
ব্যতিব্যস্ত মন এক এক সময় ভাবে,তাঁদের ধারণা অধস্থন অফিসারদের
জন্ম বুঝি শুধু অবিরাম কাজ করে যাওয়া আর অনবরত বকুনি খাওয়ার জন্যে।
আর 'পাবলিক'ও মনে করে,পুলিশের কাজ শুধু মানুষ পিটানো। ওঁদের
কেউ যদি দেখতেন এসে আজকের পুলিশের জীবনের করুনতম দিক,প্রতিকূল
পরিবেশের কি বন্ধুর পথ বেয়ে চলতে হয় পুলিশকে তার কর্মজীবনে,তবে
হয়তো ওঁরা আপনা থেকেই এগিয়ে আসতেন পুলিশের সাহায্যকল্পে। কেন যে
বুঝেন না ওঁরা যে ওঁদের সাহায্যের জন্যই পুলিশকে ওঁদের সাহায্য করা প্রয়োজন। আজকের সমস্যা আগেকার মতো কোন একজন বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে নয়,
নয় কোন বিশেষ অপরাধী গোষ্ঠীকে নিয়ে-আজকের সমস্যা সমাজের
অনেক স্তরেই বিস্তৃত। এই সমাজিক সমস্যাজড়িত জটিলতা দূর করা একা
সাধ্যাতীত,তার জন্য জনসাধারনের সার্বিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

.....
চ ল বে











Top of Form

=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী)

-
বিভূতি চক্রবর্তী
----------

(
পূর্ব প্রকাশিতের পর)
-
২-

......"
বড়বাবু,বড়বাবু-"
নিশুতি রাত্রির বুক চিরে এ কার আর্ত চিত্কার-হাতের লেখা থেমে গেল। আমার সেন্ট্রি
সতর্ক হয়ে দাঁড়ালো। তারপর হঠাৎ বললো-"স্যার,আপনি? কি হয়েছে?"বাইরে একটা চেনা গলা শুনলাম-"বড়বাবু কই?"আমি আমার রুম থেকে বেরিয়ে এলুম। তারপর ডাঃ রায়কে দেখে চমকে উঠলুম-"এ কি ডাক্তারবাবু,আপনি?এত রাত্রে?"
ডাঃ রায় কান্নায় ভেংগে পরলেন-বললেন,"বড়বাবু,আমার সর্বনাশ হয়েছে,একটু আগে চোরে আমার সব কিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে।" আমি ডাঃ রায়কে সান্ত্বনা দিয়ে
বললাম,"চলুন,তাড়াতাড়ি আপনার বাড়ী যাই,ঘটনাস্থলটা দেখি কি হয়েছে?তারপর আমরা দেখবো কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।"
অপরাধ বিজ্ঞানে ঘটনাস্থলের গুরুত্ব অপরিসীম। অপরাধী কর্তৃক কোন সূত্র পড়ে থাকতে পারে ঘটনাস্থলে যা দিয়ে সহজেই তাদের পাকরাও করা সম্ভব।তাই কালবিলম্ব
না করে এস আই চৌধুরীকে সংগে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ডাক্তারবাবুর বাড়ীর দিকে।
সংগে পাঁচজন সিপাহী।
ডাক্তারবাবুর বাড়ীতে এসে দেখলাম তাঁর স্ত্রী কান্না থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
বুঝলাম,সদ্য অপহৃত অলংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীর শোকে তিনি মুহ্যমানআমি এখানে অনাবশ্যক দেরী না করে ডাক্তারবাবুকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করে
নিলাম-"আচ্ছা ডাক্তারবাবু,আপনার এই বাক্সটা কোথায় থাকতো?"
ডাক্তারবাবু ঘরের কোণে একটা বেঞ্চ দেখিয়ে বললেন,"এই বেঞ্চটার উপর"।
"
কাপড়-চোপড়?"
"
কিছু ঐ আলনায়,বাকীগুলি বাক্সে।"
"
টাকা?"
"
এই বাক্সেই।"
এবার ডাক্তারবাবুর স্ত্রীকে কিছু প্রশ্ন করলাম-
"
মাপ করবেন,আমি আপনার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি,তবু কয়েকটা প্রশ্নের জবাব না পেলে আমার অসুবিধা হবে"
ভদ্রমহিলা কিছুটা সামলে নিয়ে বললেন,
"
বলুন"।
"
আপনি কখন টের পেয়েছেন?"
"
হঠাৎ একটা শব্দ শুনে।"
"
তারপর?"
"
শব্দটা শুনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকারের মধ্যেই আমি অস্পষ্ট দেখলাম, একজন লোক ঘরের ভিতর আলনা থেকে কি যেন নিয়ে দরজায় দাঁড়ানো আর
একটি লোকের কাছে দিচ্ছে।
আমি চিৎকার করে আমার স্বামীকে ডাকতেই খোলা দরজা দিয়ে লোক দুটি পালিয়ে
যায় । আমার স্বামী জেগে উঠে আলো জ্বালান।থানায় তখন ২টার ঘন্ঠা বাজে।খোলা
দরজা দিয়ে আমদের ট্রাংকটি বারান্দায় খোলা অবস্থায় পড়ে আছে।

-----
চ ল বে
Top of Form

=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ গল্প)
-
বিভূতি চক্র বর্তী 

-৩-
......একটা মোটা মুলিবাঁশ ও বাক্সের নিকট পড়ে রয়েছে,আলনায় অনেক কাপড় ই নেই। বাক্সে আমার গহনা ছিল,ডাক্তারবাবুর ৮০০ টাকা ছিল আর কিছু গরম কাপড় ছিল-সব নিয়ে গেছে।"
ছিল-সব নিয়ে গেছে।" করুন শোনালো ডাক্তারবাবুর স্ত্রীর কন্ঠস্বর। আমি ডাক্তারবাবুকে
জিজ্ঞেস করলাম,"ডাক্তারবাবু, চোরাই জিনিসের আনুমানিক মূল্য কত হবে?"
অন্তত হাজার ত্রিশেক টাকা তো হবেই"।
ঐ সব কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকে আমি ঘটনাস্থলটি দেখে যাচ্ছিলাম। কয়েকটা বস্তার টুকরা
-
যাতে ধূলার দাগ,একটা আনুমানিক ৪ ফুট শক্ত মুলি বাঁশের গুড়ি আর খোলা বাক্সটি ছাড়া
ঘটনাস্থলে উল্লেখযোগ্য আর কিছুই চোখে পড়লো না। ঘরের ভিতরে একবার তাকিয়ে দেখলাম,দরজার উপরে স্কাইলাইটের ঢাকনাটা বাইরের দিক থেকে খোলা-আর কাঁচের
ধূলার আস্তরনের উপর আলগা আলগা দাগ। সন্দেহ হলো,ঐ রাস্তা দিয়েই চোর এসেছে-
নিজের আংগুলের ছাপ না রাখার জন্যে হয়তো বাঁশের মাথায় বস্তার টুকরা বেঁধে
স্কাইলাইটের ঢাকনা ভিতরের দিকে ঠেলে দিয়েছে,তারপর ঐ রাস্তা দিয়ে একজন ভিতরে ঢুকে দরজা
খুলে দিয়েছে। চোরের সংখ্যা আনুমানিক ৩।৪ জন হবে। আর কোন জিনিষই সেখানে পেলাম না। অপরাধীদেরও কোন পাত্তা মিললো না। ডাক্তারবাবুকে বললাম,"ঘটনাস্থলটা যাতে ডিসটার্ব
না করা হয় দেখবেন,আমি ঘুরে আসছি।বাকী রাতটা আপনারা একটু ঘুমিয়ে নিন।"

* * * *

রাত ৩টা। এ এস আই চৌধুরীকে ও সিপাহীদের সংগে নিয়ে চললাম, উদয়পুরের
একটা ট্যাক্সি নিলাম সংগে। হঠাৎ পথে এক যায়গায় এসে দেখলাম কয়েক জোড়া স্পষ্ট
পায়ের ছাপ, জুতার ছাপটা সম্পর্কে নোট রাখলাম,তারপর এগিয়ে চললাম।

এইভাবে আমরা মহারাণী পর্য্যন্ত চলে এলাম। পায়ের ছাপ অনেক আগেই
অদৃশ্য হয়েছিল,তবু মহারাণী চলে এলাম এইজন্য যে অপরাধীরা উদয়পুরের দিকে গেলে
মহারাণী খেয়া পার হবেই। আমি সিপাহীদের ঐ খেয়াঘাটে থেকে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের
জন্য অপেক্ষা করতে বললাম,তাদের যথারীতি উপদেশ দিয়ে দিলাম। রাত শেষ হয়ে এসেছে-পূব আকাশে তখন শুরু হয়েছে রংএর খেলা। কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এই অরণ্য পর্বতে।
মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম অদৃশ্য মহাশিল্পীর আঁকা এই সব অতুলনীয় চিত্রসম্ভার- ভোরের আকাশ, ভোরের বাতাস,সবুজ উপত্যকা- সব মিলিয়ে এ যেন এক
রূপকথার রাজ্য। .........

.........
চ ল বে
Top of Form


=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ গল্প)
-
বিভূতি চক্রবর্তী
(
৪)
...... এস,আই চৌধুরীর ডাকে সম্বিত ফিরে এলো-"স্যার,ঐ যে মহারাণী
ফরেষ্টের শ্রমিকেরা কাজ করছে বাগানে।" ঘড়িতে দেখলাম বিকাল ৪টা বাজে। ট্যাক্সি
ড্রাইভারকে নদীর ধারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে বলে এগিয়ে গেলাম মহারাণী
ফরেষ্ট অফিসের দিকে। ফরেষ্টার তখনও ঘুমুচ্ছিলেন-ওকে না তুলে হেড গার্ডের কাছে জানতে চাইলাম কয়েক ঘন্টার মধ্যে কোন লোক এদিক দিয়ে গেছে কিনা।

হেড গার্ড আমাদের চিনতো। তাড়াতাড়ি কাছে এসে জানালো যে গত ২।৩ ঘণ্টার মধ্যে
কোন অপরিচিত লোকই এ রাস্তা দিয়ে যায় নি। আমি তাকে অনুরোধ করলাম সে
যেন একটু নজর রাখে,আর কোন সন্দেহভাজন লোক দেখলে মহারাণী
খেয়াঘাটে আমার পুলিশ পার্টির কাছে খবর দেয়।
হঠাৎ রাস্তার উপর পায়ের ছাপ দেখলাম, ছাপ গুলি অমরপুরের দিকে গেছে।
পায়ে পায়ে আমি ও চৌধুরী ঐ সব পায়ের ছাপ অনুসরন করতে করতে মাতরংগীপাড়া
পর্যন্ত এগিয়ে এলাম। কিন্তু পায়ের ছাপ আর দেখতে পাওয়া গেল না। এই স্থানটি
থেকে অনেক দূর পর্যন্ত অনেক কিছু দেখা যায়।
সকাল হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন চলাফিরা করতে শুরু
করেছে। আমি আমার বিশ্বস্ত কয়েকজন লোকের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানলাম
কাল রাত্রে কোন লোকই এ গ্রামে আসে নি। নিরাশ হয়ে ভাবছিলাম- কি করা যায়।
হঠাৎ রাস্তায় আমার ট্যাক্সির চাকার দাগের উপর টাটকা ৩।৪ জোড়া পায়ের ছাপ
দেখলাম। ঐগুলি উদয়পুরের দিকে গেছে। এর মধ্যে ৩ জোড়া দাগ জুতার। এই
জুতার দাগ আমি অমরপুরে ও পথে আরো দেখেছি। মাতরংগীতে গাড়ীটা ছেড়ে
পায়ের ছাপ ধরে ধরে আমি ও চৌধুরী এগিয়ে চললাম। ড্রাইভারকে বললাম-
মহারাণী থেকে পার্টিটা নিয়ে কিছুক্ষন পরে আমার সংগে দেখা করতে।...............
..........................................
চ ল বে

-------------------------------------------------------------------
=অপরাধীর পিছনে= 
         (অপরাধমূলক ডিটেকটিভ গল্প)
            -বিভূতি চক্রবর্তী
             (৪)
                 ...... এস,আই চৌধুরীর ডাকে সম্বিত ফিরে এলো-"স্যার,ঐ যে মহারাণী
    ফরেষ্টের শ্রমিকেরা কাজ করছে বাগানে।" ঘড়িতে দেখলাম বিকাল ৪টা বাজে। ট্যাক্সি 
    ড্রাইভারকে নদীর ধারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে বলে এগিয়ে গেলাম মহারাণী 
    ফরেষ্ট অফিসের দিকে। ফরেষ্টার তখনও ঘুমুচ্ছিলেন-ওকে না তুলে হেড গার্ডের               কাছে জানতে চাইলাম কয়েক ঘন্টার মধ্যে কোন লোক এদিক দিয়ে গেছে কিনা।
    
    হেড গার্ড আমাদের চিনতো। তাড়াতাড়ি কাছে এসে জানালো যে গত ২।৩ ঘণ্টার মধ্যে
    কোন অপরিচিত লোকই এ রাস্তা দিয়ে যায় নি। আমি তাকে অনুরোধ করলাম সে
    যেন একটু নজর রাখে,আর কোন সন্দেহভাজন লোক দেখলে মহারাণী  
    খেয়াঘাটে আমার পুলিশ পার্টির কাছে খবর দেয়। 
          হঠাৎ রাস্তার উপর পায়ের ছাপ দেখলাম, ছাপ গুলি অমরপুরের দিকে গেছে।
    পায়ে পায়ে আমি ও চৌধুরী ঐ সব পায়ের ছাপ অনুসরন  করতে করতে মাতরংগীপাড়া 
    পর্যন্ত এগিয়ে এলাম। কিন্তু পায়ের ছাপ আর দেখতে পাওয়া গেল না। এই স্থানটি
    থেকে অনেক দূর পর্যন্ত অনেক কিছু দেখা যায়।
                        সকাল হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন চলাফিরা করতে শুরু
    করেছে। আমি আমার বিশ্বস্ত কয়েকজন লোকের কাছ থেকে খবর নিয়ে জানলাম
    কাল রাত্রে কোন লোকই এ গ্রামে আসে নি। নিরাশ হয়ে ভাবছিলাম- কি করা যায়।
    হঠাৎ রাস্তায় আমার ট্যাক্সির চাকার দাগের উপর টাটকা ৩।৪ জোড়া পায়ের ছাপ
    দেখলাম। ঐগুলি উদয়পুরের দিকে গেছে। এর মধ্যে ৩ জোড়া দাগ জুতার। এই
     জুতার দাগ আমি অমরপুরে ও পথে আরো দেখেছি। মাতরংগীতে গাড়ীটা ছেড়ে
     পায়ের ছাপ ধরে ধরে আমি ও চৌধুরী এগিয়ে চললাম। ড্রাইভারকে বললাম- 
     মহারাণী থেকে পার্টিটা নিয়ে কিছুক্ষন পরে আমার সংগে দেখা করতে।...............
           ..........................................। চ  ল  বে

  -------------------------------------------------------------------

Top of Form


=অপরাধীর পিছনে=
(
অপরাধমূলক ডিটেকটিভ কাহিনী)
-
বিভূতি চক্রবর্তী 
পূর্ব প্রকাশিতের পর
--------------------
(
৫)

কিছুদূর গিয়ে ঐ পায়ের ছাপ আর দেখতে পাওয়া গেল না। বিমূড় হয়ে ভাবছিলাম-কি করবো। এমন সময় উদয়পুরগামী একটা গাড়ী পেয়ে তাতে
উঠে মাইল তিনেক এগিয়ে গেলাম। ঐ পায়ের ছাপ তবুও দেখতে পেলাম
না। আমার দৃঢ় সন্দেহ হলো লোকগুলি নিশ্চয়ই পিছনে রয়ে গেছে। গাড়ী
থেকে নেমে চৌধুরী ও আমি আবার পিছনের দিকে চলতে শুরু করলাম।
কি এক নেশার পাগলামি আমায় পেয়ে বসেছে-অপরাধীদের বের করতেই
হবে। চৌধুরী নিরাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে,মুখে চোখে তার স্পষ্ট 
হতাশার চিহ্ন। এক যায়গায় এসে আমার পাশে একটা ঝোঁপের সামনে দাঁড়ালাম। হঠাৎ ফিস ফিস করে কাদের কথাবার্তার আওয়াজ কানে এলো।
আমরা সতর্ক হয়ে ঝোঁপের ভিতর লুকিয়ে রইলাম। মিনিট খানেকের মধ্যেই
দেখলাম,পাশের বাঁক থেকে চারজন ভদ্রলোক বেরিয়ে এদিকেই আসছে।
অবাক হয়ে গেলাম,এইমাত্র এই রাস্তা দিয়ে আমরা এসেছি। কই,পথে তো
কোন লোক দেখতে পাই নি। আশ্চর্য্য,কোথায় ছিল এরা?কোথা থেকে হঠাৎ
উড়ে এলো আমাদের সামনে? চারজন লোক আস্তে আস্তে আমাদের প্রায়
সামনে চলে এলো। লোকগুলি যথেষ্ঠ শক্তিশালী বলে মনে হলো,আর চমৎকার
পোষাক পরিচ্ছদ-নিখুঁত ভদ্রলোক।
চৌধুরীর পরনে সাদা পোষাক,আমার গায়ে পোষাকের উপর কালো একটা
ওভারকোট,আর মাথায় টুপি। লোকগুলির দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগে আমার টুপিটা
ছুঁড়ে জঙ্গলে ফেলে দিলাম,যাতে আমাকে পুলিশের লোক বলে এরা আমায়
চিনতে না পারে। ওরা আমাদের সামনে আসতেই তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার
আগ্রহ প্রকাশ করলাম-তাদের নামধাম ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলাম।ওরা আমাকে
জানালো-ওদের বাড়ী উদয়পুর,কাল রাত্রে অমরপুরের মহুয়া ফরেষ্ট অফিসের
রমেশের বাড়ীতে ছিল। আজ আবার উদয়পুর ফিরে যাচ্ছে। তারা তাদের নাম
যথাক্রমে মধু,পরেশ,হরেন্দ্র ও সুধীর বলে জানালো। ওদের কথাবার্তা বলার
ঢংটা কেমন যেন সন্দেহজনক-ওদের পোষাকের পারিপাট্যের সংগে ভাষার মোটেই মিল নেই। আমি স্থির বিশ্বাস করলাম,ওরাই আমার ইপ্সিত অপরাধীর দল। 

........
চ ল বে

************************

*
প্রত্যেক অপরাধের ঘটনার পিছনে অপরাধীরা কোন না কোন সূত্র রেখে যায়, যার সাহায্যে তদন্তকারী অফিসার অপরাধ- কাহিনীর সমস্যার সমাধান করেন। আলোচ্য ঘটনাটিতে সূত্র ছিল " পায়ের ছাপ", যার সাহায্যে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়েছিল।