Thursday, July 22, 2021
আগন্তুক ছোট গল্প ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
Wednesday, July 14, 2021
আগন্তুক ছোট গল্প ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আগন্তুক ছোট গল্প
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আরাম কেদারায় বসে
সকালের রোদ পোয়াচ্ছি হটাত কলিং বেলটা বেজে উঠলো l এই সাত সকালে কে এলো? মঞ্জু আমার
কাজের মাসিকে বললাম দোর খুলে দেখত কে এলো l
মেসো এক সন্ন্যাসী
এসেছেন বলছেন উনি আপনার সঙ্গে এক কলেজে পড়তেন l অগত্যা উঠে পড়ি l আমার সঙ্গে কলেজে
পড়তেন তিনি সন্ন্যাসী! কেমন আশ্চর্য লাগলো শুনতে l সদর দরজার কাছে গিয়ে দেখি খুব
চেনা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু নামটা ঠিক মনে করতে পারছিনা l
- ত্রিভুবন , আমি
অর্ণব,অর্ণব চক্রবর্তী তোর সঙ্গে পড়তাম l ভুলে গেলি l তবে এখন আমার নাম স্বামী
চিন্ময়ানন্দ l রামকৃষ্ণ মিশন ,কন্যাকুমারী আমার ঠিকানা l ভেতরে আসতে বলবিনা l
- আমি অপ্রস্তুতে
পড়েযাই l জিভ কেটে বলি ক্ষমা করিস ভাই হঠাত চিনতে পারিনি l আমায় ভুল বুঝিসনা l
ভেতরে আয় l তোকে এখন কেউ দেখলে চিনতে পারবেনা l কারণ তুই অনেকটা বদলে গিয়েছিস ভাই
l
- হ্যাঁ তা হবে l তোরা
সংসার ধর্মে এত ব্যাস্ত থাকিস সবাইকে মনেরাখা কঠিন ব্যাপার । একটা কথা মনে রাখিস
সন্ন্যাসীরা কখনো রাগ , অভিমান, ঈর্ষা এসব করেনা l যে করে সে সন্যাসী নয় l- আমরা
দুজনে আমার বৈঠক খানায় বসলাম l
অনেক দিন আগের কথা ,আমাদের ক্লাসে নিবেদিতা নামে একটি মেয়ে পড়তো l
ও সব মেয়েদের থেকে আলাদা ছিল l দেখতে সত্যি যাকে বলে সুন্দরী কিন্তু খুব অহংকারী মেয়ে ছিল l
কারুর সঙ্গে কথা বলতো না একমাত্র অর্ণব ছাড়া l অর্ণব পড়াশুনোয় ভালো ছিল l
এরমধ্যে গিন্নি চলে
এলেন l আমি ওদের পরিচয় পর্ব টা সেরে নিলাম । দুজনে নমস্কার বিনিময় করলেন l গিন্নি
বললেন আপনি চা খাবেন স্বামীজি l
- হ্যাঁ হলে মন্দ হয়না
l
- এবার জানতে পারিকি
তুই কি করে আমার ঠিকানা জানলি l আমায় ফোন করতে পারতিস আমি নিজে গিয়ে তোকে নিয়ে
আসতাম l
- তবে আর ইংরেজরা
সারপ্রাইস শব্দটা ভারতীয়দের মধ্যে গেঁথে দিয়েছে কেন l হঠাত দেখার মজাই আলাদা l কি
বল? প্রথমেই বলেছি আমাদের ব্যাচ মেটদের নিয়ে যে ডায়রিটা ছাপানো হয়েছে ওতে সকলের
ঠিকানা, ফ্যামিলি ফটো ইত্যাদি সব আছে l
- হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক l
- এবার তোর কথা বল l
তুই কেন সন্ন্যাস নিলি?
এটার উত্তর দিতে গেলে
আমার সম্পূর্ণ ইতিহাস বলতে হয় l তুই জানিস আমি পড়াশুনোয় বরা বর ই ভালো ছিলাম l
স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করি l
সেই সময় আমার সঙ্গে নিবেদিতাও ছিল আমার ক্লাসমেট l মনেপড়ে নিবেদিতা রে !
- বাহ ভুলেগেলি !
- হ্যাঁ হ্যাঁ মনেপড়েছে
। খুব অহংকারী মেয়েটা ছিল ।
- না ও আমার সঙ্গে
সর্বদা ভালো ব্যাবহার করত । শোন , আমরা এক ক্লাসে পড়তাম বেনারসে l আমি হোস্টেলে
থাকতাম ও ওর মাসির বাড়িতে থেকে ক্লাস করতো l এরমধ্যে সত্যি প্রেম বলে এক বস্তুর
ব্যাপারটা উপলব্ধি করি l কিন্তু কেউ প্রকাশ করিনা । দুজনে বেনারসের গঙ্গার বুকে
মণিকর্ণিকা ঘাট, হরিশ্চন্দ্র ঘাট ইত্যাদি নৌকা বিহার করি l আমি বোঝাতাম দেখ এই
মণিকর্ণিকা ঘাটে কোনদিন চিতা নেভেনা । মানুষ জন্মানর পর মৃত্যু নিশ্চিত বলে জানে
কিন্তু সেটা জেনেও নানা অপকর্ম করে । শেষটা তো দেখছ ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে যাবে নশ্বর
দেহ খানি । কি হবে এই অহংকার , টাকা ,পয়সা , প্রতিপত্তির ? কেউ ভাবেনা , সে এই দেহ
ত্যাগ করলে কোন কিছু সঙ্গে নিয়ে যাবেনা তবুও মানুষের স্বভাব বদলায়না ।
- ও বলে তুমি ওই
রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছ । সংসারে যখন জন্ম নিয়েছ সংসার ধর্ম পালন
কর । তোমার সব কথা দর্শন শাস্ত্রের কিছু নিতি বাক্যের মতন ।
- ওটা তোমার ভুল ধারনা
নিবেদিতা । আমিও মানুষ রক্ত মাংসের মানুষ । আমার মধ্যেও প্রেম, প্রীতি ,ভালোবাসা ,
দয়া , মায়া , ক্ষমা সব আছে কিন্তু সেটা ঈশ্বরের স্বত্বাকে উপলব্ধি করে তার প্রতি
ভক্তিভাব রেখে জীবন তরী বাইতে হবে । নিজের কর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান হয়ে এক শৃঙ্খলিত
জীবন শৈলী নিজেকে বেছে নিতে হবে তবেই তুমি জীবনে এগুবে ।
- তুমি থাকো তোমার
শৃঙ্খলিত জীবন শৈলী নিয়ে । তুমি আমাকে কখন বুঝলেনা ।
- আমি বুঝি সব বুঝি ।
- ছাই বোঝ ! আমি তোমার
কাছে আছি অথচ তোমার কোন অনুভূতি নেই । তুমি আমাকে মড়া পোড়ানো দেখানোর জন্য এখানে
আনলে ?
- তুমি আমাকে আঘাত করলে
নিবেদিতা । আমি সত্যি সেরকম কিছু ভেবে তোমাকে আনিনি এখানে । আমি তোমাকে সত্যি
ভালোবাসি কিন্তু ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে বলছি সেটা দৈহিক নয় বরং মনের দিক থেকে
ভালোবাসা । আমিতো তোমাকে আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে বলিনি।ওটা সম্পূর্ণ আমার
চিন্তাধারা ।
- ঠিক আছে এবার চল ।
সন্ধ্যে হয়ে আসছে । তোমার দ্বারা ওই বই পড়া আর লেকচার দেওয়া ছাড়া কিছু হবেনা ।
নিবেদিতা বলে মাস্টার্স ডিগ্রির পর তুমি কি করবে?
- আমি চট করে উত্তর দি
পড়াশুনোর কোন শেষ নেই তাই পি. এচ. ডি অবশ্যই করবো যদি সুযোগ পাইত l তুমি ?
- আমি জানতাম তুমি ওই
উত্তরটা দেবে বলে । না , আর আমার দ্বারা পড়াশুনো বোধহয় হবেনা l আমি বাবা মায়ের
একমাত্র মেয়ে l আমি সন্ন্যাসিনী হয়ে তোমার ছায়া সঙ্গী হতে চাইনা ।
- ও l আমি কিন্তু
তোমাকে আমার ছায়া সঙ্গী হতে কোনদিন বলবোনা । তবে এইজন্য পড়া ছেড়ে দেবে ! এটা একটা
যুক্তি হল ! আমি ওর দিকে তাকাই l
-উপায় নেই আমি মেয়ে l
আমাকে, বাবা মার দিকটাও তো দেখতে হবে ।
- অবশ্যই দেখবে তবে
নিজের কেরিয়ার পড়াশুনো তার জন্য জলাঞ্জলি দিতে পারনা l অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত
মতামত l আসলে আমি চাই তুমি আমার সঙ্গে পি.এচ.ডি. কর ।
- সম্ভব নয় । আমি
বেনারস অবধি এসেছিলাম তোমার মতন এক মেধাবী পুরুষের সান্নিধ্য পাবো বলে । কিন্তু
এখানে এসে দেখলাম তুমি পড়া আর ওই রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়া কিছুই জাননা । পৃথিবীতে এসেছ
তার বৈচিত্র্য অনুভব কর । জীবনকে উপভোগ কর । এটাই সংসার ধর্ম ।
যে বয়েসের যা ধর্ম তাই পালন
কর । ছাত্রাবস্থায় ব্রহ্মচর্য পালন করেছ তার ফল পেয়েছ । এখন ভালো কোন চাকরি তুমি
অনায়াসে পাবে । তবে ঠিক আছে পি.এচ.ডি তোমার স্বপ্ন সেটা পূরণ কর কোন বাধা নেই
কিন্তু তা বলে সন্ন্যাস ! সনাতন ধর্ম কি বলে ১) ব্রহ্মচর্য , ২)গার্হস্থ্য ,
৩)বানপ্রস্থ , ৪) সন্ন্যাস । তাই সংসার ধর্ম পালন না করে এক লাফে সন্ন্যাস নেওয়া
মানে ভগবানের সৃষ্টির বিরুদ্ধে যাওয়া নয়কি ? ওই স্বামীজিরা তোমার মগজ ধোলাই করেছেন
।এবার চল ।
- আমার দীক্ষা হয়নি তবে
স্বামীজি বলেছেন নিজের যোগ্যতার জন্য তোমাকে আরও পড়াশুনো করতে হবে l রামকৃষ্ণর পথ
অনুসরণ করতে চাও তার জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণ কর l নিজেকে বিকশিত কর l জ্ঞানের
শেষ নেই l জ্ঞানী তাকেই বলে যে সংসারের সমস্ত মোহ মায়া ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে
নিজেকে উৎসর্গ করে, জ্ঞান বিতরণে নিজেকে প্রস্তুত করে l জ্ঞান আহরণের যেমন শেষ নেই
জ্ঞান বিতরণের ঠিক সেইরকম শেষ নেই l
- আমি ডক্টরেট এর জন্য
সিলেক্ট হয়েছি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে l আমার ফেলোশিপ মঞ্জুর হয়েগেল l যা
টাকা পেতাম আমার পড়াশুনোর খরচ,খাওয়া দাওয়ার, হোস্টেলের খরচ সব ঐ টাকায় হয়েযেত l
- তোর নিবেদিতার কি হল?
- আমার নিবেদিতা ? ও
কখনই আমার ছিলোনা । ও চেয়েছিল আমাকে পথভ্রষ্ট করে ওর অনুগামী করে ওর গোলাম করে
রাখা । সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়
- সেকিরে ওর সঙ্গে কোন
যোগাযোগ রাখিসনি?
- না আমার লক্ষ অন্য
ছিল l উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেলে ওসব দিকে মন না দেওয়াই ভালো l আমার গুরুজী তাই
বলেন l ঠিক বললাম?
- ঠিক বলেছেন আমার গিন্নি
বলেন। হাতে চায়ের কাপ আর জল খাবারের ডিস নিয়ে গিন্নি আমাদের পরিবেশন করেন l নিন
অনেকক্ষণ কথা বলছেন একটু গলা ভিজিয়ে নিন l
একসঙ্গে সকলে বসে চা
জলখাবার খেলাম l
গিন্নি রান্নাঘরে চলে
যান আজকের রান্না করতে l আজ অর্ণব আমাদের বাড়িতেই মধ্যহ্ন ভোজন করবে ।
অর্ণব বলা শুরু করে l
আমি Ph. D থিসিস জমা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী নি l সব সময় শ্রী রামকৃষ্ণর আশীর্বাদ
পেয়েছি তাই মনে মনে স্থির করি এইবার দীক্ষা নিয়ে নিজের জীবন পরম পুরুষ শ্রী
রামকৃষ্ণ পরমহংসর আশ্রমেই কাটাবো l
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
১৫.০৭.২০২১ সকাল ১০.১৭
শব্দ সংখ্যা ১১৯৪