Thursday, July 22, 2021

আগন্তুক ছোট গল্প ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️

আগন্তুক ছোট গল্প

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️

আরাম কেদারায় বসে সকালের রোদ পোয়াচ্ছি হটাত কলিং বেলটা বেজে উঠলো l এই সাত সকালে কে এলো? মঞ্জু আমার কাজের মাসিকে বললাম দোর খুলে দেখত কে এলো l তোর মাসি বাথরুমে, আমি একটু রোদ পোয়াচ্ছি l অনেকদিন এরকম মিষ্টি রোদ ওঠেনি l ব্যাল কনিতে ফুলের গাছ লাগিয়েছি l বেশ কিছু ফুল ফুটেছে যেমন টগর, বেল ফুল, গোলাপ প্রায় চার রকমের, জবা, নীল অপরাজিতা, রজনীগন্ধা l বাতাসে সুন্দর এক সুবাস l বেশ লাগছে l এই সময় কে এলো?
মেসো এক সন্ন্যাসী এসেছেন বলছেন উনি আপনার সঙ্গে এক কলেজে পড়তেন l অগত্যা উঠে পড়ি l আমার সঙ্গে কলেজে পড়তেন তিনি সন্ন্যাসী! কেমন আশ্চর্য লাগলো শুনতে l সদর দরজার কাছে গিয়ে দেখি খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু নামটা ঠিক মনে করতে পারছিনা l
- ত্রিভুবন , আমি অর্ণব,অর্ণব চক্রবর্তী তোর সঙ্গে পড়তাম l ভুলে গেলি l তবে এখন আমার নাম স্বামী চিন্ময় নন্দ l রামকৃষ্ণ মিশন ,কন্যাকুমারী আমার ঠিকানা l আমাদের ব্যাচ মেট দের নিয়ে যে ডাইরিটা 2012 সালে বেরিয়েছে সেটা আমার অনেক সুবিধে করে দিয়েছে l অনেকেই এরমধ্যে অবসর গ্রহণ করেছে l তুইও 2011 তে রিটায়ার করেছিস দেখলাম l প্রত্যেকের মোবাইল নাম্বার / ল্যান্ড লাইন নাম্বার,ঠিকানা এবং ফটো সহ সমস্ত তথ্য দেওয়া আছে l কাজেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অনেক সুবিধে হবে l তোর কথা অনেক মনে করি ভুবনেশ্বর এলে l তাই তোকে দেখা করতে 2015 সালে এলাম l তোর কেমন লাগছে জানিনা আমার ভীষণ ভালো লাগছে l ভেতরে আসতে বলবিনা l
- আমি অপ্রস্তুতে পড়েযাই l জিভ কেটে বলি ক্ষমা করিস ভাই হঠাত চিনতে পারিনি l আমায় ভুল বুঝিসনা l ভেতরে আয় l ও হ্যাঁ হ্যাঁ অর্ণব! কিন্তু কি করে চিনি বল তোকে কেউ দেখলে চিনতে পারবেনা l কারণ তুই অনেকটা বদলে গিয়েছিস ভাই l আয় আয় l অনেকদিন পর দেখা l তা প্রায় 40 বছর হবে বল !
- হ্যাঁ তা হবে l তোরা সংসার ধর্মে এত ব্যাস্ত থাকিস সবাইকে মনেরাখা কঠিন ব্যাপার । একটা কথা মনে রাখিস সন্ন্যাসীরা কখনো রাগ , অভিমান, ঈর্ষা এসব করেনা l যে করে সে সন্যাসী নয় l- আমরা দুজনে আমার বৈঠক খানায় বসলাম l কলেজ জীবনের কথা সব মনে পড়ে গেল
অনেক দিন আগের কথা মনে পড়ে গেল । আমাদের ক্লাসে নিবেদিতা পড়তো l ও সব মেয়েদের থেকে আলাদা ছিল l দেখতে সত্যি যাকে বলে সুন্দরী তাই কিন্তু তিরিক্ষি মেজাজ l খুব অহংকারী মেয়ে ছিল l কারুর সঙ্গে কথা বলতো না একমাত্র অর্ণব ছাড়া l অর্ণব পড়াশুনোয় ভালো ছিল l বিজ্ঞানের ছাত্র আমরা সকলেই তাই, প্র্যাকটিকাল ক্লাসে গ্রুপের সকলে এক হতাম l কোন এক্সপেরিমেন্ট ল্যাব এসিস্টেন্ট বোঝানোর সময় অর্ণব মন দিয়ে সেটা বুঝত l আমার চোখ নিবেদিতার ওপর, ও কি করছে সেটা নিরীক্ষণ করা l ওকে দেখতাম অর্ণব কে লক্ষ করতো l আর নিজের এক্সপেরিমেন্টের দিকেও নজর রাখতো l মেয়েটাকে বোঝা মুশকিল l
এইসব গোপন কথা অর্ণব কে বলা যায়না l ও চটে যেতে পারে l
এরমধ্যে গিন্নি চলে এলেন l আমি পরিচয় করিয়ে দিলাম...অর্ণব আমার সঙ্গে এক কলেজে পড়তো আবার আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে অর্ণব কে বলি,আমার হোম মেকার আমার জীবন সঙ্গিনী, আমার সুখ দুঃখের সাথী l l দুজনে নমস্কার বিনিময় করলেন l গিন্নি বললেন আপনি চা খাবেন স্বামীজি l
- হ্যাঁ হলে মন্দ হয়না l
- এবার জানতে পারিকি তুই কি করে আমার ঠিকানা জানলি l আমায় ফোন করতে পারতিস আমি নিজে গিয়ে তোকে নিয়ে আসতাম l
- তবে আর ইংরেজরা সারপ্রাইস শব্দটা ভারতীয়দের মধ্যে গেঁথে দিয়েছে কেন l হঠাত দেখার মজাই আলাদা l কি বল? প্রথমেই বলেছি আমাদের ব্যাচ মেটদের নিয়ে যে ডায়রিটা ছাপানো হয়েছে ওতে সকলের ঠিকানা, ফ্যামিলি ফটো ইত্যাদি সব আছে l
- হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক l
- এবার তোর কথা বল l তুই কেন সন্ন্যাস নিলি?
এটার উত্তর দিতে গেলে আমার সম্পূর্ণ ইতিহাস বলতে হয় l তুই জানিস আমি পড়াশুনোয় বরা বর ই ভালো ছিলাম l স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করি l সেই সময় আমার সঙ্গে নিবেদিতাও ছিল আমার ক্লাসমেট l মনেপড়ে নিবেদিতা রে !
-আমি না জানার মতন ভান করি। কোন নিবেদিতা বলত ?
- বাহ ভুলেগেলি ! না বৌদির সামনে বলতে লজ্যা পাচ্ছিস !
- হ্যাঁ হ্যাঁ মনেপড়েছে । খুব অহংকারী মেয়েটা ছিল । রুপের আর পড়ায় ভালো বলে ।
- না ও আমার সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যাবহার করত । শোন , আমরা এক ক্লাসে পড়তাম বেনারসে l আমি হোস্টেলে থাকতাম ও ওর মাসির বাড়িতে থেকে ক্লাস করতো l এরমধ্যে সত্যি প্রেম বলে এক বস্তুর ব্যাপারটা উপলব্ধি করি l কিন্তু কেউ প্রকাশ করিনা । দুজনে বেনারসের গঙ্গার বুকে মণিকর্ণিকা ঘাট, হরিশ্চন্দ্র ঘাট ইত্যাদি নৌকা বিহার করি l আমি বোঝাতাম দেখ এই মণিকর্ণিকা ঘাটে কোনদিন চিতা নেভেনা । মানুষ জন্মানর পর মৃত্যু নিশ্চিত বলে জানে কিন্তু সেটা জেনেও নানা অপকর্ম করে । শেষটা তো দেখছ ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে যাবে নশ্বর দেহ খানি । কি হবে এই অহংকার , টাকা ,পয়সা , প্রতিপত্তির ? কেউ ভাবেনা , সে এই দেহ ত্যাগ করলে কোন কিছু সঙ্গে নিয়ে যাবেনা তবুও মানুষের স্বভাব বদলায়না ।
- ও বলে তুমি ওই রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছ । সংসারে যখন জন্ম নিয়েছ সংসার ধর্ম পালন কর । তোমার সব কথা দর্শন শাস্ত্রের কিছু নিতি বাক্যের মতন ।
- ওটা তোমার ভুল ধারনা নিবেদিতা । আমিও মানুষ রক্ত মাংসের মানুষ । আমার মধ্যেও প্রেম, প্রীতি ,ভালোবাসা , দয়া , মায়া , ক্ষমা সব আছে কিন্তু সেটা ঈশ্বরের স্বত্বাকে উপলব্ধি করে তার প্রতি ভক্তিভাব রেখে জীবন তরী বাইতে হবে । নিজের কর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান হয়ে এক শৃঙ্খলিত জীবন শৈলী নিজেকে বেছে নিতে হবে তবেই তুমি জীবনে এগুবে ।
- তুমি থাকো তোমার শৃঙ্খলিত জীবন শৈলী নিয়ে । আমাকে আমার মত থাকতে দাও । তুমি বোধহয় হৃদয়ঙ্গম করতে পারছনা আমি কি বলছি এবং কি ভাবছি !
- আমি বুঝি সব বুঝি ।
- ছাই বোঝ ! তুমি একটা নপুংসক সন্ন্যাসী । আমি তোমার কাছে আছি অথচ তোমার কোন অনুভূতি নেই । তুমি আমাকে মড়া পোড়ানো দেখানোর জন্য এখানে আনলে ?
- আমি আমতা আমতা করে বলি এটা তোমার আমার পুরুষত্বের প্রতি অপমান। তুমি আমাকে আঘাত করলে নিবেদিতা । আমি সত্যি সেরকম কিছু ভেবে তোমাকে আনিনি এখানে । আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি কিন্তু ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে বলছি সেটা দৈহিক নয় বরং মনের দিক থেকে ভালোবাসা । আমিতো তোমাকে আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে বলিনি।ওটা সম্পূর্ণ আমার চিন্তাধারা ।
- ঠিক আছে এবার চল । সন্ধ্যে হয়ে আসছে । তোমার দ্বারা ওই বই পড়া আর লেকচার দেওয়া ছাড়া কিছু হবেনা । নিবেদিতা বলে মাস্টার্স ডিগ্রির পর তুমি কি করবে?
- আমি চট করে উত্তর দি পড়াশুনোর কোন শেষ নেই তাই পি. এচ. ডি অবশ্যই করবো যদি সুযোগ পাইত l তুমি ?
- আমি জানতাম তুমি ওই উত্তরটা দেবে বলে । না , আর আমার দ্বারা পড়াশুনো বোধহয় হবেনা l আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে l আমার কোন ভাই বোন নেই l তাই বাবা আর দূরে ছাড়বেন না l বাবা রিটায়ার করেছেন । তাই আমাকে কাছে থাকতে বলেন । আমি বাবার একসঙ্গে ছেলে এবং মেয়ে দুই । তাছাড়া আমাকে আমার পছন্দ মতন জীবন সঙ্গী বাছতে হবে । আমি সন্ন্যাসিনী হয়ে তোমার ছায়া সঙ্গী হতে চাইনা ।
- ও l আমি কিন্তু তোমাকে আমার ছায়া সঙ্গী হতে কোনদিন বলবোনা । তবে এইজন্য পড়া ছেড়ে দেবে ! এটা একটা যুক্তি হল ! আমি ওর দিকে তাকাই l
-উপায় নেই আমি মেয়ে l তোমার মতন ছেলে হলে হয়তো সিদ্ধান্ত বদলাতাম l আমাকে, বাবা মার দিকটাও তো দেখতে হবে নিজের দিকটাও দেখতে হবে l
- অবশ্যই দেখবে তবে নিজের কেরিয়ার পড়াশুনো তার জন্য জলাঞ্জলি দিতে পারনা l অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত l আসলে আমি চাই তুমি আমার সঙ্গে পি.এচ.ডি. কর ।
- সম্ভব নয় । আমি বেনারস অবধি এসেছিলাম তোমার মতন এক মেধাবী পুরুষের সান্নিধ্য পাবো বলে । কিন্তু এখানে এসে দেখলাম তুমি পড়া আর ওই রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়া কিছুই জাননা । পৃথিবীতে এসেছ তার বৈচিত্র্য অনুভব কর । জীবনকে উপভোগ কর । এটাই সংসার ধর্ম ।
যে বয়েসের যা ধর্ম তাই পালন কর । ছাত্রাবস্থায় ব্রহ্মচর্য পালন করেছ তার ফল পেয়েছ । এখন ভালো কোন চাকরি তুমি অনায়াসে পাবে । তবে ঠিক আছে পি.এচ.ডি তোমার স্বপ্ন সেটা পূরণ কর কোন বাধা নেই কিন্তু তা বলে সন্ন্যাস ! সনাতন ধর্ম কি বলে ১) ব্রহ্মচর্য , ২)গার্হস্থ্য , ৩)বানপ্রস্থ , ৪) সন্ন্যাস । তাই সংসার ধর্ম পালন না করে এক লাফে সন্ন্যাস নেওয়া মানে ভগবানের সৃষ্টির বিরুদ্ধে যাওয়া নয়কি ?
-দেখ তোমার যুক্তি আলাদা আমার যুক্তি আলাদা । তোমার নামের সার্থকতা তুমি পূরণ করতে পারলেনা । এ.পি.জে আব্দুল কালাম তিনি চিরকুমার । পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানী । ভেবে দেখ তাঁর কথা । তিনি কেন এতো পড়াশুনো করে মিসাইল ম্যান হয়েছিলেন ? তিনিতো অত্যন্ত গরিবের ঘরের এক মেধাবী ছাত্র ছিলেন ।
-চল অনেক যুক্তি তর্ক হল । ওই স্বামীজিরা তোমার মগজ ধোলাই করেছে । না আমি আমার নামের সার্থকতা করতে চাইনা কারন আমি স্বামী বিবেকানন্দর ভগিনী নিবেদিতা হতে চাইনা ।বললাম তো মাকে আমার মত থাকতে দাও । আমাকে আমার রাস্তা দেখতে হবে ।
এই ঘটনার পরথেকে নিবেদিতা আর আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখেনি । আমিও চাইনি রাখতে ।
আমি তখন যুবক এবং রামকৃষ্ণ মিশনে যাতায়াত আছে l আমার দীক্ষা হয়নি তবে স্বামীজি বলেছেন নিজের যোগ্যতার জন্য তোমাকে আরও পড়াশুনো করতে হবে l উচ্চশিক্ষা যেকোনো ধর্ম গুরুর পক্ষে অনেক প্রয়োজন l রামকৃষ্ণর পথ অনুসরণ করতে চাও তার জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণ কর l নিজেকে বিকশিত কর l জ্ঞানের শেষ নেই l জ্ঞানী তাকেই বলে যে সংসারের সমস্ত মোহ মায়া ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে নিজেকে উৎসর্গ করে, জ্ঞান বিতরণে নিজেকে প্রস্তুত করে l জ্ঞান আহরণের যেমন শেষ নেই জ্ঞান বিতরণের ঠিক সেইরকম শেষ নেই l
- আমি বলি সত্যি তুই নিবেদিতার মতন মেয়েকে প্রত্যাখান করতে পেরেছিস ? তুই সত্যি ব্রহ্মচারী । তোদের কেমিস্ট্রি জমলোনা । কিরে তুই ? আমার খুব খারাপ লাগছে মেয়েটার জন্য । ও সত্যি তোকে খুব ভালোবাসতো । আমি সেই প্র্যাক্টিকাল ক্লাসেই বুঝেছিলাম । ওর নজর তোর ওপর থাকত । কারুর সঙ্গে কথা বলেনা । খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে তোর কথাগুলো l সত্যি তুই একদম আলাদা হয়ে গিয়েছিস l পদ্মপাতায় জল ঢল ঢল করার মতন সংসারে থেকেও তুই সংসারে নেই l এটা কম স্বার্থ ত্যাগ নয় l
- ঠিক স্বার্থত্যাগ কিনা জানিনা 1989 সালে আমার বাবা ইহ ধাম ত্যাগ করেন ঠিক তার এক বছর পর আমার মা l আমার তলায় এক বোন l সে তখন স্নাতক ডিগ্রি সম্পূর্ণ করে বি. এড করছিলো l আমি তাকে ফিন্যান্স করতে থাকি কারণ আমি ডক্টরেট এর জন্য সিলেক্ট হয়েছি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে l একটা প্রাইভেট কলেজে কিছুদিন কেমিস্ট্রি পড়াতাম সেখান থেকে যা উপার্জন হত তার অর্ধেক বোনকে মানি অর্ডার করে দিতাম l বোন পরে স্কুলের শিক্ষিকার চাকরি পায় আমাদের গ্রামের স্কুলে বলেশ্বর জেলায় l ব্যাস আমার আর বন্ধন রইলোনা l আমার ফেলোশিপ মঞ্জুর হয়েগেল l যা টাকা পেতাম আমার পড়াশুনোর খরচ,খাওয়া দাওয়ার, হোস্টেলের খরচ সব ঐ টাকায় হয়েযেত l
- তোর নিবেদিতার কি হল?
- আমার নিবেদিতা ? ও কখনই আমার ছিলোনা । ও চেয়েছিল আমাকে পথভ্রষ্ট করে ওর অনুগামী করে ওর গোলাম করে রাখা । সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয় । আমি যে সংস্থায় নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চাই তাতে ওর মতন মেয়ের কোন জায়গা নেই । ওর ব্যাপার আমি জানিনা কারন ও মাস্টার্স ডিগ্রি কমপ্লিট করে ওর বাবা মার কাছে ফিরে যাবে বলে বলছিল l হয়তো চলে গিয়েছিলো আমি খবর রাখিনি l
- সেকিরে ওর সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখিসনি?
- না আমার লক্ষ অন্য ছিল l উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেলে ওসব দিকে মন না দেওয়াই ভালো l আমার গুরুজী তাই বলেন l ঠিক বললাম?
- একদম ঠিক বলেছেন স্বামীজি l আমার বৌ ফোড়ন কাটল হাতে চায়ের কাপ আর জল খাবারের ডিস নিয়ে l নিন অনেকক্ষণ কথা বলছেন একটু গলা ভিজিয়ে নিন l
একসঙ্গে সকলে বসে চা জলখাবার খেলাম l
আমার স্ত্রী, অর্ণব কে আজকে আমাদের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য অনুরোধ করে l বলে যৎসামান্য রান্না করবো l আপনি সন্ন্যাসী মানুষ আপনাকে খাওয়াতে পারলে আমার নিজের আত্মতৃপ্তি হবে l আমি নিবেদিতা স্কুলে পড়তাম l স্কুলের পর স্কটিশে পড়তাম l আমাদের বাড়ি বাগবাজারে বলরাম মন্দিরের কাছে l আমার সারদা মায়ের আশ্রমে যাতায়াত ছিল l
অর্ণব বলল বাঃ তাহলে তো আপনি আমার কথাগুলো ভালো বুঝবেন l তবে খাওয়ার ব্যাপারটা অর্ণব অনিচ্ছাসত্ত্বে সম্মতি দেয় l
গিন্নি রান্নাঘরে চলে যান আজকের রান্না করতে l
অর্ণব বলা শুরু করে l আমি Ph. D থিসিস জমা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী নি l আমি কিন্তু থেমে যাইনি l এক কর্পোরেট সংস্থায় সাইন্টিস্টের চাকরি করি l তিন বছর করার পর কোম্পানি আমাকে আমেরিকায় পাঠায় l ভালো মাস মাহিনা পেয়ে মনস্থির করি এম. বি. এ করার l টাকা যা রোজগার করেছি এই তিন বছরে তাতে অনায়াসেই আমার এম. বি. এ পড়ার খরচ চলে যাবে l আমি ঠিক করলাম এবার চাকরি ছেড়ে এম বি এ করবো l যদি কোন ভালো ইন্সটিটিউট এ সুযোগ পাই l
Stanford University, PaloAlto,California র জন্য প্রস্তুতি আরম্ভ করি । পরীক্ষা দি । পরে ওখান থেকে intimation পাই l বিশ্বের এক শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় l ওখান থেকে MBA করার খরচ আছে কিন্তু আমি স্কলারশিপের জন্য স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি তে আবেদন করি l $40,000 বছরে এবং দুবছরে $80,000. আমার সৌভাগ্য আমি ফেলোশিপ পেয়ে যাই l আমার ভাগ্য সর্বদা বিদ্যা অর্জনের জন্য পথ সুগম করে দিয়েছে l সব সময় আমি পরম পুরুষ প্রভু শ্রী রামকৃষ্ণর আশীর্বাদ পেয়েছি তাই মনে মনে স্থির করি এই এম. বি. এ. সম্পূর্ণ করে আশ্রমের কাজে মন নিবেশ করবো l
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আশানুরূপ ফল প্রদর্শন করতে পারিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে l প্রথম বছর স্কলারশিপ পাই কিন্তু দ্বিতীয় বছর পাইনা l রেজাল্ট ভালো হলনা l কোনমতে MBA সম্পূর্ণ করে ভারতবর্ষে ফিরে আসি l
চলবে
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
চিত্র ঋণ :-গুগুল

2

Wednesday, July 14, 2021

আগন্তুক ছোট গল্প ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

 

  আগন্তুক ছোট গল্প

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী 

 

আরাম কেদারায় বসে সকালের রোদ পোয়াচ্ছি হটাত কলিং বেলটা বেজে উঠলো l এই সাত সকালে কে এলো? মঞ্জু আমার কাজের মাসিকে বললাম দোর খুলে দেখত কে এলো l

 

মেসো এক সন্ন্যাসী এসেছেন বলছেন উনি আপনার সঙ্গে এক কলেজে পড়তেন l অগত্যা উঠে পড়ি l আমার সঙ্গে কলেজে পড়তেন তিনি সন্ন্যাসী! কেমন আশ্চর্য লাগলো শুনতে l সদর দরজার কাছে গিয়ে দেখি খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু নামটা ঠিক মনে করতে পারছিনা l

 

- ত্রিভুবন , আমি অর্ণব,অর্ণব চক্রবর্তী তোর সঙ্গে পড়তাম l ভুলে গেলি l তবে এখন আমার নাম স্বামী চিন্ময়ানন্দ l রামকৃষ্ণ মিশন ,কন্যাকুমারী আমার ঠিকানা l ভেতরে আসতে বলবিনা l

 

- আমি অপ্রস্তুতে পড়েযাই l জিভ কেটে বলি ক্ষমা করিস ভাই হঠাত চিনতে পারিনি l আমায় ভুল বুঝিসনা l ভেতরে আয় l তোকে এখন কেউ দেখলে চিনতে পারবেনা l কারণ তুই অনেকটা বদলে গিয়েছিস ভাই l

 

- হ্যাঁ তা হবে l তোরা সংসার ধর্মে এত ব্যাস্ত থাকিস সবাইকে মনেরাখা কঠিন ব্যাপার । একটা কথা মনে রাখিস সন্ন্যাসীরা কখনো রাগ , অভিমান, ঈর্ষা এসব করেনা l যে করে সে সন্যাসী নয় l- আমরা দুজনে আমার বৈঠক খানায় বসলাম l

 অনেক দিন আগের কথা ,আমাদের ক্লাসে নিবেদিতা নামে একটি মেয়ে পড়তো l ও সব মেয়েদের থেকে আলাদা  ছিল l দেখতে সত্যি যাকে বলে সুন্দরী কিন্তু খুব অহংকারী মেয়ে ছিল l কারুর সঙ্গে কথা বলতো না একমাত্র অর্ণব ছাড়া l অর্ণব পড়াশুনোয় ভালো ছিল l

 

এরমধ্যে গিন্নি চলে এলেন l আমি ওদের পরিচয় পর্ব টা সেরে নিলাম । দুজনে নমস্কার বিনিময় করলেন l গিন্নি বললেন আপনি চা খাবেন স্বামীজি l

- হ্যাঁ হলে মন্দ হয়না l

- এবার জানতে পারিকি তুই কি করে আমার ঠিকানা জানলি l আমায় ফোন করতে পারতিস আমি নিজে গিয়ে তোকে নিয়ে আসতাম l

- তবে আর ইংরেজরা সারপ্রাইস শব্দটা ভারতীয়দের মধ্যে গেঁথে দিয়েছে কেন l হঠাত দেখার মজাই আলাদা l কি বল? প্রথমেই বলেছি আমাদের ব্যাচ মেটদের নিয়ে যে ডায়রিটা ছাপানো হয়েছে ওতে সকলের ঠিকানা, ফ্যামিলি ফটো ইত্যাদি সব আছে l

- হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক l

- এবার তোর কথা বল l তুই কেন সন্ন্যাস নিলি?

এটার উত্তর দিতে গেলে আমার সম্পূর্ণ ইতিহাস বলতে হয় l তুই জানিস আমি পড়াশুনোয় বরা বর ই ভালো ছিলাম l স্নাতক ডিগ্রি পাওয়ার পর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করি l সেই সময় আমার সঙ্গে নিবেদিতাও ছিল আমার ক্লাসমেট l মনেপড়ে নিবেদিতা রে !

 - বাহ ভুলেগেলি !

- হ্যাঁ হ্যাঁ মনেপড়েছে । খুব অহংকারী মেয়েটা ছিল ।

- না ও আমার সঙ্গে সর্বদা ভালো ব্যাবহার করত । শোন , আমরা এক ক্লাসে পড়তাম বেনারসে l আমি হোস্টেলে থাকতাম ও ওর মাসির বাড়িতে থেকে ক্লাস করতো l এরমধ্যে সত্যি প্রেম বলে এক বস্তুর ব্যাপারটা উপলব্ধি করি l কিন্তু কেউ প্রকাশ করিনা । দুজনে বেনারসের গঙ্গার বুকে মণিকর্ণিকা ঘাট, হরিশ্চন্দ্র ঘাট ইত্যাদি নৌকা বিহার করি l আমি বোঝাতাম দেখ এই মণিকর্ণিকা ঘাটে কোনদিন চিতা নেভেনা । মানুষ জন্মানর পর মৃত্যু নিশ্চিত বলে জানে কিন্তু সেটা জেনেও নানা অপকর্ম করে । শেষটা তো দেখছ ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে যাবে নশ্বর দেহ খানি । কি হবে এই অহংকার , টাকা ,পয়সা , প্রতিপত্তির ? কেউ ভাবেনা , সে এই দেহ ত্যাগ করলে কোন কিছু সঙ্গে নিয়ে যাবেনা তবুও মানুষের স্বভাব বদলায়না ।

- ও বলে তুমি ওই রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছ । সংসারে যখন জন্ম নিয়েছ সংসার ধর্ম পালন কর । তোমার সব কথা দর্শন শাস্ত্রের কিছু নিতি বাক্যের মতন ।

- ওটা তোমার ভুল ধারনা নিবেদিতা । আমিও মানুষ রক্ত মাংসের মানুষ । আমার মধ্যেও প্রেম, প্রীতি ,ভালোবাসা , দয়া , মায়া , ক্ষমা সব আছে কিন্তু সেটা ঈশ্বরের স্বত্বাকে উপলব্ধি করে তার প্রতি ভক্তিভাব রেখে জীবন তরী বাইতে হবে । নিজের কর্মের প্রতি নিষ্ঠাবান হয়ে এক শৃঙ্খলিত জীবন শৈলী নিজেকে বেছে নিতে হবে তবেই তুমি জীবনে এগুবে ।

 

- তুমি থাকো তোমার শৃঙ্খলিত জীবন শৈলী নিয়ে । তুমি আমাকে কখন বুঝলেনা ।

- আমি বুঝি সব বুঝি ।

- ছাই বোঝ ! আমি তোমার কাছে আছি অথচ তোমার কোন অনুভূতি নেই । তুমি আমাকে মড়া পোড়ানো দেখানোর জন্য এখানে আনলে ?

- তুমি আমাকে আঘাত করলে নিবেদিতা । আমি সত্যি সেরকম কিছু ভেবে তোমাকে আনিনি এখানে । আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি কিন্তু ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে বলছি সেটা দৈহিক নয় বরং মনের দিক থেকে ভালোবাসা । আমিতো তোমাকে আমার আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে বলিনি।ওটা সম্পূর্ণ আমার চিন্তাধারা ।

- ঠিক আছে এবার চল । সন্ধ্যে হয়ে আসছে । তোমার দ্বারা ওই বই পড়া আর লেকচার দেওয়া ছাড়া কিছু হবেনা । নিবেদিতা বলে মাস্টার্স ডিগ্রির পর তুমি কি করবে?

- আমি চট করে উত্তর দি পড়াশুনোর কোন শেষ নেই তাই পি. এচ. ডি অবশ্যই করবো যদি সুযোগ পাইত l তুমি ?

- আমি জানতাম তুমি ওই উত্তরটা দেবে বলে । না , আর আমার দ্বারা পড়াশুনো বোধহয় হবেনা l আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে l আমি সন্ন্যাসিনী হয়ে তোমার ছায়া সঙ্গী হতে চাইনা ।

- ও l আমি কিন্তু তোমাকে আমার ছায়া সঙ্গী হতে কোনদিন বলবোনা । তবে এইজন্য পড়া ছেড়ে দেবে ! এটা একটা যুক্তি হল ! আমি ওর দিকে তাকাই l

-উপায় নেই আমি মেয়ে l আমাকে, বাবা মার দিকটাও তো দেখতে হবে ।

- অবশ্যই দেখবে তবে নিজের কেরিয়ার পড়াশুনো তার জন্য জলাঞ্জলি দিতে পারনা l অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত l আসলে আমি চাই তুমি আমার সঙ্গে পি.এচ.ডি. কর ।

- সম্ভব নয় । আমি বেনারস অবধি এসেছিলাম তোমার মতন এক মেধাবী পুরুষের সান্নিধ্য পাবো বলে । কিন্তু এখানে এসে দেখলাম তুমি পড়া আর ওই রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়া কিছুই জাননা । পৃথিবীতে এসেছ তার বৈচিত্র্য অনুভব কর । জীবনকে উপভোগ কর । এটাই সংসার ধর্ম ।

যে বয়েসের যা ধর্ম তাই পালন কর । ছাত্রাবস্থায় ব্রহ্মচর্য পালন করেছ তার ফল পেয়েছ । এখন ভালো কোন চাকরি তুমি অনায়াসে পাবে । তবে ঠিক আছে পি.এচ.ডি তোমার স্বপ্ন সেটা পূরণ কর কোন বাধা নেই কিন্তু তা বলে সন্ন্যাস ! সনাতন ধর্ম কি বলে ১) ব্রহ্মচর্য , ২)গার্হস্থ্য , ৩)বানপ্রস্থ , ৪) সন্ন্যাস । তাই সংসার ধর্ম পালন না করে এক লাফে সন্ন্যাস নেওয়া মানে ভগবানের সৃষ্টির বিরুদ্ধে যাওয়া নয়কি ? ওই স্বামীজিরা তোমার মগজ ধোলাই করেছেন ।এবার চল ।

 

- আমার দীক্ষা হয়নি তবে স্বামীজি বলেছেন নিজের যোগ্যতার জন্য তোমাকে আরও পড়াশুনো করতে হবে l রামকৃষ্ণর পথ অনুসরণ করতে চাও তার জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণ কর l নিজেকে বিকশিত কর l জ্ঞানের শেষ নেই l জ্ঞানী তাকেই বলে যে সংসারের সমস্ত মোহ মায়া ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে নিজেকে উৎসর্গ করে, জ্ঞান বিতরণে নিজেকে প্রস্তুত করে l জ্ঞান আহরণের যেমন শেষ নেই জ্ঞান বিতরণের ঠিক সেইরকম শেষ নেই l

- আমি ডক্টরেট এর জন্য সিলেক্ট হয়েছি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে l আমার ফেলোশিপ মঞ্জুর হয়েগেল l যা টাকা পেতাম আমার পড়াশুনোর খরচ,খাওয়া দাওয়ার, হোস্টেলের খরচ সব ঐ টাকায় হয়েযেত l

- তোর নিবেদিতার কি হল?

- আমার নিবেদিতা ? ও কখনই আমার ছিলোনা । ও চেয়েছিল আমাকে পথভ্রষ্ট করে ওর অনুগামী করে ওর গোলাম করে রাখা । সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়

- সেকিরে ওর সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখিসনি?

- না আমার লক্ষ অন্য ছিল l উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেলে ওসব দিকে মন না দেওয়াই ভালো l আমার গুরুজী তাই বলেন l ঠিক বললাম?

- ঠিক বলেছেন আমার গিন্নি বলেন। হাতে চায়ের কাপ আর জল খাবারের ডিস নিয়ে গিন্নি আমাদের পরিবেশন করেন l নিন অনেকক্ষণ কথা বলছেন একটু গলা ভিজিয়ে নিন l

একসঙ্গে সকলে বসে চা জলখাবার খেলাম l

গিন্নি রান্নাঘরে চলে যান আজকের রান্না করতে l আজ অর্ণব আমাদের বাড়িতেই মধ্যহ্ন ভোজন করবে ।

অর্ণব বলা শুরু করে l আমি Ph. D থিসিস জমা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী নি l সব সময় শ্রী রামকৃষ্ণর আশীর্বাদ পেয়েছি তাই মনে মনে স্থির করি এইবার দীক্ষা নিয়ে নিজের জীবন পরম পুরুষ শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসর আশ্রমেই কাটাবো l

 

   ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

  ১৫.০৭.২০২১ সকাল ১০.১৭ 

  শব্দ সংখ্যা ১১৯৪ 





 

Thursday, May 13, 2021

##মুখাগ্নি##(প্রথম পর্ব) ©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী


 **এই গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। জীবিত কিম্বা মৃত কোন ব্যক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকলে সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। মনোরঞ্জনের জন্য গল্পটি লেখা হয়েছে কিছু বার্তা প্রদান করে সেটাই এই গল্পের মূল উদ্দেশ্য **

###সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প##

##মুখাগ্নি##

©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

প্রথম পর্ব
এ.সি.পি. চক্রবর্তী তাঁর পাঁচ জনের টিমকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন চার জন শার্প সুটার খলিল, আসলাম, রোহিত ও জনকে ধরতে l খবর একদম পাকা ওরা সমাজ সেবক রহমন চাচা কে হত্যা করে গা ঢাকা দিয়েছে বনগাঁ র আসে পাশে কোন গ্রামে l পুলিশ তাদের খুঁজবে জানে তাই সঙ্গে অটোমেটিক ডিট্যাচেবেল ম্যাগাজিন যাতে 13 রাউন্ড গুলি থাকে l আত্মরক্ষার জন্য যথেষ্ট l দরকার হলে পুলিশ কে গুলি করতেও ছাড়বেনা এরা l বেগতিক দেখলে বাংলাদেশ এ বর্ডার পেরিয়ে ঢুকে পড়বে l সেইরকম ই নির্দেশ আসলামের চাচার l আসলাম ওদের দল পরিচালনার ভার নিয়েছে l
এই দলে রোহিতের মতন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছেলে কি করে ঢুকল?
রোহিতের ব্যাপারে বলা প্রয়োজন l রোহিতের বাবা রঞ্জিত ব্যানার্জী এক নামি কোম্পানির জেনেরাল ম্যানেজার, মা সুনয়না ব্যানার্জী এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রিন্সিপাল l ওনাদের মেয়ে রিঙ্কি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী l
ব্যাপারটা এই রকম রোহিত এক প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে বি টেক পড়ছিল l ছেলেটা মার আদুরে ছেলে l সেটাই ওর মাথা খায় l কম বয়েসে সেকেন্ড ইয়ারে পড়া এক সহপাঠিনীর প্রেমে পড়ে l মেয়েটি মুসলিম নাম তসলিমা বানু l দেখতে খুব সুন্দর মানে তাক লাগানোর মতন চেহারা l কিন্তু ও রোহিতকে পাত্তা দেয়না l রোহিত ও ছাড়ার পাত্র নয় l ও তসলিমার চার্চেরা ভাই আসলামের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে l আসলাম খিদিরপুরে এক জেরক্সের দোকান চালাত l নামেই জেরক্সের দোকান আসলে ড্রাগ, ব্রাউন সুগার, আফিম,গাঁজা এই সব চোরা কারবারের সঙ্গে জড়িত l চাচা স্মাগলিং করতেন কখনো সোনা তো কখনো হীরে, মারণাস্ত্র যেমন রিভলভার, কার্তুজ, হাওলার কারবার, বিদেশী টাকা যেমন $,€ র কারবার l খুব কম দিনে চাচা বিরাট সম্পত্তির মালিক হয়ে জান l আসলামের কাছে যাওয়া আসা করতে করতে তসলিমার সঙ্গে কখনো কখনো দেখা সাক্ষাৎ হোতো l তসলিমা মেয়েটা কিন্তু সাচ্চা ছিল ও রোহিতকে পাত্তা না দিলেও ওর খারাপ চাইতো না l রোহিতকে বারে বারে বলতো ওর ভাইয়ের সঙ্গে যেন না মেশে l কারণ গোপন রাখতো কিন্তু মনে প্রাণে চাইতোনা রোহিত ঐ ফাঁদে পা দিক l
একদিন কলেজে রোহিতকে ডেকে বলে তুমি আসলামের সঙ্গে মিশবেনা আমাকে কথা দাও l
রোহিত সর্ত রাখে, তাহলে তুমি আমার বান্ধবী হবে কথা দাও l আমি আর ওর সঙ্গে মিশবোনা তাহলে l
- ঠিক আছে
রোহিত যেন হাতে স্বর্গ পায় l কিন্তু ততদিনে ও ড্রাগের নেশা শুরু করে দিয়েছে l আসলামের কাছে তার হাতে খড়ি হয় l মায়ের কাছ থেকে কলেজের নানা বাহানা করে যে টাকা আনে সেই টাকায় ড্রাগ নেয় l
এই কথা মা বাবা কেউ জানতেন না l একদিন ওর বোন রিঙ্কি ওকে ওর রুমে ড্রাগ নিতে দেখে l তখন রিঙ্কি সি.বি.এস.সি পরীক্ষা দেবে l রিঙ্কি মাকে ঐ কথাটি বলে দেয় l রোহিতের মা রোহিতকে ড্রাগ নিতে দেখে রাগ সামলাতে পারেন না l তিনি রেগে মাথা ঠিক রাখতে না পেরে ছেলেকে ঘর থেকে বার করে দেন l
রোহিত অত্যন্ত জেদি ছেলে ছিল সে সেই যে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আর ফেরেনি বাড়ি l
রোহিত সোজা আসলামের কাছে গেল l আসলাম ওকে ওদের ডেরায় যেখানে রিভলভার চালানো সেখান হয় সেই নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে যায় l রোহিত এমন ই নেশাসক্ত ছিল যে ড্রাগের জন্য পাগল হয়ে যেত l এই সুযোগটাই আসলাম নেয় l




18 Comments