আমার মাসি তৃতীয় পর্ব
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী ✍️


টুম্পাইয়ের জন্য তনিমা দেবী একটু বেশি চিন্তা করেন l মা মরা মেয়েটার জন্য ওনার বুকের ভেতরে একটা সুপ্ত যন্ত্রনা অনুভব করেন l দিদির কাছে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন তাঁর অবর্তমানে টুম্পাইয়ের সমস্ত দায়িত্ব তিনি বহন করবেন তাকে মানুষ করবেন l তাকে কখনোই তার মায়ের অভাব বুঝতে দেবেন না l তার জন্য যা স্বার্থত্যাগ করতে হয় তা তিনি করতে প্রস্তুত l তবুও কেন জানি মাঝে মাঝে মনটা খাঁ খাঁ করে l
গত শনিবার ব্যাংকের কাজ সেরে তন্ময় বাবুর সংগে দেখা করেন তনিমা দেবী l ব্যাপারটা খুব ই প্রসঙ্গত তাঁর নতুন ব্যাংকে পোস্টিং নিয়ে কথা হচ্ছিলো l তনিমাকে তাঁর ব্রাঞ্চে পোস্টিং এর জন্য চেষ্টা করছেন তন্ময় বাবু l
তনিমা বলে না না আমার মেয়েকে কে নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে তাহলে ?
আমি প্রোমোশন ফোর গো করবো l আমার অন্য উপায় নেই l মা মরা মেয়েটাকে কে দেখার আছে বলুন? ওতো অনেক দূর হয়ে যাবে l
তন্ময়:- চিন্তা কোরোনা আমার কারে ওকে আমার ড্রাইভার নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে l
তনিমা:- তা কি করে হয় l আপনার ড্রাইভার আমার মেয়েকে কেন নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে? তা ছাড়া আমি আপনার ব্র্যাঞ্চেই বা আসবো কেন ?
- এ ছাড়া অন্য উপায় দেখছি না l
- কেন?
- দেখো অনেক দিন তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো করেও বলা হয়নি l আমার মার অসুখের পর থেকে ঐ মঞ্জু মাসি সব দায়িত্ব নিয়েছে l তা ছাড়া আমি একজন নার্স রেখেছি আমার মা কে প্রত্যেকদিন তিনি ওষুধ পত্র খাইয়ে দেন রেগুলার চেক আপ করেন l ডাক্তারের প্রয়োজন হলে উনি ডাক্তার বাবুকে খবর দেন l কিন্তু তবুও আমি অফিসে স্থির থাকতে পারিনা l মায়ের জন্য মনটা ছট ফট করে l এই সব বলার একটাই কারণ আমি তোমাকে প্রপোজ করছি আমার জীবন সঙ্গিনী হওয়ার জন্য l আর কতো দিন আমরা বসে থাকবো? সংসারটাতো একদিন করতেই হবে l নিজেদের পার্সোনাল লাইফ ও তো একটা আছে না কি ? ভেবে দেখো আমার কথাটা l আমি টুম্পাইয়ের কোন অযত্ন করবোনা কিম্বা তোমাকে ওর ব্যাপারে বিব্রত করবোনা l আমার বড় একা লাগে l নিঃসঙ্গ জীবন বাড়ি আর অফিস ছাড়া আমার কেউ নেই মনের কথা শেয়ার করার মতন l ব্যাপারটা ভেবে দেখ l I love you. Sincerely I must say I admire you . You are dedicated and dutiful women which I like. আমি কথাগুলো বললাম অনেক আশা নিয়ে....
তন্ময়ের চোখে যেন তনিমা তার সর্বনাশ দেখছিলো l কেমন এক অদৃশ্য হাত তাকে ইশারা করছিলো... ওর দিদির মুখটা ভেসে উঠলো.....হ্যাঁ বলে দে তনিমা.... হ্যাঁ বলেদে..... দিদি বলছে নেপথ্যে !!
তনিমা লজ্যায় মুখ নিচু করে বলে আমি কি বলবো আমার জন্য আমি কোনোদিন ভাবিনি l দিদির মুখটা খালি ভাসে l মনে মনে ভাবি আমি কিছু ভুল করছি নাতো..!!!
রাতে ঘুম এলোনা l তনিমা , টুম্পাই আর তন্ময়ের মধ্যেখানে দোটানায় পড়ে গিয়েছে l ভদ্রলোক খুব সাধারণ সরল ভাবে কথাগুলো বলে ফেললেন l দেখতেগেলে উনি তনিমার বস l কেন উনি তনিমাকেই প্রপোজ করলেন ? অন্য মেয়ে কি নেই l মেট্রিমোনি সাইটে হাজার একটা প্রপোসাল পেতেন l তবে হ্যাঁ আজকাল ভালো সৎ চরিত্রের মেয়ে পাওয়া মেট্রিমোনি সাইটেও বিরল ঠিক সেইরকম পুরুষ ও বিরল l কার ভেতরে কি আছে কে জানে ! তাই হয়তো ওনার আমাকে ভালো লেগেছে l হতেও পারে তবে এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন নাতো ভদ্রলোক ! কি জানি নর মায়া স্বয়ং নারায়ণ ই জানেন l রবিবার একবার প্রণতির বাড়ি যেতে হবে এই বিষয়টা ওকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয় l ও সাজেস্ট করবে প্রপোসাল টা ঠিক না ভুল l ওকেই একমাত্র ভরষা করে বলা যায় l
সেদিন টুম্পাই কি ভাবলো কে জানে ? মেয়েটা বড় হচ্ছে... ওর জন্য খুব চিন্তা হয় l তনিমা ঘুমিয়ে পড়ে l
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️


চলবে:-
##আমার মাসি##চতুর্থ পর্ব
©ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী✍️🙏🌹12.10.2020. সোমবার বেলা 02.36.
সকাল সকাল টুম্পাইকে স্কুলের ড্রেস পরানোর সময় তনিমা জিজ্ঞাসা করে হ্যাঁরে মা সেদিন যে মেসোর বাড়ি গিয়েছিলি তা কেমন লাগলো ঐ মেসোকে ?
টুম্পাই একটু হাঁ করে মাসির মুখের দিকে তাকায় তারপর ফিক করে হেঁসে বলে, তুমিতো বলেই দিয়েছ যা বলার আমি আর কি বলবো !
- মানে?
- তুমিতো এক্ষুনি বললে মেসোর বাড়ি....
তনিমার মুখটা লাল হয়ে গেল লজ্জায় l তাইতো 'মেসো' বলা উচিত হয়নি তার l মেয়েটা যে বড় হচ্ছে সব বুঝতে শিখছে ওর সেটা বোঝা উচিত ছিলো l
-আরে না না মা এমনি আমরা বলিনা আঙ্কেল বলে অপরিচিত কোন লোককে সম্বোধন করার জন্য সেইরকম আমি বলেছি তোকে l এতে হাঁসার কি হোল ! নে তাড়া তাড়ি জুতোটা পরে নে মা l বলে টিফিন আনতে যায় l
টুম্পাই মনে মনে খুশি, মাসি ঐ মেসোর বাড়ি ওকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে l মেসো খুব ভালো l ও যখন ঐ বাড়িতে দিদার কাছে ছিলো, মেসো কি যেন মাসিকে বলছিলেন l ওর কানে একটা কথাই এসেছে... না না সেটা বলা যাবেনা... মাসি খুব রাগ করবে তাহলে l
তনিমা ফিরে আসে টিফিন গোছাতে গোছাতে l ওর স্কুল ব্যাগে স্কুলের ডাইরিতে সই করে দেয় কোন একটা জরুরী নোটিস ছিলো পেরেন্ট টিচার্স মিটিং শনিবার l ঐদিন মিটিং সেরে প্রণতির সংগে দেখা করবে l ওকে সব খুলে বলবে কিন্তু টুম্পাইকে দূরে রাখতে হবে l ওর কথা খেয়াল ই ছিলোনা তনিমার l খুব ভুল হয়েছে তার l তবে ও তন্ময়কে সাবধান করা উচিত ছিলো l আসলে ব্যাপারটা ঐরকম হবে বলে অনুমান করতে পারেনি l মেয়েটার কথা খেয়াল করেনি l
সেই দিন থেকে তনিমা একটু অন্যমনস্ক আছে l
দুজনে স্কুলে চলে যায় l তনিমা ব্যাংকে ফিরে আসে l ম্যানেজার ডেকে পাঠান তনিমাকে l তখন ও ক্যাশ কাউন্টার খুলতে যাচ্ছিলো...
ম্যানেজার এর রুমে পৌঁছে বলে, গুড মর্নিং সার ডাকছিলেন l
গুড মর্নিং তনিমা দেবী l আরে আপনিতো lucky madam . এখন অফিসার হয়ে জয়েন করবেন হেড অফিসে l এই নিন আপনার অর্ডার .... Congratulation.
Thank you Sir. কিন্তু আমিতো ঐ ব্রাঞ্চ চাইনি l
আপনার চাওয়া না চাওয়া তে তো ব্যাংক চলেনা, নিজে রিজিওনাল ম্যানেজার তন্ময় মুখার্জী আপনার জন্য recommended করেছেন হেড অফিসে l তন্ময় মুখার্জীর রেপুটেশন ভালো l ব্যাংক ওনার কথা শুনবেনা ?
পার্টি কিন্তু দিতে হবে l ব্যাংকের কিছু মহিলা স্টাফ চলে আসেন ম্যানেজার এর কাছে l সবাই একসঙ্গে বলে গুড মর্নিং সার.. তনিমা কে পার্টি দিতেই হবে l একটা হোই হুল্লোড়ের পরিস্থিতি দাঁড়ায় l ম্যানেজার সকলকে যে যার সিটে ফিরে যেতে বলেন l
তনিমা ব্যাপারটা স্বপ্ন দেখার মতন দেখে ভাবে সব কাজ সেরেই তন্ময় স্যার ওকে প্রপোজ করেন l ওকে ভাবার ও সময় দিলেন না l এটাতো একরকমের ইচ্ছে চাপিয়ে দেওয়া l
- কিছু বলবেন,তনিমার দিকে তাকিয়ে ম্যানেজার বলেন l আপনাকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে l
- না স্যার আমি আসছি l ক্যাশ কাউন্টারে লোক এসেগিয়েছে .. বলে চলে যায় l
দৈনন্দিন কাজে তনিমা এতোই ব্যাস্ত নিজের কথা কোনদিন চিন্তা করেনি l নিজেকে অনেকটা স্বার্থপর মনে হচ্ছে l দিদির মৃত্যু শয্যার ছবিটা বারে বারে চোখের সামনে আসে l আমার মেয়েটাকে দেখিস ছুটকি (তনিমার ডাক নাম) আমি তোর হাতে দিয়ে নিশ্চিন্তে মরতে পারবো l তনিমার চোখ দুটো ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে l খুব অসময়ে দিদি চলে গেলেন l জামাইবাবু দুবাই ফিরে গেলেন মেয়েকে তনিমার কাছে রেখে l মাস মাস মোটা টাকা পাঠান তনিমার একাউন্টে l তনিমা টুম্পাইয়ের বিয়ের জন্য সব টাকা ফিক্স করে রেখেছে l ও নিজের টাকায় টুম্পাইকে মানুষ করছে ... ওর পড়াশুনোর খরচ স্কুলের এডমিশন ফিস সব নিজের মাইনে থেকে দেয় .. জামাইবাবুর টাকায় হাত দেয়না l
ম্যাডাম চেকটা নিন.... এক কাস্টমারের ডাকে চমকে ওঠে !
হ্যাঁ হ্যাঁ দিন দিন l
- কম্পিউটারে একাউন্ট নাম্বার টাইপ করার পর বলে....একি আপনার সিগনেচার টেলি করছেনা l আমার সামনে আবার করুন l
- এটাতো বিয়ারারস চেক l আমার নয় l - ঠিক আছে ওনার কাছথেকে আবার সই করিয়ে আনুন l
- তা কি করে সম্ভব!
- তাহলে টাকা দেওয়া যাবে না l next .
সরুন মশাই পেছনের লোক বলেন l
ব্যাংকের কাজ সেরে টুম্পাইকে আনতে ওঠেন l
আজ তনিমা একটু অন্যমনস্ক থাকছে l টুম্পাইকে আনতে গেল l ওদের স্কুলের এন্যুয়াল ডে আগামী 25 তারিখ l টুম্পাই সেই বিষয় মাসিকে বলে l মাসি বলে ঠিক আছে এখন চল l বাড়ি পৌঁছে তনিমা প্রণতিকে ফোন করে l হঠাৎ দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ ....
ফোনটা রেখে বলে কে?
আমিরে l আমি প্রণতি l
- ওমা তুই l আমিতো তোকেই ফোন করছিলাম l এ যেন মেঘ না চাইতেই জল l হঠাৎ আমাকে কিছু না জানিয়েই চলে এলো যে ! আমি যদি না থাকতাম?
- ফিরে যেতাম! কিন্তু আজ তোকে একটা সারপ্রাইজ দেবো ভাবলাম l কেমন দিলাম বল?
এতে সারপ্রাইজ এর কি আছে?
টুম্পাই মাসিকে প্রণাম করে ওর ঘরে যেতে যাচ্ছিল... এই দাঁড়া তোর ক্যাডবেরি টা নিবিনা l
- ও মা তুমি আবার কেন ক্যাডবেরি আনলে মাসি? আমি কি বাচ্চা?
- না মা তুমি পাকা বুড়ি l তুমি চৌবাচ্চা বলে হেঁসে ওঠে l তুমি তো আমার ছোট্ট সোনা l তুমিকি আমার কাছে বড় হয়েছ মা ?... প্রণতি আদোর করে বলে l
- আমাকে পাকা বুড়ি বোলোনা মাসি আর চৌবাচ্চায় নয় l আমার মা কষ্ট পাবে আমায় ঐ সব কথা বললে l তুমি কি চাও আমার মা কষ্ট পাক ?
- ওরে আমার মা'রে তোর এতো বুদ্ধি l আচ্ছা মা তোকে কিচ্ছু বলবোনা l তুই ক্যাডবেরিটা নিয়ে যা l
তনিমা, টুম্পাইকে কে বলে... মাসি একদিনের জন্য বাড়ি এসেছেন মাসির কথা কি কেউ ধরে মা l মাসিতো তোমার মায়ের মতন l তুমিতো আগে এইরকম কোন দিন বলতে না l মাসি আদোর করে ক্যাডবেরি এনেছেন নিয়ে যাও l
টুম্পাই বলে সরি মাসি l
- ওকে মাই চাইল্ড . ইটস ওকে.
টুম্পাই ভেতরে ওর পড়ার ঘরে চলে যায় ......
চলবে:-
© ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জি✍️🙏🌹
12.10.2020, দুপুর 02.35