অণু গল্প অধ্যবসায়
৮ম বর্ষ ৮ম সংখ্যা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ।। ৩রা ফাল্গুন ১৪২৫
এই সংখ্যায় ১০টি গল্প । লিখেছেন তাপসকিরণ রায়, সুবীরকুমার রায়, সোনালি ভট্টাচার্য মুখার্জী, নীহার চক্রবর্তী সুদীপ ঘোষাল, তাপস দাস, শুভাশিস দাস, সর্বাণী রিঙ্কু গোস্বামী, ্ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী ও সুতপা সরকার ।
বিপ্লব বাবু
হাতিবাগানের একটা শাড়ির দোকানে সেলস ম্যানের চাকরি করেন। আজ প্রায় ২৫ বছর ধরে এই
দোকানে চাকরি করেই তাঁর সংসার চালান। এক মেয়ে সুমিত্রা । এবারে মাধ্যমিক দেবে
বাগবাজারের নিবেদিতা স্কুল থেকে। স্বল্প আয়ের সংসারে মেয়ের জন্য টিউশনি দিতে পারেন
না কিন্তু মেয়ে মেধাবী তাই স্কুলে প্রথম তিন জনের মধ্যে প্রায় থাকে। তিন জনার
অভাবের সংসারে আজকের বাজারে চাল আনতে তেল ফুরায় আবার তেল আনতে নুন ফুরায়। স্ত্রী
সুলক্ষণা সত্যি লক্ষ্মী বৌ । সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে আচার পাঁপড় তৈরি করে বাড়ি
বাড়ি গিয়ে সেগুলি বিক্রি করে বেশ দু পয়সা রোজগার করেন। বিপ্লব বাবুর সংসারে অর্থ
হয়ত নেই কিন্তু ভর পুর শান্তি ।
সুমিত্রার এক
বান্ধবী আছে নাম মিলি । মিলির বাবা কোলকাতা কর্পোরেশনে কাজ করেন । মাইনের চেয়ে
উপরি বেশি তাই মিলির কোন কিছু জিনিষের অভাব থাকে না। দুর্গা পুজোর সময় তার ১০ টা
১৫ টা ড্রেস হয়। সরস্বতী পুজোয় তার জামা কাপড় শাড়ী পরার বহর দেখে স্কুলের
দিদিমণিরা গার্জেন কে স্কুলে ডেকে পাঠান । মিলির বাবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থের
দম্ভে দিদিমণিদের বেখাতির ভাব দেখান। ব্যাস স্কুল থেকে মিলি কে বার করে দেওয়া হয়।
এমনিতেই নিবেদিতা স্কুলের মেয়েরা খুব শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে। তাই অসভ্যতা কিম্বা
অবাধ্যতা একদম বরদাস্ত নয় ।
সুমিত্রা একটা
বাসন্তী রঙ্গের শাড়ী পেয়েই খুশি । মা সরস্বতীর কৃপায় সুমিত্রা পরীক্ষায় খুব ভালো
ফল পেল। কিন্তু ওই সীমিত আয়ে ১২ ক্লাসে ভালো কলেজে পড়ার টাকা ওর বাবাকে যোগাড় করতে
হিমসিম হতে হল। শেষে ওর মা এক সহৃদয় ব্যক্তির বাড়ি থেকে ১০,০০০ টাকা ধার
স্বরূপ আনে। সুমিত্রার বাবা আরো কিছু টাকা মনিবের কাছথেকে এনে মেয়েকে স্কটিশে
ভর্তি করে। সুমিত্রা বিজ্ঞান নিয়ে ১২ ক্লাস পাস করে । এরপর টিউশনি সুরু করে এবং
নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালায়।
জয়েন্টে বসে
মেডিক্যাল কলেজে চান্স পায়। সুমিত্রা নিজের অধ্যবসায়ে এবং সীমিত আয়ের মধ্যে আজ
ডাক্তারি পাস করে মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।
মিলি কোনমতেই
মাধ্যমিক পাস করতে পারলোনা।দোষ ওর নয়। ওর বাবা মার। কারণ ওনারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত
জামা কাপড়, প্রসাধন, মোবাইল ইত্যাদি দিয়ে মেয়ের মাথা খেয়েছেন। শেষে মিলির বাবা তাকে এক ব্যবসায়ীর সংগে বিয়ে দেন। কিন্তু মিলির সেই এক স্বভাব
শপিং মলে গিয়ে দামি প্রসাধনের সামগ্রী কেনা,ক্রেডিট কার্ডে শপিং করা। স্বামী না দিলে বাবা দিতেন। ক্রমশ তার স্বামী তিতি
বিরক্ত হয়ে তাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেখানেই তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে ।
মিলির বাবা যত
বোঝালেও জামাই বাবাজীবন মিলিকে ঘরে নিতে গর রাজি হয়। অগত্যা মিলির বাবা কোর্টের
নোটিস পাঠান ডিভোর্সের জন্য। মিলির এবং তার কন্যার খোর পোশাকির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয় কোর্ট থেকে। এই
নিয়ে জামাই বাবাজি উচ্চ আদালতে মিলির চরিত্র সংহার করে পিটিশন ফাইল করেন। কেস চলে
কিন্তু সমাধান হয়না।
মিলির বাবা
চাকুরী থেকে অবসরের পর নানা বেআইনি কাজের জন্য তাকে কোর্টের চক্কর খেতে হয়। কোর্ট
কাচারি এবং উকিলের খরচে মিলির বাবার আর্থিক অবস্থার চরম দুর্দশা সুরু হয়।
ওর বাবা পেনসন না
পেয়ে নিজের সমস্ত সম্বল হারিয়ে বসেন। শেষে হার্ট এটাকে মারা জান। মিলি হসপিটালে ডাক্তার দের মধ্যে ডক্টর সুমিত্রা
মুখার্জী কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। এটা তার খুব চেনা মুখ । হ্যাঁ এই ত সেই তার
স্কুলের বান্ধবী সুমিত্রা যাকে সে কৃপার দৃষ্টিতে দেখত।
আজ দর্প হারি
মধুসূদন মুখ টিপে হাসছেন মিলি কে দেখে.
মিলি কঠিন
বাস্তবের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে নিজেকে সে কত মূর্খ বলে। সাময়িক অর্থের
সাচ্ছল্যতায় মানুষ ভুলে যায় তার এই দিন গুলি সীমিত বলে। মা লক্ষ্মী কৃপা করে পরখ করেন মানুষের দম্ভ কে অহংকারকে। মা লক্ষ্মী বড়ই চঞ্চলা।
তিনি কখনই অহংকার পছন্দ করেন না আর ভগবান বিষ্ণু তিনি তো দর্প হারি মধুসূদন।