অণু গল্প " রাধা শ্যাম " ত্রিভুবন জিত মুখার্জী.
Yahoo/Sent
  • Tribhubanjit Mukherjee <jitmukherjee53@yahoo.com>
    To:Phalguni Mukherjee,Anyanishad Galpoguccho
    1 Oct at 11:41 PM

      
    রাধা শ্যাম
    ত্রিভুবন জিৎ  মুখার্জী
     বেশ কিছুদিন হল গিন্নীর শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা।  প্রদীপ বাবু রিটায়ার করেছেন প্রায় ৭ বছর. প্রদীপ বাবু রান্নার জন্য এক মহিলা খুঁজে পেলেন।  নাম শ্রীরাধা। তা শ্রী র বদলে সুধু রাধা বলেই সবাই ডাকত।  
    রাধাকে রান্নার জন্য রাখা হল কিন্তু ও রান্নার 'র' জানেনা. আলু পোস্ত,  মাছের কালিয়া, দই বেগুন,  শাকের ঘণ্ট,  ওল সিদ্ধ, সরষে ইলিশ, এইসব আমার প্রিয় কিন্তু কিছুই পারেনা।
    গিন্নী শুয়ে শুয়ে ওকে বলেন এই কর ওই কর. ও সেই শুনে করতে চেষ্টা করে কিন্তু শেষটা যা হয় মুখে দেওয়ার যোগ্য নয়. হয় পোস্ত তে নুন ভুলে গিয়েছে দিতে নয় সরষে ইলিশের সরষে তেঁতো. কি বলব বুঝে উঠতে পারিনা।
    ওল সিদ্ধটা যে করবে তাও বাজে।  অগত্যা গিন্নীকে বলি ওকে সুধু আলু সিদ্ধ ডাল ভাত করতে বল।  
    তাই হল. রাধা মনে মনে খুব খুশি. আধ ঘণ্টায় সব রান্না সেরে গট মট করে চলে যায়. গিন্নী সেই উঠে আমার জন্য পোস্ত নয় চাটনি বানান।
    - কেন ওকে রাখলে বলত!
    - আমি বলি কি করব নিরুপায়।  তোমার শরীরটা ভালো নয় তার ওপর আমার প্রেশারটা বেড়েছে. তাই ভাবলাম একটা রান্নার লোক রাখি কদিন সামলে দেবে।  
    - ও হরি.  ও সামলাবে আমার বাড়ির কাজ! তোমার খাওয়ার ফিরিস্তি শুনলে ও পালাবে. ওই আলু সিদ্ধ আর ডাল ভাত খাও।  
    - তাই ত কদিন খাচ্ছি. ভালো না লাগলে ম্যাক পাই থেকে বার্গার আর প্যাস্ট্রি আনিয়ে খেয়ে নিচ্ছি।  আজকাল কি সুবিধে বলত মোবাইল এপ্লিকেশন এ খাবার অর্ডার দেওয়া যায়। ভাবা যায় বল ! একেই বলে তথ্য প্রযুক্তি বিদ্যার কামাল।
    - হ্যাঁ পয়সা টা ত কম লাগে না।  এখন বোঝ আমাকে দিয়ে কত খাটিয়েছ!
    - আমি মাথা চুলকে বলি খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছ।
    - ওই দেখ সত্যি কথা বলাতে ওমনি বাবুর গায়ে লেগে গেল. বলিহারি যাই তোমার.বলি আমি খাওয়ার খোঁটা দেওয়ার কে? তোমার পয়সা তুমি খাবে আমার কি?
    - আমার পয়সা মানে! আমার সব টাকা পয়সা সব ই ত তোমার নামে ফিক্স করে দিলাম ।
    - কে বলেছিল ? শুনি !
    এরমধ্যে রাধার আগমন...  
    - কি রান্না হবে মাসিমা?
    - রাতের খাবার রুটি তরকারি করে দে.একটু পায়েস করিস.শোন পায়েসে বেশি চিনি দিবিনা কেমন।
    - আচ্ছা।

                         -------২-------

    রাধা,  যেন তেন প্রকারেণ রান্না সেরে চম্পট। গিন্নীর শরীর ভালোনা কি করি। এই রান্নার লোকের তৈরি খাবার খেতে খেতে হাঁপিয়ে উঠছি.হে ভগবান কি বিড়ম্বনায় ফেললে।
    সকালে কাগজ পড়ে চক্ষু চড়ক গাছ! বড় বড় হরফে লেখা, "পরকীয়া প্রেম ধর্তব্য অপরাধ নয়" কি হল এ দেশের?  আইন কে যে যেমন ইচ্ছে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এক কিম্ভুত কিমাকার রায় দিচ্ছেন।  মানুষের কথা একদম ভাবছেন না।  
    - এদিকে আমাদের কাজের মাসি সকালে এসে গিন্নীকে বলে,  ও মাসি একটা খবর শুনেছ!
    - কি খবর শুনি?
    - আর বলনা  ! দিন কাল কি হোল গা! বলে গালে হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লো.
    - কি হয়েছে তা খুলে বল দিকি ভণিতা না করে!
    - তোমাদের রাধা গো তার বরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে. কি কাণ্ড বল দেখি?কলিকালে আর কি কি দেখবো কি জানি বাপু।
    - তোকে দেখতে হবেনা. যা দিকই বাসুন গুলো মেজে দে.ঘরটা ঝাঁট দিয়ে পুঁছে দে.আজ বৃহস্পতি বার। যত লক্ষ্মীছাড়া কথা শোনাতে এলেন ।
    -সত্যি গো। মা হাজার হাত কালির দিব্বি।
    - তুই থামবি!
    আমার কানে কথা গুলো অজান্তেই এলো.যাক এবার আর খাওয়ার অসুবিধে হবেনা.কিন্তু মেয়েটা মাসের মাইনে না নিয়ে চলে গেল!
    তা আর কি করা যায়....
    - কাজের মাসি চলে যাওয়ার পর গিন্নীর মুখ ঝামটা.....এবার হল। আমি বলেছিলাম ঘরে রান্নার লোক ঢুকি-ওনা.....শুনলে আমার কথা.....এখন বোঝ।
    - আ..আমি কি করলাম? আমতা আমতা করে বলি ।
    - কে বলেছিল তোমায় আদিখ্যেতা করে রান্নার লোক ঢোকাতে? মাগো আমি দেখেই বুঝেছিলাম  ও..... - থাক থাক।   এক কাপ চা দাও দেখি।
    - দিচ্ছি একটু সবুর কর.হাঁটুর ব্যথাটা ঠিক এই সময় বাড়ল. ৩৬ বছর তোমার ঘর সংসার করলাম এক দিন ও ফুরসত নেই....মাগো...।
    এদিকে রাধার বর থানায় ডায়েরি করতে গেল। তার বৌকে তার ই এক বন্ধু নিয়ে চলে গিয়েছে। ব্যাপারটা ও মোটেই ঠাওরাতে পারে নি। একা একা থাকে।মা গত হয়েছেন দু বছর। তখন রাধা মায়ের শাসনে থাকত। এখন ঘরে একা থাকে। শ্যাম মানে রাধার বর কোন এক কল কারখানায় কাজ করে। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পর ঘরে এসে বিশ্রাম নেবে না এই সব কথা শুনবে ।  সারা পাড়া ধী ধী পড়ে গিয়েছে। রাধার জন্য মুখ দেখান দায়
    থানার বড় বাবু শ্যাম কে দেখে সব কথা শুনে মুখ টিপে হাসেন.....বলেন ওরে দেশের আইন বদলেছে.....ওরা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক...  তুই যা ঘরে যা।  এফ.আই.আর রাখা যাবেনা।
    - শ্যাম বলে জানতাম আমি। ন্যায় নেই দেশে।  বলে চলে যায়।
    ঘরে এসে মুখ বুজে পড়ে থাকে।  একটা ছেলে হয়েছিল সেও ডেংগু জ্বরে মারা যায় প্রায় বিনা চিকিৎসায়।  শ্যামের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে ছেলেটার জন্য । বাইরে লোকেদের  সামনে কি মুখ দেখাবে? যার স্ত্রী ,  স্বামীর ঘর ছেড়ে পর পুরুষের সংগে চলে যায় সে পুরুষ কে লোকে কৃপার দৃষ্টিতে দেখে। ছিঃ ! এ কি করল রাধা ! তার মুখে শেষে চুন কালি দিল। ঘেন্নায় শ্যামের গা রি রি করে ওঠে। এটাই দুনিয়ার কঠোর নিয়ম। তাকে কাপুরুষ বলে...আরও কত কি?  
    শ্যাম বাজার থেকে একটা পাউঁরুটি কিনে আনে। বাড়িতে অল্প দুধ ছিল স্টোভে ফুটিয়ে খেয়ে নেয়।
    পরের দিন বন্ধুর বাড়ি তে হানা দেয়।  কিন্তু সে ত সেখান থেকে রাধাকে নিয়ে পগার পার। পুলিশ প্রশাসন এই বিষয়ে কিছুই করতে পারবে না।  কোন অভিযোগ ই শুনবে না।  আজ কাজে গেলনা। ফোরম্যান সাহেব কে ফোনে বলে তার শরীর খারাপ।
    এই ঘর ছেড়ে দেবে এইরকম ভাবছে।  প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে।  সন্ধ্যার সময় চারি দিকে  শঙ্খ ধ্বনি । রাধা এসে ওর পায়ে পড়ে বলে, "আমায় ক্ষমা কর।আমি আর এরকম কাজ কোনদিন করবোনা।"
    - শ্যাম,  ঘৃণায় পা সরিয়ে নেয়। মুখে কিছু বলেনা। যে রাধাকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে সেই কিনা এইরকম একটা কাজ করল যার ক্ষমা নেই।
    - রাধা বলে.. আমাকে ও দালালের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার জোগাড় করছিল। আমি ভাগ্যিস শুনতে পাই ওদের কথা ঘরের ভেতর থেকে। আমি বাথ রুমের স্কাই লাইট টপকে পালিয়ে আসি।  রাস্তাতে প্রাণ পণে দৌড়ই।  কাছে একশো টাকা ছিল তাই দিয়ে টিকিট কেটে কোনমতে ট্রেনে চড়ে পড়ি। লেডিস কম্পার্টমেন্টে উঠে চলে আসি।  
    তুমি আমাকে নিয়ে থানায় চল আমি সব থানা বাবুকে বলব।
    - তার আর প্রয়োজন নেই। থানায় কোন অভিযোগ শুনবে না উপরন্তু হাঁসবে।  আমি আর এর মধ্যে নেই। তুমি তোমার মতন থাকো আমি আমার মতন।
    বৌকে প্রশয় দেওয়ার খেসারত দিতে হল। এই দেশের আইন ও সহায় হলনা আমার ভাগ্য। আমি লজ্জায় মুখ দেখতে পারছিনা....
    - রাধা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমাকে ক্ষমা কর। আমি সত্যি অন্যায় করেছি। আমার পাপের শাস্তি যা হয় তুমি দাও কিন্তু দুরে সরিও না। আমি কোথায় যাবো ?  
    - আমি শাস্তি দেওয়ার কে? আমি শ্যাম তুমি রাধা।  মা কালীর দিব্বি দিয়ে বল আর কখন এরকম কাজ করবেনা।  ওই বাড়িতে যে কাজ করছিলে সে বাড়ির মাসিকে কি বলবে? তিনি কি আর তোমায় রাখবেন? কখনই না। এই পাড়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
    - তবে তাই কর। এখান থেকে চলে যাই অন্য পাড়ায়।
    - কিন্তু তোমাকে শ্যামল (আমার বন্ধু)ছাড়বেনা।
    - ওকে আর বন্ধু বলতে হবেনা । ও শয়তান একটা। 
    - কিন্তু কাল অবধি সে তোমার প্রিয় ছিল !
    - আমাকে ক্ষমা কর। আমি বলছি ত আর ওর মুখেরদিকে তাকা-বোনা।
    - জানত পরকিয়া প্রেম আইন সিদ্ধ।
    - হোক ! আমাদের মধ্যে এর পুনরাবৃত্তি হবেনা।
    - ঠিক বলছ!
    - হ্যাঁ ঠিক।
    - ভুতের মুখে রাম নাম ... শ্যাম মনে মনে ভাবে। তবুও সে রাধাকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা । সে তার প্রাণের অধিক প্রিয় ।
    সরকারের নিয়ম যাই হোক না কেন স্বামী স্ত্রী র মধ্যে ভালবাসা থাকলে কোন শক্তি তাকে ভাঙ্গতে পারবেনা।
    রাধা ভুল করেছে। সে অনুতাপ করেছে। তার অনুতাপ ই তার শাস্তি ।