Sunday, July 22, 2018

বক্র মহাভারত



  
দুর্যোধন বেশ শান্তিতেই ছিল । খাওয়া দাওয়া , সুখ নিদ্রা, মনিবের আদর খাওয়া , মাঝে মাঝে এদিক সেদিক বেড়ানো সব ঠিকই চলছিল । হঠাৎ করে সেই শান্তিতে বিঘ্ন ঘটল । বিঘ্নের কারণ দ্রৌপদী । কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল যে দুর্যোধনের কপালে ভাজ পড়ে গেল ।
একটু খোলসা করে বলি । দুর্যোধন হল একটি কুকুর । শুদ্ধ ভাষায় সারমেয় । তবে দেশি । অবস্থান লোটাসপুরের রতনবাবুর বাড়ীতে । ছোটবেলা থেকেই এখানে আছে । রতনবাবুর গিন্নী ওকে বেশ আদর যত্নেই রেখেছেন । খাওয়া দাওয়া আর ঘুম ছাড়া বিশেষ কাজ নেই । মাঝে মাঝে গরু-ছাগল দেখে ঘেউ ঘেউ করা, আর মেঘ ডাকলে বা পটকা ফুটলে খাটের তলায় সেদিয়ে যাওয়া , এই মোটামোটি রুটিন । দেশি কুকুর, তায় সমস্ত পাড়ার মুখ চেনা তাই বেল্ট লাগাবার বালাই নেই ।  পাড়ার প্রায় সবাই ওকে আদর করে, কেউ বিস্কুট, কেউ ভাত-রুটি ডেকে ডেকে খেতে দেয় । তাই এতদিন বেশ ভালই দিন কাটছিল ।
কিন্তু হঠাৎ পাড়ায় একটা বাচ্চা মেয়ে কুকুরের আবির্ভাব হল । বাচ্চা দেখে প্রথমে সবাই অল্প আদর-যত্ন করল ।  দুর্যোধনও ওকে আদর করল । গিন্নীমার বাহবা পাওয়ার জন্য ও বাচ্চাটাকে গিন্নীমার কাছে নিয়ে এল । বাচ্চাটা দুর্যোধনের পেছন পেছন গিয়ে রতনবাবুর গিন্নীর কাছে গিয়ে হাজির হল । রতনবাবুর গিন্নী করুণাময়ী এবং দয়াময়ী  । উনি বাচ্চাটাকে খেতে দিলেন । খাওয়া আর আদর পেয়ে সেটা সেখানেই থেকে গেল । গিন্নীমায়ের পেছন পেছন ঘোরা শুরু করল ।
দুর্যোধন ভেবেছিল কোন দূরদেশ থেকে কেউ লুকিয়ে একটা বাচ্চা কুকুরকে ওর বাড়ীর সামনে রেখে গেছে । ভয়ে আর খিদেয় কুঁই কুঁই করে কাঁদছে, তাই একবার গিন্নীমার কাছে নিয়ে ইন্ট্রোডাকশন্ করিয়ে কিছু খাইয়ে বিদায় করে দিলেই হবে । গিন্নীমা প্রথমে খাইয়ে অল্প আদর করতেই ওটা গিন্নীমার পা চাটা শুরু করে দিল । এসেছিল সকালের দিকে, সন্ধ্যার মধ্যে কুঁই কুঁই করে আর পা চেটে চেটে ও গিন্নীমার মন গলিয়ে ফেলল । শীতের রাত, ওকে কোথায় রাখা যায়  গিন্নীমা চিন্তায় পড়লেন । পরে একটা পুরোণো গরম কাপড় দিয়ে একটা চলনসই বিছানা বানিয়ে তাকে রাখা হল ।
ব্যাপারটা দুর্যোধনের পছন্দ হল না । খাইয়েছ, আদর করেছ, এবার বিদেয় কর । তাই না ও নিয়ে এসেছিল । কিন্তু এতো দেখি উড়ে এসে জুড়ে বসল ! এতো আদিখ্যেতা কিসের ?  ওর পছন্দ হল না । দুর্যোধন গরম হয়ে অল্প গর-গর করল। সেটাকে আদর করতে করতে গিন্নীমা দুর্যোধনকে বললেন, ‘কিরে দুর্যু, তোর কি ওকে দেখে হিংসে হয়েছে?’ এটা থাকলেই তো খাবারে ভাগ বসাবে, আদরে ভাগ বসাবে । আসুক কাকুমনি, উনিই ভাগাবেন । দুর্যোধন মনে মনে বলল । কাকুমনি মানে রতনবাবু , ঘরের মালিক আর গিন্নীমার ইয়ে মানে কর্তা না কি যেন ।
কিন্তু আজ ওর ভাগ্যটাই খারাপ । রাতে কাকুমনি কাকে যেন দাবা খেলায় হারিয়ে বাড়ী ফিরলেন । মনটা বেশ হালকা ফুরফুরে । গিন্নীমা ডেকে দেখালেন, ‘দেখে যাও ।‘ কাকুমনি গিয়ে কাপড়ের ভেতরে পুচকুটাকে দেখে বললেন, ‘এটা কোথা থেকে এলো ?’ ‘কেউ হয়তো ছেড়ে গেছে । এত মিষ্টি মুখটা, দেখ দেখ ।‘  ‘বাঃ, বেশ আদর আদর তো । পিট পিট করে দেখছে ।‘  ‘এদিকে দুর্যুর হিংসে হয়েছে । রাগে গর্ গর্ করছে ।‘  ‘ঠিক নাকি ? তাহলে এর নাম দ্রৌপদী রেখে দাও । দুর্যোধন যেমন দ্রৌপদীকে হিংসে করত ।‘  হে ভগবান আজই তুমি কাকুমনিকে দাবায় জেতালে ! হারলে তো এক্ষুণি ঘর থেকে বের করে দিত ।
যাই হোক, দ্রৌপদী রতনবাবুর বাড়ীতে থেকে গেল । এখন খাওয়াটা দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়, যদিও পরিমান যথেষ্টই থাকে । কিন্তু আদরটা দু’ভাগে ভাগ হওয়াটাই বেশী মনে লাগে । আগে এই আদরের একছত্র অধিকারী ছিল দুর্যোধন, এখন দ্রৌপদীও আদর পাওয়া শুরু করেছে । যখন দ্রৌপদীকে গিন্নীমা ‘দ্রুপী-দ্রুপী’  বলে ডাকে আর দ্রৌপদী লেজ নেড়ে নেড়ে দৌড়ে যায়, তখন দুর্যোধনের বুক ফেটে যায় । কিছু বলাও যায় না । ঘ্যাক্ করলে গিন্নীমা বলেন, ‘তোর এতো হিংসে কেন রে দুর্যু । তোকে কি আদর কম করছি ? ‘ কে সেই জ্বালা বুঝবে ?
তবে দুর্যু দ্রুপীকে বলে দিয়েছে, গিন্নীমা তোকে আহ্লাদ করছে, তুই সেখানেই থাকবি । আমার কাছে ঘুর ঘুর করবি না । তোকে আমি দেখতে পারি না । দ্রুপী মনে মনে কষ্ট পেয়েছে তবে মুখে কিছু বলেনি । তবে চেষ্টা চালাচ্ছে দুর্যুর মন পাওয়ার । সেদিন দ্রুপী একটা মরা মুরগী পেল । মুখে করে নিয়ে এসে দুর্যুকে দিল, ‘খেয়ে নে, তোর জন্য এনেছি ।‘ দ্রুপী দুর্যুকে পটাবার চেষ্টা করল । ‘ হুঃ ।‘ দুর্যু খাওয়া শুরু করল । কিন্তু দ্রুপীকে কোন ধন্যবাদ দিল না । এমন একটা ঘ্যাম ভাব করে রাখল যে ওকে সেবা করা দ্রুপীর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । খাওয়া শেষ করে দুর্যু নাক ডাকিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ।
দিন যায় মাস যায় দ্রুপী আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে । কবে যে বাচ্চা থেকে কিশোরী হয়ে  যুবতী হয়ে গেল দুর্যুর চোখেই পড়ল না । দুর্যু দ্রুপীকে তেমন পাত্তা দেয় না, দ্রুপী তবুও ওর মন পাওয়ার চেষ্টায় থাকে । তবে রতনবাবু আর গিন্নীমা দু’জনকেই সমান আদর করেন ।
এক সকালে বাইরের একটা ছোট কুকুর এসে রতনবাবুর বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক দেখল । দুর্যোধন হাক লাগলো , ‘এই তুই কে রে ?’ ‘আমি সহদেব ।‘ ‘এখনে কি লাগে ?’ ‘এখানে একটা মেয়েকে দেখলাম মনে হলো –‘ ‘তাতে তোর কি ?’  ‘সে সব বলা যাবে না ।‘  ‘ফুট এখান থেকে ।‘ সহদেব ধমক খেয়ে চলে গেল ।
পরেরদিন সহদেবের সাথে আরেকটি কুকুর এলো । এবার দু’জন মিলে  রতনবাবুর ঘরের আশেপাশে শুঁকতে লাগল । তখন দ্রুপী বাড়ীর ভেতর থেকে সামনের রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ালো । তাকে দেখে ওরা দু’জন এগিয়ে এলো । ‘ও-  তোমার খবরই পেয়েছিলাম । তোমার নাম কি ?’  ‘আমি দ্রৌপদী, তোমরা কারা ?’   ‘আমরা নকুল আর সহদেব । দাদা এই সিজনের বিয়ে করবে, তাই পাত্রী সন্ধানে পাঠিয়েছে ।‘  ‘কি নাম তোমাদের দাদার ?’  ‘যুধিষ্ঠির ।‘  এমন সময় দুর্যুর নজর এদিকে পড়ল । ও হৈ হৈ করে এগিয়ে এলো । ‘এই, তোদের এখানে কি লাগেরে ?’             ‘কেন তোর কি দরকার ?’                 ‘আরে !আমার বাড়ীর গেটে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করছিস আমার কি দরকার ! হারামজাদা ফুট্ ।‘  দুর্যু দম দেখাতে ওরা দু’জন ভাগা মারল । তবে যাবার আগে শাষিয়ে গেল, ‘দাঁড়া সেজদাকে বলে তোর দম বের করব ।‘  গিন্নীমার সাথে দ্রৌপদী গেটে দাঁড়িয়ে সব দেখল । ‘ সেজদা কে ?’ ‘অর্জুন ।‘ যেতে যেতে ওরা দ্রৌপদীর প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেল । দুর্যু দ্রুপুকে এড়িয়ে যেতে গিয়েও একবার চোখে পড়ল । দ্রুপু যুবতী হয়েছে । দেখতেও সুন্দর হয়েছে । তবে কালকের বাচ্চাকে কে পোছে ! এদিকে দ্রুপু দুর্যুকে অল্প খাতির করল, ‘কি রে দুর্যু কেমন আছিস ?’ ‘ চুপ যা দেখি, মেলা বকবক করিস না ।‘  দুর্যু ওকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেল ।
রাতে রতনবাবুর স্ত্রী রতনবাবুকে বললেন, ‘তোমার দ্রৌপদী বড় হয়েছে বুঝলে । পেছনে বেপাড়ার কুকুর ঘোরাঘুরি শুরু করেছে ।‘ ‘রতনবাবু বললেন, ‘হ্যাঁ তাই তো । শ্রাবণমাস চলছে, ওদের সিজন্ শুরু হয়েছে । ‘
পরের দিন দুপুরে আবার দুটো কুকুর এলো । একজন কালকের দেখা নকুল অন্যজন নতুন । নকুল গেটের সামনে এসে হাঁক লাগালো, ‘দ্রৌপদী , ও দ্রৌপদী –‘  দূর থেকে তা দেখে দুর্যু দৌড়ে এলো । ‘ঐ তোদের কি লাগেরে ?’  এই যে সেজদা কাল এটা আমাদের দম দিয়েছিল । অর্জুন দুর্যুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ঐ, একদম ফালতু কথা না । কামড়ে ছিড়ে ফেলব । যা, নিজের কাজে যা ।‘  ‘ওরে পাগল, তুই কোথায় দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা বলছিল জানিস ? হাড্ডি ভেঙে রেখে দেব । ভাগ এখান থেকে ।‘  ‘তবে রে-‘  অর্জুন ঝাপিয়ে পড়ল দুর্যুর উপর । দুর্যুও মহাপরাক্রমে ঝাপিয়ে পড়ল অর্জুনের উপর । কামড়া-কামড়ি হল, পটকা-পটকি হল, তবে হৈচৈ শুনে পাড়ার কিছু ছেলে ঢিল ছুড়ে ওদের থামালো । তবে যেতে যেতে অর্জুন শাষিয়ে গেল, ‘আজ ছেলেগুলোর জন্য বেচে গেলি । কাল মেজদাকে নিয়ে আসব, দেখি তোকে কে বাচায় ।‘  ততক্ষণে দ্রৌপদী গেটে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘মেজদা কে ?’  নকুল বলল, ‘মেজদা হল মহাবীর ভীম ।‘  ‘তাহলে যুধিষ্টির কে ?’  ‘ও হল বড়দা । ওই তোমাকে প্রথমে বিয়ে করবে, তারপর আমরা বাকি চারভাই একে একে তোমাকে বিয়ে করব ।‘  ওরা চলে গেল । ওরা চলে যেতে দ্রুপী দুর্যোধনকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ তোর চোট লেগেছেরে দুর্যু ?’  অর্জুন এতো সোজা মক্কেল না, দুর্যুকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ দিয়েছে । আরও একটু সময় লড়লে হয়তো দুর্যুকে পেড়ে ফেলত । কিন্তু এই কথা স্বীকার করা প্রেসটিজের ব্যাপার । তাই দুর্যু বলল, ‘ফুঃ, শালাকে চ্যাপ্টা করে দিতাম ।  শুধু পাড়ার ছেলেরা মাঝখানে চলে এলো বলে ।‘ এরপর ও দ্রুপীর দিকে ভাল করে তাকালো । কি এমন হল যে হঠাৎ করে এত কুকুর দ্রুপীর খোঁজ করছে ? হ্যাঁ , মানতেই হবে যে দ্রুপী বেশ সুন্দর হয়েছে, তা বলে-
রাতে গিন্নীমা রতনবাবুকে বললেন, ‘ দ্রুপীকে নিয়ে তো হাঙ্গামা শুরু হয়ে গেছে । আজ তো বেপাড়ার দুটো কুকুরের সাথে মারামারি হয়েছে দুর্যুর । পাড়ার ছেলেরা ছিল বলে, তা না হলে দুর্যুর মুশকিল ছিল ।‘
আগের দিনের অর্জুনের সাথে টক্কর দিয়ে দুর্যু বুঝে গেছে যে মামলা সুবিধের নয় । তারপর ওরা বলে গেছে কাল মেজদাকে নিয়ে আসবে , তাই নিজের সেফটির জন্য ও বন্ধু দুঃশাষনকে ডেকে নিল । তেমন দরকার পড়লে দু’জন মিলে ফাইটিং করবে । দুপুরের দিকে নকুল, অর্জুন আর একটা বিশাল কুকুর এসে হাজির । দুর্যু আর দুঃশাষণ গেটের সামনেই বসে ছিল , দ্রুপীও সাথেই ছিল । আজ দ্রুপীর দিকে তাকিয়ে দুর্যু মোহিত হয়ে গেল । শ্রাবন মাস পড়ার পর থেকে মনটা যেন কেমন লাগত, কিন্তু কেন তা বুঝত না । এখন দ্রুপীর এত মন ভোলানো রূপ দেখে মনটা আবার কেমন কেমন করে উঠল । ওদিকে তাকিয়ে দেখে দুঃশাষণও দ্রুপীর দিকে আড় চোখে দেখছে । তখনই ওই তিনজনকে এদিকে আসতে দেখা গেল । ‘ওরে বাবারে ! ওটা তো ভীম । আমি পালাই ।‘  দুঃশাষণ সব ভুলে উল্টো দিকে দৌড় লাগালো । সেদিকে তাকিয়ে দুর্যু দেখল ওরা তিনজন গেটের কাছে চলে এসেছে । একে তো তিনজন । তার উপর কাল অর্জুনের সাথে টক্কর দিয়েই কিছুটা শিক্ষা হয়েছে । এদিকে মেজদা ভীমকে দেখে দুঃশাষণ যে ভাবে পালালো, দুর্যুর মোটেই ভাল লাগল না । ভীম দুর্যোধনকে পাত্তাই দিল না । নকুলকে বলল, ‘নকুল, দ্রৌপদীকে নিয়ে আয় ।‘  নকুল গেট পেরিয়ে এসে দ্রৌপদীকে বলল, ‘চলো আমাদের সাথে ।‘  ‘কোথায় ?’  ‘বড়দার কাছে । বড়দা তোমাকে বিয়ে করবে ।‘  ‘এই, এই হচ্ছেটা কি ?’  দুর্যু চিৎকার করল । অর্জুন বলল, ‘এই , একদম চুপ । কালকের মার ভুলে গেছিস ?’  দুর্যু ভোলেনি  । কিন্তু দ্রুপীর সামনে এরকম অপমান সহ্য করা যায় না । তা ছাড়া ক’টা পাড়ার ছেলে আশেপাশেই আছে । তাই ও হল্লা করল, ‘আমার পাড়ায় আমার সাথে দাদাগিরি !’ ও গর্ গর্ করে অর্জুনের উপর ঝাপিয়ে পড়ল । লেগে গেল পটকা পটকি। নকুলও সাথ দিল অর্জুনের । হাল্লা চিল্লা দেখে পাড়ার ছেলেরা ছুটে এসে পাথর মেরে ওদের ছাড়ালো । তবে ফাইটিং হয়েছে বটে । জান প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছে দুর্যু , এক তো দ্রুপীর কাছে ইজ্জতের কথা, দ্বিতীয়ত কালকে অর্জুনের সাথে  ফাইটিং-এর বদলা । তবে পরিশ্রমও হয়েছে । এদিকে যখন এসব ফাইটিং চলছিল তখন ভীম দ্রুপীকে বলল, ‘ওরা ফাইটিং করুক, তুমি আমার সাথে চলো । দাদা অপেক্ষা করছে ।‘  ‘কেন ?’  ‘দাদা তোমাকে বিয়ে করবে ।‘  ‘আর তোমরা ?’  ‘আমরাও বিয়ে করব । প্রথমে দাদা, এরপর আমি , এরপর অর্জুন, নকুল, সহদেব ।‘  ‘আর দুর্যোধন ?’  ‘ওর আবার আমাদের মধ্যে কি দরকার ? ও অন্য কাউকে বিয়ে করবে ।‘  ‘না, আমি এভাবে ওকে ছেড়ে যেতে পারিনা । ওকে আমি কবে থেকে মনে মনে চাই ।‘  ‘ না , তুমি আমাদের সাথে চল ।‘  ‘না, আমি নিজে গিয়ে বিয়ে করব না । তোমার দাদা যদি নিজে এখানে এসে আমাকে বিয়ে করে তাহলে অন্য কথা ।‘  অল্প চিন্তা করে ভীম রাজি হল । ‘ঠিক আছে , কাল দাদাকে নিয়ে আসব । চলরে অর্জুন, চলরে নকুল, কাল দাদাকে নিয়ে আসতে হবে ।‘ ওরা যাবার সময় দুর্যু ভীমের সামনে চলে এসেছিল । ভীম ইচ্ছে করে দুর্যুকে একটা ধাক্কা মারল, দুর্যু তিন হাত দূরে ছিটকে পড়ল । একবারেই বুঝে গেল ভীমকে দেখে দুঃশাষণ কেন পালিয়েছিল ।
রাতে গিন্নীমা রতনবাবুকে বললেন, ‘আজ তো দুর্যুর সাথে বেপাড়ার কুকুরদের আবার মারপিট হল । যা সাইজের একটা কুকুর এসেছিল, বাপরে !’  ‘দুর্যু একা ছিল ?’ ‘ সাথে ওর এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছিল কিন্তু অন্যদলকে আসতে দেখে ওটা পালিয়েছে ।‘
হায় কপাল । দুর্যু মাথা চাপরায় । যে দ্রুপী ওর মন পাওয়ার এত চেষ্টা করেছে, যে দ্রুপী ওকে এত ভাবে চেয়েছে, যে দ্রুপীকে সে একবারও পাত্তা দেয় নি , সেই দ্রুপীর টানে আজ পঞ্চপাণ্ডব এসে উপস্থিত ।  দুর্যোধন কত জনের কাছে সাহায্য চেয়েছে । দুঃশাষণ, কর্ণ, শকুনি, কৃপাচার্য কেউ রাজি হয় নি । ভীমার্জুনের নাম শুনে সবাই পিছিয়ে যায় । দ্রুপী বুদ্ধি করে ভীমকে বলেছিল যে যুধিষ্ঠির যেন একদিন পরে আসে । ইচ্ছে ছিল, একদিনের মধ্যে যদি দুর্যু কোন উপায় বের করতে পারে – কিন্তু কিছু হল না ।
পরের দিন যুধিষ্ঠির এলো । সঙ্গে ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব । দ্রৌপদীকে মাঝখানে রেখে পাঁচ ভাই একটা বুহ্য রচনা করে বসল । এরপর যুধিষ্ঠির  খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বলল, ‘দ্রৌপদী, গুরদেবের আদেশে আমরা বংশরক্ষা করার জন্য একটি পাত্রী  খুঁজছিলাম । তোমাকে খুঁজে পেয়েছি ।   আমরা পাঁচ ভাই তোমাকে একে একে বিয়ে করব এবং ফুলশয্যা করব । এরপর চলে যাব । এরপর যদি তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাও , তা তোমার ইচ্ছে ।‘  এরপর বুহ্যের বাইরে থাকা দুর্যোধনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমার বলা কথা গুলো নিশ্চয়ই শুনেছ । আমরা শান্তি পূর্ণভাবে বিয়ে করতে চাই , তুমি এখানে থাকতে পার অথবা কোথাও গিয়ে পাঁচদিন পর ফিরে আসতে পার । আজ আমি বিয়ে করে ফুলশয্যা করব , এরপর একদিন পর পর বাকি ভাইরা । পাঁচদিন আমরা ব্যস্ত থাকব । সুতরাং…’
আর একবার নিজের মাথা চাপড়ে দুর্যোধন সেখান থেকে চলে যাওয়ার মনস্থ করল ।

No comments:

Post a Comment