নিজস্বী (Selfie)
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী / ২৮.০২.২০১৮ /
পার্কে গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড । একটি মেয়ে আর ছেলে দুজনে বাঁশের মত এক লাঠি নিয়েছে তার সামনে মোবাইল ! কি হল ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হল। দেখি বটন টিপলেই ছবি উঠছে। সত্যি চায়নার প্রযুক্তিবিদ রা এ দেশের ছেলে মেয়েদের মাথা কি করে খেতে হয় তার নিত্য নতুন উপায় বার করছেন । আমরা গাড়ল ওদের প্রযুক্তি নিজেদের দেশের জনসাধারণের ওপর চাপিয়ে বড় গলায় বলি “আচ্ছে দিন” ।
মানষী , মানস দুই অন্তরঙ্গ প্রেমী যুগল । ওদের নিজস্বী তোলার স্বাদ বড় বিচিত্র । কখন নদীর বাঁধের ধারে , কখন শক্ত পাথরের ওপর । কখন বা চলন্ত মেট্রো তে। এক এক ছবি তোলে আর আপলোড করে মোবাইলে। মানস বড়লোকের বকাটে ছেলে কিন্তু মানষী ত তা নয় । মানষী এই সহরে নতুন । দ্বিতীয় বর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিঙের ছাত্রী । সাধারণ ঘরের মেয়ে। বাবা মা , মেয়েকে হস্টেলে রেখে নিশ্চিন্ত । মাস-গেলে মোটা টাকা মানষীর এখানকার ব্যাঙ্ক একাউন্টে ক্রেডিট হয়ে যাচ্ছে । প্রতিদিন মা রাতে একবার মেয়েকে ফোন না করলেই নয় । নানা প্রশ্ন ।
... হ্যাঁরে কি খাচ্ছিস ? পড়াশুনো করছিস ত ! ভালো রেজাল্ট করতে হবে মা । বাবার চাকরি আর বেশি দিন নেই।
...এক সঙ্গে এতগুলো প্রশ্নের জবাবে মানষী হাঁপিয়ে ওঠে ..... ওঃ মা , আমি কি বাচ্চা ? সব ঠিক আছে । তোমাদের চিন্তা করতে হবে না।
মায়ের মন কি বোঝে রে ! জীও সিমের জন্য ভিডিও কল করেন মা। মেয়েকে একবার চাক্ষুষ দেখা। মনে শান্তি যাইহোক মেয়ে আমার ভালোই আছে ।
মানস কলেজে তয়াতা ইনোভা নিয়ে আসে । রোজ নতুন নতুন সাজ । প্রচুর বন্ধু । মানষী ওর ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সর্বনাশ যে ডেকে আনছে তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলোনা । প্রত্যেক দিন ঘোরা , বেড়ান , দামী হটেলে খাওয়া আর গিফট পাওয়া। মানষীর রুম মেট অরুণা , ওকে অনেক বারুণ করে মানস এর সঙ্গে মেলা মেশা করতে । কিন্তু কোন ফল হয়না।
উলটে মানষী বলে , তুই বড় জেলাস । আসলে তুই সহ্য করতে পারিস না আমাকে আর মনিষ কে এক সঙ্গে । তাই বলে বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি । অরুণা চুপ থাকতে বাধ্য হয়।
এরমধ্যে মানস বাবার ফার্ম হাউসে মানষীকে নিয়ে এক সন্ধ্যা বেলায় ওঠে। মানস ড্রিংক করে । ফার্ম হাউসের দারোয়ান কে বলে বাইরে পাহারা দিতে।
দারোয়ান গরীব হলেও তার নৈতিকতা বোধ আছে। সে মানষীর মধ্যে তার গ্রামের মেয়ের ছবি দেখতে পায়। সে বলে , বাবু আপনার বাবা জানলে আমায় আস্ত রাখবেন না । আপনি বিটিয়াকে তার বাসায় নিয়ে জান । আপনি আমার ছেলের মতন বাবু । এই বুড়ো বাপের কথাটা শুনুন।
কথাগুলো শুনে মানষীর চৈতন্য উদ্রেক হয় । সে বুঝতে পারে সে এক ফাঁদে পা দিয়েছে । তাই হটাত ফার্ম হাউস থেকে দৌড়তে থাকে রাস্তার দিকে। রাস্তায় ছুটতে ছুটতে এক ভ্যান রিক্সা পায় । মানষী তাতেই উঠে পড়ে । গ্রামের রাস্তায় একা মেয়েকে সন্ধ্যা বেলায় ভ্যান রিক্সা বালা দেখে আশ্চর্য হয়।
মানষী হাত জোড় করে ভ্যান চালক কে বলে তার বড় বিপদ তাকে যেন নিয়ে যায় । একটা দশ টাকার নোট ও তার হাতে বাড়িয়ে দেয়।
ভ্যান রিক্সা-বালা বোঝে কিছু একটা ঘটেছে । বাক্যব্যয় না করে জোরে প্যাডেল চালায়।
মানস ছাড়ার পাত্র নয় । সে তার ইনোভা ছোটাল মানষীর পেছনে।
দারোয়ান তার পুরন সাইকেল নিয়ে ছুটল ওদের পেছনে কে জানে আজ কিছু অঘটন ঘটতে চলেছে কিনা ।
ইতিমধ্যে মানস , মানষীকে প্রায় ধরতে চলেছে । ঠিক সেই সময় প্রচণ্ড জোরে ইনো-ভা গাড়ীটা ধাক্কা লাগে রাস্তার ধারের এক গাছে। আসলে মানস প্রচুর ড্রিঙ্ক করেছিল তাই গাড়ী সামলাতে পারেনি। পাওয়ার স্টিয়ারিং একটু বেসামাল হলেই এক্সিডেন্ট অব্যর্থ । সেই হল ।
চক্ষের নিমিষে এক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। গাড়িটা প্রচণ্ড আওয়াজ করে থেমে গেল। ড্রাইভারের সিটের পাসের জানালা দিয়ে দেখা-গেল মানসের মাথা-থেকে প্রচণ্ড রক্ত স্রাব হচ্ছে ।
এরমধ্যে দারোয়ান এসে পৌঁছে যায়। ভ্যান রিক্সা চালক গাড়ি থামিয়ে ঘটনা দেখার জন্য নেবে পড়ে । মানষী নির্জীব মানুষের মতন বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সে বিশ্বাস করতে পারেনা তার নিজের চোখ কে । সে বুঝতে পারে এখন পুলিশের ঝামেলা হবে । বাবা মা’র কানে সব উঠবে। তার হয়ত পড়া বন্দ হতে পারে......।
নিজস্বী ছবিগুলো তার নিজের মোবাইল থেকে সব ডিলিট করে দেয়। কিন্তু মানসের মোবাইল ? সেটার কি করবে........... ?
৬১১ শব্দ ।

No comments:
Post a Comment