স্বামী বিবেকানন্দ : একটি ছোট্ট ঘটনা
সুপ্রভাত লাহিড়ী
স্বামী গভীরানন্দ-র ‘যুগনায়ক বিবেকানন্দ’ পড়তে পড়তে একটি ছোট্ট ঘটনার উদ্ধৃতি, বর্তমান জাগতিক জীবনের গভীর অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী হবে, এই ভেবে।
প্রথিতযশা ফরাসী গায়িকা মাদাম এমা কাল্ভে ১৮৯৪ খ্রিঃ অঃ-এর মার্চ মাসে, যখন তিনি যশের সর্বোচ্ব শিখরে অধিষ্ঠাতা, মেট্রোপলিটান অপেরা কোম্পানীর সংগে চিকাগোয় আসেন। এই নামকরা গায়িকাটি ছিলেন চড়া মেজাজী, একগুঁয়ে এবং পুরোমাত্রায় ভোগী মহিলা। স্বাভাবিক কারণেই তাঁর জীবনে শান্তি ছিল না। তিনি ছিলেন স্বামী বিচ্ছিন্না এবং তাঁর একমাত্র কন্যা ওই সময়েই আগুনে পুড়ে শিকাগোতেই মারা যায়। মাদাম কাল্ভে তখন জীবনের প্রতি সম্পুর্ন বীতশ্রদ্ধ এবং আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর এক বন্ধু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে স্বামী বিবেকানন্দর কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আর এরই মধ্যে চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বিফল হন। পঞ্চম বারের সময় যেন দৈব নির্দেশেই যে বান্ধবীর গৃহে স্বামীজি ছিলেন সেখানে এক ভোরে গিয়ে উপস্থিত হন। তাঁকে বৈঠকখানায় বসান হয়। আর মাদাম যখন চেয়ারে স্বপ্নাবিষ্টের মতন বসে আছেন সেই সময়ে তিনি শুনতে পেলেন পাশের ঘর থেকে কে যেন ডাকলেন, ‘ভেতরে এসো বাছা, ভয় পেয়ো না।’ যন্ত্রচালিতের মতন মাদাম সেই পাশের ঘরে প্রবেশ করেন। স্বামীজির পাঠকক্ষ। মাদাম দেখলেন, একটি চেয়ারে স্বামীজি উপবিষ্ট, সামনে টেবিল।
মাদাম ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। স্বামীজি ধ্যানমগ্ন, এক প্রশান্তির পরিবেশ। তাঁর গৈরিক পোশাক মেঝে অবধি নেমে এসেছে, পাগড়ী সামনের দিকে ঈষত্ ঝোঁকনো, নিম্নদৃষ্টি। একটু পরে চোখ না তুলেই বললেন, ‘বাছা, কী ঝোড়ো হাওয়াই না তুমি নিয়ে এলে। শান্ত হও।’ তারপর অতি শান্তস্বরে মাদামের জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কুঠুরির দরজা-জানলা হাট করে খুলে দিলেন। তাঁর জীবনের গোপন জটিলতা, উদ্বেগ সম্বন্ধে বহু কথা বলতে লাগলেন, যে সব কথা মাদামের ঘনিষ্টতম বন্ধুরাও জানত না। এ যেন এক অলৌকিক ব্যাপার। বিহ্বল হয়ে মাদাম প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি এত সব জানলেন কি করে? কে আপনাকে এ সব বলেছে? স্বামীজি মৃদু হেসে চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন, এ যেন এক বালখিল্যের ন্যায় প্রশ্ন! তারপর মৃদুস্বরে বলেন, ‘কেউ আমাকে কিছু বলেনি। আর বলার প্র্য়োজন আছে কি? আমি খোলা বইয়ের মতন তোমার ভেতরটা পড়তে পারি।’ তিনি তাঁকে আরও বলেন, ‘ তোমাকে সব ভুলে যেতে হবে। আবার খুশি হও। আর সুখী হও। নিজের শরীরটাকে সুস্থ করো। চুপ করে বসে শুধু দুঃখের কথা ভেবোনা। তোমার অন্তরের ভাবাবেগকে বাইরে কোন একটা রূপ দাও। তোমার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা দরকার। তোমার শিল্পকলার জন্যও এটা অত্যাবশ্যক।’
সেদিন স্বামীজির কথায়, তাঁর ব্যক্তিত্বে, যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন মাদাম এমা কাল্ভে। পরবর্তীতে স্বামীজির সংগে ঘনিষ্ট পরিচিতি হবার সুবাদে তিনি জেনেছিলেন যে স্বামীজি মানুষের বিশৃংখল চিন্তারাশিকে শান্ত করে ধীরে ধীরে স্বমত গ্রহনের উপযোগী করে তুলতেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কথাগুলি লোকে পূর্ণ ও অচঞ্চল মনোযোগে শুনতেন।
মাদাম কাল্ভে স্বামীজিকে পরবর্তীকালে ‘ম্ঁ পেরে’(আমার পিতা) বলে সম্বোধনও করতেন। তিনি ভারতবর্ষেও এসেছিলেন।
প্রথিতযশা ফরাসী গায়িকা মাদাম এমা কাল্ভে ১৮৯৪ খ্রিঃ অঃ-এর মার্চ মাসে, যখন তিনি যশের সর্বোচ্ব শিখরে অধিষ্ঠাতা, মেট্রোপলিটান অপেরা কোম্পানীর সংগে চিকাগোয় আসেন। এই নামকরা গায়িকাটি ছিলেন চড়া মেজাজী, একগুঁয়ে এবং পুরোমাত্রায় ভোগী মহিলা। স্বাভাবিক কারণেই তাঁর জীবনে শান্তি ছিল না। তিনি ছিলেন স্বামী বিচ্ছিন্না এবং তাঁর একমাত্র কন্যা ওই সময়েই আগুনে পুড়ে শিকাগোতেই মারা যায়। মাদাম কাল্ভে তখন জীবনের প্রতি সম্পুর্ন বীতশ্রদ্ধ এবং আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর এক বন্ধু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে স্বামী বিবেকানন্দর কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আর এরই মধ্যে চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বিফল হন। পঞ্চম বারের সময় যেন দৈব নির্দেশেই যে বান্ধবীর গৃহে স্বামীজি ছিলেন সেখানে এক ভোরে গিয়ে উপস্থিত হন। তাঁকে বৈঠকখানায় বসান হয়। আর মাদাম যখন চেয়ারে স্বপ্নাবিষ্টের মতন বসে আছেন সেই সময়ে তিনি শুনতে পেলেন পাশের ঘর থেকে কে যেন ডাকলেন, ‘ভেতরে এসো বাছা, ভয় পেয়ো না।’ যন্ত্রচালিতের মতন মাদাম সেই পাশের ঘরে প্রবেশ করেন। স্বামীজির পাঠকক্ষ। মাদাম দেখলেন, একটি চেয়ারে স্বামীজি উপবিষ্ট, সামনে টেবিল।
মাদাম ঘরে ঢুকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। স্বামীজি ধ্যানমগ্ন, এক প্রশান্তির পরিবেশ। তাঁর গৈরিক পোশাক মেঝে অবধি নেমে এসেছে, পাগড়ী সামনের দিকে ঈষত্ ঝোঁকনো, নিম্নদৃষ্টি। একটু পরে চোখ না তুলেই বললেন, ‘বাছা, কী ঝোড়ো হাওয়াই না তুমি নিয়ে এলে। শান্ত হও।’ তারপর অতি শান্তস্বরে মাদামের জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কুঠুরির দরজা-জানলা হাট করে খুলে দিলেন। তাঁর জীবনের গোপন জটিলতা, উদ্বেগ সম্বন্ধে বহু কথা বলতে লাগলেন, যে সব কথা মাদামের ঘনিষ্টতম বন্ধুরাও জানত না। এ যেন এক অলৌকিক ব্যাপার। বিহ্বল হয়ে মাদাম প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি এত সব জানলেন কি করে? কে আপনাকে এ সব বলেছে? স্বামীজি মৃদু হেসে চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালেন, এ যেন এক বালখিল্যের ন্যায় প্রশ্ন! তারপর মৃদুস্বরে বলেন, ‘কেউ আমাকে কিছু বলেনি। আর বলার প্র্য়োজন আছে কি? আমি খোলা বইয়ের মতন তোমার ভেতরটা পড়তে পারি।’ তিনি তাঁকে আরও বলেন, ‘ তোমাকে সব ভুলে যেতে হবে। আবার খুশি হও। আর সুখী হও। নিজের শরীরটাকে সুস্থ করো। চুপ করে বসে শুধু দুঃখের কথা ভেবোনা। তোমার অন্তরের ভাবাবেগকে বাইরে কোন একটা রূপ দাও। তোমার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা দরকার। তোমার শিল্পকলার জন্যও এটা অত্যাবশ্যক।’
সেদিন স্বামীজির কথায়, তাঁর ব্যক্তিত্বে, যারপরনাই মুগ্ধ হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন মাদাম এমা কাল্ভে। পরবর্তীতে স্বামীজির সংগে ঘনিষ্ট পরিচিতি হবার সুবাদে তিনি জেনেছিলেন যে স্বামীজি মানুষের বিশৃংখল চিন্তারাশিকে শান্ত করে ধীরে ধীরে স্বমত গ্রহনের উপযোগী করে তুলতেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কথাগুলি লোকে পূর্ণ ও অচঞ্চল মনোযোগে শুনতেন।
মাদাম কাল্ভে স্বামীজিকে পরবর্তীকালে ‘ম্ঁ পেরে’(আমার পিতা) বলে সম্বোধনও করতেন। তিনি ভারতবর্ষেও এসেছিলেন।
No comments:
Post a Comment