Thursday, December 6, 2012

মরিচিকা ২য় পর্ব। ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

        হ্যাল   কে ? মিন্টু বলছো বাবা ? একটু ব্যাঙ্কে বাবার খোঁজ নেবে বাবা । উনি না খেয়ে বাডিথেকে বেরিয়েছেন  এখনো ফেরেন নি ! ৪ টে বেজে গেল কোথায় গেলেন কিছু হদিস পাচ্ছিনা।(মিন্টু , আদিত্য বাবুর ছোট জামাই,  পি এন বে তে স্কেল১ অফিসার সদ্য কেরানি থেকে অফিসার ) 
-      মিন্টু   হ্যাঁ মা ! (আজকাল জামাই বাবা জীবন রা নিজের মায়ের চেয়ে শাশুডী মার বেশি ভক্ত) এখুনি দেখছি । স্কুটার নিয়ে মিন্টু বেরিয়ে যায় ।   
    মিন্টু ফোন করে ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করাতে উনি বলেন ,  সকলে পেনসন নিয়ে বাডি ফিরে গিয়েছেন। আদিত্য বাবু ত কখন চলেগিয়েছেন । বাডি ফেরেন নি ? মিন্টু র কেমন সন্দেহ হয় । ও সঙ্গে সঙ্গে থানাতে যায় ওখান থেকে যানতে পারে যে, এক ভদ্রলোক এর মাথায় আঘাৎ লেগেছে ।ওনাকে সম্ভবতঃ একটা অটো রিক্সা পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে।  উনি হস্পিটাল এ এমারজেন্সি ওয়ার্ডেতে আছেন ।
    মিন্টু এক বন্ধু কে সঙ্গে নিয়ে হস্পিটালে গিয়ে যা  দ্যাখে আকাশ থেকে পডে । ইনি তো শ্বশুর মশাই !  সম্পুর্ন সঙ্গাহীন অবস্থায় বাবা একটা বেঞ্চে শোয়ান । কেউ কোথাউ নেই। একটা গেঞ্জেল পুলিস কনষ্টেবল্ রোগি পাহারা দিচ্ছে   বাকি সবাই খেতে গিয়েছেন 
   মিন্টু  , ডাক্তার বাবু কে অধৈর্জ্য  হয়ে জিঙ্গাসা করলো ,” পেসেন্ট আমার বাবা, মানে শ্বশুর মশাই । ওনার অবস্থা কেমন ? ওনাকে এক্ষুনি ট্রিটমেন্ট  করতে হবে । কি ইঞ্জেকশান ওসুধ আনতে হবে তাডাতডি বলুন । ওঁর মাথায় আঘাৎ লেগেছে দেখছি । এখানে কি ন্যুরো সার্জেন আছেন? আমি নার্সিং হোমে নিয়ে যাব। ওনার ছেলে নেই আমি ওনার সব দেখা শুন কোরব। মাকে খবর দি। খুবি ঘাবডে যায় আদিত্য ।এক সঙ্গে এতগুল প্রশ্ন বানে ডাক্তার বিরক্ত প্রকাশ করেন। 
-      কোথায় ছিলেন এতক্ষন?
    এটা সরকারি ডাক্তারখানা । এক্সিডেন্ট এর কেস্ । আপনি জানেন না প্যারাফারনালিয়া আছে!  আমরা রেফার করছি ।  আমাদের ন্যুরো সার্জেন নেই এখানে। এস সি বি তে নিয়ে যান নয়তো ডাক্তার বসু ভাল ন্যুরো সার্জেন ওনাকে  দেখান । মাথায় চোট্ টা জো্রে লেগেছে । একটা অটো ড্রাইভার হস্পিটালে নিয়ে আসে । পুলিস ওকে আটকে রেখেছে ।  
-      আমি ; সি ডি এম্ ও কে দ্যখা করতে চাই। আমি ওনাকে এখান থেকে সিফট্ করাতে চাই ।  আমার কথা বলার সময় নেই প্লিজ কিছু করুন । মিন্টু এরমধ্যে অর্চনা  দেবিকে ফোন করেন । সব ঘটনা  জানিয়ে দেন। মা খুব শক্ত মনের মানুষ  উনি সহজে বিচলিত হন না। কিছুক্ষনের মধ্যে মা চলে আসেন ডাক্তার খানা তে । বড জামাই সুব্রত আর বড মেয়ে বিনা । সকলে এসে পডাতে মিন্টু হাঁফ  ছাডে হস্পিটালের কাজ সেরে ওরা আ্যাপোলো হস্পিটালে আদিত্য বাবুকে শিফট্ করান  ওখানে সঙ্গে সঙ্গে আই সি ইউ তে  ভর্ত্তি করার পর ডাক্তার বসু ন্যুরো সার্জেন আসেন । রোগীর চকিৎসা র কোন ত্রুটি হয়না । আমেরিকা তে রেক্স  কে খবর দেওয়া হয় । ও তিন দিনের মধ্যে এসে পৌঁছে যায় । সকলে উদ্গ্রিব কি হবে । রোগী কোমা তে থাকে প্রায় তিন দিন । পরে জ্ঞান আসে ।
   এর মধ্যে রেক্স  এসে পডে স্বস্ত্রীক । রেক্স এর আমেরিকান বউ জিনি কিছু কিছু পরামর্স দেয় ডাক্তার কে । কিন্তু বহু চেস্টার পরও আদিত্য বাবুর কোমর থেকে পা ওব্ধি প্যারালিসিস্ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস হস্পিটালে রেখে আদিত্য বাবু কে ঘরে আনা হয়। ভেন্টিলেটার  এ থাকার সময় ডাক্তার বলেন বন্দ করলে শেষ আপনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করুন সে কি বলে ? রেক্স রাজি হয়  না। বলে যতো টাকা লাগে দোব বাবার চিকিৎসা ভাল করে যেন হয় । তাই হল 
   এর মধ্যে অর্চনা দেবি বাপের বাডির ভাইদের কাছ থেকে কেস্ করে তাদের  জমি বিক্রি বাবদ ১০ লাখ টাকা পান  তাতে স্বামির চিকিৎসা এবং ঘরের খরচ সব চলে । ব্যাঙ্কের নগন্য মাত্র পেন্সন এর টাকা দিয়ে আগের ধার দেনা শোধ করেন। রেক্স   ভাল ছেলে তাই মাকে ডলার পাঠাতো। মা সেই টাকা দিয়ে ঘরটা বাডিয়ে তোলেন । তিন তালা ঘর বানান । ভাডা বসান । ভালই ভাডা পেতে লাগেন।ঘরে ঢুকলে আগে ভাডাটে পরে গৃহস্বামি । এর পর পুর্ব কির্তীর ফল ভোগ করেন কারন দুই জামাই ঘরের ভাগ চায় । অগত্যা তাদের চাহিদা পুরনের জন্য ছেলের পাঠান টাকা  দিয়ে দুট ফ্ল্যাট্ কিনে দুই জামাইকে দান করেন।
   প্রায় ৫ বছর বেড্ রিডিন থাকার পর আদিত্য বাবুর স্বর্গ বাস হয়  আদিত্য বাবুর বড বউদি ছোট বেলা থেকে ওনাকে মানুস করেন। উনি এসে কান্নায় ভেঙ্গে পডেন। এক ভাই নাটাবাবু আর সকল  ভাইপো এবং অর্চনা দেবির ভাইরা এসে দাঁড়ান (জদিও তাদের সর্বস্য নিয়ে যান ওই বোন) দুই মেয়ে জামাই উপস্থিৎ থেকে কাজ উদ্ধার হয়। পারলৌকিক কাজ আটকায়না কখন ।


                                    
  এর পর অর্চনা দেবি ঘর বিক্রি করে চলেজান ছোট মেয়ে জামাই এর কাছে । ছেলে আমার মস্ত বডলোক আর ভাইদের বলেন উনি প্রতিষ্ঠিত । তাই কোন ভাই আমল দেন না। এর পর ছেলের বাচ্চা সাম্লানোর জন্য আমেরিকা একাই যান । ফিরে তাঁর দিদিকে আমেরিকার গল্প শোনান । মাস মাস চলে আমেরিকা আর আমেরিকা র গল্প । দিদি আর থাকতে পারলেন না । তিনিও ভয়যার এর গ্রুপ এর সঙ্গে লন্ডন, গ্রীস, আয়ারল্যন্ড, ভেনিস, ইত্যাদি ঘুরে এলেন টা ১,৫০০০০কা খরচ করে । মানতে হয় ভাই এদের প্রতিযোগিতা আর টাকা অপব্যায়ের সমস্ত রাস্তা খুঞ্জে বার করা। এরা লোকের কাছে বিদেশে ্যাওয়ার গল্প ফাঁদার জন্য সব করতে পারে। 
দিদি এসেই সকল কে টেলিফনে জানায় আমেরিকার কথা । হাঁসব কি কাঁদবো জানিনা । হুঁ হাঁ তে উত্তর সেরে গিন্নী কে বললাম,
 গিন্নী কি বল, ইউরোপ আমেরকা যাবে নাকি ? 
- রক্ষে কর কাজ নেই ! বলি আদেকলা র হল ঘটি জল খেয়ে খেয়ে গেল প্রান্ টি ।
 
- আচ্ছা সব বউ রা কি তাদের ননদ কে টিটকিরি দেয়
 ?
- জানিনা বাপু । জা সত্যি তাই বললাম।এখন তোমার দিদি খারাপ লাগবেই । বেলা হল অফিস যাবেনা?
- না গেলে খাব কি
 ? আমার ছেলে ত এখনো পডা শেষ করেনি !আরেক বছর পর বি টেক্ শেষ  হবে তার পর এম বি এ যদি করে তো আর দু বছর । আমার কি ডলার আছে বসে খাব ?
- মুখ্যে আগুন ডলারের । দরকার নেই ওরকম ফিরিঙ্গী বউ এর ডলার ! লজ্যা   ঘেন্না নেই গো
 ? 
  পয়সা টা কি এতই বড ? 
- পয়সা ক্যা না করতা কাম
 ? গিন্নী ওটাই সব বাকি সব ফক্কা। 
ছেলে পাস করলো ভাল ভাবে । এম বি এর কোচিং নিতে শুরু করলো টাইমস্ এ।  এরমধ্যে ইনফসিস্ এর লিখিত পরীক্ষা তে ভাল করাতে মাইশুরে জএন্ করল ট্রেনিং এ । ছ মাস পর বেঙ্গালুরু তে ইনফো সিটি তে কাজে জয়েন করলো । ঢুকেই যা মাইনে পেল ভালই । আমার কোন প্রতিক্রিয়াই হল না। ওর মা যথা রিতি টেলিফোনে খবর নিত । মাস গেলে টেলিফোন এর বিল বাডতে লাগলো। নতুন চাকরি র প্রথম মাইনেতে ছেলে একটা মোবাইল কিনে দিল আমাকে । তখন মোবাইলের অনেক দাম ছিল ।
  ভালই লাগলো তবে আমার এই অপচয় ঠিক পছন্দ নয়। তখন ৭৫০০ টাকা একটা মোবাইল্ এর দাম ছিল । নাইবা রাখলাম মোবাইল   !   --ছেলে বলে,তোমার ল্যান্ড ফোন এর বিল্ টা তো বাঁচলো । 
-তোমার ওই হাড ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় আমার সখ্ এর কোন ইচ্ছে
 নেই। টাকা জমাও এম বি এ র জন্য । 
- ঠিক আছে।
 
- কিছুদিন পরেই ছেলে প্রজেক্ট এর কাজে কম্পানি থেকে আমেরিকা গেল । এক বছরের জন্য ।
 
রাত্তির ১২ টার ফ্লাইট্ । নেতাজী সুভাশ এয়ারপোরট্ থেকে দিল্লী,
 তারপর দিল্লী থেকে ফ্রাঁকফুট্ হয়ে নিউ ইয়রক্। আমি আর গিন্নী শুধু ভাবি কবে ফিরবে ! ব্রহ্মনের ছেলে ওখানে কি বলতে কি খাবে কে জানে? গিন্নীর পুজ বেডে গেল । উপোস তাপাস । আজ সংক্রান্তী কাল আমাবশ্যা পরশু পূর্ণিমা লেগেই রইল । আমার ভয় আমেরিকান বউ না ঘরে তোলে ? যা জুগ পডল ? 
- মনের কথা মনে রেখে আছি । হঠাৎ একদিন  দিদির ফোন
 , হ্যাঁরে তোর ছেলে আমেরিকা গেল খবর দিস নি?
 - দেওয়ার মত খবর হলে নিশ্চই  দিতাম।
- ও! তা কোন্ টা তোদের দেওয়ার মত খবর শুনি!!
 
- আগে মানুষ হোগ তার পর নিশ্চই দোব।
- হ্যাঁরে আমাদের পাডার সম্পাকে মনে আছে
 ?
- কে সম্পা
 ? না মনে নেই । কেন ?
- ওর সঙ্গে আমাদের ছেলে কে খুব মানাবে।
- এবার বুঝলি তো,
 কেন তোদের বলিনা কিছু !
- ২১  বছরের ছেলে কে তোরা বিয়ে দিয়ে গলায় একটা অপগন্ড মেয়ে ঝোলাবি?
 
- এখন তো বলছি না
 ?
- প্রয়োজন নেই । আগে এম বি এ
  করুগ । 
- ওর এম বি এর খরচ ওরাই দেবে।
-
  দিদি প্রসঙ্গ বদলা । আমার এ সব মেটেরিয়ালিস্টিক্ কথা  শুনতে একদম ভাল লাগে না।
- আমি অফিস্ যাচ্ছি । ছাডলাম ।
 
- ছেলেকে ফোন করব যে তার উপায় নেই । সব হাঁ করে কথা শুনবে। আমাদের মনের অবস্থা কেউ বোঝে না।
 
এক বছর ছ মাস পর ছেলে ফিরল। রাত্তির ২ টোর সময় ফ্লাইট্ এল। ওর মা'র চোখে জল। খুব ভাল চেহারা হয়ে গিয়েছে । একেই ফর্সা তাই ওখানকার হাওয়া বাতাসে খুব হ্যান্ডসাম লাগছিল । আসলে ছা পোসা বাঙ্গালির ঘরে একটু কেউ উন্নতি করলে ঢোল বাজানোর লোকের অভাব থাকেনা। এটাই বাঙ্গালির সবচেয়ে বাজে গুন। কস্মেটিক্স ইলেক্ট্রনিক্স এর জিনিস বোঝাই। সবাই এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ্ করে ঘরে ফিরলাম । ছেলের জন্য পাঁচ লিটার মিনারেল ওয়াটার কিনে রেখেছিলাম কারন ওখান থেকে এলেই আগে পেটের গন্ডগোল দ্যাখাদেয়
 
- বাডিতে মা রকমারি রান্না করেছিল। অনেক দিন পর ছেলেকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা । 
-না ছেলে আমার খুব ভাল। ওখানে নিজে হাতে রেঁধে খেত। মাইক্রো ওভেন এর রান্না।  
-ছেলে বল্ল বাবা অখানে সব পাওয়া জায়, শুধু মানুষ পাওয়া জায় না। সব মেসিনের মত।
-তা যে দেশের যা নিতি? তুমি আমি কে? ওদের দেখার জন্য সব হুড হুড করে যাচ্ছে।
- বাবা ম্রিগাঙ্ক আর ম্রিনালিনির সঙ্গে নিউ ইয়র্কে দেখা করলাম । ওরা পার্টি দিল।
- হ্যঁারে পার্টি তে মদ গিলিস্নিতো? গিন্নি শুধল মিহি কণ্ঠে ।
- হ্যাঁ।
-মানে?
-মানে আবার কি ? সকলে খেল আমিও খেলাম! মুচকি হেঁসে বলল।
-আহ্! কি হচ্ছে ? সুরু হল তো? আমি চোটে গেলাম ! আরম্ভ হল এক ঘেয়ে কথা।
-তুমি কেন চিন্তা কর বলত ? আমার ওতে আলার্জি , ছেলে বলল ।  

ক্রমশঃ- 

No comments:

Post a Comment