Tuesday, August 28, 2012

গণমানুষের কবি, সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহাপ্রয়ান দিবস উপলক্ষে


কাজী নজরুল ইসলাম :-
গণমানুষের কবি, সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন হাজার রকম বৈচিত্র্যে ভরা। তার জীবনের নানা অংশ জুড়ে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ আর গণমানুষের অধিকার আদায়ের তীব্র আকাক্সক্ষা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ তখন ইংরেজদের কুশাসনের দাবানলে পুড়ছিল। আর তাই কবি কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় বৈরীপক্ষ ছিল ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী। সঙ্গত কারনেই ব্রিটিশদের সইতে পারতেন না নজরুল। অন্যায়ের বিপক্ষে- সত্যের পক্ষে ও শোষিত মানুষের জন্য কথা বলতে গিয়ে নজরুল ব্রিটিশ শাসকের রোষানলে পড়ে জেল পর্যন্ত খেটেছেন। শুধু তাই নয় নজরুলের লেখার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে ব্রিটিশ সরকার। কাজী নজরুলের লেখা যুগবাণী, বিষের বাঁশি, ভাঙ্গার গান, প্রলয় শিখা ও চন্দ্রবিন্দুসহ মোট ৫টি গ্রন্থ ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। বলা বাহুল্য বাংলা সাহিত্যে সমকালীন অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিকের এত গ্রন্থ একত্রে কখনও বাজেয়াপ্ত হয়নি। তাই নজরুলের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ রাজরোষের মাত্রা এখান থেকেই অনুমান করা যায়। নজরুলের প্রতিবাদ আর তাঁর লেখনীর অন্যতম দিক হলো নজরুলই ভারতবর্ষে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন। নানা সৃষ্টিতে বৈচিত্র্যমণ্ডিত নজরুলের কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় পত্রিকা সম্পাদনাও। ১৯২২ সালে নজরুল 'ধূমকেতু' নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। পত্রিকাটি সপ্তাহে দু'বার প্রকাশ পেত। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ধূমকেতু'র দ্বাদশ সংখ্যায় 'আনন্দময়ীর আগমন' নামক একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটি ব্রিটিশ শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ফলে এই কবিতায় নজরুলের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজদ্রোহের মামলা হয়। একই বছরের ৮ নভেম্বর রাজদ্রোহের অপরাধে নজরুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত নজরুলের বিচার হয়েছিল কলকাতার আলীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। পরবর্তীতে এই মামলার রায়ে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি নজরুল এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। রায় ঘোষণার পরের দিন তাকে আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগে থেকেই নজরুলের কাব্য চেতনা আর সৃষ্টিশীল দ্রোহের সঙ্গে পরিচিত ছিল সাধারন মানুষ। এবার কারাবরণ করে নজরুল সমগ্র দেশবাসীর কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন। এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার 'বসন্ত' নাটকটি কবির নামে উৎসর্গ করেন। দিনটি ছিল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি। এদিকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল নজরুলকে আলীপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে হুগলী জেলে স্থানান্তর করা হয়। আলীপুরে নজরুল ছিলেন বিশেষ শ্রেণীর কয়েদি। কিন্তু হুগলিতে স্থানান্তরের পর নজরুলকে বিশেষ শ্রেণীর কয়েদির মর্যাদার পরিবর্তে সাধারণ শ্রেণীর কয়েদির অবস্থানে নামিয়ে দেওয়া হয়। হুগলী জেল সুপার মিস্টার আর্সটন ছিলেন নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত। বিশেষ করে রাজবন্দীদের সঙ্গে জেলের ভেতর অমানবিক নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করতেন তিনি। এ সময় নজরুল তার বিখ্যাত 'শিকল পরার গান' জেলে বসেই রচনা করেন। জেলখানার ভেতর অকথ্য নির্যাতন আর বৈষম্যের শিকার হয়ে নজরুল এখানেও বিদ্রোহী হয়ে ওঠলেন। শুরু করলেন আন্দোলন। আন্দোলনের সূত্র জেলখানায় পায়ে ডান্ডা বেড়ি, ভাতের বদলে মাড় ভাত ও রাজবন্দীদের নির্যাতনের প্রতিবাদ। এসব বন্ধের দাবিতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল হুগলী জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। দিনের পর দিন তিনি অনশন চালিয়ে যেতে থাকেন।
সে সময়কার কবির জেল জীবন সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারনা পাওয়া না গেলেও নজরুলের জেল জীবনের করুণ মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে কলকাতার আনন্দবাজার ও দেশ পত্রিকা। সেখানে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত একাধিক বিশ্লেষণী লেখায় নজরুলের সেই সময়কার অনশনসঙ্গীদের ভাষ্যে ফুটে ওঠে নজরুলের জেল জীবন। হুগলি জেলে কবি নজরুলের সঙ্গে মৌলভী সিরাজউদ্দীন এবং বাবু গোপাল চন্দ্র সেনও অনশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সূত্র মতে অনশনের কয়েকদিনের মধ্যেই নজরুল প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গে অযত্ন অনাহারে শরীরের ওজন প্রায় ১৩ কেজি কমে যায়। এভাবে নজরুল একটানা অনশন করে যান ৩৯ দিন। আশে-পাশের শুভাকাক্সক্ষী ও সাধারন মানুষ নজরুলের পরিণতির কথা চিন্তা করে আঁতকে ওঠলেও নজরুল তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অবিচল। সেই সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং নজরুলকে চিঠি লিখে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলং থেকে এ বিষয়ে তাকে টেলিগ্রাম পাঠান। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- 'Live up hunger strike. Our Literature claims you' কিন্তু টেলিগ্রামটি নজরুলের হাতে পৌঁছায়নি। জেল কর্তৃপক্ষ 'Address is not found' লিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে টেলিগ্রামটি ফেরত পাঠান। জেল কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ঠিকানা জানলেও ইচ্ছে করেই টেলিগ্রামটি নজরুলের কাছে না পাঠিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ফেরত পাঠান। রবীন্দ্রনাথ এ ঘটনায় দারুণ মর্মাহত হন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও নজরুলের অনশনে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি শিবপুর থেকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে হুগলী জেলে গিয়ে নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা ও অনীহার কারণে তিনি দেখা করতে পারেননি। ফলে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বেশি হতাশ হতে হয়েছিল তাকে। চুরুলিয়া থেকে নজরুলের মা জাহেদা খাতুনও নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হন। এসব সংবাদ খুব দ্রুতই চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমগ্র দেশবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অতঃপর শেষ পর্যন্ত অনশনের ৩৯ দিন পর কুমিল্লার মাতৃসম বিরজা সুন্দরী দেবীর অনুরোধে তারই হাতে লেবুর রস পান করে নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন। তিনি ছিলেন কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো কবি, ব্রিটিশদের কাছে তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। বার বার কারাভোগ করেছেন, নির্যাতিত হলেও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি, পিছিয়ে আসেননি কখনই। লড়াই চালিয়ে গেছেন সারা জীবন। এরপর উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। জাতীয় কবির সম্মাণ দিয়ে নজরুলকে ঢাকায় আনা হলো। একসময় সমস্ত ভক্তদের কাঁদিয়ে কবি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা এক মহান পুরুষ। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো চিরপ্রেমিক। দ্রোহ ও প্রেমের চিরবিদ্রোহী। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির জাগরণের কবি। বাংলা সাহিত্যের মুকুটহীন রাখালরাজা। বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ কবির জন্মদিন। ১১২তম জন্মবার্ষিকী।
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর বাকি হাতে রণ-তুর্য নিয়ে প্রেম ও দ্রোহের সম্মিলন ঘটাতে ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ নিখিল ভারতের অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। বাবা কাজী ফকির আহমদ, মা জায়েদা খাতুন তার ডাক নাম রেখেছিলেন দুখুমিয়া। চুরুলিয়ার বালক দুখুর শৈশবের কিছু সময় কাটে বাংলাদেশে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন। কিছুদিন কাটান চট্টগ্রামে। বিয়ে করেন কুমিল্লায়। প্রথমে দৌলতপুরের নার্গিস। সে বিয়ে টেকেনি। পরে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের প্রমিলা সেনকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকরুদ্ধ অসুস্থ কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন মুক্তি ও মানবতার কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যাকাশে ধূমকেতু রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। চিরপ্রেমিক চিরবিদ্রোহী কবি তার নাতিদীর্ঘ সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে নিজকালের মাটি ও মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গেছেন বাংলাকাব্যকে। পরাধীন শৃক্সখলিত জাতির স্বাধীনতার স্পৃহাকে জাগ্রত করতে বিদ্রোহের গান শুনিয়েছেন এ ভূখণ্ডের আপামর জনসাধারণকে। 'কারার-ই লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদি। ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ, ধ্বংস নিষাণ, উড়ুক তারার প্রাচীর ভেদী'। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের অহংবোধকে উত্তরসূরির মননে নাড়া দিতে নিজের লেখনী শক্তি দিয়ে বাজিয়েছেন আজন্ম প্রেমের মোহন বাঁশি_ 'তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ'?। কখনো গানে, কখনো বা কবিতায় বুনেছেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার বীজ_ 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মসলমান' কবিতায়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, মানবপ্রেমের পক্ষে আজীবন ছিলেন চিরজাগরুক তিনি। মানবকল্যাণ ও শান্তির চিরন্তন জয়গান গেয়েছেন আজীবন। মাত্র ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক রচনার পাশাপাশি বেশ সম্পাদিত করেছেন বেশ কিছু পত্রিকা। ব্রিটিশ শাসনবিরোধী লেখার জন্য কয়েকবার কারারুদ্ধও হয়েছেন সাংবাদিক-কবি নজরুল ইসলাম। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তার কয়েকটি বইও নিষিদ্ধ করে। অজ্ঞাত রোগে বাকরুদ্ধ ও লেখনি শক্তি হারিয়ে অকালে সাহিত্যাকাশ থেকে ঝরে পড়ার আগে সৈনিক-কবি এভাবেই তার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছিলেন কাব্যলক্ষ্মীকে_'অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে/প্রদীপ শিখা সম/, কাঁপিছে প্রাণ মম/তোমার সুন্দর ভঙ্গিতে। ... /
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে, এবং জাতির ক্রান্তিকালে সমস্যা সংকটের সময় সব বাধা অতিক্রমের প্রেরণা হয়ে আছেন কবি নজরুল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল তার লেখা কবিতা আর গান। এ বছর কবির অমরসৃষ্টি 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রচনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিপীড়িত-নির্যাতিত-বঞ্চিতদের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে কবির কলমের কালিতে অক্ষর আর শব্দের সম্মিলন ঘটেছিল যেন বিদ্রোহের আগুন। রচনা করেছিলেন কালজয়ী বিদ্রোহী_'বল বীর... / বল উন্নত মম শির।/ শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রির!/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাঁড়ি/চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক, দূ্যলোক, গোলক ভেদিয়া,/ খোদার আসন আরস ছেদিয়া /উঠিয়াছে চির-বিস্ময়, আমি বিশ্ব বিধাত্রির!/মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে/ রাজ রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর/আমি চির-উন্নত শির!'।
আজ জন্মদিনে কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানে পালন করা হচ্ছে ১১২তম জন্মবার্ষিকী। সকালে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির মাজার। আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান মালার। সকালে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে নজরুল মেলার উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে কবির অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুল একাডেমী, বাংলা একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি পালন করছে। গণমাধ্যমও দিনটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা এক মহান পুরুষ। ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো চিরপ্রেমিক। দ্রোহ ও প্রেমের চিরবিদ্রোহী। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বাঙালির জাগরণের কবি। বাংলা সাহিত্যের মুকুটহীন রাখালরাজা। বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ কবির জন্মদিন। ১১২তম জন্মবার্ষিকী।
এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর বাকি হাতে রণ-তুর্য নিয়ে প্রেম ও দ্রোহের সম্মিলন ঘটাতে ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ নিখিল ভারতের অবিভক্ত বাংলার (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল। বাবা কাজী ফকির আহমদ, মা জায়েদা খাতুন তার ডাক নাম রেখেছিলেন দুখুমিয়া। চুরুলিয়ার বালক দুখুর শৈশবের কিছু সময় কাটে বাংলাদেশে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে লেখাপড়া করেন। কিছুদিন কাটান চট্টগ্রামে। বিয়ে করেন কুমিল্লায়। প্রথমে দৌলতপুরের নার্গিস। সে বিয়ে টেকেনি। পরে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের প্রমিলা সেনকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকরুদ্ধ অসুস্থ কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় কবির মর্যাদা দেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন মুক্তি ও মানবতার কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যাকাশে ধূমকেতু রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। চিরপ্রেমিক চিরবিদ্রোহী কবি তার নাতিদীর্ঘ সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে নিজকালের মাটি ও মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গেছেন বাংলাকাব্যকে। পরাধীন শৃক্সখলিত জাতির স্বাধীনতার স্পৃহাকে জাগ্রত করতে বিদ্রোহের গান শুনিয়েছেন এ ভূখণ্ডের আপামর জনসাধারণকে। 'কারার-ই লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদি। ওরে ও তরুণ ঈশান বাজা তোর প্রলয় বিষাণ, ধ্বংস নিষাণ, উড়ুক তারার প্রাচীর ভেদী'। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের অহংবোধকে উত্তরসূরির মননে নাড়া দিতে নিজের লেখনী শক্তি দিয়ে বাজিয়েছেন আজন্ম প্রেমের মোহন বাঁশি_ 'তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ'?। কখনো গানে, কখনো বা কবিতায় বুনেছেন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনার বীজ_ 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মসলমান' কবিতায়। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে, মানবপ্রেমের পক্ষে আজীবন ছিলেন চিরজাগরুক তিনি। মানবকল্যাণ ও শান্তির চিরন্তন জয়গান গেয়েছেন আজীবন। মাত্র ২২ বছরের সাহিত্য জীবনে অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটক রচনার পাশাপাশি বেশ সম্পাদিত করেছেন বেশ কিছু পত্রিকা। ব্রিটিশ শাসনবিরোধী লেখার জন্য কয়েকবার কারারুদ্ধও হয়েছেন সাংবাদিক-কবি নজরুল ইসলাম। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তার কয়েকটি বইও নিষিদ্ধ করে। অজ্ঞাত রোগে বাকরুদ্ধ ও লেখনি শক্তি হারিয়ে অকালে সাহিত্যাকাশ থেকে ঝরে পড়ার আগে সৈনিক-কবি এভাবেই তার শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেছিলেন কাব্যলক্ষ্মীকে_'অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে/প্রদীপ শিখা সম/, কাঁপিছে প্রাণ মম/তোমার সুন্দর ভঙ্গিতে। ... /
আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে, এবং জাতির ক্রান্তিকালে সমস্যা সংকটের সময় সব বাধা অতিক্রমের প্রেরণা হয়ে আছেন কবি নজরুল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল তার লেখা কবিতা আর গান। এ বছর কবির অমরসৃষ্টি 'বিদ্রোহী' কবিতাটি রচনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে নিপীড়িত-নির্যাতিত-বঞ্চিতদের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করতে কবির কলমের কালিতে অক্ষর আর শব্দের সম্মিলন ঘটেছিল যেন বিদ্রোহের আগুন। রচনা করেছিলেন কালজয়ী বিদ্রোহী_'বল বীর... / বল উন্নত মম শির।/ শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রির!/বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাঁড়ি/চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি/ ভূলোক, দূ্যলোক, গোলক ভেদিয়া,/ খোদার আসন আরস ছেদিয়া /উঠিয়াছে চির-বিস্ময়, আমি বিশ্ব বিধাত্রির!/মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে/ রাজ রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!/বল বীর/আমি চির-উন্নত শির!'।

উত্সবের শহর কলকাতা আরও সুন্দরী হয়ে ওঠে শারোদোত্সবে...।
১৯৫৭-৫৮ সাল। 

আজ থেকে বহু বছর আগের কথা . তখন কলকাতা বলতে টালা থেকে টালিগঞ্জ বোঝাত . আমরা তখন বেলঘরিয়া তে থাকতাম 
ভাড়া ঘরে. ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা.তখন স্টিম ইঞ্জিন চলত. পুজোর জামা বলতে স্কুল ড্রেস. তাই পেয়েই খুশি .ষষ্ঠী র দিন 
মা কপালে চন্দনের টিপ দিয়ে আশির্বাদ করতেন দীর্ঘজীবি হও. সপ্তমী থেকে পাড়ার পুজো দেখে আর ভোগ খেয়ে প্রতিমা দর্শন. 
তারপর পায়ে হেঁটে বেলঘরিয়া, মোহিনী মিল,পুকপাড়া,নিমতা র পুজো. 
পরে র দিন অর্থাৎ অষ্টমীর দিন হাঁট তে হাঁট তে রথ তলা সিঁথি
ঘুরে পায়ের ব্যথা নিয়ে কখন অঘোরে ঘুমিয়ে পড়তাম.মা হয়ত পুজো র খরচের জন্য ১ আনা দিতেন তাতে রাস্তায় হয় চানাচুর নয় ঝুডিভাজা কিনে খেয়ে মহা আনন্দে ঘরে ফিরতাম। কত অল্পে আমরা সন্তুস্টো ছিলাম? এত আলোর রোস্নাই ছিল না কিম্বা প্যান্ডেলের জাঁক জমক ছিল না। সাবেকি পুজো । বিরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র র মহিশমর্দিনি র রেকর্ড বাজতো।সবাই বিভোর হয়ে শুনতো। আমার 
সঙ্গে একটা বেলুন. মাইকে এ শ্যামল মিত্রর গান ,"আমার স্বপ্নে দেখা রাজ কন্যা.." সেই গানের কলি র অর্থ বুঝতামনা তাও গাইতাম.
আবার কখনো মিন্টু দাস গুপ্তর প্যারডি,"আমি তো পকেট কাটিনি কেন মোরে দাও শুধু প্যাঁদানি". লতা মঙ্গেশকর এর," না যেও না এখনো রজনী বাকি বলে রাত জাগা পাখি " সলিল চৌধুরী র সাড়া জাগানো গান. কি বাচ্চা  কি বুডো সকলের মুখে ওই এক গান.সুপার হিট. 
গান  শুনলেই মন ভরে যেত . দূর্গা প্রতিমা দর্শন . কুমোরটুলির ঠাকুর ,,বাগবাজার সার্বজনীন পূজা,শোভা বাজার এর ঠাকুর,আহিডিতলা ,
পরে ফিরে দেশবন্ধু পার্ক ,শ্যাম বাজার এর পুজো। 
নবমির পুজো র সময় ঢ়াকের বাদ্যির তালে ধুনুচির নাচ । ছাগ বলি প্রথা তখন হোত কথাউ কথাউ। নবমির দিন পাডার পুজো বেশি উপভোগ্য ছিল।বন্ধু দের সঙ্গে হোই হুল্লোড । নাগর দোলনায় চডা । ফুচকা খাওয়া । খুব হৈ চৈ । 
দশমি যেন দেবির বিদায়ের সঙ্গে পুজো শেষ ।মহিলাদের পুজো প্যান্ডেলে সিঁদুর খেলা। তারপর প্রতিমা বিসর্জন ।   বিজয়ার প্রনাম সারতে সারতে ব্যাস্ ফুরলো পুজো         (২৯০ শব্দ)

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী, ৭৭ রামকান্ত বোস স্ট্রিট  
বাগবাজার , কলকাতা ৭০০ ০০৩

Monday, August 20, 2012

ফার্স্ট লাভ মেকিং ......সঙ্গিতা বন্দপাধ্যায়

ফার্স্ট লাভ মেকিং

 ......সঙ্গিতা বন্দপাধ্যায়

ফুসমন্তরের মতো একটা বারান্দা ছিল মেয়েটির ঘরের সঙ্গে। আর ফুসমন্তরের মতো দুটো একটা গাছ রাখত সে সেখানে। সেই বারান্দায় মেয়েটি অবলীলায় মেলতে পারত অন্তর্বাস, গোলাপি ব্রা, সাদা প্যান্টি। মা শিখিয়েছিল অন্তর্বাস মেলে তার ওপর দিয়ে একটা পাতলা ওড়না বা ওই জাতীয় কিছু বিছিয়ে দেওয়া উচিত। ব্রা, প্যান্টি সর্বসমক্ষে মেলাটা রুচিসম্মত নয়। মেয়েটি মানত না এই কারণ। বকা খেত, খেয়ে আবার সেই কাজটাই করত। মেয়েটি ছিল ছোট থেকেই একটু দুষ্টু। যেই কেউ তাকে বলত, “তুমি একটা মেয়ে তোমাকে এটা করতে নেই …”। যুক্তি তৈরি করত সে। যে যুক্তি দিয়ে করতে নেই” –কে খন্ডন করে ফেলা যায়। স্কুল ফাইনালের পরীক্ষার সময় সে তার ফুসমন্তর বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেত। এই সব ছোট ছোট প্রতিবাদ দিয়ে সে নিজে একটা অজানা অঙ্ক মেলাতে চেষ্টা করত আর কি!


ফুসমন্তর বারান্দা কেন ফুসমন্তর? ফুসমন্তর দিয়ে বড় কোন ম্যাজিক ঘটান সম্ভব হয় না। ওই রুমালকে বেড়াল, বিস্কুটের টিনকে সিভাস রিগাল করে দেওযা যায়, নারীর জীবন বদলে মানুষের জীবন বানানো যায় কি? ওই ছোট্ট বারান্দা ওইটুকুই মুক্তি, ছোট দুটো পাতাবাহার পান ওইটুকুই সবুজ!

যে সব ছোট ছোট বিষয়ে সে প্রতিবাদ করতে চাইত তার মধ্যে অন্যতম ছিল তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সতীত্বের ধারনা। তাকে সবাই শিখিয়েছিল শরীর একজনকেই দিতে হয়। বৈধ সম্পর্ককেই কেবল মাত্র শরীর দিয়ে ভালবাসতে হয়। বৈধ সম্পর্ক অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক!এমন কি স্কুলে তার সমবয়সী বন্ধুদেরও এই বিষয়ে নানা প্রেজুডিস ছিল। নানান নীতি নিয়ম তারা আরোপ করে বসত নিজেদের ইচ্ছে অনিচ্ছার ওপর। তারা সকলেই একমত ছিল এই বিষয়ে যে যাদের সঙ্গে তারা চুপিচুপি প্রেম করছে তারা প্রেমিক হলেও সর্বগ্রাসী পুরুষ, তারা সব সময় হাত ধরতে চায়, আর তাদের হাত চেটো তখন ঘামে ভিজে থাকে, তারা প্রেমিকার পাশে পাশে হাঁটতেও কুনুই ব্যবহার করে প্রেমিকার স্তনে ঠেলা মারে। যে সব ছেলেরা প্রেমের এক বছরের মধ্যে প্রেমিকাকে চুমু খেতে চায় তাদের সম্পর্কে মেয়েরা যথেষ্ট সন্দিহান। আমাদের মেয়েটির বন্ধুদের মধ্যে একজন তো প্রেমিক বরের চুম্বন প্রস্তাব আসা মাত্র তার সঙ্গ ত্যাগ করেছিল। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা কুড়ি বছর আগের। তখন মনের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত না হলে শরীরে পৌঁছনও যেত না। শরীর তখন মেয়েরা দিত”, ছেলেরা নিত’’, বলা যায় ভোগ করত। শরীর দেওয়াটা ছিল তখন শর্ত সাপেক্ষ মেয়েটিকে বিবাহ করার শর্তে একটি ছেলে মেয়েটির শরীরে অবগাহনের সুযোগ পেত, এখনও কবিতায় ছেলেরা মেয়েদের শরীরে অবগাহন করে, মেয়েদের পুরুষের শরীরে অবগাহন করার কথা শোনা যায় না।

যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময়ে একটা মেয়ে মনে করত ছেলেটা আমাকে যথার্থই ভালবাসে’, যদি ছেলেটা দেখা হলে শুধু প্রেমের বচন দিয়ে অনায়াসে অমনোযোগী হতে পারত মেয়েটির শরীরের প্রতি। অথচ আমাদের মেয়েটি প্রেমে পড়ে ছটফট করছিল আলিঙ্গনের জন্য, চুম্বনের জন্য। প্লেটোনিক প্রেমের সম্পর্কে ততদিনে সে পড়াশুনো করে ফেলেছে। প্লেটোনিক প্রেম সম্ভব কি সম্ভব নয় তা নিয়ে বিতর্ক থাকুক কিন্তু তার প্রেমটা শরীর এবং মন দুটোকেই আলোড়িত, আন্দোলিত করে, মন চায় শরীর দিয়ে বুঝতে অনুভব করতে।

নর্থ ক্যালকাটার মেয়ে নর্থের অলিগলি ঘুরে প্রেম করবে এটাই স্বাভাবিক, ছেলেটা ছিল বিয়ে করবইটাইপ। সদ্য চাকরি পেয়েছে, এবার বিয়ে। ছেলেটা জানে মেয়েটা একটু অন্যরকম, বুদ্ধিবৃত্তি প্রখর আবার ঢের আবেগে ঘাঁটা মেয়েটা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মেয়েটার শরীর কথা বলে। এই সব মেয়েদের চট করে বিয়ে করে দুটো বাচ্চা দিয়ে দিতে হয় কোলে, তবেই মেয়েগুলো মাটির বাড়ির মত হয়ে যায়। এই সব ভেবেই ছেলেটা প্রেম করেছিল মেয়েটার সঙ্গে। একদিন গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে বাড়িতে বকা খাওযা মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল ছেলেটাকে। ছেলেটা কাঠ। সেই কাঠকে মেয়েটা গভীর চুম্বন করল একটা। সেই মেয়েটার জীবনে প্রথম চুম্বন, ছেলেটারও তাই। চুম্বন শেষে আরও কিছু কথার পর দুজনে বাড়ির পথ ধরল। আর ছেলেটা ভাবল, একি মেয়ে রে ভাই? রাস্তার মধ্যে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল? মাত্র এক মাস চেনে আমাকে, চুমু খেয়ে ফেলল? এ তো চরিত্রহীন মেয়ে, খেলুড়ে, শরীর হ্যাংলা। একে তো কাল বিছানায় নিয়ে যেতে চাইলেই চলে যাবে। সতীত্ব ফতিত্ব তো এর কাছে ইস্যুই নয়। এই মেয়েকে বিয়ে করলে তো সর্বনাশ। আমি খেটে মরব আর এ পুরুষ সঙ্গের জন্য উলুক ঝুলুক করবে!

যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। ছেলেটা কিছুই বুঝতে দিল না মেয়েটাকে। মিশল মেয়েটার সঙ্গে, মেয়েটার শরীর নিল ধীরে ধীরে। আস্তে আস্তে তারিয়ে তারিয়ে। তারপর মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে একদিন বিয়ে করল অন্য একটা মেয়েকে। ছেলেদের সতীত্বের ধারনাটা খুব অদ্ভুত। একটা মেয়ে একটা ভার্জিন মেয়ে যদি তার ভার্জিনিটি তার প্রেমিককে দেয়, তাহলে যে পুরুষ সেটা পেল, সে সেটা নিল এমন কি তার কাছেও মেয়েটা আর ফ্রেশ থাকে না। মেয়েটা আমাকে দিয়ে দিলটা হয়ে যায় মেয়েটা বিয়ে না করেই একজনকে দিয়ে দিল?’ তাই তখন ছেলেটা বিয়ে করার জন্য আর একটা ফ্রেশ মেয়েকে খোঁজে যে মেয়েটারও ভার্জিনিটি কি না নিয়ে চলে গেছে আর একটা ছেলে। ওই একই রকম মানসিকতা নিয়ে। আমি দেখেছি পুরুষরা সব্বাই একটা বিষয়ে ভয়ঙ্কর আত্মপ্রতারণা করে। কোনও ছেলেকে জিজ্ঞেস করো তোমার বউয়ের সঙ্গে ফার্স্ট লাভ মেকিং-এ তোমার বউ ব্লিড করেছিল?’ মানে হোয়াট ডু ইউ থিংক? ওয়াজ শি আ ভার্জিন?
ছেলেটা একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় উত্তর দিতে আর অবধারিত ভাবে বলে, ‘হ্যাঁ, ব্লিড করেছিল!
কুড়ি বছরে অনেক কিছু বদলেছে, এমন কি এই বিষয়ে লেখার প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত অবসোলিট হয়ে গেছে, শুধু বদলায়নি ছেলেদের এই অন্যমনস্ক মিথ্যেটা!!!

Wednesday, August 15, 2012

...।।...।। আলি প্রান এর লেখা মা ....।।...।।  

মা, ওমা, মা! রাত্রির নীরবতার বুক ছিঁড়ে ছড়িয়ে আসে একটি অবুঝ শিশুর আর্তনাদ, গতকাল দুপুরে কোদাল নিয়ে যে শিশুটি মায়ের কবর খুঁড়ে তাকে তুলতে গিয়েছিল, রাত দুপুরে সে তার মায়ের কোল খুঁজে না পেয়ে কান্না জুড়ে, মা-া-া! সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর কান্
ত শরীরে যে বোন ঘুমিয়ে ছিল, তার ঘুম টুটে যায়। তার ছোট ভাইটি কাঁদছে, বোনটি তাকে স্পর্শ করেনা। হারিকেনের আলোটা বাড়িয়ে দেয়, সে জানে তার এই মর্মাহত ছোট ভাইটিকে এখন আদর করা মানে ওর দুঃখটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়া। নিরুপায় হয়ে আঁচলে মুখ গুঁজে কেঁদে প্রভুকে দোষারোপ করে, এমনটি কেন হলো বিধি! বুকে ভেতর মায়ের শোক, চোখের সামনে এই অবুঝ শিশুটির আর্তনাদ, শোকে শোকে বোনটির পাথুরে হওয়া। আমি দরজার পাপোশের উপর শুয়ে আছি, মা চলে যাবার পর এটাই আমার বিছানা। দরজা লাগাতে দেইনা কাউকে, আমি জানি আমার মা আসবেই।
শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে, আমিতো কাঁদতে পারিনা, তাই আমার ঘুম আসেনা। আজ কতদিন দু'চোখের পাতা এক করতে পারিনা, মা যদি এসে চলে যায়! আমি তাকে আর যেতে দেব না। আপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি জানি আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাববে, আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি, দরজা লাগিয়ে দিতে চাইবে। প্রতিদিনের মতো আজও তাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে। আমার সজাগ উপস্থিতি জানাতে বলি,' আপা, মরে গেলে মানুষ খুব নিষ্ঠুর হয়ে যায়! দেখলে-তো যে মা মাসুমকে ছাড়া এক-পলকও কোথাও থাকতে পারতো না, সেই মা-ই মাসুমের কান্না শুনে আসছে না।' এবার আপা আর নিজেকে সামলাতে পারেনি, বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে থাকি আর ভাবি, তারা গোনা শেষ হলেই হয়তো মা আসবে।
আমার কোন কিছুই ভালো লাগেনা, মায়ের হাতের পানি ছাড়া আমার তৃষ্ণা মিটে না। আপা জোর করে পুকুর ঘাটে নিয়ে গোসল করাতে চাইবে। মাথায় পানি ঢাললে যেটুকু পানি ঠোঁটের স্পর্শে আসে, আমি ইচ্ছা করেই গিলে ফেলি, মরতে চাই আমি, কে যেন বলেছিল, মরলে তোর মায়ের সাথে দেখা হবে। আপা বলতো পুকুরের পানি খেলে মানুষ মরে যায়। আমার সকল চিন্তা মাকে ঘিরে, আপা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খাবার গিলিয়ে দিতে চায়, কিন্তু পারেনা। একদিন আপাকে বললাম,' আমার একটা জিনিস খেতে খুব ইচ্ছে করে', আপা রাজ্যের আগ্রহ নিয়ে বললো, কী? আমি মায়ের মত ঘুমাতে চাই বলে বললাম, বিষ। একথা শুনে সে আমাকে অনেক মারলো, তারপর বুকে নিয়ে অনেক কাঁদলো। আমিও সেদিন কেঁদে ছিলাম, মায়ের মৃত্যুর দুইমাস পর এ আমার প্রথম কান্না, আমার শোকের পাথর গলে অশ্রুতে পরিণত হলো। আমার কান্না যেন আর থামতে চায়না, হঠাৎ হঠাৎ বুকের ভেতর বেদনার ঝড় উঠে, আমার মা যেন কোথাও কোন বিপদে পড়েছে, আসতে পারছেনা, আমি যেন তার আর্তনাদ শুনছি। মা যেন আমার জন্য কাঁদছে, আমার কাছে আসতে চাইছে, কিন্তু পারছেনা।
এখন আর আমাকে পাপোশে ঘুমাতে দেওয়া হয়না। জানালা দিয়ে মায়ের পথ পানে চেয়ে থাকতে হয়। আমার ঘুম হয়না, মাঝে মাঝে মনে হয় দরজা বন্ধ দেখে মা ফিরে চলে যাচ্ছে। আমি দরজা খুলে মা-মা বলে দৌড়াতে থাকি, কিন্তু কোথাও তিনি নেই। মাকে ধরতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটে। এবার আমার ঘরের দরজায় তালা। ওদের তালার কারণে আমার মা আসতে পারেনা ঘরে। আমি প্রায় শুনি, মা আমাকে ডাকছে, বাইরে থেকে তালা দেওয়া, আমি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি মা চলে যাচ্ছে।
তারপর অনেক দিন মা আসেনি, আবার একদিন আসবে, এই বাস্তবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, আমাকে নিয়ে যেতে, সেদিন কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবেনা।

মানুষ ভাবে এক হয় আরেক

পুরন লুনাটা নিয়ে আদিত্য বাবু বেরিয়ে পডলেন । আজ পেন্সন পাওয়ার তারিখ । তখন পেন্সন এর টাকা আনতে ব্যাঙ্কে জেতে হত ।  
-      স্ত্রী বললেন,  গাডীটা নিয়েই যাওনা !
-      আদিত্য ঃ না থাক । পেট্রোল এর যা  দাম বাডছে তাতে রিটায়ারের পর  আর গাডির সখ না করাই ভাল। 
-      -কেন ? রেক্স  তোমায় টাকা পাঠায় না ? আমেরিকা থেকে তোমার একাউন্টে ডলার তো ফি মাসে আসে । তবে কেন কষ্ট করবে তুমি ! খেয়ে যাওনা কিছু ! ওরম না খেলে শরীর খারাপ হলে কে দেখবে ? আমার কাথাত তোমার কাছে বাশি পান্তা !

-         - দ্যাখ কোথাউ বেরুবার সময় গজ গজ করনা । ভাল লাগেনা তোমার ওই একঘেয়ে আমেরিকা র কথা । আজকাল কার বাডিতে কোন ছেলে আমেরিকা না গিয়ে আছে ! আমাদের এ পাডাতে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ইঞ্জিনীর নয় ডাক্তার । হা ঘরের মত রাস্তায় ব্যাজ ব্যাজ কোরনাত।

-      “ছেলে ! বাবার মুখে চুন কালি দিয়েছে ছেলে !!”  মনে মনে গজরাতে লাগ্লেন আদিত্য বাবু ।   
-      -ওমা আমিকি তাই বোল্লাম নাকি?  কথার কি ছিরি দ্যাখ ? রিটায়ারমেন্টের পর  কি সবাই এই রকম কথা বলেন ! কিছু মুখে দিয়ে যাও না ?  
আদিত্য বাবু কথা কানে না দিয়ে জলখাবার না  খেয়েই চলে গেলেন ছেলের বিয়ের কথা জানার পর ওর কাছ থেকে এক পয়সা নেওয়া বন্দ করে দিয়েছেন।
সেদিন ব্যাঙ্কের পুরন বন্ধুদের সঙ্গে দ্যাখা । চা সিগারেটের ফোয়ারা ছুটল । পকেটে প্রথম পেন্সেন জদিও নগন্ন্য মাত্র কিন্তু আদিত্য বাবুর কোন অভিজোগ নেই এ ব্যাপারে কারন রিটায়ারমেন্টের পর স্টেট্ ব্যাঙ্কে খুব কম টাকা পেন্সেন দেয় । গ্রাচুইটির টাকা সব ফিক্সড ডেপসিট করে দিয়েছেন আদিত্য বাবু। কিছু বন্ধু ; ছেলের বিয়ের কথা পাডলেন । মেয়ে গছানোর লোকের ত অভাব নেই !  সব্বাই টোপ ফেলে আছেন যদি এই সুবাদে মেয়েকে গছানো যায়। ওসব কথায় আমল দিলেন না । ও প্রসংগ এডিয়ে ওন্য কথা বলতে লাগ্লেন । কারন ওনার ছেলে এক আমেরিকান সহ কর্মিকে বিয়ে করে ফেলেছে মা’কে  যানিয়েছিল বাবকে যানায় নি। সেই থেকে আদিত্য বাবুর ছেলের ওপর অভিমান ।
-         দুটো বেজে গিয়েছে , অর্চনা দেবি ঘরে পায়চারি কোরতে কোরতে বললেন । মানুস টার এখনো   আসার সময় হলনা ? ৩ টে বাজল ৪ টে বাজল স্বামির আসার কোন
-    
-      আভাস  পেলেন না । তখন মোবাইল ছিল না । ল্যান্ড ফোন ই ভরসা । কি ভেবে,  ছোট জামাই কে ফোন কোরলেন ।
-      হ্যাল ! কে ? মিন্টু বলছো বাবা ? একটু ব্যাঙ্কে বাবার খোঁজ নেবে বাবা । উনি না খেয়ে বাডিথেকে বেরিয়েছেন  এখনো ফেরেন নি ! ৪ টে বেজে গেল কোথায় গেলেন কিছু হদিস পাচ্ছিনা।(মিন্টু , আদিত্য বাবুর ছোট জামাই,  পি এন বে তে স্কেল১ অফিসার ) 
-      মিন্টু ।  হ্যাঁ মা ! (আজকাল জামাই বাবা জীবন রা নিজের মায়ের চেয়ে শাশুডী মা’র বেশি ভক্ত) এখুনি দেখছি । স্কুটার নিয়ে মিন্টু বেরিয়ে যায় ।   
মিন্টু ফোন করে ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করাতে উনি বলেন ,  সকলে পেনসন নিয়ে বাডি ফিরে গিয়েছেন। আদিত্য বাবু ত কখন চোলেগিয়েছেন । বাডি ফেরেন নি ? মিন্টু র কেমন সন্দেহ হয় । ও সঙ্গে সঙ্গে থানাতে যায় ওখান থেকে যানতে পারে যে, এক ভদ্রলোক এর  মাথায় আঘাৎ লেগেছে । উনি  হস্পিটাল এ এমারজেন্সি ওয়ার্ড এতে আছেন ।
এক বন্ধু কে সঙ্গে নিয়ে হস্পিটালে গিয়ে জা দ্যাখে আকাশ থেকে পডে মিন্টু । ইনি তো শ্বশুর মশাই । সম্পুর্ন ঙ্গানহীন অবস্থায় বাবা একটা বেঞ্চে শোআন । কেউ কোথাউ নেই। একটা পুলিস কনষ্টেবল্ রোগি পাহারা দিচ্ছে বাকি সবাই খেতে গিয়েছে ।
মিন্টু  , ডাক্তার বাবু কে অধৈর্জ্য  হয়ে জিঙ্গাসা করলো ,” পেসেন্ট আমার বাবা, মানে শ্বশুর মশাই । ওনার অবস্থা কেমন ? ওনাকে এক্ষুনি ট্রিট মেন্ট  করতে হবে । কি ইঞ্জেকশান ওসুধ আনতে হবে তাডাতডি বলুন । ওঁর মাথায় আঘাৎ লেগেছে দেখছি । এখানে কি ন্যুরো সার্জেন আছেন? আমি নার্সিং হোমে নিয়ে যাব। ওনার ছেলে নেই আমি ওনার সব দেখা শুন কোরব। মাকে খবর দি। খুবি ঘাবডে যায় আদিত্য ।এক সঙ্গে এতগুল প্রশ্ন বানে ডাক্তার বিরক্ত প্রকাশ করেন। 
-      কোথায় ছিলেন এতক্ষন? এটা সরকারি ডাক্তারখানা । এক্সিডেন্ট এর কেস্ ।আপনি জানেন না প্যারাফারনালিয়া আছে!  আমরা রেফার করছি ।  আমাদের ন্যুরো সার্জেন নেই এখানে। এস সি বি তে নিয়ে যান নয়তো ডাক্তার বসু ভাল ন্যুরো সার্জেন ওনাকে  দেখান । মাথায় চোট্ টা জো্রে লেগেছে । একটা অটো ড্রাইভার হস্পিটালে নিয়ে আসে । পুলিস ওকে আটকে রেখেছে ।  
-      আমি ; সি ডি এম্ ও কে দ্যখা করতে চাই। আমি ওনাকে এখান থেকে সিফট্ করাতে চাই ।  আমার কথা বলার সময় নেই প্লিজ কিছু করুন । মিন্টু এরমধ্যে অর্চনা  
                                         

দেবিকে ফোন করেন । সব ঘটনা  জানিয়ে দেন। মা খুব শক্ত মনের মানুষ উনি সহজে বিচলিত হন না। কিছুক্ষনের মধ্যে মা চলে আসেন ডাক্তার খানা তে । বড জামাই সুব্রত আর বড মেয়ে বিনা । সকলে এসে পডাতে মিন্টু হাঁফ  ছাডে ।হস্পিটালের কাজ সেরে ওরা আ্যাপোলো হস্পিটালে আদিত্য বাবুকে শিফট্ করান হয়। ওখানে সঙ্গে সঙ্গে আই সি ইউ তে  ভর্ত্তি করার পর ডাক্তার বসু ন্যুরো সার্জেন আসেন । রোগীর চকিৎসা র কোন ত্রুটি হয়না । আমেরিকা তে রেক্স  কে খবর দেওয়া হয় । ও তিন দিনের মধ্যে এসে পৌঁছে যায় । সকলে উদ্গ্রিব কি হবে । রোগী কোমা তে থাকে প্রায় তিন দিন । পরে জ্ঞান আসে ।
এর মধ্যে রেক্স  এসে পডে স্বস্ত্রীক । রেক্স এর আমেরিকান বউ জিনি কিছু কিছু পরামর্স দেয় ডাক্তার কে । কিন্তু বহু চেস্টার পরও আদিত্য বাবুর কোমর থেকে পা ওব্ধি প্যারালিসিস্ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস হস্পিটালে রেখে আদিত্য বাবু কে ঘরে আনা হয়। ভেন্তিলেটর এ থাকার সময় দাক্তার বলেন বন্দ করলে শেষ আপনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করুন সে কি বলে ? রেক্স রাজি হয় না। বলে যতো টাকা লাগে দোব বাবার চিকিৎসা ভাল করে যেন হয় । তাই হল
এর মধ্যে অর্চনা দেবি বাপের বাডির ভাইদের কাছ থেকে কেস্ করে তাদের  জমি বিক্রি বাবদ ১০ লাখ টাকা পান তাতে স্বামির চিকিৎসা এবং ঘরের খরচ সব চলে । ব্যাঙ্কের নগন্য মাত্র পেন্ সন এর টাকা দিয়ে আগের ধার দেনা শোধ করেন। রেক্স   ভাল ছেলে তাই মাকে ডলার পাঠাতো। মা সেই টাকা দিয়ে ঘরটা বাডিয়ে তোলেন । তিন তালা ঘর বানান । ভাডা বসান । ভালই ভাডা পেতে লাগেন। এর পর পুর্ব কির্তীর ফল ভোগ করেন কারন দুই জামাই ঘরের ভাগ চায় । আগত্যা তাদের চাহিদা পুরনের জন্য ছেলের পাঠান টাকা দিয়ে দুট ফ্ল্যাট্ কিনে দুই জামাইকে দান করেন। 
প্রায় ৫ বছর বেড্ রিডিন থাকার পর আদিত্য বাবু স্বর্গ বাস হয় আদিত্য বাবুর বড বউদি ছোট বেলা থেকে ওনাকে মানুস করেন। উনি এসে কান্নায় ভেঙ্গে পডেন। এক ভাই নাটাবাবু আর সকল ভাইপো এবং অর্চনা দেবির ভাইরা এসে দাঁড়ান (জদিও তাদের সর্বস্য নিয়ে যান ওই বোন) দুই মেয়ে জামাই উপস্থিৎ থেকে কাজ উদ্ধার হয়। পারলৌকিক কাজ আটকায়না কখন ।


                                    
এর পর অর্চনা দেবি ঘর বিক্রি করে চলেজান ছোট মেয়ে জামাই এর কাছে । ছেলে আমার মস্ত বডলোক আর ভাইদের বলেন উনি প্রতিষ্ঠিত । তাই কোন ভাই আমল দেন না। এর পর ছেলের বাচ্চা সাম্লানোর জন্য আমেরিকা একাই যান । ফিরে তাঁর দিদিকে আমেরিকার গল্প শোনান । মাস মাস চলে আমেরিকা আর আমেরিকা র গল্প । দিদি আর থাকতে পারলেন না । তিনিও ভয়যার এর গ্রুপ এর সঙ্গে লন্ডন, গ্রীস, আয়ারল্যন্ড, ভেনিস, ইত্যাদি ঘুরে এলেন টা ১,৫০০০০কা খরচ করে । মানতে হয় ভাই এদের প্রতিযোগিতা আর টাকা অপব্যায়ের সমস্ত রাস্তা খুঞ্জে বার করা।এরা লোকের কাছে বিদেশে ্যাওয়ার গল্প ফাঁদার জন্য সব করতে পারে। 
দিদি এসেই সকল কে টেলিফনে জানায় আমেরিকার কথা । হাঁসব কি কাঁদবো জানিনা । হুঁ হাঁ তে উত্তর সেরে গিন্নী কে বললাম, গিন্নী কি বল, ইউরোপ আমেরকা যাবে নাকি ? 
- রক্ষে কর কাজ নেই ! বলি আদেকলা র হল ঘটি জল খেয়ে খেয়ে গেল প্রান্ টি । 
- আচ্ছা সব বউ রা কি তাদের ননদ কে টিটকিরি দেয় ?
- জানিনা বাপু । জা সত্যি তাই বললাম।এখন তোমার দিদি খারাপ লাগবেই । বেলা হল অফিস যাবেনা?
- না গেলে খাব কি ? আমার ছেলে ত এখনো পডা শেষ করেনি !আরেক বছর পর বি টেক্ শেষ  হবে তার পর এম বি এ যদি করে তো আর ডু বছর । আমার কি ডলার আছে বসে খাব?
- মুখ্যে আগুন ডলারের । দরকার নেই ওরকম ফিরিঙ্গী বউ এর ডলার ! লজ্যা ঘেন্না নেই গো ? 
  পয়সা টা কি এতই বড ? 
- পয়সা ক্যা না করতা ? গিন্নী ওটাই সব বাকি সব ফক্কা। 
ছেলে পাস করলো ভাল ভাবে । এম বি এর কোচিং নিতে শুরু করলো । এরমধ্যে ইনফসিস্ এর লিখিত পরীক্ষা তে ভাল করাতে মাইশুরে জএন্ করল ট্রেনিং এ । ছ মাস পর বেঙ্গালুরু তে ইনফো সিটি তে কাজে জয়েন করলো । ঢুকেই যা মাইনে পেল ভালই । আমার কোন প্রতিক্রিয়াই হল না। ওর মা যথা রিতি টেলিফোনে খবর নিত । মাস গেলে টেলিফোন এর বিল বাডতে লাগলো। নতুন চাকরি র প্রথম মাইনেতে ছেলে একটা মোবাইল কিনে দিল। তখন মোবাইলের অনেক দাম ছিল ।  ভালই লাগলো তবে আমার এই অপচয় ঠিক পছন্দ নয়। ৭৫০০ টাকা একটা মোবাইল্। না হল !   --ছেলে বলে, তোমার ল্যান্ড ফোন এর বিল্ টা তো বাঁচলো । 
-তোমার ওই হাড ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় আমার সখ্ এর কোন ইছে নেই। টাকা জমাও এম বি এ র জন্য । 
- ঠিক আছে। 
- কিছুদিন পরেই ছেলে প্রজেক্ট এর কাজে কম্পানি থেকে আমেরিকা গেল । এক বছরের জন্য । 
রাত্তির ১২ টার ফ্লাইট্ । নেতাজী সুভাশ এয়ারপোরট্ থেকে দিল্লী, তারপর দিল্লী থেকে ফ্রাঁকফুট্ হয়ে নিউ ইয়রক্। আমি আর গিন্নী শুধু ভাবি কবে ফিরবে ! ব্রহ্মনের ছেলে ওখানে কি বলতে কি খাবে কে জানে?গিন্নীর পুজ বেডে গেল । উপোস তাপাস । আজ সংক্রান্তী কাল আমাবশ্যা লেগেই রইল । 
- মনের কথা মনে রেখে আছি । হঠাৎ দিদির ফোন , হ্যাঁরে তোর ছেলে আমেরিকা গেল খবর দিস নি?  - দেওয়ার মত খবর হলে নিশ্চই  দিতাম।
- ও! তা কোন্ টা তোদের দেওয়ার মত খবর শুনি!! 
- আগে মানুষ হোগ তার পর নিশ্চই দোব।
- হ্যাঁরে আমাদের পাডার সম্পাকে মনে আছে ?
- কে সম্পা ? না মনে নেই । কেন ?
- ওর সঙ্গে আমাদের ছেলে কে খুব মানাবে।
- এবার বুঝলি তো, কেন তোদের বলিনা কিছু !
- ২২ বছরের ছেলে কে তোরা বিয়ে দিয়ে গলায় একটা অপগন্ড মেয়ে ঝোলাবি? 
- এখন তো বলছি না ?
- প্রয়োজন নেই । আগে এম বি এ  করুগ । 
- ওর এম বি এর খরচ ওরাই দেবে।
-  দিদি প্রসঙ্গ বদলা । আমার এ সব মেটেরিয়ালিস্টিক্ কথা  শুনতে একদম ভাল লাগে না।
- আমি অফিস্ যাচ্ছি । ছাডলাম । 
- ছেলেকে ফোন করব যে তার উপায় নেই । সব হাঁ করে কথা শুনবে। আমাদের মনের অবস্থা কেউ বোঝে না। 
এক বছর ছ মাস পর ছেলে ফিরল। রাত্তির ২ টোর সময় ফ্লাইট্ এল। ওর মা'র চোখে জল। খুব ভাল চেহারা হয়ে গিয়েছে । একেই ফর্সা তাই ওখানকার হাওয়া বাতাসে খুব হ্যান্ডসাম লাগছিল । আসলে ছা পোসা বাঙ্গালির ঘরে একটু কেউ উন্নতি করলে ঢোল বাজানোর লোকের অভাব থাকেনা।এটাই বাঙ্গালির সবচেয়ে বাজে গুন। কস্মেটিক্স ইলেক্ট্রনিক্স এর জিনিস বোঝাই। সবাই এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ্ করে ঘরে ফিরলাম । ছেলের জন্য মিনারেল ওয়াটার কিনে রেখেছিলাম কারন অখান থেকে এলেই আগে পেটের গন্ডগোল দ্যাখাদেয় ।