Tuesday, August 28, 2012
উত্সবের
শহর কলকাতা আরও সুন্দরী হয়ে ওঠে শারোদোত্সবে...।
১৯৫৭-৫৮ সাল।
আজ থেকে বহু বছর আগের কথা .
তখন কলকাতা বলতে টালা থেকে টালিগঞ্জ বোঝাত . আমরা তখন বেলঘরিয়া তে থাকতাম
ভাড়া ঘরে. ১৯৫৭-৫৮ সালের কথা.তখন
স্টিম ইঞ্জিন চলত. পুজোর জামা বলতে স্কুল ড্রেস. তাই পেয়েই খুশি .ষষ্ঠী র দিন
মা কপালে চন্দনের টিপ দিয়ে
আশির্বাদ করতেন দীর্ঘজীবি হও. সপ্তমী থেকে পাড়ার পুজো দেখে আর ভোগ খেয়ে প্রতিমা
দর্শন.
তারপর পায়ে হেঁটে বেলঘরিয়া, মোহিনী
মিল,পুকপাড়া,নিমতা
র পুজো.
পরে র দিন অর্থাৎ অষ্টমীর
দিন হাঁট তে হাঁট তে রথ তলা সিঁথি
ঘুরে পায়ের ব্যথা নিয়ে কখন
অঘোরে ঘুমিয়ে পড়তাম.মা হয়ত পুজো র খরচের জন্য ১ আনা দিতেন তাতে রাস্তায় হয় চানাচুর
নয় ঝুডিভাজা কিনে খেয়ে মহা আনন্দে ঘরে ফিরতাম। কত অল্পে আমরা সন্তুস্টো ছিলাম? এত আলোর রোস্নাই ছিল না কিম্বা প্যান্ডেলের
জাঁক জমক ছিল না। সাবেকি পুজো । বিরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র র মহিশমর্দিনি র রেকর্ড
বাজতো।সবাই বিভোর হয়ে শুনতো। আমার
সঙ্গে একটা বেলুন. মাইকে এ
শ্যামল মিত্রর গান ,"আমার স্বপ্নে দেখা রাজ কন্যা.." সেই
গানের কলি র অর্থ বুঝতামনা তাও গাইতাম.
আবার কখনো মিন্টু দাস গুপ্তর
প্যারডি,"আমি
তো পকেট কাটিনি কেন মোরে দাও শুধু প্যাঁদানি". লতা মঙ্গেশকর এর," না যেও না এখনো রজনী
বাকি বলে রাত জাগা পাখি " সলিল চৌধুরী র সাড়া জাগানো গান. কি বাচ্চা কি বুডো সকলের মুখে ওই এক গান.সুপার হিট.
গান শুনলেই
মন ভরে যেত . দূর্গা প্রতিমা দর্শন . কুমোরটুলির ঠাকুর ,,বাগবাজার
সার্বজনীন পূজা,শোভা
বাজার এর ঠাকুর,আহিডিতলা ,
পরে ফিরে দেশবন্ধু পার্ক ,শ্যাম
বাজার এর পুজো।
নবমির পুজো র সময় ঢ়াকের
বাদ্যির তালে ধুনুচির নাচ । ছাগ বলি প্রথা তখন হোত কথাউ কথাউ। নবমির দিন পাডার
পুজো বেশি উপভোগ্য ছিল।বন্ধু
দের সঙ্গে হোই হুল্লোড । নাগর দোলনায় চডা । ফুচকা খাওয়া । খুব হৈ চৈ ।
দশমি যেন দেবির বিদায়ের সঙ্গে
পুজো শেষ ।মহিলাদের পুজো প্যান্ডেলে সিঁদুর খেলা। তারপর প্রতিমা বিসর্জন । বিজয়ার প্রনাম সারতে সারতে ব্যাস্ ফুরলো
পুজো। (২৯০ শব্দ)
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জ্জী, ৭৭
রামকান্ত বোস স্ট্রিট
বাগবাজার , কলকাতা ৭০০ ০০৩
Monday, August 20, 2012
ফার্স্ট লাভ মেকিং ......সঙ্গিতা বন্দপাধ্যায়
ফার্স্ট লাভ মেকিং
......সঙ্গিতা বন্দপাধ্যায়
ফুসমন্তরের মতো একটা
বারান্দা ছিল মেয়েটির ঘরের সঙ্গে। আর ফুসমন্তরের মতো দুটো একটা গাছ রাখত সে
সেখানে। সেই বারান্দায় মেয়েটি অবলীলায় মেলতে পারত অন্তর্বাস,
গোলাপি
ব্রা, সাদা প্যান্টি। মা শিখিয়েছিল অন্তর্বাস মেলে তার ওপর দিয়ে একটা
পাতলা ওড়না বা ওই জাতীয় কিছু বিছিয়ে দেওয়া উচিত। ব্রা,
প্যান্টি
সর্বসমক্ষে মেলাটা রুচিসম্মত নয়। মেয়েটি মানত না এই কারণ। বকা খেত,
খেয়ে
আবার সেই কাজটাই করত। মেয়েটি ছিল ছোট থেকেই একটু দুষ্টু। যেই কেউ তাকে বলত,
“তুমি
একটা মেয়ে তোমাকে এটা করতে নেই …”। যুক্তি তৈরি করত সে।
যে যুক্তি দিয়ে “করতে নেই” –কে খন্ডন করে ফেলা যায়। স্কুল ফাইনালের পরীক্ষার সময় সে তার
ফুসমন্তর বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খেত। এই সব ছোট ছোট প্রতিবাদ দিয়ে সে নিজে
একটা অজানা অঙ্ক মেলাতে চেষ্টা করত আর কি!
ফুসমন্তর বারান্দা – কেন ফুসমন্তর?
ফুসমন্তর
দিয়ে বড় কোন ম্যাজিক ঘটান সম্ভব হয় না। ওই রুমালকে বেড়াল,
বিস্কুটের
টিনকে সিভাস রিগাল করে দেওযা যায়, নারীর জীবন বদলে মানুষের
জীবন বানানো যায় কি? ওই ছোট্ট বারান্দা – ওইটুকুই মুক্তি,
ছোট
দুটো পাতাবাহার পান – ওইটুকুই সবুজ!
যে সব ছোট ছোট বিষয়ে সে প্রতিবাদ করতে চাইত তার মধ্যে অন্যতম ছিল
তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সতীত্বের ধারনা। তাকে সবাই শিখিয়েছিল শরীর একজনকেই দিতে হয়।
বৈধ সম্পর্ককেই কেবল মাত্র শরীর দিয়ে ভালবাসতে হয়। বৈধ সম্পর্ক অর্থাৎ
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক!এমন কি স্কুলে তার সমবয়সী বন্ধুদেরও এই বিষয়ে নানা
প্রেজুডিস ছিল। নানান নীতি নিয়ম তারা আরোপ করে বসত নিজেদের ইচ্ছে অনিচ্ছার ওপর।
তারা সকলেই একমত ছিল এই বিষয়ে যে যাদের সঙ্গে তারা চুপিচুপি প্রেম করছে তারা
প্রেমিক হলেও সর্বগ্রাসী পুরুষ, তারা সব সময় হাত ধরতে
চায়, আর তাদের হাত চেটো তখন ঘামে ভিজে থাকে,
তারা
প্রেমিকার পাশে পাশে হাঁটতেও কুনুই ব্যবহার করে প্রেমিকার স্তনে ঠেলা মারে। যে সব
ছেলেরা প্রেমের এক বছরের মধ্যে প্রেমিকাকে চুমু খেতে চায় তাদের সম্পর্কে মেয়েরা
যথেষ্ট সন্দিহান। আমাদের মেয়েটির বন্ধুদের মধ্যে একজন তো প্রেমিক বরের চুম্বন
প্রস্তাব আসা মাত্র তার সঙ্গ ত্যাগ করেছিল। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা কুড়ি বছর
আগের। তখন মনের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত না হলে শরীরে পৌঁছনও যেত না। শরীর তখন
মেয়েরা “দিত”, ছেলেরা “নিত’’, বলা যায় ‘ভোগ করত’। শরীর দেওয়াটা ছিল তখন শর্ত সাপেক্ষ –
মেয়েটিকে
বিবাহ করার শর্তে একটি ছেলে মেয়েটির শরীরে অবগাহনের সুযোগ পেত,
এখনও
কবিতায় ছেলেরা মেয়েদের শরীরে অবগাহন করে, মেয়েদের পুরুষের শরীরে
অবগাহন করার কথা শোনা যায় না।
যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেই সময়ে একটা মেয়ে মনে করত ‘ছেলেটা আমাকে যথার্থই
ভালবাসে’, যদি ছেলেটা দেখা হলে শুধু প্রেমের বচন দিয়ে অনায়াসে অমনোযোগী হতে
পারত মেয়েটির শরীরের প্রতি। অথচ আমাদের মেয়েটি প্রেমে পড়ে ছটফট করছিল আলিঙ্গনের
জন্য, চুম্বনের জন্য। প্লেটোনিক প্রেমের সম্পর্কে ততদিনে সে পড়াশুনো
করে ফেলেছে। প্লেটোনিক প্রেম সম্ভব কি সম্ভব নয় তা নিয়ে বিতর্ক থাকুক কিন্তু তার
প্রেমটা শরীর এবং মন দুটোকেই আলোড়িত, আন্দোলিত করে,
মন
চায় শরীর দিয়ে বুঝতে অনুভব করতে।
নর্থ ক্যালকাটার মেয়ে নর্থের অলিগলি ঘুরে প্রেম করবে এটাই
স্বাভাবিক, ছেলেটা ছিল ‘বিয়ে করবই’
টাইপ।
সদ্য চাকরি পেয়েছে, এবার বিয়ে। ছেলেটা জানে মেয়েটা একটু অন্যরকম,
বুদ্ধিবৃত্তি
প্রখর আবার ঢের আবেগে ঘাঁটা মেয়েটা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মেয়েটার শরীর কথা বলে।
এই সব মেয়েদের চট করে বিয়ে করে দুটো বাচ্চা দিয়ে দিতে হয় কোলে,
তবেই
মেয়েগুলো মাটির বাড়ির মত হয়ে যায়। এই সব ভেবেই ছেলেটা প্রেম করেছিল মেয়েটার
সঙ্গে। একদিন গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে বাড়িতে বকা খাওযা মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল
ছেলেটাকে। ছেলেটা কাঠ। সেই কাঠকে মেয়েটা গভীর চুম্বন করল একটা। সেই মেয়েটার জীবনে
প্রথম চুম্বন, ছেলেটারও তাই। চুম্বন শেষে আরও কিছু কথার পর দুজনে বাড়ির পথ ধরল।
আর ছেলেটা ভাবল, একি মেয়ে রে ভাই? রাস্তার মধ্যে জড়িয়ে ধরে
চুমু খেল? মাত্র এক মাস চেনে আমাকে, চুমু খেয়ে ফেলল?
এ
তো চরিত্রহীন মেয়ে, খেলুড়ে, শরীর হ্যাংলা। একে তো কাল বিছানায় নিয়ে যেতে চাইলেই চলে যাবে।
সতীত্ব ফতিত্ব তো এর কাছে ইস্যুই নয়। এই মেয়েকে বিয়ে করলে তো সর্বনাশ। আমি খেটে
মরব আর এ পুরুষ সঙ্গের জন্য উলুক ঝুলুক করবে!
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। ছেলেটা কিছুই বুঝতে দিল না মেয়েটাকে। মিশল
মেয়েটার সঙ্গে, মেয়েটার শরীর নিল ধীরে ধীরে। আস্তে আস্তে তারিয়ে তারিয়ে। তারপর
মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে একদিন বিয়ে করল অন্য একটা মেয়েকে। ছেলেদের সতীত্বের
ধারনাটা খুব অদ্ভুত। একটা মেয়ে একটা ভার্জিন মেয়ে যদি তার ভার্জিনিটি তার
প্রেমিককে দেয়, তাহলে যে পুরুষ সেটা পেল, সে সেটা নিল –
এমন
কি তার কাছেও মেয়েটা আর ফ্রেশ থাকে না। ‘মেয়েটা আমাকে দিয়ে দিল’টা হয়ে যায় ‘মেয়েটা বিয়ে না করেই
একজনকে দিয়ে দিল?’ তাই তখন ছেলেটা বিয়ে করার জন্য আর একটা ফ্রেশ মেয়েকে খোঁজে যে
মেয়েটারও ভার্জিনিটি কি না নিয়ে চলে গেছে আর একটা ছেলে। ওই একই রকম মানসিকতা নিয়ে।
আমি দেখেছি পুরুষরা সব্বাই একটা বিষয়ে ভয়ঙ্কর আত্মপ্রতারণা করে। কোনও ছেলেকে
জিজ্ঞেস করো ‘তোমার বউয়ের সঙ্গে ফার্স্ট লাভ মেকিং-এ তোমার বউ ব্লিড করেছিল?’
মানে
হোয়াট ডু ইউ থিংক? ওয়াজ শি আ ভার্জিন?
ছেলেটা একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় উত্তর দিতে আর অবধারিত ভাবে বলে, ‘হ্যাঁ, ব্লিড করেছিল!’
কুড়ি বছরে অনেক কিছু বদলেছে, এমন কি এই বিষয়ে লেখার প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত অবসোলিট হয়ে গেছে, শুধু বদলায়নি ছেলেদের এই অন্যমনস্ক মিথ্যেটা!!!
ছেলেটা একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় উত্তর দিতে আর অবধারিত ভাবে বলে, ‘হ্যাঁ, ব্লিড করেছিল!’
কুড়ি বছরে অনেক কিছু বদলেছে, এমন কি এই বিষয়ে লেখার প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত অবসোলিট হয়ে গেছে, শুধু বদলায়নি ছেলেদের এই অন্যমনস্ক মিথ্যেটা!!!
Wednesday, August 15, 2012
...।।...।। আলি প্রান এর লেখা মা ....।।...।।
মা, ওমা, মা! রাত্রির নীরবতার বুক ছিঁড়ে ছড়িয়ে
আসে একটি অবুঝ শিশুর আর্তনাদ, গতকাল
দুপুরে কোদাল নিয়ে যে শিশুটি মায়ের কবর খুঁড়ে তাকে তুলতে গিয়েছিল, রাত দুপুরে সে তার মায়ের কোল খুঁজে না
পেয়ে কান্না জুড়ে, মা-া-া!
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর কান্
ত শরীরে যে বোন ঘুমিয়ে ছিল, তার ঘুম টুটে যায়। তার ছোট ভাইটি
কাঁদছে, বোনটি
তাকে স্পর্শ করেনা। হারিকেনের আলোটা বাড়িয়ে দেয়, সে জানে তার এই মর্মাহত ছোট ভাইটিকে
এখন আদর করা মানে ওর দুঃখটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়া। নিরুপায় হয়ে আঁচলে মুখ গুঁজে
কেঁদে প্রভুকে দোষারোপ করে, এমনটি
কেন হলো বিধি! বুকে ভেতর মায়ের শোক, চোখের সামনে এই অবুঝ শিশুটির আর্তনাদ, শোকে শোকে বোনটির পাথুরে হওয়া। আমি
দরজার পাপোশের উপর শুয়ে আছি, মা চলে
যাবার পর এটাই আমার বিছানা। দরজা লাগাতে দেইনা কাউকে, আমি জানি আমার মা আসবেই।
শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে, আমিতো কাঁদতে পারিনা, তাই আমার ঘুম আসেনা। আজ কতদিন দু'চোখের পাতা এক করতে পারিনা, মা যদি এসে চলে যায়! আমি তাকে আর যেতে দেব না। আপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি জানি আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাববে, আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি, দরজা লাগিয়ে দিতে চাইবে। প্রতিদিনের মতো আজও তাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে। আমার সজাগ উপস্থিতি জানাতে বলি,' আপা, মরে গেলে মানুষ খুব নিষ্ঠুর হয়ে যায়! দেখলে-তো যে মা মাসুমকে ছাড়া এক-পলকও কোথাও থাকতে পারতো না, সেই মা-ই মাসুমের কান্না শুনে আসছে না।' এবার আপা আর নিজেকে সামলাতে পারেনি, বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে থাকি আর ভাবি, তারা গোনা শেষ হলেই হয়তো মা আসবে।
আমার কোন কিছুই ভালো লাগেনা, মায়ের হাতের পানি ছাড়া আমার তৃষ্ণা মিটে না। আপা জোর করে পুকুর ঘাটে নিয়ে গোসল করাতে চাইবে। মাথায় পানি ঢাললে যেটুকু পানি ঠোঁটের স্পর্শে আসে, আমি ইচ্ছা করেই গিলে ফেলি, মরতে চাই আমি, কে যেন বলেছিল, মরলে তোর মায়ের সাথে দেখা হবে। আপা বলতো পুকুরের পানি খেলে মানুষ মরে যায়। আমার সকল চিন্তা মাকে ঘিরে, আপা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খাবার গিলিয়ে দিতে চায়, কিন্তু পারেনা। একদিন আপাকে বললাম,' আমার একটা জিনিস খেতে খুব ইচ্ছে করে', আপা রাজ্যের আগ্রহ নিয়ে বললো, কী? আমি মায়ের মত ঘুমাতে চাই বলে বললাম, বিষ। একথা শুনে সে আমাকে অনেক মারলো, তারপর বুকে নিয়ে অনেক কাঁদলো। আমিও সেদিন কেঁদে ছিলাম, মায়ের মৃত্যুর দুইমাস পর এ আমার প্রথম কান্না, আমার শোকের পাথর গলে অশ্রুতে পরিণত হলো। আমার কান্না যেন আর থামতে চায়না, হঠাৎ হঠাৎ বুকের ভেতর বেদনার ঝড় উঠে, আমার মা যেন কোথাও কোন বিপদে পড়েছে, আসতে পারছেনা, আমি যেন তার আর্তনাদ শুনছি। মা যেন আমার জন্য কাঁদছে, আমার কাছে আসতে চাইছে, কিন্তু পারছেনা।
এখন আর আমাকে পাপোশে ঘুমাতে দেওয়া হয়না। জানালা দিয়ে মায়ের পথ পানে চেয়ে থাকতে হয়। আমার ঘুম হয়না, মাঝে মাঝে মনে হয় দরজা বন্ধ দেখে মা ফিরে চলে যাচ্ছে। আমি দরজা খুলে মা-মা বলে দৌড়াতে থাকি, কিন্তু কোথাও তিনি নেই। মাকে ধরতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটে। এবার আমার ঘরের দরজায় তালা। ওদের তালার কারণে আমার মা আসতে পারেনা ঘরে। আমি প্রায় শুনি, মা আমাকে ডাকছে, বাইরে থেকে তালা দেওয়া, আমি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি মা চলে যাচ্ছে।
তারপর অনেক দিন মা আসেনি, আবার একদিন আসবে, এই বাস্তবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, আমাকে নিয়ে যেতে, সেদিন কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবেনা।
শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে, আমিতো কাঁদতে পারিনা, তাই আমার ঘুম আসেনা। আজ কতদিন দু'চোখের পাতা এক করতে পারিনা, মা যদি এসে চলে যায়! আমি তাকে আর যেতে দেব না। আপা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি জানি আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভাববে, আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি, দরজা লাগিয়ে দিতে চাইবে। প্রতিদিনের মতো আজও তাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হবে। আমার সজাগ উপস্থিতি জানাতে বলি,' আপা, মরে গেলে মানুষ খুব নিষ্ঠুর হয়ে যায়! দেখলে-তো যে মা মাসুমকে ছাড়া এক-পলকও কোথাও থাকতে পারতো না, সেই মা-ই মাসুমের কান্না শুনে আসছে না।' এবার আপা আর নিজেকে সামলাতে পারেনি, বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গুনতে থাকি আর ভাবি, তারা গোনা শেষ হলেই হয়তো মা আসবে।
আমার কোন কিছুই ভালো লাগেনা, মায়ের হাতের পানি ছাড়া আমার তৃষ্ণা মিটে না। আপা জোর করে পুকুর ঘাটে নিয়ে গোসল করাতে চাইবে। মাথায় পানি ঢাললে যেটুকু পানি ঠোঁটের স্পর্শে আসে, আমি ইচ্ছা করেই গিলে ফেলি, মরতে চাই আমি, কে যেন বলেছিল, মরলে তোর মায়ের সাথে দেখা হবে। আপা বলতো পুকুরের পানি খেলে মানুষ মরে যায়। আমার সকল চিন্তা মাকে ঘিরে, আপা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খাবার গিলিয়ে দিতে চায়, কিন্তু পারেনা। একদিন আপাকে বললাম,' আমার একটা জিনিস খেতে খুব ইচ্ছে করে', আপা রাজ্যের আগ্রহ নিয়ে বললো, কী? আমি মায়ের মত ঘুমাতে চাই বলে বললাম, বিষ। একথা শুনে সে আমাকে অনেক মারলো, তারপর বুকে নিয়ে অনেক কাঁদলো। আমিও সেদিন কেঁদে ছিলাম, মায়ের মৃত্যুর দুইমাস পর এ আমার প্রথম কান্না, আমার শোকের পাথর গলে অশ্রুতে পরিণত হলো। আমার কান্না যেন আর থামতে চায়না, হঠাৎ হঠাৎ বুকের ভেতর বেদনার ঝড় উঠে, আমার মা যেন কোথাও কোন বিপদে পড়েছে, আসতে পারছেনা, আমি যেন তার আর্তনাদ শুনছি। মা যেন আমার জন্য কাঁদছে, আমার কাছে আসতে চাইছে, কিন্তু পারছেনা।
এখন আর আমাকে পাপোশে ঘুমাতে দেওয়া হয়না। জানালা দিয়ে মায়ের পথ পানে চেয়ে থাকতে হয়। আমার ঘুম হয়না, মাঝে মাঝে মনে হয় দরজা বন্ধ দেখে মা ফিরে চলে যাচ্ছে। আমি দরজা খুলে মা-মা বলে দৌড়াতে থাকি, কিন্তু কোথাও তিনি নেই। মাকে ধরতে না পারার যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটে। এবার আমার ঘরের দরজায় তালা। ওদের তালার কারণে আমার মা আসতে পারেনা ঘরে। আমি প্রায় শুনি, মা আমাকে ডাকছে, বাইরে থেকে তালা দেওয়া, আমি দরজার ফাঁক দিয়ে দেখি মা চলে যাচ্ছে।
তারপর অনেক দিন মা আসেনি, আবার একদিন আসবে, এই বাস্তবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, আমাকে নিয়ে যেতে, সেদিন কেউ আমাকে ঠেকাতে পারবেনা।
মানুষ ভাবে এক হয় আরেক
পুরন লুনাটা নিয়ে আদিত্য বাবু বেরিয়ে পডলেন । আজ পেন্সন
পাওয়ার তারিখ । তখন পেন্সন এর টাকা আনতে ব্যাঙ্কে জেতে হত ।
- স্ত্রী বললেন, গাডীটা নিয়েই যাওনা !
- আদিত্য ঃ না থাক । পেট্রোল এর যা দাম বাডছে তাতে রিটায়ারের পর আর গাডির সখ না করাই ভাল।
- -কেন ? রেক্স তোমায় টাকা পাঠায় না ? আমেরিকা থেকে তোমার
একাউন্টে ডলার তো ফি মাসে আসে । তবে কেন কষ্ট করবে তুমি ! খেয়ে যাওনা কিছু ! ওরম
না খেলে শরীর খারাপ হলে কে দেখবে ? আমার কাথাত তোমার কাছে বাশি পান্তা !
- - দ্যাখ কোথাউ বেরুবার সময় গজ গজ করনা । ভাল লাগেনা তোমার ওই একঘেয়ে আমেরিকা র কথা । আজকাল কার বাডিতে কোন ছেলে আমেরিকা না গিয়ে আছে ! আমাদের এ পাডাতে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ইঞ্জিনীর নয় ডাক্তার । হা ঘরের মত রাস্তায় ব্যাজ ব্যাজ কোরনাত।
- “ছেলে ! বাবার মুখে চুন কালি দিয়েছে ছেলে
!!” মনে মনে গজরাতে লাগ্লেন আদিত্য বাবু
।
- -ওমা আমিকি তাই বোল্লাম নাকি? কথার কি ছিরি দ্যাখ ? রিটায়ারমেন্টের পর কি
সবাই এই রকম কথা বলেন ! কিছু মুখে দিয়ে যাও না ?
আদিত্য বাবু কথা কানে না দিয়ে জলখাবার না খেয়েই চলে গেলেন । ছেলের বিয়ের কথা
জানার পর ওর কাছ থেকে এক পয়সা নেওয়া বন্দ করে দিয়েছেন।
সেদিন ব্যাঙ্কের পুরন বন্ধুদের সঙ্গে দ্যাখা
। চা সিগারেটের ফোয়ারা ছুটল । পকেটে প্রথম পেন্সেন জদিও নগন্ন্য মাত্র কিন্তু
আদিত্য বাবুর কোন অভিজোগ নেই এ ব্যাপারে । কারন রিটায়ারমেন্টের পর স্টেট্ ব্যাঙ্কে খুব কম টাকা পেন্সেন দেয় ।
গ্রাচুইটির টাকা সব ফিক্সড ডেপসিট করে দিয়েছেন আদিত্য বাবু। কিছু বন্ধু ; ছেলের বিয়ের কথা
পাডলেন । মেয়ে গছানোর লোকের ত অভাব নেই ! সব্বাই টোপ ফেলে আছেন যদি এই সুবাদে মেয়েকে গছানো
যায়। ওসব কথায় আমল দিলেন না । ও প্রসংগ এডিয়ে ওন্য কথা বলতে লাগ্লেন । কারন ওনার
ছেলে এক আমেরিকান সহ কর্মিকে বিয়ে করে ফেলেছে । মা’কে যানিয়েছিল বাবকে যানায় নি। সেই থেকে আদিত্য
বাবুর ছেলের ওপর অভিমান ।
- দুটো বেজে গিয়েছে , অর্চনা দেবি ঘরে পায়চারি কোরতে কোরতে বললেন । মানুস টার
এখনো আসার সময় হলনা ? ৩ টে বাজল ৪ টে বাজল স্বামির আসার কোন
-
- আভাস
পেলেন না । তখন মোবাইল ছিল না । ল্যান্ড ফোন ই ভরসা । কি ভেবে, ছোট জামাই কে ফোন কোরলেন ।
- হ্যাল ! কে ? মিন্টু বলছো বাবা ? একটু
ব্যাঙ্কে বাবার খোঁজ নেবে বাবা । উনি না খেয়ে বাডিথেকে বেরিয়েছেন এখনো ফেরেন নি ! ৪ টে বেজে গেল কোথায় গেলেন
কিছু হদিস পাচ্ছিনা।(মিন্টু , আদিত্য বাবুর ছোট জামাই, পি এন বে তে স্কেল১ অফিসার )
- মিন্টু । হ্যাঁ মা ! (আজকাল জামাই বাবা জীবন রা নিজের
মায়ের চেয়ে শাশুডী মা’র বেশি ভক্ত) এখুনি দেখছি । স্কুটার নিয়ে মিন্টু বেরিয়ে যায়
।
মিন্টু ফোন করে ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করাতে
উনি বলেন , সকলে পেনসন নিয়ে বাডি ফিরে
গিয়েছেন। আদিত্য বাবু ত কখন চোলেগিয়েছেন । বাডি ফেরেন নি ? মিন্টু র কেমন সন্দেহ
হয় । ও সঙ্গে সঙ্গে থানাতে যায় ওখান থেকে যানতে পারে যে, এক ভদ্রলোক এর মাথায় আঘাৎ লেগেছে । উনি হস্পিটাল এ এমারজেন্সি ওয়ার্ড এতে আছেন ।
এক বন্ধু কে সঙ্গে নিয়ে হস্পিটালে গিয়ে জা
দ্যাখে আকাশ থেকে পডে মিন্টু । ইনি তো শ্বশুর মশাই । সম্পুর্ন ঙ্গানহীন অবস্থায়
বাবা একটা বেঞ্চে শোআন । কেউ কোথাউ নেই। একটা পুলিস কনষ্টেবল্ রোগি পাহারা দিচ্ছে
বাকি সবাই খেতে গিয়েছে ।
মিন্টু , ডাক্তার বাবু কে অধৈর্জ্য হয়ে জিঙ্গাসা করলো ,” পেসেন্ট আমার বাবা, মানে
শ্বশুর মশাই । ওনার অবস্থা কেমন ? ওনাকে এক্ষুনি ট্রিট মেন্ট করতে হবে । কি ইঞ্জেকশান ওসুধ আনতে হবে তাডাতডি
বলুন । ওঁর মাথায় আঘাৎ লেগেছে দেখছি । এখানে কি ন্যুরো সার্জেন আছেন? আমি নার্সিং
হোমে নিয়ে যাব। ওনার ছেলে নেই আমি ওনার সব দেখা শুন কোরব। মাকে খবর দি। খুবি ঘাবডে
যায় আদিত্য ।এক সঙ্গে এতগুল প্রশ্ন বানে ডাক্তার বিরক্ত প্রকাশ করেন।
- কোথায় ছিলেন এতক্ষন? এটা সরকারি ডাক্তারখানা
। এক্সিডেন্ট এর কেস্ ।আপনি জানেন না প্যারাফারনালিয়া আছে! আমরা রেফার করছি । আমাদের ন্যুরো সার্জেন নেই এখানে। এস সি বি তে
নিয়ে যান নয়তো ডাক্তার বসু ভাল ন্যুরো সার্জেন ওনাকে দেখান । মাথায় চোট্ টা জো্রে লেগেছে । একটা অটো
ড্রাইভার হস্পিটালে নিয়ে আসে । পুলিস ওকে আটকে রেখেছে ।
- আমি ; সি ডি এম্ ও কে দ্যখা করতে চাই। আমি
ওনাকে এখান থেকে সিফট্ করাতে চাই । আমার
কথা বলার সময় নেই প্লিজ কিছু করুন । মিন্টু এরমধ্যে অর্চনা
দেবিকে ফোন করেন । সব ঘটনা জানিয়ে দেন। মা খুব শক্ত মনের মানুষ উনি সহজে
বিচলিত হন না। কিছুক্ষনের মধ্যে মা চলে আসেন ডাক্তার খানা তে । বড জামাই সুব্রত আর
বড মেয়ে বিনা । সকলে এসে পডাতে মিন্টু হাঁফ
ছাডে ।হস্পিটালের কাজ সেরে ওরা আ্যাপোলো হস্পিটালে আদিত্য বাবুকে শিফট্
করান হয়। ওখানে সঙ্গে সঙ্গে আই সি ইউ তে
ভর্ত্তি করার পর ডাক্তার বসু ন্যুরো সার্জেন আসেন । রোগীর চকিৎসা র কোন
ত্রুটি হয়না । আমেরিকা তে রেক্স কে খবর
দেওয়া হয় । ও তিন দিনের মধ্যে এসে পৌঁছে যায় । সকলে উদ্গ্রিব কি হবে । রোগী কোমা
তে থাকে প্রায় তিন দিন । পরে জ্ঞান আসে ।
এর মধ্যে রেক্স এসে পডে স্বস্ত্রীক । রেক্স এর আমেরিকান বউ
জিনি কিছু কিছু পরামর্স দেয় ডাক্তার কে । কিন্তু বহু চেস্টার পরও আদিত্য বাবুর
কোমর থেকে পা ওব্ধি প্যারালিসিস্ হয়ে যায়। প্রায় চার মাস হস্পিটালে রেখে আদিত্য
বাবু কে ঘরে আনা হয়। ভেন্তিলেটর এ থাকার সময় দাক্তার বলেন বন্দ করলে শেষ আপনার
ছেলেকে জিজ্ঞাসা করুন সে কি বলে ? রেক্স রাজি হয় না। বলে যতো টাকা লাগে দোব বাবার
চিকিৎসা ভাল করে যেন হয় । তাই হল ।
এর মধ্যে অর্চনা দেবি বাপের বাডির ভাইদের কাছ
থেকে কেস্ করে তাদের জমি বিক্রি বাবদ ১০
লাখ টাকা পান। তাতে
স্বামির চিকিৎসা এবং ঘরের খরচ সব চলে । ব্যাঙ্কের নগন্য মাত্র পেন্ সন এর টাকা
দিয়ে আগের ধার দেনা শোধ করেন। রেক্স ভাল ছেলে তাই মাকে ডলার পাঠাতো। মা সেই টাকা
দিয়ে ঘরটা বাডিয়ে তোলেন । তিন তালা ঘর বানান । ভাডা বসান । ভালই ভাডা পেতে লাগেন।
এর পর পুর্ব কির্তীর ফল ভোগ করেন কারন দুই জামাই ঘরের ভাগ চায় । আগত্যা তাদের
চাহিদা পুরনের জন্য ছেলের পাঠান টাকা দিয়ে দুট ফ্ল্যাট্ কিনে দুই জামাইকে দান
করেন।
প্রায় ৫ বছর বেড্ রিডিন থাকার পর আদিত্য বাবু
স্বর্গ বাস হয় । আদিত্য বাবুর বড বউদি
ছোট বেলা থেকে ওনাকে মানুস করেন। উনি এসে কান্নায় ভেঙ্গে পডেন। এক ভাই নাটাবাবু আর সকল ভাইপো এবং
অর্চনা দেবির ভাইরা এসে দাঁড়ান (জদিও তাদের সর্বস্য নিয়ে যান ওই বোন) দুই মেয়ে
জামাই উপস্থিৎ থেকে কাজ উদ্ধার হয়। পারলৌকিক কাজ আটকায়না কখন ।
এর পর অর্চনা দেবি ঘর বিক্রি করে চলেজান ছোট
মেয়ে জামাই এর কাছে । ছেলে আমার মস্ত বডলোক আর ভাইদের বলেন উনি প্রতিষ্ঠিত । তাই
কোন ভাই আমল দেন না। এর পর ছেলের বাচ্চা সাম্লানোর জন্য আমেরিকা একাই যান । ফিরে
তাঁর দিদিকে আমেরিকার গল্প শোনান । মাস মাস চলে আমেরিকা আর আমেরিকা র গল্প । দিদি
আর থাকতে পারলেন না । তিনিও ভয়যার এর গ্রুপ এর সঙ্গে লন্ডন, গ্রীস, আয়ারল্যন্ড,
ভেনিস, ইত্যাদি ঘুরে এলেন টা ১,৫০০০০কা খরচ করে । মানতে হয় ভাই এদের প্রতিযোগিতা আর টাকা
অপব্যায়ের সমস্ত রাস্তা খুঞ্জে বার করা।এরা লোকের কাছে বিদেশে ্যাওয়ার গল্প ফাঁদার জন্য সব করতে পারে।
দিদি এসেই সকল কে টেলিফনে জানায় আমেরিকার কথা । হাঁসব কি কাঁদবো জানিনা । হুঁ হাঁ তে উত্তর সেরে গিন্নী কে বললাম, গিন্নী কি বল, ইউরোপ আমেরকা যাবে নাকি ?
- রক্ষে কর কাজ নেই ! বলি আদেকলা র হল ঘটি জল খেয়ে খেয়ে গেল প্রান্ টি ।
- আচ্ছা সব বউ রা কি তাদের ননদ কে টিটকিরি দেয় ?
- জানিনা বাপু । জা সত্যি তাই বললাম।এখন তোমার দিদি খারাপ লাগবেই । বেলা হল অফিস যাবেনা?
- না গেলে খাব কি ? আমার ছেলে ত এখনো পডা শেষ করেনি !আরেক বছর পর বি টেক্ শেষ হবে তার পর এম বি এ যদি করে তো আর ডু বছর । আমার কি ডলার আছে বসে খাব?
- মুখ্যে আগুন ডলারের । দরকার নেই ওরকম ফিরিঙ্গী বউ এর ডলার ! লজ্যা ঘেন্না নেই গো ?
পয়সা টা কি এতই বড ?
- পয়সা ক্যা না করতা ? গিন্নী ওটাই সব বাকি সব ফক্কা।
ছেলে পাস করলো ভাল ভাবে । এম বি এর কোচিং নিতে শুরু করলো । এরমধ্যে ইনফসিস্ এর লিখিত পরীক্ষা তে ভাল করাতে মাইশুরে জএন্ করল ট্রেনিং এ । ছ মাস পর বেঙ্গালুরু তে ইনফো সিটি তে কাজে জয়েন করলো । ঢুকেই যা মাইনে পেল ভালই । আমার কোন প্রতিক্রিয়াই হল না। ওর মা যথা রিতি টেলিফোনে খবর নিত । মাস গেলে টেলিফোন এর বিল বাডতে লাগলো। নতুন চাকরি র প্রথম মাইনেতে ছেলে একটা মোবাইল কিনে দিল। তখন মোবাইলের অনেক দাম ছিল । ভালই লাগলো তবে আমার এই অপচয় ঠিক পছন্দ নয়। ৭৫০০ টাকা একটা মোবাইল্। না হল ! --ছেলে বলে, তোমার ল্যান্ড ফোন এর বিল্ টা তো বাঁচলো ।
-তোমার ওই হাড ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় আমার সখ্ এর কোন ইছে নেই। টাকা জমাও এম বি এ র জন্য ।
- ঠিক আছে।
- কিছুদিন পরেই ছেলে প্রজেক্ট এর কাজে কম্পানি থেকে আমেরিকা গেল । এক বছরের জন্য ।
রাত্তির ১২ টার ফ্লাইট্ । নেতাজী সুভাশ এয়ারপোরট্ থেকে দিল্লী, তারপর দিল্লী থেকে ফ্রাঁকফুট্ হয়ে নিউ ইয়রক্। আমি আর গিন্নী শুধু ভাবি কবে ফিরবে ! ব্রহ্মনের ছেলে ওখানে কি বলতে কি খাবে কে জানে?গিন্নীর পুজ বেডে গেল । উপোস তাপাস । আজ সংক্রান্তী কাল আমাবশ্যা লেগেই রইল ।
- মনের কথা মনে রেখে আছি । হঠাৎ দিদির ফোন , হ্যাঁরে তোর ছেলে আমেরিকা গেল খবর দিস নি? - দেওয়ার মত খবর হলে নিশ্চই দিতাম।
- ও! তা কোন্ টা তোদের দেওয়ার মত খবর শুনি!!
- আগে মানুষ হোগ তার পর নিশ্চই দোব।
- হ্যাঁরে আমাদের পাডার সম্পাকে মনে আছে ?
- কে সম্পা ? না মনে নেই । কেন ?
- ওর সঙ্গে আমাদের ছেলে কে খুব মানাবে।
- এবার বুঝলি তো, কেন তোদের বলিনা কিছু !
- ২২ বছরের ছেলে কে তোরা বিয়ে দিয়ে গলায় একটা অপগন্ড মেয়ে ঝোলাবি?
- এখন তো বলছি না ?
- প্রয়োজন নেই । আগে এম বি এ করুগ ।
- ওর এম বি এর খরচ ওরাই দেবে।
- দিদি প্রসঙ্গ বদলা । আমার এ সব মেটেরিয়ালিস্টিক্ কথা শুনতে একদম ভাল লাগে না।
- আমি অফিস্ যাচ্ছি । ছাডলাম ।
- ছেলেকে ফোন করব যে তার উপায় নেই । সব হাঁ করে কথা শুনবে। আমাদের মনের অবস্থা কেউ বোঝে না।
এক বছর ছ মাস পর ছেলে ফিরল। রাত্তির ২ টোর সময় ফ্লাইট্ এল। ওর মা'র চোখে জল। খুব ভাল চেহারা হয়ে গিয়েছে । একেই ফর্সা তাই ওখানকার হাওয়া বাতাসে খুব হ্যান্ডসাম লাগছিল । আসলে ছা পোসা বাঙ্গালির ঘরে একটু কেউ উন্নতি করলে ঢোল বাজানোর লোকের অভাব থাকেনা।এটাই বাঙ্গালির সবচেয়ে বাজে গুন। কস্মেটিক্স ইলেক্ট্রনিক্স এর জিনিস বোঝাই। সবাই এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ্ করে ঘরে ফিরলাম । ছেলের জন্য মিনারেল ওয়াটার কিনে রেখেছিলাম কারন অখান থেকে এলেই আগে পেটের গন্ডগোল দ্যাখাদেয় ।
দিদি এসেই সকল কে টেলিফনে জানায় আমেরিকার কথা । হাঁসব কি কাঁদবো জানিনা । হুঁ হাঁ তে উত্তর সেরে গিন্নী কে বললাম, গিন্নী কি বল, ইউরোপ আমেরকা যাবে নাকি ?
- রক্ষে কর কাজ নেই ! বলি আদেকলা র হল ঘটি জল খেয়ে খেয়ে গেল প্রান্ টি ।
- আচ্ছা সব বউ রা কি তাদের ননদ কে টিটকিরি দেয় ?
- জানিনা বাপু । জা সত্যি তাই বললাম।এখন তোমার দিদি খারাপ লাগবেই । বেলা হল অফিস যাবেনা?
- না গেলে খাব কি ? আমার ছেলে ত এখনো পডা শেষ করেনি !আরেক বছর পর বি টেক্ শেষ হবে তার পর এম বি এ যদি করে তো আর ডু বছর । আমার কি ডলার আছে বসে খাব?
- মুখ্যে আগুন ডলারের । দরকার নেই ওরকম ফিরিঙ্গী বউ এর ডলার ! লজ্যা ঘেন্না নেই গো ?
পয়সা টা কি এতই বড ?
- পয়সা ক্যা না করতা ? গিন্নী ওটাই সব বাকি সব ফক্কা।
ছেলে পাস করলো ভাল ভাবে । এম বি এর কোচিং নিতে শুরু করলো । এরমধ্যে ইনফসিস্ এর লিখিত পরীক্ষা তে ভাল করাতে মাইশুরে জএন্ করল ট্রেনিং এ । ছ মাস পর বেঙ্গালুরু তে ইনফো সিটি তে কাজে জয়েন করলো । ঢুকেই যা মাইনে পেল ভালই । আমার কোন প্রতিক্রিয়াই হল না। ওর মা যথা রিতি টেলিফোনে খবর নিত । মাস গেলে টেলিফোন এর বিল বাডতে লাগলো। নতুন চাকরি র প্রথম মাইনেতে ছেলে একটা মোবাইল কিনে দিল। তখন মোবাইলের অনেক দাম ছিল । ভালই লাগলো তবে আমার এই অপচয় ঠিক পছন্দ নয়। ৭৫০০ টাকা একটা মোবাইল্। না হল ! --ছেলে বলে, তোমার ল্যান্ড ফোন এর বিল্ টা তো বাঁচলো ।
-তোমার ওই হাড ভাঙ্গা পরিশ্রমের টাকায় আমার সখ্ এর কোন ইছে নেই। টাকা জমাও এম বি এ র জন্য ।
- ঠিক আছে।
- কিছুদিন পরেই ছেলে প্রজেক্ট এর কাজে কম্পানি থেকে আমেরিকা গেল । এক বছরের জন্য ।
রাত্তির ১২ টার ফ্লাইট্ । নেতাজী সুভাশ এয়ারপোরট্ থেকে দিল্লী, তারপর দিল্লী থেকে ফ্রাঁকফুট্ হয়ে নিউ ইয়রক্। আমি আর গিন্নী শুধু ভাবি কবে ফিরবে ! ব্রহ্মনের ছেলে ওখানে কি বলতে কি খাবে কে জানে?গিন্নীর পুজ বেডে গেল । উপোস তাপাস । আজ সংক্রান্তী কাল আমাবশ্যা লেগেই রইল ।
- মনের কথা মনে রেখে আছি । হঠাৎ দিদির ফোন , হ্যাঁরে তোর ছেলে আমেরিকা গেল খবর দিস নি? - দেওয়ার মত খবর হলে নিশ্চই দিতাম।
- ও! তা কোন্ টা তোদের দেওয়ার মত খবর শুনি!!
- আগে মানুষ হোগ তার পর নিশ্চই দোব।
- হ্যাঁরে আমাদের পাডার সম্পাকে মনে আছে ?
- কে সম্পা ? না মনে নেই । কেন ?
- ওর সঙ্গে আমাদের ছেলে কে খুব মানাবে।
- এবার বুঝলি তো, কেন তোদের বলিনা কিছু !
- ২২ বছরের ছেলে কে তোরা বিয়ে দিয়ে গলায় একটা অপগন্ড মেয়ে ঝোলাবি?
- এখন তো বলছি না ?
- প্রয়োজন নেই । আগে এম বি এ করুগ ।
- ওর এম বি এর খরচ ওরাই দেবে।
- দিদি প্রসঙ্গ বদলা । আমার এ সব মেটেরিয়ালিস্টিক্ কথা শুনতে একদম ভাল লাগে না।
- আমি অফিস্ যাচ্ছি । ছাডলাম ।
- ছেলেকে ফোন করব যে তার উপায় নেই । সব হাঁ করে কথা শুনবে। আমাদের মনের অবস্থা কেউ বোঝে না।
এক বছর ছ মাস পর ছেলে ফিরল। রাত্তির ২ টোর সময় ফ্লাইট্ এল। ওর মা'র চোখে জল। খুব ভাল চেহারা হয়ে গিয়েছে । একেই ফর্সা তাই ওখানকার হাওয়া বাতাসে খুব হ্যান্ডসাম লাগছিল । আসলে ছা পোসা বাঙ্গালির ঘরে একটু কেউ উন্নতি করলে ঢোল বাজানোর লোকের অভাব থাকেনা।এটাই বাঙ্গালির সবচেয়ে বাজে গুন। কস্মেটিক্স ইলেক্ট্রনিক্স এর জিনিস বোঝাই। সবাই এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ্ করে ঘরে ফিরলাম । ছেলের জন্য মিনারেল ওয়াটার কিনে রেখেছিলাম কারন অখান থেকে এলেই আগে পেটের গন্ডগোল দ্যাখাদেয় ।
Subscribe to:
Posts (Atom)